আমাদের একদম ছোটোবেলার স্কুলটা মানে যে স্কুলে কেজি ওয়ান থেকে ক্লাস ফোর অবধি পড়েছিলাম, সেটা ছিল বেশ বিচিত্র। তিনটি স্কুলের সমাহার বলা যায় সেটাকে। একটা মস্ত চৌকো উঠানের পুবের দিকে ছোটো একতলা একটা দালানে ছিলো কিন্ডারগার্টেন স্কুল, সেখানে কেজি ওয়ান আর কেজি টু এর ক্লাস হতো। উঠানের পশ্চিমের দিকে দোতলা দালান, সেদিকে প্রাইমারি স্কুল, ক্লাস থ্রী ফোর। আর উঠানের উত্তর দিকে ছিল সেই বিচিত্র সমাহার, একটা বিশাল দোতলা বিল্ডিং এর একতলায় কয়েকটা ঘরে ক্লাস ওয়ান আর টুএর ক্লাস হতো, আর দোতলায় ছিল মাধ্যমিক ক্লাস, ফাইভ সিক্স ইত্যাদি। দোতলায় ওঠার সিঁড়ি ছিলো আমাদের অধরা, বিল্ডিং এর উত্তরদিকে, সেদিকে আমাদের যাওয়া হতো না। ওয়ানের ক্লাসঘরের উত্তরদিকের জানালা খুললেই দেখা যেত একটা মাঠ, সেটা মাধ্যমিক স্কুলের মাঠ। এই প্রাথমিক আর মাধ্যমিক অংশের শিক্ষকশিক্ষিকাগোষ্ঠী আর পরিচালনা সমিতিও পৃথক ছিল। কিন্ডারগার্টেন অংশটা প্রাথমিকেরই অংশ ছিল যদিও কিন্ডারগার্টেন শিক্ষিকারা কেউ প্রাথমিক ক্লাসে পড়াতেন না, কিন্তু শিক্ষিকাদের বসার ঘরটি একই ছিল। মাধ্যমিক স্কুলটি কিন্তু একেবারেই আলাদা করা ছিল, ঐ অংশের শিক্ষক শিক্ষিকাদের বসার ব্যবস্থাও ছিলো ঐ উত্তরের অংশে যে দিকটায় আমরা যেতাম না কখনো। হয়তো গেলে কেউ আমাদের বারণ করতো না, কিন্তু অকারণে কেনই বা কেউ যাবে ওদিকে?
আমাদের পড়াশোনা সবই ছিলো এদিককার ঘরগুলোতে আর দুপুরের টিফিনের ছুটিতে খেলাধূলা সবই ছিলো এইদিকের মাঝের উঠানে। দক্ষিণের দিকে ছিল একজোড়া আমগাছ আর তারপরেই মস্ত গেট। পুব দক্ষিণের কোণার অংশে মস্ত স্লিপ আর লোহার দোলনা। ওখানেও খেলতাম আমরা একেবারে ছোটোবেলা, তবে ক্লাস ওয়ান থেকে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ি কাকজোড়া জেলেমাছ কুমীরডাঙা এইসব দলগত খেলায়। টিফিনের আধঘন্টার ছুটিতে সেরকম আর তেমন খেলার সুযোগই বা কোথায়? সামান্য একটু ছোটাছুটি খেলতে না খেলতেই ঘন্টা পড়ে যায় টিফিন শেষের। ব্যস, দৌড়তে দৌড়তে হাঁপাতে হাঁপাতে যে যার ক্লাসে।
ক্লাস ওয়ানের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ একটা দারুণ ব্যাপার হলো। শোনা গেল স্কুল ম্যাগাজিন বেরোবে, সেটা হবে কিন্ডারগার্টেন আর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সম্মিলিত প্রয়াস। ছাত্রছাত্রী আর শিক্ষকশিক্ষিকা সবাই নাকি লিখবেন। একসময়ে বেরোলো সেই ম্যাগাজিন, নাম "প্রত্যূষ।" আহা, সেই নামের ঝঙ্কার যে কানে বেজেছিলো, আর ফুরায় নি। পরের বছর থেকে "প্রত্যূষ" হয়ে গেল মাধ্যমিকের ম্যাগাজিন আর আমাদের নতুন স্কুল ম্যাগাজিন বেরোলো "অঙ্কুর" নামে। কারণ শিক্ষিকারা মনে করেছিলেন প্রাথমিকের ছেলেমেয়েরা তত বেশী লেখা টেখা দিতে পারে নি ওতে, আসলে খুবই অল্পই দিতে পেরেছিলো, ঠিকঠাক প্রতিনিধিত্ব হয় নি। তাই পরের বছর থেকে বেরোলো আমাদের "অঙ্কুর"। এতে শুধু লেখা না, তার সঙ্গে আঁকা ছবি, আল্পনা এসবও থাকতো।
কিন্তু সেই প্রথম "প্রত্যূষ" যে কী মায়া অঞ্জন টেনে দিয়েছিল আমার চোখে, কেজানে! গল্পগুলো, ক্লাস সেভেন এইট নাইনের ছেলেমেয়েদের লেখা ছোটো ছোটো সব গল্প, কী অদ্ভুত শিহরণ যে তুলেছিল আমার নতুন অবাক চোখের সামনে, সে আজও ভুলতে পারি না। খুব অদ্ভুত লাগে ভাবলে, আজো কোনো কোনো গল্পের কিছু কিছু অংশ মনে আছে। মনে আছে একটা গল্পে ছিলো এক কিশোরী মেয়ের পথ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হসপিটালে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে শুয়ে তার দিদিমণির মুখে খবর শোনা যে সে রেকর্ড নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে শীর্ষস্থান পেয়েছে। আরেকটা গল্প ছিলো খনি অঞ্চলের একটি দুঃখী গল্প, এক খনিশ্রমিকের ফুসফুসের অসুখ, যাতে সে মারা যাবে কয়েকমাস পরেই, বাড়ীর লোকেদের কিছু জানায় নি, শুধু ব্যবস্থা করেছে যাতে তার সমস্ত সঞ্চয় ও পাওনা টাকা তারা পায়। লেখকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে সে একটি চিঠি লেখাতে এসেছে তখন, সে ঐ চিঠিতেই নিজের লোকেদের সব জানাবে। এখন ফিরে ভাবলে অবাক লাগে, বেশ পরিণত ধরণের ছিলো ঐ কিশোর কিশোরীদের লেখা গল্পগুলো, কেজানে হয়তো তারা কোনোখান থেকে "অনুপ্রাণিত" হয়েছিলো ওগুলো লেখার সময় কিন্তু আমার কাছে তখন তা নিখাঁদ একেকটা বিস্ময়। এমনও হয়? মানুষে নিজেরাই লিখে ফেলতে পারে এমন সব গল্প?
রবীন্দ্রনাথ নজরুল বঙ্কিমচন্দ্র শরৎচন্দ্র ---এইসব যে বড় বড় লেখক কবিদের কথা তখন শুনেছিলাম তারা তো ছবির মানুষ, তাঁদের মস্ত মস্ত ছবি ঝোলে দেওয়ালে, তাঁদের জন্মতিথি পালিত হয় প্যান্ডেল বেঁধে অনুষ্ঠান করে, তখন তাঁদের ছবিতে ফুলের মালা ঝোলে। ওঁদের খুব দূরের, খুব অন্যরকম, অসাধারণ ও অতি-মানুষ মনে হতো, সেই তাঁরা গল্প কবিতা লিখতে পারেন, সেটা আলাদা কথা। কিন্তু এই চোখের সামনে চলে ফিরে বেড়ানো উঁচু ক্লাসের দিদি দাদারা, এরা তো আমার মতন মানুষই, সেই তারা এরকম সব গল্প লিখতে পারে?
লেখালিখি সম্পর্কে ক্লাস ওয়ানের সেই শিরশিরে অনুভূতিটা রয়ে গেল অনেক অনেক বছর, লেখালিখি যেন একটা ম্যাজিক জগৎ, একটা নিষিদ্ধ ফলের বাগান, ঐখানে আনন্দের পসরা আছে কিন্তু তার সঙ্গে আছে বাধা, আছে নানা বিপদ, কিন্তু একদিন হয়তো ওখানে পৌঁছতে পারবো। তখনই এইসব ভাবনা জাগে নি বটে, কিন্তু ওর সূচনা হয়েছিল সেই সামান্য স্কুল ম্যাগাজিনটি পড়েই, সেই প্রথম "প্রত্যূষ"।
পরের বছর থেকে আর প্রত্যূষ পেলাম না, হয়তো ওটা বেরোতো মাধ্যমিক স্কুলের অংশে, বা হয়তো বেরোতো না, তার কোনো খবর আমাদের দিকে আসতো না। আমাদের দিক থেকে বেরোলো "অঙ্কুর", আমার কোনো লেখা ওখানে কোনো বছর বেরোয় নি। লেখা দিতাম, কিন্তু নির্বাচিত হতো না। হয়তো লেখাগুলো ভালো হতো না বা হয়তো মাপসই হতো না, কেজানে! কিংবা হয়তো অন্য কোনো কারণ। শুধু প্রথমবারের "অঙ্কুর" র আমার একটা ন্যালাখ্যাপা টাইপের আঁকা ছবি প্রকাশিত হয়েছিলো। প্রথাগত আঁকা শিখতাম না তখন, তাই আঁকাটা ছিলো বাচ্চাদের কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাংএর মতন আনাড়ী আঁকা, একটা কুটির, তার পাশে বাঁশঝাড় আর একটা ঝুপসি গাছ, পাশ দিয়ে একটা রাস্তা চলে গেছে, কাগজের উপরের থেকে নিচে মোটা রাস্তা নেমে গেছে, যেন মোটা একটা দড়ি ঝুলছে। পারস্পেক্টিভ বোঝানোর কৌশল জানা ছিলো না, আরে ঐ বাচ্চা বয়সে জানবো বা কী করে দ্বিমাত্রিক ছবির মধ্যে কেমন করে কাছে আর দূরে বোঝাতে হয়? তৃতীয় মাত্রা কি সোজা কথা নাকি? পরে বড় হয়ে ঐ ছবি দেখে খুব হাসতাম সবার সঙ্গে, ছবিতে সব কিছু কেমন ল্যাপ্টানো দুই মাত্রার।
পরে, অনেক পরে, প্রথাগত আঁকা শিখতে শুরু করে প্রথম কায়দা শিখেছিলাম ছবির মধ্যে দূরত্ব বোঝানোর, আকার আকৃতির বড় ছোটো আর গোল গোল আঁকাবাঁকা রেখার কৌশলে দেখানো এই বাড়ীটা কাছে আর ঐ দূরে অনুভূমিক লাইনটানা দিগন্ত, আকাবাঁকা ঢেউ খেলানো রেখায় দিগন্তের বৃক্ষরাজি একসাথে মিলেমিশে একাকার, তার মধ্য থেকে খাড়া খাড়া ছোটো ছোটো সরু সরু সব রেখা, মাথায় গুণচিহ্নের মতন, সেগুলো হলো দূরের দিগন্তের লম্বা গাছেরা, "তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে/ সব গাছ ছাড়িয়ে"। তাদের সামনে পুরোটা জুড়ে নদী, সেই জলে সূর্যাস্তের আভা, সূর্য ডুবে যাচ্ছে দিগন্তে। একেবারে কাছে নদীর এপারে একটা কুটির, পাশে গাছ। তো, এসব অনেক পরের কথা। প্রাইমারির অনেকদিন পরের।
"প্রত্যূষ" ছিল বড় সড় এ-ফোর সাইজের মতন বই, কিন্তু "অঙ্কুর" ছোটো, ডাইরির মতন। প্রথম ছাপা অঙ্কুর যেবার হাতে পেলাম যেটায় ঐ ছবিটা ছিলো, সেই দিনটা ও মনে আছে, হঠাৎ সেদিন দুটো ক্লাসের পরেই ছুটি হয়ে গেল, কারণ হঠাৎ সংবাদ এসেছে রাজধানী শহরে প্রধানমন্ত্রী নিজের দেহরক্ষীদের হাতে খুন হয়েছেন। অদ্ভুত ব্যাপার, নিজের দেহরক্ষীরাই কি কখনো----ওসব বোঝার বয়স তখনো হয় নি আমাদের, শুধু মনে পড়ে আমি আর ভাই ফিরে আসছি বাড়ীতে, ভাই সেই বছর কেজি ওয়ানে ভর্তি হয়েছিলো। হঠাৎ ছুটি হয়ে গেল বলে মা বা অন্য কেউ আমাদের আনতে যায় নি, তখন ফোন টোন ও ছিলো না কারুর বাড়ীতে, দ্রুত খবর টবর দেবার ও নেবার একমাত্র উপায় ছিলো লোক পাঠানো। অনেক ছেলেমেয়ে ইস্কুলেই অপেক্ষা করে রইলো তাই। যাদের বাড়ী স্কুলের খুব কাছে, তারা ফিরে গেল বাড়ীতে।
আমি বাড়ী ফেরার রাস্তা চিনতাম, তাই ভাইকে নিয়ে ফিরে এলাম বাড়ীতে। সেদিন দুইজনের টিনের সুটকেসে দুটো "অঙ্কুর",আর একটা নতুন গন্ধ, নতুন বইয়ের একটা অদ্ভুত গন্ধ থাকে না? বাড়ী ফিরে আসার পরে মা আর ঠাকুমা তো অবাক, "সে কী রে, তোরা? স্কুল ছুটি হয়ে গেল? কী করে এলি?" আমার বেশ অবাক লাগলো, মা আমাদের স্কুলে দিয়ে আসে নিয়ে আসে বটে, কিন্তু এতদিন যাই আসি, রাস্তা চিনতে তো শিখে গেছি, নাকি?
ক্লাস ফোর অবধি আমরা টিনের সুটকেসে বইপত্র নিয়ে স্কুলে যেতাম, সবাই। পরে নতুন স্কুলে ক্লাস ফাইভে ভর্তি হয়ে সব বদলে গেছিল, সেখানে ব্যাগে করে বই নিতে হতো। আর যোগ হয়েছিলো টিফিন বাক্স। বাড়ী থেকে টিফিন নিয়ে যেতে হতো তখন। বাড়ী থেকে টিফিন নিয়ে যাবার ব্যাপারটাও বেশ নতুন ছিল আমার কাছে।
কিন্ডারগার্টেনে আর প্রাইমারিতে আমাদের স্কুল থেকে দুপুরে টিফিন দিতো। এসব মিড-ডে মীল স্কীম চালু হবার অনেক আগের কথা, এটা স্কুল নিজেই ব্যবস্থা করতো। অভিভাবকদের থেকে মাইনের সঙ্গে এই দুপুরের খাবার খরচটাও নিয়ে নিতো স্কুল কর্তৃপক্ষ। কী কারণে এই ব্যবস্থা, কেজানে! হয়তো ওঁদের যুক্তি ছিলো একসাথে লেখাপড়া আর খেলাধূলা করে বড় হচ্ছে যে কুচোকাঁচারা, তারা একসঙ্গে একরকম খাবার খেলে নিজেদের মধ্যে একাত্মতা তৈরী হবে। ছোটো ছোটো গোল গোল কানা উঁচু বাটিতে দিতো টিফিন, কোনোদিন মুড়ি আর চীনাবাদামভাজা, কোনোদিন মাখনচিনি মাখানো দুই স্লাইস পাউরুটী, কোনোদিন খই আর পাটালিগুড়, কোনোদিন বা আর কিছু। খইগুলোতে কোণায় কোণায় ধানের শক্ত খোসা লেগে থাকতো, আর হেসে হেসে আমাদের নিধিরদা( স্কুলের কর্মচারী ) বলতেন," ধান থেকেই তো খই হয়, জানো না তোমরা? " কী আশ্চর্য, ধান থেকে খই হয় ভালো কথা, ধানের খোসাগুলো ছাড়িয়ে বেছে দেবে তো? কিন্তু ঠেলার নাম বাবাজী, আমরা নিজেরাই খই থেকে ধান বাছতে শিখে ফেলি ঐ ধান্যখচিত খই টিফিন পেয়ে পেয়ে। দুপুরে স্কুল থেকে টিফিন দেওয়া আরো একটা উপকার করেছিল, অনেক ছেলেমেয়ে বাড়ীতে নিজের হাতে খেতে পারতো না, মা-দিদিমারা গরস পাকিয়ে পাকিয়ে মুখে দিয়ে দিয়ে খাইয়ে দিতেন, কিন্তু ইস্কুলের টিফিনের ঠেলায় পড়ে সবাই নিজের হাতে খাওয়া শিখে ফেললো।
( চলমান )
মন্তব্য
ইস্কুলবেলার সময়গুলো মনে হলে এখনো অতীতে হারিয়ে যাই, টাইম মেশিনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। ভালো লাগলো তুলিদি।
''দিবাকর''
আমিও লেখার সময় অতীতের স্মৃতির মধ্যে ঘুরে বেড়াই। বাস্তবে ফিরে যাওয়া যায় না। হয়তো যায় না বলেই জীবন এত মধুর, মধুর সেই শৈশব কৈশোর, "সে যে একবারই এসেছিলো নীরবে, আমারই এ দুয়ার প্রান্তে।"
ভালো থাকবেন, পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
স্কুল ম্যাগাজিনের ব্যাপারটা খুব মিলে গেল। আসলেও স্কুলে যেদিন ম্যাগাজিন হাতে পেতাম অন্যরকম হত দিনগুলি। আমার লেখাও কখনো ছাপা হয়নি।
ছবির একটা বোর্ড ছিল স্কুলে, সেই বোর্ডে মাঝে সাঝে ঠাই পেত আমার তেমন ল্যাপ্টানো দুইমাত্রার ছবি।
লেখা খুব ভাল লাগল আপু।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আমাদের মাধ্যমিক স্কুলে আবার কোনো ম্যাগাজিনই বেরোতো না, "এইসব উটকো গপ্পো কবিতা নিয়ে মাতামাতি করতে হবে না, নিজেদের পড়াশোনা করো" এই ছিলো দিদিমণিদের উপদেশ, এমনকি লাইব্রেরী থেকে অবধি গল্পের বই দিতো না, লাইব্রেরীটা বন্ধই থাকতো, মাঝে মাঝে আশ্চর্য লাগে একটা লাইব্রেরীকে কত কাজে লাগানো যায় ছাত্রদের জন্য, আর আমাদের হাইস্কুল লাইব্রেরীতে ধূলা জমতো শুধু। নাকি ওসব আউট বই পড়লে মেয়েরা গোল্লায় যাবে, রেজাল্ট ভালো নাকি হবে না বোর্ডের পরীক্ষায়!!! ক্লাসের বাইরে ডিবেট, সেমিনার, একজিবিশন, নানা সায়েন্স প্রোজেক্ট--কোনোকিছুতেই কোনো উৎসাহ দেওয়া তো দূরের কথা, কোনো ব্যবস্থা তো করাই হতো না, উল্টে নিরুৎসাহ করা হতো। কারণ নাকি বিরাট রিস্ক, বোর্ডের পরীক্ষায় বাজে নম্বর হবে। অথচ ভালো ভালো স্কুলে শুনেছি এই সবকিছুর ব্যবস্থা থাকে। এই করে করেই ছেলেমেয়েরা অনেক কিছু শিখতে পারে।
শেষে মাধ্যমিক টাধ্যমিক সব পেরিয়ে যাবার পরে ইলেভেন ক্লাসে একবার সবেধন নীলমণি একখানি ম্যাগাজিন বেরিয়েছিল। তখন তো আমাদের যাই যাই অবস্থা, তখন আর বেরিয়েই বা লাভ হলো কী?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আউট বই আমাদের কখোনই পড়তে দিত না স্কুলের লাইব্রেরি থেকে, বইগুলি ছিল খাচার ভিতর যেখানে শুধু লাইব্রেরিয়ানের প্রবেশাধিকার ছিল,আজীব ইস্কুল। খালি রেফারেন্স বই দিত বিভিন্ন সাব্জেক্টের জন্য, যেগুলি এস এস সি পর্যন্ত কখনই নেইনি।
আর বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের সদস্য হওয়াতে সপ্তাহে একটা গল্পের বই পেতাম স্কুলে এসে দিয়ে যেত ক্লাস এইট পর্যন্ত। যদিও সবচেয়ে ভাল ভাল বইগুলি বোধ হয় নাইন টেন এই বেশি পড়েছি।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আমাদের মাধ্যমিক স্কুলে তো লাইব্রেরী ছিল বটে কিন্তু কোনো লাইব্রেরিয়ান ছিলেন না। বইপত্র সব বন্ধ আলমারির ভিতরে, মেঝেতে পুরু ধূলার চাদর। এইভাবে বছরের পর বছর, অত ভালো একটা রিসোর্স, পুরোপুরি সাজিয়ে রাখা অলংকারের মতন অকেজো।
শেষে, একজন দিদিমণি নিজেই লাইব্রেরিয়ানের কাজ করবেন বলে সম্মত হলেন, কিন্তু ততদিনে আমাদের পাশ করে বেরিয়ে যাবার সময় হয়ে গেছে।
ভালো ভালো কত বই রয়ে গেল অধরা।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চুরাশিতে আপনি "অঙ্কুর" গ্রুপ? হেঁ হেঁ আমি তার অনেক আগে থেকেই "প্রত্যূষ" গ্রুপ।
সাতাত্তর-আটাত্তর সালে সহপাঠী প্রদীপের বাবা কোলকাতা বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় প্রদীপের জন্য স্টীল/টিনের স্যুটকেস নিয়ে আনলেন। ঐ প্রথম ঐ বস্তু দেখতে পাই। প্রদীপের তখন সে কি ডাঁট। তার কিছুদিনের মধ্যে গোটা ক্লাস ভরে গেল টিনের স্যুটকেসে। এরমধ্যে আমাদের সেকশনের সবুজ কী করে যেন বই-খাতা সেলাই করার ভ্রমর দিয়ে সেই স্যুটকেসের উপরে নিজের নাম লেখার কায়দা আবিষ্কার করে ফেললো। টিফিন টাইমে সবুজ এক একজনের স্যুটকেসের ওপর নাম লিখে দেয়, আমরা ভীড় করে তার কাণ্ড দেখি। আমার টিনের স্যুটকেস ছিল না। মামা চট্টগ্রাম থেকে কলাপাতা সবুজ রঙের একটা রেক্সিনের স্যুটকেস এনে দিয়েছিলেন। দু'দিনেই তার কব্জা ভেঙে গিয়েছিল। সেই কব্জাভাঙা স্যুটকেসই অনেক দিন ব্যবহার করেছি। ক্লাস ফোর থেকে ব্যাগ ব্যবহার করা শুরু করি। এখনো আমার কাঁধে ব্যাগ, মাঝখানে পাঁচ বছর পিঠে ছিল, বাইরে বের হলেই কাঁধে ব্যাগ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ব্যাকপ্যাক।
সুটকেসের উপরে ছেনি বসিয়ে হাতুড়ী ঠুক ঠুক করে নাম লেখার কৌশল আমরা জানতাম, তবে আমাদের একজনের অভিভাবক ওরকম করে দিতেন, আমাদের নিজেদের দিতেন না করতে। যদি নিজের হাতের উপর হাতুড়ী মেরে থেঁতলে ফেলি?
বুঝলেন, পরে এডিট করে ঐ মন্ত্রীজীর অংশটা কায়দা করে পালটে ফেলতে হবে, নইলে লোকে বুঝে ফেলছে টাইমটা।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
যা বোঝার তা তো বোঝা হয়ে'ই গিয়েছে
আরে সেতো এখানে বুঝেছেন, ফিনিশিং টাচের পরে তো আর বুঝবেন না!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
প্রাইমারি স্কুলে সাথে করে নিয়ে যাওয়া টিনের সেই সুটকেসের কথা মনে পড়লো। আমাদের সময় সিলভারের এক ধরণের সুটকেস পাওয়া যেত। এটা অনেকটা সৌখিন ছিল। এটা কেনা হয়েছিল পরে ক্লাস থ্রি তে। তার আগে টিনের টাই নিয়ে যেতাম। এরপর হাইস্কুলে ব্যাগ চড়ে বসলো কাধে , হাতের কবজিদের বিশ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে।
হাইস্কুলে আমাদের টিফিন দেয়া হত। টিফিন পিরিয়ডের একটা আকর্ষণ ছিল আজ কি দেয়া হবে টিফিনে। শিঙ্গাড়া নাকি সমুচা নাকি কলা অথবা নাকি কেক। মোটামুটি এগুলোর ভেতরেই মেন্যু ঘোরাঘুরি করতো। টিফিনের পরেই ছুটে যেতাম পাশেই থাকা পৌর পার্কে। আধ ঘণ্টা এই ব্রেকে খেলে ফেলতাম ফুটবল, ক্রিকেট আর সেই সাথে আড্ডাবাজিত আছেই।
অনেক দিন পর মনে পড়লো সেইসব দিনের কথা। একেবারেই মুক্ত আর স্বাধীন জীবন। কোন চিন্তা নেই। শুধু লেখাপড়া খেলাধুলা আর টিফিন পালানোর নিত্য নতুন ফন্দি ফিকির।
লেখায় অজস্র তারকা। ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ অনেক।
আপনাদের হাইস্কুলেও টিফিন দিতো? তার উপরে আবার শিঙারা????
ইশ, আমাদের হাইস্কুলে টিফিন দিতো না, খালি বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে খাওয়াতো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ইস্কুল ম্যাগাজিনে আমার লেখা দেওয়া নিয়ে সে এক বিশাল কেচ্ছা হয়েছিল। পরে বলুম নে।
প্রথম প্যারায় ইস্কুলের জিওমেট্রি বোঝানোর লম্বা বর্ণনাটা বোরিং হয়ে গেল।
আরে বললে হবে? ঐ জিওমেট্রি ছিলো আমার কাছে একটি ভুলাভুলাইয়া বিশেষ, বিশেষ করে ঐ বড় স্কুলের দিকটা তো একটা রীতিমতন ল্যাবিরিন্থ মনে হতো, কেমন যেন একটা রহস্য-রহস্য ব্যাপারের মতন।
স্কুল ম্যাগাজিনে লেখা দেওয়া নিয়ে আমারো বহু কেলেঙ্কারি আছে, সেসব হয়তো পরের কোনো পর্বে আসবে।
তুমি তো চিরকাল ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিলে, তোমার লেখা নিয়ে তো টানাটানি পড়ে যাবার কথা! ম্যাগাজিনে লেখা দেওয়া নিয়ে কী হয়েছিলো?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দুঃখ হচ্ছে কেন আমি কোন সুটকেস নিয়ে স্কুলে যেতে পারিনি।
স্কুল দিনগুলোর স্মৃতি দারুন ভাবে মনে করিয়ে দিলেন আপু।
লেখা খুব ভালো লাগল।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
সুটকেস একটি ঝামেলার ব্যাপার, ছিটকানির জায়গাটা ঢিলা হলে হঢ়াশ করে খুলে বইখাতা সব ধূলায়। পুরানো হয়ে যাওয়া সুটকেস হাতে ঝুলিয়ে আনার সময় সাবধানে ছিটকানির জায়গাটা চেপে ধরে রাখতে হতো, নাহলে বিপদ।
লেখাটা পড়েছেন বলে ধন্যবাদ, এই সিরিজে লম্বা গ্যাপ পড়ে গেছিলো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ওমা, আপনি পুরানো সুটকেস কব্জিতে ঝুলিয়ে তর্জনী দিয়ে চেপে রাখার কৌশল শিখেন নি বুঝি তখনো? আমরা তো রাস্তার ব্রিফকেসধারী লোকজনকে দেখে সেটা শিখে নিয়েছিলাম। অবশ্য সেই পিচ্চি আঙ্গুলে সেটা ধরা একটা বিষম কায়দার ব্যাপার ছিলো। যারা পারতো তাদেরকে তো বেশ সমীহের চোখে দেখতো ছোটরা। একটা বড় বড় ভাব ছিলো যে ওর মদ্ধে।
সুটকেস বদলে ব্যাগ এসে বেঁচেছিলাম ক্লাস ফাইভ উঠে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আমাদের বেলায় টিনের সুটকেস পাইনি, তবে মনে আছে আমার বড় বোনের টিনের সুটকেসের ছিটকিনি খুলে পরে গিয়েছিল রাস্তা পার হবার সময়, সে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা।
আর আমাদের বেলায় ও আমরা অনেক মজার মজার টিফিন পেতাম স্কুল থেকে, সেই পুরি, সিঙ্গাড়া, লুচি ডাল, সবজি এখন ও মনে হলে জিভে জল চলে আসে। আপনার এই সিরিজটা চমৎকার লাগে তুলিদি।
ইশ, স্কুলে সিঙ্গারা !!! আবার লুচি ডালপুরী! ওরে ওরে ওহহ। বড়ই আনন্দের ছিল আপনাদের স্কুল!
ছোটোবেলা আমার বিশেষ প্রিয় ছিল এইধরনের ঝাল ও নোনতা খাবার, মিষ্টি দুই চক্ষে দেখতে পারতাম না, রসগোল্লা খেতাম না, জোর করে দিলে রস চিপে ফেলে দি্যে ছানাটুকু খেতাম। কিন্তু চপ আর সিঙ্গারা চিরকালীন ফেভারিট, কিন্তু ছোটোবেলা বাড়ীতে এগুলো বেশী খেতে দিতো না , এসব নাকি বেশী খেতে নেই!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
স্কুলবেলার এই সিরিজটা খুব ভাল হচ্ছে। লেখা চমৎকার।
আসমা খান
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আমাদের সময় টিনের বা রেক্সিনের বইকেস অথবা বুক-ব্যাগ ছিল বলে মনে পড়েনা। আমরা তখন গাদা গাদা বই এর ভর কাঁধের উপর রেখে স্কুলে যেতাম। স্কুল বেলার অনেক টুকরো কথা মনে পড়ে গেল।
আমিও বড়দের কাছে শুনেছি তাঁরা ছোটোবেলা হাতে করে বই খাতা নিয়ে যেতেন, দড়িতে বাঁধা কালির দোয়াত আর লেখার কলমও নিতেন। তখন ফাউন্টেন পেন খুব বিলাসের ব্যাপার, বলপয়েন্ট পেন বাজারে আসেনি, তখন দোয়াতের কালিতে কলম ডুবিয়ে ডুবিয়ে লিখতে হতো ওঁদের।
আজকের এই কীবোর্ডের আর ইনসট্যান্ট মেসেজের যুগে ভাবলেও কেমন লাগে।
লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অনেক ভালো লাগলো তোমার ছোটবেলার কাহিনী পড়ে তুলি আপু। আমি প্রথম যখন স্কুলে যাই তখন টিনের সুটকেস হারিয়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশ থেকে, আমাকে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যেতে হতো
"ইয়জা"
বেঁচে গেছিলেন। ব্যাগ বা ব্যাকপ্যাক অনেক নির্ঝঞ্ঝাট ব্যাপার, চেন টেনে বন্ধ করুন, স্ট্র্যাপ কাঁধে গলিয়ে পরে পিঠে নিন, দৌড় দিন। কিছু পড়ে যাবার কোনো ভয় নেই।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
লেখালিখি সম্পর্কে ক্লাস ওয়ানের সেই শিরশিরে অনুভূতিটা রয়ে গেল অনেক অনেক বছর, লেখালিখি যেন একটা ম্যাজিক জগৎ, একটা নিষিদ্ধ ফলের বাগান, ঐখানে আনন্দের পসরা আছে কিন্তু তার সঙ্গে আছে বাধা, আছে নানা বিপদ, কিন্তু একদিন হয়তো ওখানে পৌঁছতে পারবো। তখনই এইসব ভাবনা জাগে নি বটে, কিন্তু ওর সূচনা হয়েছিল সেই সামান্য স্কুল ম্যাগাজিনটি পড়েই, সেই প্রথম "প্রত্যূষ"।
#অনেক সুন্দর লিখেছেন, অভিনন্দন আপনাকে তুলিরেখা, শুভেচ্ছা স্কুলবেলার সিরিজ শুরু করার জন্য, কিসব দিনই না গেছে
#যা করেছিলাম না-তার কিয়দংশের হালকা চ্ছটা একদা সচলে লিখেছিলাম,ভাল থাকুন সবসময়
আশরাফুল কবীর
সত্যি, কীসব দিন গেছে! কত কিছু ভুলেও গেছি , তাই ভাবলাম মনে থাকতে থাকতে লিখে ফেলি।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
টিনের বাক্সের কথা মনে করিয়ে দিলেন। আমি অবশ্য টিনের বাক্স পাই নি তবে নানা বাড়ীতে গেলে দেখতে পেতাম, মনে হয় মামারা ব্যবহার করতেন এক সময়। সেইরকম একটা টিনের বাক্সই ছিল আমার মূল্যবান জিনিস রাখার জায়গা, কাঁচের মার্বেল (খেলাটা তো মনে হয় উঠেই গেছে, ফুটবল-ক্রিকেটের ধাক্কায়), গাছপাকা আম, নিজের হাতে মাটি দিয়ে বানানো নানা শিল্পকর্ম এইসব বহুমূল্যবান জিনিস।
টিফিন পেতাম মাধ্যমিকে পড়ার সময়। কেক, বিস্কিট না হলে সিঙাড়া দিত।আর স্কুলের বাইরে চারচাকার গাড়িতে ফুচকা-চটপটি। আট আনা-এক টাকা দামের সেইরকম সাধের চটপটি জীবনেও আর পেলাম না।
লেখায়
আমাদের বাড়ীর কিছু কিছু ঘরে ছিলো বাঙ্ক, তাকে কেন জানি না বাড়ীর লোকেরা বলতো বাঙ্কার (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত পক্ষের সেনাপতিরা সব বাঙ্কারে আত্মহত্যা করেছে শুনে খুব অবাক হয়ে ভাবতাম ওরা আর জা্যাগা পেলো না, ওরকম জায়গায় উঠে মারা গেল? তখন তো জানতাম না মাটির নিচে ছিলো ওদের বাঙ্কার !), এই বাঙ্কার ছিলো ছাদের কিছুটা নিচে দেওয়াল থেকে বেরিয়ে আসা ভূমি সমান্তরাল একটা চওড়া তাকের মতন জিনিস, লম্বা একেবারে ঘরের একদিক থেকে আরেকদিক অবধি। পরে বুঝেছিলাম, গ্রামের বাড়ীর "কার" জিনিসটার একটা সিমুলেশন করতে চেষ্টা করেছিলেন ওরা।
তো, যেজন্য এই কথা বলা, বাঙ্কারগুলো ছিলো যাবতীয় পুরানো জিনিসপত্রে ভর্তি। সেখানে এক অদ্ভুত পুরানো মরচে ধরা লোহার সুটকেস পেয়েছিলাম, তার আবার সামনে ছিলো দুটো ক্লিক টাইপের ছিটকানি! ঐতিহাসিক বস্তু ছিলো ওটা। সুটকেসটা ছিলো আমার পিতামহের সুটকেস, তার মধ্যে তাঁর কিছু পান্ডুলিপি ছিলো, উনি কবিতা লিখতেন, প্রকাশিত না হওয়া পান্ডুলিপি কিছু কিছু রয়ে গেছিলো ঐ লোহার সুটকেসে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দারুণ জিনিস পেয়েছিলেন তো এই রকম জায়গাতেই কিন্তু অনেক ঐতিহাসিক লেখা-দলিল পাওয়া গিয়েছে বলে শুনেছি। এই বাঙ্কার বা গ্রামে যেটাকে 'মাচা' বা 'মাচান' বলা হতো সেখানেই ছিল আমার মহামূল্যবান সেই টিনের বাক্স।আমরা যদি এসব জিনিষ না লিখে রাখি বা ডকুমেন্ট না রাখি তাহলে মনে হয় পন্চাশ বছর পর মানুষ এগুলো আর চিনতেই পারবে না, জানবেও না।
হ্যাঁ, এখনই তো কত কিছু আর নেই! এমনকি কত লোকে বাড়ী টাড়ী ও বিক্রি করে ফ্ল্যাটবাড়ীতে উঠে যাচ্ছে।
ঘরের ঐ বাঙ্ক, ছাদে ওঠার সিঁড়ির শেষে চিলেকোঠাঘর---এইসব ছিল পুরানো জিনিসপত্রের খনি। নানারকম বাক্সো, কাঠের ও ধাতুর তৈরী জিনিস, পুরানো বিকল যন্ত্রপাতি, বিকল রেডিও, বাতিল হয়ে যাওয়া কলের গান, ভাঙা বাদ্যযন্ত্র, বান্ডিল বান্ডিল পুরানো কাগজপত্র, পোড়ামাটির প্রদীপ, চিতইপিঠে বানানোর মুচি যা কিনা পুরানো হয়ে বাতিল হয়ে গেছে, পুরনো ভাঙা হারিকেন লন্ঠন- এই ধরনের সব জিনিস পাওয়া যেত ওসব জায়গায়।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
স্মৃতিমেদুর করে তুলল যে-
facebook
ধন্যবাদ তারেক। বেঁচেই তো আছি অর্ধেক স্মৃতিতে আর অর্ধেক কল্পনায়।
আপনার এই এত ভ্রমনের কথা পড়ি আর মহাভারত ও পড়ছি এখন, আপনার ভ্রমণ পড়ে পড়ে কেবলই জরৎকারু মুনির কথা মনে হয়, সে লোক তো মহানন্দে ঘুরে ঘুরে বেড়াতো আর সাধনা করতো।
তো একদিন দেখলো তার পিতৃপুরুষের স্পিরিটেরা সব গর্তের উপরে ঝুলছে, তারা ওকে বললো, ওরে তুই যে বিয়ে না করে কেবল ঘুরিস আর তপস্যা করিস, আমরা যে জল পাবো না, বংশলোপ হবে। তো, জরৎকারু ভীষন লিবারাল, বললো আমার সমান নাম ও সমান মনের কোনো মেয়ে যদি থাকে, স্বেচ্ছায় আমায় বিয়ে করে তবে আমি সংসার করবো।
তারপরে তো নানা প্যাঁচালো কান্ডের পরে নাগ রাজকন্যার সাথে বিয়ে হলো মুনির, মুনির শালাবাবু নাগরাজ বাসুকী তো সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সুখ সাচ্ছন্দের(ভিতরে নানা ষড়যন্ত্র ও কলকাঠি ছিলো ), কিন্তু মুনির তো দম বন্ধ হয়ে আসে প্রাসাদে, ক্লসট্রোফোবিয়া। শেষে একদিন ঝগড়া করে মুনি উধাও হয়ে গেলেন। বাইরে ঘুরে ঘুরে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। এদিকে যেজন্য বিবাহ সেটাও সার্থক হয়েছিলো, এই নাগকন্যা আর জরৎকারুর পুত্র আস্তিক মামাদেরও বাঁচিয়েছিল, আর মুনির পিতৃপুরুষদের স্পিরিটদেরও বাঁচিয়েছিল। ম্যানেজমেন্টের ভাষায় যারে কয় উইন উইন।
আপনার ভ্রমণকাহিনি পড়ে পড়ে কেবলই ঐ কাহিনি মনে হয়, কারণ প্রা্যই দেখি এখানকার বন্ধুবান্ধবেরা আপনার বিয়ে দিয়ে দেবার কথা কন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তাইলে এখন আগে বাসুকীর খোঁজ করেন। বাসুকীকে পাওয়া গেলে সে তার বোন জোগাড় করে ফেলতে পারবে। আসল নাগ বংশের লোকজন ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ এইসব এলাকায় থাকেন। আবাপ বা দৈনিক জাগরণে একটা বিজ্ঞাপন দেবার কথা ভাবতে পারেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কিন্তু পুরাণের বা্সুকী তো পাতালে গিয়ে পৃথিবী ধারণ করে আছেন। আবার তিনিই নাকি সমুদ্রে ভেসে ভেসে কুন্ডলী করে বিষ্ণুর অনন্তশয্যা রচনা করেছেন, বিষ্ণুর মাথার উপরে ফণা তুলে ছায়া দিয়েছেন, যাকে বলে ডবল জব করছেন। তাঁকে পাওয়া যাবে না। সেইখানেই তো লক্ষ্মী বিষ্ণুর পায়ের কাছে বসে বসে যুগের পর যুগ ধরে বিষ্ণুর পা টিপে দিতে দিতে ফেমিনিস্ট রেভলুশনারীদের
একেবারে চক্ষুশূল!!!
এদিকে এক বন্ধু সেদিন খুব তর্ক করলেন যে নাগবংশীয়রা সবাই নাগাল্যান্ডে আছেন এখন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
রবি নামে এক বন্ধু প্রথম নিয়ে এল ক্লাশে 'ষ্টিল' এর স্যুটকেস, ওর মামারা কলকাতা থাকত - স্যুটকেস এর ভেতর দেখলাম আরেকটা ছোট বক্স - ওটাও 'ষ্টিল' এর! ভেতরে সন্দেশ - তারপরেই আমরা বন্ধু - আমার জন্যেও আনানো হল ঐ স্যুটকেস, রবির মামাকে দিয়ে - সন্দেশ ও দেয়া হল দোকান থেকে কিনে - কিন্তু রবিরগুলো অন্যরকম লাগত খেতে - ওদের বাসায় কাকীমা বানাত! আপনার লেখা পড়ে সেই সন্দেশ এর স্বাদ স্মৃতিতে ফেরত এল ! এখন এই রাতের বেলা সন্দেশ পাই কোথায়!!
বাক্সের ভিতরে বাক্স, তার ভিতরে সন্দেশ !!!!
বাড়ীর বানানো সন্দেশ বলতেই লেবুগন্ধী একরকম সন্দেশের কথা মনে হয়, দুধ ঠিকমতন কনডিশন করে লেবুর রস মিশিয়ে নাড়তে নাড়তে ছানা কাটানো হতো, তারপরে সেই ছানা মিহি করে বেটে চিনি মিশিয়ে গরম খোলায় পাক দিয়ে ছাঁচে ফেলে সন্দেশ বানানো হতো।
কিন্তু বাচ্চারা বাড়ীর সন্দেশ একেবারে খেতে চাইতো না, কেবলই দোকানের সন্দেশ খেতে চাইতো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এক্কেবারে ঠিক। লেবু বলে আরো বিগড়ে দিলেন সব - এখন সন্দেশ চাইইইইইই
ধুর! আপনারা যে সব কি!!! কাজ নেই কাম নেই দিনে দুপুরে সন্দেশের কথা মনে করিয়ে দিলেন। সন্দেশ আমার খুব প্রিয় একটা মিষ্টি, তারওপর পাক্কা দেড় বছরের বেশী দেশে যাই নি, এখন কি করি, কোথায় পাই সন্দেশ
ছানা কাটিয়ে সন্দেশ বানিয়ে নিন! দুধ ও আছে, লেবুও আছে, চিনিও আছে-দুনিয়ার যেখানেই থাকুন না কেন! যদি সন্দেশ না পারেন, কাঁচাগোল্লা বানিয়ে খান, সেক্ষেত্রে ছানা চিনি ভালো করে মেখে গোল্লা করে নিলেই হবে, চোখ বুজে খাবেন, মনে করবেন আহা, কি আমৃতিই না খাচ্ছি
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বানিয়ে টেস্ট করে দেখতে হবে
আপনারে অনেক অনেক
বানালেন? কেমন হয়েছিল?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বড় ভাই পড়ত সরকারি স্কুলে, ওদের দিত স্কুল থেকে টিফিন।আমি পড়তাম বেসরকারিতে তাই লবডঙ্কা।দাদার মুখ থেকে খালি গল্প শুন্তাম।এই বুড়ো বয়সে চাকরি করতে এসে অফিস থেকে সকাল ১১/১২ টার দিকে একটা হালকা জলখাবার দেয়,তাই দিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাই।
অফিস থেকে টিফিন দে্য??? বাহ, খুব ভালো অফিস।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি বড় হয়ে একটা কোম্পানি খুলবো, সেইখানে যারা কাজ করবে তারা দুপুরে পাবে চা/কফি আর সামোসা, সিঙারা, চপ, কচুরি, ডালপুরী এইসব। মাঝে মাঝে বিরিয়ানি। নিজেও ঐখানে কাজ করবো আর ওগুলো পাবো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বড় হয়ে? নাদের আলি, আমি আর কত বড় হবো?? অফিস খুললে আমার জন্য একখান পোষ্ট খালি রাইখেন। আমি মেলা মেলা পাস দিতেই আছি।
পাশ দ্যান, মন দিয়া পাশ দ্যান। তারপরে আমার সেই ভবিষ্য-কোম্পানি তো আসছেই যেখানে রোজ দুপুরে চপ কাটলেট কচুরি ডালপুরী আর মাঝে মাঝে বিরিয়ানি।
এবারে আঁক কষে বলুন, সে কোম্পানির সূচনা থেকে লালবাত্তি জ্বলতে কতক্ষণ লাগতে পারে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন