এত উপরের বারান্দা থেকে উপত্যকা সুন্দর লাগছে, অচলায়তনের দরোজা খুলে পাহাড় উপত্যকা পেরিয়ে চলে যেতে থাকা সেই পঞ্চকের মতন খুব গাইতে ইচ্ছে করছে,
" তুমি ডাক দিয়েছ কোন্ সকালে কেউ তা জানেনা
আমার মন যে কাঁদে আপনমনে কেউ তা মানেনা
ফিরি আমি উদাস প্রাণে,তাকাই সবার মুখের পানে
তোমার মত এমন টানে কেউ তো টানেনা!"
ঐ যে সব প্রাচীর পার হয়ে সব দরোজা খুলে চলে যায়, কে সে? সে কি পঞ্চক? নাকি অমল? নাকি সেই মুক্তধারা ঝর্ণার কিনারে বসে মাতৃভাষা শুনতো যে, সেই অভিজিৎ? নাকি নাগাই নদীর জল বাহুবিক্ষেপে তোলপাড় করে তোলা রঞ্জন? সেই নীলকন্ঠ পাখিটাই বা কোথায়? রক্তকরবীর মালা গাঁথতে গাঁথতে নন্দিনী যাকে জাগরস্বপ্নে দেখতো ধ্রুবতারার পাশ দিয়ে উড়ে আসছে?
আরো আরো আরো দূরে যেতে যেতে--ঐ যেখানে দূরে নীলসবুজ দিকচক্ররেখায় আকাশ নত হয়ে পড়ার কুহক রচনা করে---সেই দূর দিগন্ত পার হয়ে চলে যেতে যেতে-- ঐ নীল সীমানা পার হয়ে আরো আরো আরো বলতে ইচ্ছে করে,
"বেজে ওঠে পঞ্চমে স্বর
কেঁপে ওঠে বন্ধ এ ঘর
বাহির হতে দুয়ারে কর
কেউ তো হানেনা!"
কী জানি কখন চিঠি আসে---সে তো ঐ দূরের দূরের দূরের পথ পার হয়ে আসছে কেবল আসছে আসছে৷ পথের ধারের গাছগুলি কেমন খুশীয়াল হয়ে ওঠেছে, ধানের চারাগুলি কেমন মাথা দোলাচ্ছে!
এ পথ গেছে কোন্খানে গো কোন্খানে গো কোন্খানে .... " ঐ কিছুই না'র ওড়না বেয়ে কখন আসে নিমন্ত্রণের চিঠি! তারই জন্য যে চঞ্চল হয়ে আছে মৌমাছিদের ডানা৷
"মৌমাছি ফিরে যাচি' ফুলের দখিনা
পাখায় বাজায় তার ভিখারীর বীণা৷"
সারি জিজ্ঞেস করে শুককে,"তোমার আকাশে কীই বা আছে?"
শুক বলছে,"আছে সকাল, আছে সন্ধ্যা, আছে মাঝরাত্রের তারা, আছে দখিন হাওয়ার আসা যাওয়া, আর আছে কিছুই না কিছুই না কিছুই না৷"
সারি অবাক,"কিছুই না আবার কী? সেটা থাকেই বা কীকরে?"
শুক বলছে," আকাশের সবচেয়ে অমূল্যধন ঐ কিছুই না৷ ঐ কিছুই না'র জন্যই তো মন কেমন করে যখন বাসা বাঁধি বনের ছায়ায়৷ ঐ কিছুই না কেবল করে খেলা রঙের খেলা নীল আঙিনায়, ঐ কিছুই না'র ওড়না বেয়ে আমের বোলের নিমন্ত্রণের চিঠি এসে পড়ে, খবর পেয়ে মৌমাছিদের ডানা চঞ্চল হয়ে ওঠে৷"
সেই কিছুইনা'র পথ ধরে আসা আলোর চিঠির জন্যেই তো জানালা খুলে বসে রইতো অমল, তাই নয়? ডাকঘরের সেই কথামালা নিয়ে ক্যাম্পের ছোটো ছোটো বাচ্চাদের শিখিয়ে শিখিয়ে সেই ইয়ানুশ কোর্চাক .... তারা যে রাজা আসবে বলে অপেক্ষা করে ছিলো সব্বাই, কেউ ঘুমায় নি৷ সেই অমল সেই সুধারা৷কেজানে কখন আসে রাজার চিঠি! কোন্ মধ্যরাত্রিনীল অন্ধকার পার হয়ে আশ্চর্য আলোর খবর নিয়ে? তবে ? রাজা কেন এলেন না?
কে বলেছে রাজা অসেন নি? ঐ তো ইয়ানুশ আর তাঁর ছাত্রছাত্রীরা সব্বাই সেই সাদা দাড়ি শুভ্রকেশ দীর্ঘবেশ অমলীন হাসিমুখের রাজার চারিপাশে ছড়িয়ে পড়ে স্বচ্ছ রাত্রিতে তারা চিনছে সবাই! রাজা ওঁর শুভ্র আঙুল বাড়িয়ে দেখাচ্ছেন ঐ যে ধ্রুবতারা, ঐ যে সপ্তর্ষি, ঐ যে সিংহরাশি, ঐ যে কন্যারাশির জ্বলজ্বলে চিত্রা! কোথা থেকে গভীর মন্ত্রধ্বনি ভেসে আসছে, মন্দিরার সঙ্গে- ... " অসতো মা সদ্গময় / তমসো মা জ্যোতির্গময় / মৃত্যোর্মামৃতম গময়/ আবীরাবীর্ম এধি৷"
অসত্য হতে আমায় সত্যে লও
অন্ধকার হতে আমায় আলোয় লও
মৃত্যু হতে আমায় অমৃতে লও
হে চিরপ্রকাশ, আমার হয়ে প্রকাশিত হও ....
মন্তব্য
সেই 'কিছুই না' পাওয়া হয়না বলেই বোধ হয় অনেক কিছু পেয়েও সাধ মেটেনা প্রাণের, কেবল চেয়েই যায়...।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ঠিক, ঐ কিছুই না খুঁজতে গিয়েই তো আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেছে বাঘা বাঘা লোকের। মহাবিশ্বের ৭৩ পারসেন্টই নাকি কিছুই না!
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এ পথ গেছে কোন্খানে গো কোন্খানে গো কোন্খানে ??
কে জানে তা...
''দূর মন্দিরে সিন্ধুকিনারে পথে চলিয়াছো তুমি--
আমি তরু, মোর ছায়া দিয়ে তারে
মৃত্তিকা তার চুমি।
হে তীর্থগামী, তব সাধনার
অংশ কিছু বা রহিল আমার
পথ পাশে আমি তব যাত্রার
রহিবো সাক্ষীরুপে।
তোমার পুজায় মোর কিছু যায়
ফুলের গন্ধ,ধূপে...''
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ তিথীডোর।
এ লেখাও আসলে গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা, বেশীটাই উদ্ধৃতি।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
লেখা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সুন্দর - সবসময়ের মতোই।
অনেক ধন্যবাদ বইখাতা।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
একটা চশমা-চোখের ইমো দিতে মন চাইতেছে, কিন্তু পারি না।
সুন্দর। বেশ কিছুদিন পরে আপনার লেখা পড়লাম।
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ধন্যবাদ।
লেখা তো নিয়মিতই আপলোডাই, আপনি এতদিন পরে পরে পড়েন শুনে মর্মাহত
ভালো থাকবেন, আপনার নতুন লেখাগুলো দেবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আসোলে আমার "পড়লাম"-এর বদলে বলা ঠিক ছিলো "পড়া হ'লো"। আমি নিজেই তো নিয়মিত না আজকাল। তাই গ্যাপ স্বাভাবিক। আর, আমার লেখা-ই বা কে পড়ে! তুলনা তুলনা ব্যাপার ক'রে ফ্যালাটাও অবশ্য ঠিক হ'লো না বোধ হয়। আমি তো আপনার মতো বড় লেখক নই মোটে।
ভালো থাকবেন আপনিও।
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ঘুরিয়ে বললেন নাকি?
আপনার তো বই বেরিয়ে গেছে, বড় লেখক তাহলে কে জনাব?
তবে এখানে আমার মতন অভাজনদের পাতেও মাঝে মাঝে কিছু মিষ্টান্ন কি ঝালান্ন কি করোলান্ন কি নবান্ন যা হোক দিয়েন গো!
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন