টলটলায়মান অবস্থায় এসে কোনোরকমে নিজেকে ঢেলে দিলাম বিছানায়, "বিছানায় বিছাইয়া দিলাম" বলা যেতো কাব্য করে। কিন্তু কাব্যের অবস্থা নাই, ক্লান্তিতে আধামরা অবস্থা। অথচ ঘুম আসে না, ক্লান্তি একটা আলগা পোশাকের মতন জড়িয়ে থাকে দেহমনের উপরে। রাত এখন অনেক।
চারিদিকে কোনো শব্দ নেই, কেউ কথা বলে না, কোনো টিভি কি রেডিওর শব্দও নেই, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। অন্ধকারের ভিতর হালকা একটা গুম গুম শোঁ শোঁ শব্দ উঠলো, মনে হয় রেফ্রিজারেটর কিংবা শীতাতপনিয়ন্ত্রকের থেকে। সাদা কোলাহল। নাকি কোলাহলের কুয়াশা? সাদা নাকি নীল? হালকা নীল? কোলাহলের কি কোনো রং হয়? হয় মনে হয়, যারা শব্দ স্পর্শ গন্ধ সব অনুভূতিকেই রং দিয়ে প্রকাশ করে, তারা হয়তো বলতে পারবে।
অন্ধকারের মধ্যে কটকট করে চোখ মেলে চেয়ে পড়ে আছি, ক্লান্তিতে কানায় কানায় ভরা কিন্তু ঘুম নেই চোখে। ঘুম আজকে মনে হয় অভিমান করেছে আমার উপরে, সাধ্যসাধনা করতে হবে। নানা যন্তরপাতির সবুজ আলোগুলো জ্বলছে আর নিভছে, জ্বলছে আর নিভছে। বৈদ্যুতিক জোনাকি ওরা। ওদের অবিরাম জ্বলা আর নেভা একটা ম্যাজিক করতে থাকে, অচেনা কোনো নেশার মতন, আমার ক্লান্ত চেতনায় লাগে ঘুমের বৃষ্টি। আহ, কী শান্তি।
আধো ঘুম আর আধো জাগরণে অনুভব করি তাকে, যে ছিলো অনেক অনেক দিন আগে, যে আছে এখনও, যে থাকবে আরো অনেক অনেক দিন পরেও। যে জানে আমাদের লক্ষ লক্ষ বছরের অতীত, জানে আমাদের কৃপণ বর্তমান, জানে আমাদের প্রসারিত অনন্তস্পর্শী ভবিষ্যত। সে জানে প্রতি মুহূর্তে পালিয়ে যেতে থাকা জীবনটুকরোগুলোর জন্য আমাদের অসহায় দুঃখ আর অশ্রুকণিকা।
সভ্যতার এই পরত পরত খোলসগুলো আমাদের ঢেকে রেখেছে পোশাকের মত, ঘরের মত, যানবাহনের মত, ডেডলাইনের মত, ছোটো বড়ো দেওয়াল তুলে রেখেছে আমাদের চারিপাশে। সেই দেওয়াল গুলো চোখের সামনের জিনিস আমাদের দেখতে দেয় না। আমাদের ব্যথিত আত্মা যখন কেঁদে ওঠে সেই হারানো জিনিসগুলোর জন্য, সেই হারানো সম্পর্কগুলোর জন্য, তখন কোনো আশ্চর্য কৌশলে সে ছুঁয়ে ফেলে আমাদের ভিতরমন, এমন করে ছোঁয় যেন সে ছিলোই আমাদের একদম ভিতরে, কোনো খোলস না পেরিয়েই কেমন করে যেন পৌঁছে গেছে সেখানে। সেই যে ফ্ল্যাটল্যান্ডের উপরে ভাসতে থাকা সে ত্রিমাত্রিক আপেল যেমন সোজাসুজি পৌঁছে গেছিলো বৃ্ত্তের কেন্দ্রে, পরিধি না ছুঁয়েই। ঠিক তেমনি করে।
কিছুই হারায় নি তো, রয়েছে নিটুট
জন্মবলয় ছুঁয়ে গেছে সাত তারা,
ফেনাবালি মেখে মেখে খেলেছে ঢেউয়েরা
সীমাহীন সীমা ঘিরে রেখেছে পাহারা।
তবুও কান্না কেন, কেন এত ব্যথা
চোখের সীমানা ছোঁয়া এত ঝুলকালি
মধুমাছি উড়ে গেছে ওপারের বনে
এইপারে পড়ে আছে গৈরিক বালি।
উতলা বাতাসে তবু জেগে থাকে কথা
মোমরাতে অরণ্যে শনশন সুরে
নির্মোক ঝেড়ে ফেলে জেগে ওঠা ভূমি
জলকলি গান গায় একা বন্দরে।
কিছুই হারায় না তো, থাকে অবিকল-
শুধু সরে সরে যায় আলোর আড়াল,
উথালিপাথালি ঝড়ও শেষ হয় একা
রাত্রির নীলকুঁড়ি ফুটেছে সকাল।
মন্তব্য
মনে ধরিলো ----------ভালো লাগিলো-
শুনিয়া খুবই ভালো লাগিলো আমারও।
ভালো থাকিবেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খুব ভালো লাগলো- অবাক লাগে মাঝে মাঝে, এত ভালো সবাই লেখে কি করে!!
ধন্যবাদ কান্তা।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খোলসের মধ্যেই বাস করছে বদলাতে না চাওয়া কতো মানুষ। একের ভেতর কয়েকজন। তাই না দিদি?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
তাই তো। কমফর্ট জোন থেকে বেরুতে চায় ই বা ক'জন বলুন? তবু, কোনো না কোনো সময়ে মনে হয় প্রত্যেকেরই ঘেরাও-দেওয়াল টপকাতে সাধ যায়।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কি অদ্ভুত সুন্দর এক চিত্রকল্প জন্ম নিচ্ছে।
যেন স্লো-মোশনে আমার বর্তমান।
ধন্যবাদ প্রদীপ্তময়।
এই জগতটাই তো তাই, সরে সরে যাওয়া আলোর আড়াল, বেড়ে চলতে চলতে ছড়িয়ে পড়তে থাকা ঘটনামালা, কিছুই হারায় না তো এখানে! সব সুখ সব দুঃখ সব আনন্দ সব বেদনা সব সৃষ্টি সব লয় সব জন্ম সব মৃত্যু সব জয় সব পরাজয় সব হারানো সব পাওয়া কোথাও না কোথাও রয়ে যাচ্ছে, রয়েই যাচ্ছে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দারুন বললেন সত্যি।
খুব ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ সৌরভ। আপনার ভালো লাগা শুনে ভালো লাগলো আমারও।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ রইলো আসমা। ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন