আমাদের ওখানে প্রথম বইমেলা হলো ঘোর বর্ষায়, তখন আমরা সবে উঠেছি ক্লাস নাইনে। এতদিন শুধু আমরা শুনে এসেছি কলকাতায় বইমেলা হয় শীতের শেষে, সে এক দুর্দান্ত কান্ড, কিন্তু অতি অল্প কয়েকজন ছাড়া সেই বিরাট বিখ্যাত বইমেলা দেখার সৌভাগ্য কারুর হয়নি৷ ইস্কুল থেকে দিদিমণিরা নিয়ে চললেন আমাদের, রাস্তা জলেকাদায় ভর্তি, মেলা-প্রাঙ্গন কাদা প্যাঁচপেঁচে যথারীতি, কাঠের পাটাতন পেতে পেতে চলার জায়গা করা হয়েছে কোনোরকমে, স্টলের উপরে তাঁবুর কাপড় দিয়ে বৃষ্টির জল আটকানোর প্রচেষ্টা৷ আমরা জলে কাদায় হেঁটে হঁটে পরম উৎসাহে বই দেখতে লাগলাম৷ ভোস্তকের স্টলে তখনো পাওয়া যেতো মানুষের মতো মানুষ, ইস্পাত, পাহাড় ও স্তেপের আখ্যান৷
স্টলের হাসিমুখ ভদ্রলোক কেন কে জানে আমাকে "মানুষের মতো মানুষ" কিনতে উৎসাহিত করলেন, এদিকে আমি দু'খন্ড ইস্পাত নিয়ে ঝুলোঝুলি করছি৷ কিনতেই হবে৷ মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার সময় নাকি লোকে ও বই সঙ্গে নিতে চায়, কী আছে দেখতেই হবে৷ আর এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর মানুষের মত মানুষ আছে, ধলা কুকুর শামলা কান আছে, ওর থেকে এনে তো ওগুলো পড়তেই পারবো৷ কিন্তু এই পাভেল করচাগিনের গল্প আমার নিজের চাই, দৃষ্টি হারিয়ে হাতড়ে হাতড়ে ও কি এমন লিখেছে যে লোকে মঙ্গলগ্রহে নিতে চায়? ভদ্রলোক আমার যুক্তি মেনে নিলেন, দুইখন্ড বই বেঁধে প্যাক করে দিলেন, মহানন্দে ফিরে এলাম৷
অনেক পরে, অনেক অভিজ্ঞতার পরে দেখেছি এই ইস্পাত, মানুষের মত মানুষ, পাহাড় ও স্তেপের আখ্যান, ধলা কুকুর--এইসব বইয়ে লক্ষ্যণীয় ভাবে অকৃত্রিমের একটা জোরালো রঙ থাকতো যেটা কিনা ইংরেজী বইয়ে খুবই মৃদু৷ সেখানে ব্যাপারটা মানুষকেন্দ্রিক, অনেক বেশী অ্যাকোয়ার্ড গুণের বর্ণনা৷ তুলনায় রুশ বইগুলো শুরুই হতো এইরকম সব বর্ণনা দিয়ে, "ঠান্ডা আলোয় তখনো তারারা ভাস্বর" নিপুণ অকৃত্রিম বর্ণনায় জেগে উঠতো শীতশেষের বরফগলা বনে স্নোড্রপ ফুল, বিশাল মহীরুহসমূহ যেন প্রাসাদের মতন, ছড়ানো ডেইজির মধ্যে বসে আছে এক তরুণী, নদী থেকে স্নান করে ভিজে ডানার মতন পরশ রেখে শস্যমাড়াইয়ের জায়গায় ফিরে আসছে তরুণী, সূর্যমুখী পুষ্ট হয়ে উঠছে আলো শুষে শুষে৷ বারে বারে ফিরে ফিরে তাই ঐ বইগুলো পড়তে ইচ্ছে করে, আমাদের সমস্ত সফিস্টিকেশনের শেকলের আড়ালে লুকিয়ে থাকে যে হৃদয়বাসী মুক্ত দিগম্বর, সে চকিতে দেখা দিয়ে যায় ঐ ঠান্ডা খরশান আলোর তারাদের মধ্যে, ঐ দিগন্তলীন মাঠে কুশবিছানায়৷
এইভাবে আলোয়-ছায়ায় রোদে-বৃষ্টিতে মায়ায়-নির্মায়িকতায় কোমলে কঠোরে আমরা বড়ো হয়ে উঠতে থাকি, নিজেরা বুঝতে পারিনা, এত তাড়া আমাদের তখন৷ একে ইস্কুল তায় টিউশন পড়তে যাওয়া ....ছোটোবেলা যারা গান নাচ আবৃত্তি আঁকা বা অন্য কোনো এক্সট্রা কারিকুলার কিছুতে ঢুকেছিলো, নাইনে উঠে সব বন্ধ রাখে, পরে আবার সময় সুযোগ বুঝে ঝাঁপানো যাবে৷
প্রচুর বিষয় মাধ্যমিকে, অংক, বাংলা, ইংরেজী, প্রকৃতি বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইতিহাস ভূগোল কর্মশিক্ষা শারীরশিক্ষা--সব আবশ্যিক৷ শুধু একটি ঐচ্ছিক, কেউ নিতো পদার্থবিদ্যা, কেউ অংক, কেউ জীববিদ্যা, কেউ সংস্কৃত আর বাকীরা গৃহবিজ্ঞান৷ কেন যেন এই ধারণাটা ছিলো সকলের যে যারা পদার্থবিদ্যা বা অংক নিয়েছে তারা একটু কুলীন ধরনের ছাত্রী, যারা জীববিদ্যা নিয়েছে তারাও কুলীন তবে নৈকষ্য নয়, বাকীরা অকুলীন! কেউ এসবের প্রতিবাদ বা অন্যরকম কথা বলে না, হয়তো কোনো অর্থই নেই বলার, সমাজব্যপী ধারনা তো সহজ কথা নয়! ছোটো একটি বিভাজন হয়ে যায় আমরা খেয়াল করিনা, অথবা করি কিন্তু এটাই এত অনতিক্রম্য যে মেনে নিই৷ হয়তো অন্যরকম হতে পারার কোনো প্রশ্নই ওঠে না আমাদের মনে!
শুভাশ্রীর দিদি তখন জয়েন্টের জন্য তৈরী হচ্ছে, সে আমায় বুঝিয়ে দিলো উচ্চমাধ্যমিকে পিওর সায়েন্স নিতে পারলে জয়েন্টে সুবিধে হয়, জয়েন্টে পেলে আর দেখতে হবে না, হয় ডাক্তারি নয় ইঞ্জিনিয়ারিং৷ ওর নিজের ব্যক্তিগতভাবে ইঞ্জিনিয়ারিংএ যাওয়ার ইচ্ছে, এদিকে নাকি বাড়ীতে বলছে মেয়েরা ইঞ্জিনিয়ারিং এ শাইন করতে পারে না ভালো৷ তাই ওকে প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে তারপরে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়তে হবে৷
কী সুন্দর ছক করা হিসেব নিকেশ আগে থেকেই করে রাখা! আমার তাক লেগে যায়! তবু কুট কুট করে একটা প্রশ্ন কামড়াতে থাকে মনের মধ্যে, এই দুইখানা লাইন ছাড়া অন্যদিকে যাওয়ার পথ নেই? তাহলে রিসার্চ কারা করে, নতুন আবিষ্কার কারা করে? শুভাশ্রীকে জিজ্ঞেস করতে ও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলো ওসব লাটসাহেবীর রিস্ক এখানে, এ গরীব দেশে চলেনা, আইআইটি থেকে যারা পাশ করে বেরোয়, তারা আমেরিকা গিয়ে তারপরে রিসার্চ টিসার্চ ইত্যাদি করতে পারে যদি চায়!
আমার তো শুনে আরো তাক লেগে যায়! বলে কী মেয়েটা? আইআইটি মানে কি সেই ইঞ্জিনিয়ারিংকলেজগুলো যেখান থেকে নানারকম গল্প আসে? আরশোলা নিয়ে বক্তৃতা দিতে বলেছে আইআইটি ড়্যাগিং এর সময়, এইটাই যেখানের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ গল্প, বাকী সব ভয়াবহ? ইলেকট্রিক শক টক নাকি পর্যন্ত দিয়েছে, তিনতলার ছাদের আলসেতে হাঁটতে বাধ্য করেছে পা ফসকে নাকি একজন পড়েও গেছিলো, এইরকম সব ভয়াবহ কথাও শোনা যেত।
ও বলে হ্যাঁ, সেই আইআইটি ৷ ওর এক মামাতো দাদা নাকি ওখানে আছে৷ ও আরও বলে ড়্যাগিং ভালো জিনিস, ওতে নাকি লোককে স্মার্ট করা যায়৷ শুনে আমার এত তাক লাগলো যে আর সেদিন কিছু জিজ্ঞেসই করতে পারলাম না৷
স্কুলে আমাদের অংক শেখান মীনাক্ষীদি, অরুণাদি প্রকৃতিবিজ্ঞান, এদের দু'জনের ক্লাস নাকি খুব মন দিয়ে করতে হবে৷ বেবীদির জীববিদ্যাও৷ যদিও প্রাইভেট দিদিমণি মাষ্টারেরা বুস্টার ডোজ পরে দেবেনই, মোটা মোটা নোটও, তবু এদের ক্লাস মন দিয়ে শোনা ভালো, সেফসাইডে তো থাকতে হবে, নাকি? যদিও ইস্কুল শুধু নিয়মরক্ষার জিনিস, এখানে না এলে ডিগ্রী মেলে না, তাই আসা৷ এই ধারণা এত সর্ব্যব্যাপী যে কিছুই বলে ওঠা যায় না অন্যরকম৷
কিন্তু মজাও হয় কখনো কখনো৷ ইতিহাস পড়াতে আসেন শিপ্রাবতীদি, এসেই প্রথমে একটি সস্নেহ ধমক, "মেয়েরা, চু-উ-প করো! বাপরে কী টকেটিভ কী টকেটিভ! " বই খুলে পড়ে যান ইতিহাসের নানা ব্যাপারস্যাপার, কোনো কোনো অংশে এসে বলেন "এসব পোড়ো না মেয়েরা, সময় নষ্ট৷" সাজেশান দেন কী কী পড়তে হবে মাধ্যমিকের জন্য৷ বলেন, "জানি তোমাদের অনেকের অন্য বিষয়ে প্রাইভেট টিচার থাকলেও ইতিহাসে নেই, তাই এখানেই সাজেশান গুলো নিয়ে নাও৷"
ওনার এই সময় নষ্ট আর টকেটিভ এই দুটি ক্রমশ ওনার সঙ্গে সমার্থক হয়ে পড়তে থাকে৷ আমরা নিজেরা হাসাহাসি করি, ইতিহাসের শিক্ষিকা নিজেই বলছেন ইতিহাস পড়া সময় নষ্ট-এর চেয়ে সাংঘাতিক তির্যক কমেডি আর কী হতে পারে?
আর ছিলেন কুন্তলাদি, ইনিও প্রকৃতিবিজ্ঞান পড়াতেন, এনার নাম মেয়েরা বহুকাল ধরেই দিয়েছিলো চিন্তামণিদি৷ কারণ কোনো প্রশ্নের উত্তর বা অন্য কোনো কিছু এনার কাছে জানতে চাইলেই ইনি নাকি বলতেন, " দাঁড়াও আমি একটু চিন্তা করে নিই" বলেই গভীর চিন্তায় ডুবে যেতেন।
(চলবে হয়তো )
মন্তব্য
খুব ভালো লাগলো স্মৃতিচারণ।
সুনীল একটা বই লিখেছিলেন...আইআইটির র্যাগিং এর বর্ণনা ছিল তাতে। দেখা যাচ্ছে এটা সর্বজনবিদিত।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
সকলেই জানে। শুধু আইআইটি না, রিজিওনাল ইনজিনিয়ারিং কলেজগুলোতে ও ভয়াবহ সব ড়্যাগিং হয়। মাঝে মাঝে বাড়াবাড়ি হলে খবর লীক হয়ে গেলে তখন খবরের কাগজে আসে, তারপরে যে কে সেই।
মাঝখান থেকে যার যাবার তার সব যায়। ভাবুন একবার সম্ভাবনাময় যে ছেলেগুলো মারা গেল, বা মনের অসুখে আক্রান্ত হয়ে যারা জীবন্মৃত হয়ে রইলো, তাদের বাবামায়ের মনের অবস্থাটা কী হলো।
তবু কোনো পরিবর্তন নেই, কমে বাড়ে কমে বাড়ে, লুপ্ত হয় না। কে কার কথা শোনে! যে সমাজে টাকার দিকে চোখ রেখে বাপমায়ে ছেলেপিলেদের ধরেবেঁধে টেনে হিচড়ে টাকাপ্রসব করার লাইনে পড়তে ঢোকায় সেই সমাজে এইসব বিষ তো থাকবেই। কোনো জিনিসই তো আর অকারণে হয় না।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বেশ লাগছে আপনার বিলেকাবেলার গপ্প শুনতে, প্লীজ চালিয়ে যান। একটা ছোট প্রশ্ন আছে বানান নিয়ে। মধ্যে মধ্যে সচলায়তনে দেখি random, rabbi এইস্ব বিদেশী শব্দগুল লেখা হয় ড় দিয়ে, আজ আপনি ragging লিখেছেন ড় দিয়ে, এটা কি কোন নতুন নিয়ম? অন্য কোথাও ছাপার অক্ষরে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। ধন্যবাদ।
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
হরফ, ইউনিকোডে র য়ে যফলা আসে না, কেমন একটা অদ্ভুত কীযেন দেখায়। তাই টেম্পোরারি সমাধান হিসাবে এই ড়্যা লেখা।
----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
গল্পগুলো ভালো লাগলো। এখনো আপনি চলবের পরে একটা হয়তো লাগিয়েই রেখেছেন? ওটা ফেলে দেয়া যায় না?
র্যাগিং জিনিসটা যে কি পরিমাণ নোংরা সেটা যে তার মধ্য দিয়ে যায়নি তাকে বোঝানো যাবে না। বাংলাদেশে বসেই আমি এই জিনিসের চরমতম রূপটা দেখেছি। সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ হচ্ছে এর সবচেয়ে স্বাভাবিক ফর্ম! আমাকেও অনেক মহাজ্ঞানী বলেছেন র্যাগিং-এর মাধ্যমে নাকি সম্পর্ক ভালো হয়! সম্পর্ক ভালো করার জন্য যাদের এইসব নোংরামী লাগে, আর যাদের এইসবের শিকার হওয়ার পরেও সম্পর্ক ভালো রাখার ইচ্ছা জাগে, দুই দলেরই আসলে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে জঙ্গলে চলে যাওয়া উচিত। বারো বছরের শিক্ষায় যাদের মধ্য থেকে জানোয়ারের প্রবৃত্তি দূর হয় না তাদেরকে আরো চার বছর ক্লাসরুমে বসিয়ে রাখা আসলে টাকার শ্রাদ্ধ ছাড়া আর কিছু নয়।
আপনার সঙ্গে একমত। এইরকম ভয়াবহ জিনিস যারা সমর্থন করে তাদের দেখেই আরো অবাক লাগে আমার।
আপনার নানাবাড়ীর গল্পওয়ালা ছোটোবেলার গল্প খুব ভালো লেগেছে, ওখানে বলা হয় নি। আরো লিখবেন সময় করে, অনুরোধ জানালাম।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ইট রেখে গেলুম। র্যাগিং নিয়ে মন্তব্য আছে, ইউনিকোড নিয়েও।
ইঁটে বসলুম চুল কাটাতে। ইটালিয়ান সেলুনের কথা মনে আছে?
বক্তব্য শুনতেও।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
স্মৃতিচারণ চমৎকার লাগল। সিরিজ এবার সাবালিকা হয়ে উঠুক, মানে ইয়ে... চলবে-র পরে যে নেজখানি লাগিয়ে রেখেছেন তা খসিয়ে ফেলার কথা বলছিলুম আর কি!
-কুটুমবাড়ি
লেজ খসিয়ে ব্যাঙাচির এবার ব্যাঙ হওয়া উচিত বলছেন?
----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তুলিদি, পড়ে যাচ্ছি নিয়মিত।
স্মৃতির সাথে আপনার ব্যাখ্যা যোগ হওয়ায় লেখাগুলো অন্যরকম হচ্ছে, আর আপনার লেখা তো এমনিতেই আলাদা করে চেনা যায়। আর কী বলি?
আচ্ছা, পরের পর্বগুলোতে ট্যাগে 'ইস্কুলবেলা' টাইপের কোন শব্দ যোগ করে দেবেন? লেখাগুলো একবারে খঁজে পেতে সুবিধা হত তাহলে!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ধন্যবাদ।
এবার থেকে ট্যাগে জুড়ে দেবো ইস্কুলবেলা।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আহা কবে যে এমন করে লিখতে পারব।
অসাধারন তুলিরেখাদি
বিনয় হচ্ছে???
আপনি এর চেয়েও ভালো লিখতে পারেন এখনই।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
মরুভূমিতে এক ফোটা জল। পড়া শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল! একটু লম্বা চওড়া না হলে কি চলে???
তবে আপনার লিখা পড়ে কিছু প্রথাগত জিনিসের কথা মনে পড়ে গেল। আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু... ঢাকার সেরা স্কুলে পড়েছে, ভাল ফল করে ঢাকার সেরা কলেজে পড়েছে, তার পর কলেজ থেকে ভাল করে ঢাকার শুধু না, দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে, তার পর মনে হলো আরেকটা সেড়া প্রতিষ্ঠান বাকি রয়ে গেল... তাই সেখান থেকে এম-বি-এ করে এখন একটা ফিনান্সিয়াল ফার্মে ফিনান্সিয়াল অ্যানালিস্টের কাজ করে। জীবনে খুব সফল বলা চলে। কিন্তু আমি জানি এতো কিছু করে খুব একটা সন্টুষ্ট না। অথচ তার বাবা মা তার 'সেরা' পার্ফর্মেন্সে খুব খুশী। এতো কিছুর ফল হলো কি? বিবাহিত ও পেশাগত জীবন, দুটোতেই চরম অখুশী ও অসন্টুষ্ঠ একজন মানুষ। যে ছেলেটি এক সময় কবিতার বই কিনতে কিনতে পাগল হয়ে যেত, সে এখন ঝলসানো রুটি। ফতোগ্রাফীর খুব সখ ছিল তার, কিন্তু ভাল ক্যামেরা ছিল না। এখন ভাল ক্যামেরা আছে, কিন্তু ছবি তোলার সময় ও মানসিকতা কোনটাই আর তার অবশিষ্ঠ নেই।
কি লাভ হলো প্রথাগতভাবে 'ভাল' হয়ে???
আমি বাবা মায়ের কথার অবাধ্য হয়ে জীবনে একবারই প্রথার বাইরে গিয়েছিলাম। সবাই ডাক্তার ইঞ্জিয়ার হবার কথা বলে যাচ্ছে... আমি তখন যুদ্ধ করে ভর্তি হলাম আর্কিটেকচারে। উদ্দেশ্য একটাই। জিনিসটার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিল আমার। তেমন বিখ্যাত কোন বিশ্ববিদ্যালয় না, একটা নতুন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম আর্কিটেকচারে। এখন আমার পেশাগত জীবনে টাকার মুখ খুব দেখা হয় নি, তবে জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি খুব আছে।
ছকে বাঁধা হিসেব করে পড়াশোনা করার পরের অবস্থাটা যখন দেখি তখন খুব কষ্ট লাগে। আমরা দুজনে মূলত একই মানুষ ছিলাম। চিন্তায়-চেতনায়-মননে। আমি এখন খানিকটা বিব্রত বোধ করি যখন দেখি সে অসুখী!
যা হোক... দিদি, লেখার পরিসরটা এবার বেশী ছোট হয়ে গেল। আরেকটু বড় হলে ভাল লাগতো।
--- থাবা বাবা!
হাঁ এমন অনেককেই দেখেছি। নিজে যে বিষয় পড়তে চেয়েছিলো, ভালোবেসেছিলো, সেটা না নিয়ে "প্র্যাকটিকাল" শুভার্থীদের পরামর্শে ও চাপে (কারুর কারুর বাপ মা তো সরাসরি নাকি বলেছে, অনেক টাকা ইনভেস্ট করা হয়ে গেছে তোমার উপরে, ছোটো থেকে মহার্ঘ ইংরাজি স্কুলে পড়াতে, এখন কোন আক্কেলে যেতে চাও বুনো হাঁসের পেছনে? সাহস কত! ওসব চলবে না বাপু, যা বলছি করো ইনজিনিয়ারিং এ ঢোকো। না হইলে থাপ্পড় দিয়া দাঁতের হালি ফালায়া দিবো তোমার। ) জীবনটা দিলো কেরিয়ারের স্বার্থে। যার ইচ্ছা ছিলো ইতিহাসবিদ হবে, পড়লো ইনজিনিয়ারিং, এখন নিমখাওয়া মুখ করে কাজ করে কাস্টোমার সামলানোর। টাকার অভাব নাই, এটা একটা খুবই বড় ব্যাপার কিনা! রুপেয়াই যেখানে বাপ সে বড়া, সেখানে তো ভালোবাসা টালোবাসা এইসব বড় বড় কথা কয়ে লাভ নাই।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
একটা গল্প মনে পড়ে যাচ্ছে বার বার! ডঃ জাফর ইকবালের লিখা একটা গল্প, 'আইনস্টাইন'। পড়েছেন কিনা জানি না! কিন্তু আপনার 'ইনভেস্টমেন্ট' এর কথায় গল্পটা মনে পড়ে গেল!
--- থাবা বাবা!
ভালো লাগছে ইস্কুলবেলার গল্প। এবারেরটা হুট করে শেষ না হলে আরো ভালো হতো।
প্যাদানি-ট্যাদানি দেয়া নিয়মবহীর্ভুত ছিল নাকি, না মানে আমি আবার ঐসবের সাথে বেশি পরিচিত ছিলাম কিনা!
বাংলা গার্লস ইস্কুলে(৫-১২) মারধর সেলফ চেকড ছিলো। দিদিমণিরা ভিকটোরিয় এটিকেটের গজেন্দ্রগামিনী আদর্শের। তবে মেন্টাল শকের ব্যাপার প্রচলিত ছিলো, তাদের ক্ষুরধার বাক্যাবলি একেবারে যেন ছুরি। সেসব গল্প আসছে সামনে।
প্রাইমারীতে (কেজি ওয়ান থেকে ক্লাস ফোর) দেখেছি মারধর হতে, খুব বেশী না অবশ্য। কোনো কোনো দিদিমণি মারকুটে টাইপ ছিলেন তবে বেশীরভাগই শান্ত মা মা টাইপ।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তোমার লেখায় সবসময় মুগ্দ্ধতা!
আরো মোটাসোটা আকারের হওয়া চাই, পড়তে শুরু করেই ফুরিয়ে গেলে চলবে না বলে রাখছি।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বড় করে দিতে বাধো বাধো ঠেকে, লোকে বোর হতে পারে।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ, ভালো থেকো।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ক্লাস ফোরে প্রাইজ পেয়েছিলাম - মানুষের মতো মানুষ। জীবনের লড়াইতে যখনই ক্লান্ত বোধ করেছি তাক থেকে বইটা নামিয়ে এনে পড়েছি। আলেক্সেই মেরেসিয়েভ এখনও আমার হিরো।
বারো ক্লাসের পরই ঠিক হয় কে কি করব। মাঝে মধ্যে কেমন যেন গুলিয়ে যায়। দশ ক্লাসে শখ ছিল ডাক্তার হব। আমাদের সময় হায়ার সেকেন্ডারীতে এডিশনাল বিষয়ের নম্বর যোগ হত না। তার ওপর এগারো-বারোর জীববিদ্যাতে এত গাছপালা, ইঁদুর-বাদুড়-শামুক নিয়ে পড়তে হত - বোর হয়ে গেলাম। বারোর শেষে স্বপ্ন দেখতাম নিউক্লীয়ার ফিজিক্স নিয়ে পড়ব। জয়েণ্ট দেব ভাবছি। তখন পাড়ার কাকারা এসে উপদেশ দিতেন, 'সিভিল ইঞ্জিনীয়ার হয়ে কত মাইনে পাবে? ডাক্তারি পড়। পাড়ার ডাক্তারবাবুর রোজগার দেখেছ?' বিনয়ের সঙ্গে জবাব দিলাম, 'আমি তো সিভিল না, ইলেক্ট্রনিক্স ভাবছি।' 'ও আচ্ছা', বলে ভাদ্রলোক চলে গেলেন। ইলেক্ট্রনিক্স খায় না মাথায় দেয়, তখনও অনেকেই (এবং আমিও) জানে না। জয়েন্টের রেজাল্ট ভালোই হয়েছিল, কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আমার আবেদন পত্র হারিয়ে ফেলল। তখন শুধু কলেজ অনুযায়ী নাম বেরোত। আমার কোথাও নাম নেই। তখন আমার দাদা গিয়ে ভর্তি-বিভাগে হা রে রে রে শুরু করে দিল। শেষকালে যাদবপুর ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি বলে আমায় মেনে নিল। আর আমি দাদার এতবড় সংগ্রামের পর আর কি করে বলি, ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ব না। ইঞ্জিনীয়ারিং পড়তে গিয়ে বারবার মনে হয়েছে, অন্য কোন বিষয় নিলেই ভালো হত। যাহোক আমি ডাক্তার না হয়ে, পদার্থবিদ হতে হতে ইঞ্জিনীয়ার হয়ে, ফেরিওয়ালাগিরি করে শেষকালে ছাড়পোকা তাড়াচ্ছি। সামনে কি আছে কে জানে?
আহ, আলিওশা। ভারী সুন্দর তাঁর অপরাজেয় জীবনের গল্প। এখনো আমার সেই জায়গাটা মনে পড়ে-যেখানে ফ্লাইট ইনস্ট্রাকটর আলেক্সেইকে শেখাচ্ছে প্লেন চালানো, আলিওশার চোখে একফোঁটা জল, ইনস্ট্রাকটর অবাক হয়ে ভালো করে দেখবে ভাবলো, সেই মুহূর্তে প্লেনটা বাঁক ঘুরলো, ওর চোখ আর দেখতে পেলো না উড়ান শিক্ষক।
আপনি ছারপোকা তাড়ানো কেন বলছেন?????
আপনার দাদার হা রে রে রে গল্প শুনে মজা লাগলো। উনি ও কি প্রকৌশলী?
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দারুণ একটা সিরিজ... চলুক...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
তোমারে ঝুড়িভরা ধইন্যাপাতা গো নজরুল।
চেষ্টা চালাবো চালিয়ে যাবার।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নেশা হইয়া যাইতাছে আপনের ইস্কুলবেলা।
চলতে থাকুক,পড়তে থাকি।।
পর্বগুলি আরেকটু বড় হইলে ভাল হয়।।
ভাল থাকুন, অনেক ভাল। সবসময়।।
নতুন মন্তব্য করুন