তেত্রিশ বানর নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড হয়ে যাবার পর আবু ইউসুফ এদের বিদায় করার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল। ব্যাটা বদমাশ আমাকে বলে,
- তোর গত জন্মদিনে তো আমি কিছু দেইনি। এই তেত্রিশ বানর আমি তোর জন্মদিনের উপহার দিলাম
আমি বললাম,
- শুধু গত না বিগত কোন জন্মদিনেই তুই আমাকে কিছু দেস নাই। আগত কোন জন্মদিনেও কিছু দেয়া লাগবে না। আমারে মাফ কর।
কিন্তু তারপরেও ব্যাটা পীড়াপীড়ি শুরু করলো। বাঙ্গালী মাগনা পেলে আলকাতরা খায়, আর সামান্য কিছু সন্ত্রাসী বানর আর এমন কি। ইউসুফ কাকুতি মিনতি করে আমাকে ঢেঁকিটা প্রায় গিলিয়েই ফেলেছিল এইসময় অন্য বুদ্ধি মাথায় আসলো। বললাম,
- তোর ভুলটা কি হয়েছে জানিস? বানরকে কবিতা শিখাতে যাওয়া। ছাগল দিয়ে যেমন হাল চাষ হয়না, মুরগি দিয়ে যেমন কাচ্চি হয়না, জামাত দিয়ে যেমন ইসলাম হয়না, তেমনি বাঁদর দিয়ে কবিতা হবে না। বানরের কাজ নৃত্য করা। তুই বরং তোর বানরদের নাচ শেখা। তবে যাই করিস না কেন আগে আবার ব্রেন ইস্টিমুলেশন দিয়ে এদের রিসেট করে দে। এর পরে ন্যাচারাল পদ্ধতিতে কাজ কর। আর ওইসব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যাসনে।
- কিভাবে নাচ শেখাবো তাহলে?
- বানর জন্ম থেকেই নাচার ক্ষমতা নিয়ে জন্মে। শেখানোর কিছু নাই। বরং তুই ডুগডুগি বাজানো শেখ।
ইউসুফের এবার মনে হয় কথাটা মনে ধরল। এক সপ্তাহ পরে ইউসুফের বাসায় গিয়ে হতবাক। সে এক দেখার মত দৃশ্য। ইউসুফ মনে প্রাণে ডুগডুগি বাজিয়ে যাচ্ছে আর তার তাকে ঘিরে তেত্রিশ বানর গোমড়া মুখে বসে আছে। কেউ নাচে না। ভুল বললাম, তেত্রিশ না বত্রিশ। এদেরকে রিসেট করার পরেও নাই সেই দুবলা তেত্রিশ নাম্বার এর উপর এদের রাগ যায় নাই। পিটিয়ে মেরে ফেলছে। আমাকে দেখে ইউসুফ হতাশ গলায় বলল,
- হাজার চেষ্টা করেও এদের নাচাতে পারলাম না রে।
আমি বললাম,
- ডুগডুগি ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে চেষ্টা করেছিস?
বলে,
-বাঁশি, তবলা, হারমোনিয়াম সবকিছুই চেষ্টা করেছি।
তাকিয়ে দেখি ব্যাটার ঘরে আসলেই নানা রকমের বাদ্যযন্ত্র পড়ে আছে।
- মন খারাপ করিস না। তোকে আগে বুঝতে হবে বাঁদর কেন নাচে?
কথাটা বলে আমার নিজের মনেও এই গভীর প্রশ্নের উদয় হল, বাঁদর কেন নাচে? ভেবেচিন্তে কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না। তবে কেন নাচে না জানলেও কিভাবে নাচানো যায় তার আইডিয়া মাথায় আসলো।
আমি বললাম,
- সফদর আলীর জংবাহাদুর এর কথা মনে আছে? বানরকে পোষ মানাতে হলে তাদেরকে কিছু পুরস্কার দিতে হয়। তাদের মনের কথা শুনতে হয়।
আমি হাসিখুশি এক বানরের সামনে গিয়ে একটা বিস্কুট ধরলাম। তারপর নিজে একটু লাফ ঝাপ করে ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম এরকম করে একটু নৃত্যকলা করলে ওর ভাগ্যে এই বিস্কুট জুটবে। বেশীক্ষণ চেষ্টা করা লাগলো না। দুই তিনবার চেষ্টা করার পরেই ব্যাটা বুঝে গেল। একটু নাচ দেখিয়ে আমার কাছ থেকে বিস্কুট নিয়ে গেল। কাণ্ড দেখে ইউসুফ মুগ্ধ। বলে, দোস্ত তুই একটা জিনিয়াস।
আমি আসলেই কত জিনিয়াস সেটা বোঝার জন্য পরের সপ্তাহে আবার গেলাম ইউসুফ এর বাসায়। ইউসুফকে দেখে বেশ খুশী মনে হল। কিন্তু হাসিখুশি চেহারার ফাঁকে একটা বিষণ্ণতা লুকিয়ে আছে বলে ক্ষণিকের জন্য মনে হল। বলে,
- এক সপ্তাহের মধ্যে সবাই নাচ শিখে গেছে। আয় তোকে দেখাই।
প্রথম বানরকে ডেকে ইউসুফ একখানা বিস্কুট দেয়ার চেষ্টা করলো। দেখি ব্যাটা নেয় না। দুইটা সেধেও লাভ হলো না। শেষমেশ চারখানা বিস্কুটে রফা হল। চারটা বিস্কুট সাবাড় করে ব্যাটা দিব্যি কোমর দুলিয়ে আমাদের নাচ দেখিয়ে গেল। আমি বললাম,
- এই ব্যাটাকেই না আমি প্রথম দিন একটা বিস্কুট দিয়ে নাচিয়ে নিলাম?
ইউসুফ হতাশ গলায় বলে,
- আর বলিস না, দিনকে দিন এদের আবদার বাড়ছে।
এরপর একে একে ইউসুফ তার বাকি বানরদের ডাকে। কেউ এক হালি কলা, কেউ দুই পিস কেক, কেউ এক গোছা আঙ্গুর, কেউবা এক প্যাকেট চানাচুর আদায় করে ইউসুফকে নাচ দেখিয়ে যায়। কারো কারো দেখলাম খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে ইউসুফের প্রতিই আগ্রহ বেশি। একজন নাচ দেখানোর আগে ইউসুফের ঘাড়ে উঠে কিছুক্ষণ ঝাপাঝাপি করে, আরেকজন ইউসুফের চুল ধরে আচ্ছা করে টানাটানি করে, আর আরেকজন ইউসুফের গালে ঠাশ ঠাশ করে গোটা দুই চড় বসিয়ে গেল।
এরপরে মোটাসোটা এক বাঁদর ইউসুফের দিকে এগিয়ে আসাতে ইউসুফের চেহারাটা দেখি কেমন বিমর্ষ হয়ে গেল। বলে,
- এইটা একটু বেশি ত্যাঁদড়। আবদার বেশি।
বলে ইউসুফ দেখি তার প্যান্ট খোলা শুরু করলো। আর বাঁদরটা একটা আনন্দসূচক শব্দ করে ইউসুফের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।
আমি, করিস কি করিস কি বলতে না বলতেই দেখি ঘটনা যা ঘটার ঘটে গেল। বাঁদর তার কাজ শেষ করে ইউসুফকে দশ সেকেন্ডের একটা যেনতেন নৃত্য দেখিয়ে নিজের জায়গায় ফেরত গেল। ইউসুফ প্যান্ট পরে বসতে না বসতেই দেখি আরেকটা দশাসই বানর ইউসুফের কাছে এসে হুপ হাপ শব্দ করে আঙ্গুল তুলে আমাকে দেখিয়ে কি যেন বলার চেষ্টা করছে। ইউসুফ প্রথমে তীব্রভাবে মাথা নেড়ে না না বললেও একটু পরে দেখি হাল ছেড়ে দেয়। আমার দিকে তাকিয়ে লাজুক মুখে বলে, দোস্ত ইয়ে মানে তোর প্যান্টটা যদি একটু খুলে ইয়ে মানে নাইলে এইটা নাচবে না।
আমি ওরে নারে বলে পড়িমরি করে দৌড় দিয়ে ইউসুফের বাড়ীর ত্রিসীমানা ত্যাগ করলাম। এজন্যেই জ্ঞানী লোকেরা বলেছেন, বাঁদরকে মাথায় তুলতে নেই।
(শেষ)
................................................................................................................
আমার হাতে চাপাতি নেই যে কাউকে কোপাবো, হাতে বন্দুক নেই যে গুলি করবো, কাছে এসিড নেই যে ছুড়ে মারব। সম্বল একখানা ল্যাপটপ। তাই যখন অসহায় লাগে কীবোর্ড এর উপর রাগ ঝাড়ি। এটা নিতান্ত সাধাসিধে একটা সাইন্সফিকশন গল্প। আমার বন্ধু সুব্রত শুভ সহ বাকি সব আটককৃত ব্লগারদের উৎসর্গ করলাম এই গল্প। আমাদের চোখের সামনেই কার্টুনিস্ট আরিফ কে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে ধর্ম অবমাননার অজুহাত দিয়ে। ভোট রাজনীতির খেলায় আর যেন এরকম বলির পাঁঠা তৈরি না হয় সেই কামনায়।
মন্তব্য
---------------------
আমার ফ্লিকার
গুরু এত সকালে শেষ লিখে দিলেন যে? সবেতো আবদার আইল, আরো কত কিছু যে আইব!!!! শেষ কইরেন না!!!!
ভাইরে, এই বেলা না পালাইলে পরে কি যে আব্দার করবে কে জানে।
অশালীন, চরম অশালীন!
facebook
আপনি না হয় পালালেন, কিন্তু বেচারা ইউসুফের কি হইব? হাসিখুশি চেহারার মাঝে লুকানো বিষণ্ণতা নিয়ে বেচারা কি ….. মারা খেতেই থাকবে?
কিছু তো করার নাই আর
আবু ইউসুফের নাম পাল্টে "খেদমতে বান্দর" রাখার দাবী জানাই
আমার কেনো জানি মথা-র কথা মনে পড়লো। কেনো জানি, একদম এম্নিই এম্নিই
ভাই, speechless!!!
সুবোধ অবোধ
বান্দর অলরেডি মাথায় উঠে গেলে কি করণীয়?
..................................................................
#Banshibir.
মাথা কেটে ফেলতে হবে, মাতামুতা রাইখা লাভ কি বলেন।
একদম!
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
কার মাতামুতা আমার না বান্দরের?
..................................................................
#Banshibir.
দুইটাই। মাতামুতা অদল বদল করে ফেলতে হবে আরকি
..................................................................
#Banshibir.
একদম Perfect
দিনকে দিন এদের আবদার বাড়ছে। এখনই সময় বান্দরদের না বলার।
-নিশান
হ
আউচ!!! দিলেন তো সীরাম!!!
বান্দর সিধা করার ট্রিটমেন্ট সহ পরবর্তি পর্ব প্রকাশের জন্য অনুরোধ জানিয়ে গেলাম। "শেষ" লিখে ফেলেছেন দেখে সমস্যা নেই, স্যার ডয়েল যেভাবে শার্লক হোমস কে ফিরিয়ে এনেছিলো, একটু চেষ্টা করলে আপনিও পারবেন।
অমানুষিক সব স্যাটায়ার।
--সাদাচোখ
ট্রিটমেন্ট জানলে তো সব সমস্যার সমাধানই করে ফেলতাম রে ভাই।
বাড়তি সমস্যা হলো যে, বানর তো সংখ্যায় বাড়ছে। বংশবৃদ্বি করছে।
ঠিক
ভাই আপনে পারেনও। হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা।
পড়ে উদাস হয়ে গেলাম
একেবারে চরমে উঠালেন !
হ
আপনার লেখা পড়লেই ছবি (সিনেমা কে আগে বাংলায় ছবি বলত, না?) ভেসে উঠে চোখের সামনে - এবারো ভাসলো - ইউসুফ এর চেহারাটা মখা মখা লাগ্ল -
দুঃখের দিনের একমাত্র হাসি, মতকন্ঠ আর চরম উদাস।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
বুঝেনই তো
এজন্যেই জ্ঞানী লোকেরা বলেছেন, বাঁদরকে মাথায় তুলতে নেই।
আপনার হাতের ধূলা নিবার মন চায়।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
হাতের ধূলা
বাঁদরে মানুষে বেভিচার!! নাস্তিুকের মাথার থিকাই এইসব বাইর হওয়া সম্ভব! এই বোলগারের ফাঁসি চাই।
[তাও ভাল বাঁদর পেন্টু খুলার আগে ইচ্ছা প্রকাশ করসে, কয়দিন পর আইসা সরাসরি পেন্টু ছিঁড়ালবো ]
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
কথা ঠিক
চরম হয়েছে।
-নিদ্রাহীন পথিক
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
এই গুটিকতক (৩৩) বান্দরের বান্দ্রামী দিয়ে গোটা বান্দর জাতিকে বিচার করলে হবে না, "বান্দর-ও-বিধান" বুঝে পড়ুন আর লাইনে আসুন!
লাইনেই তো আছি
অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত আর ঝকঝকে গল্প। কিন্তু কি এক আশ্চর্য আঁধারের মুখোমুখি আজ মুক্ত চিন্তার দুনিয়া! এই অপূর্ব সৃষ্টি-টিও গণ্য হতে পারে একটি ভয়ানক অপরাধ হিসেবে! আপনাদের কোনো তুলনা হয় না!
আঁধারে আলো খোঁজার জন্যই তো লেখি ভাই। লেখা ছাড়া আপাতত আর কোন হাতিয়ার নাই।
মাইরালা আম্রে মাইরালা। পুরাই
- অনুপম
আগের পর্বে হাঁসি থামিয়েছিলাম। এবার পারলাম না। ভরা অফিসে সবাই বিষম খাবার মত করে তাকিয়ে আছে।
চরম সাহিত্যরাজনৈতিফিকাশান হইসে।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আপনি মানুষ না নাস্তিক!
একদম পুরা ফাটাইলাইছেন!
বলার ভাষা হারায় ফেলেছি, যেইটুকু ঠিক করেছিলাম তা হাসতে হাসতে হজম হয়ে গেছে। এলা নতুন একটা চরম অভিধান কিনতে গেলাম
অভিধান কিনে কিছু শব্দ ধার দিয়েন , আজকার প্রতিবাদ করার শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না।
একদম, পুরাই চরম,,
এইসব ইয়াহুদী নাসারাদের সাইটে সহজে লগিন করি না। করলামই যখন, তখন বলি, লোকজন যে তোরে মাথায় তুইলা রাক্সে- এইবার কী হবে রে উদাইস্যা ??
বস শেষ কইরেন না...
অট: আগের কমেন্ট গেল কই?
কমেন্ট মনে হয় বান্দরে মাতায় উঠছে
প্রভুখণ্ড!! প্রভুখণ্ড!!
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
মোরাল হইল হেফাজতের হাত থেকে পুটু হেফাজত করতে হবে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
চরম গল্প!
নতুন মন্তব্য করুন