আলো আর ছায়ার খেলা অদ্ভুত একটা নকশা তৈরী করছে, সারাদিনের কাজের শেষের ক্লান্তি নিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছি সেই খেলা। কেন যেন মনে হয় আলোছায়ার ঐ অদ্ভুত রহস্যময় নকশা আমাকে কিছু বলতে চায়। কী বলতে চায়?
প্রতিদিনের চেনা এই জগতের বাইরের অন্য কোনো জগতের কথা বলতে চায় কি ? আনন্দ-বেদনা সুখ দুঃখ পুলক ও যন্ত্রণা দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো এই চেনা জগৎটা একদিন আমার সামনে ছিন্ন ছিন্ন হয়ে গিয়ে দেখিয়েছিল ঐ অন্যধারের ছায়াময় একঝাঁক নীল ফুল। কিন্তু সে খুব অল্পসময়ের জন্য, সব আবার বোনা হয়ে গেছিল আঁট করে, আর কোনো ফাঁকফোঁকড় ছিল না কোথাও।
কুয়াশাঢাকা রাস্তায় একজন সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল। একটিমাত্র যান আর তার একজন চালক। চরাচরে কেউ কোথাও ছিল না। শুধু শীতের সকালের অদ্ভুত আলো আঁধারি। ওকে বার বার মনে পড়ে কেন? কোনোদিন ওর মুখ দেখিনি, তবু কেন ঐ সাইকেল চালিয়ে যাওয়া মনের মধ্যে ভেসে ওঠে?
একটা বোতাম, ঝিনুক বোতাম, সাদার মধ্যে নীলের ছোঁয়া। একটা সুন্দর গন্ধ ছিল বোতামটার। কোথায় দেখেছিলাম? ফিরে ফিরে মনে পড়ে বোতামটা, চোখ অলস চেয়ে থাকে আলোছায়ায় নৃত্যশীল নকশাঝালরের দিকে।
সোনালী জরি জড়ানো একটা নীল রেশমী ফিতে মনে পড়ে, নাকি নীল না অন্য রঙের? সবুজ? নাকি ফিকে বেগুনী? জরি জড়ানো ফিতেটা এক রঙ থেকে অন্য রঙে লাফিয়ে লাফিয়ে সরে যেতে থাকে স্মৃতির মধ্যে, কেমন একটা অস্বস্তি হয়।
দৃশ্য বদলে যায়, দেখি কমলা প্রজাপতিরা উড়ছে, ঝকঝকে রোদ্দুরে ভরা একটা সবুজ বাগান। কোথা থেকে একটা নীলকন্ঠ পাখি উড়ে এসে বসলো আমগাছের নিচের ডালে। দেখতে পাই পাথরের সিঁড়ির ধাপ, নেমে গেছে নিচে, দুইধারে বাদামী পাথরের দেয়াল, আলো কমে আসছে। কে যেন গম্ভীর গলায় বলছে, সাত ধাপ গেলেই চাতাল, সেখানে ওকে পাবে, সেখানে ওর গলার হারের লকেট আছে। কে বলছে?
দৃশ্য আবারো বদলে যায়, দেখি তাল তাল বরফে ঢাকা এক বিশাল প্রান্তর, সেই প্রান্তরের উপরের আকাশটি একেবারে নীলে নীল। সূর্যোদয় হতেই চোখ যেন ঝলসে গেল আলোয় আলোয়, বরফ সূর্যের আলো ঠিকরে দিচ্ছে। চোখ ঢাকলাম, আঙুলের ফাঁক দিয়ে আলতো করে দেখতে লাগলাম চারিপাশ। এ কোথায় এলাম?
তারপরেই বরফ সরে গিয়ে দেখা দিল একটা ঘন সবুজ অরণ্য, অসংখ্য নদী যেন সাতনরী হার হয়ে ছেয়ে আছে সেই অরণ্য। অরণ্য ঘিরে নীল পাহাড়ের মালা। বৃষ্টি খুব নিয়মিত সেখানে, তাই সবুজ ফিকে হয় না। মাঝে মাঝে দাবানল জ্বলে উঠতে চায় গ্রীষ্মের মাসে, কিন্তু বৃষ্টি এসে থামিয়ে দেয় আগুন। অনেক বন্য পশুপক্ষী থাকে ঐ অরণ্যে। অসংখ্য গাছ, বুড়ো গাছ, তরুণ গাছ, গুল্ম, লতা সব আছে সেই জঙ্গলে, কত লক্ষ বছর ধরে তারা ঐখানে আছে বংশানুক্রমে। ওদের জায়্গা কেউ দখল করতে আসে নি, ওরা ভাবেও নি ওদের উৎখাত হতে হবে কোনোদিন। এখন শুনতে পাই মড়মড়াৎ শব্দ, অভিযাত্রীরা আসছে, জঙ্গল কেটে বসত বানাবে তারা---
মন্তব্য
মানুষের মন বড়ই বিচিত্র । কল্পনা করার শক্তি সবার থাকে না। কেউ কেউ থাকলেও ব্যবহার করে না। কারো কারো থাকে কল্পনা করতে পারার শক্তি আর সেই সেই কল্পনা কে প্রকাশ করবার মত অপরিসীম ক্ষমতা।
আপনাকে ধন্যবাদ অতিথি লেখক। কিন্তু আপনার নামটি তো দেন নি!
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন