এক গ্রামে এক কূটবুদ্ধি ধনীলোক ছিলো। সে আবার সুদখোর মহাজনও বটে। গরীব কৃষকদের সে টাকা ধার দিতো আর চড়া সুদ নিতো। গলায় গামছা দিয়ে সুদেআসলে টাকা আদায় করতো। কেউ টাকা না দিতে পারলে ঘটিবাটি পর্যন্ত কেড়ে নিতো, আরো নানা শাস্তি দিতো।
সকলে অতিষ্ঠ, এদিকে অন্য উপায় নেই। একমাত্র সুদখোর মহাজনই ধার দেবার মত ধনী আর ফসল বোনার সময় খরচের মরসুম, তখন টাকা ধার করা ছাড়া উপায় নেই। ভালো ফসল উঠলে তবে শোধ করা যায় টাকা। ন্যায়মত সুদ নিলে কৃষকদের অসুবিধা হবার কথা ছিলো না, জমি সুফসলী আর কৃষকরা খুবই পরিশ্রমী কিন্তু খুব চড়া সুদ বলেই এত কষ্ট। কে কী করতে পারে? মনের দু:খে নিজেদের মধ্যেই বলাবলি করে আর সুদেআসলে টাকা শোধ দিতে গিয়ে নিজেরা মাঝে মাঝে উপোস দিয়ে থাকে।
একদিন, তখন শুখা মরশুম। মাঠে কাজ নেই বলে কৃষকেরা তখন জঙ্গলে কাঠকুটো কাটা আর হাটে জিনিসপত্তর বিক্রি এইসব ঠিকা কাজ করে। কেউ কেউ নগরে গিয়ে কায়িক পরিশ্রমের কাজও করে সাময়িক।
সেই মহাজন তাগাদায় এসে হাজির এক চাষীবাড়ীতে। কৃষক বা তার বৌ কেউ বাড়ীতে নেই। শুধু উঠানে খেলে বেড়ায় তাদের আট-নয় বছরের বাচ্চা ছেলেটা।
মহাজন ধমক দিয়ে বলে," অ্যাই ছেমড়া, তোর বাপেরে ডাক।"
বাচ্চাটা আপনমনে খেলতে খেলতে বলে," বাপ তো বাড়িত নাই গো মহাজন। মাও বাড়ীত নাই।"
"যহনই আসি বাড়ীত নাই। বদমাইশের এক্কেরে ঝাড়বংশ। গ্যাছে কোনহানো?"
ছেলেটা বলে," বাপে গ্যাছে জ্যান্ত গাছ উপড়াইয়া মরা গাছ লাগাইতে আর মায়ে গ্যাছে হাওয়া বেইচ্যা চান্নিপশর কিনতে।"
"কস কী তুই? আমার লগে মশকরা করো তুমি বদমাইশ বাচ্চা? এমুন একখান থাবড়া দিমু যে বাপের নাম ভুইলা যাইবা। নকশা রাইখা শীগগীরে ক কই গেছে অরা।"
"কইলাম তো, বাপে গ্যাছে জ্যান্ত গাছ উপড়াইয়া মরা গাছ লাগাইতে আর মায়ে গ্যাছে হাওয়া বেইচ্যা চান্নিপশর কিনতে।"
আধাঘন্টা লড়েও মহাজন এই রহস্যের কূল পায় না। ছেলেটা একই কথা বলে। অনেক সাধ্যসাধনা করলো মহাজন, ভয় দেখালো, মিঠা মিঠা কথা কয়ে ত্যালালো কিন্তু ছেলে ঐ কথাই বলে।
শেষে মহাজন বললো সে যদি হেঁয়ালি পরিষ্কার করে দেয় তাহলে তার বাপের সব ঋণ মাফ করে দেবে মহাজন। ছেলেটা বলে, " হ কইয়া দেই আর তারপরে আফনে অস্বীকার করবেন। এর মইধ্যে নাই আমি।"
মহাজনের তো কৌতূহলে প্রাণ যায়, সে বলে," আকাশ সাক্ষী পাতাল সাক্ষী, আমি যদি অস্বীকার কইরা বসি তয় আমার নামই মহাজন না।"
ছেলেটা হেসে বলে, "আকাশপাতাল আমাগর কথার সাক্ষী হইতে আইবে না গো মহাজন। তারা কথা কয় না। অন্য সাক্ষী লও, কোনো জ্যান্ত জিনিস সাক্ষী লও।"
" জ্যান্ত সাক্ষী? সে কই পাই আমি? "
দরজার ফ্রেমে একটা মাছি বসে ছিলো, ছেলেটা সেটার দিকে দেখিয়ে মাছিটাকে সাক্ষী মানতে বলে। কূটবুদ্ধি মহাজন রাজি হয়, সে মনে মনে ভাবে মাছি সাক্ষী থাকাও যা না থাকাও তা। মাছি তো আর বিচারকের কাছে সাক্ষ্য দিতে আসবে না।
ছেলেটা এবারে বুঝিয়ে দেয়। তার বাবা গেছে বন থেকে বাঁশ উপড়ে আনতে, এনে বাড়ীর চারপাশে বেড়া দেবে। তাই সে বলেছে জ্যান্ত গাছ তুলে এনে মরা গাছ পুঁতবে। আর মা গেছে হাটে পাখা বিক্রি করতে, যা টাকা পাবে তা দিয়ে প্রদীপ আর তেল কিনে আনবে। তাই হাওয়া বিক্রি আর চান্নিপশর কেনার কথা বলেছে সে।
মহাজন তো চমৎকৃত এইটুকু ছেলের বুদ্ধি দেখে। ছেলেটার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বাড়ী চলে গেল মহাজন, বলে গেল সব ঋণ মাফ।
কিন্তু সুদখোর মহাজনী স্বভাব কি অত সহজে যায়! কিছুদিন যেতে না যেতে আবার সুদেআসলে টাকা দাবী করে বসে সে।
কৃষকের ছেলে কিন্তু ছাড়ার পাত্র না, সে বলে মহাজন সব মাফ করেছে, তার কাছে শপথ করে বলে গেছে। মহাজন স্বীকার করে না, সে যে কোনোদিন কৃষকের ছেলের সঙ্গে কথা বলেছে তাও পর্যন্ত স্বীকার করে না।
ব্যাপার ঘোরালো হয়ে ওঠে, বিচারক অবধি গড়ায়। বিচারক দুজনকেই তলব করেন। মহাজন ও চাষীর ছেলে দুজনেই যায়, নিজের নিজের বক্তব্য বলে।
চাষীর ছেলে হলফ করে বলে মহাজন ঋণ মাফ করে দিয়েছেন আর মহাজন হলফ করে অস্বীকার করেন। আরো বলেন," ঐ চাষার পুতের লগে আমার কোনো কথাই কোনোদিন হয় নাই।"
বাচ্চা ছেলেটা চেঁচিয়ে ওঠে, " বুড়া মানুষ হইয়া এত মিছা কথা কন কেম্নে? আফনে যখন শপথ কইরা সব ঋণ মাফ কইরা দিলেন তখন একটা এতবড় ডুমা মাছি আফনের নাকের ডগায় আইয়া বইলো।"
মহাজন রাগে চেঁচিয়ে বলে, " আমার নাকে? আমার নাকের ডগায়? মাছিটা তো আছিলো দরোজায়!"
বিচারক হেসে বলেন, " তাহলে চাষীর ছেলের কথাই সত্যি। কথা হয়েছিলো। মহাজন, সত্যিই আপনি ঋণ মাফ করে দিয়েছিলেন। মামলা ডিসমিস। কৃষকের সব ঋণ মাফ। আর মহাজন শুনুন, আপনি যে হারে সুদ নেন সেই ব্যপারটা ভবিষ্যতে ভালো করে হিসেব করে দেখবো আমরা পঞ্চজনে। ভবিষ্যতে আর কাউকে ঠকাবার চেষ্টা করলে আপনাকেই ঠকতে হবে।"
মহাজন মুখ চুন করে আর চাষীর ছেলে নাচতে নাচতে বাড়ী ফিরে গেল। পরবর্তীকালে মহাজনের মহাজনী কারবার ফেল পড়ে নি বটে তবে রমরমা বেশ খানিক কমেছিলো।
___
মন্তব্য
গল্পটা কই পাইলেন? আরও আছে নাকি? কই পাই? ভালা হইসে! এইসব পড়তে খুব মজা লাগে।
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
থাক, আপনার ব্লগই পড়ি বসে বসে। কাজে ছিলাম, চুলায় যাউক কাজ। এইরকম গল্প বহুতদিন পড়িনা।
আগে আপনার ব্লগে ঢুকিনাই কেন?
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
ধন্যবাদ পল্লব।
আপনার ভালো লাগলে আমারই লাভ।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বেশ চমৎকার একটা গল্প। দারুণ লাগলো।
ধন্যবাদ পিপিদা।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
গল্পটা দারুন। আপনার বর্ণনায় আরো ভাল লাগল।
অনন্ত
ধন্যবাদ অনন্ত।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দারুণ লাগলো।
মনেই হল না ভিয়েতনামের কোন রূপকথা পড়ছি। মনে হচ্ছিল যেন গ্রাম-বাংলার কোন সহজ গল্পের দীঘিতে ডুব দিয়ে উঠলাম।
গ্রামগুলোর মধ্যে অনেক মিল আছে সত্যি।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
গল্পটা দেখেই লগাইলাম। এক্বেবারে গ্রামীণ ব্যাংকের রূপকথা
০২
প্রথম লাইনটা বাদ দিয়ে দেন স্যার
গল্প সম্পর্কে বাণী দেবার কী দরকার?
০১
কন কী? গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ও এমুন করে নাকি????
০২
প্রথম লাইন উড়াইয়া দিলাম। সত্যি তো শিরোনামেই তো রইলো কোথাকার গল্প। আর বই হইলে ফুটনোটে বা রেফারেন্স লিস্টে তো দিতেই হইবে কে কী কেন কোথায় কার!
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হায়, পকেট মোটা হলে কি মাথাটাও মোটা হয়? অবশ্য না হলে আমরা ট্যাঁকখালির জমিদারেরা বাঁচতাম কেমনে...
ট্যাঁকমোটারা যদি বুঝতো যে জিনিসে ট্যাঁকমোটা হইছে সে জিনিসের আসল ব্যবহার কী, জগতে তা হইলে এত ঝামেলা থাকতো?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
পড়ে খুব ভাল লেগেছে। এই রকম আরো রুপকথা চাই।
ধন্যবাদ অরিন্দম।
সময় পেলেই তুলে দেবো আরো গল্প। দুনিয়া জুড়ে এত গল্প, হায় সময় এত অল্প কেন?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বসে বসে আপনার ব্লগের সব লেখা পড়লাম । জটিল কালেকশান । চালিয়ে যান । থামবেন না যেন ।
ফাহিম হাসান
ধন্যবাদ ফাহিম হাসান।
চালাতে তো চাই, মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলি আরকি।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভালো লাগে বিভিন্ন দেশের উপকথা পড়তে। ভালো লাগলো এটাও।
সুমিমা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ সুমিমা।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বেশ!
চমৎকার । ছোট বেলার মধ্য দুপুরে রঙ্গিন বইতে মাঝের মতো লুটোপুটি খাওয়া সুন্দর দিন গুলো মনে পড়ে যায় এমন গল্প পড়লে ।
অনেক ভালো থাকুন ।
প্রখর রোদ্দুর, অনেক ধন্যবাদ। সত্যিই গল্পগুলো ছোটোবেলা মনে পড়িয়ে দেয়।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দারুণ। বাচ্চা ছেলেটার বুদ্ধি তো মারাত্মক!
বুদ্ধির জোরেই তো সে বাঁচিয়ে দিলো সব।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চমৎকার গল্প। আপনার রূপকথাগুলো গোগ্রাসে গিলতে থাকি সব সময়।
তবে এটার শেষ প্যারাটা যেন কেমন লাগল!
ধন্যবাদ অনিন্দিতা।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
- পড়ি, পড়ি, মাঝে মধ্যেই পড়ি। নায় নাতিনরে শোনানোর মতো কালেকশন তৈরী হচ্ছে। তবে টেনশন নিয়েন না, নায় নাতিনরে আপনার বলা রূপকথাসমূহ বলার সময় আপনার নাম কৃতজ্ঞতা স্বীকারে লিখে রাখবো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নায় নাতিনেরে শোনাইবেন?
আগে একতলা বানান, তারপরে তো দোতলা!
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন