দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ক্ষোসা(Xhosa) জাতির আদি নিবাস, এই উপকথা তাদের।
এক গ্রামে এক ভারী সুন্দরী মেয়ে ছিল, নাম তার মঞ্জুজা। বালিকাবেলা থেকেই সে ছিল সঙ্গীতে আর নৃত্যে খুবই দক্ষ। আশেপাশের পাঁচটা গ্রাম থেকে বিবাহাদি আনন্দানুষ্ঠানে তার নৃত্যের অনুরোধ আসতো। মঞ্জুজা নিয়মিত নানা বিবাহ আসরে নৃত্যের আহ্বান পেয়ে যেত, আনন্দের সঙ্গে নৃত্য প্রদর্শন করতো।
এই মঞ্জুজা যখন তরুণী হয়েছে তখন তার সঙ্গে বিবাহ হলো তরুণ শিকারী মিথিয়ান এর। মিথিয়ান খুবই সাহসী আর সুন্দর তরুণ ছিল, আশেপাশের পাঁচ-সাতটা গাঁয়ের তরুণীদের বাপ-মা তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে মুখিয়ে ছিলেন। কিন্তু মঞ্জুজা সব দিক থেকেই যোগ্য পাত্রী, তাই সকলেই খুব খুশী হলো এই বিবাহে।
মঞ্জুজা আর মিথিয়ান সুখে সংসার করতে লাগলো। ক্রমে ক্রমে তাদের ঘরে দুটি পুত্র আর একটি কন্যা সন্তান হলো। খুবই সুখে দিন কাটছিল তাদের। মঞ্জুজা নিয়মিত নানা বিবাহ আসরে নৃত্যের আহ্বান পেয়ে যেত, আনন্দের সঙ্গে নৃত্য প্রদর্শন করতো। মিথিয়ান প্রায়ই বড় বড় শিকারীদলের সঙ্গে অরণ্যে যেত শিকারে। এইসব শিকার-অভিযানে কখনো সপ্তাহ ধরে তাদের গাঁয়ের বাইরে থাকতে হতো।
একবার মিথিয়ান ওরকম এক শিকার অভিযানে গেছে, মঞ্জুজা বাড়ীঘরের কাজ, ছেলেপুলে সামলানো-এইসবে ব্যস্ত। সামনে আবার তার অনেকগুলো বিবাহে নৃত্যের বরাত নেওয়া আছে। এরকম একদিন সকালে বচ্চারা ঘুমাচ্ছে, মঞ্জুজা উনানে আঁচ দিয়ে উঠোন নিকোনোর কাজে ব্যস্ত, রান্না বসাবে একটু পরেই---এরকম সময় এক থুরথুরে বুড়ী বাড়ীর দরজায় উপস্থিত। মঞ্জুজা তাড়াতাড়ি তাকে দাওয়ায় বসতে দিল পাতার আসন বিছিয়ে।
বুড়ী এসেছে তার নাতনির বিয়েতে মঞ্জুজাকে নাচের জন্য বরাত দিতে। কিন্তু সেদিন অন্য জায়্গায় নাচের কথা আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে ওর, মঞ্জুজা কীকরে বুড়ীর নাতনির বিয়েতে যাবে? সে খুব বিনয়ের সঙ্গে নিজের অসামর্থ্য জানায়। কিন্তু বুড়ী শোনে না, প্রথমে কাকুতিমিনতি পরে পীড়াপীড়ি করতে থাকে। মঞ্জুজা জানায় সে নিতান্ত অপারগ, আগে থেকে যেখানে কথা দেওয়া আছে, সেই প্রতিশ্রুতি সে ভাঙতে পারবে না কোনোমতেই।
বুড়ী এইবারে জ্বলে ওঠে, উঠে দাঁড়িয়ে অভিশাপে দিয়ে বলে, "অহঙ্কেরে বৌ, তুই আমার এত অনুরোধে ও রাজী হলি না? তোর স্বামী সাত মাথাওয়ালা সাপ হয়ে যাবে।" এই বলেই বুড়ী দাওয়া থেকে নেমে হনহন করে চলে যায়।
মঞ্জুজা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। কাজকর্মের কথা সব ভুলে যায়। ভাবে, কোথা থেকে এলো ঐ বুড়ী? কেনই বা অভিশাপ দিল? এ কেমন অভিশাপ? সত্যিই কি মিথিয়ান সাপ হয়ে যাবে?
এরপরে বাচ্চারা ঘুম থেকে উঠে পড়ে, মাকে ঐভাবে বসে থাকতে দেখলে ওরা হয়তো ভয় পাবে, কাঁদবে-তাই মঞ্জুজা অতিকষ্টে নিজেকে সামলিয়ে উঠে পড়ে, বাচ্চাদের মুখ ধুইয়ে জলখাবার খেতে দিয়ে রান্না বসায়। কিন্তু সারাদিনের শত কর্মের মধ্যে মধ্যে কেবলই তার মনের চোখে ভাসে সকালবেলার সেই ক্রুদ্ধ বৃদ্ধার মুখ আর তার অভিশাপ।
সন্ধ্যাবেলা ছেলেপুলেদের তাড়াতাড়ি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় সে, কিন্তু তার আর ঘুম আসে না। বিছানায় একবার এপাশ একবার ওপাশ করতে থাকে। কী করবে সে যদি সত্যিই ঐ শাপ ফলে যায়?
একসময় ক্লান্তি জয়ী হয়, সে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের মধ্যে সে স্বপ্নে দ্যাখে তার বহুকালমৃতা পিতামহীকে, সেই বৃদ্ধা হাসিমুখে এসে ওকে বলে, "অ নাতনি, তুই ভয় পাইস না। তর স্বামী সাপ হইয়া গেলে তারে লুকাইয়া রাখিস গোলাঘরে। যেন কেউ না দ্যাখে। তুই সাত বিয়াবাড়ী নাচ দেখাইলেই তর স্বামী আবার মানুষ হইয়া যাইবো।" এরপরেই বৃদ্ধা মিলিয়ে যান, ঘুম ভেঙে যায় মঞ্জুজার। সে উঠে বসে ভাবে, সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল? এত স্পষ্ট স্বপ্ন?
পরদিন সন্ধ্যেবেলা মিথিয়ানের ফেরার কথা। মঞ্জুজা বিকাল-বিকাল রান্নাবাড়া সেরে ফেলে মিথিয়ানের আর তার খাবার ঢেকে রেখে ছেলেমেয়েদের তাড়াতাড়ি খাইয়ে দিয়ে শুইয়ে দেয়। কিন্তু ছেলেমেয়েরা ঘুমায় না, বাবা ফিরবে বলে তাদের আগ্রহের শেষ নেই, ঘুম-ঘুম চোখ ছোটো ছোটো হাতে ডলে ডলে তারা জেগে থাকতে চায়। বারে বারে ওদের মাকে প্রশ্ন করে, "মা, বাবা কখন আসবে?" ওদের মা কেবলই বলে, "আসবে বাছারা, তোদের বাবা একটু পরেই আসবে।"
অপেক্ষায় কেটে যায় অনেক সময়, মাঝরাত পেরোতে যায় কিন্তু মিথিয়ান ফেরে না। বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে ততক্ষণে। মঞ্জুজা জেগে শুয়ে থাকে আর ভাবে সত্যি কি মিথিয়ান সাপ হয়ে আসবে?
ভোররাতে দরজায় ঠক ঠক শুনে মঞ্জুজা ধড়ফড় করে উঠে দরজা খুলতে যায়। দরজা খোলার আগে দেখে নেয় বাচ্চারা ঘুমাচ্ছে কিনা। তারা ঘুমাচ্ছে, নিশ্চিন্ত।
দরজা খুলে সে দেখলো মিথিয়ান দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু সে যেন অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে টলছে। তার চোখ ঘোলা, মুখে অদ্ভুত আওয়াজ, তার জিভ কেমন লম্বা সরু হয়ে গেছে, মাঝে মাঝেই বেরিয়ে আসছে। দেখে শিউরে উঠলো মঞ্জুজা।
ধরে ধরে সে মিথিয়ানকে শস্য রাখার গোলাঘরে নিয়ে গেল, সেখানেই মিথিয়ান পুরোপুরি সাতমাথা সাপ হয়ে গেল। মঞ্জুজা তাকে একটা বড়ো খালি গামলার মধ্যে থাকতে দিল, গামলার ঢাকনার মধ্যে কয়েক জায়্গা ভেঙে দিল, যাতে কিনা সাতমাথা সাপ শ্বাস নিতে পারে। তারপরে তাকে সাবধানে খেতে দিয়ে গামলার ঢাকনা বন্ধ করে গোলাঘরের দরজা বন্ধ করে তালা দিয়ে চাবি নিজের কাপড়ের প্রান্তে বেঁধে নিজের ঘরে ফিরলো সে।
বাচ্চারা ঘুম থেকে উঠে জানতে চায় বাবা ফিরেছে কিনা, মঞ্জুজা ওদের বোঝায় যে ওদের বাবা ফিরতে পারে নি, খবর পাঠিয়েছে যে কয়েকদিন পরে ফিরবে সে।
(আগামী পর্বে সমাপ্য)
মন্তব্য
এমন যায়গায় থামালেন!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কী করি কন, গল্প রইয়া সইয়াই শোনা ভালো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তাপ্পর কি? তাপ্পর বলো আপু!
আমার আপুজী (নানী) অনেক সুন্দর করে রূপকথার গল্প শোনাত। মনে হচ্ছিল আপুজী গল্প শোনাচ্ছে!
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
ধন্যবাদ মেঘা।
আরে ধৈর্য ধরো, বলছি ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এক মাথাই তো এনাফ,সাত মাথার দরকার কি ছিল?
অপেক্ষয়ে থাকলাম।
শাকিল অরিত
সেই তো। এক মাথাতেই অবস্থা কাহিল, তার উপরে সাত মাথা !
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বজ্জাত বুড়ির বলিহারি অভিশাপ। পটাং করে শেষ হয়ে গেল
শেষ হয় নি। ধৈর্য ধরো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আগ্রহ নিয়ে পড়ছিলাম। হঠাৎ ধুপ করে আছাড় খেলাম। পরের পর্ব তাড়াতাড়ি আসুক।
আসবে আসবে, পরের পর্ব এলো বলে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ঠিক হইলনা কাজটা! বড়ই চিন্তায় রইলাম! বয়স হইসে, হার্টে চাপ লওন ভালা না! তাড়াতাড়ি শেষ দিও রে দিদি!
- একলহমা
চাপ লইয়েন না, চাপ লইয়েন না। আরে সবই গপ্পো তো !
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আহহা শেষ করলেন না! পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আসছে আসছে, পরের পর্ব শীঘ্রই আসছে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ধুত্তোর, এমন যায়গায় কেউ শেষ করে!!!
কী করি কন, রইয়া সইয়া শোনেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এইসব কি করেন? , এমন জায়গায় শেষ করলেন, তাড়াতাড়ি পরের পর্ব দেন নাইলে কিন্তু আমিও আপনাকে অভিশাপ দিব
ইসরাত
এইডা কী কও ইসরাত?
আসতেছে আসতেছে পরের পর্ব আসতেছে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
সেইরাম তো!!!
---------------------
সুবোধ অবোধ
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খুব তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় পর্ব চাই আপু!
- এস এম নিয়াজ মাওলা
হ্যাঁ হ্যাঁ দিবো দিবো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
শঙ্কুর খগম গল্পটা মনে হচ্ছে !
facebook
সত্যজিতের "খগম" গল্পটা আমারও মনে পড়ছিল এই কাহিনিটা পড়ে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
---------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
নতুন মন্তব্য করুন