এই উপকথা ইন্দোনেশিয়ার। এই উপকথায় মানুষেরা কীভাবে এলো আমাদের দুনিয়ায় সেই নিয়ে চমকপ্রদ এক কাহিনি আছে।
আগে মানুষেরা থাকতো অন্য একটা জগতে। সেখানে পাহাড় সমুদ্র নদী সবই ছিলো, মানুষে সুখে দু:খে জীবন কাটাতো।
এক পরিবারে ছিলো তিনটি জ্ঞাতি ভাই আর দুই জ্ঞাতি বোন। বুড়ো বাবামায়েরা সব মরে গেছে, এই পাঁচজনে এক বাড়ীতে থাকে, একসাথে কাজকর্ম করে, খায়দায়। একদিন ছোটো ভাই সবচেয়ে বড়ভাইয়ের কাছ থেকে বঁড়শি চেয়ে নিয়ে গেল সমুদ্রে মাছ ধরতে। মাছ তো পেলই না, উপরন্তু বঁড়শিটা গেল খোয়া।
সে বাড়ী ফিরে আসার পরে সব শুনে রেগে চিল্লিয়ে বাড়ী মাথায় করলো বড়ভাই। ছোটোভাইকে সে এই মারে কি সেই মারে! মেজোভাই আর বোনেরা মিলে তাকে থামাতে পারে না। সে হুকুম দিলো ছোটোভাইকে, "যা, এখনই গিয়ে বঁড়শিটা উদ্ধার করে আন। না হলে তোর খাওয়া বন্ধ, বাড়ীতে থাকতেও দেবো না।"
ছোটোভাই আর কী করে, ফিরে চললো আবার। সমুদ্রের ধারে এসে সে চুপ করে বসে রইলো, ভাবছিলো বঁড়শিটা তো পাওয়া সম্ভব না, না পেলে বড়ভাই মাফও করবে না। কী হবে? তাহলে কী নিরাশ্রয় হয়ে খোলা আকাশের নিচেই মরতে হবে না খেয়ে? কারুর কাছে চেয়েচিন্তে কিছুদিন চালানো যায় আর গাছতলায় শুয়ে থাকা যায়। কিন্তু সে আর ক'দিন? বড়ভাইই বা কী করে তাড়ায়? বাড়ীঘরে তারও তো কিছু দাবী আছে, নাকি? এইসব আকাশপাতাল সে ভাবে আর ভাবে, মনের মধ্যে দু:খ আর রাগ, রাগ আর দু:খ।
এমন সময় সে শোনে একটা হালকা ছোট্টো স্বর, কে যেন কী বলছে। জলের মধ্য থেকে একটা ছোট্টো মাছ বলছে, "দু:খী মানুষ, তোমার কী হয়েছে?"
তখন ছোটোভাই সব বললো তাকে খুলে, মাছ বললো, "এই কথা? আমি সাহায্য করবো তোমায়। নেমে এসো জলে।"
সে জলে নামলো, মাছ তাকে পথ দেখিয়ে চলে, সে পিছু পিছু চলে সাঁতার কেটে। অনেক ঘুরে শেষে ডুবো পাহাড়ের পায়ের কাছে প্রবাল ঝাড়, সেখানে এসে তারা দেখলো একটা মাছ বুড়বুড়ি কাটে, চলতে পারে না, খুব অসুস্থ, কী জানি তার গলায় আটকেছে। সেই বঁড়শিটা। খুব যত্ন করে গলা থেকে সেটা খুলে নিলো ছোটোভাই, মাছটা স্বস্তি পেয়ে অনেক ধন্যবাদ দিলো।
বঁড়শিটা নিয়ে বাড়ী ফিরে এসে বড়ভাইকে দিলো সে। কিন্তু বড়ভাইয়ের উপরে তার রাগ গেল না। সে ভাবলো "দাঁড়াও তোমাকে কী করে জব্দ করি, সেও একদিন তুমি দেখবে।"
একদিন বড়ভাই ঘুমায়, নাক ডেকে গভীর ঘুম। পা টিপে টিপে এসে বড়ভাই যেখানে ঘুমায় তার ঠিক উপরেই একটা শিকা ঝুলিয়ে একটা মাটির পাত্রভরা মাদকপানীয় শিকায় রেখে দিলো ছোটোভাই। বড়ভাই যেই না জেগে উঠে বসেছে, অমনি ঠাঁই!!!! তার মাথা ধাক্কা মেরেছে শিকায়, আর পাত্রটা ছিটকে পড়ে চুরমার, সব পানীয় মাটির মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে।
ছোটোভাই বাজখাঁই গলায় চিৎকার করে বলে, "দ্যাখো দ্যাখো কী করলে! আমার সব গেল। হায় রে আমার এত সাধের জিনিসটা। যদি না উদ্ধার করতে পারো, তাহলে দেখবে আমি কী করি।"
বড়ভাই হতভম্বের মতন কোদাল দিয়ে মেঝে খুঁড়তে শুরু করলো। খুঁড়তে খুঁড়তে সে একটা গর্ত করে ফেললো তাদের জগতে আর সেই গর্তটুকু দিয়ে দেখা গেল এক অকল্পনীয় দৃশ্য, নতুন এক জগত।
সব ঝগড়া ভুলে পাঁচজনে একসাথে উঁকি দিয়ে দেখতে শুরু করলো। তারপরে ছোটোভাই বললো, "আমার কুকুরটাকে দড়ি বেঁধে নামিয়ে প্রথমে দেখা যাক, কী আছে সেখানে।"
তো তাই হলো। কুকুরটাকে দড়ি বেঁধে সাবধানে নামালো তারা। খানিক পরে কুকুরটাকে আবার তুলে এনে দেখলো সে দিব্যি বেঁচে আছে, খুশি আছে আর ওর থাবাগুলোতে সাদা বালি।
এবারে ওরা নিজেরা একে একে দড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলো নিজের নিজের কুকুর নিয়ে। তিন ভাই আর এক বোন নেমে পড়েছে, সবচেয়ে ছোটো বোন তখন নামছে আর ভয় পাচ্ছে খুব। কত নিচে ভাইরা আর বোনটা। ছোটোবোন ভাবছে ধুপ করে সে যদি দড়ি ছিঁড়ে পড়ে? ভাবতে ভাবতে সে চিৎকার করে উঠেছে আর উপরের জগতের লোকেরা দৌড়ে এসেছে গর্তের কাছে। তারা সবাই মিলে "হেইও মারি টান" করে দড়ি টেনে তুলে ফেললো ছোটোবোনকে। গর্তটা তারা বুজিয়ে দিলো চিরকালের মতন।
সেই থেকে এই তিন ভাই আর এক বোন আমাদের জগতেই রয়ে গেল। কালক্রমে তাদের সন্তান সন্ততিরাই দুনিয়া ভরে ফেললো।
***
মন্তব্য
হুমম...
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভাবুন একবার পরের জেনারেশনের কথাটা! উফফ।
তবে কিনা বাইবেলে যে অ্যাডাম-ইভ কাহিনি সেটা পড়ার সময় ও মাঝে মাঝে মনে হয় কেইন আবেল বা সেথ, এদের মধ্যে যারা সার্ভাইভ করলো, তাদের জন্য স্ত্রীরা এলো কোথা থেকে???? হয় সহোদরা বোনেরাই নাহয় "তিনি" আরো কয়েক জোড়া অ্যাডাম-ইভ বানিয়ে জায়গায় জায়গায় ছেড়ে রেখেছিলেন যাতে ইনসেস্ট থেকে রক্ষা পায় এরা। আর যদি এসবই সিম্বলিক হয় তাইলে তো ল্যাঠা চুকেই গেল।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভাগ্যিস তারা জ্ঞাতি ভাইবোন ছিল।
আরে ওই যুগে এটা কোন সমস্যাই না... নুট+জেব - তাদের ছানাপোনা ওসাইরিস+আইসিস আর সেথ+নেফথিস এমনকি যদি আদম-হাওয়াকে প্রথম মানুষ ধরেন তাহলে তাদের সন্তান-সন্ততি... উদাহরণের কোনই অভাব নেই।
আহা ওইজন্যই তো এটা ইউনিক মনে হলো। আমার কাছে বেশ ভাল্লাগছে গল্পটা। একটু নতুন ধরনের।
আপনি যখন বই করবেন, খুব সুন্দর করে ইলাস্ট্রেশান করবেন কিন্তু। হাশেম খানের আঁকা ছবি যে বইগুলোতে থাকতো সেগুলো আমার কাছে খুব বেশি ভালো লাগতো। রঙ্গিন হতে হবে, এমনটা না, কিন্তু যাতে অনুভূতির ছাপটুকু থাকে। আপনার সরল লেখাগুলোর সাথে ছোট ছোট ছবি জমবে খুব।
এই গল্পটাতে অবশ্য আগেরগুলোর মত কল্পনার আবেশটুকু নেই। একটু বেশি সাদামাটা লাগলো।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আমারও ধারনা ছোটোদের বইয়ে ভালো ইলাসট্রেশান মাস্ট, রঙীন হলে আরো ভালো হয়। সচলে ভালো ভালো
শিল্পী আছেন, তাঁরা রাজি হলেই হয়।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন