আমি সবসময় স্বপ্নে ছিলাম। একদম ছোট্টো থেকে, শৈশবের যতদূর মনে করতে পারি ততদূর পর্যন্ত নিজেকে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পাই। ঘুমের ঘরের মধ্যে স্বপ্নের নীল বিছানা, রেশমী চাদরে ঢাকা। ধূপের ধোঁয়া দিয়ে ঘেরা। মেঝেতে লাল আর সাদা চৌকো চৌকো নকশা, সেই ঘরেই আমি শুরু থেকে রয়ে গেছি।
কেউ আমাকে সেই ঘুমঘর থেকে উদ্ধার করে নি, কেউ ডেকে তোলে নি আমায়। মা না, বাবা না, কেউ না। ওদের সাংসারিক ব্যস্ততা, কাজকর্ম, তর্কবিতর্ক, ভালোবাসাবাসি, ঝগড়াঝাঁটি, চিৎকার, চেঁচামেচি কোনোকিছুই আমাকে স্পর্শ করেনি। আমি আমার আপন স্বপ্নের বৃত্তে বন্দী ছিলাম, গভীর ঘুমের ভিতরে আমার দিন ও রাত কেটে যাচ্ছিলো। কেজানে, কেউ হয়তো কোথাও ছিলো, শক্তিশালী ক্ষমতাবান কেউ, যে কিনা আমায় মুক্ত করতে পারে যুগযুগান্তের স্বপ্নবন্ধন থেকে। আমি নিজের অজান্তে হয়তো তার প্রতীক্ষা করতাম।
স্বপ্নের মধ্যে মাঝে মাঝে শুনতে পেতাম ঝুম ঝুম ঝুম ঝুম। কেযেন নূপুর পায়ে হাঁটছে। আসলে জানালার বাইরে বাগানে ঝুমঝুমি সাপেরা চলতো ফিরতো। সেই শব্দ শুনতে শুনতে মনে হতো সেই অষ্টম গর্ভজাতা মেয়েটির কথা, আসলে তারা ছিলো আট বোন, আগের সাত বোন মরে গেছিলো। বেঁচে ছিলো শুধু অষ্টমী। সে কেবল অপেক্ষা করতো কবে মৃত্যু এসে তাকেও নিয়ে যাবে।
একদিন আমার ঘুমঘরে সাপ ঢুকলো, ঝুম ঝুম ঝুম ঝুম। তারপরে কেবল মনে আছে একটা আগুনের মতন ব্যথা, সে কি পায়ে নাকি হাতে নাকি আর কোথাও? মনে পড়ে না। মনে পড়ে ঠান্ডা, সব কিছু ঠান্ডা। মা পায়ের পাতা ঘষে ঘষে গরম করতে পারছে না। আর মনে পড়ে নীল অন্ধকার। একটা দীর্ঘ গুহা, শেষ হয় না, শেষ হয় না।
তারপরে শেষ হলো, স্বপ্নবৃত্ত ও শেষ সেখানে। ঝলক দেওয়া আলোর মধ্যে কে যেন দাঁড়িয়ে ছিলো, তার মুখ দেখা যায় না, এত আলো তো! সে এসে আমার ডান হাত ধরলো।
রাত্রির ডানা থেকে খসে গেছে সব জল-
কী যেন ম্যাজিক ছিলো বাতাসে কাল,
লোহার খাঁচার দরজা খুলে গেছে ।
ভোরবেলা সে উড়াল দিয়েছে অপরাজিতা-নীল আকাশে।
ওকে নীলকন্ঠ বলে ডাকতো সবাই, এখন আর ডাকবে না।
কুসুম-কুসুম রোদ্দুরে সে অহেতুক ডানা ঝাপটায়
বাতাসে এখনও অফুরান যাদু, গা শিরশির করে।
সে উড়তে থাকে প্রাণপণ-
সোনালি মেঘের প্রাসাদের দিকে,
রূপালি মেঘের মিনারের দিকে ---
********
মন্তব্য
ভালো লাগলো লেখাটা। শুধু ২টা শব্দ আমার কাছে মনে হলো, সেখানে অন্য কোন শব্দ হয়তো আরো ভালো হতো ব্যবহার হলে। "যাদু" আর "ভরভরন্ত" - এই দুটো।
ভালো থাকা হোক।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
ধন্যবাদ ক্রেসিডা।
আপনার নিকনেমটা কেবলই বিষ্ণু দে র কবিতার কথা মনে করিয়ে দেয়।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভালো লেগেছে তুলিদি। মনে হচ্ছে আমি ও যদি ঘুমঘোরে থাকি, এই বেঁচে থাকাটাই যদি হয় এক ঘুমঘোর। খুব ভালো হত, জেগে উঠলেই সব দুঃস্বপ্ন শেষ হয়ে যেত।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভালো লিখেছেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
গদ্যটাও পদ্যের মতো
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ধন্যবাদ বাউল।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভাল লাগলো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চমৎকার!
আকশকুসুম স্বপ্ন দেখার পর্ব চলছে তো চলছেই। কি আর বলব......
ডাকঘর | ছবিঘর
কিছু তো বলেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন