একটুকরো কাগজ উড়ে যাচ্ছে,
তাতে ছিলো না জন্মানো কবিতার কয়েকটা পংক্তি,
সেই মৃত ভ্রূণটিকে বুকে নিয়ে চলে
যাচ্ছে ধাত্রী, ওদের পিছনে সূর্যাস্তের লাল আকাশ।
সেদিকে চেয়ে থাকি জ্বরঝাপসা চোখে,
অন্য এক পৃথিবীর স্বাদ লাগে জিভে।
ফিরোজানীল আকাশে ডানা মেলে দেয় সোনালি ঈগল, ধীর গতিতে ভেসে যায় পাহাড় চূড়ার দিকে। নিচে নদীর তীরে শরবনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে বৃদ্ধ বক, চেয়ে আছে স্রোতের দিকে, চঞ্চল স্রোতের অশেষ ধারার দিকে। জন্ম-উৎস থেকে মৃত্যুমোহনার দিকে স্রোতের অবিরাম ছুটে চলার দিকে স্থির চেয়ে আছে সে। কালপুরুষের মৃগশীর্ষ সারমেয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পাহারা দিতে দিতে দেখেছিলো দুটো রঙীন প্রজাপতি উড়তে উড়তে খেলছে, খেলাটার নাম " আমায় ধরতে পারে না"।
চুমুক দিলাম পানীয়ে, টকমিষ্টি স্বাদের অদ্ভুত পানীয়-আরেক চুমুক দিলাম, আরেক চুমুক। তারপরে কিছু মনে নেই। কেন আমার পানীয়ে ঘুম মিশিয়ে দিয়েছিলি তুই?
তিন দিন তিন রাত্রি অন্ধকারে ভাসছি-জন্ম মৃত্যু পুনর্জন্ম পুনর্মৃত্যু---স্বপ্নের ভিতরে সব গোল্লা পাকিয়ে যায়, বিশাল এক ভুলভুলাইয়া--- সমস্ত পার্থিব অসন্তোষ ঝরে যাচ্ছে হেমন্তের লালবাদামী পাতাদের মত, রাশি রাশি পাতা, কোটি কোটি পাতা, গাছের শরীর থেকে ঝরে যাচ্ছে কী নির্বিকার বেদনাহীনতায়! মনে পড়ে এক বিপন্ন স্বপ্নের ঋতু, ছিন্ন পালকে রক্তমাখা দিনরাত, তৃণাঞ্চলে ঝরে পড়া টপটপে স্বেদ-স্মৃতি। মরিচগন্ধী গ্রীষ্মের দুপুরের বালি বালি জলতেষ্টা, কপালে গালে শুকিয়ে যাওয়া লবণ। তামাটে আকাশে গলন্ত ধাতুর মতন রৌদ্র, উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিমে কংক্রীটের বিস্তৃত জঙ্গল-যেখানে লুকোবার কোনো জায়্গা নেই। তবু সেও ঝরে যায়, ঝরাপাতা অরণ্যে ঘুরতে ঘুরতে মনে পড়ে তোদের বাড়ীটার কথা।
সবুজ রঙ ছিলো তোদের বাড়ীটার। সবুজ মাঠ পেরিয়ে সবুজ গাছগাছালির জটলা, তার ভিতর দিয়ে উঁকি ঝুঁকি দিতো তোদের সবুজ বাড়ীর দেওয়াল, জানালা আবার কখনো বা দোতলার একটা গ্রিলমোড়া বারান্দা। রহস্যময় দোতলার বারান্দা। ওখানে তোর নয়নাপিসি বসে থাকতো। চুপ করে চেয়ারে বসে দূর দিগন্তের দিকে চেয়ে আস্তে আস্তে দুলতো, দুর্বোধ্য কথা বলতো, ওঁর পিঠের উপরে ছড়িয়ে থাকতো জটা পড়া চুল, গায়ের কাপড় থাকতো অবিন্যস্ত। নয়নাপিসি পাগল ছিলো, সবাই জানতো। কিন্তু আমার মনে হতো সে যেন রয়ে গেছে অন্য একটা জগতের ভিতরে, যা আমরা কেউ দেখতে পাই না।
রাত্রিবেলার যাদুকর এসে দাঁড়ায় আমার অগ্নিকুন্ডের পাশে-
ওর এক হাতে পাহাড়, আরেক হাতে সমুদ্র-
রক্তলাল পশ্চিমের আকাশের উপরে ওর সিলুয়েট,
মন্ত্রমুগ্ধের মতন চেয়ে চেয়ে দেখি এক এক করে
নক্ষত্র ফুটে উঠছে ওর মাথার চুলে, উত্তরীয়ে, বাহুতে, বুকে-
মন্তব্য
দারুণ লাগলো।
সিলুয়েট মানে?
__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে
ধন্যবাদ সৌরভ।
সিলুয়েট হলো একরকমের ছায়াচিত্র, আলোকিত ব্যাকগ্রাউন্ডের উপরে বস্তুর ছায়াময় আকার।
এখানে উইকি বলছে, http://en.wikipedia.org/wiki/Silhouette
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন