আগের কথা এখানে।
মণিদীপার সঙ্গে দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিলো তার কয়েক বছর পরে। উত্তরের পাহাড়ী শহরে কনফারেন্সে গেছি সেবার, ছোটো শহর, পরিচ্ছন্ন সুন্দর। শহরের সীমা ছাড়ালেই জঙ্গল আর পাহাড়। আমাদের গেস্ট হাউসের খুব কাছ থেকেই জঙ্গল শুরু। সপ্তাহ খানেকের কনফারেন্স। প্রথম ক'দিন প্রেজেন্টেশান ইত্যাদির ব্যস্ততায় কাটলো। তারপরে অবসর পাওয়া গেল ঘুরে বেড়ানোর। একদিন বিকালে পাহাড়ী হ্রদের তীরে ঘুরে বেড়াচ্ছি সঙ্গীসাথীদের সঙ্গে, এমন সময় সেই রেশমী সাদা উত্তরীয় জড়ানো মণিদীপাকে দেখে অবাক খুশী হলাম। সেও চিনতে পেরেছিলো, এগিয়ে এলো।
কুশল বিনিময় শেষ হলে মণিদীপা বললো সে এখন পুরোপুরি আশ্রমে থাকে, মূল আশ্রম এখানে, সে খুব জিদ করে মূল আশ্রমেই এসে পড়েছে। পাড়ার আশ্রম ভালোই ছিলো কিন্তু চেনা মানুষদের এত কাছে থাকতে ওর ভালো লাগছিলো না একেবারেই। সাধারণত এত অল্পদিনের সন্ন্যাসে মূল আশ্রমে এসে বাস করার অনুমতি পাওয়া যায় না, কিন্তু ওর ক্ষেত্রে কেন জানি অনুমতি তাঁরা দিয়েছেন।
আমি ওর বাবা মা দাদা বৌদির কথা জানতে চাই, মণিদীপা বলে," দাদা তো দেশে চাকরি নিয়ে ফিরে এসেছে বৌদিকে নিয়ে, ওদের একটা মেয়েও হয়েছে। এখন বাবামায়ের আর সমস্যা নেই, ছেলে বৌমা আর নাতনি নিয়ে সুখে আছে।" কথা শেষ করে মণিদীপা হাসে, সে হাসি নিঙরালে রক্ত পড়ে। কোনোদিন কি জানা যাবে কী আছে এই তরুণীর বেদনার নেপথ্যে?
"আর তোমার চাকরি? স্কুলে পড়াতে যে তখন! " আমি ওকে জিজ্ঞেস করি।
" সে চাকরি ছেড়ে দিতে হলো। এখানে আশ্রমে এসে পড়তে হলো যে। আশ্রমের নিজস্ব স্কুল আছে, সেখানে মাঝেসাঝে পড়াই, তবে চাকরি না এটা।" মণিদীপা আস্তে আস্তে শান্তগলায় বলে, কিন্তু ওর মুখের অভিমানের রেখাগুলো মোছে না। কী হয়েছিলো ওর? কোনোদিন কি জানা যায় আসলে মানুষের ভিতরবাড়ীর কথা?
"আসবে আমাদের আশ্রমে একদিন? তোমার ভালো লাগবে, খুব সুন্দর। " মণিদীপা নেমন্তন্ন করে।
আমি মনে মনে হিসাব করি ক'দিন আছি, কাজকর্ম কী আছে, তারপরে বলি, "আগামীকাল বিকেলে যাবো? আমারও খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। "
গেলাম পরদিন বিকালে। সত্যিই ভারী সুন্দর পরিবেশ। দীর্ঘ দীর্ঘ চিরসবুজ পাইন গাছে ঘেরা আশ্রম। আশ্রমের লাগোয়া তাদেরই পরিচালিত বাচ্চাদের স্কুল। শুক্রবার বিকেল বলে লোকজন কেউ নেই প্রায়, নিয়মিত কর্মচারীরা সপ্তাহান্তের ছুটিতে চলে গেছে। আশ্রমিকরা হয়তো যে যার নির্জন ধ্যানে। মঠাধ্যক্ষা মহিলার সঙ্গে দেখা হলো শুধু। মণিদীপা নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলো।
শক্তপোক্ত চেহারার প্রায় বৃদ্ধা মহিলা, লবণমরিচ চুল একেবারে কদমছাঁট করে ছাঁটা। চোখ একেবারে কটকটা কড়া, মায়া টায়া নেই। ইনি যেকোনো আন্তর্জাতিক কোম্পানির পরিচালিকা হতে পারতেন। তবু কেন ইনি সংসার ছেড়ে সন্ন্যাসে?
সামান্য সৌজন্য কথাবার্তা সেরেই উনি বিদায় দিলেন আমাদের। আমাকে স্কুলের পাশের খেলার মাঠ দেখাতে নিয়ে গেল মণিদীপা। ঢেউজমির খেলার মাঠ গড়িয়ে নেমে গেছে বাগানের দিকে, সেই বাগানের প্রান্তে হ্রদের তীরে এসে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
বিকেল তখন নরম হয়ে এসেছে, আকাশের মেঘগুলোতে কেমন একটা রঙীন রেশ লেগেছে, আর একটু পরেই শুরু হবে সন্ধ্যা। সময়টা নিজেই খুব মায়াবতী।
হ্রদের ধার ঘেঁষে একটা চ্যাটালো পাথর, সেখানে আমরা বসি। কেমন তিরতিরে ঢেউ , কোথা থেকে একটা অবাক হাওয়া আসছে। আমরা কথা বলি, বর্তমান থেকে গড়িয়ে যাই পুরানো কথায়। সেইখানে বসেই কথা বলতে বলতে মণিদীপা বললো সব। হয়তো সেই অবাক হাওয়াই ওকে দিয়ে বলিয়ে নিলো, আমি নিমিত্ত মাত্র।
(সেকথা পরের পর্বে )
মন্তব্য
অবশেষে 'সন্দেহযুক্ত' কথাবার্তা পার হয়ে নিশ্চিত কিছু পাওয়া গেলো
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
পোস্ট ভালো লাগলো।
পরের পর্বের অপেক্ষায়............
ধন্যবাদ সবুজ পাহাড়ের রাজা।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কাল থেকে চাঁটগার বাতাসে সেরকম একটা তিরতিরে ভাব শুরু হয়েছে।
আপনার গদ্যের বুনট বেশ ভালো লাগে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী। বা: আপনারা অবাক হাওয়া পাওয়া শুরু করেছেন চাঁটগায়ে। আমার
বহুদিনের সাধ চাঁটগা যাওয়া।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভালো লাগলো
ধন্যবাদ শোভা।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
পরের পর্বে সব কথা শুনতে চাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কট্টুক কট্টুক সব পর্ব দিচ্ছেন!
আহা গ্যারান্টিযুক্ত ছোট পর্ব কি কনফ্যুশনযুক্ত বড় পর্বের চেয়ে ভালো নয়?
তবে তুলিদি আবার না এর পরের পর্বে এক্সপেরিমেন্টের পরের পর্ব জুড়ে দেন
তবে! দেখুন মণিরত্নম, এই নতুন ছেলেটি কত বুঝদার। এ তো রীতিমতো পছন্দনীয় হয়ে গেছে!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হ্যাঁ হ্যাঁ, ছেলেটি খুবই ভাল। হয়ত কখনও সখনও একটু আধটু ইয়ে টিয়ে খায়, তবে সে সব ধর্তব্যের মধ্যেই না...
ইয়ে?...
বিরিশিরিতে এমন একটি আশ্রম দেখেছিলাম। সেখানে এমনটি দিনের পর দিন একাকী একটি ঘরে সন্ন্যাসব্রত পালন করতে দেখেছি (মানে ঘরটি দেখেছি, ভেতরে কেউ একজন আছেন শুনেছি)। যাহোক, এ গল্পের মোড় কোন দিকে বাঁক নেয়, কতটুকু নাটকীয়তা্ সেটি দেখবার প্রতীক্ষায় রইলাম।
এই পর্বটিও উত্তেজনার সুতোয় টান ধরে রেখেছে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
এ গল্পে সব নাটক নরখন্ডে। মানে সংসারে। তারই প্রতিক্রিয়ায় এভাবে তার দূরে আশ্রমে চলে যাওয়া।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বিরিশিরিতে এমন একটি আশ্রম দেখেছিলাম। সেখানে এমনটি দিনের পর দিন একাকী একটি ঘরে সন্ন্যাসব্রত পালন করতে দেখেছি (মানে ঘরটি দেখেছি, ভেতরে কেউ একজন আছেন শুনেছি)। যাহোক, এ গল্পের মোড় কোন দিকে বাঁক নেয়, কতটুকু নাটকীয়তা্ সেটি দেখবার প্রতীক্ষায় রইলাম।
এই পর্বটিও উত্তেজনার সুতোয় টান ধরে রেখেছে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নতুন মন্তব্য করুন