এখানে এসেছি মাসখানেক হলো। পার্থিব সময়ের মাসখানেক। এখানে মাস ব্যাপারটাই অর্থহীন, এ গ্রহের কোনো চাঁদ নেই। চাঁদের কমাবাড়া দেখে মাস গোণার ব্যাপারটাই বোঝানো যাবে না। এখানে দিন মাপার কৌশল যান্ত্রিক, নিখুঁত। অবশ্য পৃথিবীতেও আজকাল আর কে চাঁদ দেখে ঠিক করে দিনটা পূর্ণিমা না কৃষ্ণা প্রতিপদ না দ্বিতীয়া? বাচ্চা ছেলেপুলেরা তো অনেকে এই নামগুলো ও জানে না!
আমাকে থাকতে দিয়েছে এক আশ্চর্য বাড়ীতে। সে বাড়ীর ঘরগুলো ভারী অদ্ভুত। এরা নিজেদের আকার বদলায়, রঙ বদলায়। গোটা বাড়ীটাই নিজের আকার আকৃতি বদলায়। কখনো মুহুর্মুহু বদলায়, কখনো ধীরে। গতকাল আমার ঘরটা ছিলো চৌকো, ছাদটা ছিলো বর্গাকার। এখন ঘরটা চতু:স্তলকীয়, ত্রিভূজাকার দেয়ালগুলো ঐ উপরে একটা বিন্দুতে মিশে গেছে, কোনো ছাদের প্রয়োজন হয়নি আর। দেয়ালগুলোর রঙও বদলে গেছে, গতকাল ছিলো হালকা সবুজ, ভিতর থেকে স্বচ্ছ আর বাইরে থেকে অস্বচ্ছ। আজ তারা নীলকান্তমণির মতন নীল, দুপাশ থেকেই অস্বচ্ছ।
সবকিছু নিজেদের বদলে ফেলে এখানে, ভারী অবাক লাগে আমার। হয়তো অবাক হওয়া উচিত না। আমার অবশ্য কোনো অভিযোগ নেই, আমার মাঝে মাঝে মজারই লাগে। এত বৈচিত্র!
শুধু দেয়ালের রঙ বা আকারই তো না, জানালা দরোজাও বদলায়। কোনো কোনো দিন কোনো দরোজাজানালাই দেখতে পাই না, ভয়ে আমার দমবন্ধ হয়ে আসে, ক্লসট্রোফোবিক লাগে। তখুনি ছোট্টো একটা দরোজা দেখা দেখা দেয় কোনো এক দেয়ালে, আমি স্বস্তির শ্বাস ফেলি। হালকা সুগন্ধী হাওয়া বয়ে যায় আমার মুখচুল ছুঁয়ে, বেলীফুলের গন্ধ হাওয়ায়। আমার মন হালকা হয়ে যায়, আনন্দের বৈদ্যুতি বয়ে যায় আমার ভিতর দিয়ে।
যেন ঘরগুলো বুঝতে পারে আমার মন, আমার সাথে খেলতে চায়। কখনো কখনো আমার ভালোই লাগে খেলতে, কখনো কখনো চাপা টেনশনে কিছুই ভালো লাগে না। তখুনি এরা খেলা বন্ধ করে দেয়, আমার মন শান্ত করে দেবার কিছু একটা করে। এরা কি আমার জন্য ভাবে?
আজকের নেপথ্যসুর ভারী নরম একটা সুর, বুঝতে পারিনা কি বাজনার সুর, ভারী ভালো লাগে। কখনো মনে হয় বেহালা, কখনো বাঁশী, কখনো জলতরঙ্গ। বাতাসে আজ জুঁই ফুলের গন্ধ।
এখানে অনেক সার্ভিস রোবট, এরা আমার সমস্ত প্রয়োজনের সময় সক্রিয়। মায়াও এদের মাধমেই আমার সাথে যোগাযোগ করেন। রোবটদের কেউ কেউ দেখতে একেবারে মানুষের মতন, কেউ কেউ আবার খুব যান্ত্রিক চেহারার। ধাতব চেহারার রোবট আছে, ক্রিস্টালাইন রোবট আছে। মায়ার বার্তা নিয়ে আজকে এলো কিরা, কিরা দেখতে মানুষের মতন, মিষ্টি নরম চেহারার একটি মেয়ে, হালকা বাদামী চুলগুলো এলোমেলো, মুখে একটা নরম হাসি। কিরার হাসিটা কেন জানি খুব চেনা লাগে। কোথায় দেখেছিলাম এই হাসি? মনে পড়ে না, আগের অনেক কথাই ভুলে গেছি। তবু মনেও তো আছে অনেক কথা! যা ভুলতে চাই তা ভুলতে পারিনা, অথচ যা ভুলতে চাই না তা গেছি ভুলে।
কিরা আমাকে মায়ার বার্তা জানালো। মায়া আমার সঙ্গে দেখা করতে চান, ঠিক ন'টার সময় আমার যেতে হবে মায়ার কাছে। মায়ার সামনে কেন জানি সবসময় আমি কেমন অস্বস্তি বোধ করি। আমি জানি না কেন এমন হয়। মায়া খুব স্নিগ্ধ, শান্ত চেহারার, যতবার আমার সঙ্গে দেখা হয়েছে প্রত্যেকবার ভালো ব্যবহার করেছেন। কিন্তু কিছুতেই আমি মায়ার সামনে সহজ হতে পারিনা, অদ্ভুত এক টেনশন আমার মনটাকে পেঁচিয়ে ধরে।
মায়ার উপস্থিতির তাপ আবছাভবে আমাকে মনে করিয়ে দেয় কোনো একজনের কথা, একজন যাকে আমি খুব ভয় পেতাম, যাকে আমি খুব ভালোবাসতাম, যাকে আমি প্রচন্ড ঘৃণা করতাম, যাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করতাম, যাকে ছাড়া থাকতে পারতাম না আবার যাকে একমুহূর্ত সহ্য করতে পারতাম না। এইসব বিপরীত আবেগের অসম মিশ্রণ আমার মধ্যে ঘুলিয়ে ওঠে, আমার মাথা ঘুরায়, সবকিছু কেমন ঘোলাটে লাগে। মায়ার কাছে যেতে ইচ্ছে করেনা, কিন্তু তবু তৈরী হতে থাকি। আমার ইচ্ছা অনিচ্ছায় কিছু এসে যায় না, মায়ার যেকোনো নির্দেশই এখানে শেষকথা।
(চলবে?)
মন্তব্য
অবশ্যই চলবে। সুহানের গল্পটা পড়ে এই গল্প পড়লাম। কল্পনায় দুটি গল্পই দেখতে পেলাম যেনো।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
গল্পটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ বর্ষা।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দৌড়াবে.....তুলিরেখা।
মধুবন্তী মেঘ
ধন্যবাদ মধুবন্তী মেঘ।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
মায়ার সাথে দেখা হতে কি খুব দেরী হবে?
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
খুব দেরি হওয়ার তো কথা নয়! দেখা যাক এখন কী হয়!
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ধন্যবাদ নি:সঙ্গ গ্রহচারী।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চলুক।
আচ্ছা।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এটা সেই ইংরিজি গল্পটা না?
হ্যাঁ, সেইটাই। তবে স্থানে স্থানে পরিবর্তিত।
ভালো আছেন তো?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভালো লাগলো।
____________________________________
বিধিবদ্ধ পঙ্কিলতা।
জীবন বাবু,তাঁর কবিতা।
তৃপ্তিদায়ী আত্মশ্লাঘা।
এবং এ রাতজাগা।
************************************
ধন্যবাদ সহজীয়া।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন