এই ইনুইট উপকথায় পাই পরিবেশের সঙ্গে মানুষের নিবিড় যোগের কথা, নির্ভরতার কথা, পরিবেশের প্রতি মানুষের দায়িত্বের কথাও।
ইনুইটদের কাছে সেডনা হলেন সমুদ্রের দেবী, সামুদ্রিক সব প্রাণীর তিনি মা। সমুদ্রের তলায় তিনি থাকেন, সব জলজন্তুরা তাকে মান্য করে। তার কথা শুনে বাসা থেকে বেরোয়, তার কথা শুনে বাসায় ঢোকে।
এই সেডনা অনেক অনেক কাল আগে দেবী ছিলো না, সে ছিলো পৃথিবীরই এক মেয়ে। জেলেদের এক গ্রামে সে জন্মেছিলো, সমুদ্রের তীরে বালিতে খেলাধূলা করে বড় হচ্ছিলো, অপূর্ব সুন্দরী হয়ে উঠছিল দিনে দিনে। সে যখন আরো বড়ো হলো, তরুণী হলো, চারিদিকে তার রূপের কথা ছড়িয়ে পড়লো। কাছের দূরের গ্রাম থেকে যুবকেরা তার পানিপ্রার্থী হয়ে আসলো। কিন্তু সেডনার কাউকে মনে ধরে না। সবাইকে সে ফিরিয়ে দেয়। দিনের পর দিন এরকম চলতে থাকে, কেউ কেউ বিরক্ত হয়, বলে মেয়ে বড় জেদী, কেউ বলে দেমাকী, কেউ বলে হৃদয়হীনা। সেডনার বাবামাও চিন্তিত, মেয়েকে তো বিয়ে দিতে হবে একদিন না একদিন। সেডনা বোঝে না সত্যি করে কারুর প্রেমে না পড়লে বিয়ে করে লাভটা কী?
একদিন কিন্তু এ হেন সেডনাও প্রেমে পড়ে গেল। ভিনজাতের ভিনদেশের এক যুবকের। গোপণে বিয়ে হয়ে গেলো তাদের।
এই খবর যখন জানাজানি হয়ে গেল, তখন লেগে গেল মারাত্মক গন্ডগোল। কী, তাদের মেয়েকে নিয়ে যাবে ভিনদেশের ছেলে? এতে অমঙ্গল নেমে আসবে তাদের উপরে। এ হতে দেওয়া যায় না, কিছুতেই না। সেডনাকে জোর করে নৌকায় তুলে সেই প্রত্যাখ্যাত যুবকেরা নিয়ে গেল সমুদ্রে। সেখানে গভীর সমুদ্রে নিয়ে সেডনাকে ঠেলে ফেলে দিলো জলে। সেডনা নৌকার পাশটা আঁকড়ে ধরে মিনতি করে জীবন ভিক্ষা চাইলো, কিন্তু নিষ্ঠুর লোকগুলো ওর আঙুল কেটে দিলো। যেই না কাটা আঙুলগুলো জলে পড়লো, ওগুলো হয়ে গেল সীলমাছ।
সেডনা ডুবে গেল, নিচে নিচে আরো নিচে। ঠান্ডা অন্ধকার তলদেশে পৌঁছে সে হয়ে গেল সমুদ্রের দেবী, সব জলের প্রাণীদের মা। কিন্তু ওর উপরে যে মানুষ এত নিষ্ঠুরতা করেছে তা সে ভুলতে পারে নি। তাই তার মেজাজ হয়ে রইলো তপ্ত। একবার হলো কী, সেডনা গেল খুব রেগে। সে হুকুম দিলো সাগরের সব প্রাণীদের বাসায় থাকতে। তখন মানুষ দিনের পর দিন মাছ ধরতে পারে না, সীল শিকার করতে পারে না, ক্ষুধায় কষ্ট পায়।
তখন শামান (চিকিৎসক ও যাদুকর) নিজের যাদু বাক্সো নিয়ে মন্ত্র তন্ত্র দিয়ে শরীর বেঁধে ডুব দিলো সমুদ্রে। নিচে গিয়ে দেখলো সেডনার চুলে জটা পড়ে গেছে মানুষের ফেলা তেলে আর ময়লায় কুটোকাটায় ভরে গেছে সেই চুল। সেডনার আঙুল নেই কিনা তাই কিছু করতে পারে না চুলের। সে খালি কাঁদে।
তখন শামান যত্ন করে সেডনার বেণী খুলে ধুয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়, তারপরে আবার বেণী বেঁধে দেয়। তখন সেডনা খুশী হয়, তার রাগ কমে। আবার সামুদ্রিক প্রাণীরা তার হুকুমে চরতে বেরোয়। মানুষের ও কষ্ট কমে যায়। আবার তারা মনের সুখে মাছ ধরতে পারে।
*****
মন্তব্য
ভালো লাগলো। আঙুল জোড়া দেয়া গেলে আরো ভালো লাগতো।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
গল্পটা খুব বেশি ছোট্ট।
প্রত্যাখ্যাত যুবকদের প্রতিক্রিয়া খুব পরিচিত মনে হোল।
গল্পটা আসলেই ছোটো। গুছিয়ে বাড়িয়ে রঙ ঢেলে দিয়ে আরো বাড়ানো যেত তবে গল্পের মূল মেসেজটা তাতে চাপা পড়ে যেতো মনে হয়।
আর প্রত্যাখ্যাত যুবকরা .... কী আর বলবো, এসব তো উপকথা, ডিসট্যান্ট মেমরি বলে শান্তি পাওয়া যায়, কিন্তু বর্তমানেও যা দেখি, ঘোর বর্বরতা, যেন আরো খারাপ হয়ে গেছে।
থাক সেসব। ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ইয়ে, বাই দ্যা ওয়ে, মানুষের ফেলা তেলে মানে কি জাহাজের অয়েল স্পিল নাকি?
গল্পটার মধ্যে কেমন জানি একটা খাবলা খাবলা ভাব । মনে হইতাছে, আধা ঘুমন্ত দাদী তার
নাতনিরে কোনমতে একখান বেডটাইম স্টোরী শুনাইতাছে।
-মেফিস্টো
আহা, দাদীর ঘুম পায় না বুঝি?
ইনুইট লোকেরা জাহাজের অয়েল স্পিলের কথা কেন কইবে? বা এই ধরো সেই গত বছর বিপি যে কেলেঙ্কারিটা করলো, সেসব কথা জনজাতির গল্পে আসবে কীকরে?
তবে ওরা বুঝেছিলো, যেমন প্রত্যেক জনজাতিই বুঝেছিলো লাগামছাড়া লোভের টেকনোলজি একদিন ধ্বংস ডেকে আনে, অনেক আগেই সাবধানে ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে থাকলে হয়তো তা এড়ানো সম্ভব।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হুমমম...বেশি ছোট্ট যদিও...
চুল ধুতে পারে না কেন? ওই সমুদ্রে কি অক্টোপাস, গলদা চিংড়ি এসব নেই?
খালি একবার একটু রেগে কয়দিন খাবারদাবার বন্ধ করে দিয়েই হয়ে গেলো? কয়েকটা সুনামি ইত্যাদি পাঠালেও একটু শাস্তি হতে পারতো
ছি ছি অক্টোপাশ হাঙর তিমি তেলে ময়লায় থাকতে যাবে কোন দু:খে? ওরা ওসব জায়গা ছেড়ে চলে যায়।
একটা মেরিন রিজার্ভের কথা পড়ছিলাম, প্যাসিফিক সাইডে, কিরিবাতির কাছে। কত রকমের মাছ ফিরে এসেছে পরিবেশের উন্নতি হওয়ায়। ছবি গুলো দিয়েছিলো, শত শত নানা রঙের মাছ, লেজের উপরে টুকুন কালো রঙ ওলা বিশেষ জাতের হাঙর যা কিনা লুপ্তপ্রায় ধরে নেওয়া হয়েছিলো, সব ফিরে এসেছে।
সেডনা আসলেই বেশী বেশী মা-টাইপ। মানুষের দিকে সুনামি ছেড়ে দেয় নি। পড়তো এইসব লোকেরা এনলিলের হাতে, প্লাবনে ডুবে যেতো একেবারে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অনেক সুন্দর গল্প(উপকথা)...আমার খুব ভাল লেগেছে......আশা করি আমার ছেলের এই গল্পটি ভাল লাগবে.......
ধন্যবাদ শারমিন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ইনুইটদের গল্পে "শামান" শব্দটা কি থাকতে পারে? ঐ জাতীয় বুজরুকির প্রাকটিস তাদের মধ্যেও আছে, তবু শব্দটা নিয়ে সন্দেহটা থেকে গেলো।
এই গল্পটা বেশ সুশীল টাইপ। সুশীলরা আজকাল যেসব নতুন নতুন লোককথা বানানোর চেষ্টা করেন অনেকটা সেরকম।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ইংরেজ সঙ্কলক মশাই শামান কথাটা ব্যবহার করেছেন, হয়তো ধরে নিতে হবে শামান ইকুইভ্যালেনট।
তবে সবক্ষেত্রে বুজরুকী ও বলা যায় না, বিভিন্ন নেটিভ আমেরিকান জনজাতির মধ্যে এই শামান বা মেডিসিন ম্যান একজন গুরুত্বপূর্ণ লোক, জাতির ভালোমন্দের অনেককিছু এনার উপরে নির্ভর।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বেণী বাঁধা খুব কঠিন কাজ। বরাবরের মতই ঝরঝরে অনুবাদ।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
বেণী বাঁধার চেয়েও কঠিন হলো হাতখোঁপা বাঁধা। হরহর করে খুলে যায়।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন