দূরবীক্ষণের সাহায্যে মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে সেই গ্যালিলিওর কাল থেকে। ক্রমশ:ই দূরবীক্ষণযন্ত্র উন্নততর হয়েছে আর তার সাহায্যে আরো আরো বেশী বেশী জিনিস দেখা গেছে। আলো-দূরবীণ কেবল নক্ষত্র নীহারিকা গ্যালাক্সি থেকে আসা আলো ধরতে পারে, কিন্তু কী হবে সেইসব বস্তু খুঁজে পাবার যারা কিনা কেবল এক্স রে বা রেডিও ওয়েভ বিকিরণ করে? ক্রমে তাদেরও দেখা গেল যখন আমরা রেডিও-দূরবীণ আর এক্সরে-দূরবীণ বানাতে শিখলাম।
১৯৩০ এর দশকেই জ্যোতির্বিদেরা পর্যবেক্ষণ করে বলেন যে কিছু একটা হিসাব যেন ঠিক মিলছে না। মহাকর্ষের অঙ্ক কষে দেখা যাচ্ছে একেকটা গ্যালাক্সির মোট ভর অনেক বেশী বেরোচ্ছে সমস্ত তারা আন্তর্নাক্ষত্রিক গ্যাস ধূলা ইত্যাদি সবকিছুর ভর যোগ দিয়ে যা হচ্ছে তার চেয়ে। ব্যাপারটা কী? আবার একটু আধটু না, এই না দেখা ভর দেখা ভরের চেয়ে প্রায় ছয় গুণ। এত বেশী তফাত যে এটাকে অবজার্ভেশন এরর বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না।
ক্রমে বোঝা গেল গ্যালাক্সি বলে যা আমরা দেখি সেটি হিমশৈলের চূড়া, বলতে গেলে কিছুই না। গোটা গ্যালাক্সি বেষ্টিত হয়ে আছে বিরাট দৈত্যাকার গোলকের ভিতর, অদৃশ্য বস্তুর (Dark Matter) গোলক। এই অদৃশ্য বস্তুর ভর দৃশ্য বস্তুর ভরের ছয় থেকে দশগুণ বেশী।
জ্যোতির্বিদেরা মনে করেন গ্যালাক্সির যে উজ্জ্বল অংশটা দেখা যায় সেটা তৈরী আমাদের চেনা সাধারণ পদার্থ দিয়ে অর্থাৎ কিনা যেসব পদার্থ তড়িচ্চুম্বকীয় ক্রিয়ায় অংশ নেয়। এই ধরনের বস্তু সেই মহাবিস্ফোরণে সৃষ্টির পর থেকে নানারকম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে আর মিলেমিশে সূক্ষ্ম গঠনকাঠামো নির্মাণ করেছে। কিন্তু ডার্ক ম্যাটার এত ক্রিয়া ট্রিয়া করে না বলে নিজের প্রাচীন প্রিমিটিভ অবস্থাতেই থেকে গেছে। আর ডার্ক এনার্জীর কথা যদি বলতে হয় তাহলে তার মিথস্ক্রিয়া আরো কম, এখন পর্যন্ত শুধু জানা গেছে মহাবিশ্বের ত্বরিত সম্প্রসারণটুকু ছাড়া আর কোনো কিছুতে তার কোনোরকম হাত নেই।
গ্রহ তারা গ্যালাক্সি এসব বড় বড় জিনিস নিয়ে কাজ করেন জ্যোতির্বিদেরা। আর কণা-পদার্থবিদেরা আছেন এর ঠিক বিপরীত মেরুতে, তারা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রের কারবারী। তবে কণা-পদার্থবিদদের কাজ থেকে অনেকসময় মহাবিশ্বের ওসব বড় বড় বস্তুর নানাবিধ রহস্যের সমাধান হয়। এনারা মাঝে মাঝেই নানারকম অজানা অদেখা বস্তু আবিষকার করে ফেলেন তাদের জটিল অংক আর পরীক্ষানিরীক্ষায়।
এই তো গত শতকের সেই গোড়ার দিকের কথা। বিটা ডিকে নিয়ে কত গন্ডগোল। না মেলে শক্তির নিত্যতা সূত্র না মেলে ভরবেগের নিত্যতা সূত্র। কী জ্বালা! তখন এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রের কারবারীরাই বার করলেন নিউট্রিনো, এরা বড় লাজুক কণা, কেবল সাড়া দেয় মহাকর্ষে আর মৃদুক্রিয়ায়। আরে ঐ মৃদুক্রিয়া মানে উইক ফোর্সের কথাই তো জানা ছিলো না, হিসেব মিলাতে গিয়েই তো ঐ মিথস্ক্রিয়াটি আবিষ্কার হলো। তো তারপরে আশির দশকে এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রের কারবারীরাই বার করলেন ডাবলু আর জেড কণাদের, এরা বেশ ভরযুক্ত, এরাই ঐ উইক ফোর্সের বাহক।
(আরো কিছুটা বাকী আছে)
ছবি : আন্তর্জাল সৌজন্যে
তথ্যসূত্র: সয়েন্টিফিক আমেরিকান নভেম্বর ২০১০
মন্তব্য
শুরুর ছবিখান কেমন জানি ডিস্কোথেকের রঙিন আলোর মতন লাগে... হে হে
বিপুলা এ বিশ্বের অনেককিছু জানার আছে, ধরেছেন যখন সিরিজ করেই ফেলুন। আপনিও ঢুকে পড়লেন ছাইঞ্ছ লেখার জগতে দেখে প্রথমে ডরিয়েছিলাম, তারপর লাইন আলাদা দেখে নিশ্চিন্তি হলুম।
মণিরত্নম,
"এ কী কথা আজ কহো?
পড়ো নাই কি সেই পুরাকালের অণো থেকে মহো? "
http://www.sachalayatan.com/tuli1/27982
আসলে শুরু টুরু করে ফেলেছিলাম ক'জনে মিলে, কিন্তু শেষ হয়ে হইলো না শেষ! অনিকেত লিখলেন এল এইচ সি নিয়ে কয়েক পর্ব ( ওখানেই একজনের একটা কমেন্টের জবাব দিতে গিয়ে সেই টানেই এক ধাক্কায় সচলে লিখতে শুরু আমার ), আমার অণো থেকে মহো ১২ পর্ব হলো, আর এদিক ওদিক আরো কটা ছিলো কণা নিয়ে, শিক্ষানবিশ বেশ কিছু খুব ভালো লেখা লিখলেন, সরল করে জটিল বিজ্ঞান বুঝিয়ে লিখলেন, সবার ভালো লাগলো। তারপরে এগুলো একজায়গায় করে "কণিকা থেকে নীহারিকা" বলে বার করার একটা চেষ্টা হচ্ছিলো। কঠোর পরিশ্রম করছিলেন তরুণ কিছু বন্ধু, আমি কিছুই বিশেষ পারি না, খালি উৎসাহ দিচ্ছিলাম। তারপরে কী হলো বহুকাল কোনো আপডেট পাই না, তবে বিশ্বাস করি একদিন ওদের শুভ চেষ্টা একদিন কোনো না কোনো রূপে ফলপ্রসূ হবে, হবেই।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নাহ, সে সময় মাঝেসাঝেই সচলে এলেও নথিভুক্ত নিয়মিত মেম্বর ছিলাম না কিনা, তাই এ মণিমুক্তো অগোচরে থেকে গেছে।
হোক হোক বই হোক...
শিব্রাম চক্রবর্তীর একটা গল্প আছে "ম্যাও ধরা কি সহজ নাকি? "
আরে বই হওয়া কি সোজা ব্যাপার???
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কী বললেন, আরো কিছুটা বাকী আছে? আমি তো দেখছি আরো বহু বহু কিছু বাকী আছে। যে বিষয় ধরেছেন তাতে সিরিজ সহসা শেষ হবার উপায়তো দেখছিনা। অবশ্য আপনি যে স্পীডে লেখেন তাতে ভরসা হয়। তবে এই সিরিজে ক্ষ্যামা দিয়ে মাঝপথে অন্যকিছু ধরে ফেলেন যদি তাতে পাঠকের সমস্যা হয়ে যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আরে বাকী তো আছে বিরাট। জানার জগত ছোট্টো, অজানাই বিশাল। তবু তো সেই বিরাট নদী " হুই লদী বড়ো লদী তাতো মোর কী? আমাদের ছোটো লদী হৃদসখীটি।"
অঞ্জলিতে যেটুকু তুলতে পারি সেটুকুই লাগে তেষ্টা মিটাতে। বাইরে কী থাকলো না থাকলো কী এলো গেল?
ভালো থাকবেন, চেষ্টা করবো লিখে যেতে সিরিজ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অনেক কিছু শিখলাম।
-----------------------------------------
Sad Stories | Sad Songs
শুনে ভালো লাগলো অতিথি।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
লম্বা লেখা এবং লম্বা সিরিজ চাই
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমিও তবে বলি জীবাণু নিয়ে লেখারও সিরিজ চাই। ঘন ঘন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চমৎকার লাগছিলো, তারপর হঠাৎ করেই ধপাস! আরেকটু হৃষ্টপুষ্ট করে লিখলে হয় না?
আরেকটা কথা,
এই ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করবেন? মানে, ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বটা গোলকের আকৃতিতে, এটা আগে শুনিনি। গোলক কেন? সেটা বোঝা গেলো কী করে?
ডার্ক ম্যাটারের ব্যাপারটা তো সরাসরি দেখার উপায় নেই, এটা বোঝা যায় গ্যালাকসির রোটেশন কার্ভ আর গ্র্যাভিটেশনাল লেনসিং থেকে। সেই থেকেই এই গোলকের মতন ব্যাপারটা ধরা গেছে। এ নিয়ে পরে আরো লেখার ইচ্ছে আছে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তুলিরেখা,
বিষয়গুলি বড়ই ঔৎসুক্য চারিয়ে দেয়া। আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। এ বিষয়ে সুডিঞ্জার কি কিছু বলেছেন তাঁর সময় নির্ভর ও সময় স্বাধীন সমীকরণে? মহাজগতের সংকোচন ও বিস্তারের বিষয়ে জানতে ইচ্ছে করে। সেইসাথে সময় সংকোচন ও সময়ের প্রসারণ জুড়ে দিলে তো সোনায় সোহাগা।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নতুন মন্তব্য করুন