১
ভাসমান গোল টেবিল ঘিরে ছ'খানা চেয়ার শূন্যে ভাসছে, একে একে এসে বসলো তারা ছ'জন। এনখ, লমখ, এণা, গেয়া, তালিসা আর তামারিল। তাদের মুখে ভাবলেশহীনতার মুখোশ, ঠোঁট শক্ত করে চেপে বন্ধ, চোখ অর্ধনিমীলিত। একে একে সকলে ডান হাত এগিয়ে দেয় টেবিলের কেন্দ্রে, একে একে ছয়টি হাত একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়।
এবারে ছ'জনেই উজ্জ্বল ছ'জোড়া চোখ সম্পূর্ণ মেলে ধরে কেন্দ্রে যেখানে তাদের হাতগুলো মিলেছে সেদিকে চেয়ে স্পষ্ট উচ্চারণ করে, "তাই হোক, তাই হোক, তাই হোক।" তারপরে তারা চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণের জন্য গভীর নীরব ধ্যানে ডুবে যায়।
সময় অতিক্রান্ত হলে সকলে হাত সরিয়ে নেয়, একে একে উঠে দাঁড়ায়। এনখ তালিসার দিকে চেয়ে আস্তে করে বলে, "আবার আমাদের দেখা হবে, তাই না?"
তালিসা নরম চোখে এনখের দিকে তাকায়, মৃদু হেসে বলে, "নিশ্চয়ই দেখা হবে এনখ, নিশ্চয়ই দেখা হবে।"
এনখ বলে, "তোমার মনে আছে তালিসা, অনেকদিন আগে ও একবার আমাদের ঠিক এরকম কথা হয়েছিলো? "
তালিসা আস্তে আস্তে বলে, "মনে আছে। সমাবর্তনের পর তুমি যখন নতুন কাজে চলে যাচ্ছিলে প্ল্যানেট আলফায়, তখন তুমি ঠিক আজকের মতন আমায় বলেছিলে আবার আমাদের দেখা হবে, তাই না? " তালিসা হাসলো এনখের দিকে চেয়ে, তার চোখে টলটল করছে ভালোবাসা।
এনখ বললো, " তুমি সেদিন কত অন্যরকম ছিলে, কেমন উদাস গলায় বলেছিলে দেখা হতেও পারে নাও হতে পারে, কী করে বলবো এনখ? কিন্তু দেখা হয়েছিলো, পরের বছরই তুমিও এলে একই কাজ নিয়ে প্ল্যানেট আলফায়।"
তালিসা হাসতে হাসতে বলছে, "আমি ভাবতেও পারিনি ওখানে কাজ পাবো। নানা অকল্পনীয় যোগাযোগ ঘটে গেল, ওখানে কাজ পেলাম। এবারে কিন্তু আমি ঠিক জানি আমাদের দেখা হবে, একেবারে নিশ্চিত।"
তামারিল গেয়ার দিকে চেয়ে কী যেন বলতে গিয়ে বললো না। তামারিল খুব লাজুক। কতদিন ধরে ঘনিষ্ঠ পরিচয় তাদের, মনে মনে তাদের এত মিল! কিন্তু তামারিল কিছুতেই মনের কথাটি বলতে পারে না গেয়াকে। গেয়া আলতো হাসলো, প্রশ্রয়ের হাসি। এই ক্রান্তিমুহূর্তে ও কেন এত লজ্জা তামারিলের? নতুন জগতের নতুন জীবনেও কি সে এইরকম লাজুক থাকবে?
ছ'জন আস্তে আস্তে রওনা দেয় তাদের জন্য সংরক্ষিত কক্ষের দিকে, সেখানে তারা সকলে গভীর নিদ্রাভিভূত হলে তাদের নিউরন ম্যাপ করা শুরু হবে। সমস্ত তথ্যাবলি চলে যাবে কেন্দ্রীয় তথ্যকেন্দ্রে, সেখানে উপপারমানবিক মেশিনে আবদ্ধ হবে সবকিছু। কাজ সব শেষ হলে শান্ত মৃত্যু, দেহগুলি দাহ করে ফেলা হবে। কিন্তু তাদের মন ও দেহের সমস্ত তথ্য রয়ে গেল বলে এ মৃত্যু মৃত্যু নয়, আবার নতুন জগতে নতুন জীবনে জেগে উঠবে তারা।
তাদের মহাবিশ্ব শীতল হয়ে আসছে, ট্রিলিয়ন বছরের জীবন শেষে মহাবিশ্ব চলেছে চরম শূন্য তাপমাত্রার দিকে। এনখ লমখ তালিসা এনা গেয়া তামারিল-এরা ছয়জন নির্বাচিত হয়েছে নিজেদের মনবুদ্ধিসত্তা ব্যবহৃত হতে দেবার জন্য। কোথাও না কোথাও তাদের সভ্যতা বেঁচে থাক, এ সকলেই চায়, তাদের জগতের সবাইও তাই চেয়েছিলো।
শীতল থেকে শীতলতর মহাবিশ্ব একসময় অন্ধকার হয়ে যাবে, কোনো ব্যবহারযোগ্য শক্তি আর থাকবে না, বুদ্ধিমত্তাযুক্ত সব সভ্যতার মৃত্যু ঘটবে। এ থেকে কোনো না কোনো উপায়ে সভ্যতার কণামাত্র রক্ষায় তারা নিয়োগ করেছিলো তাদের লক্ষ লক্ষ বছরের সঞ্চিত জ্ঞান ও অর্জিত প্রযুক্তি।
বহুকালের সাধনায় অবশেষে পথ বার হলো। নির্বাচিত এই বুদ্ধিমান জীবেদের দেহমনবুদ্ধিমসত্তার সমস্ত তথ্যাবলি ম্যাপ করা হবে উপপারমানবিক কণায়, সূক্ষশরীর উপপারমাবিক যন্ত্রেরা সব বহন করে নিয়ে যাবে ওয়ার্মহোলের ভিতর দিয়ে, ভেসে উঠবে ভিন্ন মহাজগতে, সে মহাবিশ্ব তরুণী, উষ্ণ, প্রাণময়ী।
সেখানে তারা খুঁজে বার করবে বাসযোগ্য গ্রহ, সেখানে নেমে প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে তৈরী করবে কারখানা, সেখানে ডি এন এ উৎপন্ন করবে নিজেদের মধ্যে বয়ে আনা তথ্যাবলি কাজে লাগিয়ে, তারপর জীবকোষ তৈরী করে ক্লোন করবে এই নির্বাচিত প্রাণীদের। নতুন এনখ লমখ তালিসা এনা গেয়া তামারিল। এই প্রাণীরা আবার শুরু করবে তাদের প্রজাতির চলা, তাদের সভ্যতা ফিরে আসবে আবার নতুন করে, নতুন মহাবিশ্বে।
(চলমান)
মন্তব্য
এই নামগুলো আপনার মাথা থেকে বের হলো কিভাবে আগে সেটা বলেন?
লেখা ভাল্লাগছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
পাগল মন
অনেক ধন্যবাদ পাগলমন।
আর নামগুলো ? গিলগামেশে আবেস্তায় এনুমা ইলিশে আদিপুস্তকে স্টার ট্রেকে এইধরনের নাম তো কমন! আমি শুধু একটু পারমুটেশন কম্বিনেশন করেছি।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
শুরুটা খারাপ না। তবে নামগুলো মনে রাখতে একটু কেমন যেন ঝামেলা লাগছে।
চলুক কল্পকাহিনী।
অলস সময়
ধন্যবাদ পলাশ। দেখি কবে পরের পর্ব আসে।
নামগুলো নিয়ে চিন্তা করবেন না, নাম তো প্লেস হোল্ডার মাত্র।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভাল লাগল। চালিয়ে যান।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
ধন্যবাদ ভাই অমিত্রাক্ষর।
ভালো থাকবেন।
----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
মুহম্মদ জাফর ইকবাল পড়তে পড়তে বদ-অভ্যাস হয়েছে, সাইন্স ফিকশন পুরোটা একসাথে না থাকলে পড়ে আরাম পাইনা।
তবুও পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
পড়ছেন বলে ধন্যবাদ। আসলে ব্লগে তো একসাথে সবটা দেয়া যায় না, ভাগে ভাগেই দিতে হবে।
তাছাড়া লেখাটা হতেও তো হবে!
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভাল লাগছে। তবে পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দেবেন।
আপনার দেশ-বিদেশের সেই রূপকথা ও অনেক দিন ধরে পাচ্ছিনা।
সেগুলোও দিন। খেলাপী হওয়া চলবে না।
যখন রূপকথাগুলো উপকথাগুলো হিজলবনের চুপকথাগুলো খুঁজে পাওয়া যায় না তখন কেমন যেন একটা লাগে। চারিদিকে সাদা পাতায় শব্দগুলো পিঁপড়ে হয়ে ঘুরে বেড়ায়, দেয়ালের ছবিগুলো সব ঘেঁটে যায় আর একান্ত নিজস্ব আকাশটুকু তার সবটুকু নীল কালো সাদা লাল সোনালি সব নিয়ে কোথায় লুকিয়ে পড়ে। তখন অদ্ভুত দমবন্ধ সময়।
আশা করছি ওরা ফিরে আসবে, তখন ওদের নিয়ে আসবো এখানে।
ভালো থেকো।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন