মায়ার কাছে যাবার জন্য তৈরী হয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াই। আমার ভাবনা বুঝতে পেরে স্বচ্ছ হয়ে যায় জানালা। বাইরে ঝকঝকে রোদ্দুরে হাসছে লাল পাতাওয়ালা গাছের বাগান। পৃথিবীর হেমন্তের কথা মনে পড়ে, যদিও এইসব গাছের পাতারা সবসময়েই লাল।
রাতে অজস্র তারাওয়ালা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে প্রথম যেদিন আমাদের সূর্যকে দেখেছিলাম ক্ষুদ্র টিমটিমে একটি আলোকবিন্দুর মত, সেদিন কেমন একটা আশ্চর্য অনুভব হয়েছিলো! বুঝতে পারিনি সেটা কী। সে কি অভিমান, সে কি দুঃখ, নাকি সে অনাসক্তি?
পৃথিবীতে আমরা সংগ্রাম করেছিলাম স্বৈরতন্ত্রের বিরূদ্ধে, টোটালিটারিয়ান সমাজব্যবস্থা আমরা চাই নি। আমরা জীবনের শেষ মুহূর্তটুকু পর্যন্ত দিতে তৈরী ছিলাম সে সংগ্রামে। সমান অধিকার আর চিন্তার স্বাধীনতা ছিলো আমাদের কাছে সবচেয়ে বড়ো জিনিস।
এখানে সবকিছু অন্যরকম লাগে, মাঝে মাঝে অদ্ভুত একটা শীতে ভেতর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। মানুষ এখানে প্রযুক্তিতে এত অগ্রসর আর এত দ্রুত আরো আরো অগ্রসর হয়ে চলেছে যে আমার পক্ষে বুঝতে পারাও সম্ভব না সবটা। আমি সবটা বুঝতে চেষ্টাও করি না। শুধু একটা জিনিস কাঁটার মতন খচখচ করে ভিতরে। কিছুতেই বুঝতে পারিনা, কেন এই মানুষেরা এত শান্ত, এত বাধ্য, এত নি:শব্দ আজ্ঞাবাহী? কেন তারা একটাও প্রশ্ন করে না, কেন তারা একটাও নতুন সাজেশান দেয় না?
যত পার্টিতে সভাসমিতিতে আনন্দোৎসবে গেলাম, সর্বত্র একই জিনিস দেখলাম। ঠান্ডা বাধ্যতা, শান্ত আনুগত্য। বিদ্রোহের একটা ছোট্টো ঝিলিক কারুর চোখের ভিতরে দেখার জন্য কী যে তৃষার্ত হয়ে থাকে আমার সারাদেহমন! একটা ছোট্টো সোনালি ঝিলিক শুধু যা এই নীরব মাথাকাত করা আনুগত্যের শৈত্য দূর করে দেবে। কোথাও দেখিনি। শুধু আরো আরো আরো শীতে কেপে উঠেছে আমার মেরুশিরা।
মায়ার কাছে যাবার সময় এগিয়ে আসছে, সেই অদ্ভুত শীত আবার আমার ভিতরে ফিরে আসছে। একটা নাম না জানা অস্বস্তি, ভয়। যেতে ইচ্ছে করে না, একদম ইচ্ছে করে না। কিন্তু উপায় নেই, যেতেই হবে। মায়ার কথার নড়চড় হয় না এখানে, হবে না কখনো। আহ, কতদিন আমিই বা মায়ার মায়াজালের বাইরে থাকতে পারবো? একদিন না একদিন ধরা পড়তেই হবে।
এবারে ঘরে মায়া একাই ছিলেন। অন্য যেসব দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে, সেসব সময়ে সবসময়েই আরো লোক ছিলো ঘরে। এবারে মায়া একা আর আমি তার সামনে। দু'জন একা, মুখোমুখি। মায়ার ঘর আমার কাছে সবসময়ই ম্যাজিকম্যাজিক লাগে। কখনোই ও ঘরে কোনো দেয়াল দরজা জানালা কিছু চোখে পড়ে নি, শূন্যতার অনুভুতিও হয় নি কিন্তু। একধরনের আশ্চর্য আলো আর সঙ্গীতে পূর্ণ সে ঘর। বুঝতে পারিনা দাঁড়িয়ে আছি না ভেসে আছি। যেন ভিন্ন মাত্রা, যেন চেনা জগতের কিছু না সে, যেন একটা ভিন্ন বাস্তবতা যার সঙ্গে আমার সীমাবদ্ধ ত্রিমাত্রিক অনুভূতি পাল্লা দিতে পারে না।
বন্যায় ডুবে যাবার আগে কুটো আঁকড়ে ধরার মতন মনে করতে চেষ্টা করি এ ঘরের ম্যাজিক প্রবেশপথ পার হয়ে ঘরে ঢুকে আসার আগে কী হয়েছিলো। ছাড়া-ছাড়া টুকরো টুকরো মনে পড়ে ঘটনামালা।
(ছৈলত? )
মন্তব্য
অসমাপ্ত মনে হলো। আরো পড়ার ইচ্ছা থাকলো।
____________________________________
বিধিবদ্ধ পঙ্কিলতা।
জীবন বাবু,তাঁর কবিতা।
তৃপ্তিদায়ী আত্মশ্লাঘা।
এবং এ রাতজাগা।
************************************
অনেক ধন্যবাদ সহজীয়া। যারা পড়েন, তাদের কাছ থেকে ভালো ফীডব্যাক পেলেই লেখা আসতে থাকবে। এটা ধারাবাহিক লেখা। -----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চলুক...।
অনেক ধন্যবাদ নৈষাদ। আপনারা পড়ছেন জানলে লিখতে ইচ্ছে হয়।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অবশ্যই!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
ধন্যবাদ ওডিন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপু ৬দিন ধরে অপেক্ষা করতেছি। তৃতীয় পর্ব কবে বের করেন জলদি।
নহক
আরে বলো কী? অপেক্ষা করছো?????
হিট কাউন্ট দেখে তো আমি ভাবি কেউ বুঝি পড়েই না। তাই কত ধারাবাহিক লেখাই থামিয়ে দিতে হয়েছে।
ভালো থেকো, সময় হলেই পরের পর্ব দেবো।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন