আজকের গল্প আটালান্টার। সে যখন ফুটফুটে একটা মেয়ে, সবেমাত্র জন্মেছে, তখনই তার বাবা-মা তাকে ফেলে এলো বনের ধারে। তখন শীতের শুরু, রাতের বেলা বেশ শীত পড়ে। বাচ্চা শীতেই মরে যাবে না হলে আমিষাশী বন্যজন্তুরাই বাচ্চাটাকে খেয়ে ফেলবে, ঝামেলা শেষ। এই ভেবে বাবা-মা ফিরে চলে গেল, তাদের পুত্রসন্তান চাই, মেয়ে দিয়ে কোন কচুটা হবে?
ওরা চলে যাবার কিছু পরে সেখানে এলো এক মা-ভালুক। ক'দিন আগেই তার দুটো ছানা হয়েছে, একটা আছে, একটা মরে গেছে। এই ভালুক-মা পরিত্যক্ত আটালান্টাকে নিজের সন্তানের মত পালন করলো, খাওয়ালো, নিজের রোমভরা শরীর দিয়ে ঢেকে শীত থেকে রক্ষা করলো।
দিন যায়, আটালান্টা ভালুক মায়ের যত্নেই বড় হয়, ফুটফুটে প্রাণবন্ত একটা মেয়ে হয়ে ওঠে। কিছুদিন পরে বনে আসা শিকারীরা এই মেয়েকে দেখে তো অবাক! তারা তাকে নিজেদের গ্রামে নিয়ে গিয়ে পালন করতে থাকে। একটু বড় হয়েই আটালান্টা রীতিমতন শিকার করতে শুরু করে দেয়, তীরন্দাজিতে আর মল্লযুদ্ধেও দক্ষ হয়ে ওঠে।
ছেলেদের সে বন্ধু আর শিকারসঙ্গী হিসাবেই দেখতো। সে যখন এক তেজস্বিনী কিশোরী, তখন না জেনে তার দিকে অন্যরকমভাবে এগিয়ে খুব শিক্ষা পেয়েছিলো দুই সেন্টর। সেন্টর হলো ঘোড়া-মানুষ, মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত মানুষের মত, বাকীটা ঘোড়ার মত ( কেউ কেউ অবশ্য বলেন ঘোড়ায় চড়া মানুষ, যে জনগোষ্ঠী অশ্ব বশ করেছিলো তাদের কেউ )। তো সে যাই হোক, বনের মধ্যে কিশোরী আটালান্টাকে একা পেয়ে তো তারা তার দিকে এগিয়েছে মৃদু হাসি হেসে খানিক মজা লোটার আশায়, আটলান্টা যে কী জিনিস তা সে বেচারারা জানতো না। আটালান্টা দৌড়ে পালালো না, ঘোড়ার সঙ্গে ছুটে পারা যাবে না সে জানতো, সে ধীরস্থির ঠান্ডা মাথায় তূণ থেকে একটি তীর বের করে ধনুকে লাগালো। আর যায় কোথা, অব্যর্থ লক্ষ্য সে তীর প্রথম সেন্টরকে আহত করলো, পরের জন তারপরও আসছিলো, সেও একই পুরস্কার পেল।
এরপরে দিন যায় দিনের নিয়মমত। আআলান্টা এখন তরুণী, সে শিকারে আরো দক্ষ হয়েছে, নামডাকও হয়েছে তার। এর কিছুদিন পরেই ক্যালিডন প্রদেশে এক দানবাকার বরাহের মারাত্মক উৎপাত শুরু হলো, বরাহের আক্রমণে মানুষ মারা যেতে লাগলো, কেউ সে বন্য বরাহ মারতে পারে না। তখন সে প্রদেশের রাজা গ্রীসের বীরদের কাছে অনুরোধ জানালেন যেন তারা দলবদ্ধ হয়ে এসে বরাহ মারতে সাহায্য করে। সে বীর শিকারীর দলে আটালান্টার ও ডাক পড়লো, সে খুশিমনে চললো শিকারীবেশে সেজে। চুলগুলো পিছনে নিয়ে গ্রন্থি দেওয়া, কোমরে কোমরবন্ধ, পোশাকের গলার কাছে চকচকে ফিতে দিয়ে আটকানো, পিঠে তীরভরা তূণ আর হাতে ধনুক। বাকী গ্রীক বীরেরা আটালান্টার এই শিকারীবেশ কতটা আশ্চর্য হয়েছিলো জানা নেই, কিন্তু ক্যালিডনের রাজপুত্র একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেছিলো। আহা যেন বা চন্দ্রদেবী আর্টেমিস স্বয়ং এসেছেন শিকারে!
এরপরে শিকার শুরু হলো। শিকারীরা চারিদিক থেকে ঘিরে ফেললো সেই বন্য বরাহকে। কিন্তু সে তো সামান্য বরাহ না, সে এমন দৌড় দিলো একদিকে যে ধাক্কায় মারা গেল দু'জন শিকারী। এদিকে বাকীরা অনেকে বর্শা নিক্ষেপ শুরু করেছে, কিন্তু সে বর্শা বরাহের গায়ে না লেগে লাগলো আরেক শিকারীর গায়ে, সেও মারা গেল। এই ভয়ানক গন্ডগোলের মধ্যে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলো আটালান্টা, সে ধনুকে তীর লাগিয়ে লক্ষ্যস্থির করে মারলো তীর, তার তীরই প্রথম লাগলো বরাহের গায়ে, বরাহ লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। ক্যালিডনের রাজপুত্র তারপরে ছুটে গিয়ে নিজের ছুরি দিয়ে বরাহের হৃৎপিন্ড ছিন্ন করলো। এরপরে চামড়া ছাড়ানো হলো মৃত বরাহের।
এই ধরনের শিকারে যে শিকারী প্রথম আঘাত করে ঘায়েল করে শিকারকে, চামড়াটা তারই পাওনা হয় পুরস্কার হিসাবে। আটালান্টারই পাওয়া উচিত ছিলো সে পুরস্কার, ক্যালিডোনিয়ান রাজপুত্র ও তাই বলছিলেন। কিন্তু বাকী বীরেরা এতে সন্তুষ্ট হলেন না, একজন মহিলা নিয়ে যাবে পুরস্কার? এতে তাদের কেমন যেন আত্মাভিমানে লাগছিলো।
আটালান্টা কিন্তু চায় নি পুরস্কার, রাজপুত্র জোর করতে লাগলো। এর মধ্যে আবার রাজপুত্তুরের দুই মামা এসে ঝগড়া শুরু করে দিলো। ঝগড়া বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে রাজপুত্তুর দিলো দুই মামাকেই খতম করে। রাজপুত্তুর নিজেও তার কিছু পরেই মারা গেল। ক্যালিডোনিয়ান বরাহ শিকারের গল্প এভাবে শেষ হলো বিষাদের কাহিনিতে।
আটালান্টার জীবনকাহিনি কিন্তু সবেমাত্র খুলতে শুরু করেছে। এই শিকারকাহিনির পরে সে আবার ফিরে গেল অরণ্যপ্রান্তে শিকারীদের গ্রামে। কিন্তু দেশময় তখন তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে।
এর কিছুকাল পরে বিরাট এক সমুদ্রাভিযান থেকে ফিরে গ্রীসে রাজা হলেন জেসন। এই রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে বিরাট ক্রীড়াপ্রতিযোগিতার আয়োজন হলো। দেশ-দেশান্তর থেকে বীরেরা সব এলেন নিজেদের দক্ষতা দেখাতে। আটালান্টাও অবশ্যই উপস্থিত। মল্লযুদ্ধে আটালান্টা বিজয়িনী হলেন, হারালেন সম্ভাব্য বিজয়ী তরুণ পেলেউসকে।
এই ক্রীড়াপ্রতিযোগিতার বিশিষ্ট দর্শকদের মধ্যে ছিলেন আটালান্টার মা-বাবাও। এখানেই পরিত্যক্তা কন্যার সঙ্গে পুনর্মিলন হলো তাদের। তারা অনেক অশ্রুবিসর্জন করে কন্যাকে মিনতি করে নিজেদের ঘরে নিয়ে গেলেন। আটালান্টা যে কেন গেল, কর্ণের মতো কেন যে বললো না, "জন্মমাত্র ফেলে দিয়ে এসেছিলে, এখন আবার নিতে এসেছ কেন? তোমরা ফিরে যাও, আমি যাবো না তোমাদের সাথে" --এ আমার কিছুতেই মাথায় ঢোকে না। হয়তো সে খুবই ক্ষমাপ্রবণ ছিলো, বা হয়তো এসব কিছুতেই তার কিছু আসে যায় নি, কে বলতে পারে।
এরপরে ঘটলো আরেক কান্ড। সেই দৌড়ের গল্প পরে কখনো বলবো।
(এখন যাই এককাপ চা আর খানচারেক গরম সিঙারা খেয়ে আসি )
মন্তব্য
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
এককাপ চা আর একটা সিঙাড়া ঠাম্মিকেও দিয়ে দিন... পান যদিও হামানদিস্তায় ছেঁচে খেতে হয়, তবু দাঁত যদি এখনো দু'একটা বাকি থাকে সিঙাড়াটা কামড়েই খাবেন নাহয়...
কী অসভ্য ছেলে!
এইবার আশালতার মাথায় লরেল পাতার মুকুট।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কী কাণ্ড, আমি আটলান্টায় যেই এলুম অমনি আটলান্টা নিয়ে লেখা?
আটলান্টায় কী করছো? ওখানের কোকাকোলার হেডাপিসে গিয়ে কোকাকোলা খেলে?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আটলান্টায় বেইবেই... হেডাপিস দেকিচি কিন্তু ঢোকার বাসনা নাই...
উঁহুঁহুঁ, এটাকে দেখিনি
আর ইয়ে, ওই বাবা মাকে দু'খানা তীর ঝেড়ে দিলেই ল্যাঠা চুকে যেতো। এইসব সেইন্টরা ক্ষমা করে করেই পৃথিবীর ক্রাইমরেট এতটা বাড়িয়েছে ।
গেরিলা, ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হায় ছন্দ, আমার মহান আর্যাবর্তেও তো এইরকম একটা সমাজেই আমরা থাকি। দুর্বছরে কন্যা জন্মালে বাটি ভরে দুধ এনে সদ্যোজাতার মুখ দুধে ডুবিয়ে তাকে স্বর্গে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া ছিলো নিতান্ত সমাজ-সচল একটা ব্যাপার। কোনো অপরাধ বলেই মনে করতো না কেউ। যার যার ঘরের ব্যাপার! এখন সেটা সফিস্টিকেটেড হয়ে আলট্রাসোনিক হয়ে গেছে, এখন আর জন্মানো পর্যন্ত অপেক্ষাও করতে হয় না, ভ্রূণ অবস্থাতেই ঘ্যাচাং ফুঃ।
তাও তো "আদুরে মেয়ে" সেজে অভিনয় করে যেতে হয় রক্ষা পেয়ে যাওয়া মেয়েদের, রেখেছে যে এই ঢের!
আটালান্টার সমাজ ছিলো কয়েক হাজার বছর আগের, আর আমাদের সমাজ মহাকাশজয়ী যুগের সমাজ। কোথায় এগিয়েছি আমরা?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তা বটে দিদি
আর অন্যদিকে দেখলে আটলান্টার মত মেয়ে সেযুগে জন্মাতো, এযুগের অনেক মেয়েকে (সবাই নয়) এই কথা বললেই দেখবেন ছি ছি করে উলটে পড়ছে "আমরা মেয়ে, তীরধনুক নিয়ে শিকার করা কি আমাদের সাজে? ওসব ছেলেদের কাজ"
বাহ । রোজার কারনে আসতে দেরি হয়ে যায়
আরে এই তো এসে গেছেন!
ছুটির দিন কিনা, আমার তো উঠতেই বেলা হয়ে গেল।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কী নিষ্ঠুর বাবা-মা! এই গল্পে কী শিখলাম? শিখলাম, কিছু ছেলে খুবই হিংসুটে হয়
দিদি, অনেক ধন্যবাদ সেদিন রমজানের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। দৌড়ের গল্প শোনার অপেক্ষায় থাকলাম। অনেক শুভকামনা
আয়নামতি, ঠিকই পর্যবেক্ষণ করেছ। হিংসুটে হয়।
দৌড়ের উপরে থাকলে আর দৌড়ের গল্প কেম্নে কই? তবে গল্পটা খাসা। পরে একদিন কমু। সেখানেও এক ছেলে চোট্টামি করে জিতেছিলো আটালান্টার সাথে দৌড়ে, কেউ কিছু কইলো না, বাপমা তো বটেই, সব দেবদেবীরা নাচলো আনন্দে, এতদিনে আটালান্টার বিয়ে হলো বলে। ভাবো একবার!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চমৎকার!
facebook
আটালান্টার বিয়েটা একটা ছুঁতো রে দিদি। এক. সবাই ধরে নিলো এবার সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে গুণপনার মুখে ঝামা। আর দুই (এবং এটা পেটুকদের জন্য সবচে' গুরুত্বপূর্ণ) বিয়ে মানেই হরেক রকমের খানাদানা, উদোরপূর্তি তুমি দৌড়ুতে দৌড়ুতেই বরং গল্পটা বলতে শুরু করো নাকি? হিংসুটেরা কেমন চোট্টামি করলো সেকথা জানি, এবং ধিক্কারে ধিক্কারে মুখে ফেনা তুলি
সংসারের ঘানি খালি মেয়েদেরই টানতে হবে এটা আদ্যিকালের ধারণা, তবে এযুগের বেশিরভাগ মানুষেরই সার্টিফিকেট একালের হলেও মাথা এবং মনটা আদ্যিকালেরই।
পেটুকরা খালি বউ রাঁধবে আর খাবে নাকি? নিজে রেঁধেও তো খেতে পারে
@পছন্দনীয়, ভাইয়া আপনার মন্তব্যের দ্বিতীয় লাইনটার সাথে একদম এক মত!
.... পেটুক তো আমি চিংড়ি রন্ধনে ভীষণ পটু কাউকে বলিনি ওটা গল্পের মানুষগুলোর উদ্দেশ্যে বিশেষ করে দেবদেবীদের জন্য, যাদের কাজই হলো শুধু শুধু অভিশাপ ঝেড়ে দেয়া, আর জলসায় বসে কুঁড়েমি করা!
অ:ট: গাবলু কেমন আছে রে ভাইয়া?
আরে আয়নামতি, মাঝে মাঝে খুব বোর হয়ে গিয়ে ওনারা নেমে আসতেন, যুদ্ধ টুদ্ধে উসকানি দিতেন দুই পক্ষকেই।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
একদম ঠিক কথা দিদি! মুখে শান্তি শান্তি করলেও অশান্তিতেই তাদের যেন বেশি আগ্রহ
গাবলু কয়েকদিন আগে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছে আমি কতখানি মোটা হয়েছি... কয়দিন পরে নাকি আমাকে ক্রেন দিয়ে টেনে তুলে এখান থেকে ওখানে সরাতে হবে... সুতরাং ভালোই আছে
ক্রেনটা দেখেশুনে নিতে হবে কিন্তু! তেমন টেকসই না হলে পড়ে গিয়ে হাড়গোড় ভাঙ্গতে পারে
গাবলুর জন্য শুভেচ্ছা
আমারে কমিশন দিলে কম দামে ভাল ক্রেন সাপ্লাই দিতে পারব, শুধু আপনে একা না মনে চাইলে আরও একজন নিয়া ক্রেনে চড়তে পারবেন...
আরেকজন আর পাবো কোথায়?
নতুন মন্তব্য করুন