আমলকীবনে টিয়া রঙের রোদ্দুর, পাতারা সব কাঁপছে আর কাঁপছে অচেনা হাওয়ায়। এই হাওয়াটাই এই সময়ে আসে প্রত্যেকবার, তবু কখনো একে চেনা হয় না,এ যেন কাকজ্যোৎস্না মাঘরাত্তিরের অচিন পাগলের বাঁশির সুরের মতন। কিছুতেই বুঝে ওঠা যায় না অথচ কখন যেন সব খালি করে নিয়ে চলে যায়।
পথ হারিয়ে গেছে কতবার, তবু শেষ অবধি হারায় নি। সেই ঘরে ফিরে আসার তমাল গাছ, সেই কুটোকাটা ইঁটকাঠপাথরের ঘরগেরস্থি, সেই সব খুনসুটি ঝগড়াঝাঁটি এলোমেলো অর্থহীন দিনের পর দিন।
এর বাইরে থেকে নেই-নেই সেই হাওয়াটা ডাকে কিন্তু, টিয়ারোদ্দুরে হাতছানি দিয়ে দিয়ে। দুপুরজানালা কখন যেন ঘুমের কবিতা হয়ে যায়। তারা-ফুটফুট প্রতিপদের আকাশ-দেওয়ালি মনে পড়ে। কোথাও কোনো দরজা একটা আছে, আছেই। সেটা খোলে কেমন করে?
পথের ধারে ধারে এখানে ওখানে রেশমী নরম সরল গাছ। ওদের পাতাগুলো রোদ্দুরে ঝিলমিল করলে দূর থেকে দেখে ঠিক রেশমচুল সবজে- সবুজ মেয়ের কথা মনে পড়ে। তারই কি বেতের ফলের মতন চোখ? কেজানে! সেই পাগলা কবি হয়তো জানতো, কিন্তু সবাই তো তাকে কী সব আজেবাজে কথা বলে তার মন ভেঙে দিলো! অভিমান করে সে কোথায় যেন চলে গেছে, আর কোনোদিন ফেরে নি।
অতসী-হাওয়ায় গাছেরা কাঁপছে। আকাশ নীলকান্ত আজকে, মালার মতন উড়ছে একদল পায়রা। নাকি পায়রা না, অন্য কোনো পাখি ওরা? কেজানে! কাছের গাছে কিচিমিচি করে একদল নীল পাখি, কেজানে কী পখি!
শিলং পাহাড়ের ছোটোবেলা মনে পড়ে।সেখানে নীল নীল হাউস মার্টিন পাখি থাকতো। সেখানে লাল রঙের পুল ছিলো ছোট্টো ঝোরানদীর উপরে, সেই পুল পার হয়ে ছিলো রঙীন চীনে লন্ঠন ঝোলানো বাতাসবাড়ি। সেই বাড়িতেই থাকতো বুঝি মুন্নিরা? মনে পড়ে না। ভূমিকম্পের সময় সবাই ছুটে বেরিয়ে এলো, মুন্নি ও। কিন্তু তারপরে কী হলো? মুন্নি "মা কই, মাকে দেখতে পাচ্ছি না" বলে আবার বাড়ির ভিতর দৌড়ে গেল?
কচি কচি সরল গাছগুলো জড়িয়ে কেমন লাউডগাসবুজ লতা উঠেছে! তাতে এক দুই তিন চার পাঁচটা নীল ফুল ফুটেছে, নীল তারার মতন। এরা সকালে ফোটে, দুপুর হলে বুজে যায়। রাতে ফেরার পথে দেখি একদম লুকিয়ে গেছে। সরল গাছও তখন ঘুমায়?
লাল নীল সবুজ হলুদ ঘুড়িতে ঘুড়িতে আকাশ ঢেকে যাওয়া বিশ্বকর্মাবিকেল মনে পড়ে, সেটা অনেকদিন পরে। তখন পাহাড় মিলিয়ে গেছে অতীতে, তখন একটু বড়োবেলা।সেদিনও আকাশ এমন নীল ছিলো।
ধানের ক্ষেতে ধানগাছগুলো সবুজ তেজী, ঝিং ঝিং করে হাওয়া বয়ে যায় ধানের ধারালো পাতায় বাজনা তুলে তুলে। ভরা ক্ষেতের উপর দিয়ে ভেসে যায় কাটা ঘুড়িগুলো, ঐ দূরে মাটি যেখানে নত হয়ে পড়া আকাশে মিশে গেছে, সেই দিগন্তের দিকে। তারপরে? তারপরে ওরা কোথায় যায়?
হারিয়ে যায় কত কিছু। হারানো সেইসব পুঁতির মালা, লাল পুঁতি নীল পুঁতি পর পর সাজানো ছিলো যাতে-সন্ধ্যেবেলার মাঠে কোথায় পড়ে গেল ছিঁড়ে, সেই মাঝখানে গোল সোনালি সূর্য আঁকা নীল রেশমী রুমাল---কোথায় উড়ে গেল ঝড়ের হাওয়ায়, গাঢ় খয়েরী রঙের চকচকে প্রথম কলমটা-কোথায় পড়ে গেল, খুঁজে পাওয়া গেল না আর, রবিবারের দুপুরের রেডিওতে "আমার নাম টায়রা", কিছুই আর যার মনে রইলো না নামটুকু ছাড়া-এই সব, সব হারিয়ে গেলো। এইসব হারানো গুলো পালিয়ে যাওয়া নোটন নোটন পায়রাগুলোর মতন ঝোটন বেঁধে বসে আছে ময়ূরনদীর পারের সীতাহার গাছে,সে গাছ ঘিরে পালকের মতন ভাসছে জ্যোৎস্নাপরীরা। একদিন সেখানে যাবার জন্য রুমুদিদি রওনা হবে ভুলুকে নিয়ে, ওর যে পিঠে ডানার কুঁড়ি আছে!
দিন কাটে, রাত শনশন বয়ে যায়। মৌমাছির ডানার গুণগুণ যেন! কাছ থেকে সব কিছু বড় বেশী ঘন, অনেক দূরের স্মৃতিমাঠ থেকে দেখলে তবে বুঝি তবু খানিকটা বোঝা যায় তাকে। মস্ত একটা গোল চাঁদ ঝুলে থাকে, স্বপ্নবাতিঘরের জানালা থেকে দূরের পাহাড়চূড়ায় দেখা যায় কীসের আলো, জ্বলছে নিভছে জ্বলছে নিভছে .......
মন্তব্য
রাতে লগড ইন থেকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, সকালে খোলা চোখ নীড়পাতায় রাখতেই এই পোস্ট...
দিদি, একই মানুষের আর কতবার প্রশংসা করা যায়?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অনেক ধন্যবাদ।
তুমি দেখি সচলে ঘুমাও সচলে জাগো!
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
একটা প্রশ্ন অনেকদিন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে- ভাষা কখন মৃত হয়? কাকে জিজ্ঞেস করি ভাবতে ভাবতে আপনাকেই জিজ্ঞেস করে ফেললাম।
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
আমাকে কেন জিগাইলেন বুঝলাম না, আমি সামান্য মানুষ। বড়ো বড়ো ভাষাবিদদের জিগালে হয়তো সত্য উত্তর পাবেন।
তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় ভাষা যখন মানুষের কথাবার্তায় আর লেখাপত্রে প্রতিদিন ব্যবহার হতে থাকে তখন ভাষাটা জ্যান্ত থাকে, কিন্তু যখন কোনো ভাষা কেবল পুরানো পুঁথিতে বন্দী হয়ে যায়, তখন সেটা মৃত, অতীত। যেমন ধরুন প্রাচীন ল্যাটিন, প্রাচীন সংস্কৃত। পুঁথিপত্রে আছে, প্রতিদিনের কথায় কাজে নেই।
আবার ধরুন কোনো ছোটো গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে কোনো ভাষা ব্যবহার করতো, কোনো হরফ ছিলো না, শুধু মুখের ভাষা। সে গোষ্ঠী কালক্রমে বিলুপ্ত হলো, সঙ্গে সঙ্গে ভাষাটাও বিলুপ্ত হলো, সে ভাষা মরে গেল। যেমন নানা বিলুপ্ত জনজাতির ভাষা। আবার এমনও হয়, এক ভাষা আরেক ভাষার উপরে ডমিনেন্স খাটিয়ে দুর্বল ভাষাটিকে দাবিয়ে দেয়, আস্তে আস্তে সেটি লুপ্ত হয়।
এইসব আরকি।
ভাষা মরে যাওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়লেন কেন?
----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
মুগ্ধ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভালো লেগেছে চিত্রকল্পগুলো। চমৎকার।
ধন্যবাদ আরিফ জেবতিক।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কেমন আছেন, তুলিরেখা?
এই চলে যাচ্ছে স্নিগ্ধাজী।
আপনি কেমন? অনেকদিন আপনার দেখা পাই না। ব্যস্ত খুব?
মূলত পাঠকই বা গেলেন কোথা?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চোখ বন্ধ করে যেন দেখতে পেলাম। দারুন।
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
ধন্যবাদ ভাই, পাঠক যদি দেখতে পান তবে তা লেখকের কাছে অনেকখানি।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
মনমুগ্ধকর!
অনেক ধন্যবাদ রোমেল চৌধুরী।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন