একটা ছোট্টো হাতঘড়ি, ঘড়ির মুখটা উপবৃত্তাকার মসৃণ নীলাভ, তার উপরে তিনটে সোনালি কাঁটা। তিনটে কাঁটাই থেমে আছে। ঘড়ির সোনালী ধাতব ব্যান্ডটা কারুকার্যময়, হঠাৎ দেখলে মনে হয় যেন ব্রেসলেট। মনোলীনার খুব প্রিয় ছিল এই হাতঘড়িটা।
টেবিলের উপরে একটা ছোট্টো চিরকুট এই ঘড়িটা দিয়ে চাপা দেওয়া ছিল, চিরকুটে লেখা ছিল, "আমি চলে গেলাম, তোমরা ভালো থেকো।" ব্যস, আর কিচ্ছু না। মনোলীনার হাতের লেখা চিঠি, কিন্তু তাতে নাম সই করে নি সে। হয়তো ভেবেছিল যাদের জন্য লেখা তারা তো চেনে তার হাতের লেখা, নাম দিয়ে কী হবে? কিংবা হয়তো ভেবেছিল তাদের কাছ থেকে সে যখন চলেই যাচ্ছে, নামটুকু রেখে গিয়ে কী হবে? কেজানে কী ভেবেছিল!
মনোলীনাকে আর খুঁজে পায় নি তার আপনজনেরা। পুলিশে তারা খবর দেয় নি, মনোলীনার বয়স ছিল উনিশ, সে স্বেচ্ছায় বাড়ী ছেড়ে গেছে, কেউ তাকে ভুলিয়ে নেয় নি। পুলিশে খবর দিলে হাজার হ্যাপা, সামাজিকভাবেও জটিলতা অনেক, তাই মনে হয় ওর বাবা-মা আর অন্য কোনো আত্মীয়ও আর সেসব চেষ্টা করেন নি।
নিরুদ্দিষ্টা কন্যারা কি কখনো ফেরে? নিরুদ্দিষ্ট পুত্রেরা মাঝে মাঝে ফেরে শোনা যায়, সাদরে গৃহীতও হয়, তাদের নিয়ে লোককথাও রচিত হয়। নিরুদ্দিষ্টা কন্যার ফিরে আসার গল্প কি আছে কোথাও যেখানে সে সাদরে গৃহীত হয়েছিল আপনজনেদের কাছে?
মনোলীনাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। সে কোথায় চলে গেল অদৃশ্য রক্তপাতের সমস্ত স্মৃতি নিঃশেষে মুছে নিয়ে?
মনোলীনার অন্তর্ধানের একুশ বছর পরে তাকে খুঁজতে বার হলো তার ভাইঝি, সুতীর্থা।
বিপন্ন স্বপ্নের ঋতু, ছিন্ন পালকে আলতা মাখার তিথি-
তৃণাঞ্চলে ঝরে পড়া টপটপে রক্ত-স্মৃতি
মরিচগন্ধী গ্রীষ্মদুপুরের বালি-বালি তৃষ্ণা-
গালের উপরে শুকিয়ে যাওয়া স্বেদকণার লবণ।
উপরে তামাটে আকাশে গলন্ত ধাতুর মতন অসহ্য রৌদ্র,
উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিমে কংক্রীটের বিস্তৃত জঙ্গল-
যেখানে লুকোবার কোনো জায়্গা নেই।
একটুকরো কাগজ উড়ে যাচ্ছে,
তাতে ছিলো না জন্মানো কবিতার কয়েকটা পংক্তি,
সেই মৃত ভ্রূণটিকে বুকে নিয়ে চলে
যাচ্ছে ধাত্রী, ওদের পিছনে সূর্যাস্তের লাল আকাশ।
সেদিকে চেয়ে থাকি জ্বরঝাপসা চোখে।
অন্য এক পৃথিবীর স্বাদ লাগে জিভে।
রাত্রি কুহকময় যাদুকর, এসে দাঁড়ায় আমার অগ্নিকুন্ডের পাশে-
ওর এক হাতে পাহাড়, আরেক হাতে সমুদ্র-
রক্তলাল পশ্চিমের আকাশের উপরে ওর সিলুয়েট,
মন্ত্রমুগ্ধের মতন চেয়ে চেয়ে দেখি এক এক করে
নক্ষত্র ফুটে উঠছে ওর মাথার চুলে, উত্তরীয়ে, বাহুতে, বুকে-
মন্তব্য
নিরুদ্দিষ্টা কন্যার ফিরে আসা হয় কি?! সত্যিকারের ফেরা হয় না তাদের।
মন খারাপ করা ভাল লেখা
ধন্যবাদ গান্ধর্বী।
অ: ট: আপনার নিকটি একটা বইয়ের কথা মনে পড়ায়, বাণী বসুর "গান্ধর্বী"। মনে পড়ে অপালাকে, সোহমকে---
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ওটা আমার খুবই প্রিয় একটা বই।
আমারও খুব ভালো লাগতো "গান্ধর্বী" বইটা। সেই কতকাল আগে যখন প্রথম পড়েছিলাম। কেজানে এখন কেমন লাগবে!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আলাদা করে শুধু কবিতা অত্যন্ত ভাল লেগেছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এক লহমা, অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নিরুদ্দিষ্টারা ফেরে না, তাদের ফেরা হয় না কখনোই।
মন খারাপ করা ভাল লেখা!
গান্ধর্বী
মাসুদ সজীব
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ফেরা হয়, ফেরা হয়না।
____________________________
ধন্যবাদ।
কারুর পথ উপবৃত্ত, ফিরে ফিরে আসা যায়। কারুর পথ একেবারে প্যারাবোলা হয়ে বেরিয়ে গেছে, কেবলই দূরে সরে সরে যেতে হয় সেই পথে।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
মনখারাপ হয়ে গেল, আশালতা?
নাও ঝালমটর খাও।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দূর, মনখারাপ করানো লেখা আর লিখবো না। বরং উপকথা সিরিজই লিখি গিয়ে যাই।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন