এরপরে সাইকির দিন কাটে ঐ আলিশন প্রাসাদে আর বাগানে ঘুরে ঘুরে, তার যখন যা দরকার হয় সবই সে পেয়ে যায়, শুধু কোনো মানুষের দেখা পায় না।
রাত্রে নৈশাহার সেরে শয্যাগৃহে গিয়ে দুরুদুরু অপেক্ষা শুরু হয়, একসময় আসে তার আঁধার রাতের রাজা। ওর মুখ দেখা যায় না, অন্ধকারে ঢাকা। সাইকি ভাবে, এ কি সত্যিই মহানাগ নাকি মানুষ? এত ভালো, এত বন্ধুত্বপূর্ণ এঁর ব্যবহার, অথচ কেন ওঁকে দেখতে দেয় না?
একদিন সাইকি বায়্না ধরলো, "রাজা, সারাদিন একা একা থাকি, কোনো জনমনিষ্যির দেখা নেই, প্রাণ হাঁপিয়ে ওঠে। তুমি আমার দিদিদের এনে দেবে এখানে, মাত্র একদিনের জন্য?"
আস্তে আস্তে তার আঁধার রাতের রাজা বলে, "তোমার দিদিরা শুনেছি ঐ পাহাড়চূড়ায়- যেখান থেকে তুমি অদৃশ্য হয়ে গেছিলে, সেখানে আসে। তোমার জন্য শোক করতে। ওরা ভেবেছে তুমি মারা গেছ। "
এই কথা শুনে সাইকির কান্না আর বাধ মানে না। এদিকে তার স্বামীও বিচলিত হয়ে বৌয়ের চোখ মোছাতে মোছাতে বলে, "আরে দ্যাখো দেখি কী মুশকিল! কাঁদো কেন? ঠিক আছে, ঠিক আছে, এনে দেবো ওদের একদিনের জন্য। কিন্তু কথা দাও, তুমি ওদের আমার কথা কিছু জানাবে না। "
সাইকি সাগ্রহে কথা দেয় সে কিছু জানাবে না। এতদিন পরে আপনজনের দেখা পাবে ভেবেই তার মহা আনন্দ।
কয়েকদিন পরে দিদিদের উড়িয়ে নিয়ে এলো সেই রহস্যময় হাওয়া। দিদিদের দেখে সাইকির আনন্দ ধরে না। মহা খুশি হয়ে সে তাদের যত্ন আত্তি আপ্যায়ণের ব্যবস্থা করে। তারপরে ওদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখায়।
এদিকে সাইকির এত বেশুমার ধনদৌলত দেখে দিদিদের খুব চোখ টাটায়। সাইকি একটু অন্যদিকে গেলে নিজেরা বলাবলি করে, "বাপরে, হতভাগী সাইকি দেখি এখানে মহারাণী হয়ে বসেছে! আমাদের মতন সাতটা রাজ্যের ধনসম্পত্তি জড়ো করলেও তো এর সমান হবে না। এতকিছুর মালিক কে? স্বামীটাকে তো দেখলাম না এখনো? সেই মক্কেল কোথায়? "
সাইকি দিদিদের কাছে এলে তাকে বড়দি বলে, "কী রে ছুটকি, তোর বর কই? সবই তো দেখালি, কিন্তু আসল লোকটাকেই তো দেখতে পেলাম না এখন অবধি।"
সাইকি আমতা আমতা করে বলে, "দিদি, সে তো শিকারে গেছে তার বন্ধুদের নিয়ে। শিকার অভিযানে গেলে ফিরতে দেরি হয়। গেলবার তো প্রায় সপ্তাহ ঘুরে গেছিল।"
মেজদি বলে, " আ মোলো যা! এ আবার কেমন ধারা গো! বাড়ীতে কুটুম আসছে আর কর্তা বাড়ীতে নেই! ফিরবেন নাকি সপ্তাহ পার করে! এ আবার কোন্ দেশী কুটুম্বিতা?"
সাইকি ক্ষমা চায় স্বামীর হয়ে, বলে যে সে দিদিদের দেখতে চেয়ে অস্থির হয়েছিল বলেই তাদের এখন আনিয়েছে তার স্বামী। শিকার অভিযানের কথা আগে থেকেই ঠিক হয়ে রয়েছিল বলেই তাকে যেতে হয়েছে। নইলে কুটুম্বিনীদের আপ্যায়ন সে নিজেই করতো।
বড়দি চোখ মটকে হেসে বলে, "নাকি ছুটকি তুইই ফুসলি দিয়ে তাকে বিদায় করেছিস, পাছে সে শ্যালিকাদের দেখে বেসামাল হয়? আর তোর সাত রাজার ধন এক মানিকটি খোয়া যায়।"
সাইকি লজ্জায় লাল হয়ে বলে, "যাঃ, কী যে তুমি বলো বড়দি! এসো, খাবার টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে।"
আহারের পর তিন বোনে যখন বিশ্রাম করছে, তখন আবার দিদিরা চেপে ধরে সাইকিকে। "হ্যাঁ রে ছুটকি, দেখতে কেমন তাকে? খুব সুন্দর?"
সাইকি চোখ নামিয়ে রাখে, উত্তর দেয় না। মাথা নেড়ে সম্মতি দেয় শুধু।
কিন্তু দিদিরা আরো অনেক কিছু জানতে চায়, সে কিছু বলতে পারে না। এইরকম রহস্যময় জনমানবহীন প্রাসাদ, এইরকম সব ম্যাজিকের মতন ঘটনা টটনা, এইরকম অদ্ভুতভাবে গৃহস্বামীর অনুপস্থিতি---সবই দিদিদের খুব সন্দেহ জাগিয়ে তোলে।
দিদিদের পুনঃ পুনঃ পীড়াপীড়িতে আর নানারকম ভয় দেখানো কথাবার্তা শুনে একসময় সাইকি বলে ফেলে যে সে স্বামীকে চোখে দ্যাখে নি। অন্ধকার রাত্রে সে আসে, তার মুখ সাইকি কোনোদিন দেখতে পায় নি।
বড়দি শিউরে উঠে বলে, "এ নির্ঘাৎ সেই মহানাগ, দৈববাণীতে যার কথা ছিল। এ তোকে বাগে পেয়ে খাবে একদিন।"
মেজদি বলে, "শোন ছুটকি, বাঁচতে চাস তো আমার কথা শুনে কাজ কর।"
সাইকি হতবিহ্বল মুখ তুলে বলে, "কী করবো?"
মেজদি বলে, "তুই একটা ছুরি লুকিয়ে রাখ হাতের কাছে। রাতে যখন সে ঘুমিয়ে পড়বে, তখন ছুরিটা আমূল বিঁধে দিবি মহানাগের বুকে।"
সাইকি দৃশ্যটা কল্পনা করে শিহরিত হয়, আঁধার ঘরে আলো পড়েছে প্রদীপের, রক্তে ঘর ভেসে যাচ্ছে, মহানাগ মরে পড়ে আছে। সত্যিই কি তার স্বামী মহানাগ?
দিদিরা কিন্তু খুব ভয় দেখায়, বলে এই না করলে সাইকিকে গিলে খাবে মহানাগ। তার বাঁচার একমাত্র উপায় মহানাগকে হত্যা করা।
বিকালবেলা হাওয়া দূত এসে দিদিদের ফিরিয়ে নিয়ে গেল। আর সাইকি সারা বিকাল আর সারা সন্ধ্যা ঘর-বার করে কাটালো। কিছুতেই সে মনস্থির করতে পারছিল না।
রাত্রে শোবার আগে সে একটা প্রদীপ, দীপ জ্বালাবার চকমকি আর একটা ছুরি লুকিয়ে রাখলো শয্যার খুব কাছেই। একটা জিনিস সে ঠিক করেছিল, সে একবার স্বামীর মুখ দেখবেই। তারপরে হয় তাকে মারবে, নয় নিজেই মরবে নিজের হাতে।
গভীর রাতে এলো সেই রহস্যময় স্বামী। অনেক লীলাখেলা করে তারপরে যখন সে ঘুমিয়েছে, তখন সাইকি সাবধানে শয্যা থেকে উঠে চুপি চুপি পা টিপে টিপে গিয়ে প্রদীপ জ্বালালো। তারপরে এক হাতে প্রদীপ আর আরেক হাতে ছুরি নিয়ে এলো শয্যার কাছে। প্রদীপের আলো পড়লো শয্যায় নিদ্রিত ব্যক্তির মুখে।
না, মহানাগ নয়, এ যে অপরূপ রূপবান এক পুরুষ! স্বয়ং দেবতা কিউপিড! গভীর আবেগে থরথর করে কাঁপতে থাকলো সাইকি, হাতের ছুরি খসে পড়লো মাটিতে আর প্রদীপের থেকে কয়েক ফোঁটা গরম তেল ঝরে পড়লো কিউপিডের মর্মর পাথরের মতন শুভ্র উন্মুক্ত কাঁধে।
"আহ, আহ" বলে জেগে উঠলো কিউপিড। চোখ কচলে চারিদিকে দেখে সব বুঝতে পারলো মুহূর্তেই। কাঁধের পোড়া জায়্গাটা হাত দিয়ে চেপে সে বললো, "ওহ, সাইকি, চলে যেতে হবে আমায়। আমার কথা শুনলে না তুমি। কেন? এমন কেন করলে?"
সাইকি তার পায়ে আছড়ে পড়ে ক্ষমা চায়, কিন্তু কিউপিড বলে, "বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা থাকতে পারে না। আমি যাই।"
কিউপিড বাইরের অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, সাইকি পড়ে থাকে শূন্য প্রাসাদে।
(চলবে)
এখানে আগের পর্ব
মন্তব্য
এই হয়, এই হয়! সাইকি রে! হায় হায়! হায়! হায়! ... ...
- একলহমা
সেই। ঘোরপ্যাঁচ লেগে যায়। আর সেই প্যাঁচ লাগিয়ে লাগিয়ে গল্প বুনে চলে জীবন।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দিজ ওয়ান ইজ মাচ মাচ বেটার দ্যান দ্য প্রিভিয়াস ওয়ান। ভাল লাগলো পড়ে। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আত্মীয় স্বজন খালি ভুলভাল উপদেশ দেয়। ফাজিল একেকটা। বন্ধুবান্ধবই ভালো
পরের পর্বের জন্য আবার পপ্পন চলুক
..................................................................
#Banshibir.
এত পপ্পন খান কেন?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
পরের পর্বের অপেক্ষায় --- বেশি দেরী করবেন না আবার!!
না না, দেরি করতে চাই না।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
গতপর্ব দুম করে শেষ হয়ে গেছিল কোন ঘটনার সমাপ্তি ছাড়া তারচেয়ে এইপর্ব অনেক ভালো হয়েছে
কিউপিড ব্যাটা বদ আছে দেখছি, লীলাখেলায় আছে খোমা দেখাবার তালে নাই, সাইকি ভোলাভালা অবুঝ ছুটকি, বরের দর্শনে আকুল হবে না কেন?
পরের পর্ব কবে পাচ্ছি আপুনি?
ধন্যবাদ।
পরের পর্ব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেবার চেষ্টা করবো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এতু ছুডো কেনু ??
ছুডো কই? ধাপে ধাপে আউগায় তো!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তাড়াতাড়ি পরের পর্ব দেন । এই জন্যই ধারাবাহিক পছন্দ না
ইসরাত
ধারাবাহিক জিনিসটা আমারো তেমন---
হি হি হি
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
(পপ্পন)
এত পপ্পন খাইলে কোর্মা খাইবেন কেমনে?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
পীরবাবা তো পুলাউ-কুর্মার স্টক শেষ বলে হুমকি দিছে
পরের পর্বের অপেক্ষায়
খালি পপ্পন! আরে পুলাউ বিরিয়ানি ঘুটা কাবাব খাইব কেডা?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দারুন! চলুক - শেষ হলে পুরো গল্পটা আবার পড়ব -
সচলে কিছু সিরিজ মাঝে মাঝে পড়ে মনে হয় এই লেখা গুলোর ক্ষেত্রে নীড়পাতার নিয়ম টা শিথিল থাকত!
ফাঁসুড়ে পড়েও এমন মনে হচ্ছিল।
অনেক ধন্যবাদ। সময় সুযোগ পেলেই পরের পর্ব দিয়ে দেবো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চলুক, পড়ছি।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
পুড়ারমুখি সাইকি এ তুই কি কর্লি তোর বর ভালোমানুষ এত কিছু জানে, তুই সামান্য প্রবাদ বাক্যটি জান্তিসনে
এখন মর একা একা বিরহের গান গেয়ে!
ও দিদি সাইকি তো সবার ছোট, তবে ওর ধেড়ে হিংসুকে বড়দুই বোন কিভাবে শ্যালিকা হয় গো
'কিউরিসিটি কিল্ড দ্যা ক্যাট' তো বহু বহু রূপকথার প্লট, এরা নিজেরাই তার পাত্র-পাত্রী তো তাই ও কথা শোনেনাই...
আয়নামতি, কোনো লোকের স্ত্রীর সব বোনেরাই তো সেই লোকের শ্যালিকা, বড় বোন বা ছোট বোন।
মেয়েদের দিক থেকে অবশ্য আলাদা, স্বামীর ছোটো বোন ননদ আর বড় বোন ননাস।
আরে সাইকি কতদিন আর দম ধরে থাকবে? মানুষ তো! কতদিন ভয়ে ভয়ে অনিশ্চয়তায় কাটানো যায়?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এই কারণেই বলি, সংসারে অন্য লোকদের বুদ্ধি না নেয়াই ভালো।
সংসার খুবই জটিল জা্য়গা। কী থেকে যে কী হয়ে যায়-
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন