অচেনা সঙ্গী বললো, "আরে, এক্ষুণি সব বুঝতে পারবে কেমন করে? তুমি এত অধৈর্য কেন রণি?" এর আগে ওর স্বর কখনো এত কঠিন লাগে নি, এই প্রথম লাগলো৷
আমি চুপ করে গেলাম৷ একদম চুপ, শুধু বহুদূর শীতের প্রান্ত থেকে বিষন্ন হাওয়ার সঙ্গে উড়ে উড়ে আসতে থাকলো নরম সাদা ফুল, শেষ হয়ে যাওয়ার আগের শ্বেত জারুলের গুচ্ছ, টালি ছাওয়া বিকেলের বারান্দায় অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা সাত বছরের বাচ্চা মেয়ে, ওর বড়ো বড়ো হয়ে যাওয়া দু'খানা চোখ, থমকে যাওয়া বেদনা আর ভয়ের ছবি ঐ চোখের মণিতে, এক্ষুণি ও মরে যাবে, কিন্তু আবার নতুন করে জন্মাবেও এক্ষুণি, শুধু ঐ মুহূর্তটা মরবে না, ঐ ধারালো মোচড়ের কাছে এসে বারে বারে থমকে যাবে সময়৷ ও আর ভালোবাসতে পারবে না, বিশ্বাস করতে পারবে না কাউকে, কোমল করুণ মুহূর্তগুলি ওর চোখের প্রসাদ যাচ্ঞা করে করে মিলিয়ে যাবে সময়ের মহাসাগরে, ও চেয়ে দেখতে পারবে না, তীব্র ভয়ে আর কষ্টে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেসব থেকে৷
কিছু তো দিতেই হবে কাউকে, কাউকে তো বলি হতে হবে মাতৃপূজায়, নইলে কিছু পাওয়া যাবে কী করে? আরোগ্য নিকেতনে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে অটো লিলিয়েনথাল এইরকমই কিছু কি বলেছিলেন না? উড়নযন্ত্র বানাবার ও সেটা চালাবার এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে মারাত্মক আহত তিনি জানতেন মরণ এসে গেছে, কিন্তু সে অমৃতসমান৷ কতদিন পরে ধুলোপায়ে দুই তরুণ আসবে তাঁর সমাধিতে ফুল দিতে, কোন্ অসীম জলধির পার থেকে, ওরা সত্যি সত্যি ডানায় হাওয়া ধরে ফেলে উড়িয়ে দিয়েছে ওদের ছোট্টো প্লেন!
পৃথা একা একা উপলবন্ধুর পথে চলেছে চলেছে দক্ষিণে, কেজানে কোথায়৷ কবে গিয়ে পৌঁছবে সে গন্তব্যে? জানেনা সে একলা মেয়ে, কেউ নেই পথ দেখাবার, তবু অলিগলি গিরিখাত তাকে অভয় দিয়ে ডাকে, পাইন ফার চিনার ওক গাছেরা নুয়ে নুয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,"ভয় নেই ভয় নেই৷ এগিয়ে যাও৷" কখনো বলে,"না না ঐদিকে না৷"
থমকে দাঁড়ায় পৃথা,"কোন্ দিকে তবে?"
গাছেরা শুধু মাথা দোলায়, আর কিছু বলে না৷ নিজে পথ ঠিক করে নিয়ে একদিকে চলে সে,
" ক্লান্ত দু'চোখ ক্লান্ত চোখের পাতা,
তাহার চেয়েও ক্লান্ত আমার মন-
মাঝ উঠানে সুজ্জিপুকুর আঁকা,
এলো না সেই স্বর্ণপলাশ ক্ষণ ... "
দূত আমার দিকে চেয়ে নরম সুরে মন থেকে মনে কথা বললেন,"কী হলো? এত চুপ? মনখারাপ হয়ে গেলো নাকি?"
"নাহ, মনখারাপ কিসের?" শুকনো উদাস উত্তর আমার৷
অদ্ভুত কথা মনে হয় একটা, সেই অনেকদিন আগে পড়া গল্পের সেই দুই যমজবোন স্টেলা আর আর্থা৷ আর্থা পৃথিবীতে থাকে, স্টেলা চলে মহাশূন্য অভিযানে, বেশ কিছু বছর কাটে অভিযাত্রিণী স্টেলার, তারপরে পৃথিবীর দিকে মোড় ঘোরে সে, ফিরে আসার জন্য৷ ফিরে এসে সে দেখে বহু বছর কেটে বৃদ্ধা হয়ে গেছে আর্থা ৷ আর্থার নাতি নাতনিরা জ্বলজ্বলে তরুণ চোখ নিয়ে এসেছে স্টেলাকে অভ্যর্থনা করে নিয়ে যেতে৷ এদের সঙ্গে নতুন করে বন্ধু পাতাতে হবে স্টেলার, সে এক শতবর্ষের যুবতী! তার সময়ের গান নাচ নাটক মুভি কবিতা সব এখন আর্কাইভের ধূসরতায় মিশে গেছে৷ স্টেলা না আর্থা, কার জীবন সুখের হলো শেষপর্যন্ত? সময়ের গতিকে মেনে নেওয়াই কি সুখ, সেই কি আনন্দ? সেই কি সার্থকতা?
"দূত, আমি যদি ফিরে আসি বেশ কবছর পরে, সত্যিই কি দেখবো পৃথিবীতে বহু বছর কেটে গেছে ? সুনীথা, শমী, রওশন, পাভেল, শালিনী, শন, উইলিয়াম, আমান্দা, এলিজাবেথ, গ্যাব্রিয়েলা কাউকে আর দেখতে পাবো না? এদের কারুর নাতি নাতনি আসবে আমায় নিয়ে যেতে?"
"রণি, তুমি আর ফিরে আসবে না রণি, এলেও এই রূপে নয়৷" শুভ্রপোষাক দূতের ভাবলেশশূন্য ধাতব গলার উত্তরের মতন আমার মনের পর্দায় কথাটা আছড়ে পড়ে৷ ইমোশনহীন রোবট এরা সবাই? কিন্তু রু! সে তো এমন ছিলো না!
নক্ষত্রের চূর্ণ ছড়ানো পথের দিকে চেয়ে অবশ হয়ে আসে চেতনা, পৃথিবীর দিনরাত্রি জড়িয়ে ধরে গভীর মায়ায়, যেতে দিতে চায় না। ঐ নীলজলের নীলাম্বরী জড়ানো মা তার সহস্র বাহু বাড়িয়ে আমায় টানছে!
মন্তব্য
এটা একটু অন্যরকম। কিন্তু ভালো লাগলো।
--------------------------------------------------------------------------------
এই প্রথম আপনার কমেন্ট পেলাম আমার লেখায়।
সত্যি খুব ভালো লাগলো, ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
লাইক দিলাম।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
দিলেন?
দিলেন???
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আমি-ও পছন্দ করলাম।
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
আলোকবাজি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
আপনিও?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভীষণ ভালো লাগলো
সাবরিনা সুলতানা
ধন্যবাদ সাবরিনা সুলতানা।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন