জাপানের এই উপকথাটা খুব আশ্চর্যরকমের সুন্দর। অনেকে বলে থাকেন আধুনিক কল্পবিজ্ঞানের গল্পের আদিরূপ এই উপকথাতেই প্রথম পাওয়া যায়। অনেকে আরো বলেন, উপন্যাস ইত্যাদির বীজও লুকানো ছিলো এই উপকথায়। এই উপকথাটির জন্য সচল ষষ্ঠ পান্ডবের কাছে ঋণী এই পুনর্কথক।
এক দেশে এক গরীব কাঠুরিয়া থাকতো। গ্রামপ্রান্তের ছোটো এক কুটিরে কাঠুরিয়া আর তার স্ত্রী বাস করতো। সকালবেলা দুটি খেয়ে নিয়ে কাঠুরিয়া নিজের কুড়ুলটি আর ঝোলাটি নিয়ে বেরিয়ে যেতো, সারাদিন বনে বনে কাঠ, বাঁশ কাটতো, দিন ফুরালে সব বোঝা বেঁধে পিঠে নিয়ে ঘরে ফিরতো। ঘরে তখন তার বৌ গরম খাবার বানিয়ে অপেক্ষা করতো, সে ফিরলে হাতমুখ ধোয়ার জল দিতো, গামছা এগিয়ে দিতো, তারপরে তারা দুইজনে খেতে বসতো। হাটের দিনে কাঠুরিয়া ঐসব সংগ্রহ করা কাঠ বাঁশ সব নিয়ে হাটে বিক্রি করে যা টাকা পেতো তাই দিয়ে খাদ্য বস্ত্র ইত্যাদি আবশ্যকীয় জিনিস কিনে আনতো।
এইভাবে তাদের দিন কাটছিলো, গরীব হলেও সেই নিয়ে তাদের তেমন দুঃখ ছিলো না, মোটা ভাত মোটা কাপড়েই তারা সন্তুষ্ট ছিলো। কেবল একটিমাত্র দুঃখ তাদের, বহু বছর তাদের বিবাহ হয়েছে, একত্রে সংসার করছে তারা বহু বছর, কিন্তু আজো সন্তানের মুখ দেখতে পেলো না। মাঝে মাঝে কাঠুরিয়ার বৌ স্বামীকে বলতো, "সারাটা দিন তুমি বাইরে থাকো কাজে, আমি টুক টুক করে এটা করি সেটা করি, রান্না করি, সেলাই করি, পাখা বানাই--কিন্তু মাঝে মাঝে দিন যেন আর কাটতে চায় না। একটা সন্তান থাকলে তাকে নিয়ে দিন আমার কেটে যেতো, কত যত্ন করে বড় করতাম তাকে।" বলতে বলতে সে কেঁদে ফেলতো আর কাঠুরে বলতো, "কেঁদো না বৌ, আমাদের ভাগ্যে থাকলে হবে, না হলে নাই। ঈশ্বর দয়া করলে হবে। এ তো জোর করে লাভ নেই, কপালের উপরে তো আমাদের হাত নাই।"
এমনি করে দিনের পর দিন যায়। একদিন কাঠুরিয়া সারাদিন বনে কাঠ কেটেছে, কাজ করতে করতে কখন যে সূর্য ডুবে সন্ধ্যে হয়ে গেছে, তার খেয়াল নেই। চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেছে, আকাশে তারা ফুটতে শুরু করেছে দেখে সে তাড়াতাড়ি কাঠ বাঁশ বোঝা বেঁধে বাড়ির দিকে চললো। চলতে চলতে বনের প্রায় প্রান্তে এসে গেছে সে, সামনে একটা খোলা মাঠ মাত্র, সেটুকু পেরোলেই তার গ্রাম। বনের মধ্যে হঠাৎ সে দেখলো ঝোপের আড়াল থেকে জ্যোৎস্নার মতন আলো বেরিয়ে আসছে। এখানে আলো? কেমন করে এলো? কৌতূহলী হয়ে কাঠুরিয়া এগিয়ে গেল।
গিয়ে দ্যাখে, একটা মস্ত মোটা বাঁশের মতন কী একটা জিনিস, কিন্তু চকচকে সেটা, যেন বা ধাতুর তৈরী। সেটার থেকে জ্যোৎস্নার মতন আলো আসছে, যেন চাঁদ নেমে পড়ছে বনে। মন্ত্রমুগ্ধের মতন আরো এগিয়ে গেলো কাঠুরিয়া, কাছে গিয়ে শোনে ভিতর থেকে ওয়াঁ ওয়াঁ শব্দ আসছে, যেন বা সদ্যোজাত শিশুর কান্না। এর ভিতরে মানুষ আছে নাকি?
বোঝা নামিয়ে রেখে নিজের কুঠারটি দিয়ে সে আঘাত করে সেই অদ্ভুত আলোময় বাঁশের গায়ে, অমনি একটা টুকরো ভেঙে যায়, সেই গর্ত দিয়ে উঁকি দিয়ে কাঠুরিয়া দ্যাখে ভিতরে বিস্ময়কর কান্ড! ভিতরে একটা নরম তুলো-তুলো বিছানা, সেই বিছানায় শুয়ে আছে একটা খুব ছোট্টো মেয়ে, এত ছোটো যে কাঠুরিয়ার হাতের তালুতে এঁটে যাবে, সেই মেয়েই ওয়াঁ ওয়াঁ করে কাঁদছে। বাচ্চাটির শিয়রের কাছে কতকগুলো সোনার মোহর।
কাঠুরিয়া খুব সাবধানে বাচ্চা মেয়েটিকে বার করে আনে, তারপরে তুলো তুলো বিছানাটাও। সোনার মোহরগুলোও। তুলো-তুলো বিছানা দিয়ে বাচ্চাটিকে সাবধানে জড়িয়ে বুকের মধ্যে নিয়ে কাঠুরিয়া দ্রুত নিজের বাড়ীতে ফিরে আসে। বাড়ীতে এসে নিজের বৌকে সব ঘটনা বুঝিয়ে বলে সে। বৌ তো মেয়েটিকে পেয়ে খুব খুশি, এতদিনে সে তার মনের সাধ পুরিয়ে এই বাচ্চাকে মানুষ করতে পারবে।
তারপরে দিন যায়, দিনে দিনে চন্দ্রকলার মতন বাড়তে থাকে তাদের কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে। কাঠুরিয়া আর তার বৌ মেয়ের নাম রাখে চন্দ্রকুমারী। কাঠুরিয়াদের আর দুঃখ নেই, দারিদ্রও নেই। সেই যে সোনার মোহরগুলো পেয়েছিলো, সেগুলো ভাঙিয়েই তাদের দারিদ্র ঘুচে গেছে।
দিন যায়, মাস যায়, বছর কাটে। চন্দ্রকুমারী এখন কিশোরী হয়ে উঠেছে। সে এত সুন্দরী হয়েছে যে তার দিকে চাইলে মানুষ চোখের পলক ফেলতে ভুলে যায়। উত্তরে দক্ষিণে পুবে পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়ে চন্দ্রকুমারীর কথা। কিন্তু চন্দ্রকুমারী কেমন যেন আত্মমগ্ন, সে নিজের মনে নিজের লেখাপড়া আর শিল্পকর্ম নিয়ে থাকে। গ্রামে তার কত বন্ধু বন্ধুনী, তাদের সঙ্গে ছোটো থেকে খেলধূলা করে সে বড় হয়েছে, কিন্তু তাও কেন জানি সকলের থেকে সে আলাদা। তার মনের নাগাল কেউ পায় না, বন্ধুরা না, বাবা না মা না। তার বাবা-মা মাঝে মাঝেই অবাক হয়ে তাকে তারাভরা রাতের আকাশের নিচে ঘুরে ঘুরে গান গাইতে দ্যাখে আর কেমন একটা আনন্দবিষাদ তাদের ঘিরে ধরে, ও যে পৃথিবীর মেয়ে নয়, কোথা থেকে একদিন এসেছিলো তাদের ঘরে, আবার বুঝি কবে চলে যাবে!
তারপরে চন্দ্রকুমারীর যখন বিবাহের বয়স হলো তখন চার দিক থেকে চার রাজপুত্র এসে তার পাণিপ্রার্থী হলো। কিন্তু চন্দ্রকুমারীর মন পৃথিবীর মানুষকে বিবাহ করতে সায় দেয় না। এদিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেও এই রাজকুমারেরা হয়তো ক্ষুব্ধ হবে, তাহলে উপায়? বুদ্ধিমতী মেয়ে সে, একটা খুব চমৎকার উপায় সে ঠিক করলো।
প্রথম রাজপুত্রকে সে বললো, "রাজপুত্র, আমি তোমাকে বিবাহ করতে পারি এক শর্তে।"
রাজপুত্র সাগ্রহে জানতে চায়, "কী শর্ত?"
চন্দ্রকুমারী বলে, " জম্বুদ্বীপে আছে মহাভিক্ষু দশবলের পবিত্র ভিক্ষাপাত্র। সেই ভিক্ষাপাত্র খুব পবিত্র, সর্বদা তা থেকে দিব্যজ্যোতি স্ফুরিত হয়। যদি ঐ ভিক্ষাপাত্র এনে দিতে পারো আমায়, তবেই তোমাকে আমি বিবাহ করবো।"
এই শুনে রাজপুত্র জম্বুদ্বীপের দিকে রওনা দেয়।
দ্বিতীয় রাজপুত্রকে সে বললো, "রাজপুত্র, আমি তোমাকে বিবাহ করতে পারি এক শর্তে।"
রাজপুত্র সাগ্রহে জানতে চায়, "কী শর্ত?"
চন্দ্রকুমারী বলে, " প্লক্ষদ্বীপে আছে এক আগুনমুখো ড্রাগন, সেই ড্রাগনের গলায় আছে এক রত্নহার, সেই রত্নহারের কেন্দ্রমণিটি, তার জোড়া নেই ভুবনে। যদি সেই মণিটি আমাকে এনে দিতে পারো, তবেই তোমায় আমি বিবাহ করবো।"
এই শুনে রাজপুত্র প্লক্ষদ্বীপের দিকে রওনা দিলো।
তৃতীয় রাজপুত্রকে সে বললো, "রাজপুত্র, আমি তোমাকে বিবাহ করতে পারি এক শর্তে।"
রাজপুত্র সাগ্রহে জানতে চায়, "কী শর্ত?"
চন্দ্রকুমারী বলে, " শাল্মলীদ্বীপে আছে এক আশ্চর্য বৃক্ষ, যার প্রতিটি শাখা রত্নময়। যদি সেই গাছের একটি শাখা আমায় এনে দিতে পারো, তবেই তোমায় আমি বিবাহ করবো।"
এই শুনে রাজপুত্র শাল্মলীদ্বীপের দিকে রওনা দিলো।
চতুর্থে রাজপুত্রকে সে বললো, "রাজপুত্র, আমি তোমাকে বিবাহ করতে পারি এক শর্তে।"
রাজপুত্র সাগ্রহে জানতে চায়, "কী শর্ত?"
চন্দ্রকুমারী বলে, " ভদ্রাশ্ববর্ষে আছে এক অদ্ভুত অগ্নি-মুষিক। সেই অগ্নিমূষিকের আছে এক আলো-ঝলমল দিব্যবস্ত্র। সেটা আমায় এনে দিতে পারলে তবেই আমি তোমায় বিবাহ করবো।"
এই শুনে রাজপুত্র ভদ্রাশ্ববর্ষের দিকে রওনা দিলো।
প্রথম রাজপুত্র জম্বুদ্বীপের দিকে রওনা দিয়েছিলো বটে কিন্তু যেতে যেতে মনে করলো মহাভিক্ষু দশবলের ভিক্ষাপাত্র পাওয়া কি সোজা কথা? তারচেয়ে এখানকার কোনো ভিক্ষু উপাশ্রয় থেকে দামী একটা ভিক্ষাপাত্র কিনে নিয়ে যাই। তো সে তাই করলো, একটি দামী ভিক্ষাপাত্র এনে চন্দ্রকুমারীকে দিল। কিন্তু সেটা যে জাল, তা বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় নি চন্দ্রকুমারীর, ভিক্ষাপাত্র থেকে কোনো দিব্যজ্যোতি বেরোচ্ছিলো না।
দ্বিতীয় রাজপুত্র রওনা হয়েছিলো প্লক্ষদ্বীপের দিকে কিন্তু যেতে যেতে মনে করলো ওরে বাবা, ড্রাগনের গলার হারের মণি, সে কি সোজা কথা? আর প্লক্ষদ্বীপ এমনিতেও অনেক দূরে, সাগর পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। সে এক নাবিককে অনেক টাকা দিয়ে প্লক্ষদ্বীপে যেতে রাজী করলো, কথা হলো সেখান থেকে নাবিক তাকে ড্রাগনের গলার হারের কেন্দ্রমণিটা এনে দেবে। নাবিক টাকাকড়ি সব নিয়ে নিজের লোকজন নিয়ে সমুদ্রযাত্রায় বেরিয়ে পড়লো প্লক্ষদ্বীপের দিকে। তারা তো আর আসে না আর আসে না, ঝড়ে পড়ে ডুবে গেলো নাকি? কিংবা ড্রাগন ওদের সবাইকে খেয়ে ফেললো? এইসব ভেবে দ্বিতীয় রাজপুত্র তাদের আশা ছেড়ে দিয়ে নিজের রত্মভান্ডার থেকে খুব দামী একটা মণি নিয়ে রওন হলো চন্দ্রকুমারীর কাছে। সেটা যে জাল, তা ধরে ফেলতে চন্দ্রকুমারীর সামান্য সময় লাগলো। ধরা পড়ে মুখ চুন করে ফিরে গেলো রাজপুত্র।
তৃতীয়জনও জাল জিনিস এনে দেখিয়েছিলো ও ধরা পড়ে গেছিলো। চতুর্থজন ফিরে আসে নি আর, হয়তো বা কাজটি না করতে পারার লজ্জায়।
এর কিছুকাল পরে দেশের মহারাজ স্বয়ং মৃগয়ায় এলেন চন্দ্রকুমারীদের গ্রামের কাছে। সেই সময়ে মহারাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো এই বিশ্ববিমোহিনী সুন্দরী চন্দ্রকুমারীর। মহারাজ তো তাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে বন্ধুত্ব করলেন। তারপরে যখন তাদের বন্ধুত্ব খুবই দৃঢ় হয়েছে, তখন মহারাজ চন্দ্রকুমারীকে বিবাহ করতে চাইলেন।
তখন ছিলো সন্ধ্যেবেলা। মহারাজ আর চন্দ্রকুমারী প্রান্তরে বেড়াচ্ছিলো পঞ্চমীর চাঁদের আলোয়। নানা কথা বলছিলো, হাসছিলো তারা দুইজনে। যেন তারা একজন দেশের মহারাজ আর একজন গ্রামের এক সামান্য মেয়ে নয়, যেন তারা দুই সমপর্যায়ের বন্ধু। তারপরেই একসময় এলো মহারাজের বিবাহপ্রস্তাব।
শুনে চন্দ্রকুমারী হঠাৎ বিষন্ন হয়ে গেল, বললো, " মহারাজ, পৃথিবীর কোনো মানুষকেই যে বিবাহ করা আমার পক্ষে সম্ভব না! আমি পৃথিবীর কেউ নই। ঐ যে চাঁদ, ঐখানে আমার আসল ঘর। শীঘ্রই আমার নিজের লোকেরা আমাকে ফিরিয়ে নিতে আসবে। সব ছেড়ে আমার চলে যেতে হবে, হয়তো আর কোনোদিন এখানের কারুর সঙ্গে দেখা হবে না। " জ্যোৎস্নায় মহারাজ দেখলেন চন্দ্রকুমারীর দুই চোখে টলটল করছে অশ্রু।
রাজা দুই হাত দিয়ে চন্দ্রকুমারীর দুইহাত জড়িয়ে ধরে বললেন, "কে তোমাকে নিয়ে যাবে? কেউ নিতে পারবে না। আমি আমার সৈন্যবাহিনী মোতায়েন করবো তোমাদের বাড়ির চারপাশে। দেখি কে তোমাকে কীভাবে নিয়ে যায়।" শুনে চন্দ্রকুমারী কেবল ম্লান হাসলো।
মহারাজ সত্যিই বিরাট সেনাবাহিনী এনে মোতায়েন করলেন কাঠুরিয়ার বাড়ির চারপাশে। আর ভয় নেই, কেউ চন্দ্রকুমারীকে কেড়ে নিতে পারবে না।
পূর্ণিমার রাতে আশ্চর্য দিব্যবিমানে চড়ে চন্দ্রকুমারীর দেশের লোকেরা এসে নামলো কাঠুরিয়ার বাড়ির সামনে। পাহারাদার সৈন্যরা সকলে আলোর ঝলকানিতে সাময়িকভাবে অন্ধ হয়ে গেল, অবশ হয়ে গেল। কোনোরকম লড়াই তো দূরের কথা, কোনো বাধা দেবারও সামর্থ্য তাদের রইলো না, তাদের নড়াচড়ার ক্ষমতাই সাময়িকভাবে হরণ করে নেওয়া হয়েছিলো।
চন্দ্রকুমারীর আপন লোকেরা তার ঘরে গেলো, সেখানে তাদের অপেক্ষাতেই ছিলো তাদের মেয়ে। কিন্তু মেয়ের চোখে তখন অশ্রু, পৃথিবীর এই মানুষগুলো তার বড় আপন, তার এই পালক পিতামাতা যারা নিজের সন্তানের মতন তাকে পালন করে শৈশব থেকে এত বড়টি করেছেন, এই গ্রামভর্তি তার বন্ধুরা যাদের সাথে খেলেধূলে সে বড় হয়েছে, এই মহারাজ যিনি তাকে অকপট বন্ধুত্ব দিয়েছেন---এই সবাইকে ছেড়ে যেতে তার মন চায় না, তার বুকের মধ্যে অশ্রুসমুদ্র উথলে ওঠে। কিন্তু যেতে তো হবেই, উপায় তো নেই।
চন্দ্রকুমারী চিঠি লিখে সব জানিয়ে মহারাজের জন্য রাখে সেই চিঠি। চিঠির সাথে রাখে একটি উপহার। তারপরে সে তার বাবামায়ের কাছে বিদায় নিতে যায়। কাঁদতে কাঁদতে সে জানায় আজ সে চলে যাচ্ছে বটে, কিন্তু একদিন সে আবার ফিরে আসবে।
এদিকে সময় গড়িয়ে চলেছিলো, চাঁদের দেশের লোকেরা তাড়াতাড়ি এসে তাদের মেয়েকে একটি পালকের পোশাক পরিয়ে দিলো। যেই না সেটা পরানো অমনি চন্দ্রকুমারীর মন থেকে পার্থিব মায়া আর পিছুটান লুপ্ত হয়ে গেল। যারা তাকে নিতে এসেছিলো, তাদের সাথে চন্দ্রকুমারী গিয়ে দিব্যবিমানে চড়ে বসলো। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে দিব্যবিমান শূন্যে মিলিয়ে গেল।
কাঠুরিয়া আর তার স্ত্রী পালিতা কন্যার শোকে অভিভূত হয়ে পড়লো। সাঁঝের বেলা উঠান থেকে চাঁদের দিকে চেয়ে তারা কেবল চন্দ্রকুমারীর কথাই ভাবতো। বয়সও হয়েছিলো তাদের, একসময় তারা অসুখ হয়ে মারা গেল দুইজনেই।
প্রতি রাতে মহারাজ চন্দ্রকুমারীর চিঠিটি আর উপহারটি হাতে নিয়ে আকাশভরা তারার নিচে ঘুরে ঘুরে ভাবতেন সে কি আবার আসবে, কখনো আসবে? নাকি "এ পৃথিবী একবারই পায় তারে, পায় নাকো আর !"
*****
মন্তব্য
জাপানী উপকথাগুলোয় সবসময় একটা মায়া মায়া ভাব থাকে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ঠিক বলেছেন। কেমন একটা স্নিগ্ধ মায়া মেশানো উপকথাগুলোতে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বেশ!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দারুণ।
চন্দ্রকুমারী ম্যাডাম দেশে গিয়ে নিশ্চয়ই পৃথিবীর লোকের উপর লেখা রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সেখানে চার উজবুকের নারীর লোভে চিটিংবাজির উল্লেখ যেরকম থাকবে তার পাশাপাশি গরীব পালক পিতামাতা আর ধনী মহারাজার ভালোবাসার কথাও থাকবে নিশ্চয়ই। মোটের উপর রিপোর্ট মন্দ আসার কথা না। ভালৈছে।
..................................................................
#Banshibir.
আরে তার লোকেরাই কি আর রিপোর্ট টিপোর্ট আগেই বিস্তর না জেনে মেয়েকে এখানে পাঠিয়েছিলো? খুব ভালোরকম জেনেবুঝেই---
ঐ ছেলেগুলো মানে রাজপুত্রগুলোরও পুরো দোষ নেই, ওসব কাজগুলো মানুষের পক্ষে অসম্ভব জেনেই চন্দ্রকুমারী ঐ শর্তগুলো দিয়েছিলো।
তবে গরীব পালক পিতামাতা আর উদারহৃদয় মহারাজের কথা আশা করা যায় চন্দ্রকুমারীর খুবই মনে থাকবে, তবে কিনা ওকে তো ওর নিজের লোকেরা মায়া আর পিছুটান কাটিয়ে তুলে নিয়ে গেল! মানে ইমোশনাল ক্লিনজিং করে নিলো আরকি। আমার তো এই কাহিনীটা পড়ে বারে বারে স্টার ট্রেকের ওরিজিনাল সিরিজ মনে পড়ে আর সুপারম্যানের পৃথিবীতে আসার পার্টটাও মনে পড়ে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এরকম দাঁতভাঙ্গা দ্বীপের নাম জাপানী উপকথায় গেল ক্যামনে
দেশীয় পটভূমিতে গল্পটা এনে ফেলেছি, নামগুলো দেখছেন না কেমন দেশীয় হয়ে গেছে?
তবে মূল গল্পেও জম্বুদ্বীপের কথা আছে, সেখান থেকেই তো বুদ্ধের ভিক্ষাপাত্র আনতে বলেছিলো চন্দ্রকুমারী। মহাভিক্ষু দশবলই তো বুদ্ধ!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
মজাই লাগে উপকথাগুলো পড়তে... কালকেই পড়েছিলাম-
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
শেষে মানে কী দাঁড়াইলো, চান্দাকুমারী আর ফিরে আসে নাই? বেদের মেয়ে জোশনার মতো আসি আসি বলে ফাঁকি দিছে মহারাজারে?
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তাই তো।
মহারাজ সেই জন্যই তো গাইতো
"চাঁদের মেয়ে চাঁদবদনী কথা দিয়েছে- এ এ এ
আসি আসি করে চাঁদনি ফাঁকি দিয়েছে। "
আরো গাইতো
"চান্দের মাইয়া চন্দ্রমুখী পাগল করেছে- এ এ
টোনা করেছে রে আমায় যাদু করেছে। "
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আমার কাছে আপনার ঋণটা কোথায়? আমি তো কেবল এই গল্পটার জন্য অনুরোধ করেছিলাম মাত্র! গল্প জোগাড় করা, অনুবাদ করা, দেশজ পটভূমিতে ট্রানসফার করা সবই তো আপনি করেছেন। সেখানে আমার কোন ভূমিকাই নেই। বরং আমারই কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত আপনার কাছে। আমার সামান্য একটা অনুরোধকে গুরুত্ব দিয়ে এত কষ্ট করেছেন, সময় ব্যয় করেছেন। শেষে এতো চমৎকার একটা গল্প উপহার দিয়েছেন।
রাখালের পিঠাগাছ, ক্ষীরসাগর আর রূপবতী ঘুমকুমারীদের গল্প চলতে থাকুক, চলতেই থাকুক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আহা, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তো!
ধন্যবাদও লন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বেশ লাগলো।
facebook
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কিন্তু চান্দের দেশের লোকেরা যদি নিয়েই যাবে তো পৃথিবীতে পাঠাইতে গেল কেন এই মাইয়ারে? পৃথিবী কি হেগো রঙ্গমঞ্চ? আমাগো লগে মশকারী!?!
অটঃ ছোট কিন্তু চমৎকার স্বাদু একটা উপকথা উপহার দেয়ার জন্য অসংখ্য ।
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
কী কই কন? হ্যারা নাকি মাইয়ারে পাঠাইছিলো নিরাপদে মাইয়া যাতে কিসুদিন থাকে পৃথিবীতে, তাগো নাকি তখন অন্য গ্রহের লগে যুদ্ধ চলতাছিলো!!! মাইয়ারে সরাইয়া দিয়া তেনারা পরাণ ভইরা লড়ছেন! বড় বড় সভ্যতার বড় বড় ব্যাপার বুঝলেন, আমরা স্পেসে উঠতে চলতে তেমন শিখি নাই, তাই দুনিয়াতেই লড়ি। "পারদর্শী" হইলে হয়তো ইন্টার-স্টেলার মুরুব্বিগিরি কইরা বেড়ামু বড় বড় স্টারশিপ চালাইয়া। কী অবস্থা!
(মূল উপকথায় এর আভাসমাত্র আছে, তাও বিতর্ক আছে এই নিয়েও, কোথাও বলেছে ওকে নাকি পৃথিবীতে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিলো কয়েক বছরের জন্য, কোথাও আছে শাপভ্রষ্ট হয়ে জন্মাতে হয়েছিলো, মোট কথা খুবই বিতর্কিত ব্যাপার। তবে মূল গল্পের মধ্যে এটা ব্যাঘাত করে না, কারণ মূল গল্পে তো চন্দ্রকুমারীর মানবলীলা আর আশেপাশের মানুষগুলো যেমন পালক পিতামাতা, পাণিপ্রার্থী কুমারগণ, হৃদয়বান মহারাজ এরাই প্রধান )
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন