মায়াহরিণ

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: বুধ, ২১/০১/২০১৫ - ৬:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাঘদুপুরের ফড়িংডানা-রোদ্দুরে আস্তে আস্তে মিশে যায় তোমার জাফরানি ওড়নার রঙ। দিঘির পাশের নারকেলগাছগুলোর নিচ দিয়ে যে পথটুকু চলেছে আলোয় ছায়ায়, সেই পথের নাম ছায়াবিতান । এখন ঘুঘুর ঘুমেলা ডাকে ভরে আছে এই রাস্তা। আর একটু পরে এই পথ দিয়ে তুমি আসবে।

আমি পথের পাশেই দিঘির ঘাটে বসে থাকি। রৌদ্র ছায়া জল বাতাস বৃক্ষমর্মরে মিশে লুকিয়ে থাকি। অপেক্ষার দীর্ঘ প্রহর জুড়ে অক্ষরের পর অক্ষর বসিয়ে শব্দ তৈরী করি, শব্দের পর শব্দ বসিয়ে পংক্তিমালা তৈরী করি। কিন্তু তার মধ্যে তোমাকে ধরতে পারিনা।

চন্দ্রোপলমণির মতন তোমার ঘুমন্ত নখে
রক্তের রহস্যময় ফিসফিসানি।
তোমার মুখ মেঘের ডানায় ঢাকা-
তোমার করতলে মায়া-কবুতর।

ছড়িয়ে পড়া বিচ্ছিন্ন অক্ষরগুলো
ধীরে ধীরে জোড় বাঁধছে,
ওরা শব্দ হয়ে উঠবে, বাক্য হয়ে উঠবে-
নৈঃশব্দের সোনালি মোড়ক খুলে
বেজে উঠবে রুমঝুম রুমঝুম নূপুরধ্বনি।

কোথাও অরণ্যে আভাস লেগেছে হেমন্তের
নীল আয়নার মতন মসৃণ আকাশের তলায়
আরক্ত হয়ে উঠছে গাছেরা, আনখশির।

কোথাও হাজার বছরের ঘুম ভেঙে
জেগে উঠছে আগুনপাহাড়
ঢাকনা খুলে ফেলে লাফিয়ে বেরিয়ে আসছে
সোনালী লাভাস্রোত।
হাজার বছরের গাছেরা পুড়ে যাচ্ছে।

অনেক দূরে, ধ্রুবতারার আলোর নিচে
হরিণ পায়ে ছুটে যাচ্ছে তন্দ্রাবতী,
তৃষ্ণার্ত অন্তর্দহণের অতল অন্ধকার
পেরিয়ে উড়ে যাচ্ছে অচেনা আকাশের দিকে।

জোড় বাঁধা অক্ষরেরা এইসব চেনা ও অচেনা
গল্পগুলো বলতে থাকবে
বলতে থাকবে
বলতে থাকবে-

আরো অনেক অনেকদিন আগে, যেন গতজন্মের বেলাতটে একবার দেখেছিলাম তোমাকে। কেমন ছিলে তুমি তখন?

উজ্জ্বল কমলারঙের সূর্যাস্তের সুরায়
যখন ডুবে গেল পথ, পাহাড়, নদী-
তখন তুমি উপত্যকা পার হয়ে
হেঁটে হেঁটে আসছিলে।

গহীন রক্তচন্দনের আল্পনা ছিল
তোমার কপালে, গালে, চিবুকে-
আমি তখন জলকুন্ডে পাখিদের
বেলাশেষের স্নান দেখছিলাম ।

তখনই অন্য কোথাও
বৃষ্টিধাত্রী এক আকাশ ছায়া ফেলেছিল
অরণ্যহৃদয়ের হ্রদে-
ডানা ঝটপট করতে করতে হ্রদ থেকে
উড়ে যাচ্ছিল আকাশবিলাসী রাজহংস রাজহংসী-
ওদের ডানা থেকে ঝরে যাওয়া
জলবিন্দুরা মিলিয়ে যাচ্ছিল হ্রদে।

আরো অন্য কোথাও দূরে-
বৃষ্টির ঝরোখার আড়ালে
কৃষ্ণা রাজকুমারীর মৃত্যুনীল ঠোঁট,
বন্ধ চোখের পাতা ছুঁয়ে উড়ে যায় হাওয়া-
অর্ধনিমগ্ন চেতনায় ভেসে আসে রাতের রাগিণী।

মায়াহরিণ, বলতে পারো
এইসব গহীন চেনা ও অলীক অচেনাকে
কেমন করে একই মালায় গাঁথতে হয়?

******


মন্তব্য

মাসুদ সজীব এর ছবি

দারুন লাগলো হাততালি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মাসুদ সজীব। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

পড়তে খুব ভাল লাগছিল। আবার পড়বো।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সুলতানা সাদিয়া। আবার পড়ে কেমন লাগলো জানাবেন। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

নৈঃশব্দের ভেতর শব্দের ঝুমঝুম বাজনা বাজে যখন এমন কবিতা পড়ি।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

তুলিরেখা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
অনেক ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

গগন শিরীষ  এর ছবি

অসম্ভব সুন্দর লিখেছেন! সত্যি বলছি আমি রীতিমত মুগ্ধ!

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে গগন শিরীষ। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।