আমাদের ছোট্টো নদীটার চরে চখাচখীর মেলা বসতো। শুনেছি তারা নাকি প্রেমের পাখি। নদীতটের মাখনরঙের বালিতে রূপোরঙের ভোর থেকে কমলা সাঁঝ অবধি দিনজুড়ে ঠোঁট ঠোঁট মেলানো সখ্য! সাঁঝের তারা উঠলে তারা আলাদা হয়ে উড়ে যায় বিরহের রাত জুড়ে প্রেমের কঠিন তপস্যায়। কেজানে, এসব সত্যি না গল্পকথা!
তপতপে রোদ্দুরের চৈত্রদিনের শেষে মনকেমনিয়া দখিণা হাওয়া বয় শান্ত স্নিগ্ধ সন্ধ্যায়, ক্লান্ত শরীর এলিয়ে ছাদে বসে থাকি। থাম বেয়ে বেয়ে ছাদের পাঁচিলে উঠে আসা জুঁইফুলের লতায় ফুটেছে একটা দুটো তিনটে ফুল, হাওয়া তার সৌরভ চুরি করে নিতে নিতে ফেলে যায় কিছু। আকাশে তাকিয়ে দেখি শ্যামলী কিশোরীর টলটলে অশ্রুর মতন ফুটে উঠেছে সাঁঝের একলা তারাটি। মনে পড়ে, তখনই মনে পড়ে তোর কথা।
সেদিনও এমন চৈত্রসন্ধ্যা ছিলো। তুই আমাকে বলেছিলি " নীলা, নীলা, সেই কোন ছোটোবেলা থেকে একসাথে খেলাধূলা করে বড় হচ্ছিলাম আমরা! তুই, আমি কত কাছে কাছে ছিলাম। তারপরে....তারপরে কখন আমরা দূরে চলে গেলাম নীলা? কাছে থেকেও কত দূরে!" তোর গলায় অপার্থিব বিষাদ এসে জড়ো হয়েছিলো। আমি শুধু চেয়ে দেখছিলাম তোর মাথার পিছনে দূরে গাছের মাথায় জ্বলছে নিভছে একঝাঁক জোনাকি।
আমি জানতাম সৌম্যকে তুই মিথ্যা কথা বলে বিষিয়ে দিয়েছিলি আমার সম্পর্কে! তুই পাগলের মতন প্রেমে পড়েছিলি, কিছুতেই ভাবতে পারছিলি না সৌম্য অন্য কাউকে ভালোবাসবে। তুই দিশাহারা উন্মাদিনী হয়ে গেছিলি সেই সময়। সব জেনেও আমি তোকে ক্ষমা করেছিলাম, সৌম্যর ভুল ভাঙাই নি। সে যখন সর্বস্বান্তের মতন এসে আমার কাছে বললো, "তুমি একবার বলো নীলা, একবার শুধু বলো ওকথা ভুল, তুমি ও কাজ করো নি, করতে পারো না।" আমি একটি কথাও বলিনি তখন, না। পাথরের বাঁধ দিয়ে আটকে ফেললাম আমার অশ্রুসমুদ্র। তুই যে আমার বড় প্রিয় ছিলি রে শুক্তি, নিজের বোন থাকলেও সে বুঝি আমার এত প্রিয় হতো না। তাই তোকে মিথ্যাবাদী বানিয়ে তোর ভালোবাসাকে চূর্ণ করা আমার স্বপ্নের অগোচর ছিলো। আমি চেয়েছিলাম তুই সুখী হ, তাতে আমার যা হয় হোক। এমনিতেও তো জীবনের কাছে আমার পাবার কিছু ছিলো না।
আজ কি বুঝতে পারিস শুক্তি? তোরা বাইরে চলে যাবার আগে সেই সন্ধ্যায় যখন আমার কাছে বিদায় নিতে এসেছিলি সেদিনও কি বুঝতে পেরেছিলি? তাই কি আকাশভরা বিষাদ ছিলো তোর গলায়? আমিই কি তাহলে ভুল ছিলাম? মিথ্যার ভিতের উপরে ভালোবাসার প্রাসাদ যে গড়া যায় না সেকথা কি জানিয়ে দেওয়াই উচিত ছিলো? তিন তিনটে জীবন কি তাহলে এমন নিরর্থক হয়ে যেতো না?
টলটলে সন্ধ্যাতারা ঝাপসা হয়ে যায় জলে, সব মুছে দিয়ে জেগে ওঠে তোর নীল হয়ে যাওয়া মুখ, ঠোঁট, চোখের পাতা। কেন কেন কেন শুক্তি? এমন কী ভাঙাচোরা কাটাছেঁড়া হয়েছিলো ভালোবাসার মলম দিয়ে যা জুড়ে দেওয়া যেতো না? নাকি তুই বুঝতে পেরেছিলি যাকে ভালোবাসা ভেবেছিলি তা ছিলো উন্মাদ মোহ?
না, সৌম্য আসে নি আমার কাছে। হয়তো সে বুঝেছে, হয়তো বা বোঝে নি। কী আসে যায়! আমিও তো তাকে সত্যি করে চাই নি! চাইলে কি অত নির্বিকারে সরিয়ে দিতে পারতাম? নির্বিকারেই কি? কেজানে!
দিনের পরে দিন যাবে, রাতের পরে রাত। এমনি করে মোহনা আসবে একদিন আমারও। আবার একদিন দেখা হবে রে শুক্তি, সেদিন তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো। জানি, সেদিন তুই ঠিক উত্তর দিতে পারবি। আমারও যে ক্ষমা চাইবার আছে তোর কাছে! জানি তুই করবি, পৃথিবীর ছোট্টো পাথরঘরে যে ক্ষমা ধরে না, আকাশের ওপারে আকাশ সেই ক্ষমায় ভরে আছে।
রাত হলো, আসি এবার। ভালো থাকিস রে।
মন্তব্য
আপনাকে মনে হয় আগেও একবার বলেছিলাম, আপনার নামটা দেখলেই ছোটবেলায় পড়া দুখিনী "কাজলরেখা"র কথা মনে পড়ে।
আপনার লেখাগুলো এমন বিষাদমাখা হয় কেনো বারবার, কেনো বারবার ভেতর পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়ে যায় !
ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ উজানগাঁ।
কই কাজলরেখার গল্প তো কইলেন না! একদিন লিখবেন বলেছিলেন যে!
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কি যে কষ্ট পেলাম, এত ভাল কিভাবে লেখেন আপনি?
ভালোবাসা কি যে অদ্ভূত--- পেলেও কষ্ট, না-পেলেও কষ্ট।
আজীবন ভালবেসেও মাঝে মাঝে মন পাওয়া যায়না আবার কেউ তা পেয়েও ধরে রাখতে পারেনা। কেন এত কষ্ট কে বলতে পারে?
কতকিছু মনে পড়ে গেল!
রিখি, কষ্ট পাবেন না। সুখী হোন, ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন। সুখ আর দুঃখ ঘুরে ঘুরে আসে বলেই না আমাদের জীবন এমন বৈচিত্রময়!
পড়ে চলে যাই, বলা হয় না, আপনার যে কটা লেখা পড়লাম, খুব ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খুব অন্তরঙ্গ লেখার ভঙ্গিটা, যেন যে বলছে সে খুব চেনা। ভাল লাগল।
ফারাবী
----------------------------------
It will be long ere the marshes resume,
It will be long ere the earliest bird:
So close the windows and not hear the wind,
But see all wind-stirred.
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ফারাবী।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপু, জীবন কি কখনও অনর্থক হয়? কষ্টের জীবনেরও তো অর্থ আছে।.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
ঠিক বলেছেন, জীবন নিরর্থক নয়। আমাদের সীমাবদ্ধ দৃষ্টিতে হয়তো সবসময় আমরা সার্থকতাটুকু দেখতে পাই না।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এমনি করে মোহনা আসবে একদিন আমারও.......... আপনার সব লিখাই অসাধারণ,ঘোরের মধ্য ছিলাম অনেক্ষণ...গল্পের নায়িকাটা আমার কল্পনার নায়িকাও...
(অর্ক১৩)
অনেক ধন্যবাদ অর্ক।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া লেখাটির জন্য অশেষ শুভেচ্ছা।
তমিজ উদদীন লোদী
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
গল্প ভালো লাগলো। মিষ্টি একটা কষ্ট মেশানো। যদিও কষ্ট কখনও মিষ্টি হয় না। তবু সাহিত্য পাঠের অনুভুতিগুলো একটু অন্যরকম, কি বলেন?
লীলা মজুমদার একবার একটা লেখায় বলেছিলেন গল্প পড়ে কাঁদার মধ্যে একটা মধুর ব্যাপার থাকে, সত্যিকারের দুঃখের সময় চোখমুখ তিতোয় ভরে যায়। আমারও কেন জানি তেমনই মনে হয়।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
"নীল ফড়িঙের দেশের থেকে এলে/
পায়ে তোমার ধুলোর রেণু মাখা/
এবার ভাবো কোথায় হেঁটে গেলে../
মাঝ-আকাশে চন্দ্র পাবে আঁকা?"
তুলিদি,
মনখারাপের সুর মোড়ানো লেখাগুলো কোন না কোন গান কিংবা কবিতা মনে করিয়ে দেয়...
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তিথীডোর, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমারও কোনো কোনো লেখা পড়লে মনে পড়ে যায় কোনো গান বা কোনো কবিতার কিছু কিছু লাইন।
আপনার দেওয়া লাইনগুলো খুব সুন্দর, এটা কি কোনো গানের অংশ?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আসলে আমারো জানা নেই ঠিক... অনেক আগে প্রিয় বন্ধু মুঠোফোন বার্তায় লিখে পাঠিয়েছিলো! স্মৃতিতে গেঁথে আছে এখনো..
ভালো থাকবেন!
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আপনার গল্পে কি যেন একটা মিশে থাকে, মনকে কোথায় হারিয়ে ফেলি।
কখনো কখনো তো সরিয়েও দিতে হয় না কিভাবে যেন সরে যায়।
এর ব্যাখ্যা কেই বা জানে!
আর সুখের পর দুখ বা দুখের পরে কি সুখ সব সময় আসে?
কারো কারো জীবনে তো দেখি দুখের শেষ হয় না আর কারো জীবনে সুখ।
মানুষের মন এক রহস্যময় জিনিস, এর কিনারা পাওয়া ভার।
কোনটা যে সুখ কোনটা যে দু:খ তারই কি কোনো কিনারা হয়েছে? কখনো কখনো তো কেউ অপার সুখের মধ্যে ডুবে থেকেও লুকানো রত্নের মতন দু:খকে লালন করে ভিতরে ভিতরে। আবার কখনো কেউ দুখকষ্টের জীবনের ভিতরেও সুখের ফুলঝুরি নিয়ে আসতে পারে!
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন