তোমার চোখ দুটি ভারী আশ্চর্য ছিল। কেমন যেন গভীর, অতল, একটু উঁকি দিলেই মনে হতো টুপ করে পড়ে যাবো। সেই চোখে কখনো চিকমিক করতো রোদ্দুর, কখনো বা মেঘলা হয়ে যেত, কখনও আবার তারা ঝিকমিক করতো। তবু সেই চোখের অপার রহস্যের দুয়ার কোনোদিন খুলতো না আমার কাছে।
শুধু একবার, সেটা খুব ভোরেরবেলা ছিল- তখনও সূর্য ওঠেনি, আকাশে ঊষার আলো। তুমি একলা দাঁড়িয়েছিলে পুবের অলিন্দে, আমি ঘুমভাঙা চোখ ডলতে ডলতে গিয়ে তোমার পাশে দাঁড়ালাম। তুমি ফিরে তাকালে। তখনই তোমার চোখের মধ্যে দেখলাম এক নিতল দিঘি, অসীম রহস্যের মতন টলটল করছে। সেই চোখই মনে করে রেখেছি। শেষবার যখন দেখা হলো, তখন তোমার চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে সব রহস্য চিরকালের মতন ভিতরে নিয়ে।
তোমার চোখের ভিতরের দিঘিটিকে
দেখতে পাই কোনো কোনো ভোরবেলা-
আকাশে তখন ময়ূরকন্ঠী রঙ
দূরের গাছে ঘুমভাঙা পাখি
ডেকে উঠছে সুরেলা গলায়।
সেইসব আশ্চর্য ভোরে তোমার চোখের
মধ্যে লুকানো শান্ত দিঘিটিকে দেখতে পাই
কাজলকালো জল সেখানে অসীম রহস্যের
মতন চুপ করে আছে।
পুবের মেঘে গোলাপী রঙ লাগলেই
ভোরের রাগিণীর আলাপ ভেসে আসে
অলকানন্দার ঘর থেকে।
ঐ যে সূর্যমুখী-মাঠের পাশের ছোট্টো বাড়ীটা ওদের,
ছাদের চিলেকোঠার পাশে ওর গানঘর।
ওর সঙ্গীত-সাধনা প্রতিদিনই চলে নিয়ম করে,
কিন্তু আমার শোনা হয় কোনো কোনো আশ্চর্য ভোরেই শুধু-
যখন তোমার চোখের ভিতরের দিঘিটিকে দেখবো বলে
শেষরাতে উঠে আসি ঘুমের ওম থেকে।
একদিন টুপ করে ডুব দেবো ঐ দিঘিতে-
তোমার নিতল নীল রহস্যের ভিতরে।
মন্তব্য
কবিতা লিখতে সবাই কম বেশী চেষ্টা করে, যারা লেখালেখি করে তারাও, যারা করেনা তারাও। কিন্তু কবিতা ধরা দেয় না এত সহজে। গল্প চাইলে সবাই হয়তো লিখতে পারবে, খারাপ ভাল যাই হোক; কিন্তু চাইলেই ছন্দ মেলানো কিছু লাইন কবিতা হয়ে যায় না।
খুব বেশি কবিতা আমি পড়িনা, তবে এটা আমার পড়া ভাল কবিতা গুলার মধ্যে একটা। এমনকি আপনার বর্ণনা আমার এত ভাল লেগেছে, যে মনে হচ্ছে তা দিয়েই একটা কবিতা হয়ে যেত। অসাধারণ। আরো লিখবেন। নিশাচর জীব।
অনেক ধন্যবাদ রইলো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কবিতায় প্রকৃতির নিসর্গতা আর মানবিক আকাঙ্খার রুপময় মিলন ঘটেছেঠ । খুব ভালো লাগলো।
মাসুদ সজীব
ধন্যবাদ ভাই।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপনার গদ্য এবং পদ্যের সমন্বয়ে লেখাগুলো অসাধারণ লাগে। অতলস্পর্শী মায়াময় লেখা।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অনেক ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হুম্ ম্ ম্ "একদিন টুপ করে ডুব দেবো" হুম্ ম্ ম্
নাঃ দিব না। আমি বাঁচতে চাই
খুনসুটি করতে ইচ্ছে হল, তুলিদিদি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেক ধইন্যা নজরুল।
আপনার নতুন লেখা তো সেরকম বেশি পাই না আজকাল! খুব ইচ্ছা করে আপনাদের সেই মুক্তধারা নাটক বিষয়ে জানতে, সেই যে অনেক আগে বলেছিলেন, সেই অভিজিৎ, সেই বৈরাগী, সেই উত্তরকূটের মুক্তধারা ঝর্ণামুখের বাঁধ---সেই নাটক করতেন আপনারা-সেই গল্প তো আর লিখলেন না!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অসাধারণ নিতল কাজলদিঘির কথা পড়ে
কেন জানিনা প্রিয় এ গানটি মনে এলো! কেমন আছো রে দিদি? ভালু থেকো
এই আছি গো। তুমি ভালো তো?
গানযুক্ত কমেন্টের জন্য ধইন্যা। গানটা তো অসাধারণ এমনিতেই, গাওয়াও দারুণ।
:-)
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন