- তোর নাম ল্যাংড়া?
- আজ্ঞে
- ফাজলামি করিস নাকি আমার সাথে, ল্যাংড়া কারো নাম হয়?
- না স্যার, গরীব মানুষ ফাইজলামি করমু কেন? আসল নাম ছিল একটা কিন্তু সবাই ল্যাংড়া নামেই চিনে এখন।
- আগে পিছে কিছু নাই? সৈয়দ, রহমান, হক?
- না স্যার, ল্যাংড়ার আগে পিছে পদবী লাগায়ে পদবীর অপমান করুম নাকি।
আমার শিশুপুত্র আমার হাত চেপে ধরে অভিমানের সুরে বলে,
- আব্বু, এত জেরা করছ কেন? দাওনা কিনে আব্বু, দাওনা।
আমি একটা ধমক দিতে গিয়ে পুত্রের ছলছল চোখ দেখে থেমে যাই।
পাশ থেকে স্ত্রী বলে,
- দিয়ে দাও কিনে। কতই আর লাগবে।
- টাকা সমস্যা না। জোগাড় করা সমস্যা। কই কিভাবে কেনা যায় জানিনা তো।
- তুমি এত বড় অফিসার, এটা কোন সমস্যা তোমার জন্য? কর্নেল সাহেব একটা কল দিলে জুনিয়র অফিসাররা ছুটে আসবে ব্যবস্থা করতে।
- কর্নেল না হে, রিটায়ার্ড কর্নেল।
স্ত্রী মৃদু হেসে বলে,
- তারপরেও মরা হাতি লাখ টাকা।
আমি আবার ল্যাংড়ার দিকে তাকাই। ল্যাংড়া উৎসাহ নিয়ে বলে,
- স্যার কি টেকাপয়সা দিবেন কিছু?
- আমি ভিক্ষা দেই না। তোকে একটা হুইল চেয়ার কিনে দিতে চাই। আমার ছেলে বায়না ধরেছে। তোর অবস্থা দেখে কষ্ট পেয়েছে।
- হুইল চেয়ার কি জিনিস?
- চাক্কাওয়ালা চেয়ার।
- ওইডা দিয়া আমি কি করুম?
- কি করুম মানে? নিজের অবস্থা চেয়ে দেখস না? খুড়ায়ে খুড়ায়ে হাটস। দশ কদম যাইতে দশ মিনিট লাগে। চাক্কাওয়ালা চেয়ার পাইলে আরাম করে চলাফেরা করতে পারবি।
- আমার চেয়ার লাগতো না।
- মুখের উপর কথা বলবি দিব এক চড়।বেয়াদব কোথাকার, চিনিস আমাকে?
ল্যাংড়া ঘাড় বেঁকা করে দাড়িয়ে থাকে। অপরদিকে পুত্র আমার গাল ফুলিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। ছেলের কথা শুনে এখানে গাড়ি থামানোটাই হয়েছে ভুল। রাস্তার ধারের এই ল্যাংড়া লোককে দেখে ছেলের মায়া হয়েছে। বায়না ধরেছে তাকে হুইল চেয়ার কিনে দিতে হবে বলে। আমি বাড়ি ফিরে জুনিয়র কয়েকজনকে ফোন লাগাই। দুই দিনের মাথায় স্টেইনলেস ষ্টীলের চকচকে নতুন হুইল চেয়ার চলে আসে বাসায়। আমার পুত্র আর দুই মেজরকে নিয়ে হাজির হই ল্যাংড়ার আস্তানায়। হুইল চেয়ার দেখে খুশী হবার বদলে ল্যাংড়া চোখ কপালে তুলে। ঘাড় বেঁকা করে বলতে থাকে, আমার চেয়ার লাগতো না, আমার চেয়ার লাগতো না। ল্যাংড়াকে চড় থাপ্পর দিয়ে চেয়ারে বসাতে গিয়ে দুই মেজর রীতিমতো হাঁপিয়ে যায়। আধাঘণ্টা ধস্তাধস্তির পর অবশেষে ল্যাংড়া বিমর্ষ মুখে চেয়ারে বসে থাকে। আমার পুত্রের মুখে হাসি ফুটে।
দুইদিন পর আবার গোলমাল। একই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম সবাই। মনে হল ল্যাংড়াকে দেখে আসি। গিয়ে দেখি হুইল চেয়ার এক কোনে ফেলা। ব্যাটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে দিব্যি চলে ফিরে বেড়াচ্ছে। পুত্রের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে কালবৈশাখীর মেঘ। কয়েক মিনিট পরেই সেই মেঘ ভেঙে ঝড় বৃষ্টি নামে। অনেক চেষ্টা করেও থামানো যায়না পুত্রের চিল চিৎকার। পাশে বসা মেজর টিপ্পনী কাটে, স্যার বাবু পুরা আপনার মতোই মেজাজ পেয়েছে।
ভালোমত দেখে বুঝলাম ল্যাংড়ার সমস্যা হল তার শরীরের তুলনায় পা দুটো অসম্ভব রকমের লম্বা। যে কারণে হুইল চেয়ারে বসলে পা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে। দুই মেজর আবার কিছু উত্তম মধ্যম দিয়ে ল্যাংড়াকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে আসে। ল্যাংড়া বিমর্ষ মুখে চেয়ারে বসে থাকে। কিন্তু দুইদিন পর ফিরে দেখি আবারও একই কাণ্ড। চেয়ার এক কোনায়, ল্যাংড়া অন্য কোনায়। এবারে পুত্র বাসায় ফিরে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দেয়। স্ত্রী রাগ দেখিয়ে বলে, এভাবে কি সংসার চলে? কিছু একটা করো।
বিকেলে দুই মেজর হাজির হয়। সব শুনে মাথা নাড়ায়, এভাবে তো সংসার চলতে পারেনা। একটা কিছু করা দরকার। একজন কানে কানে সমাধান বলে। আমি শুনে আঁতকে উঠি।
- না না ,এটা সমাধান হতে পারে না।
- স্যার এটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান।
- আর কোন রাস্তা নেই?
- আস্থা রাখুন স্যার, আমরা হ্যান্ডেল করবো সবকিছু।
- আচ্ছা, তোমরা জুনিয়ররা যা ভালো বুঝো করো। আমাকে ইনভল্ভ করোনা।
এক মাস পর ল্যাংড়ার আস্তানায় হাজির হই আবার, পুত্রসহ। ল্যাংড়া বিমর্ষ মুখে চেয়ারে বসে আছে। পুত্রের মুখে হাসি ফুটে। ফেরার সময় হঠাৎ খেয়াল করে পুত্র অবাক হয়ে বলে,
- ওর পা দুটো কই গেল?
- হুইল চেয়ার থাকলে আর পা এর কি দরকার বাবা?
পুত্রের মুখে আবার হাসি ফুটে। ল্যাংড়া বিমর্ষ মুখে চেয়ারে বসে থাকে সারাদিন, সারারাত।
মন্তব্য
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
'দেশ' শব্দটা বলে দেয়ার দরকার ছিল না!
অথচ তাকে হুইল চেয়ারে জোর করে বসাতে গিয়ে পা-দুটোই কেটে ফেলে! তারপর হুইল চেয়ারে চলাই হয় তার নিয়তি! হুইল চেয়ার থেকে সে আর সে বেরুতেই পারে না! পুত্রের আবদার, মায়ের খুশি এবং মেজর-দ্বয়ের কানাকানি পুরো সংসারটাকে শেষ পর্যন্ত হুইল চেয়ারে রাখে বন্দী করে!
এই তো গল্পের বার্তা? চলে, তবে চরম ভাইয়ের কাছে আশাটাও চরম মাত্রার কিনা!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
দেশ টা বাদ্দিয়ে দিলাম। ঠিকই বলেছেন, সংসার যথেষ্ট।
গল্পের বার্তা - ১৫ই আগস্ট
আপনিই কি কাজি মামুন? নাম বদলে গেল কেন?
কিছু বলার নেই! কুর্নিস তাকে যে এমন লেখা লেখতে পারেন। অভিনন্দন চরম উদাস!
-সুষুপ্ত পাঠক
ধন্যবাদ। আপনার লেখাগুলোর আমি বিশেষ ভক্ত।
আসলে এটাই তো পাঞ্চলাইন, নাকি?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সত্যানন্দদা, গল্পের পাঞ্চলাইনটি পড়তে গিয়ে আপনার পাঞ্চলাইনটিও পড়ে ফেললাম!
হুম!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
হ
facebook
চরম!
আপনার সিগনেচারে #banShibir দেখে ভাবলাম - এইটা #বাংলাদেশ শিবির । কবে জয়েন করলেন?? টেকাটুকা কেমন??
প্রচুর টেকাটুকা। আপাতত কর্মী আছি, রগ কাটা ব্যবহারিক শিখতেছি। পরীক্ষা দিয়া পাস করতে পারলে সাথী হইতে পারুম। দু'আ কইরেন হাজী সাব।
..................................................................
#Banshibir.
আমি ছুটবেলা ফুলকুঁড়ির সদস্য ছিলাম।
শুনছিলাম আপনে ফুলকুঁড়ির সাহিত্য উপদেষ্টা কবি আল মাহমুদের ব্যাকাপ, কথা তাইলে সত্য? আলহামদুলিল্লাহ।
..................................................................
#Banshibir.
সেতো আমিও ছিলাম রে ভাই!! অগ্রপথিকও হয়েছিলাম!!
____________________________
ছুডুবেলায় (থ্রী/ফোর) একবার ইশকুল থিক্যা ফুঁলকুড়ির একটা কুইজ না কি জানি কি ফরম লয়া আইছিলাম... ওইডা দেইখা বাপে কেমুন কইরা জানি তাকাইল... বাপের তাকানি দেইখা আমিও বুইঝা গেলাম ওইটা দুষ্ট ছেলেদের আড্ডাখানা... তারপর আমার আর ওমুখো হওয়া হয়নি...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আমি ক্লাস টু আর থ্রি, টানা দুই বছর সদস্য ছিলাম। বাস দিয়ে এসে স্কুল থেকে মাসে দুইবার নিয়ে যেত ইসলামিক ফাউন্ডেশনে। হামদ, নাত, কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদি সংস্কৃতির চর্চা হতো। পুরস্কার দিত, ভালো ভালো খাওয়া দাওয়া দিত। নানা শিক্ষাসফরে চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক এইসব জায়গায় নিয়ে যাইত। ওই বয়েসী পোলাপান এর সাথে জীবনেও কোনদিন রাজনৈতিক কোন আলাপ করে না এরা। আস্তে আস্তে চারা বড় হইতে দেয় ...
চারা বড় হওয়া তো পরের কথা, বাপে তো বীজ বুনতেই দিল না
কতডি খাওন মিস হইয়া গেল রে... নিষ্ঠুর দুনিয়া
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ছুড়ুবেলায় আমার দাদাজান আমারে মাদ্রায় পড়ানোর নিয়ত করেছিলেন ,তিনি নিজে মসজিদের ইমাম ছিলেন । গ্রামের মক্তবে দুই-চার বছর পড়েও যখন দুই চারটে সূরাও মুখস্থ করতে পারি নাই তহন আমার বাপজান বুই্যজা গেছে আমার দ্বারা ইহা সম্ভব নহে। মাতাজান এহন প্রায়শ-ই বলে তোরে মাদ্রাসায় দেওয়ার নিয়তের কারণেই তুই বছরে দুইবারের বেশি নামাজ পড়োছ না
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
ছিঃ মাসুদ ভাই
ফুলকুঁড়ির সাথে নামাজ মেশাতে হয় না
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
মর্মান্তিক ।
শরীরের তুলনায় পা লম্বা বলেই পা কেটে ফেলে দিতে হল। ঠিক আছে
..................................................................
#Banshibir.
কেন এসব মন খারাপ করা গল্প লিখেন, আজ ভাবীর জন্মদিন- জানেন না?
--চিরহরিৎ
নাহ আপনারা মানুষের ভাল করতে দিবেন না
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
কত্ত লোক লাইনে আইসা গেল, আপনে খালি বেলাইনে কথাবার্তা বলেন।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
কই, লাইনেই তো আছি
হাঁটুতে ব্যথা দেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুক্কিত
যথারীতি চরম । তবে আমি হাঁটুনুনুভূতিতে আঘাত পেয়েছি
আমার জীবনে পড়া সেরা পলিটিক্যাল স্যাটায়ার। চরম!!
বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদ স্বাধীনতা অর্জনের দাবি করে বলেছিলেন, "আমরা স্বাধীনতা এনেছি, আমরাই তা রক্ষা করব।" ওইটা আমার পড়া সেটা পলিটিকাল স্যাটায়ার
এই একটি বার্তার জন্যে গল্পটি স্বার্থক হয়েছে হয়তো কিন্তু আপনার মানে হয়নি বোধহয় ।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
গভীর
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
সম্প্রচারনীতি আইতাসে! বিশেষ পোশাকধারীদের "কটাক্ষ" করা হইতে সাবধান!!
****************************************
আই কি কইচ্চি?
অসাধারন! যে বিষয়ের গল্প, তাতে একেবারে চরম হয়েছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অনেক ধন্যবাদ
পরিবার থেকে নেয়া- পারিবারিক গল্প
কড়িকাঠুরে
হ
সব ফকফকা, চউ দা কি বাত্তি লাগাইলেন?
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ফিলিপস
চেষ্টা তো করি
অনেকদিন পরে লিখলেন। ভালো লেগেছে। প্রতিমাসে একটা লেখা অন্তত দিয়েন; আপনারে প্লিজ লাগে।
গোঁসাইবাবু
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
আজ কি সেই হুইল চেয়ার কাস্টমারের বাড্ডে?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
খেলার সাথে পলিটিক্স মেশাবেন্না
ওরে বাপ্পস! মেজর সাহেবদের কি বুদ্ধি! আমরা মাইনরেরা রীতিমত মুগ্ধ!
ওয়েলকাম ব্যাক ইমো হবে সাথে।
____________________________
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
ভালো থাকুন।
শুভেচ্ছা।
-----------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
বাহ!
সুন্দর
চরম উদাস, আপনি
চরম সত্যকে, গরিবের
চরম ত্যাগের উদাহরনে
চরম ভাবে, তুলে ধরেছেন।
______________________
সরীসৃপ
নতুন মন্তব্য করুন