নদীর একেবারে ধারেই গাছটা। পাড় থেকে জলের উপরে ঝুলে থাকা শিকড় কাঁপে ঢেউ লেগে লেগে। মাঝে মাঝে জলের জোর ঝাপটা এসে ভিজিয়ে দেয় ওদের। ঝাপটা শেষ হলে ফোঁটা ফোঁটা মুক্তোর মতন জলবিন্দু ঝরতে থাকে। স্নান-অবশেষ জলকণা। অনেক উপরে রোদ্দুরে কাঁপে ওর নতুন পাতারা। নরম সবুজ রঙ তাদের। ওরা জন্মেছে এই বসন্তদিনে।
যেখানে ক্লান্ত, আহত ঈশ্বর বসে আছে নতমুখে-
সাদা পাখি হয়ে উড়ে এসে ঈশ্বরী
ডানার হাওয়ায় জুড়িয়ে দেয় সব তাপ-
যত্নে মুছিয়ে দেয় অশ্রুকণা।
এখন অসংখ্য ভ্রমরের গুঞ্জন তাদের বাগানে
পাখিরাও সঙ্গীতমুখর।
দীর্ঘ অন্ধকার মৃত্যুবিষাদদীর্ণ শীতশেষে
আবার এসেছে সোনালী ভালোবাসার সকাল।
সেইসব দিন-কোলাহল ম্লান হলে সন্ধ্যাতারাটির মতন
ধীরপায়ে জলছাপ রেখে রেখে আসে যে,
তার মুখ স্পষ্ট করে দেখিনি কখনো।
তার ধূপছায়া রঙের শাড়ী, পাড়ে সবুজ কল্কা-
বিষন্ন চোখ, শঙ্খের মতন সাদা কপাল
চূর্ণকুন্তলে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু জল-
সন্ধ্যাস্নানের অবশেষ।
ওকে কোনোদিন কথা বলতে শুনিনি
কোনোদিন গান করতে শুনিনি-
জানি না ওর কন্ঠস্বর কেমন।
শুধু স্বপ্নের ভিতরে সেই অশ্রুত স্বর
কচি পাখির ডানার মতন কাঁপে।
ও ই কি সেই সাদা পাখি হয়ে উড়ে আসা ঈশ্বরী?
আদিগন্ত করুণা-ছলছল চোখে চেয়ে
আপন ডানায় মুছে নেয় আহত ঈশ্বরের বেদনা?
মন্তব্য
শুরুর কথা বাদ দিলে শুধু কবিতাটাই অসাধারণ!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ পান্ডবদা। আসলে কবিতা দিলে প্রথম পাতাতেই সবটা ছড়িয়ে যা্য বলে ঐ কয়েক লাইন কথা।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
রিল্কে লিখেছিলেন 'ভেনাসের জন্ম'। সেখানে সমুদ্র হতে ভেনাসের উঠে আসবার একটি মুগ্ধকর চিত্রকল্প ছিল। আর উপরের চরণকটিতে যেন এক বিষণ্ণ শঙ্খমালার উঠে আসার ছবিটি দেখতে পাই। ছবিটি করুণ তবে বড়ই মধুর!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ রোমেল চৌধুরী। শঙ্খমালা, কাজলরেখা, ধূপছায়া---কথাগুলোর মধ্যেই কেমন করুণ মধুরতা! তাই নয়?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
শুরুর লাইনগুলি আর কবিতা- দুটোই অসাধারণ!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খুব ভালো লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ঈশ্বরী উড়ে এসে বেদনা মুছে নিলে, তবেই ত ঈশ্বর হলেন ঈশ্বর, তা না হলে কেউ ন'ন, নিছক-ই ক্লান্তির অশ্রুত স্বর।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ঠিক। একদম ঠিক।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
শুরুর কথাও কবিতাটিকে একটি আলাদা মাত্রা দিয়েছে। ভাল লাগল কবিতাটি, তবে ‘ ওই কি সেই সাদা পাখি হয়ে উড়ে আসা ঈশ্বরী’ বাক্যটি বুঝতে পারিনি।
চার্বাক সুমন
অনেক ধন্যবাদ চার্বাক সুমন।
সকালে সাদা পাখির কথা ছিল, তারপরে দেখবেন সন্ধ্যাবেলার কথা হচ্ছে কবিতায়, "দিন-কোলাহল ম্লান হলে সন্ধ্যাতারাটির মতন/ ধীরপায়ে জলছাপ রেখে রেখে আসে যে, " এই যে আরেকজন, যার মুখ স্পষ্ট করে কখনো দেখা যায় না, "তার ধূপছায়া রঙের শাড়ী, পাড়ে সবুজ কল্কা-/বিষন্ন চোখ, শঙ্খের মতন সাদা কপাল/চূর্ণকুন্তলে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু জল-/সন্ধ্যাস্নানের অবশেষ ", এই আরেকজনকেই দেখে কথকের মনে হচ্ছে, কোথায় যেন ঐ সাদা পাখির সঙ্গে তার মিল, কারণ পাখিটি তো আসলে ঈশ্বরী, যে তার আহত স্বামীকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য পাখিরূপ ধরেছিল (মিশরের মিথলজিতে)।
তবে আসলে কী জানেন, কবিতা ব্যাখা করা যায় না, এই যা বললাম এটা একটা সম্ভাবনামাত্র, বাকী থাকে আরো অনেকরকম সম্ভাবনা। সত্যি বলতে কী যখনই একজন পড়বেন, তিনি নিজের মতন করে অনুভব করবেন, বুঝে নেবেন। সেখানে অন্যের বলা ব্যাখ্যা অর্থহীন।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন