২
বৃষ্টিতে স্নান করে খুব খুব পরিতৃপ্ত মনে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে এলো ক্লোন গিবান। খুব নিশ্চিত ও নিশ্চিন্ত সে, একটা অস্বস্তিকর চটচটে অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে, ভালো লাগছিলো ওর। গিবানের ঘরে ঢুকলো সে, টর্চটা জ্বাললো, আলনা থেকে তোয়ালে নিয়ে ভালো করে মুছলো গা মাথা, জামাকাপড় পরে একেবার ফিটফাট হয়ে গাড়ীর চাবিটি নিলো হাতে, যেতে হবে, খুব তাড়াতাড়িই তাকে যেতে হবে ওরিয়ানার কাছে। কতদিন সে ওকে দেখে নি!
ওরিয়ানা! সেই চটপটে ছটফটে মেয়েটি, একঢাল চুল সর্বদা খোলা, ছড়ানো পিঠ জুড়ে, প্রসাধনহীন মুখে অপূর্ব লাবণ্য, চকচকে কালো চোখের মণিতে প্রায়শই দুষ্টুমীর ঝিলিক। ও:, কতদিন হয়ে গেলো ওর কাছে যায় নি সে। শেষ কবে দেখেছিলো ওকে? সেই ও যখন তুলে দিতে এসেছিলো প্লেনে, সেই ছোট্টো এয়ারপোর্টের বালি বালি জমির উপরে?
সেই তখনি তো গিবান চলে এলো এই মরুভূমি ঘেঁষা দেশে, সদলবলে। বাবা নিজে স্পন্সর করলেন, আরো প্রচুর স্পনসর জুটিয়ে দিলেন বলেই এটা তৈরী হতে পারলো। বাবা এত ভালো ম্যানিপুলেটর! আরে, নইলে কি এমনি এমনি এত সফল ব্যবসায়ী হয়েছেন? বাবার চেহারাটা মনে পড়লো গিবানের, নিখুঁত সুট পরা নিঁখুত স্মার্ট মানুষ, উজ্জ্বল চোখে কিছুটা শক্ত চাহনি, চিবুকখানা দৃঢ় হয়ে নেমেছে চৌকো ধরনের মুখের শেষে। মাঝে মাঝে গিবানের অবাক লাগতো, একজন সামান্য ইমিগ্রান্ট হয়ে ছাত্রাবস্থায় যিনি এসেছিলেন তিনি মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে এতখানি উঠলেন কী করে?
ও:, বাবার সঙ্গেও তো কতকাল দেখা হয় না। গিবানের নিজের দেশে ক্লোন নিয়ে গবেষণা নিষেধ, কী হাস্যকর বোকামি! ওকে তাই চলে আসতে হলো সীমান্ত পেরিয়ে এই কাঁটাগাছ ফণীমনসার বিভুঁইয়ে।
বাবার সঙ্গে দেখা হয় না কতদিন, মায়ের সঙ্গে আরো বেশীদিন, মা এখন বহুদূরের এক আশ্রমে সন্ন্যাস নিয়ে আছেন। সেখানে গিবান গেছিলো তাও হয়ে গেলো কত বছর। বোন নীথা থাকে বহুদূরের এক দ্বীপরাষ্ট্রে , ওর সঙ্গেও সেই বেশ কয়েক বছর আগের ক্রীসমাসে শেষ দেখা হয়েছে। আর ওরিয়ানা-
ওরিয়ানার সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব হাই স্কুলের দিন গুলি থেকে। ওরিয়ানা তখনই খুব ভালো বেহালা বাজাতো, গিটার বাজাতো, ভালো গাইতো। স্বপ্নের মতন সেইসব দিন, গিবান ডুবে থাকতো স্বপ্নে, কত আশ্চর্য সব পরিকল্পনা মাথায় গিজগিজ করতো। অসম্ভব সব স্বপ্ন, আশ্চর্য সব কল্পনা। ওরিয়ানা সেগুলোতে আরো রঙীন তুলি বোলাতো, ওকে উসকে দিতো। এইজন্যেই ওদের মধ্যের আপাত অমিল সত্বেও বন্ধুত্বটা টিকে গেছিলো, পরে আরো দৃঢ় হয়ে হয়ে কখন যেন অজান্তে বন্ধুত্বের সীমা টপকে প্রেম হয়ে গেছিলো গিবান জানতেও পারেনি।
গাড়ী চালিয়ে যেতে যেতে ও সেসব দিনগুলোর কথাই ভাবছিলো, সেই নতুন কলেজে ঢোকা, ওয়েলকাম পার্টি, সেখানে একঢাল খোলা চুল পিঠে ছড়িয়ে দুষ্টু চোখের ওরিয়ানা গিটার বাজিয়ে গাইছে। প্রথম দিনেই সবার মন জয় করে নিলো সুন্দর মেয়েটা।
এইসব ভাবনাতে ডুবে গাড়ী চালাতে চালাতে ও পিছনে ফেলে আসছিলো বালির পাহাড়, ফনীমনসার বাঁক, ছোটো একটা তিরতিরে স্রোত, খেজুর কুঞ্জ-সব একে একে পিছনে ফেলে সে চলে যাচ্ছিলো উত্তর সীমান্তের দিকে। পিছনে ফেলে যাচ্ছিলো আস্তে আস্তে থেমে আসা ঝড়বৃষ্টিও।
শহর ছাড়িয়ে গেলো রাত নটা নাগাদ। মাঝরাতে নির্জন মরুভূমির মাঝখানে গাড়ী চালাতে চালাতে ক্লান্তি এলো, একপাশে গাড়ী থামিয়ে ও বেরিয়ে এলো গাড়ী থেকে। এদেশে গাড়ী থামালে পুলিশের ঝামেলা নেই আর এই একটেরে নিস্বম্বল মরুভূমির মাঝখানে চোরডাকাতের আশংকাও নেই, তারা সবাই ক্যাসিনো শহরে নিজেদের কাজ করে।
গাড়ী থেকে বেরিয়ে এসে উন্মুক্ত আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে নিশ্বাস নিলো গিবান। এখানে আর মেঘজল নেই, একেবারে স্ফটিকস্বচ্ছ আকাশ। লক্ষ লক্ষ তারা ঝলমল করছে আকাশে, কী অদ্ভুৎ স্নিগ্ধ দ্যুতি ওদের! এতক্ষণে মনের একটা অস্বস্তি একেবারে দূর হয়ে গেলো গিবানের। হ্যাঁ, সে গিবান।
কেন জানি এতক্ষণ একটু একটু অস্বস্তি হচ্ছিলো ওর। স্মৃতির ধারায় একটা অন্ধকার জায়গা ছিলো, সময়ের কিছুটা যেন সে হারিয়েছে। বিরাট ল্যাব কমপ্লেক্স তৈরী হচ্ছে, সবাই প্রচন্ড ব্যস্ত, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সাহসী ও চ্যালেঞ্জিং প্রোজেক্ট এখানে হাতে নেওয়া হলো,পূর্নাঙ্গ ক্লোন তৈরীর প্রজেক্ট। সব স্পষ্ট মনে পড়ছে, মনে পড়ছে কিভাবে গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ শুরু করলেন, কিভাবে সব মেটেরিয়াল এসে পড়লো, কিভাবে কাজ এগোতে লাগলো।
কিন্তু তারপরে? তারপরেই একটা বিপুল অন্ধকার স্মৃতির মধ্যে, যেন ঘুমিয়ে পড়লো গিবান, গভীর অচেতনপ্রায় ঘুম। প্রথমে একেবারে পীচকালো অন্ধকার, শব্দহীন, গন্ধহীন, স্পর্শহীন। ক্রমে ঘুমের মধ্যে অস্পস্ট শব্দ তরঙ্গ এসে পৌঁছতে লাগলো তার চেতনায়, কেমন ধোঁয়া ধোঁয়া সব। অদ্ভুত্ গন্ধ অনুভবে আসতে লাগলো, অদ্ভুত উষ্ণ সমুদ্রের স্নানের মতন একটা অনুভব। সে কি সমুদ্রে ডুবে গেছিলো কোনোদিন? নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে একটা বিরাট স্বপ্ন দেখছিলো?
ওরিয়ানাকে একটা ফোন করা দরকার। গাড়ীতে এসে লিঙ্কটা খুঁজলো গিবান, নেই। ফেলে এলো? কিছুই ঠিক করে মনে পড়ে না। সেই ঘুমের থেকে বেরিয়ে একটা ঝড়বৃষ্টির স্মৃতি আছে, সেটাও আধাস্বপ্নের মতন। জলেভেজা মনে পড়ছে, গামাথা মুছে পোশাক পরে গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়া মনে পড়ছে, লিঙ্কটা তখন দেখে নিলো না কেন?
মন্তব্য
তারপর?? তারপর??
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
তারপর আগামীকাল।
ততক্ষণের জন্য অনুমতি দিন-
আবার দেখা হবে, সঙ্গে থাকুন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভালো লাগলো আপনার গল্প। অনেক ধন্যবাদ।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ শেখ নজরুল।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চলুক... ভালো লাগছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ নজরুল।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আহা এমন জায়গায় শেষ করেন কেন বলেন তো?
আরে কী করবো! একেকটা জিনিস ওরকম জায়গাতেই শেষ হয়েছে যে!
পড়ার জন্য ধনবাদ, সঙ্গে থাকুন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন