এটা চীনের উপকথা। এক শিল্পী-মা আর তার স্বপ্নের গল্প, এক মায়ের জন্য এক ছেলের জীবন তুচ্ছ করে অভিযানের গল্প।
শীত আর কুয়াশামোড়া এক উপত্যকায় একটি ছোট্টো গ্রাম। গ্রামের একেবারে শেষপ্রান্তে একটি জীর্ণ কুটির। কুটিরে থাকে এক বিধবা মহিলা আর তার তিনটি ছেলে। বড় আর মেজো প্রায় যুবক, ছোটোটি এখনো কিশোর।
গরীব পরিবারটি, জমিজমা কিছু নেই। প্রৌঢ়া মা নকশি রেশমীকাপড় বোনে আর দিনের শেষে তাই নিয়ে হাটে যায়। বিক্রি হলে সেই টাকায় চাল ডাল তরকারি কিনে ঘরে ফেরে, ফিরে রেঁধেবেড়ে ছেলেদের খাইয়ে নিজে খেয়ে ঘুমাতে যায়। এইভাবে দিন যায়।
একদিন হাটে গিয়ে মা দেখলো এক দোকানে একটা ছোট্টো নকশি রেশমী কাপড়, সেখানি দেখে মা আর নড়তে পারে না। অপূর্ব সেই ছবি। একটি আশ্চর্য সুন্দর ফুলেফলে ভরা বাগান আর বাগানের মাঝখানে একটি পাথরের প্রাসাদ। মায়ের মনে হলো নকশী রেশমী কাপড়টা না পেলে সে বাঁচবে না, বুকের ভিতরটা তার কেমন করছে! সেদিনের বিক্রির সব টাকা দিয়ে সে কিনে ফেললো ওটা, এক রাত না হয় তারা মুড়িচিঁড়া খেয়ে কাটাবে।
ঘরে এনে সে আনন্দ করে ছেলেদের দেখায় ওটা। বলে, "আহা বাছারা, অমন প্রাসাদে অমন বাগানে আমরা যদি থাকতে পেতাম!"
বড় ছেলে রাগ করে বলে, "মা তোমার মাথাটা গেছে। আমরা ওখানে থাকবো কেমন করে ? আমাদের কি বাপের জমিদারি আছে? "
মেজো ছেলে আরো রাগ করে বলে, " চালডাল না কিনে উনি ছবি কিনে আনলেন। একেই বলে গরীবের ঘোড়ারোগ। এখন থাকো পেটে গামছা বেঁধে। রাতে হরিমটর।"
ছোটো ছেলে মায়ের কাছে ঘেষে এসে চুপিচুপি বলে, "কী সুন্দর! আমরা না হয় নাই বা থাকলাম ওখানে, তুমি বড় করে এই ছবিটা বোনো তোমার নকশি কিংখাবে, তুমি যখন বুনবে তখন তোমার মনে হবে আমরা বুঝি ওখানে যাচ্ছি। দেয়ালে যখন টাঙিয়ে দেবে, ওটার দিকে তাকালেই মনে হবে ওখানেই আছি আমরা।"
ছেলের দিকে উজল চোখে তাকিয়ে মা বলে, "ঠিক তো! ঠিক বলেছিস। " সে বের করে আনে রেশমসুতার ভান্ডার, বেছে বেছে চকচকে চকচকে সুতাগুলি সাজিয়ে বোনার সবকিছু রেডি করে।
পরদিন থেকে নাওয়া নেই খাওয়া নেই সে শুধু বোনে আর বোনে। বড় দুই ছেলের রাগারাগি দাপাদাপির অন্ত নেই, ছোটো ছেলে তাদের সামলায়। "না, মাকে কিছু বোলো না তোমরা। ওটা না করতে পারলে মা বাঁচবে না। "
বড়দা রেগে ঘা কতক কষিয়ে দিতে চায় ছোটোভাইকে, " আচ্ছা! তবে আমাদের খাওয়া জুটবে কীভাবে? তুই জোটাবি? যা, জোটা। "
ছোটো ছেলে বন থেকে কাঠ কেটে হাটে বেচে সেই টাকায় চালডাল কিনে আনে। মা কাপড় বোনার কাজে একটু বিরতি নিয়ে রেঁধে দিয়ে নিজে একটু মুখে দিয়েই আবার বোনার কাজে ফিরে যায়।
এইভাবে দিন নেই রাত নেই খিদে ঘুম ভোলা পরিশ্রমে তিনবছরে তৈরী হয় সেই অপরূপ রেশমী কিংখাব। তৈরী শেষ হবার পরে মা যেই না সেটা বাইরে নিয়েছে সূর্যের আলোয় ভালো করে দেখবে বলে, অমনি হাওয়া সেটা চুরি করে পুবের দিকে পালিয়ে গেল।
মা শয্যা নিলো। ছেলেদের বললো, "যেমন করে হয় ওটা ফিরিয়ে আন। নইলে মাকে আর পাবি না।"
প্রথমে বড় ছেলে রওনা হলো পুবের দিকে। একদিন পথ চলে সে এসে পৌঁছায় যাদুকরীর গুহার সামনে। সেখানে একটা পাথরের ঘোড়া অ্যাত্তোবড়ো হাঁ করে দাড়িয়ে আছে। তার সামনেই লাল লাল বেরী ভরা একটা গাছ হাওয়ায় দুলছে।
যাদুকরী বেরিয়ে এসে বড় ছেলেকে বলে, "জানি রে কেন এসেছিস। তোর মায়ের নকশিকাপড় চুরি করে নিয়ে গেছে সূর্যপাহাড়ের পরীরা। সেখানে যাওয়া দুরূহ ব্যাপার। প্রথমেই তোর সামনের দু'খানা কাঁচা দাত ভেঙে দিতে হবে আমায়, সে দাঁত এই পাথরের ঘোড়ার মুখে এঁটে দিয়ে মন্তর পড়বো, পাথরের ঘোড়া জ্যান্ত হবে। তারপরে এই ঘোড়া তোকে পিঠে নিয়ে যাবে পুবের দিকে। প্রথমে পড়বে আগুনের পাহাড়, সেই আগুনের ভিতর দিয়ে ঘোড়া চলবে। একটুও যদি ভয় পাস, পুড়ে ছাই হয়ে যাবি তুই। তারপরে পড়বে তুষারের নদী, তার ভিতর দিয়ে ঘোড়া চলবে, বিন্দুমাত্র ভয় পেলেই গেলি, জমে বরফের আরেকটা চাঙড় হয়ে ভেসে থাকবি। সেসব পেরিয়ে তবে সূর্যপাহাড়।"
শুনেই ভয়ে কাঁপছিলো বড় ছেলে, দেখে যাদুকরী হাসলো। বললো, "যা বাছা ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যা। এই নে, একথলি মোহর, বিবেচনা করে ব্যবহার করতে পারলে এই দিয়ে তোদের দু:খ ঘুচে যাবে।"
লোভীর মতন হাত বাড়িয়ে মোহরের থলি টেনে নিয়ে দৌড়ে পালালো বড় ছেলে, কিন্তু বাড়ীর দিকে না, দক্ষিণের শহরের দিকে। ও সম্পদ সে কারুকে দেবে না।
দিনের পরে দিন যায়, বড় ছেলে ফেরে না। এবারে রওনা হলো মেজো ছেলে। তার অবস্থাও একেবারে তার বড়দার মতোই হলো।
অনেকদিন গেল বড়দা মেজদা কেউ ফেরে না দেখে এবারে রওনা দিলো ছোটো ছেলে। মাকে একা ফেলে যেতে তার মন চায় নি, কিন্তু শয্যাশায়ী মা নিজেই বললো ওটার আশাতেই শুধু সে আজো আছে, ওটা না পেলে তার জীবনের কোনো মূল্য নেই।
প্রতিবেশীদের কাছে মাকে দেখাশোনার কাতর অনুরোধ জানিয়ে ছোটোছেলে রওনা হলো। সারাদিন হেঁটে সে এসে পৌঁছালো সেই পাথরের ঘোড়ামুখো গুহার কাছে। যাদুকরী বেরিয়ে এসে তাকে সেই সব কথা বললো যা বলেছিলো আগের দু'জনকে।
এবারে কিন্তু মোহরের থলি নিতে হাত বাড়ালো না ছেলেটা। সে বললো, "না, মোহর চাই না, আমি সূর্যপাহাড়ে যাবো।"
একটা পাথর তুলে নিয়ে নিজেই ঠুকে সে ভেঙে দিলো সামনের দুটো দাঁত, যাদুকরী ঐ দুটো ঘোড়ার মুখে দিয়ে মন্তর পড়তেই পাথরের ঘোড়া জ্যান্ত হয়ে লাফিয়ে উঠলো, সামনের লাল লাল বেরীগুলো কচমচ করে খেয়ে তার খুব তৃপ্তি হলো। তারপরে ছোটোছেলেকে পিঠে নিয়ে সে হাওয়ার বেগে চললো ধেয়ে পুবের দিকে।
পিঠের উপরে কষে লাগাম ধরে বসে রইলো ছোটোছেলে, আগুনের পাহাড় লম্ফে লম্ফে পেরিয়ে যাচ্ছে ঘোড়া, ছোটোছেলের মনে হলো বুঝি ঝলসে যাচ্ছে তার দেহ, এত গরম। শ্বাস বুঝি বন্ধ হয়ে গেল, এত ধোঁয়া। কিন্তু সে ভয় পাবে না, না,না,না। তার মনের চোখে ভেসে আছে তার মায়ের মুখ, চোখ বুজে মা শুয়ে আছে বিছানায়। মনেমনে সে বলে, "মাগো, আমি আনবোই ফিরিয়ে তোমার প্রাণের জিনিস।"
আগুন পাহাড় পেরিয়ে এসে তুষারের নদীতে পড়লো ঘোড়া। লম্ফে লম্ফে নদী পেরিয়ে যাচ্ছে ঘোড়া। ছোটোছেলের মনে হলো বুঝি ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে তার দেহ। শ্বাস বুঝি বন্ধ হয়ে গেল, এত ঠান্ডা। কিন্তু সে ভয় পাবে না, না,না,না। তার মনের চোখে ভেসে আছে তার মায়ের মুখ, চোখ বুজে মা শুয়ে আছে বিছানায়। মনেমনে সে বলে, "মাগো, কষ্ট যতই হোক আমি আনবোই ফিরিয়ে তোমার প্রাণের জিনিস।"
নদী পার হয়ে সূর্যপাহাড়, সোনার কিরণে ঝলমল করছে। পাহাড়ের উপরে পরীদের প্রাসাদ, দেয়ালে টাঙানো মায়ের সেই রেশমকাপড়, সামনে পরীরা বোনার সাজসরঞ্জাম নিয়ে, তারা দ্রুত নকল করছে মায়ের রেশমী নকশা।
ছোটোছেলে পৌঁছাতেই পরীদের রানী বললো, "আমরা অবশ্যই ফিরিয়ে দেবো তোমার মায়ের জিনিস। আমাদের নকশাতোলার কাজ প্রায় শেষ, আজকের দিনটা কাজ করলেই হয়ে যাবে। একদিন তুমি অতিথি থাকো অনুগ্রহ করে, কাল ফেরৎ পাবে।"
ছোটোছেলে আর কী করে, রাজি হয়ে যায়। সারাদিন পরীরা কাজ করে আর ছেলেটা দুরুদুরু বুকে ঘোরে, ওরা ফিরিয়ে দেবে তো জিনিসটা কাল? যদি না দেয়?
সন্ধ্যাবেলা আঁধার হয়ে আসে, এক পরী একটা মণিদীপ এনে ঝুলিয়ে দেয়, ঘর দিনের মতন আলো হয়ে যায়। ওরা কাজ চালিয়ে যেতে থাকে।
পাশের এক ঘরে শোবার ব্যবস্থা হয়েছিলো ছেলেটার, সে সেখান থেকে সব লক্ষ করে। মাঝরাতে কাজ শেষ হয় পরীদের, তারা মেঝেতেই লুটিয়ে লুটিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। একজন সুন্দরী পরী শুধু চুপ করে মায়ের আসল কাজটা আর তাদের কাজটার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখে আর মাথা নাড়ে আফশোসে। নকলটা আসলের অর্ধেকও সুন্দর না। সে সূচে সুতা পরিয়ে মায়ের রেশমনকশার বাগানে ফুলগাছের নিচে করে দেয় তার নিজের ছবি, আশ্চর্য শিল্পীর অপূর্ব কাজের মধ্যে থেকে যেতে চায় সে।
সকাল হতেই নকশি কাপড় ফিরে পায় ছোটোছেলে, ধন্যবাদ দিয়ে সে ঘোড়ায় উঠে বাড়ীর দিকে রওনা হয়। ফেরার পথে কী আশ্চর্য, কোনো বরফনদী আগুনপাহাড় কিছু নেই। কয়েক দন্ডে সে যাদুকরীর গুহার সামনে এসে পড়ে।
যাদুকরী বেরিয়ে এসে হেসে বলে, "পারলি তাহলে? সাব্বাশ। শুরুতেই জানতাম তুই পারবি। দাঁড়া তোর দাঁতের ব্যবস্থা করি।"
ঘোড়া আবার পাথরের হয়ে যায়, তার মুখের দাঁত খুলে নিয়ে ছোটোছেলের দাঁতের জায়গায় এঁটে বসিয়ে দিয়ে মন্তর পড়ে জুড়ে দেয় যাদুকরী। বলে, "আহ, এই তো আবার আগের মতন। যা বাছা, তাড়াতাড়ি মায়ের কাছে যা। এই মন্তরের জোরে মুহূর্তে চলে যাবি।"
সত্যিই তাই, কয়েকদন্ডে সে তাদের কুটিরে। সে ডাকে, "মা মাগো, বাইরে এসে দ্যাখো। ফিরিয়ে এনেছি তোমার জিনিস।"
বিছানা থেকে উঠে আস্তে আস্তে মা বাইরে আসে, ভাঁজকরা নকশিকাপড় বুকে চেপে ধরে, বন্ধ চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু জল পড়ে গাল ভিজিয়ে দিতে থাকে।
সকালের শান্ত বাতাস নকশি কিংখাব উপরে তুলে, ছড়িয়ে যেতে থাকে সে কাপড় যতদূর চোখ যায়। সব সত্যি হয়ে উঠতে থাকে। সেই সবুজ পাথরের দেওয়াল লালপাথরের থাম নীল পাথরের ছাদ প্রাসাদটি সত্যিই দাঁড়িয়ে যায়, চারপাশ ঘিরে ফুলের বাগান ফলের বাগান ভরে আছে ফুলেফলে। একপাশে একটি ছোটো সরোবর সেখানে পদ্মফুল, মাছেরা সাঁতরায়। আরো একটু দূরে ধানক্ষেত গমক্ষেত শাকসব্জীর ক্ষেত। সোনার সূর্য উঠেছে নীল আকাশে, ঢেউয়ে ঢেউয়ে হীরা ঝলকিয়ে বয়ে যাচ্ছে একটি নদী। আর ফুলগাছের নিচে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে সেই সূর্যপাহাড়ের পরী।
তারপরে আর কী? শুভদিনে ছোটোছেলে আর সেই পরীর বিয়ে হয়ে গেল, সেই বাগান ঘেরা প্রাসাদে তারা সুখেশান্তিতে বাস করতে লাগলো।
***
মন্তব্য
কী জানি, আজকের গল্পটা - হ্যাঁ, গল্পটাই, অনুবাদটা না - ঠিক ভাল লাগল না। হয়ত বাচ্চাদের গল্প অ্যাপ্রিশিয়েট করার মুডে নেই এখন...
মুড খারাপ কেন????
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তুলিরেখা,আপনার আগের লেখাগুলো থেকে এটা ভিন্ন। তবে, এমন একটা স্বাপ্নিক আবহে চলতে চলতে হারিয়ে গিয়েছিলাম কিছু সময়ের জন্য হলে ও
কিবরিয়া
অনেক ধন্যবাদ কিবরিয়া।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
একশ'টা হতে আর কয়টা বাকি থাকলো?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
১০০ হইতে আর ও ৬০টা বাকী।
কিন্তু ৫০ হইতে মাত্রো ১০ টা বাকী। ভাবতাছি ৫০ টা হইয়া গেলেই মাদুরফরাশ গুটামু।
একেকটা গল্পের জন্য সামনে সামনে একেকটা প্রবন্ধ, পরিচিতি মিল অমিল কোনদেশে কেন কীভাবে এসব আরকি। হইয়া গেল ১০০। "উপকথাশতক" কেমন নাম?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
পঞ্চাশটা গল্পের সাথে একটা করে প্রবন্ধের জন্য "ভট" দিলাম। মিল-অমিল, উৎপত্তি নিয়ে যদি লেখেন তাহলে তো আমি খুশিতে তিন লাফ দেবো। "উপকথাশতক" খুবই ভালো শোনায়। কামলা খাটতে হলে বলবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আইচ্ছা কমু নে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
উপকথার মধ্যে "ব্রেক" চলে ছন্দপতন হয় সম্ভবত। আমার কাছে তাই মনে হলো।
এগুলো মাথায় ঢুকাতে হবে। বয়সকালে নায়নাতনীদের বলার মতো কিছু থাকা লাগবে তো!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লন, ব্রেক বদলাইয়া বিরতি কইরা দিলাম।
হায়, নায়নাতিনে কি এইগুলা শুনবে? হ্যারা হয়তো তখন ক্যাপটেন স্পার্কিটের হাইপারজাম্প দেখবে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আমার ভালো লেগেছে। ধুসর গোধূলির 'ব্রেক'-এর সাথে ছোট ছেলের দাঁত 'ফিট' করা নিয়ে আমার যৎসামান্য আপত্তি ছিল।
লন, "ফিট" ছাড়াইয়া দিলাম।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এই তিন পুত্র প্লটটা যে কত দেশের কত উপকথায় কতবার ঘুরে ফিরে এসেছে গুণে পারা যাবে না মনে হয় সবক্ষেত্রেই বড় দুইটা গাধা হয় কেন?
বেশিরভাগ উপকথায় দেখা যায় নায়ক নিজের জন্য বৌ খুঁজতে গেছে বা আকাশে তীর ছুঁড়েছে সেটা কোন ব্যাঙ মুখে নিয়ে বসে আছে সেটা দেখতে গেছে - ব্যতিক্রমও আছে অবশ্য। চীনের উপকথার একটা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছেন? সাধারণতঃ এগুলোর নায়ক নিজের জন্য কিছু করে না - কখনো কখনো প্রিয়জনের জন্য যায় কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজের জনগোষ্ঠীর জন্য কোন কাজ করতে বেরোয় - শেষে যদি পরীটরী কিছু জুটে যায় তো সেটা অতিরিক্ত পাওনা। এই জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করার থিমটা আমি চীনা উপকথায় যত বেশিবার ঘুরে ফিরে আসতে দেখেছি অন্য কোন দেশের উপকথায় ততটা দেখিনি।
এই পার্থক্যটুকু চোখে পড়েছিলো অনেক আগে। 'মাশা', 'আচু' আর 'ওমানের' গল্প পড়তে গিয়ে।
নেটিভ আমেরিকান গল্পগুলোতেও এরকম। নায়ক কিছু করতে যায় তার জনগোষ্ঠীর জন্য, নিজের জন্য না। অথবা নিজে নিজেই যদি কিছু করতে বেরোয় তবু শেষমেষ সবার জন্য কিছু ভালো আশীর্বাদ বা অন্য কিছু নিয়ে আসে।
গ্রীক উপকথায় হারকিউলিসের গল্পগুলোতেও কিন্তু এরকম, সেই যে ১২ টি বিরাট বিরাট কাজ করলো ছেলেটা, সবই পরের জন্য।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
পারস্যের হাতেম তায়ী একটা অপদার্থের জন্য বারোটা কাজ করে দিয়েছিলেন। তবে সেই বারোটা কাজ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের অনেকগুলো উপকার করেছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের ডালিমকুমারেরা অন্যের জন্য কিছুই করেনি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ডালিমকুমার নামটাও কেমন যেন ঠিক ম্যাসকুলিন না। কেমন রাঙা-ঠোঁট মিহিগলা টাইপ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আমি এক বাস্তব জীবনের ডালিমকুমারকে চিনি।
এক্কেবারে পারফেক্ট রাঙা ঠোঁট মিহি গলা। আমি যে নেটওয়র্ক ভেন্ডরে কাজ করতাম, সেটার এনলিস্টেড এক সার্ভিস সাবকন্ট্র্যাক্টরের ফিল্ড এঞ্জিনিয়ার ছিলো। একবার রাজকন্যা না কিসের কথা চিন্তা করতে করতে উত্তরের ফ্রিকোয়েন্সি দক্ষিণে বসিয়ে দিয়ে এসেছিলো - ওদিকে মারাত্মক ইন্টারফিয়ারেন্সে অপারেটরের মাথা উত্তরোত্তর গরম হচ্ছে, এদিকে আমরা গলদঘর্ম হয়েও খুঁজে পাইনা ঝামেলা কই হলো। আমার সিমুলেশন বলছে সব ঠিকঠাক, কিন্তু ফিল্ড রেজাল্ট বলছে উল্টো। হঠাৎ আমার এক কলিগের কি মনে হলো "এই দেখ তো ব্যাটা ডালিমকুমার কোন পক্ষীরাজ বেঁধে এসেছে অ্যান্টেনার গোড়ায়?" দেখা গেলো এই কীর্তি। ঘটনা অবশ্য একটা নয়, আরো অনেক ঘটিয়েছে।
উপকথা পড়তে সব সময়ই ভালো লাগে। এগুলো নিয়ে বই বের হবে কবে?
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
বই? বই কবে বের হবে খোদায় মালুম। না না, ষষ্ঠপান্ডব ও জানেন। উনি স্পনসর।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আমি আবার কবে আপনার স্পন্সর হলাম! ঠাক্মা আপনার স্পন্সর - এ'কথা সবাই জানে। এখন ঠাক্মার কাছ থেকে ঘুষ খেয়ে আমার ঘাড়ে এই বোঝা চাপানো হচ্ছে!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হায় হায়। এ কী কথা শুনি!
এক কাজ করেন, আফনেরা দুই সম্ভাব্য স্পনসরে বরং বক্সিং লড়েন। যে হারবে, সে স্পনসর!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
সুবিধাবাদী দর্শক (পাঠক) হিসেবে আমি দুই দলেরই সমর্থক। জমজমাট লড়াই শেষে লেখাগুলো মলাটবন্দী হোক - তাহলেই খুশি।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
পান্ডবদা আর স্নিগ্ধাজী গ্লাভস ইত্যাদি পরছেন, রিং তৈরী, চারপাশে লোক।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খুব ভালো লেগেছে, বই হিসেবে বের হলে ভালো হবে। অনেক ধন্যবাদ।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বর্ণনার সারল্যে ও মমতার প্রলেপে হৃদয় ছুঁয়েছে!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এটা মিস করে গিয়েছিলাম। ইস! না পড়লে এরকম একটা গল্প পড়া হত না।
প্রায় সব দেশের উপকথার থীম-ই মনে হয় এক, দশের সেবাই নায়কের ব্রত।
বাস্তব জীবনটা এসব উপকথার মত হলে বেশ হত।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
আহা তাইলে আর লোকে গল্প শুনতো নাকি? বাস্তব জীবনটাই যদি সেরকম হতো?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এক রাতে দুটো রূপকথা পড়ে বড়ই ভাল লাগলো।
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন