এই উপকথা ব্রাজিলের। ব্রাজিলের উত্তরপূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল থেকে গল্পটি সংগ্রহ করে ১৮৮৩ সালে প্রথম গ্রন্থাকারে সঙ্কলন করেন সিলভিও রোমেরো।
গল্পে চলে যাই। এক ছিলো রাজা আর তার ছিলো রাণী। সমুদ্রতীরে তাদের সুখের রাজ্য। প্রাসাদকেল্লা ধনজন সহায়সম্পত্তি সব ছিলো অঢেল, কিন্তু দীর্ঘকাল দাম্পত্যজীবন যাপন করেও সন্তানের মুখ দেখতে পান না রাজারাণী। রাণী মুষড়ে পড়েন, রাজা মুখ শুকনো করে রাজ্যভার পালন করতে থাকেন।
এমন সময় দেবতা তাদের নিরুচ্চার প্রার্থনা শুনলেন, রাণী সন্তানসম্ভবা হলেন। নির্দিষ্ট সময় পরে সন্তান জন্মলাভ করলো, যমজ সন্তান। এক ফুটফুটে পরীর মতন খুদে মেয়ে আর সেই মেয়ের গলা জড়িয়ে এত্তটকু ছোট্টো একটা সাপ।
রাজকন্যার নাম রাখা হলো মারিয়া আর সাপমেয়ের নাম হলো ডোনা লাবিস্মিনা। দুজনে একসাথে বড় হয়, খেলাধূলা করে। সমুদ্রতীরে মারিয়া ছুটে বেড়ায় আর সাপবোন জলে নেমে সাঁতরায়। খেলাশেষে বাড়ীফেরার সময় ডোনা লাবিস্মিনা এসে মারিয়ার গলা জড়িয়ে কুন্ডলী পাকায় আর রাজকুমারী খুশি হয়ে ঘরে ফেরে।যেদিন ডোনার দেরি হয় সেদিন ছোট্টো মারিয়া কান্না জুড়ে দেয়।
আরেকটু বড় হবার পরে একদিন সাপবোন মারিয়াকে বলে, "বোন, আমি তো আর তোর সাথে থাকতে পারবো না। সমুদ্রে চলে যেতে হবে আমাকে। কিন্তু কখনো যদি তোর কোনো সঙ্কট হয়, আমাকে স্মরণ করা মাত্র আমি আসবো।"
ডোনা লাবিস্মিনা সমুদ্রে মিলিয়ে গেল, সেদিন খেলাশেষে একা একা মারিয়া ফিরে এলো রাজপ্রাসাদে। তারপর দিন যায়, রাজকুমারী বড় হয়, তার রূপগুণের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশেদেশান্তরে।
পাশের দেশের এক খুব ধনী এক বুড়ো রাজা তখন সদ্য বিপত্নীক হয়েছেন, কচি একটি নতুন রাণীর জন্য তার মন আকুলিবিকুলি। দেশে দেশে ঘুরে রাজকন্যা দেখে বেড়ান। একদিন মারিয়াদের ওখানে গিয়ে তিনি হাজির। মারিয়াকে দেখে খুব মনে ধরলো, পারলে তখুনি বিয়ে করে নিয়ে যান।
মারিয়ার মা-বাবা তো মহা খুশী, ভাবী জামাতাকে খুব আদর-আপ্যায়ন করেন। এদিকে মারিয়ার মনে সুখ নেই। ঐ কুচ্ছিত বুড়ো টাকার জোরে বিয়ে করতে চায় তাকে, সে কেন রাজি হতে বাধ্য ? ছি ছি, ও বিয়েতে রাজি হওয়ার চেয়ে সমুদ্রে ডুবে মরা ভালো যে! কোনো উপায় কি নেই? তার কি কেউ নেই?
মনে পড়ে সাপবোনকে, সে ছুটে যায় সমুদ্রতীরে, ডাকে "ডোনা, ডোনা, ডোনা, বোন কই তুই? আমাকে যে কিনে নিয়ে যায় টাকার কুমীর এক কুচ্ছিত বুড়ো রাজা।"
ডোনা মুহূর্তের মধ্যে হাজির। বলে, "বোন, ভয় নেই। তুই ঐ বুড়োকে বল বনের সব ফুল আঁকা বনসবুজ পোশাক যেন তোকে বানিয়ে দেয়, নাহলে তুই বিয়েতে রাজি না।"
মারিয়া তাই করলো। বুড়োর সত্যিই অনেক টাকা, দিকে দিকে সে পোশাকের সন্ধানে লোক পাঠালো। বেশ কিছুদিন লাগলো বটে, তবে পোশাক এসে গেল।
এবার? এবার কী হবে? ভয়ার্ত মারিয়া আবার সাপবোনকে ডাকে। ডোনা বলে "বোন, ভয় নেই। তুই ঐ বুড়োকে বল সমুদ্রের সব মাছ আঁকা সাগরনীল পোশাক যেন তোকে বানিয়ে দেয়, নাহলে তুই বিয়েতে রাজি না।"
মারিয়া তাই বললো, কিন্তু এবারেও কিছুদিনের মধ্যই পোশাক এসে গেল। আতঙ্কে নীল হয়ে সমুদ্রতীরে ছুটে গেল মারিয়া, আকুল হয়ে ডোনাকে ডেকে বললো, "আর বুঝি হলো না রে বোন, মরতেই হবে আমার।"
ডোনা সাহস দেয়, বলে, "না বোন, এত সোজা না। তোর কোনো ভয় নেই। আরো কিছুটা সময় আমরা পাবো। তুই ঐ বুড়োকে বল আকাশের সব তারা আঁকা আকাশনীল পোশাক যেন তোকে বানিয়ে দেয়, নাহলে তুই বিয়েতে রাজি না।"
মারিয়া তাই বললো, বুড়ো রাজা দিকে লোক পাঠালো। এবারে বেশ দেরি হলো কিন্তু শেষপর্যন্ত পোশাক এসে গেল। এবার?
ডোনা নৌকার ব্যবস্থা করে রেখেছিলো। রাতের অন্ধকারে কাপড়চোপড়ের পুটলি নিয়ে একা একা সেই নৌকায় চেপে বসলো মারিয়া। এবারে অকূলে পাড়ি, দেখা যাক ভাগ্য তাকে কোথায় নিয়ে যায়।
পাশে পাশে জলে সাঁতরে আসে ডোনা, বলে, "বোন, এই নৌকা যেখানে ডাঙায় ঠেকবে সেখানে তুই নামবি। সে দেশের রাজপুত্র তোকে দেখে প্রেমে পড়বে। তোদের বিয়ে হবে, তোরা হবি রাজা আর রাণী। সুখের সংসার হবে তোর। বোন, একটা অনুরোধ। তোদের বিয়ের দিনে সমুদ্রতীরে এসে তিনবার আমায় ডাকবি নাম ধরে, তবে আমার শাপমুক্তি হবে। আমি আবার মানুষ হবো। মনে থাকবে বোন?"
অনিশ্চিতের ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে সজল চোখে মারিয়া বলে, "মনে থাকবে বোন, নিশ্চয় মনে থাকবে। আমার বিপদের দিনে তুই ছাড়া আর কেউ আমায় রক্ষা করে নি, তোর জন্য এটুকু করতে পারলে আমি ধন্য হবো।"
ডোনা লজ্জা পায়, বলে, " না না এ আর এমনকি। কীই বা করেছি। ডাঙা কাছিয়ে এসেছে বোন, কাল সকালে তীরে ঠেকবি। আমি এবারে আসি রে।" ডোনা মিলিয়ে যায় জলের গভীরে।
পরদিন মারিয়ার নৌকা পাড়ে ঠেকে। সে নামে। সে এক সুন্দর রাজ্য, ফুলেফলেশস্যে ঝলমল করছে। কাছেই ঝলমলে রাজপ্রাসাদ। মারিয়া রাজার কাছে কাজ চায়, রাজার বাগানে সে মালিনীর কাজ পায়।
তারপরে দিন যায়, মারিয়া সকালসন্ধ্যা ফুলগাছে জল দেয়, ফুলগাছের পরিচর্যা করে, ফুল তুলে তোড়া বেঁধে দিয়ে আসে প্রাসাদে। তার কাজে সবাই খুশি।
কাজ শেষ হলে পারিশ্রমিক নিয়ে আর খাবারদাবার পুঁটলি বেঁধে সে ফিরে আসে নিজের কুটিরে। খেয়েদেয়ে দাওয়ায় পাটি পেতে শুয়ে আকাশের তারাদের দিকে চেয়ে তার মনে পড়ে পূর্বজীবন, সে তখন রাজকুমারী ছিলো। সে তুলনা করে, কোন্ জীবনটা ভালো ছিলো, এখনকার এই গরীব স্বাধীন জীবন নাকি সেই সোনারূপোমণিমুক্তার শেকলে জড়ানো পরাধীন জীবন?
(বাকীটা চায়ের পরে )
মন্তব্য
এটা কি হইলো ভাই।... বাকিটুকু কই...... তাড়াতাড়ি লিখে শেষ করেন।
আরে শেষ করবো, করবো।
হাজার রজনীর গল্পের ট্রিকসটা জানেন না? সেখানেও তো রাণী "ব্রেককে বাদ" বলে বাদশাকে রুখেছে, নইলে মুন্ডুখানা বাঁচতো সে মেয়ের?
আর মুন্ডু গেলে সে চা ই বা খেতো কীকরে ?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
সকাল সকাল অফিস এসে আপনার ব্রাজিলিয়ান উপকথা পড়তে শুরু করছিলাম; ছোট্ট বেলায় এই রকম রাজারানীর উপকথা বা গল্প পড়তে খুবই ভাল লাগতো।মনে হচ্ছিল যেন তাজা সকালে ছোট্ট বেলার স্বাদ পাচ্ছিলাম; কিন্তু ধুম করে লেখাটা শেষ হয়ে যাওয়াতে মনে হল ছোট্ট বেলার মতো যেন মন খারাপ হলো।
তাড়াতাড়ি চা টা শেষ করুন, গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।
--শফকত মোর্শেদ
-----------------------------------------------------------------------------------------------
যত তাড়াতাড়ি পারি শেষাংশ দেবো। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চমৎকার তুলিরেখা।
তবে পরাধীন জীবন কার ভাল লাগে?
ধন্যবাদ অনিন্দিতা।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এমন জায়গায় চা খেতে গেলেন যে মনে হচ্ছে কম্পুর উপর এক মগ চা ঢেলে আপনাকে ইমেইল করে বলি- এক্খনই খান। খেয়ে বাকিটা শেষ করেন
দেবো, যত তাড়াতাড়ি পারি।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
৩ কাপ তো শেষ করলাম...আর কত অপেক্ষা ????
<ভীত মানব>
বলেন কী? ৩ কাপ চা একাই খেলেন????
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
জমলো না তো!!
--------------------------------------------
বানান ভুল হইতেই পারে........
--------------------------------------------
বানান ভুল হইতেই পারে........
কী জমলো না? দই?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এত দিন পর সিরিজে ফিরে এসে আবার চা খেতে যাওয়ার জন্য পবল দিক্কার!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আহা, চা না খেয়ে কি তবে কফি খাবো?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চা কি সাতসমুদ্দুর পার হয়ে আসছে? জলদি করেন!
মোটে সাতসমুদ্দুর? চা আসছে ভিনগ্রহ থেকে।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চা খেতে গিয়ে কি আর ফিরবেননা?
এইতো এইমাত্র ফিরলাম।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপনার প্রতি তীব্র ধিক্কার গল্পটা এইখানে থামিয়ে দেওয়ার জন্য, বদদোয়া করছি চা খেতে গিয়ে যেন আপনার জিহ্বা পুড়ে যায়!!! যাই হোক, উপকথাটা ভালো লেগেছে, যতটুকু লিখেছেন তার জন্য ধন্যবাদ।
চা খেতে গিয়ে দেখি সঙ্গে সমুচা। গল্প করে খেতে খেতে রাত হয়ে গেল, তখন একেবারে ডিনার সেরে নিলাম।
গল্পের শেষটুকু যত তাড়াতাড়ি পারি, দেবো। ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আহা! একপর্বে শেষ করলেন না! অনেকদিন পর আবার উপকথার সিরিজে ফিরে এলেন। ধন্যবাদ এজন্য। বাসার পিচ্চিসম্প্রদায়কে শোনানোর জন্য আপনার এই সিরিজ থেকে গল্প নিই মাঝে মাঝে।
নতুন মন্তব্য করুন