এটা কোস্টারিকার উপকথা। তবে এই উপকথা একটু আলাদা আলাদা আঙ্গিকে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইউরোপ জুড়ে শোনা যায়।
এক তরুণ রাজা এক গ্রীষ্মের সকালে ঘোড়ায় চড়ে বেরিয়েছে বনে শিকার করতে। বনে ঢোকার মুখে সে দেখলো একটা বিরাট সতেজ সবুজ কমলালেবুর গাছ। হাতের নাগালে ঝুলে আছে তিন তিনটে পাকা পাকা কমলালেবু। রাজা টপাটপ কমলা তিনটে পেড়ে কোমরের পেটিকায় রেখে দিলো। পরে সময় বুঝে খাওয়া যাবে।
যেতে যেতে বন গভীর হয় আর বেলাও বাড়ে। গ্রীষ্মের বেলা, দেখতে দেখতে গরম বেড়ে যায়। মাঝেমধ্যে দৌড়ে যায় খরগোশ, হরিণ, গাছ থেকে গাছে উড়ে যায় ঝলমলে পাখিরা কিন্তু কেন জানি রাজার শিকারে মন যায় না। এইভাবে বেলা প্রায় দ্বিপ্রহর, রাজার খুব তৃষ্ণা পায়। জল কই? কাছাকাছি কোথাও জলের দেখা নাই।
রাজার মনে পড়ে কমলালেবু তিনটের কথা। পেটিকা থেকে একটা কমলালেবু তুলে যেই না ছুলেছে খাবে বলে, অমনি টপ করে কমলালেবু হয়ে যায় এক আশ্চর্য সুন্দরী তরুণী, বেনারসীর জরির মতন চকচকে সোনালী রঙের চুল, গোলাপের পাপড়ির আভা লাগা মুখের রঙ, বৃষ্টিধোয়া আকাশের মতন নীল চোখের মণি, সে মেয়ে কাতর গলায় বলে, "জল, আমায় একটু জল দাও দয়া করে।" কিন্তু সে কোথায় পাবে জল? রাজা অবাক হয়ে চেয়ে থাকে, মেয়েটা মিলিয়ে যায়।
আরো খানিকটা এগিয়ে যায় রাজা, কিন্তু তৃষ্ণা বেড়ে যায়। জলের দেখা নেই। সে আরেকটা কমলালেবু তুলে যেই না ছুলেছে খাবে বলে, অমনি আবার সেই কান্ড। টপ করে কমলালেবু হয়ে যায় এক আশ্চর্য সুন্দরী তরুণী, বাদামীরঙের চুল, রাঙা আপেলের আভা লাগা মুখের রঙ, কাজলদিঘির মতন কালো চোখ, সে মেয়ে কাতর গলায় বলে, "জল, আমায় একটু জল দাও দয়া করে।" কোথায় পাবে রাজা জল? সে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে, মেয়েটা মিলিয়ে যায়।
দুপুর গড়িয়ে যায় বিকেলের দিকে, রাজা শোনে কোথায় জানি সারস ডাকে, হাঁস ডাকে। তবে তো কাছে জলাশয়! আরেকটু এগিয়ে গিয়েই রাজা দেখলো আহ, সরোবার। একখানি ঝলমলে ঝরণা ঝরে পড়ছে উপর থেকে আর তা থেকে হয়েছে সরোবর। ঘোড়া থেকে নেমে ঝরণার কাছে গিয়ে প্রাণ ভরে জল খেলো রাজা। তার ঘোড়াও ততক্ষণে সরোবরে মুখ ডুবিয়ে দিয়েছে।
জলটল খেয়ে সুস্থ হয়ে রাজা বসলো জলের ধারে পাথরে, এবারে তৃতীয় কমলাটা খাওয়া যাক ভেবে যেই না ছুলেছে খাবে বলে, অমনি টপ করে সেই কমলালেবু হয়ে যায় এক আশ্চর্য সুন্দরী তরুণী, রেশমকোমল কালো চুল, জুঁইফুলের পাপড়ির মতন মুখের রঙ, কালো রাতের মতন কালো চোখের মণি, সে মেয়ে কাতর গলায় বলে, "জল, আমায় একটু জল দাও দয়া করে।"
রাজা ঝুঁকে পড়ে সরোবরে, দু'হাতের অঞ্জলিতে জল তুলে এনে দেয় সেই মেয়েকে। জল খেয়ে সে মেয়ের শাপমুক্তি ঘটে। তখন সে সব বলে রাজাকে।
এক ডাকিনীর যাদুতে তার আত্মা বন্দিনী হয়ে ছিলো তিন কমলালেবুর মধ্যে, শর্ত ছিলো কোনো সহৃদয় মানুষ যদি তাকে কমলালেবুর ভিতর থেকে মুক্ত করে জল দেয় তবে তার মুক্তি হবে। আজ তাই হলো।
তারপরে রাজা তো তাকে নিয়ে রাজধানীতে ফিরলো, মহা ধূমধামে তরুণ রাজা এই মেয়েকে বিয়ে করে রানী করলো।
সুখেদুখে দিন যায় তাদের। একদিন রাজা গেছে পাশের রাজ্যে কী যেন কাজে, প্রাসাদে রানীর কাছে এলো এক বুড়ী পসারিণী। কত রতনমানিক বসানো গয়না তার পেটিকায়। রানীকে সে দেখায় গলার হার কানের দুল চুড়ি কাঁকন, যদি রানীর পছন্দ হয়!
একটা মুক্তাবসানো চুলের কাঁটা খুব পছন্দ হলো রাণীর, বুড়ী তো আনন্দে আত্মহারা। সে তাকে সেটা নিজে পরিয়ে দেবে। রানী মাথা নামিয়ে দিলো, সে কিছু সন্দেহ করে নি। বুড়ী ছিলো ছদ্মবেশী সেই ডাইনি। সে এক ঠেলায় কাঁটাটা ঢুকিয়ে দিলো রাণীর সিঁথিতে, মুহূর্তে রানী একটা সাদা কপোতী হয়ে উড়ে চলে গেল আকাশে।
উড়তে উড়তে সে গিয়ে হাজির রাজার কাছে, রাজা তখন ফিরছিলো। সে তো অবাক। কোথা থেকে এ পায়রাটা এলো? এমন পোষা পাখির মতন হাতে এসে বসেছে! কী সুন্দর দেখতে! রানীকে উপহার দেওয়া যাবে ভেবে সে নিয়ে চললো তাকে।
কিন্তু প্রাসাদে ফিরে সে খোঁজে আর খোঁজে, কোথায় রানী? কোথাও নেই। কেউ কিছু বলতে পারে না। পরিচারিকারা বা পাহারাদারেরাও কেউ দেখে নি রানীকে কোথাও যেতে। রহস্য রহস্যই থেকে যায়।
দিনের পর দিন চলে যায়, রাজা চুপচাপ নিজের কাজ করে যায় আর কাজ শেষ হলে ঘরে ফিরে রানীর আয়না চিরুনী কাপড় কাঁকন নূপুর ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে, কোথায় গেল রানী? পশ্চিমের জানালা দিয়ে সন্ধ্যাতারার দিকে চেয়ে ভাবে কোথা থেকে সে এসেছিলো আমার কাছে, কোথায় আবার চলে গেল?
পায়রাটা উড়ে এসে কাঁধে বসে কানের কাছে আলতো ঠুকরে দেয়, পাখিটা তাকে ছেড়ে কোথাও চলে যায় না। রাজা তার ডানায় আলতো হাত বোলাতে বোলাতে আপনমনে বলে, "তোকে যেদিন পেলাম, সেদিন ফিরে এসেই তো আর আমার রানীকে পেলাম না রে। তুই জানিস সে কোথায় গেছে? সে হারিয়ে গেল বলে তোকে বুঝি দিলেন ভগবান।" পাখিটা চুপ করে বসে থাকে রাজার কাঁধে, হায় মানুষের ভাষা নাই তার, মানুষমন ও নাই, শুধু একটা অদ্ভুত টান তাকে এই মানুষটার সাথে বেঁধে রাখে।
একদিন রাজা তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে রাজসভা থেকে, ছাদে বসে ঝিরিঝিরি হাওয়া উপভোগ করছে। পায়রাটা উড়ে এসে বসে তার কব্জিতে, সে আস্তে আস্তে পায়রার মাথায় হাত বুলায়। কীজানি শক্ত একটা কী হাতে ঠেকে রাজার, কী রে এটা! একটা মুক্তা, সেই মুক্তাবসানো চুলের কাঁটার মাথাটা। রাজা শিউরে ওঠে, এত নিষ্ঠুর কে হতে পারে! পায়রার মাথায় কাঁটা ফুটিয়ে রেখেছে! একটানে সে খুলে নেয় কাঁটা, সাথে সাথে অবাকের থেকেও অবাক!!! সামনে দাঁড়িয়ে তার রানী।
সব শুনলো রাজা। ডাইনীর শাস্তির ব্যবস্থা আর অবশ্য তাকে করতে হলো না, সেইদিনই আগুন লেগে ঘরসমেত বুড়ী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তখন সবকিছু ধোঁয়ার কুন্ডলীতে পরিণত হয়েছে।
রাজা ও রানী তারপরে সুখেশান্তিতে ঘরসংসার ও রাজত্ব করলো বহু বছর।
*****
মন্তব্য
সবকিছু কেমন যেন তাড়াহুড়ো করে হয়ে গেলো।
আরে এ গল্প আরো ঝট করে শেষ হয়ে গেছিলো, আমি তো তবু খানিক বাঙালি টাইপ সংলাপ জুড়েছি।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
রূপকথার গল্প পড়তে কখনোই খারাপ লাগত না, এটাও বেশ ভালো লাগলো।
বাস্তবেও যদি এরকম সুখে শান্তিতে সবাই বাস করতে পারত।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
আহা সেটা তো গল্প শেষ হয়ে গেল বলে। গল্প যদি চলতেই থাকে তাহলে নানা অ্যাডভেঞ্চার তো হবেই। কান্দেন কেন তাতে?
স্বয়ং উপরের তিনি বোর হয়ে যাবার ভয়ে নিজের অ্যাডভার্সারি নামিয়ে রেখেছেন জগতে, আর আমরা তো সামান্য "গল্প বলো গল্প বলো আয়িমা গল্প বলো" টাইপ মানুষ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
কোস্টারিকা সুন্দর জায়গা। রাজারাণী বিয়ের পর সেখানে হানিমুন করে ভাল কাজই করেছে।
তা আর বলতে?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এই মেয়ে এ্যালকোহোলিক ছিলো নাকি? টাল এ্যালকোহলিকদের এরকম রাঙা মুখ থাকে। আর ব্লন্ড উইথ কালো চোখের মনি ইউনিক কম্বিনেশন। নির্ঘাত রঙ করা চুল।
জুঁই ফুলের একটা ছবি -
এরকম মুখের রঙ আর সাথে কালো চোখ হলে মেয়েকে ভ্যাম্পায়ারের মতো দেখতে হবার কথা। অনেকদিন কমলা হয়ে থাকলে গায়ের রঙ গাঁদা ফুলের মতো হলেও মানা যেত।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আহা ওটা উপমা। জুঁই মানেই কি জুঁই? আপেল মানেই কি আপেল? গোলাপ মানেই কি গোলাপ? আপন মনের মাধুরী মিশায়ে দেখুন।
এই যে আপনারা যখন গান গাইতে গাইতে কন, " কে তুমি চম্পাবরণী/ কে তুমি তন্দ্রাহরণী" তখন কি আর সত্যি সত্যি বলেন? ওটা মেটাফর।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ঠিক, আপেল মানেই আপেল না। যেমন আমার সর্দি লাগলে নাক দিয়ে নায়াগ্রা প্রপাতের জল পড়তে পড়তে নাকের চেহারা হয় টসটসে আপেলের মতো। তখন কাউকে যদি বিপুল উৎসাহে জিজ্ঞেস করি, "বস, আপেল খাইবা?" আর তখন যদি 'বস' আপেল খেতে রাজী হয়ে যায়, তাইলে কী হবে! আপেল দিমু কইত্তে?
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঠিক। এই দ্যাখেন, আপনে বোঝলেন। সমঝদারেই বোঝেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কত কমলা খেলাম, কখনোই আশ্চর্য সুন্দরী তরুণীর দেখা পেলাম না! হায়!
চমৎকার লাগছে পড়তে। আরো আসুক ঝটপট।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আরো খাইয়া যান, কমলা আপেল লিচু আম ক্যান্টালুপ ফুটি আনারস পাতিলেবু যা পারেন খান, বলা তো যায় না কবে সুন্দরী তরুণী আইসা পড়েন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তারুণ্য পার হয়ে গেছি। আশ্চর্য সুন্দরী তরুণী আর দরকার নেই, পেত্নীমুখো বুড়ি (আমার মত) হলেও চলতো, কিন্তু তা-ই বা পেলাম কই...
আর কমলাই খাবো না
আহা আপনের গাইডই না আপনেরে "গার্লফ্রেন্ড লীডিং টু ওয়াইফ" দিতে চাইলো! নিলেন না ক্যা????
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
গার্লফ্রেন্ড লিডিং টু ওয়াইফ হিসেবে এক শিশুকে জুটিয়ে দিতে চাইছিলো - বুড়ো মানুষ, তরুণীদের মুড বোঝার বয়স নেই আর। এখনো ঘ্যানঘ্যান করে যাচ্ছে - আর ঘ্যানঘ্যান করতেও পারে বটে! যতই বলি সমবয়েসী খুঁজে দিন, ছানাপোনা দিয়ে চলবে না, ততই আরো বেশী ঘ্যানঘ্যান করে।
আরে এতো তবু পরের উপর দিয়ে যাচ্ছে! আমার গাইড এতই উতলা হয়েছিলেন পাত্র খুঁজে খুঁজে এনে দেন পছন্দ হয় না দেখে, যে বৌকে ডিভোর্স দিয়ে নিজেই টাকের উপরে টোপর পরে ছাদনাতলায় দাঁড়াতে চাইছিলেন! এতখানি নি:স্বার্থ পরোপকারী পরের জন্য নিজেরে বিলায়ে দিতে চাওয়া লোক আর দেখেছেন????
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
গতকাল এই লাইনটা পড়ার পর থেকে মাঝে মধ্যেই মনে পড়ছে আর হেসে ফেলছি...
আহা, বেচারা ভদ্রলোক কেবল তার যুবকবয়সের ছবি দেখাতেন আমাদের, মাথা ভর্তি ইয়া লম্বা লম্বা কালো চুল ছিলো। এখন পুরো টাক, মাঝখান একেবারে মরুভূমি, চারধার ঘিরে খেজুর গাছের সংকীর্ণ বলয়। উনি নিজের বৌকে দেখিয়ে বলেন এনার সাথে দেখা হবার পর থেকেই চিন্তায় চিন্তায় নাকি টাক পড়ে গেছে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খুব ভালো লাগলো। বই হিসেবে পেতে চাই উপকথা গুলি। অশেষ ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ। শুভ যোগাযোগ ঘটতে থাকলে হয়তো একদিন বই হয়ে বেরোবে, কে বলতে পারে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
... আমার ও একখান রানি চাই ...
খাইট্যা যোগাড় করেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
উঁহুঁ, খাটলে রানী জোগাড় হয় না। রানীরা খোঁজে টাকাপয়সাওয়ালা সোনারূপোমুক্তো বসানো জামাকাপড় পরা অলস (কিঞ্চিৎ কুমড়োপটাশ গোছের) উচ্চবংশীয় রাজামশাই - খেটে খাওয়া মানুষদের দিকে তাকানোর সময় কই?
হায় কুমড়োপটাশের রাজত্ব কয়দিন টিকবে? হা রে রে রে করে অ্যাটিলা তোরমান মিহিরগুলেরা এসে গেলে সে রাজ্য তো আর গুল মেরে রক্ষা করা যাবে না!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এটা যদি খালি ভবিষ্যৎ রানীরা বুঝতো
বাহ বেশ ভাল লাগলো। এমন সুখে শান্তিতে বসবাস দিয়ে শেষ হওয়া গল্প পড়তে আরাম লাগে।
রূপকথা তো এভাবেই শেষ হবার কথা।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
রূপকথার মত যদি সত্যিই আমাদের জীবন হতো! দু'চারটে ডাইনী বুড়ি থাকতো, তাতে সমস্যা ছিল না। কারণ সময় মত তারা ঠিকই পটল তুলে। বাবা! কমলা খেতে গিয়ে তো এরপর থেকে ভাবতে হবে, না জানি কোন ভাই বেরাদারের ভাত মারছি আমি! মানে কমলার ভেতরে তো কেবল রানীরই থাকবার কথা না আপু গপ্পটা দালুন লাগলো
আহা না না কমলা খেতে কিন্তু কিন্তু করবেন কেন? রাণী তো থাকে কেবল যাদু কমলায়!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপনি বরং আরো বেশি করে কমলা খান, কোন রানীটানী না পেলে লস নেই, আর পেলে নাহয় বান্ধবী হিসেবে আপনার ভাইটাইদের সাথে একটু আলাপ করিয়ে দেবেন...
খুবই ভালো লেগেছে। আমাকে ছাপিয়ে আমার ১০ বছরের মেয়ে আপনার রূপকথাগুলোর নিবিষ্ট ভক্ত, পাঠক ও সমালোচক। রূপকথা লেখার সময় তাদের বয়সী পাঠকদের কথা নিশ্চয়ই সবসময় আপনার অবচেতনে থাকবে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ রোমেল। খুব ভালো লাগলো আপনার মেয়ের ভালো লেগেছে শুনে। ও কী বলে লিখবেন। উপকথাগুলি বলার সময় সবসময় খেয়াল থাকে যেন এটা বাচ্চাদের উপযোগী হয়। বাচ্চাদের কল্পনাজগৎ অনেক সম্প্রসারিত, বড়োদের লেখায় যেমন কিছু বিশেষ বিশেষ অ্যাডাল্ট থীম থাকলেই হয়, শিশুদের সেরকম না। ওদের মনের মতন লেখার জন্য একটা টাইমলেস ব্যাপার লাগে, ঠিক বোঝাতে পারছি না। উপকথায় বা এপিকে এই সুবিধাটা থাকে, যুগের পর যুগ ধরে মানুষের টেকনোলজি বদলায় কালচার বদলায় ভাষা বদলায়, কিন্তু মহাকাব্যের আবেদন উপকথার শিরশিরানি একই থাকে। আমি খুব চেষ্টা করি নিজের সেই সময়ের মন দিয়ে জিনিসটা দেখতে, তখন শুনলে কীরকম মনে হতো?
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
সব দেশের রূপকথাতেই দেখি মেয়েরা অপেক্ষায় থকে কবে রাজকুমাররা এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।
এখন মনে হয় সময় এসেছে মেয়েদের জন্য নতুন রূপকথা লিখার, যেখানে মেয়েরা নিজেরাই স্বাবলম্বী,
নিজেদের সাফল্য নিজেরাই গড়ে নিতে পারে।
ঠিক আদ্যিকালের রূপকথায় "ড্যামসেল ইন ডিস্ট্রেস" খুবই প্রচলিত থিম। তবে কয়েকটা ব্যতিক্রম আছে। চিনা রূপকথা "মানুষ কি করে শস্যের বীজ পেলো", "সূর্যোদয়ের গল্প", মালাকাইটের ঝাঁপির প্রথমদিকের গল্পগুলোর কয়েকটা, রাশান সাতরঙা ফুল এর মধ্যে পড়ে।
ড্যামসেল ইন ডিস্ট্রেস নিয়ে মজার একটা ঘটনা দেখতে চাইলে লুনি টিউনসের The Dover Boys at Pimento University কার্টুনটা দেখতে পারেন ।
নতুন রূপকথার আইডিয়াটা খারাপ নয়। আশা করি কখনো দেখতে পাবো তবে বাস্তব জীবনে যখন কিছু উচ্চশিক্ষিত "ড্যামসেল ইন ডিস্ট্রেস" দেখি তখন মেজাজটা আসলেই খারাপ হয়।
আমি কদিন পরেই সুরিনামের এক উপকথা দেবো, সেখানে এক বোন বারোজন ভাইকে উদ্ধার করেছিলো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এখানে দেখতে পারেন
দারুণ! প্রাণ খুলে হাসলাম।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
প্রথম দুই কমলাকুমারীর কী হলো? তাদের শাপমুক্তি ঘটাতে পারলে রাজা কি তাদের তিনজনকেই বিয়ে করত? চুলের কাঁটার মতো বড় জিনিস পায়রার ওইটুক মাথায় আঁটে?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
কুমারী একজনই, তিন কমলার মধ্যে ছিলো। মানে তিনবার চান্স পেলো আরকি!
এ যাদু চুলের কাঁটা, হয়তো সাইজ চেঞ্জ করতে পারতো। ভেবে দ্যাখো, আস্তো একটা মানুষের কি কমলালেবুর মধ্যে আঁটার কথা?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ইয়ে, একজন মানুষকে তিনটা কমলায় ভরে দিলে একটা কমলায় কি তিন ভাগের একভাগ থাকার কথা না? সেই তেত্রিশ পার্সেন্ট রানীকে দিয়েই হয়ে গেলো রাজার?
যা:, কোয়ান্টাম পড়া ছেলে হয়ে এইসব কী কন? ডিটেকশানের আগে রানী ছিলো "লিনিয়ার কম্বিনেশন অব থ্রী কমলাজ " হয়ে, যেই না ডিটেকশান হলো, অমনি সেখানেই তার ১০০% পাওয়া গেল। যেমন কোয়ান্টাম পার্টিকলের ক্ষেত্রে হয়!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খাইসে!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এতক্ষণে বোঝা গেলো।
বেচারা রাজা একই সাথে রানী কই আছে আর কই যাচ্ছে কোনদিন বুঝে উঠতে পারবে না... এমনি এমনি তো আর কবুতরের অর্থ বুঝতে এতদিন লাগেনি...
শুধু এই রাজা কেন, পৃথিবীর কোনো মানুষ কোনোদিন বুঝতে পেরেছে না পারবে? তবু খালি চায় আঁকড়ে রাখতে লুকিয়ে রাখতে নিজের করে রাখতে। হায়, নিজের করে রাখতে গেলে সে হারিয়ে যায়, তাকে জোর করে পেতে গেলে পাওয়া যায় না, নিজের ১০০% সমর্পণ করলে তবে তাকে পাওয়া যায়।
একমাত্র কবি বোঝেন, তাই বলেন "মায়াবনবিহারিণী হরিণী, গহনস্বপন সঞ্চারিনী/ কেন তারে ধরিবারে করি পণ অকারণ" বলেন, "থাক থাক নিজ মনে দূরেতে/ আমি শুধু বাঁশরীর সুরেতে/ পরশ করিব ওর প্রাণমন অকারণ "
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কুমারী যদি একজনই হয়, তাহলে চেহারা আলাদা আলাদা কেন?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আহা সে যে একইসঙ্গে ত্রিরূপা ( শাক্তদের কল্পনার দেবী চন্ডী একইসঙ্গে সহস্ররূপা )। সে সম্ভাবনার সমষ্টি, যখন মুক্ত হয় নি, অব্যক্ত, তখন সে তিনটি চেহারার লিনিয়ার কম্বিনেশন। যেকোনো রূপে দেখা দিতে পারে। যেই না তাকে দেখা গেল, একটা নির্দিষ্ট রূপেই দেখা গেল।
উদাহরণ দেখো, ইলেকট্রন, থাকতে পারে স্পিন আপ বা স্পিন ডাউন হিসাবে। ডিটেকশানের আগে থাকে এই দুই স্টেটের লিনিয়ার কম্বিনেশন। যেই না ডিটেক্ট করা হয় তখন পাওয়া যায় হয় আপ স্পিন নয় ডাউন স্পিন হিসাবে।
কোয়ান্টাম জগতের সাথে রূপকথার স্বপ্নজগতের খুব মিল।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন