সন্ধ্যা সন্ধ্যা ধূপছায়া-আলোর ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, একটা নীল পর্দা সামনে, আরো কাছে গিয়ে দেখি নীলের উপরে লাল আর সবুজ দিয়ে ইকড়িমিকড়ি নকশা, কীসের ছবি চিনতে পারি না। কখনো মনে হয় ডানা মেলা পাখির দল ফট ফট করে উড়ে যাচ্ছে ঘুরতে ঘুরতে, আবার কখনো মনে হয় লালমাথাওয়ালা শত শত উদয়নাগ, সেই সাপগুলো সব একসাথে ফণা তুলে নাচছে। হাওয়ায় পর্দা সরে গেল, টুক করে ঢুকে পড়লাম একটা ঘরে। সেই ঘরে চারিদিকে আশ্চর্য সব ছবি ঝুলছে, রেশমী কাপড়ের উপরে আঁকা ছবি, দুলছে হাওয়ায়, হাওয়া কোথা থেকে আসছে? ভাসতে ভাসতে হঠাৎ কোথা থেকে আমার সামনে এসে পড়লো এক বিরাট আয়না। আয়নার ভিতরে অন্য একটা দেশ, অন্য একটা কাল।
সেখানে দেখতে পাই রোহন আর অবন্তীকে। রোহণকে চিনতে পারি, সেও আমাদের ক্লাসেই পড়তো, কোচিং ক্লাসে দেখা হতো। ঠিক সেই চেহারাই দেখি। অবন্তীকেও দেখি, সতেজ সুন্দর প্রথম তারুণ্যের অবন্তী। সেই যখন ওরা প্রথম চিনেছিলো এক অপার্থিব অনুভূতিকে। সমাজ সংসার মানে নি, পরিণামের কথা ভাবে নি। কিন্তু সমাজ তো এত সহজে ছেড়ে দেবে না, সে তো ওদের আলাদা করেই দিলো। অবন্তীকে ওর বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলো ওর চেয়ে দশ বছরের বড় এক পাত্রের সঙ্গে, রোহণ মারা গেল দুর্ঘটনায়। কেউ কেউ বলে আত্মহত্যা। বিয়ের বছর পাঁচ পরে অবন্তী মারা গেল অসুখ করে।
হেমন্তের শেষ, শিরশিরে বাতাসের ভিতর দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে চলেছে রোহন আর অবন্তী। ওরা এসে থামলো এক হ্রদের পাড়ে। শান্ত একটা হ্রদ, কাচের মতন মতন স্বচ্ছ সেই হ্রদের জল। ওপারে হেমন্তের অরণ্য, রঙে রঙে রঙীন হয়ে আছে গাছের পাতারা। ঘন কালচে লাল থেকে হালকা লাল, কমলা থেকে হলুদ, বাদামী-কত যে রঙ!
হ্রদের আয়নার মতন স্থির জলের উপরে একটা নৌকো ভাসছে। একলা। অদ্ভুত কোনো ছবির মতন।
রোহণ বললো, " অবন্তী, এই অবন্তী, দেখতে পাচ্ছিস?"
অবন্তী ফিসফিস করে বলে, "হ্যাঁ। কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে একলা নৌকোটাকে। "
নৌকোটা ভাসতে ভাসতে পাড়ের কাছে এসেছে। অবন্তী আর রোহণ উঠে পড়লো নৌকায়, ওরা এখন ভেসে যাচ্ছে হ্রদের জলের উপর দিয়ে, ওরা হ্রদ পার হয়ে ওপারের পাহাড়ে যাবে, ওপারে সুবর্ণগিরি। ওরা সেখানে যাবে। অন্ধকারে মিলিয়ে যাবার আগে আমার দিকে চেয়ে হাসলো দু'জনে ।
আদিগন্ত তৃণরোমাঞ্চের উপরে রাত্রি বিছিয়ে পড়েছে
নক্ষত্র-ঝিকমিক চিকনকালো রেশমওড়নার মতন-
দিগন্ত থেকে দিগন্ত পর্যন্ত কোথাও কোনো শব্দ নেই,
বাতাসও অঘোর ঘুমে মগ্ন।
এমন গভীর নৈঃশব্দ্যের মধ্য থেকেই আসে তোমার স্বর-
শুনতে পাবে বলে জেগে থাকে সুদর্শন,
দু'চোখ ভরা ঘুমের তৃষ্ণা নিয়ে
জেগে থাকে আসমুদ্র আকাঙ্ক্ষায়।
ঝর্ণামুখের চিরলপাতার মতন কাঁপে হৃদয়
কল্পনায় উতরোল নক্ষত্রদের ঘূর্ণী,
উজ্জ্বল ডানার মতন দীপ্ত রাত্রিমেঘ জ্বলে -
সুবর্ণ গিরি থেকে নীলকন্ঠ উড়ে আসবে বলে
রক্তকরবীর মঞ্জরী নিয়ে জেগে আছে সুদক্ষিণা।
*******
মন্তব্য
আপনার লেখা অনেক ভালো লাগে কিনতু আজকাল একই ধরনের হচেছ
ধন্যবাদ শিরিন। এই সব লেখাগুলো আসলে সব একই ক্যাটেগোরির, কথা ও কবিতা। ট্যাগ লক্ষ্য করলেই দেখবেন।
তবে সত্যই অনেকদিন ইস্কুলবেলার কিস্তি আর উপকথা দেওয়া হয় না, সামনে দেবার ইচ্ছে আছে।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
আপনার কমেন্টে একটা বিরাট বাক্স এলো, খুললো না। বুঝতে পারলাম না কী দিলেন।
যাই হোক, থ্যাঙ্কু ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অনন্য!
আসলে তুলিদি আপনার এই চিত্রকল্পগুলি একটা রূপকথার মতো হয় কখনো কখনো। এত ভালো লাগে।
ডাকঘর | ছবিঘর
অনেক নেন তাপস।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আহা, গগ মহাশয়ের 'স্টারি নাইট'qu-এর কথা মনে পড়ে গেল। চমৎকার।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
রোমেল, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চমৎকার
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন