সে অনেকদিন আগের কথা, সেই সময় মানুষ পৃথিবীতে খুব আনন্দে থাকতো, পরম সুখে জীবনযাপন করতো। সে এক চমৎকার অবস্থা। কারুর কোনো কাজ করতে হতো না, যার যা দরকার সব হাতের কাছে এসে হাজির হতো। একথালা পোলাও চাই, এসে গেল ফার্স্ট ক্লাস পোলাও। এক প্লেট বিরিয়ানি চাই, এসে গেল দারুণ চমৎকার বেহেশতী বিরিয়ানি। এক বাটি পায়েস চাই, এসে গেল মনোরম স্বর্গীয় স্বাদের পায়েস। মখমলের তাকিয়া চাই, এসে গেল তাকিয়া। হীরার দুল চাই, এসে গেল। এইরকম সব। কে আর কাজ করে?
কেউ কেউ হয়তো নিজের মনের খুশিতে ছবি আঁকতো বা গান গাইতো বা নাচতো। এসব তো আর কাজ না, শখে করতো লোকে, কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। খুব মজা সবার।
এই সবের নেপথ্যে কেবল একটিই শর্ত ছিল। প্রভু ঈশ্বরের কথা সব মেনে চলতে হবে।
মানুষে এমন ত্যাঁদোড়, যে সুখে থাকা পোষালো না তাদের।(ঐরকম চাইতে না চাইতেই সব এসে পড়ে জীবন হয়তো অসহ্য ঠেকেছিল তাদের। কঠিন কঠিন কাজের চ্যালেঞ্জ না থাকলে অ্যাডভেঞ্চার কোথায়? পান্সা, আলুনি সব।) তারা ঈশ্বরের নির্দেশ অমান্য করতে শুরু করে দিল। সুখে থাকতে ভুতের কিল আরকি!
ব্যস, আর যায় কোথা? প্রভু গেলেন খুব রেগে। মহা ঝড়-বৃষ্টি নামালেন তিনি পৃথিবীতে। দেখতে দেখতে মহাবন্যা এসে গ্রাস করে নিল সব মানুষকে। যেদিকে তাকানো যায় সব দিকে বন্যার জলরাশি। এর মধ্যে একটিমাত্র মানুষ, নাম তার ক্রানিয়াৎস, কেমন করে সে বেঁচে গেল।
দৌড়াতে দৌড়াতে সে এক পাহাড়ের কাছে এসে থামলো, তারপরে পাহাড়ের গা বেয়ে ওঠা শুরু করলো, সেই পাহাড় পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পাহাড়, ওটা তখনো ডোবে নি। জল বাড়ে আর সে পাহাড় বেয়ে বেয়ে উপরে ওঠে, শেষে চূড়ায় গিয়ে পৌঁছালো, জল প্রায় চূড়া ছোঁয় ছোঁয়, ক্রানিয়াৎস ভাবে, "এইবারে গেলাম। চূড়া ডুবে গেলে আর বাঁচার রাস্তা নেই।"
কিন্তু বানের জল ঐখানে থেমে গেল। আর উঠলো না। পর্বতশীর্ষে ছিল একটা আঙুরের মাচা, তার পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ক্রানিয়াৎস। সে প্রচন্ড শক্তিশালী দৈত্যাকার মানুষ ছিল, কিন্তু তাহলে হবে কী, তার লৌহশরীরও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল ঐভাবে বন্যা থেকে পালাতে পালাতে।
ঘুম থেকে উঠে সে দ্যাখে, সামনে বসে আছেন দেবতা কুরেন্ত। এই দেবতা ছিলেন মহা ঝামেলাবাজ ও ধুরন্ধর কৌশলী হিসাবে পরিচিত, নানাভাবে তিনি মানুষদের নানা কায়দা করে বেকা্যদায় ফেলে হেনস্থা করতেন। হয়তো তাঁকে এই নিয়ে চেপে ধরলে তিনি বলবেন নেহাৎই মজা করার জন্য।
যাই হোক, এই অবস্থায় কুরেন্তকে দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেল ক্রানিয়াৎস। ইনি কখন যে কী করে বসবেন কোনো তো ঠিক নেই! কিন্তু কুরেন্ত ওকে বরং সাহায্যই করলেন। ঐ আঙুরমাচা ছিল কুরেন্তের আঙুরমাচা, তিনি আঙুরের রস বানিয়ে ক্রানিয়াৎসকে খাওয়ালেন।
নয়টি বছর বন্যার জল নামলো না, নয়টি বছর দেবতা কুরেন্ত খাইয়ে দাইয়ে বাঁচিয়ে রাখলেন ক্রানিয়াৎসকে। তারপরে নয় বছর পরে জল নেমে গিয়ে ডাঙা দেখা দিলো আবার, তখন ক্রানিয়াৎস লুটিয়ে পড়ে কুরেন্তকে ধন্যবাদ দিলো তার প্রাণরক্ষার জন্য। তারপরে বললো, " আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। এখন আমি যেতে চাই। অনুমতি দিন। আর যেতে দিতে না চাইলে আপনি আমায় গোলাম করে রাখুন, এ প্রাণ আপনিই বাঁচিয়েছেন।"
কুরেন্ত কিন্তু নিজে কৃতিত্ব দাবী করলেন না, বললেন, "আরে না না, আমি না, এই আঙুরগাছ তোমার প্রাণ বাঁচিয়েছে, ফল দিয়েছে, রস দিয়েছে। কৃতজ্ঞতা জানাতে হলে একে জানাও। আমি নিমিত্তমাত্র। এই আঙুরকে কখনো ভুলো না, একে সব সময় সব খাদ্যপানীয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মনে কোরো।"
ক্রানিয়াৎস স্বীকার করলো সে তাই করবে। তখন কুরেন্ত বললেন, "চলো তো সরেজমিনে দেখি দুনিয়াটার এখন কী অবস্থা হয়েছে।"
(চলবে)
মন্তব্য
খাইছে... মহাবন্যার মিথ কি সবদেশেই একখান করে আছে নাকি??
প্রা্য সবদেশেই আছে মহাপ্লাবনের গল্প। কয়েকটা তো রীতিমতন বিখ্যাত। যেমন: সুমেরীয় কাহিনি এপিক অফ গিলগামেশ, উপমহাদেশের কাহিনি মৎসপুরাণ, আদিপুস্তকের নোয়ার গল্প-- সবেতেই মহাপ্লাবনের কাহিনি। আরো আছে অনেক, চীনা উপকথায় আছে, প্রাচীন গ্রীক উপকথায় আছে, আইরিশ আর জার্মান গল্পেও আছে, ইনকাদের গল্পে আছে, হোপীদের গল্পে আছে----আরো কত জায়গায় যে আছে! মনে হয় সবদেশেই এরকম কিছু গল্প প্রচলিত ছিল তার কারণ সম্ভবত ওরকম কিছু কোথাও সত্যি করেই ঘটেছিল, তারপরে সেই গল্প ছড়িয়ে গেছে মুখে মুখে!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হ্যাঁ - প্রাচীনকালে এক মহা বন্যা সম্ভবত সত্যই ঘটেছিল পৃথিবীতে, তাই পারস্পরিক যোগাযোগবিহীন দুইটি জাতির উপকথায়ও একই ধরনের কাহিনী পাওয়া যায়। এই বিষয়ে একটা লেখা পড়েছিলাম কিশোর বয়সে - খুব ভালো লেগেছিল।
গিলগামেশ-এঙ্কিডুর কাহিনী তো অদ্ভুত সুন্দর - ধরলে আর ছাড়া যায় না।
মাঝপথে থেমে গেল!!
কালকেই পরের পর্ব ছাড়েন। তারেকাণু স্টাইল, পত্যেক পাতায় এক পর্ব।
..................................................................
#Banshibir.
:-)
আপনার ইতিহাসের গল্পগুলি কই? সেই নূরজাহানের রান্নাঘর?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নূরজাহান ব্যাপক ধুন্দুমার পাচিকা ছিলেন বইলা শুনা যায়, তবে সেইটা উনারে পামপট্টি দিবার জন্যও লেখা হইতে পারে। জাঁদরেল মহিলা নূরজাহান, মাইনষে ডরাইত। আপাতত মালমশলার অভাবে নূরজাহানের রান্নাবান্না নিয়া পোস্ট স্থগিত, দেখি আর কিছু পাই কিনা। তবে গোলমরিচ পলিটিক্স নিয়া ভালো একটা বই পাইছি
..................................................................
#Banshibir.
আরে আপনি তো হাতী টাতী লইয়া জল্লাদগিরির গল্প দিছেন। লোকে ভয় পাইসে। এখন কোনো মজার রঙ্গিলা কিছু দ্যান।
পাম তো দিছেই, সম্রাজ্ঞীরে পাম দিবে না তো দিবে কারে? না হইলে মাহিনা পাবে ইতিহাস লেখক? তবে নূরজাহান হইতেও পারে ধুন্ধুমার পাচিকা, আগে তো রাজকুমারী ছিল না সে, আগে তো সাধারণ ঘরের মেহের উন্নিসা ছিল, হয়তো তখন রান্ধন বাড়ন করতো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আঙুরের রসটা কি একটু, এহেম, ফার্মেন্টেড ছিল?
মনে খালি দুষ্টু চিন্তা। 'আঙুরের রস সব খাদ্যপানীয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ' - এই স্টেটমেন্টে এক ভোট দিলাম। তবে রসটাকে ফার্মেন্টেড করলে একশ' ভোট দেবো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হ্যাঁ, তাতো বটেই
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ষষ্ঠ পান্ডবদা,
আপনার লেখায় "বল মেরে মছলি কিতনা পানি" শুনে এই মহাবন্যার সার্বিয়ান উপাখ্যান ভাবানুবাদ করার ইচ্ছা দেখা দিল।
অবশ্য মহাবন্যা আর মাছের গল্প আছে উপমহাদেশের মৎসপুরানে, সেখানে মনুর নৌকা মাথায় বেঁধে টেনে সমুদ্রে নিয়ে গিয়েছিল মৎস অবতার(বিষ্ণুর দশাবতারের প্রথম অবতার), যাকে কিনা মনু একদিন বাঁচিয়েছিলেন। পরে কখনো গল্পটা বলা যাবে।
"হারা সমুন্দর/ গোপী চন্দর/ বল মেরে মছলি/কিতনা পানি" শুনেই খালি মনে হচ্ছে কুলকিনারাহারা সমুদ্রে নৌকা নিয়ে ভাসতে ভাসতে মনু এইভাবেই বুঝি মাছকে ডেকে ডেকে মনে মনে কথা কইছেন। কবে থই পাবেন, কবে নৌবন্ধন শৃঙ্গে গিয়ে লাগবে নাও তার, সেতো কিছুই জানেন না তখনো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আমার ব্লগর ব্লগর আপনাকে এই সিরিজ আবার শুরু করতে বাধ্য করায় এই সিরিজের পাঠিকা-পাঠকের কাছ থেকে আমি আঙুরের ফার্মেন্টেড রস পাওনা হলাম।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হ্যাঁ, পাঠক-পাঠিকার কাছ থেকে ভালো করে প্রাপ্য বুঝি্য়া লইবেন।
আগে উইল করে নিয়ে তারপরে খাবেন, নইলে বেসামাল করে তারা আপনার বাড়ী গাড়ী জমিজিরাত ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স ইত্যাদি সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি সব লিখিয়ে নেবে কিনা তার স্থিরতা কী?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তুলিরেখা ২য় পর্ব নামান জলদি।
@ কৌস্তুভ তা আর বলতে? তা না হলে নয় বছর ধরে শুধু আঙুরের রস খেয়ে থাকা যায়?
--------------------------------------------------------------------------------
কৌস্তুভ,
কার মন যেন বোঁচকার দিকে থাকে? বা ভাঙা বেড়ায়?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
@ মেহবুবা জুবায়ের, হ্যাঁ, চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি দেবার।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
পর্বগুলো মোটাসোটা হয়ে নামুক, যাতে পড়তে শুরু করার আগেই ফুরিয়ে না যায়।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
@তিথী, এত মোটাসোটা চাইলে হবে না। স্লিম ই তো ভালো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ক্রানিয়ৎসের বউয়ের কাহিনীটা কি? মানে সে বাঁচলো কিভাবে?
এই গল্পে শুধু ক্রানিয়াৎসই একাই একশো, এরপরে যা কীত্তি করেছে! কিন্তু এ লোক তরুণ, তখনও বিয়ে হয় নি। বৌ ছিল না। পরে বিয়ে হয়(পরে জানা যায় আরো দুটি তরুণী আর একটি তরুণ বেঁচে গেছিল এদিক ওদিক)। বৌয়ের কাছে পরে নিশ্চয় সব শুনেছিল ক্রানিয়াৎস, কারুরে আর সেসব কয় নাই মনে হয়। কিবা এও হতে পারে বৌ তারে কীভাবে সে বাঁচলো বন্যা থেকে, সেসব কিসুই কয় নাই।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
পপ্পন কি শুধু নিজে খান নাকি কারুরে কারুরে দ্যানও ?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তাত্তারি গপ্প কন।
--------------------------
সুবোধ অবোধ
----------------------
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কেন এত বোকা হয়?!!
আসতেসে, আসতেসে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হ্যাঁ, অপেক্ষায় থাকলাম।
দিয়ে দিয়েছি পরের অংশ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপনার জন্য কিছু ফিনিশ উপকথার বই পাঠানোর চিন্তা করছি
facebook
পাঠিয়ে দিন পাঠিয়ে দিন পাঠিয়ে দিন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
উপকথার বইগুলি পাঠাইলে dhammilla @ ইয়াহু ডট কমে পাঠাইয়েন তারেক অণু।
আগাম ধন্যযোগ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন