আমি তাকে বিকেল থেকে চিনতাম, সেই তখন থেকে, যখন আলো ছিলো অনেক বেশি। মাঠের সবুজ জ্বলজ্বল করছিলো, তার উপর দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছিলো আমাদের কাকজোড়া খেলা। মাথার উপরে উপুড় হওয়া আকাশে নীলের সঙ্গে ভাব করে উড়ছিলো সাদা, সবুজ, লাল গোলাপী ঘুড়ি- ঘুড়ির পাশে ঘুড়ি।
তারপরে সন্ধ্যে হলো, ঝপ করে আলো কমে গেল। ঘরে ফিরে গেলাম যে যার। ঘরে কে যেন মোম জ্বেলেছে, হলদে আলো কাঁপছে দেয়ালে। মাটিলেপা উঠানের একপাশে রান্নাঘর। সেই ঘরে পর পর মাটির উনান, পাটখড়ির আগুনে রান্না হয়। লাল আগুন উনানচূড়ায়, মা ভাত বসায়, ভাত ফুটছে টুবুর টাবুর। পাশের উনানে কাকীমা চাপালো বেগুনবড়ি ঝোল, মৃদু ছ্যাঁকছোক, হালকা মশলার গন্ধ।
সেই ফাঁকে টুকটাক সব কথা চলে মা-কাকীমায়, চেনা কথা অচেনা কথা। বেগুনবড়ির ঝোলের খিদে পাওয়ানো গন্ধের পাশে ফুটে যাওয়া ভাতের মৃদু গন্ধ আসে। কী খিদেই না পেয়েছে, এতক্ষণ খেলাধূলা করে এসে। রান্না তো হয়ে এলো, হয়তো এখনই খেতে দেবে।
রান্নাঘর থেকে বার হয়ে এসে উঠানের পশ্চিম প্রান্তে দাঁড়াই। ওপাশে দিগন্তবিস্তৃত ধানক্ষেত। দূরে আকাশ যেখানে উপুড় হয়ে পড়েছে ধোঁয়াটেনীল দিগন্তের বৃক্ষরেখায়, সেখানে রঙ লাগছে, রঙ ধরে ধরে মেঘেরা উড়ে যাচ্ছে খুব মৃদুগতিতে। খিদেতেষ্টা চেপে এমন ছবি আঁকা দেখা যায় অনায়াসে। অনেক দূরের থেকে ট্রেনের শব্দ ভেসে এলো। এই ট্রেনে বুঝি বাবা ফিরলো। পুবের দিকে চোখ ফিরাই, সেখানে এত্ত বড় একটা গোল চাঁদ। রূপোলি হয়ে উঠছে। আজ শুক্লা চতুর্দশী।
অনেক বিকেল পার হয়ে গেছে কখন যেন, অনেক সন্ধ্যাও, সেই রঙীন ঘুড়ির বিকেল, বেগুনবড়িঝোলের সন্ধ্যেটা স্মৃতির চিলকোঠা থেকে চুপ করে চেয়ে আছে, তারপরে তাকে কোথায় দেখেছিলাম আবার? পুব আকাশ থেকে গোল সুপারমুন চেয়ে থাকে দোতলার ব্যালকনির বৃদ্ধের চোখের দিকে, মনে পড়ে যায় কাজলাদিদির গল্প, বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ ওঠার কথা।
এই তো আবার হাত রেখেছি জোছনাখাতায়
এই তো জোনাক জ্বলছে আবার সন্ধ্যাপাতায়,
এই রেখেছি জুঁইমালা তার বেণীর খাঁজে
বৃষ্টিবেলার শেষটি যখন আলোয় সাজে-
গল্পকথার বাঁশিওয়ালা আপনমনে
চাঁদের খুশি বাজিয়েছিলো মহুলবনে
এই তো আবার হাত রেখেছি জোছনাতারে
অবাক ধারা নামছে আবার রাত্রিপারে---
মন্তব্য
"ভাত ফুটছে টুবুর টাবুর"। ইশ এমন কখন ও মনে হয়নিতো, টুবুর টাবুর শব্দটা বেশ সুন্দর।
আপনি সবসময় লিখায় এত বিষন্নতা ঢেলে দেন কেন তুলিদি? পড়েই মন কেমন করতে থাকে।
লন।
হাঁড়িতে ভাত ফুটলে যে টুবুর টাবুর শব্দ হয়, সেটা বিভুঁইয়ে মিস করি, এইখানে তো রাইসকুকারে বা সোজা মাইক্রোতে ভাত।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অনেক ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ সৌরভ কবীর।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
>অনেক সুন্দর একটি লেখা, ভাল লেগেছে খুব। কিছুক্ষনের বিষন্নতা সারাদিনটিকে ভাল বোধ করিয়ে দেয় বলে মনে হয়
>ভাল থাকুন সবসময়
অসাধারণ! নস্টালজিক!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনিও ভালো থাকুন সবসময়।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অনেক ধন্যবাদ আশরাফুল কবীর।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খিদে পেয়ে গেল!
লেখার সময় আমারও জব্বর খিদে পেয়েছিলো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
(গুড়)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অসাধারণ !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খুব ভালো লাগলো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
তাসনীম, আপনাকে অনেক
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন