ধরুন বাজারে গেছেন একশো টাকা নিয়ে। গিয়ে দেখেন পকেটে চার টাকা পড়ে আছে, বাকী ৯৬ টাকার হদিশ নাই। পকেটমারের পকেটে খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেই পকেটমার কে?
জ্যোতির্বিদদের মনের অবস্থাটা একবার ভাবুন। তারা এরকমই মাত্র চার টাকা পেয়েছেন খুঁজে, চেনা জানা পদার্থরা যারা কিনা অপটিকাল পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে তারা মহাবিশ্বের ঘনত্বের মাত্র ৪% এর জন্য দায়ী। বাকী ৯৬%? তার কী হলো? সে ঘনত্বের জন্য দায়িত্ব কার?
মাত্র কিছুকাল আগে একটা ধরতাই পাওয়া গেছে। চুরি যাওয়া ৯৬ টাকার মধ্যে তেইশ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। পকেটমার হলো ডার্ক ম্যাটার।
উইলকিনসন মাইক্রোওয়েভ অ্যানাইসোট্রোপি প্রোব, সংক্ষেপে যাকে বলে WMAP, সেই স্যাটেলাইট খুব ভালো করে মাইক্রোওয়েভ মেপেছে, বিস্তারিত ম্যাপ করেছে। ডাব্লুম্যাপের সৌজন্যেই বোঝা গেছে আমাদের মহাবিশ্বের ২৩ শতাংশই তৈরী হয়েছে অজানা-অচেনা কোনো বস্তু দিয়ে, এরা যে কীরকম জিনিস তা এখনো না জানা থাকায় নাম দেওয়া হয়েছে ডার্ক ম্যাটার, অন্ধকার বস্তু। এরা কোনো তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ করে না, তাই আলো-দূরবীণ এক্সরে-দূরবীণ বা রেডিও-দূরবীণ কোনো কিছুতেই ধরা পড়ে না। শুধুমাত্র লুকাতে পারে না তাদের বিপুল মহাকর্ষ, মহাকর্ষ স্থানকালে বক্রতা তৈরী করে (আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে একথা আমরা জানি), সেই বক্রতায় পড়ে পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া আলোর পথ বেঁকে যায়, সেই দিয়েই শুধু পরোক্ষভাবে জানা যায় এই ডার্কম্যাটারের অস্তিত্ব।
আমাদের গ্যালাক্সির নাম মিল্কিওয়ে, এটা বিরাট এক নক্ষত্রজগৎ, দশ হাজার কোটি তারা আছে এই গ্যালাক্সিতে আমাদের সূর্য যার একটামাত্র মাঝারি তারা। এটা স্পাইরাল গ্যালাক্সি, এর ঘূর্ণীবাহুগুলোর মধ্যে কোটি কোটি তারা। এতকাল জানা ছিলো এই মিল্কিওয়ের এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত পর্যন্ত বিস্তার এক লক্ষ আলোকবর্ষ, এখন ডার্ক ম্যাটার বিষয়ে জানা যাবার পরে বোঝা গেছে এর আসল আকার জানা আকারের দশগুণ। মিল্কিওয়ের চারপাশ ঘিরে আছে বিপুল পরিমাণ ডার্ক ম্যাটার, যারা পুরোপুরি অদৃশ্য। সত্যি বলতে কি গ্যালাক্সির বেশীরভাগ ভরই লুকিয়ে আছে ডার্ক ম্যাটারে। কী কান্ড!
কিন্তু এর চেয়ে আরও বেশী আশ্চর্যের ব্যাপার হলো বাকী ৭৩ টাকা। এটা যে চোরের পকেটে সে একেবারে প্রায় পরোক্ষ ধরাছোঁয়ারও বাইরে। এ চোর হলো ডার্ক এনার্জী, মহাবিশ্বের ৭৩ শতাংশই এর পকেটে।
ডার্ক ম্যাটার বিষয়ে অদূর ভবিষ্যতে একটা ফয়সালা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ডার্ক এনার্জীর ব্যপারটা আরো অনেক বেশী জটিল। নিকট ভবিষ্যতে একে ভালো করে জানতে বুঝতে পারা যাবে না বলেই মনে হচ্ছে। তবে একসময়ে না একসময়ে ধরা তাকে পড়তেই হবে।
মন্তব্য
আচ্ছা, মহাবিশ্বের ঘনত্বের ব্যাপারটা মাপা হলো কীভাবে?
আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা আর ফ্রীডমান-লেমার্ত্র- রবার্টসন-ওয়াকার মডেল থেকে ওমেগা বলে একটা প্যারামিটার পাওয়া যায়, এটা হলো একটা অনুপাত, মহাবিশ্বের গড়পড়তা শক্তিবস্তু ঘনত্ব আর ক্রিটিকাল ঘনত্বের অনুপাত। এটা ১ হলে বা তার খুব কাছাকাছি হলে বলা যায় গড়পড়তা স্থানকাল বক্রতা শূন্য।
পর্যবেক্ষণে মহাবিশ্বকে গড়পড়তা সমসত্ত্ব আর সর্বত্র প্রতিসম (homogeneous and isotropic ) বলে বোঝা যায়। এইসব গ্যালাক্সি ক্লাস্টার ইত্যাদি যেসব জটিল গঠন, সবই স্থানীয় অসমসত্ত্বতা আর অপ্রতিসাম্য। গড়পড়তায় সব মিলিয়ে দেখতে গেলে দেখা যায় আমাদের মহাবিশ্ব একেবারে ফ্ল্যাট মহাবিশ্ব। WMAP এর একেবারে লেটেস্ট তথ্য ও তাই দেখায়।
এই থেকেই বোঝা যায় গড় ঘনত্ব কত হওয়া উচিত। ক্রিটিকাল ঘনত্বের খুব কাছাকাছি। সাধারণ আপেক্ষিকতা দিয়ে হিসাব করলেই ক্রিটিকাল ঘনত্বটা পাওয়া যায়।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ইশশ... আরেকটু লিখলে কি দোষ হত??
লেখাটা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। চমৎকার হয়েছে। এবার জটিল ডার্ক এনার্জী নিয়ে সহজ করে কিছু লিখুননা?
ধন্যবাদ আপনাকে।
ডার্ক এনার্জী নিয়ে দেখা যাক ভবিষ্যতে কী জানা যায়, তখন লিখবো।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অতিশয় চিন্তার বিষয়তো-----------!
এস হোসাইন
---------------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"
আজ্ঞে, সত্যই চিন্তার বিষয়।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হতাশ হলাম, এত ছোট লিখবেন একদম আশা করি নি।
এই বিষয়ে আমি নিতান্তই নবীশ। ভুল হলে বলবেন, কৃষ্ণ বস্তু আর কৃষ্ণ শক্তির ধারণা সম্ভবত এখনো প্রস্তাবিত পর্যায়ে। সেক্ষেত্রে কি ধরনের পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষার মাধ্যমে এই ধারণাগুলোকে প্রস্তাবিত পর্যায় থেকে প্রতিষ্ঠিত পর্যায়ে আনা সম্ভব, সে সম্পর্কে একটা লেখা দিবেন?
আর হিমু ভাইয়ের মত মহাবিশ্বের ঘনত্ব মাপা নিয়ে আমারও প্রশ্ন ছিল। আপনার উত্তর আর সেটা বোঝার আমার ক্ষমতা দেখে মনে হলো, এটাও বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিয়ে একটা পোস্টের দাবী রাখে।
--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~
সে তো বিরাট ব্যাপার, মানে বিস্তারিত সব লেখা। তবে শুরুর দিকের বেশীরভাগ মডেল নিয়েই নানা লেখকেরা লিখেছেন নানা বইয়ে।
ব্যাপারটা হয়েছে কী, এটা আরো বড় হবার কথা ছিলো, ভেবেছিলাম এডিট করবো তখন বাকি আরো খানিকটা লিখবো। কিন্তু সময়ের পেয়াদারা ধরে ফেললো।
দেখি পরবর্তীতে সময় হয় কিনা।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দারুন সহজ করে লিখেছেন।
এইসব মনিটরে পড়ে আর পোষায় না- হাতে নিয়ে হেলান দিয়ে বসে পড়তে হয়। কিন্তু সেটা সম্ভব কবে? অপেক্ষায় থাকলাম।
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
আরে বলেন কি? অপেক্ষায় আছেন হেলান দিয়ে পড়ার?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
একটা ল্যাপটপ কিনে নেন। হেলান দিয়া পড়তে পারবেন।
নতুন মন্তব্য করুন