প্রোফেসর মোতালেবের ডায়েরীটা আমার হাতে কিভাবে আসে সে এক লম্বা কাহিনী। সে গল্প না হয় আরেকদিন বলা যাবে। শুরুতেই বলে রাখি তার ডায়েরী লেখার স্টাইল অনেকটা প্রোফেসর শঙ্কুর মতো হলেও প্রোফেসর মোতালেব মোটেও প্রোফেসর শঙ্কুর মতো নন। তিনিও একজন বিজ্ঞানী তবে পরিপূর্ণ হালাল বিজ্ঞানী। তিনিই পৃথিবীর প্রথম বিজ্ঞানী যিনি ধর্মের সাথে বিজ্ঞানকে এক করে বিজ্ঞানকে পূর্ণতা দিয়েছেন। তার বড় বড় আবিষ্কারের মধ্যে খেজুর পিল (জেনেটিক্যালি মোডিফাইড খেজুর, একটি খেলে এক মাস না খেয়ে থাকা যায়), তাবিজ ওয়ার্মার (একই সাথে তাবিজ এবং বডি ওয়ার্মার। পরে থাকলে ভুত প্রেত শয়তান ও শীত দূর হয়ে যায়), এসিড পড়া (পানি পড়ার মত মত করে এসিড পড়া হয়। দুই চামুচ এসিড পড়া খেলে দাদ,খাঁজ-খুঁজলি, অর্শ, ভগন্দর, চর্মরোগ, ক্যান্সার, এইডস ও ইবোলা সহ সকল জানা অজানা রোগ বালাই দূর হয়ে যায়), ঢিলা কুলুখ বোমা (প্রচণ্ড শক্তি সম্পন্ন ঢিল আকারের আণবিক বোমা যেটা পকেটে নিয়ে ঘুরা যায়। মন্ত্র বলে ছুড়ে মারলে একই সাথে শয়তান ও দুষ্টু মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়), নাস্তিক বন্দুক (তাক করে গুলি করলে গুলি শুধু নাস্তিকদের গায়ে লাগবে। বিশ্বাসী হলে আঘাত না করে গুলি সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাবে), গেলমান রোবট (সেবা শুশ্রূষা করার জন্য রোবট। ঠিক কি কি সেবা করতে পারে তা প্রোফেসর মোতালেব গোপন রেখেছেন) অন্যতম।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রফেসর মোতালেব ও তার গেলমান রোবট সিরিয়া-ইরাক বর্ডারে আইসিসের হাতে আটক আছেন। গেলমান রোবটের শিরশ্ছেদ করে হয়েছে কিন্তু তাতেও আশ্চর্য এই রোবটের কোন ক্ষতি হয়নি। মাথা এবং ধড় ওয়্যারলেস কমুনিকেশন করে আলাদাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রেগে মেগে আইসিস রোবটকে বিশ টুকরা করে ফেলার পরেও দেখা যায় রোবট আগের মতই বেঁচে আছে এবং এক টুকরা অন্য টুকরার সাথে দিব্যি যোগাযোগ করে যাচ্ছে! প্রোফেসর মোতালেবের কল্লা এখনও আস্ত আছে নাকি কেটে ফেলা হয়েছে তা জানা যায়নি। আর বেশী কথা না বাড়িয়ে পাঠকদের জন্য প্রোফেসর মোতালেবের ডায়েরীর কিছু চুম্বক অংশ তুলে ধরছি।
আগস্ট ২, ২০০১
বার্লিন, জার্মানি
ডক্টর ইহুদিস্টাইনের সাথে আমার আর ডক্টর মালিকের প্রায়ই তর্কাতর্কি হয়। ইহুদিস্টাইনের ধারণা 'প্রকৃত মুসলমান' একটা ভ্রান্ত ধারণা। অনেকটা ড্রাগন, ইয়েতি, ইউনিকর্ন বা পেগাসাসের মতোই। মালিক তাকে কয়েকবার বোঝানোর চেষ্টা করে এই বলে, বাজারে ইসলাম এবং মুসলমান সম্পর্কে নানা বাজে কথার প্রচার আছে। যার বেশিভাগই সত্য নয়। কিছুটা আমেরিকার আর কিছুটা ইহুদীদের ষড়যন্ত্রের কারণে লোকজন সহিহ ইসলাম এবং প্রকৃত মুসলমান খুঁজে পাচ্ছে না। আজকে তর্ক একটু সিরিয়াস দিকেই টার্ন নিলো। আমিও ডক্টর মালিকের সাথে সায় দিয়ে বললাম, অবশ্যই প্রকৃত মুসলমান ডাইনোসরের মতো বিলুপ্ত বা ড্রাগনের মতো কাল্পনিক নয়। ইহুদিস্টাইন মানতে নারাজ। এক পর্যায়ে সে টেবিলে চাপড় দিয়ে ডক্টর মালিককে আর আমার সাথে বিশ হাজার ডলার বাজি ধরে বসলো। শর্ত একটাই, একজন প্রকৃত মুসলমান খুঁজে বের করে তাকে দেখাতে হবে। আমিও প্রোফেসর মতিউর মতিন মোতালেব, লোকে সংক্ষেপে ডাকে ট্রিপলমুতা। এত সহজে হার মানার পাত্র না আমি। টেবিলে চাপড় দিয়ে আমি বাজির শর্তে রাজি হয়ে গেলাম। প্রকৃত মুসলমান খুঁজে বের করবো অবশ্যই। মালিক উৎসাহের সাথে বলল, আমার সাথে পাকিস্তান চল আজকেই। এত বড় মুসলিম দেশে লাখে লাখে প্রকৃত মুসলমান খুঁজে পাবে অবশ্যই। ইহুদিস্টাইন চোখ পাকিয়ে বলল, একাত্তরে তোমার প্রকৃত মুসলমানরা কি করেছিল ভুলে গেছ? মালিক গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, না না ওরা কেউ প্রকৃত মুসলমান ছিলোনা। আর তা ছাড়া এসব ভারতের চক্রান্ত। এসব নিয়ে কথা বেশী না বাড়ানোই ভালো। আমিও সায় দিয়ে বললাম, তা ঠিক। তা ঠিক।
সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
রাখে আল্লাহ মারে কে। অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম আজকে আমরা। গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক এসেছি আমরা। আমরা মানে আমি, ডক্টর মালিক, আর ডক্টর ইহুদিস্টাইন। উদ্দেশ্য প্রকৃত মুসলমান খুঁজে বের করা। গত মাসে ইহুদিস্টাইনের সাথে বাজি ধরার পর মনে মনে ভাবলাম প্রকৃত মুসলমান খুঁজতে কোথায় যাওয়া যায়। এর মাঝে নিউইয়র্ক থেকে এক বিজ্ঞানী সম্মেলনের দাওয়াত আসলো। সেখানে আমাকে জ্বীন ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল বিষয়ে বক্তৃতা দিতে হবে। শুনেছি নিউইয়র্কের লঙ আইল্যান্ড এলাকায় অনেক প্রকৃত মুসলমান বাস করে। তাই এক সাথে রথ দেখা ও কলা বেচার উদ্দেশ্য নিয়ে ইহুদিস্টাইন আর মালিককে বগলদাবা করে নিয়ে চলে আসলাম। আমি আগে এখানে আসলেও ডক্টর মালিক আর ডক্টর ইহুদিস্টাইনের প্রথমবারের মত আসা হল এখানে। তাই ঘুরে ঘুরে স্ট্যাচু অব লিবার্টি, সেন্ট্রাল পার্ক, এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং ইত্যাদি দেখতে দেখতেই কয়েকদিন চলে গেল। এর মাঝে কুইন্সে আচ্ছা করে মসলা মাখানো বিরিয়ানি আর রোস্ট খেয়ে ডক্টর ইহুদিস্টাইন অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ভাগ্যিস সাথে আমার কয়েক বোতল এসিড পড়া ছিল। দুই চামচ খাইয়ে দিতেই তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে আবার বিরিয়ানি খেতে যাবার বায়না ধরলেন। আমি ভুলিয়ে ভালিয়ে তাকে আমার খেজুর পিল খাইয়ে দিলাম। কয়েক সপ্তাহ আর খাওয়া দাওয়া নিয়ে ঝামেলা করবে না। ইহুদিস্টাইন সুস্থ হবার পর তাকে নিয়ে আমরা আবার ম্যানহাটনে বের হলাম। মালিকের এক দোস্ত আছে আতা নামে, সে আমাদেরকে টুইন টাওয়ারের ভেতরে দেখা করতে বলেছে। ওইখানে নাকি আমাদেরকে প্রকৃত মুসলমান দেখাবে। আমরা তাই সেই দিকেই রওনা দিলাম। কাছাকাছি আসার পর মালিক আতার কাছ থেকে ফোন পেল। বলে, বস আপনারা টুইন টাওয়ারের ভিতরে যান, আমি বিমান নিয়ে আসতেছি। বিমান নিয়ে আসতেছি কথার মানে কি আমরা কিছুই বুঝলাম না। একটু পরেই অবশ্য বুঝে গেলাম। টুইন টাওয়ার থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরে যখন, তখন রাস্তায় কাবাব বিক্রি হতে দেখে ইহুদিস্টাইন 'কেবাব কেবাব' বলতে বলতে দাড়িয়ে পড়ল। আমি ভ্রু কুঁচকে চিন্তা করলাম, তবে কি আমার খেজুর পিল ঠিকভাবে কাজ করছে না? ডোজটা কি আরও একটু শক্তিশালী করে দিব? এমন সময় আমাদের চোখের সামনে এক বিমান এসে টুইন টাওয়ারে ধাক্কা মারল। আমরা দৌড়ে কোনমতে ভিড় আর গোলমাল এড়িয়ে এলাকা থেকে আরও কয়েক ব্লক দূরে সরে গেলাম। হাঁপাতে হাঁপাতে মালিককে জিজ্ঞেস করলাম, আতা কই? মালিক আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলে আরেকটা বিমান দেখিয়ে বলে, মনে অই ওইখানে। বলতে বলতে সেই বিমানও গিয়ে টুইন টাওয়ারে ধাক্কা মারলো। আমরা কোনমতে দৌড়ে জীবন বাঁচালাম।
হোটেলে ফিরে ইহুদিস্টাইন চোখ নাচিয়ে বললেন, এই কি তোমার প্রকৃত মুসলমান? এদের দেখার জন্যই আমরা এতদূর এসেছি? মালিক মাথা নেড়ে বললো, এরা সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসী কখনও প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। ইসলাম কখনও সন্ত্রাস সমর্থন করে না। এরা যেই মুহূর্তে সন্ত্রাস করেছে সেই মুহূর্তেই অপ্রকৃত মুসলমান হয়ে গেছে। আমিও সায় দিয়ে বললাম, তা ঠিক। তা ঠিক।
অক্টোবর ১২, ২০০২
বালি, ইন্দোনেশিয়া
নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার কাণ্ডের পর এক বছর পার হয়ে গেছে। নানা কাজের ঝামেলায় আমাদের প্রকৃত মুসলমান খোঁজা বন্ধ ছিল প্রায়। এর মাঝে একদিন ইন্দোনেশিয়া থেকে ' ক্যান্সার মুক্তি ও হালাল খাবার' শীর্ষক এক বিজ্ঞানী সম্মেলনের আমন্ত্রণ পেয়ে মনে হল মালিক আর ইহুদিস্টাইনকে নিয়ে যাই সাথে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে অবশ্যই প্রকৃত মুসলমান খুঁজে পাওয়া যাবে। তাই সম্মেলনে আমার খেজুর পিলের প্রদর্শনীর ফাঁকে ফাঁকে সময় করে প্রকৃত মুসলমানও খুঁজে বের করে ফেলা যাবে গোটাকয়েক। বালিতে নেমেই মালিক আবদার ধরলো, এখানকার নাইট ক্লাব নাকি বেশ নামকরা, সে একটু যেতে চায়। আর তার নাকি কোন প্রকৃত মুসলমানের সাথে সাথে আলাপ হয়েছে। আমাদের সবাইকে ওই নাইট ক্লাবে যেতে বলেছে, ওখানেই দেখা করবে। এরপরের ঘটনা ভয়াবহ। ক্লাবে গিয়ে ঘণ্টা-খানেকের মধ্যেই মালিক মদ গিলে পুরা মাতাল হয়ে গেল। তারপর এক স্বর্ণকেশী অস্ট্রেলিয়ান তরুণীর সামনে গিয়ে অশ্লীল বেলি ডান্স মারা শুরু করলো। আমি আর ইহুদিস্টাইন মিলে মালিককে বাউন্সারের হাত থেকে বাঁচিয়ে কোন মতে বাইরে আসা মাত্র, বুম! তারপর চারিদিকে ধোঁয়া, চিৎকার, দৌড়াদৌড়ি। নিউইয়র্কের ঘটনার পর আমরা চালাক হয়ে গেছি। আওয়াজ শোনা মাত্র জান প্রাণ নিয়ে দৌড় দিলাম। ততক্ষণে মালিকের নেশাও ছুটে গেছে। দৌড়ে কিছুদূর যাওয়া মাত্র আবারও বুম! পরে খবরে দেখলাম ২০২ জন উড়ে গেছে বোমায়। একটু উনিশ বিশ হলে সংখ্যাটা ২০৫ হয়ে যেত। ইহুদিস্টাইনের অগ্নি দৃষ্টি উপেক্ষা করে মালিক একঘেয়ে স্বরে বলল, এরা কখনও প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। প্রকৃত মুসলমান কখনও ...
জুলাই ৭, ২০০৫
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
লন্ডনে আজকে অল্পের জন্য জীবন বেঁচে গেল আমাদের।এখানে এসেছি মাত্র তিন দিন হয়েছে। আমার সাথে ডক্টর ইহুদিস্টাইন। মালিক আসতে পারেনি কাজের ঝামেলায়। কিন্তু মালিকের মাধ্যমেই সিদ্দিক খানের সাথে যোগাযোগ আমাদের। কিভাবে যেন লতায় পাতায় মালিকের পরিচিত। মালিক একশ পারসেন্ট গ্যারান্টি দিয়ে বলেছে সিদ্দিকের কাছে যাও, ও তোমাকে প্রকৃত মুসলমান খুঁজে দিবে। এমনকি সিদ্দিক নিজেও সম্ভবত প্রকৃত মুসলমান। আমি তাই আর দেরি না করে ইহুদিস্টাইনকে বগলদাবা করে নিয়ে লন্ডন চলে এসেছি। সিদ্দিকের সাথে দেখা হল তৃতীয় দিন। ওকে দেখেই আমার মনটা ভালো হয়ে গেল। নূরানি চেহারা, ফিনফিনে দাড়ি, কথা বলে সুমধুর গলায়। এই ছেলে প্রকৃত মুসলমান না হয়েই যায়না। তবে তাকে দেখে মনে হল ভীষণ ব্যস্ত। ফোনের পর ফোন আসছে। ফিসফিস করে ব্যস্ত গলায় হাসিব, শেহজাদ নামে দুইজনের সাথে কথা বলল। তারপর আমাদেরকে বলে, বস চলেন। সেন্ট্রাল লাইন দিয়ে যেতে যেতে কথা বলি।আমরা ব্যাটার পিছুপিছু সাবওয়ে ষ্টেশনে ঢুকলাম।ট্রেন চলে আসছে এরকম সময় ইহুদিস্টাইন অসহায় গলায় বলে, আমার বাথরুম পাইছে। তোমরা আগাও আমি আসতেছি। একা একা ইহুদিস্টাইন আবার হারিয়ে যায় কিনা এইজন্য আমিও ট্রেনে না উঠে সিদ্দিককে বললাম, চলো আমরা পরের ট্রেনে যাই। সিদ্দিক ততোক্ষণে ট্রেনের ভেতরে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে গেছে। আমার কথা শুনতে পেল বলে মনে হয়না। উত্তেজিত ভাবে ইশারায় আমার বারবার ট্রেনে উঠতে বলতে লাগলো। কি করবো বুঝে ওঠার আগেই আমাকে আর ইহুদিস্টাইনকে ফেলে ট্রেন রওনা দিয়ে দিল। আমি ইহুদিস্টাইনকে নিয়ে বাথরুম খুঁজে বেড়াচ্ছি এইসময় সাবওয়ে টানেলের ভেতর থেকে প্রচণ্ড শব্দ ভেসে আসলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারিদিক দেখি ধোঁয়ায় ভরে গেছে। আতঙ্কিত লোকজনের চিৎকারে কান পাতা দায় । আমি পকেট থেকে জ্বীন দৃষ্টি চশমা বের করে পরে নিলাম, ইহুদিস্টাইনকেও একটা দিলাম। আমার আবিষ্কার করা জ্বীন দৃষ্টি চশমা পরলে দৃষ্টি শক্তি জ্বীনের মত প্রখর হয়ে যায়। ধোঁয়া, কুয়াশা এমনকি চাইলে কাপড় চোপড় ভেদ করেও দেখা যায় সবকিছু। এটা আমি কিশোর বেলায় বানিয়েছিলাম পাশের বাড়ির বিলকিস ভাবীকে দেখার জন্য। এতদিন পর এই জিনিস আমাদের জীবন বাঁচাবে কে জানতো। আমরা জ্বীন দৃষ্টি দিয়ে ধোঁয়া আর ভিড় ঠেলে দ্রুত বের হয়ে আসলাম।
রাত নাগাদ পুরো ঘটনা জানা গেল। সিদ্দিক তার তিন চ্যালা নিয়ে লন্ডনের গোটাকয়েক ট্রেন বাস উড়িয়ে দিয়েছে। সত্তুর জন মানুষ উড়ে গেছে, সাথে তারা চারজনও। সংখ্যাটা সত্তুরের বদলে বাহাত্তর হয়ে যেত যদি মোক্ষম সময়ে ইহুদিস্টাইনের বাথরুম না চাপত। খবর দেখতে দেখতে আমি ইহুদিস্টাইনের অগ্নি দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলি, সিদ্দিক আর চ্যালারা কখনোই প্রকৃত মুসলমান না। সন্ত্রাসী কখনও প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। ইসলাম কখনও সন্ত্রাস সমর্থন করে না। এরা যেই মুহূর্তে সন্ত্রাস করেছে সেই মুহূর্তেই অপ্রকৃত মুসলমান হয়ে গেছে।
জুলাই ১১, ২০০৬
মুম্বাই, ইন্ডিয়া
মুম্বাইয়ের এক ট্রেন স্টেশনে বসে ডায়েরী লিখছি। চারপাশে ধোঁয়া, চিৎকার, দৌড়াদৌড়ি। আবারও বোমা! আমাদের কপাল মনে হচ্ছে আসলেই মন্দ। মানুষজন দেশ বিদেশ গিয়ে সেখানের নানা রকমের স্বাদের খাবার দাবার খায় আর আমরা খালি বোমা খাই। প্রকৃত মুসলমান খুঁজতে পাকিস্তানে যাওয়া নিরাপদ না বলায় মালিক ঘ্যানঘ্যান শুরু করে অন্তত ভারতে এসে খুঁজতে। এসেই আবারও ট্রেন বোমা খেলাম আমরা। এই নিয়ে তৃতীয়বার ট্রেন বোমা খেলাম আমরা। গতবছর লন্ডনের অভিজ্ঞতা তো ডায়েরীতেই লিখেছি। তার আগের বছর স্পেনে গিয়ে বোমা খাওয়ার কথা তাড়াহুড়ায় লিখে রাখা হয়নি। অবশ্য আলাদা করে লেখার কিছু নেই। মুম্বাই, লন্ডন, মাদ্রিদ সবখানে ঘটনা মোটামুটি একই রকম। বুম, বুম তারপর ধোঁয়া, চিৎকার, দৌড়াদৌড়ি এবং জ্বীন দৃষ্টি চশমা পরে আমাদের পলায়ন। এবারে অবশ্য আমরা ট্রেনের বগির ভেতর আটকা পড়েছিলাম। ভাগ্যিস আমার সাথে কুরবানি চাপাতি ছিল। আমার আবিষ্কার করা কুরবানি চাপাতি আকারে খুব ছোট, আঙ্গুলের নখের ভেতরেই লুকিয়ে রাখা যায়। এটা মূলত গরু আর মানুষ জবাই করার কাজে ব্যবহার করার জন্য হলেও এটা দিয়ে লোহা পর্যন্ত অনায়াসে কেটে ফেলা যায়। আমরা এটা দিয়েই ট্রেনের জানালা কেটে দ্রুত বের হয়ে এলাম।
নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে মালিক একঘেয়ে স্বরে ইহুদিস্টাইনকে বলল, এরা কখনও প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। প্রকৃত মুসলমান কখনও ...
জানুয়ারি ১০, ২০১৪
রিয়াদ, সৌদি আরব
বিশাল বিপদের হাত থেকে বেঁচে এসেছি আজ আমরা। বিপদ বলতে সাধারণত লোকজন জানের উপর বিপদ বুঝে। কিন্তু আমাদের বিপদ ছিল আরও ভয়ঙ্কর। সরাসরি মানের উপর বিপদ। দুইদিন আগে আমরা সৌদি আরবে এসেছিলাম। মুম্বাইতে বোমা খাবার পর প্রায় সাত আট বছর প্রকৃত মুসলমান খোঁজা বন্ধ ছিল। ইহুদিস্টাইন গোঁ ধরে বসে ছিল সে আর খোঁজাখুঁজির মধ্যে নেই। অনেক কষ্টে তাকে রাজি করিয়ে আমরা আবার অভিজানে বের হয়েছিলাম। রাজ পরিবারের এক প্রিন্সের সাথে মালিকের সামান্য পরিচয় ছিল। প্রিন্স নিজে বিমানবন্দরে আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে আসলো। আমাদের আসার উদ্দেশ্য জানাতে খুশি মনে বলল, তোমরা ঠিক জায়গাতেই এসেছ। এই পুণ্যভূমিতে যদি প্রকৃত মুসলমান না পাও তবে কোথায় পাবে আর। দুইদিন কেটে গেল প্রিন্সের প্রাসাদে আরাম আয়েশ আর বিস্তর খাওয়াদাওয়া করে। সমস্যা শুরু হল দ্বিতীয় রাতে। প্রিন্স মদ খেয়ে চুর। আমি সাথে করে আমার গেলমান রোবটকে নিয়ে এসেছিলাম। প্রিন্সের কুদৃষ্টি পড়ল তার দিকে। প্রিন্স লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে বলল, আমি আমার জীবনে এমন কিছু নেই যে ভোগ করিনি। গতকাল ডিনারে নিশ্চয়ই তোমাদের সাথে কিমের দেখা হয়েছে।খাট, তোষক, বালিশ, আলমারি, নারী, পুরুষ, বালক, দুম্বা, ভেড়া থেকে শুরু করে কিম কারদিশান পর্যন্ত সবাই আমার সঙ্গী হয়েছে। কিন্তু এরকম নধর রোবট কখনও আমার সঙ্গী হয়নি। তুমি দাম বল। কিম কারদিশানকে আমি এক মিলিয়ন দিয়েছি। প্রয়োজনে তোমার গেলমান রোবটের জন্য দশ মিলিয়ন দেব আমি। পাশ থেকে ইয়াক ইয়াক শব্দ করে আমার রোবট প্রতিবাদ জানালো। আমি যথাসম্ভব বিনয়ের সাথে বললাম, আমার গেলমান রোবট বিক্রির জন্য নয়। প্রিন্স বেশ মনঃক্ষুণ্ণ হল বলে মনে হল। কিছু সময় যাবার পর ইহুদিস্টাইনকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো, এই ব্যাটা কি ইহুদী? আমি হ্যাঁ বলাতে নতুন আবদার ধরে বসলো, ইয়ে মানে আমি আসলে কখনও ইহুদীর সঙ্গেও ...
ইহুদিস্টাইন বেশ আয়েশ করে একটা ভেড়ার ঠ্যাঙ চিবিয়ে যাচ্ছিল। প্রিন্সের কথা শুনে খাবারের থালা বাটি ছুড়ে ফেলে ক্রোধে উঠে দাঁড়ালো। এক কথা দুই কথায় দুজনের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হল প্রায়। চোখের নিমিষে ভয়ঙ্কর অস্ত্র সহ প্রিন্সের প্রহরীর বিশাল বাহিনী এসে আমাদের আটকে ফেললো। পাশ থেকে ডক্টর মালিক ফিসফিস করে বলল, জলদি তোমার ঢিলা কুলুখ বোমা বের কর। আমি বললাম, ওই বোমা তো এমনি ছুড়ে মারলে কাজ করবে না। আগে ছোট বাথরুম করে, দশ কদম হেঁটে মন্ত্র বলে ছুড়ে মারতে হবে। পাশ থেকে ইহুদিস্টাইন চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, তো বাথরুম করে ফেলোনা বাপু। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, কি মুশকিল, বাথরুম না আসলে এমনি এমনি কিভাবে করবো? আমি আমার নাস্তিক পিস্তল বের করে শেষ চেষ্টা করলাম। প্রিন্সের বাহিনীর সবাই বিশ্বাসী বলে একটা গুলিও কারো গায়ে লাগলোনা। প্রিন্সের বাহিনী আমাদের বন্দি করে তার প্রাইভেট জেলে আটকে রাখল। অবশেষে গেলমান রোবটের পারদর্শিতায় আমরা গভীর রাতে জেল থেকে পালাতে সক্ষম হই। সে নাচ গান ও নানা রঙ ঢঙে পটু। নেচে নেচে দুই প্রহরীকে ব্যস্ত রাখলো। আমি সেই ফাকে আমার মিসওয়াক চাবি দিয়ে জেলের তালা খুলে ফেললাম। মিসওয়াক চাবি ছোট গাছের ডালের মত দেখতে। পকেটে রাখা যায়, এমনকি এটা দিয়ে মিসওয়াকও করা যায়। সেইসাথে এটা দিয়ে পৃথিবীর যে কোন তালা খুলে ফেলা যায়।
এখন বিমানে বসে ডায়েরি লিখছি। আমরা প্রিন্সের প্রাসাদ থেকে বের হয়ে আধখানা মরুভূমি পারি দিয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছলাম সেই গল্প না হয় আরেকদিন বলা যাবে। আজ আর সেই শক্তি নেই। বিমানে উঠে সৌদির বর্ডার অতিক্রম করার পর আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ইহুদিস্টাইন মুখ খোলার সাথে সাথেই মালিক বলল, জানি তুমি কি বলতে চাও। কিন্তু এরাও কেউ প্রকৃত মুসলমান না। এরা ভোগবাদী লম্পট। লম্পট কখনও প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। ইসলাম কখনও লাম্পট্য সমর্থন করে না। এরা যেই মুহূর্তে লাম্পট্য করেছে সেই মুহূর্তেই অপ্রকৃত মুসলমান হয়ে গেছে।
নভেম্বর ১৫, ২০১৪
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
আজকে প্রোফেসর বন্ধকর এর সাথে লন্ডনে আলাপ হল। তার লাস্ট নেম শুনে আমি যেমন চোখ কপালে তুললাম, তেমনি আমি বাংলাদেশের লোক শুনে তিনিও চোখ কপালে তুললেন। উত্তেজিত হয়ে বললেন, জান তোমার দেশের কারণেই আমার নামের আজ এই অবস্থা! বিস্তারিত ঘটনা জানলাম কথা বলে। তার ফার্স্ট নেইম ডেভিড, মিডল নেইম মোবাইল, লাস্ট নেইম বন্ধকর। পুরা নাম, ডেভিড মোবাইল বন্ধকর। প্রোফেসর বন্ধকর জানালেন তিনি বাংলাদেশের প্রকৃত মুসলমান রক্ষা কমিটির প্রধান। জন্ম লন্ডনে হলেও বেশীরভাগ সময় বাংলাদেশে থাকেন। তার কাছেই শুনলাম বাংলাদেশ নাকি একসময় প্রকৃত মুসলমানের অভয়ারণ্য ছিল। এখন সরকার আর দেশের নাস্তিক সম্প্রদায় মিলে নাকি পাখির মতো গুলি করে আর জেল ফাঁসি দিয়ে সব প্রকৃত মুসলমান মেরে ফেলছে। গত মাসে এক প্রকৃত মুসলমানকে রক্ষা করতে তার বাংলাদেশে যেতে হয়। কোর্টে বসে নিজের মোবাইল নিয়ে একটু দুষ্টু মিষ্টি ছবিটবি দেখছিলেন। এমন সময় জাজ ধমক দিয়ে বলে, ডেভিড মোবাইল বন্ধ কর নাইলে বাপের নাম ভুলিয়ে দিব। পরদিন কোর্টে এসে ভুল করে আবার মোবাইল বের করে একই কাজ করছিলেন। দেখা মাত্র জাজ তাকে ধরে নিয়ে আইন করে তার নাম বদলে দিল। প্রোফেসর ডেভিড মোবাইল বন্ধকর কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, দেখেন ভাই অন্যায়টা। আমার আব্বার নাম ছিল বার্গম্যান। আমার নাম ছিল ডেভিড বার্গম্যান। বাপের নামটুকু বদলে আমার নতুন নাম দিয়ে দিল ডেভিড মোবাইল বন্ধকর। কত বড় অন্যায়! আমি আর মালিক মিলে প্রোফেসর বন্ধকরকে কিছুক্ষণ সান্ত্বনা দিলাম। আমি বুদ্ধি দিলাম বলে কয়ে মিডল নেইমকে ফার্স্ট নেইম বানাতে পার কিনা দেখ। মোবাইল ডেভিড শুনতে অত খারাপ লাগবে না। তারপর জিজ্ঞেস করলাম দেশে প্রকৃত মুসলমান পাবার সম্ভাবনা কতটুকু।
প্রোফেসর বন্ধকর কাঁদোকাঁদো গলায় বললেন, বাংলাদেশে দুইটা নামকরা প্রকৃত মুসলমান ছিল। একটা কাদের মুসলমান, আরেকটা গোলাম মুসলমান। একটাকে নাস্তিকরা ফাঁসি দিয়ে দিয়ে মেরে ফেলেছে, আরেকটাকে ভালো মন্দ না খেতে দিয়ে অনাহারে মেরে ফেলেছে। এখনও অল্প কিছু প্রকৃত মুসলমান হয়তো বেঁচে আছে বাংলাদেশে। সেগুলোকেও মেরে ফেলার আগে আপনারা জলদি সেখানে যান।
প্রোফেসর বন্ধকর এর কথা শুনে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এবার বাংলাদেশেই যাবো প্রকৃত মুসলমান খুঁজতে। আমাদের সাথে যাবার জন্য তাকেও অনেক সাধাসাধি করলাম। কিন্তু তার এক কথা, ওই দেশে আর ফেরত যাবো না। বড়ই খতরনাক দেশ। আমার বাপের নাম ভুলিয়ে দিয়েছে, এইবার গেলে হয়তো নিজের নামটাও ভুলিয়ে দিবে।
ডিসেম্বর ১৬, ২০১৪
পেশওয়ার, পাকিস্তান
আমরা রওনা দিয়েছিলাম বাংলাদেশের পথে। যাবার আগের দিন মালিক ঘ্যানঘ্যান শুরু করলো। ওদিকে যখন যাচ্ছই, পথে একটু পাকিস্তান হয়ে যাও। ইহুদিস্টাইন চোখ পাকানো মাত্রই মালিক বলে, সেই দিন কি আর আছে? পাকিস্তান এখন শান্তিপ্রিয়, গুলি বোমা তো দূরের কথা, মশাও মারেনা। আমরা তাই মালিকের শহর পেশওয়ারে এসে পৌঁছেছি গতকাল। এক দিন না যেতেই আজকে এই কাণ্ড! সকাল সকাল একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম আমরা তিনজন। মালিকের বাসার কাছে স্কুলটাতেই আসতেই সেই পরিচিত সিকুয়েন্স। বুম বুম শব্দ, ধোঁয়া, চিৎকার, দৌড়াদৌড়ি এবং জ্বীন দৃষ্টি চশমা পরে আমাদের পলায়ন। রাতে খবর পেলাম স্কুলের শতাধিক ছাত্রকে মেরে ফেলেছে অপ্রকৃত মুসলমানরা। হতভম্ব ইহুদিস্টাইনকে মালিক সান্ত্বনা দিল, আসলে যত খারাপ ভাবছ অতো খারাপ কিছু হয়নি। অন্তত রাশিয়ার বেসলানের থেকে তো কম মরেছে। প্রায় দশ বছর আগে আমরা তিনজন বেসলানে গিয়ে একই রকম ঘটনার সামনে পড়েছিলাম। সেখানে মরেছিল তিনশ পঁচাশি জন, তার মধ্যে শিশু একশ ছিয়াশি। নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে দশ বছর আগে বেসলানে দেয়া কৈফিয়ত আবারও দিল মালিক, এরা কখনও প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। প্রকৃত মুসলমান কখনও এতগুলা শিশুকে এভাবে মেরে ফেলতে পারেনা!
ডিসেম্বর ৩০, ২০১৪
ঢাকা, বাংলাদেশ
গত চোদ্দ বছর ধরে আমরা সারা পৃথিবীর অলিতে গলিতে প্রকৃত মুসলমান খুঁজে বেড়িয়েছি। শেষপর্যন্ত মনে হয় সেটা খুঁজে পেলাম আমার নিজের দেশ বাংলাদেশেই। আমি, মালিক আর ইহুদিস্টাইন দেশে এসে তিনজন তিনদিকে ছড়িয়ে পড়েছিলাম প্রকৃত মুসলমানের খোঁজে। তিন দিনের মধ্যে মালিকের ফোন। প্রকৃত মুসলমান পাওয়া গেছে। আমি আর ইহুদিস্টাইন দেরী না করে মালিকের দেয়া ঠিকানা মিলিয়ে হাজির হই এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আমাদের দেখে মালিক মুখ গোমড়া করে বলে, প্রকৃত মুসলমান পাওয়া গেছে। কিন্তু একটু ঝামেলা আছে।
ঝামেলার কথা শুনেই ইহুদিস্টাইন উল্টা ঘুরে দৌড় লাগায়। অনেক কষ্টে তাকে থামাই। মালিকের পরামর্শে আমরা এই পর্যন্ত যত জায়গায় গিয়েছি প্রতিবারই অল্পের জন্য জান বাঁচিয়ে ফিরেছি। তাই ইহুদিস্টাইনের ভয় অমূলক নয়। আমি ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করি,
- কি ঝামেলা? বোমা না গুলি নাকি বিমান?
- না না, ওসব কিছু না। এ একেবারে একশ পারসেন্ট প্রকৃত মুসলমান। ওইসব কোন দোষ নেই।
- তবে?
- ওই যে, সুখী মানুষের গল্পটা ছিল না?
- কোন গল্প।
- ওই যে।রাজার দুরারোগ্য অসুখ। বৈদ্য নিদান দিল, বাঁচাতে হলে সুখী মানুষের জামা লাগবে।
- ও হ্যাঁ হ্যাঁ, জানি। পরে সারা রাজ্য খুঁজে পেতে বহুকষ্টে যাও একজন সুখী মানুষ পাওয়া গেল, দেখা গেল তার কোন জামা নেই।
- প্রকৃত মুসলমান এর ঘটনাও এমনি।
- জামা নাই? না থাকলে নাই, জামা দিয়ে আমাদের কাজ কি?
- না না, জামা না।
- তবে?
- কিছুই নাই।
- মানে কি?
- আচ্ছা চলো। নিজ চোখেই দেখবে।
আমরা মালিকের ডেরা থেকে বের হয়ে আরও কয়েক মাইল হেঁটে এক কুঁড়ে ঘরে হাজির হলাম। ঘরের ভেতরে ঢুকে কোন মানুষ খুঁজে পেলাম না। অবাক হয়ে মালিকের দিকে তাকালাম। সে ঘরের ভেতর একটা টেবিলের দিকে নির্দেশ করলো। সেই টেবিলের উপর একজোড়া মার্বেল! ইহুদিস্টাইন চোখ কপালে তুলে বলে,
- এইটা? এই মার্বেল তোমার প্রকৃত মুসলমান?
মালিক কাঁচুমাচু হয়ে বলে,
- মার্বেল না, চোখ। বললাম না, এর নাই। মানে হাত, পা, নাক, মুখ, শরীর কিছুই নাই। খালি চোখ দুটোই আছে। কিন্তু মার্বেল হলেও সে সব দেখে, সব শুনে, সব বুঝে। খালি কিছু করে না।
ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম মার্বেলদুটো দেখতে চোখের মতোই। মাঝখানে কালো বৃত্ত, চারপাশে সাদা। ইহুদিস্টাইন মালিকের কথা ঠিক বিশ্বাস করে বলে মনে হয়না। আমি মার্বেল দুটোকে পকেটে পুরে রওনা দেই। মালিক ঠিক কথা বলছে কিনা জানার জন্য এই মার্বেল জোড়াকে ল্যাবে পরীক্ষা করা দরকার।
জানুয়ারি ১, ২০১৫
ঢাকা, বাংলাদেশ
কি অদ্ভুত কাণ্ড। সারা পৃথিবী ঘুরে শেষ পর্যন্ত নিজ দেশে এসে রহস্যের সমাধান। ইহুদিস্টাইন অবশেষে মেনে নিতে রাজি হয়েছে যে ওই মার্বেল দুটোই প্রকৃত মুসলমান। দুইদিন আগে আমি মার্বেল জোড়াকে আমার ল্যাবেরটরিতে নিয়ে আসি পরীক্ষার জন্য।দুদিন ধরে নানা রকমের আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করে দেখলাম। মার্বেলকে ইলেকট্রিক শক দিলাম, এসিডে চুবিয়ে রাখলাম, মাইনাস আশি ডিগ্রী তাপমাত্রায় রাখলাম, আগুনে ফেলে রাখলাম কিন্তু কোন কিছুতেই মার্বেলের কোন নড়ন চড়ন নেই। বিরক্ত হয়ে মার্বেল জোড়াকে রেহাই দিয়ে একটু টিভি ছাড়লাম। নানা চ্যানেল ঘুরিয়ে খবরের চ্যানেলে থামলাম। ইসরায়েল আবারও প্যালেস্টাইনের সাথে ঝামেলা শুরু করেছে। চকিত হামলায় বেশ কয়েকজন নারী পুরুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে অনেকে। কি মনে করে আচমকা মার্বেলের দিকে তাকিয়ে মনে হল মার্বেলের রঙ বদলেছে একটু।ভালোমতো দেখাত জন্য আমার জ্বীন দৃষ্টি চশমা বের করে তাকিয়ে দেখলাম। ঠিক রঙ বদলেনি, মার্বেলের মাঝখানের যে কাল বৃত্ত সেটা আকারে একটু বড় হয়েছে। মার্বেল যদি সত্যি চোখ হয় তার মানে হচ্ছে সে চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে।বুঝলাম এ আসলেই সামান্য মার্বেল নয়। এরপর সারারাত ধরে মার্বেলকে নানা রকম ভিডিও দেখিয়ে পরীক্ষা করলাম। আমাদের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার অভিযানের কিছু অংশ হাত ক্যামেরায় তুলতে পেরেছিলাম। সেটা দেখান মাত্র মার্বেলের চারদিকে সাদা আর মাঝখানের কালো বৃত্ত বদলে অনেকটা বাদামি রঙ হয়ে গেল। জ্বীন দৃষ্টি দিয়ে ভালো করে দেখে বুঝলাম মার্বেল ব্যাটা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। এরপর মায়ানমারে অত্যাচারিত মুসলমানরা দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করেছে, এই খবর দেখান মাত্র মার্বেল চোখ খুলে বড়বড় হয়ে গেল। বোকো হারাম স্কুলের বালিকাদের উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেখে আবার মার্বেল চোখ বন্ধ। ইরাকে আমেরিকা বোমা ফেলছে দেখে চোখ বড় বড়। সিরিয়াতে সিরিয়া বোমা ফেলছে দেখে চোখ বন্ধ।
সকালে মালিক আর ইহুদিস্টাইনকে ঘটনা দেখালাম।বেশীরভাগ সময় মার্বেল চোখ আধবোজা। কিন্তু নানা ভিডিও দেখালে কখনও কখনও মার্বেল চোখ বড়বড় হয়, কখনও কখনও চোখ বন্ধ হয়। মুচকি হেসে ইহুদিস্টাইন মেনে নিলো এটাই প্রকৃত মুসলমান। খসখস করে আমাকে বিশ হাজার ডলারের চেক লিখে দিল। মালিক খুশীতে দুটা লাফ দিয়ে আমাদের দিকে, 'কি? বলেছিলাম না' ভঙ্গিতে বিজয়ীর দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর বলল, আমি গতকাল আমার এক দোস্ত আবুর সাথে কথা বললাম। ইরাক সিরিয়া বর্ডারের দিকে নাকি ওরা অনেকে মিলে আলাদা এক মুসলমান রাজ্য তৈরি করছে। ফেরার পথে চল আমরা ওখানেও ঘুরে যাই। এই প্রকৃত মুসলমানের বডি মডি কিছু নাই। ওখানে দিব্যি বডিওয়ালা অনেক প্রকৃত মুসলমান পাবে।
ইহুদিস্টাইন ভোতা মুখে বলে, আমার মনে হয় বডি পেলেই প্রকৃত মুসলমান অপ্রকৃত হয়ে যাবে।
ইহুদিস্টাইন বেশ উশখুশ করলেও মালিকের পীড়াপীড়িতে পরে রাজি হয়ে গেল। আমাদের পরের গন্তব্য হয়তো ওই ইরাক সিরিয়ার বর্ডার।
মন্তব্য
এতদেশ ঘুরলেন, এত কিছু দেখলেন ৫ই মে সহিহ মুসলমানদের কর্মযজ্ঞ আর তেতুল হুজুরকে দেখলেন না, এটা কিছু হইলো
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
বানান ভুল হয়েছে, 'হুজুর' নয় 'হুগুর' হবে।
হে হে হে হে, পরের পর্ব না হয় প্রোফেসর মোতালেব ও তেঁতুল হুগুর রহস্য হবে
কোপা শামসু!
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
প্রফেসর শঙ্কুর কথা মনে পড়ল।
হালাল শঙ্কু
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
ঠাডা পড়ব
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
কুতায়?
উররে মাইরালচে রে ...
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
যথারীতি
থিঙ্কু
অনেক অনেক কথা বলার ইচ্ছে ছিল......শুধু এটুকুই বলি যে ফাটায়া কাঁপায়া দিছেন.....বড় হলেও একবসায় পড়লাম
অনেক ধন্যবাদ
আপনের উপর আল্লাহর গজব পড়বো মিয়া বুঝছেন!!
ক্যান? কি কইচ্চি?
হইছে।
একটু পাকনামি করি।
টাইমলাইন হিসেব করলে 'প্রায়' না দিলেও চলে।
"মুখ খোলার সাথে সাথে বলল" মনে হয় লিখতে চেয়েছিলেন।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
ঠিক করে দিলাম
[ বিদ্রঃ শেয়ারের সাহস পাইতাছিনা, আশেপাশে পোচুর বডিধারি প্রকৃত মুসলমানের আনাগোনা ]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হু, বুঝছি!
কী দিলেন এইটা!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
বুঝেনইতো
নমস্য, অনবদ্য। ট্রিপলমুতা, বন্ধকর, মার্বেল -- কোত্থেকে মাথায় আসে এগুলা?
মাথায় যে আরও কত কিছু আসে
লন, 'বন্ধকর' এর গান শুনেন। আমার প্রিয় ব্যান্ড, প্রিয় গান।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
ভয়ে শুনি না, একবার শোনার পর টানা ৭ দিন এই গান গেয়ে গলা ভেঙে ফেলছি।
দুর্দান্ত।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
পাঁচ তারা দাগায় দিলাম।
একটু সহিহ পড়ুয়ার কাজ করি
মার্বেলদুটো দেখতে চখের মতোই। ---> মার্বেলদুটো দেখতে চোখের মতোই।
এর পরের দুই প্যারাগ্রাফে গোটা তিনেক বাক্য শুরুর আগের ফাঁকা জায়গাটা বাদ চলে গেছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ঠিক করে দিলাম। অনেক ধন্যবাদ।
ঘ্যানঘ্যানে লোক আমি।
চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে।বুঝলাম এ আসলেই --->
চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। বুঝলাম এ আসলেই
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বিনা পয়সায় প্রুফ রিডিং করে দিচ্ছেন। এমন পাঠক সমালোচকই তো দরকার
ভাই আপনার মাথা কয়টা ??
এক মাথা থেকে তো এইরকম লেখা বের হবার কথা না !!
মাথাই তো নাই। যা করার হাঁটু দিয়া করি ...
অসম্ভব ভালো একটা লেখা! কীভাবে যে এসব আইডিয়া পান মাথায়!
মাথায় গুবর থাকলে যা হয় আরকি। সার হয়ে নানা গাছপালা জন্মায়।
বাহ! মাসাাললাহ চরম আবিসখার!!
ইয়ে, আমার কয়েকটা ঢিলা কুলুখ বোমা, আর একটা গেলমান রোবট দরকার আছিল। দাম কত? কই পামু?
না না, বেচা যাবে না
পরফেসার শমসের, থুক্কু, "প্রোফেসর মোতালেবের ডাইরি রহস্য" টা কিন্তু তাড়াতাড়ি রিলিজ দেওয়া চাই।
পোরফেসর সাবের এসিড-শক কিছুই লাগবে না, অনেক "মার্বেলচক্ষু" - বেত্রাঘাত, চাবকানি, ডাণ্ডাবাড়ি, ইত্যাদি খাওয়ার অপরিসীম লোভে নিজে থেকেই দেহ গজিয়ে ফেলে। এই দেখেন না, এই ব্যাটা কি করে --
গতকাল ৯ তারিখেই সাপ্তাহিক ৫০ চাবকানির ২য় রাউণ্ড গ্যাছে!
অন্তত মুখ আছে বুঝা যাচ্ছে!!
সূত্রঃ ১ । ২ । ৩ । [url= http://www.haveeru.com.mv/world/58405]৪[/url] । ৫ । ৬
****************************************
অনেকদিন পরে সচলে এলাম, অনেক লেখা পড়া বাকি - তাই খালি হাজিরাটুকু জানিয়ে রাখলাম।
____________________________
মোক্ষম মোক্ষম, জয় বাবা ফেলুনাথের মগনলাল মেঘরাজরূপী উৎপল দত্তের মত বলতে হয় "নাজুক! নাজুক!"
এ জায়গাটা শুধু বেখাপ্পা লেগেছে। কারণ ডায়েরী তো কেউ অন্যে পড়বে বলে লেখে না।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
কথায় যুক্তির লজিক আছে ... বদলে 'আবারও বোমা' করে দিলাম।
জটিল
আগে পড়লেও মন্তব্য করতে একটু পরে এলাম কারণ আপনার গল্পের সাথে সাথে মন্তব্যগুলোও চটপট পড়ে নেই। সবার ফিলিংস দারুণ মজা লাগে।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আরে কি কাণ্ড, এই মাত্র আপনারই একটা লেখায় কমেন্ট করে আসলাম। আপনার গল্প লেখার হাত ঈর্ষণীয়।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
আপনেও "পিকে" হে ক্যায়া?
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
চরম উদাস কুথায়?????
মোতালেব পোফেসারের খবর নাই, এইচাঞ্ছে রোবটের লগে কি জানি করে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
প্রোফেসর মোতালেব এর আবিষ্কার এবং এর কার্যকারিতা গুলো খুব ইন্টারেস্টিং।
ধর্মের ব্যাপারটা যদিও অনেকের কাছে দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে স্পর্শকাতর ব্যাপার হয়ে ওঠে। তবে ফিনিশিং এ যে মেসেজটা সেটা আমার ভালো লেগেছে। মানবতাবোধ এর জন্যই মানুষ সেরা, ধর্ম ওখানে কোনো বড় ব্যাপার নয়।
শুভেচ্ছা রইলো।
অপর্ণা মিতু
হুম, বডি পেলেই ................
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
নতুন মন্তব্য করুন