আগের অংশ এখানে। ৭। পাশাপাশি ঘুমিয়ে যাই আমরা, আমাদের দুটো হাত পরস্পরকে ধরে থাকে, একে অপরকে সাহস দেয় স্পর্শের বৈদ্যুতি-ভাষায়, আস্তে আস্তে হাত দু'খানাও ঘুমিয়ে পড়ে৷ ঘুমের মধ্যেও কিন্তু সেই বিঁধে থাকা কাঁটার মতন অস্বস্তিটা থেকে যায়, যেন কেউ লক্ষ্য করছে আমাকে৷ যেন আমার হৃদয় মস্তিষ্ক মন বুদ্ধি সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কারা দেখছে, আঁতিপাতি করে কিছু খুঁজছে, যেন কিছু লুকিয়ে রেখেছি কারুর কাছ থেকে৷ ধোঁয়া ধোঁয়া সব ছায়া ছায়া মূর্তি হাল্কা পায়ে ঘুরছে, চারিদিকে চৈত্র-রাত্রির বাতাসের মতন ফিসফিস, আস্তে আস্তে ঘননীল হয়ে ওঠে সব, তারমধ্যে ফুটে ওঠে হাল্কা হাল্কা নীল ঘূর্ণী নকশা৷ সেই নকশা ক্রমে সোনালীরুপালী হয়ে তীব্র হয়ে ওঠে৷ ঘুম ভেঙে যায়৷
সাবধানে উঠে বসি, অতি সন্তর্পণে হাতখানা বার করে নিই আরেনুশের হাতের নীচ থেকে, চেয়ে থাকি আরেনুশের গভীর নিদ্রামগ্ন মুখখানার দিকে, ঘুমালে ওর মুখ কী কোমল! অকলুষ, অমলীন কিশোরের মতন মুখ! ও ও কি আমার মতন ঐ রহস্যময়দের স্বপ্ন দেখছে? আমি যা দেখলাম, তা কি স্বপ্ন?
ভয় পাবার কথা ছিলো, কিন্তু ভয় নয়, সত্যি ভয় না, অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে স্বপ্নটা দেখে৷ ঠিক যেন ব্যাখাহীন কোনো অস্বস্তির একটু একটু কিছু ধরতাই পাওয়া যাচ্ছে৷ এতদিন যেটা ছিলো কল্পনা মাত্র, সেটার প্রথম উড়ে আসা পক্ষধূলি যেন এসে লেগেছে চোখমুখেগালে৷ আমাদের জীবনের মধ্য দিয়েই হয়তো জানতে পারা যাবে, জীবন দিয়ে হয়তো রহস্যকে সমাধান করতে হবে৷
তাতে ভয় করে কী হবে? জীবন আমাদের এমন কীই বা যে মরণকে ভয় করতে হবে? অধৈর্য হয়েও তো লাভ নেই৷ একটু একটু করে গ্রন্থি খুলবে এর, আমাদের শুধু বেঁচে চলতে হবে ঠিক সময়ের অপেক্ষায়৷ আবার ঘুমিয়ে পড়ার আগে হঠাৎ মনে হলো, এইসব ভবনা কি আমার? এও মনে হলো কেউ যেন আমাকে সাহস দিচ্ছে৷ এতটা ভয়হীন ভাবনা কে দুর্বলচিত্ত আমার মধ্যে ভরে দিচ্ছে?
ঘরটা এখন হাল্কা নীল রঙের, দরজা-জানালাগুলো অপরাজিতাফুলের পাপড়ির মতন ঘননীল৷ ঘরটার আকৃতি ভারী অদ্ভুত, চৌকো না গোল না পিরামিডের মতন কিছুতেই বোঝা গেলো না৷ মাঝেই মাঝেই আকৃতি বদল হচ্ছিলো, দেওয়াল কখনো সিলিন্ডারের ঘোরানো তলের মতন হয়ে যাচ্ছে, কখনো সোজা সমতল কখনো এবড়োখেবড়ো, কখনো বোঝাই যাচ্ছে না দেওয়াল আছে৷ ছাদও বদলাচ্ছে, দরজাজানালা আকৃতি বদল করছে৷ এগুলোর রঙও বদলে যায়, কিন্তু এখন অনেকক্ষণ ধরে একই রঙ ধরে রেখেছে৷ কেন কেজানে!
ঘরটা বিরাট বড়ো, এর মাঝখানে কতগুলো আশ্চর্য আকৃতির বসবার আসনে বসে আছে কিছু জীব, খুব ব্যস্ত হয়ে কাজ করছে সবাই৷ বুদ্ধিমান জীব সন্দেহ নেই৷ আকৃতি অনেকটা মানুষের মতনই, আশ্চর্য সর্বাঙ্গ-ঢাকা পোশাক ওদের৷ পোশাকগুলোর রঙ বদলায়, কিন্তু এখন বদলাচ্ছে না৷ এরা মানুষ কিনা বোঝা যাচ্ছে না, মানুষও হতে পারে, যন্ত্রমানবও হতে পারে, আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন জীবও হতে পারে৷
এরা মুখে বিশেষ কথাবার্তা বলে না, হাতের আঙুলে চিকমিক করা আংটির মতন বহু যন্ত্র বসানো, তারই মাধ্যমে এরা কমুনিকেট করছে৷ এদের সামনে বিশাল দেওয়াল জুড়ে ফুটে উঠেছে দু'জন পার্থিব মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের চিত্র, একদম সমস্ত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম তরঙ্গ ইত্যাদি দেখানো, আরো বহুকিছু আছে আমাদের চেনা নয় সেসব, এদের প্রযুক্তি আমাদের থেকে বহুগুণ উন্নত৷ মাঝে মাঝেই বিশেষ বিশেষ অংশে গিয়ে এরা আরো ভালো করে বিশ্লেষণ করে৷
প্রথম প্রথম স্বপ্নে এদের যখন দেখতাম তখন এত স্পষ্ট হতো না, নীলঘূর্ণি এসে সোনালীরুপালি আলোর চর্কিবাজির মতন কিসব এনে ফেলে ছবি মুছে দিতো৷ কিন্তু এখন আর অমন হয় না, স্পষ্ট দেখি ওদের ঘর, দেওয়াল, আসবাবপত্র আর ওদের সবাইকে৷ বহুরকমের যন্ত্রপাতি আছে ঘরটিতে, কিছুই আমার চেনা নয়, ওরা আমার আর আরেনুশের স্নায়ুতন্ত্র পরীক্ষা করে৷ এতদূর থেকে কীভাবে এইসব ছবি ওরা নেয়, কেজানে!
"এতদূর থেকে" বলেই মনে হলো সত্যি কতদূর থেকে? ওদের ঐ গবেষণার ঘর কোথায় তার সম্পর্কে কিছুই জানি না আমরা৷ দু'জনেই আমরা স্বপ্ন দেখি, ঘুম থেকে উঠে আস্তে আস্তে বলাবলি করি সেসব৷ এর বাইরে কিছুই আর করতে পারিনা অপেক্ষা করে থাকা ছাড়া৷
প্রথমে বুঝতেই পারতাম না ঐ ছবিগুলো কী। পরে আস্তে আস্তে অনুসন্ধান করে বুঝি মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের ছবি৷ তারও আরো অনেক পরে অনেক অনেক পালা স্বপ্ন দেখার পরে বুঝতে শুরু করি ওদুটো আমাদের দুজনের৷ মাঝে মাঝে ওরা আমাদের পুরো চেহারা ও দেওয়ালে প্রজেক্ট করে দ্যাখে৷ বহুদিন থেকে দেখছে, ব্যস্ত হয়ে অংক করছে, ওদের কথাবার্তা বিশেষ নেই, বললেও কি আমরা কিছু বুঝতাম? কিন্তু দুজনেই বুঝতে পারি কিছু একটা নিয়ে ওরা ভারী উদ্বিঘ্ন৷ কী হতে পারে? নিরীহ আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে এমন কী থাকতে পারে যা ঐ উন্নত জীবেদের এত উদ্বিঘ্ন করে তুলেছে?
৮।
তারপরে দিন যায়, রাত যায়৷ আমরা কাজকর্ম করি, খাই দাই, ঘুমাই আর স্বপ্নে দেখি সেই অনন্ত ঘর আর তার অনবরত বদলে যেতে থাকা দেওয়াল ছাদ দরজা জানালা ...সকালে উঠে প্রাত্যহিক রিচুয়ালের মতন সেই কথা বলাবলি করি আমি আর আরেনুশ, আর কেউ এসব জানেনা৷
এই অর্ধ-ধ্যানমগ্ন সাংগ্রিলার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আমাদের সঙ্গী ছাত্র ও সহকর্মী, তাদেরও আমরা এসব বলতে পারিনা কখনো, আমাদের যারা নির্দেশক ও শিক্ষক তাদের তো আরোই না৷ ভয় বা সংকোচ নয়, অন্য কারণে বলতে পারিনা, মনে হয় বললেই যেন ওরা অবাক হয়ে তাকাবে, মুখের মায়ালু ভাব দূর হয়ে যাবে, স্বপ্নাচ্ছন্ন অর্ধনিমীলিত চোখগুলো বিষ্ফারিত হয়ে খুলে যাবে, শান্তির ঘুম থেকে আচমকা জেগে উঠে যেন ওরা যন্ত্রণায় চিত্কার করে উঠবে৷
কেন দু'জনেরই এরকম মনে হয়, কেজানে! কিন্তু মনে হয়, তাই আমরা কিচ্ছু বলিনা কাউকে৷ নিজেরা নিজেরা শুধু আলোচনা করি, কিন্তু কোথাওই পৌঁছতে পারিনা সেই আলোচনা থেকে৷ অচেনা অরণ্যের কিনারের অজানা সাগরতটে অবোধ মানবমানবীর মতন ঘুরে বেড়াচ্ছি যেন, কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না কী আছে ঐ তরঙ্গায়িত অসীম নীলের ঐপারে?
একদিন আমাদের চিঠি এলো দেশ থেকে, ডাকজাহাজ মাসে একবার আসে, হিসেব করে ছুটির দিনের দুপুর নাগাদ এসে ঘাটে ভেড়ে, আগ্রহী লোকেরা ভীড় করে থাকে জাহাজঘাটায় সেদিন, আমরাও যাই৷ সেদিনও গেছিলাম যেমন গত ছয়মাসে ছয়বার গেছি৷ প্রথম মাসে আমাদের দু'জনেরই চিঠি ছিলো, আরেনুশের বন্ধুর আর আমার আপনজনেদের হাতে লেখা চিঠি৷ আমরা খামের উপরে অনেক করে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে না খুলে ঘরে নিয়ে এসেছিলাম, ঘরে এনে সারা দিন ঐ চিঠিতেই বুঁদ ছিলাম দু'জনেই, খাওয়া-নাওয়া সব ভুলে৷ রাত্রেই উত্তর লিখে পরদিন ফিরতি ডাকজাহাজে দিয়েছিলাম৷ তারপরে গত পাঁচমাস আর চিঠিপত্র ছিলো না৷ প্রত্যেকবার এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেতাম, আজকে দু'জনেই অবাক চিঠির মোটা মোটা দুইখানা খাম পেয়ে৷
ঘরে এনে খুলতেই ঠং করে আমার খামের ভিতরের একতাড়া কাগজের ভাঁজের ভিতর থেকে গড়িয়ে পড়ে একখানা সোনালী রংএর ধাতব রিঙ আর আরেনুশের খাম থেকে একখানি ত্রিভূজাকার রুপালী ধাতবপাত৷ অত্যন্ত অবাক হয়ে যাই আমরা দু'জন, এরকম জিনিস আগে কোথাও দেখেছি কি? কে আমাদের এগুলো পাঠালো? কী এগুলো? কেনই বা আমাদের পাঠালো?
খামে প্রেরকের নামসাকিন কিচ্ছু নেই, আমরা ঐ তাড়া তাড়া কাগজ আঁতিপাতি করে খুঁজি, আরো আরো অবাক হয়ে যাই৷ অচেনা লিপিতে ক্ষুদে ক্ষুদে করে বহু বহু কিছু লেখা, কোথাও রেখাচিত্র ও আছে,কিন্তু বিন্দুবিসর্গ কিছুই আমাদের বোধগম্য হয় না৷ সম্পূর্ণ অচেনা ভাষা, এমনকি রেখাচিত্রগুলোও অদ্ভুত৷ আমি তো আমি, বহুকাল ধরে বিমূর্ত শিল্প নিয়ে নাড়াচাড়া করা আরেনুশও কিছুই বুঝতে পারে না৷ তাইলে কি অন্যের চিঠি ভুল করে আমাদের হাতে এলো?
না, তাও তো না, এই তো খামের উপরে জ্বলজ্বলানো বড়ো বড়ো করে লেখা আমাদের নাম ঠিকানা! দুই ভাষায়, একটা সাংগ্রিলার ভাষায়, একটা আমাদের মাতৃভাষায়৷ তাইলে এইরকম অদ্ভুত সব লেখা কেন? এই দু'খানা ধাতব বস্তুই বা কেন? কেউ কি প্র্যাকটিকাল জোক করলো আমাদের সঙ্গে? একেবারে অসম্ভব যে তাও না, কিন্তু খুবই কম সম্ভব৷ কার কী লাভ এই এই এত দূরে এত খরচ করে রসিকতা করার? সেরকম কোনো বন্ধু বা আত্মীয়,উহুঁ, মনে তো পড়ে না!
ডানহাতের তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠে সাবধানে তুলে নিই রিঙখানা, মসৃণ সুন্দর সোনালী রঙের বালা-শিশুদের হাতের গোল সোনার বালার মতন৷ শুধু অসাধারণ মসৃণ, আলোর কাছে তুলে ঘোরালাম, রঙের ছটা ছিটকে উঠলো ওর ধাতব গা থেকে৷কোথাও কোনো নকশা নেই, একদম নিটোল৷ এবারে বাঁহাতের করতল প্রসারিত করে তাতে রাখলাম রিঙটা, চেয়ে রইলাম ওটার দিকে৷ কে এ জিনিস পাঠালো?
কষ্ঠিপাথরে ঘষা দিয়ে দেখবো সোনা কিনা? কিন্তু সোনার হলেই বা কী, না হলেই বা কী? নতুন সংস্কৃতিতে সোনা এখন আর জরুরী বা দামী জিনিস কিছু নয়, আর পাঁচটা ধাতুর মতন সাধারণ৷ আরেনুশও রুপোলী ত্রিভুজটা নিয়ে আমার মতনই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খানিকক্ষণ দেখে তারপরে হাতে রেখেছে৷ ওর ত্রিভুজটা ভরাট, আমার রিংটা যেমন শুধু একটা বৃত্ত, ওরটা তা নয়, সলিড একটি ত্রিভুজাকার পাত৷ কোনো নকশা নেই ত্রিভুজটায়, তিনখানা শীর্ষবিন্দু খুব সূক্ষ্ম৷
অনেকক্ষণ জিনিসদুটো দু'জনে মিলে দেখতে থাকি, কোনো রহস্যভেদ হয় না৷ বেলা বেড়ে উঠতে থাকে, আমরা যুক্তি সাজাতে চেষ্টা করি এর পিছনে কী আছে সেই নিয়ে, আমাদের কল্পনা বারে বারে সেই পরিবর্তনশীল রহস্যময় ঘরখানির সঙ্গে এটাকে মেলাতে চায়, হয়তো ওরাই এদুটো পাঠিয়েছে আমাদের কাছে৷
জল্পনা কল্পনা অনেক করে শেষে তাড়া তাড়া দুর্বোধ্য কাগজপত্র আর ধাতব ত্রিভুজ আর বালা রেখে যেই আমরা উঠতে যাবো, অমনি ত্রিভুজটা শব্দ করে ওঠে, বালাটাও৷ ত্রিভুজের এক শীর্ষবিন্দু একটু লেগেছিলো রিঙটার উপরে, মৃদু ধাতব শীষধ্বনির মতন শব্দ করতে করতে ত্রিভুজ গড়িয়ে ঢুকে পড়তে থাকে বালার মধ্যে, একসময় ফিট করে যায়৷ এখন একটি ত্রিভুজ আর তার তিন শীর্ষবিন্দু ছুঁয়ে টাইট হয়ে আটকানো রিঙ৷ ঘরের আলো আচমকা অন্যরকম হয়ে গেছে, আমরা পরস্পরের হাত চেপে ধরে উত্তেজনায় নি:শ্বাস ফেলতে ভুলে গেছি৷ এসব কী হচ্ছে এখানে?
রিঙবদ্ধ ত্রিভূজ লাফিয়ে ওঠে শূন্যে, ঝকমকে জোরালো আলো বেরিয়ে আসে ওদের গা থেকে, ওরা ঘুরপাক খেতে থাকে ঘরের বাতাসে, মৃদু পিঁ পিঁ পিঁ শব্দ হতে থাকে৷ তাড়া তাড়া চিঠির কাগজের মধ্যে ঝড়ের ঘূর্ণী লাগে যেন, রিংবদ্ধ ত্রিভূজ ওগুলোর উপরে এসে আলো ফেলে, ঝড়ের মতন হাওয়া কাগজগুলো ওলোটপালোট করে, কিন্তু অন্য কোথাও হাওয়া নেই৷
আমি আরেনুশের হাত ধরে আছি, আমাদের দু'জনের হাতই কাঁপছে, ঘেমে যাচ্ছে, বিস্ময়-বিস্ফারিত চোখ মেলে চেয়ে আছি কাগজ আর ত্রিভুজ-বলয়ের কান্ডকারখানার দিকে৷ একবার ঢোঁক গিললাম, গলার মধ্যেটা বালি বালি লাগছে, ভীষণ তেষ্টা, অথচ জল খেতে যাওয়া অসম্ভব৷ কী মনে করে একবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম, এখন ভরা দিনের আলো থাকার কথা, তপতপে দুপুর এখন৷ অথচ বাইরেটা অদ্ভুত বেগুনী আর কমলা রঙে ভরে আছে, গাছের মাথাটাথা কিছুই দেখতে পেলাম না, আমরা কোথায়? এখনো নিজেদের ঘরেই আছি, কিন্তু তীব্র কোনো তরঙ্গ আমাদের ঘরখানি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে বাইরের জগত থেকে৷ জানালার বাইরে উজল বেগনী আলো ঝলকে ওঠে, আমি তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নিই৷
একখানি চিঠির কাগজ তাড়া থেকে আলাদা হয়ে এসে স্থির হয়ে দাঁড়ায় বাতাসে, ত্রিভুজ-রিঙের অদ্ভুত আলো ওর ছায়া ফেলে দেয়ালে, অমনি ঐ অদ্ভুত চিত্রলিপির মাঝ থেকে ত্রিমাত্রিক চলছবি বেরিয়ে দেয়ালে অভিনীত হতে থাকে৷ সেই গল্পের মধ্য থেকে আমাদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশ আসে, বুঝতে অসুবিধা হয় না, কারণ কোনো ভাষা বা কথা ছিলো না, অন্য কোনো উপায়ে মন থেকে মনে সরাসরি সংযোগ সাধন করছিলো নির্দেশগুলো৷
অভিভূত হয়ে আমরা আমাদের শ্রবণাতীত শ্রবণযন্ত্রে শুনতে থাকি এক অদ্ভুত ইতিহাস-আমাদের পৃথিবীর ইতিহাস, যার সঙ্গে পরতে পরতে জড়িয়ে আছে গ্রহান্তরের পরাক্রান্ত দুই প্রতিদ্বন্দী সভ্যতা৷ আমাদের যে ইতিহাস ও ঘটনাবলী সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গ জানা নেই, কেউ কেউ কোথাও কোথাও তাঁদের সূক্ষ্ম সংবেদনশীল মনের মধ্যে কিছুমাত্র টের পেলেও অন্যেরা কিছুতেই তা গ্রহণ করেনি, অথবা প্রমাণহীন বিশ্বাসমাত্রের ঠান্ডা ঘরে ঠেলে দিয়েছে৷
আজকে এই কমলা বেগুনী অজানা তরঙ্গের জালে আমাদের ঘরখানিকে পার্শ্বজগত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ঐ গভীর মহাকাশের অচেনা গ্রহের সভ্যতার স্বর আমাদের বলে যেতে থাকে ঘটনাবলী৷ আস্তে আস্তে আমাদের দমবন্ধ অস্বস্তি আর তৃষ্ণায় বালিবালি হয়ে আসা গলা শান্ত হয়ে আসে, কোমল শান্তি এসে আমাদের ভিজিয়ে দেয় গ্রীষ্মপারের প্রথম বৃষ্টির মতন৷ শান্ত হয়ে আমরা শুনতে থাকি৷
(প্রথম পর্ব সমাপ্ত)
মন্তব্য
আজকে এই ধারাগল্পের পাঠকতালিকায় যোগ দিলাম। আগের তিন পর্ব একটানা পড়ে এসেছি। এক কথায় চমৎকার!
আপনার কী মত জানি না; আমার মনে হয়, এরকম সাবলীল গদ্য একেকটা পর্বে আরো বেশি পরিমাণে থাকলেও মন্দ লাগবে না। পর্বের আকার আরও বাড়াবেন নাকি? নাহয় হাতিপোস্ট হোল, আপনারও হয়তো পরিশ্রম বেশি হোল, কিন্তু পাঠক হিসাবে আমরা তখন আনন্দ পাবো আরও বেশি!
তাড়াতাড়ি পরের পর্ব পড়তে চাই। অপেক্ষায় থাকলাম।
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
আপনাকে ধন্যবাদ।
আর, এইটা তো শেষ কিস্তি, প্রথম পর্ব সমাপ্ত হয়ে গেল তো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দ্বিতীয় পর্ব শুরু করে দিন জলদি জলদি।
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
১ম পর্ব শেষ করে হাঁপ ছেড়েছি, ২য় পর্ব বহু দূরের ব্যাপার।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চলুক।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
পড়ার জন্য ধন্যবাদ সবুজ পাহাড়ের রাজা। ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ইয়েস ইয়েস। শেষে এসে [ (প্রথম পর্ব সমাপ্ত) ] দেখে খুব মজা পেয়েছি। মানে দিদি পরের পর্বের কথা ভাবছে ।
যাই হোক গল্পের কথায় আসি। প্রথমদিকে 'থোড়' মুভিটার কথা মনে করিয়ে দিলেন। লেখার ভাষা এবং সাবলিল গদ্য প্রয়োগ এর কথা আর নাইবা বললাম। কল্পবিজ্ঞানের পাখার মতো উড়ে যাওয়া যায় শেষের দিকে এসে। উপন্যাস হয়ে যাচ্ছে, ড্যাম শিওর ।
ডাকঘর | ছবিঘর
ধইন্যাপাতা, তাপস।
২য় পর্ব দূরের ব্যাপার, কিন্তু এইটা কোন মুভির কথা কইলা?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
থোড়, এই মুভিটার কথাঃ
২য় পর্ব দূরের ব্যাপার??? । খুউপ খিয়াল কইরা।
ডাকঘর | ছবিঘর
ও, "থর" এর কথা বলছেন।
এটা তো খুবই ভালো একটা মুভি শুনেছি, আমি এখনো দেখে উঠতে পারি নি।
২য় পর্ব হয়তো আসবে পরের বছর বা তার পরের বছর বা তার পরের----কে বলতে পারে?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন