বউ কি সেবা যত্ন করে?
আমার এক আত্মীয়া বিয়ের পরপরই ফোন দিয়ে আমাকে উৎকণ্ঠিত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, বউ কি সেবা যত্ন করে? আমি কাঁচুমাচু গলায় বললাম, বউ কি সেবা যত্ন করার জন্য? তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, নয়তো কি? আমার কত বয়স হয়েছে কিন্তু এখনও তোমার চাচাজিরে রান্না করে খাওয়াই প্রতিদিন। বউকে লাই দিবা তো বউ মাথায় উঠবে। তখন বাকি জীবন তোমার সেবা করে যেতে হবে। বিষয়টা নিয়ে ঠিকমতো চিন্তাভাবনা করার আগেই মনে হয় আমার বউ লাই পেয়ে মাথায় উঠে গেল। তাই একদিন সে চা বানালে পরদিন আমাকে বানাতে হয়। একদিন সে আমার সেবা করলে, আরেকদিন আমাকে তার সেবা করতে হয়। সে রান্না করলে, আমার বাসন কোসন ধোয়া থেকে থেকে শুরু করে কাটাকুটির সব কাজ করে স্যু শেফের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সে মেইন কোর্স বানালে, ডেসার্টটা আমাকে বানাতে হয়। সে ঘর ঝাড়ু দিলে, আমাকে ঘর মুছতে হয়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে উল্টাটা সত্যি হয় না। আমি রান্না করলে সে বাসন কোসন ধোয় না। আমি ঘর ঝাড়ু দিলে সে সোফায় শুয়ে ঠ্যাঙ নাচায়। আমি চা বানিয়ে এনে দিলে চোখ সরু করে বলে, চা দিলা বিস্কুট দিলানা এইডা কেমন ভদ্রতা? সে যাই হোক। কালে কালে বুঝতে পারলাম আত্মীয়ার কথামত প্রথম রাতে বিড়াল মারতে ব্যর্থ হবার কারণেই আমার এই করুণ পরিণতি।
এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বেশীরভাগ মানুষ লক্ষ্মী বউ, সেবা যত্ন করা বউ এর ধারণা থেকে বের হতে পারেনা। প্রচলিত জোকস - টাংকি মারবা এক নম্বর সুন্দরীর সাথে, প্রেম করবা দুই নম্বর সুন্দরীর সাথে, আর বিয়ে করবা তিন নম্বর সুন্দরীকে। যে অত বেশী সুন্দরী নয় সেই হবে নিরীহ। যার দিকে লোকের অত নজর নেই তার বেশী পাখা গজায় না। এরকম লক্ষ্মী বউ, আদর যত্ন করা বউই তো দরকার! বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হলে সমস্যা, ঢোল আর নারী এই দুইকে বাড়ির উপর রাখতে হয়, বাদর আর স্ত্রীকে বেশী লাই দিলে মাথায় উঠে ইত্যাদি নানা রকম রসিকতা শুনে শুনে বড় হয়েছি। অবাক করার বিষয় রসিকতাগুলো যত না আত্মীয়দের মুখ থেকে শুনেছি তার চেয়ে ঢের বেশী আত্মীয়াদের মুখ থেকে শুনেছি। বউ লক্ষ্মী কিনা, সেবা যত্ন করে কিনা, আদব কায়দা আছে নাকি ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর জানতে মামা চাচাদের যতটুকু উৎকণ্ঠিত হতে দেখেছি তার চেয়ে অনেক বেশী উৎকণ্ঠিত হতে দেখেছি খালা ফুপুদের।
আমি ছোটবেলা থেকে একটা কথা খুব শুনতাম মা খালাদের কাছে। আমার মামারা নাকি বিয়ের আগে বেশ ভালো থাকে। সবাই বিয়ের পর ভেড়া হয়ে যায়। যেই দেশের শিশুদের প্রথম শেখা কবিতা, "তাই তাই তাই, মামা বাড়ি যাই, মামা দিলো দুধ-ভাত, পেট পুরে খাই। মামি এলো লাঠি নিয়ে, পালাই পালাই।" সে দেশের মামিদের ভিলেন না হয়ে উপায় আছে? তাই ছোটবেলা থেকেই প্রায় সব মামিদেরকে ভিলেন হিসেবে জানতাম। মনে মনে ভাবতাম, আহারে আমার সব সিংহ মামা ছিল। মামিরা আসার পর সবাই ভেড়া হয়ে গেল। আমি নিশ্চয়ই সারাজীবন সিংহ হয়ে থাকবো, কক্ষনো ভেড়া হব না। একে একে মামারা বুড়ো হল। মামাতো খালাতো ভাইয়েরা বড় হল। তাদের বিয়ে হল। এবার চারিদিকের মেয়ে মহলে গুঞ্জন শুনলাম মামাতো খালাতো ভাইয়েরাও নাকি একে একে ভেড়া হয়ে যাচ্ছে। দিব্যি বিয়ের আগে সিংহ ছিল, বিয়ের পর ভেড়া হয়ে গেল রাতারাতি। একসময় এই ভেড়া হবার মহোৎসবে আমিও যোগ দিলাম। বিয়ের কয় বছর যাবার পর চারিদিকে কানাকানি শুনি, এই ছেলেও ভেড়া হয়ে গেল। বউ এর কথায় উঠে আর বসে।
ভেড়া হয়ে যাবার মতো নিরীহ শুনতে জিনিসটা কিন্তু আদতে অনেক ভয়ঙ্কর। যত আধুনিক পুরুষই হক না কেন যুগ যুগ ধরে পূর্বপুরুষ থেকে প্রাপ্ত পুরুষতান্ত্রিকতা বিসর্জন দিবে কিভাবে? নিতান্ত নিরীহ পুরুষেরও ভেড়া গালি খেয়ে মাথা বিগড়ে যায়। মন হয় দেখি তো সিংহ হতে পারি কিনা। ইগো সামলাতে গিয়ে, সিংহ হতে গিয়ে অনেক সময় করে ফেলে বড় কোন অন্যায়। বিয়ের পর আরেক আত্মীয়া একইভাবে ভাবে একবার প্রশ্ন করেছিলেন, বউকে চালাতে পারো তো ঠিকমতো নাকি বউ তোমাকে চালায় ? আমি উত্তর দিয়েছিলাম, বউ কি সাইকেল যে চালাবো?
কেন যেন বউ এর কথায় উঠ বস করা, ভেড়া হয়ে যাওয়া, বউকে সামলাতে না পারা, বউ এর সেবা যত্ন না পাওয়া এধরণের উত্তেজক কথাগুলোর বেশীরভাগ নারী মহল থেকেই ছড়ানো হয়, বিয়ের পরপরেই।
চিন্তা কইরো না, হয়ে যাবে
সেদিন এক বান্ধবীর সাথে আলাপ হল। ধরি তার নাম কুলসুম। কুলসুমের সমস্যা বিচিত্র। তাকে সবাই চিন্তা করতে মানা করে, এই হচ্ছে তার সমস্যা। জিজ্ঞেস করলাম, এটা সমস্যা কি করে হল। উত্তরে বলল, সমস্যা বটেই। যখন তুমি চিন্তা করছ না তখন যদি কানের কাছে দিন রাত সকাল দুপুর সন্ধ্যা সকলে মিলে কানের কাছে এসে বলে চিন্তা কইরো না, তখন সেটা সমস্যা তো বটেই,বিশাল সমস্যা। 'চিন্তা কইরো না, হয়ে যাবে' এই ডায়লগটা কুলসুমকে প্রথম শুনতে হয় ইন্টার পাশ করার পরপরেই। ঠিক তাকে না, তার মাকে।পাশের বাসার মহিলা গলা বাড়িয়ে প্রতিদিন জিজ্ঞেস করতো, ভাবী কুলসুমের জন্য কি কোন ভালো ছেলে টেলে পাইলেন। কুলসুমের মা বলত, না সেরকম কিছু তো ভাবছি না এখনও। উত্তরে পাশের বাসার ভাবী বলতেন, চিন্তা কইরেন না পেয়ে যাবেন। ভালো বিয়ে হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। একই প্যাঁচাল প্রতিদিন। কুলসুমের মা হয়তো চুপ করে আছে কিছু একটা ভাবছে। পাশের বাসার ভাবী সাথে সাথে থট রিডার হয়ে বলে, আহা ভাবী এত টেনশন করেন কেন। চিন্তা কইরেন না হয়ে যাবে। কুলসুমের মা টেনশন করছিলেন না, কিন্তু এখন টেনশন শুরু হয়ে গেল। ভয়ের চোটে আর মুখ গোমড়া বা মন উদাস না করে থেকে ক্রমাগত হাসিমুখে কথা বলে যান। দেখা গেল মুখ হাসি হাসি রাখলেও রক্ষা নেই। পাশের বাসার মহিলা ফট করে বলে বসে, কি ভাবী এত খুশী খুশী কেন? মেয়ের জন্য ভালো ছেলে পেয়েই গেছেন বুঝি।
তো এই হচ্ছে সমস্যা। যথাসময়ে কুলসুমের বিয়ে হল। কুলসুম এবং কুলসুমের মা দুজনেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এই জীবনে আর বুঝি 'চিন্তা কইরো না, হয়ে যাবে' ডায়লগের অত্যাচার সহ্য করতে হবে না। কিসের কি। এবারে অন্য মাত্রা।
-ভাবী, কুলসুমের বিয়ে কয়দিন হল
- এইতো এক বছরের কিছু বেশী
- কোন সুখবর টবর আছে নাকি?
- না, সেরকম কিছু নাই।
- চিন্তা কইরেন না হয়ে যাবে।
এবার মা মেয়ে দুজনের উপর দিয়েই চিন্তা কইরোনা হয়ে যাবের ষ্টীম রোলার চলে। পার্টিতে যায় কুলসুম। হয়তো একটু চুপচাপ। বান্ধবীর খোঁচা, কিরে কুলসুম মন খারাপ নাকি? চিন্তা করিস না হয়ে যাবে। আবার যেদিন অনেক কথা বলছে সেদিন এসে বলে,
- কিরে খুব খুশী খুশী লাগছে। সুখবর আছে নাকি?
- না নাই।
- চিন্তা করিস না, হয়ে যাবে।
আমার বিয়ের বছর খানেক পরেই একদিন উত্তেজিত হয়ে আম্মা ফোন দিয়ে বললেন, এখনও বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছেনা, এভাবে চললে পাড়ায় মুখ দেখাব ক্যামনে? কথাটা শুনে রাগে ব্রহ্মতালু জ্বলে গেলেও মিষ্টি গলায় বললাম, যদি মুখ দেখানর ব্যবস্থা করে দেই তাহলে কি পাড়ার মহিলাদের থেকে চাঁদা তুলে আমার কোন একটা বিল দিয়ে দিবে প্রতিমাসে। গ্যাস, ইলেক্ট্রিসিটি , ফোন যে কোন একটা হলেই হবে। ঘুরেফিরে তাই অনেকের জীবনেই এরকম কুলসুম সমস্যা। পাড়ার মহিলারা মাঝেমাঝেই খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করে, কোন সুখবর টুখবর আছে কিনা। নেই শোনা মাত্র সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, চিন্তা কইরেন না হয়ে যাবে! আমার এক বান্ধবী চারিদিকের কানাঘুষা শুনে বিরক্ত হয়ে বিয়ের একবছরের মধ্যে ফট করে মা হয়ে গেল। চেতে মেতে বলে, আমার এখন মা হবার কোন প্ল্যান ছিল না। কিন্তু আমিও পারি এইটা প্রমাণ করার জন্য হইলাম। মাতৃত্বের মতো এত চমৎকার জিনিষও মাঝেমাঝে নারী মহলে নিজেকে প্রমাণ করার দায়বদ্ধতায় পড়ে আতঙ্ক আর দুর্বিষহ একটা বিষয় হয়ে দাড়ায়।
আমি তো আগেই বলছিলাম
পহেলা বৈশাখের নারী নির্যাতনের পরবর্তী অনেকের মতামত দেখার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য হয়েছে। পুরুষ তো বটেই বেশ কিছু নারীকেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সেই নির্যাতন সমর্থন করতে দেখেছি। তাদের বেশীরভাগের কথার সুর একইরকম, আমি তো আগেই বলছিলাম! কি বলেছিলেন? ভিড়ের মধ্যে যাওয়া ঠিক নয়, বেশী সাজগোজ করে রাস্তায় বের হওয়া ঠিক নয়, নারী হয়ে বেশী বাড় বাড়া ঠিক নয় ইত্যাদি ইত্যাদি আরকি। যে পর্দা করে সে হালে পানি পেয়ে বলে উঠেছে, আমি তো আগেই বলছিলাম পর্দার আড়ালে না থাকলে এমনটা হতে পারে। যে হিজাব করে পুরুষের সাথে সুরে সুর মিলিয়ে তাদের অনেককেই বলে উঠতে দেখেছি, আমি তো আগেই বলেছিলাম হিজাব না করলে এমনটা হতে পারে।
আমি এক মেয়ের কথা জানি যার পাঁচ বছরে তিনবার মিসক্যারেজ হয়েছে। শারীরিক দিক থেকে তো ভয়াবহ অবশ্যই কিন্তু মানসিকভাবে সেটা যে কতটা ভয়াবহ আমাদের দেশে সেটা বোঝার ক্ষমতা সম্ভবত কোন ছেলের নেই। কিন্তু কোন মেয়েরও কি নেই? থাকলে সেই মেয়েকে তার শাশুড়ি ঝামটা মেরে বলবে কেন, আমি তো আগেই বলছিলাম। কি আগে বলেছিলেন? কম বয়সে বাচ্চা নিতে, তাহলেই সকল মুশকিল আসান এইতো? শাশুড়ির কথা না হয় বাদ দিলাম, হয়তো আগের যুগের মানুষ অত ভেবেচিন্তে বলেননি। কিন্তু অবাক হয়ে খেয়াল করলাম সেই মেয়ের বান্ধবী বা তার সমবয়েসি মেয়েরাও ছেড়ে কথা বলছে না। সবাই প্রথমে একটু আহারে উহুরে বলে আফসোস করে। তারপর বিজ্ঞজনের মতো মতামত দেয়, ঠিক সময়ে বাচ্চা না নিলে এমনই হয়। আমি তো আগেই বলছিলাম! অথচ যারা এমন কথা বলছে তাদের কারোরই ধারণা নেই সেই মেয়েটির ঠিক কি ধরণের জটিলতা আছে। ধারণা নেই সে কতদিন থেকে সন্তানের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেউ নিশ্চয়ই চেষ্টা শুরুর পর থেকে তার আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব সবাইকে ঢেঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা দেয় না, ওহে জনগণ, এই যে আমি আজ থেকে চেষ্টা শুরু করলুম, লিখে রেখো। সেই মেয়েটিকে ঠিক কি ধরণের মেডিক্যাল প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে বা হয়েছে বা হবে সেটা তার ডক্টর বা খুব কাছের দুই একজন মানুষ ছাড়া আর কারোরই জানার কথা না। কিন্তু তাই বলে কি মুখ বন্ধ রাখা যায়? নানারকম মতামত, হাইপোথিসিস, গালগল্প চলতে থাকে নারী মহলে।
আমার আরেক বান্ধবীর এমন ঘটনা। কথা নেই বার্তা নেই এক দাওয়াতে ভরা মজলিশে সবার সামনে জনৈকা বলদিনী (ইয়ে মানে বলদের স্ত্রীলিঙ্গ আরকি) বলে বসলো, আরে তোমাকে দেখতে প্রেগন্যান্ট প্রেগন্যান্ট মনে হচ্ছে। সুখবর কবে জানাচ্ছ? বিব্রত বান্ধবী কোনমতে এড়িয়ে যায়, না তেমন কিছু হলে জানাতাম বলে। যখন মাস খানেক পরেও স্বাভাবিক কারণেই কোন সুখবর পাওয়া যায়না তখন নারীমহলে শুরু হয় নতুন গুঞ্জন। আরে ওকে দেখে তো প্রেগন্যান্ট মনে হচ্ছিল, তাহলে মনে হয় কোন মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। আহারে বেচারি। আমি তো আগেই বলেছিলাম!
এমনি এমনি কি আর কবি বলেছেন,
opinions are like assholes. Everyone has one, some are just bigger than others.
সেই opinion নামক asshole দিনের পর দিন সহ্য করতে হয় নারীকে, নারীর কাছে থেকেই, এটাই আফসোস।
বউ কি বাচ্চা চায়না? বউকে ডাক্তার দেখাইছো?
এই ডায়লগ আমার নিজের মায়ের। মমতাময়ী মা, যিনি নিজের ছেলে ছাড়া বাকি সকল বিষয়েই উদাসীন। নতুন কোন ডায়লগ না। যুগে যুগে কালে কালে অনেককেই শুনতে হয়। বাচ্চাকাচ্চা হতে দেরি হলে জিজ্ঞেস করেনা জামাই বাচ্চা চায় কি চায়না। জিজ্ঞেস করেনা জামাই এর কোন সমস্যা আছে কি নাই। জিজ্ঞেস করেনা তারা দুজন জীবন নিয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ভাবছে। সরাসরি অনুসিদ্ধান্তে চলে যায়, বউ আরও কিছুদিন নিশ্চয়ই ফিটিং মেরে ঘুরতে চায় তাই এই দেরি। অথবা নিশ্চয়ই মেয়েটির কোন শারীরিক সমস্যা আছে। ছেলে তো হীরের আংটি। আগের যুগ হলে ফলাফল হিসেবে হয়তো দ্রুত ছেলেকে আরও দুই একটা বিয়ে করিয়ে দেয়া হত। ছেলেও মায়ের অনুরোধ শিরোধার্য মেনে শুভ কাজে দেরি করতোনা। আমার এক ত্যাঁদড় বন্ধু এক আত্মীয়ার মুখে এরকম "বউ কি বাচ্চা চায়না?বউকে ডাক্তার দেখাইছো?" ডায়লগ শুনে নিরীহ গলায় উত্তর দিয়েছিল, আজ্ঞে, আমি তো ধ্বজ! আপাতত শিকড় বাকড় খাচ্ছি, দুয়া রাখবেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেই আত্মীয়া আর ওই বিষয়ে কোন আলোচনা করেননি, ইহজীবনে করবেনও না হয়তো।
বাক্সে বাক্সে বন্দী বাক্স
মানুষের জীবন বাক্সবন্দী, নারীর জীবন সেই বাক্সের ভেতরের আরও ছোট বাক্সে বন্দী। বিশ পার হলে তাকে বিয়ে করতে হবে, পঁচিশ পার হলে বাচ্চা নিতে হবে, চল্লিশ পার হবার আগেই সেই বাচ্চা মানুষ করে ফেলতে হবে, পঞ্চাশ পার হবার আগেই সেই বাচ্চার সংসার শুরু করিয়ে দিতে হবে, পঞ্চাশ পার হবার পরেই আবার সেই বাচ্চার বাচ্চা নিশ্চিত করিতে দিতে হবে। মেনে নিলাম দুনিয়ার নব্বই ভাগ মানুষ এই ছক অনুসরণ করে খুশী মনে বাক্সবন্দী জীবন পার করে দেয়। কিন্তু যদি বাকি দশভাগ একটু অন্যভাবে সেই ছকের বাইরে যেতে চায় তখন ছকে বাঁধা ওই বাকি নব্বই ভাগ নারী তার জীবন দুর্বিষহ করে দিতে উঠে পরে লাগে।
সময় হইছে বিয়ে কর
সময় হইছে বাচ্চা নে
সময় হইছে বাচ্চা মানুষ কর
সময় হইছে বাচ্চার বিয়ে দে
সময় হইছে বাচ্চাকে বাচ্চা বানাতে বল
এই সময়ের মাঝ থেকে কেউ যদি একটু অসময় করে ফেলে তো ব্যাস, সবাই মিলে তাকে কিলানো শুরু। পুরুষ তো কিলায়ই, অন্য নারীরাও মহা উৎসাহে এসে সেই কিলানো উৎসবে যোগ দেয়। ধরা যাক কোন মেয়ে ঠিক করলো, পঁচিশে বিয়ে করবে না, এমনকি ত্রিশেও না, হয়তো পঁয়ত্রিশে হয়তো চল্লিশে গিয়ে মনে হল নাহ এবার শুরু করি সংসার। অথবা হয়তো কখনোই সে ইচ্ছা হল না। কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? ত্রিশ পার হবার আগেই বাচ্চা নেয়া জরুরী। যুক্তি হিসেবে সামাজিক থেকে শুরু করে নানা মেডিক্যাল কারণ দেখায় সবাই। মেনে নিলাম। ধরলাম নয়টা মেয়ে সেটা মেনে সেটা পালন করে এগিয়ে গেল। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস হওয়া থেকে তারা বাঁচালো। বাকি একজনের যদি মনে হয়, নাহ এখনও সময় হয়নি। ব্যাস বাকি নয়জন মিলে তাকে কিলানো শুরু। আমি এক মেয়েকে চিনি যে বলেছিল, তার নিজের সন্তান নেয়ার ইচ্ছা নেই তেমন। কি দরকার এই ভিড়ের পৃথিবীতে আরও একটা ভিড় বাড়িয়ে। তার চেয়ে বরং কত অবহেলিত সন্তান আছে যাদের মা নেই। সেরকম দুই একজনকে খুঁজে নিয়ে তাদের জীবনটা বদলে দিতে চায় সে। কি চমৎকার একটা চিন্তা। কিন্তু বাস্তবে সেটা পালন করা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় যে কঠিন কাজ সেটা ভুক্ত ভুগি মাত্রই জানে। একবার এক দাওয়াতে এক শিশুকে কিছুক্ষণ কোলে নিয়ে আদর করার পর আমার পাশ থেকে এক মহিলা জানিয়ে দিলেন, ইনি উনার ছেলে। তারপর খানিক গলা নামিয়ে আরও জানিয়ে দিলেন, ছেলেটা কিন্তু আসল ছেলে নয়, পোষ্যপুত্র। যেই ইনফরমেশনটা না জানলেও কিছু আসে যায় না সেটাকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে সবাইকে জানানোর মহান দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সেখানের নারী মহল। হপ্তা ঘুরতেই শহরে নতুন আসা সবাই জেনে যায়, এই শহরে অমুক একজন মহিলা আছেন, তিনি নিঃসন্তান, অনেকদিন চেষ্টার পর বিফল হয়ে এখন তিনি একজন পোষ্যপুত্র গ্রহণ করেছেন। যে মহিলা হয়তো পরম মমতায় শিশুটিকে আগলে ধরে প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনিই যে আসল মা সেটা জেনেই যেন শিশুটি বড় হয়, সেখানে আশেপাশের নারী মহল এ যে আসলে পোষ্যপুত্র, আমাদের সন্তানের মতো একশভাগ খাঁটি নয় সেটা সবাইকে জানিয়ে দিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। একইভাবে আরেক দাওয়াতে গিয়ে জানতে পারলাম এই শহরে অমুক একটা মেয়ে আছে, বয়স পঁয়ত্রিশ ছাড়িয়েছে, বিয়ে করার নাম গন্ধ নেই। বেশ সেজে গুজে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় শুধু। নিশ্চয়ই কোন ঘটনা আছে তার। একইভাবে এক নারীকে দেখিয়ে আরেক নারীর ফিসফিস করে বলা বক্তব্যে জানতে পারলাম, প্রথম নারী তার স্বামীর ঘর থেকে বের হয়ে গেছিল, অন্য প্রেমিকের হাত ধরে।একইভাবে জানতে পারলাম, অমুক নারীর দুই সন্তান আছে, দুজনেই স্পেশাল চাইল্ড।
বাক্সের বাইরে কোন কিছু সহ্য করতে চায়না নারী মহল। বাক্সের বাইরে কিছু দেখলেই বাক্সের ভেতরের সবাই মিলে শুরু করে তাকে কিলানো।
পুরুষ দ্বারা শারীরিক মানসিক নানাভাবে নির্যাতিত হয় নারী। সেই নির্যাতনের উপর চেরি অন দা টপ হয়ে নারী অন্য নারীকে কেন মানসিক নির্যাতন করে সেটা মাথায় ঢুকে না। পুরুষের কিল কি যথেষ্ট নয় যে আবার তার উপর বোনাস হিসেবে একে অপরকে কিলাতে হবে?
(লেখায় প্রথমে একটা ডিসক্লেইমার দিতে চেয়েছিলাম, পর মনে হয়েছিল দরকার নেই, লেখায় কি বলতে চেয়েছি নিশ্চয়ই সবাই বুঝতে পারবে। কিন্তু এখন আবার মনে হচ্ছে ডিসক্লেইমার দিয়ে রাখলেই ভালো, না হয় পরে আবার আমাকে কিল খেতে হবে। এই লেখার শিরোনাম দেখে, আমি তো আগেই বলছিলাম নারীকে কিলায় নারী, পুরুষের কোন দোষ নেই বলতে বলতে বগল বাজানোর কিছু নেই। সচলে এই কয়দিনে নারী দিবসে একের পর এক লেখাগুলো পড়ে গেছি। কখনো স্তম্ভিত হয়েছি, কখনো লজ্জিত হয়েছি নিজেও জীবনের কোন না কোন সময় বুঝে না বুঝে নারীকে অপমান করার জন্য, নিজের পুরুষতান্ত্রিকতা ব্যাবহারের জন্য। এই লেখার অর্থ কোনভাবেই এটা নয়, নারীর সকল নির্যাতন এর জন্য সে নিজে বা অন্য নারী দায়ী সেটা বোঝানো নয়। কেউ যদি সেরকম মনে করেন লেখা পড়ে সেটা হয় তার বোঝার ব্যর্থতা বা আমার বোঝানোর ব্যর্থতা। পুরুষতান্ত্রিকতার যে মহোৎসব চলে আমাদের সমাজে সেই মহোৎসবের প্রতিবাদ করার বদলে অনেক নারী সেটাতে যোগ দেয়, এটাই বলার চেষ্টা। আমি নিজে যদি বুঝিয়ে না বলতে পারি তবে একজন পাঠকের মন্তব্য ধার করে বরং ব্যাখ্যা করি -
অনির্বাণ সরকার
আপনার এই চমৎকার লেখাটার বিপদ কোথায় জানেন তো? 'আমি সবাত্তে বেশি বুঝি' দলটির পুরুষেরা বলবে- নারীরে নারীরাই কিলায়, পুরুষরা না; এই যে প্রমাণ। আবার অধিক সরলারা ঠোঁট ফুলিয়ে বলবেন- একি লিখলেন? নারীরে তো ঘরে বাইরে পুরুষরাই কিলায়। তৃতীয়ত, আরেকটি দল, এই আবালদের সংখ্যাই বেশি, সেই আবাল পুরুষেরা বলবে- নারীরাই কিলায় কথার আড়ালে পুরুষবিদ্বেষ প্রচার করা হচ্ছে। পুরুষ এবং পুরুষতান্ত্রিকতা যে এক নয়- এই সাধারণ কথাটিই অনেকে বোঝে না। যে সব নারী নারীদের কিল দিচ্ছে, তারা আসলে নারীই, তবে প্রতিনিধিত্ব করছে পুরুষতন্ত্রের। আপনার লেখার ব্যাখ্যা এককথায় এইটি।
সেইসাথে লেখার টাইটেল 'নারীরে কিলায় নারী' বদলে, 'নারীরে যখন কিলায় নারী' করে দিলাম। নাইলে আবার সেই একই প্যাঁচে পড়ে যাবো। লোকজন 'নারীকে কিলায় নারী' এটাকে ধ্রুব সত্য বাণী বানিয়ে নিজের খুশিমতো ব্যাবহার করে যাবে।)
মন্তব্য
ওই যে প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা ! এই ব্যবস্থা-যন্ত্রের বাকি সব তো একেকটা যন্ত্রাংশ মাত্র ! এসব যন্ত্রাংশের কি আলাদা করে নারী-পুরুষে ভেদ আছে ! যন্ত্র কি আর মানুষ হয়, যন্ত্র তো যন্ত্রই !
লেখায়
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
সেটাই, সব কিছু পার্ট অফ সিস্টেম হয়ে গেছে।
নারী থেকে যদি দারুন কিছু হয়, তাহলে নারীই ভালো
আপনার লেখা ভালো হয়েছে, এটা শুনতে শুনতে আপনি হয়তো মহা অভ্যস্ত। তবুও বলি, খুব ভালো লেগেছে পড়ে। শুধু মনে হয়েছে নারী বিষয়কের মধ্যেও হয়তো একটু কয়েক দিকে চলে গিয়েছে লেখাটা। আমার ব্যক্তিগত মতামত।
মাঝে মাঝে খুব আপনার মতো মেধাবী হতে মন চায়।
অনেক ধন্যবাদ।
এক নিঃশ্বাসে পড়ে নিলাম।
আর আপনার জন্য বেশ কিছুদিন এই দোয়া রেডি করে বসে আছি।আজ দিলাম মুনাজাত করে।।।
হে পরওয়ারদিগার, এই লম্বা (এখনও বর্ধনশীল) উদাস বিন তপুদা কে নারীর গৃহবন্দিত্বের কারণে ফরসা ও সোজা হইয়া হাঁটিতে সক্ষম করণ জোহরের দৃষ্টি স্থাপন করিয়া দ্যাও। পিলিজ।
উসতাদ রিপ্লাই দিছে।
ওরে মমিন আমিও ছেলেব্রেটি হয়ে গেলামরে
আয় রে মামি আয় রে চাচি
দুলিয়ে মাজা শাম্বা নাচি!!!
খুব ভালো, ভালা হইছে, ফাডাইয়ালাইছেন - বলে এই লেখাকে অন্যখাতে টেনে নিতে চাই না...
পরুষতন্ত্রের পাৎলুন না হয় আর নাই ভিজাইলাম। অন্য কথা বলি, সামান্য ক'টা কথা...
(১) আমার বান্ধবী। তার হাজবেন্ড তাকে ডিচ্ করেছে। তাকে বসের বিছানায় ঠেলে দিতে চেয়েছে, দিনের পর দিন অত্যাচার করেছে। অনেক কষ্টে মেয়েটি ডিভোর্স পেয়েছে। তখন এলাকার মহিলাকূল (পুরুষকূলের খা বলছি না, তারা কী বলতে পারে সবাই জানি) তাকে বেশ্যা বলে গালি দিয়েছে। বলেছে - মাগীর দোষ ছিল। অনেক সময় বাদে সে আরেকজনের হাত ধরেছে। তখন ঐ মহিলাকূল তাকে পুনরায় বেশ্যা আখ্যা দিয়ে বলেছে - মাগীর ইয়ে অনেক বেশী...
(২) পাশের বাড়ির ছোট ছেলের বৌটির বাচ্চা হয়েছে। মেয়ে-শিশু। মেয়েটির স্বামীর কোনো কথা নেই, সে খুশী। পাড়ার মহিলা সমাজের আহা-উঁহু ---- আহারে, বড় বৌটার ঘরেও মেয়ে, এখন ছোট বৌটার ঘরেও মেয়ে। কী যে হল...
এমন অসংখ্য ঘটনা আছে মেয়েদের কাছ থেকেও। (ডিস্ক্লেইমার - আমি মেইল শভেনিস্ট না)
আর ইয়ে মানে, আপনি আসল প্রুস না মিয়া...
ডাকঘর | ছবিঘর
ইয়ে, আমি তো মানে সেই ভেড়া প্রুস আরকি
আমাদের এক সিনিয়র বন্ধু ছিলো, সে বিয়ে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভুগতো। সে একবার তার বউ কেমন হবে সে বর্ণনা দিচ্ছিলো অনেকটা এরকম, যে সকালে তাকে গরম কফির মগ হাতে নিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তুলবে, মোজাটা পরিয়ে দেবে, টাইটা গলিয়ে দেবে, খাবারটা মুখে তুলে খাওয়াবে ইত্যাদি। বর্ণনা শুনে কইছিলাম তাইলে আপনে একটা কাজের মেয়ে রাখলেই পারেন, হুদাকামে বিয়ে করতে যাবেন ক্যান?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ্যাঁ, পাত্রী খোঁজার মার্কেটে নেমে শুরুতে এরকম অনেক ফ্যান্টাসিতে ভুগে লোকজন। বাস্তবতা আর নিজের দিকে তাকানোর সময় অনেকের হয়না। যখন হয় তখন আস্তে আস্তে ডিমান্ড লিস্ট একপর্যায়ে কমতে কমতে ছেলে হোক, মেয়ে হোক একটা কিছু হইলেই যথেষ্ট বলে ডাক ছেড়েও কাদতে দেখেছি অনেক বাঘা বাঘা পাত্রী হান্টারদের।
আমাদের এক বন্ধুকেও এই কথা বলেছিলাম আমরা।
একটা পয়েন্ট বাদ গেসে, "সমস্যা কার? ডাক্তার দেখাইছো?"
ওহ আরেকটা হইলো, "স্বামী কী ঠিকমত সোহাগ করে না? গয়না পরে, সাজগোজ করে থাকবা- নাইলে তো স্বামী অন্যদিকে চলে যাবে।"
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
হা হা হা হা, ডাক্তার দেখাইছো এই ডায়লগ আসলেই বাদ পড়ে গেছে। আপনার কথা শুনে চটপট এক প্যারা জুড়ে দিলাম
তোমার সব লেখাই ভাল লাগে, মন্তব্য করা হয় না। এই লেখাটিও বরাবরের মতই ভাল। প্রায় সব নারীকেই প্রশ্ন গুলো শুনতে হয়। আমিও শুনেছি এখনও শুনি। আশরাফের গান শুনে এক নারী আমাকে বলেছিলো তুমি কি ওর গান শুনে ওকে পছন্দ করেছো? আমার জবাব ছিল কেন ও কি দেখতে ভালো নয়? আমি গান করিনা বলে বিভিন্ন সময়ে নারীদের কাছ থেকেই শুনি ভাইয়ের এত গুন, আপনার কোন গুন নাই? সুন্দর করে আমাদের মনের কথা তুমি বলেছো বলে অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ নীলুদি। সেইদিন এক দোকানে বুন্দিয়া দেখে আপনার কথা মনে হল
বাচ্চা কবে নিবা এই বিষয়ক প্রশ্নটা এত্ত অশ্লীল লাগে আমার। কেউ কি বুঝে না? এত পারসোনাল একটা ব্যাপারে কেন সমাজ মাথা গলায়?
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
টিউলিপ, বাচ্চা কবে নিচ্ছ? এত পড়াশুনা করে কি হবে? বসে সবসে তো হাড়িই ঠেলতে হবে, সাথে মুতের কাঁথা বদলানো হয়ে যাক।
ওহ ইয়ে মানে জামাই আদর করে তো ঠিক ঠাক?
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আপনার কমেন্ট পড়ে মনে পড়লো, আমার এক বান্ধবী এইরকম একটা আর্টিকেল শেয়ার করেছিল, যেখানে লেখা কেন এই প্রশ্নটা করা অনুচিত। আর্টিকেলের সাথে মা-শিশুর একটা ছবি ছিল, সেটুকু দেখেই লোকে এসে 'কনগ্র্যাচুলেশন, কবে ডিউ?' প্রশ্ন করা শুরু করল। আয়রনি আর কাকে বলে।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
আরেকটা বিষয় আছে, বাচ্চা হচ্ছে প্রচার হবার পর লোকের ব্যাপক আগ্রহ থাকে কি বাচ্চা হচ্ছে তা নিয়ে। আমার দ্বিতীয় বাচ্চা হবার সময় যখনই আলটাসনোগ্রাম করতে যাই তখনই শ্বশুরবাড়ির দু’একজন আমার চেয়ে ব্যাপক টেনশন নিয়ে বসে থাকতো, কি হচ্ছে? প্রথমটা তো মেয়ে, দ্বিতীয়টা ছেলে হইলে ভাল হয়, যাক তবু সব আল্লাহর ইচ্ছা, তবু এইবার ছেলে হইলে আর বাচ্চা নেওয়া লাগবো না ইত্যাদি কত্ত কি।
আমিও একটা কাজ করলাম, মুখ বন্ধ করে রইলাম। উদাস উদাস মুখে সবাইরে বললাম, মফস্বলের মেশিনতো আসলে ছেলে না মেয়ে বোঝা যাচ্ছে না। ডেলিভারির দিন বোঝা যাবে। একদিন কেউ একজন বললো, বুঝছি, বুঝছি, মেয়ে হবে দেখে বলেন না! হেহেহে।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
কোন এক নারী দিবসের এক অনুষ্ঠানে হুট করে সঞ্চালক আমাকে বক্তৃতা দেয়ার জন্য ডেকে বসলো। বড় বড় মাথার লম্বা লম্বা কথা শুনতে শুনতে আমি তখন অস্থির। তার উপর আবার বক্তৃতা দিতে হবে। যা শুনছিলাম ততক্ষণ আমার মাথা গরম হয়ে ছিল। কারণ, ইনিয়ে বিনিয়ে বেশিরভাগ বক্তাই নারী দিবসের প্রয়োজনীয়তাকে এইভাবে ব্যাখ্যা করছিল যে, মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু, মেয়েরা নাকি কাজের মেয়ে টর্চার করে, স্বামীরে টর্চার করে, মেয়েরা এইসব করে বলেই এখন সময় আসছে পুরুষদের জন্য আইন করার। আরও আছে অত লেখা যাবে না।
আমি বক্তিমায় দাঁড়ায় বলেছিলাম, ভাইরা আপনারা যে এত পেনাল অফেন্স করেন কই আমরা তো একবারও বলি না পুরুষ পুরুষের শত্রু, কোটকাচারির বেশির ভাগ মামলার বাদী আর আসামী আর ভিকটিমতো পুরুষই। এই যে খুন হচ্ছে, ৩২৬ ধারার দা চাপাতির গুরুতর জখম হচ্ছে, বিদেশে নেবার কথা বলে অপহরণ হচ্ছে, প্রতারণার মামলা হচ্ছে, এইগুলাই তো বেশি। এই যে বলেন, মেয়েরা কাজের মাইয়া পিডায় আর শাশুড়ি জ্বালা যন্ত্রণা করে, এগুলাও এক শ্রেণীর অপরাধ যা বিশেষ শ্রেণীর প্রতি হচ্ছে। আর আপনারা যে রেপ করেন, সেক্সচুয়ালি হ্যারেজ করেন। দেশের আইন সব তো সব ধরণের অপরাধের জন্যই। বরং এইটা শুনতে সহনীয় যে, মানুষ মানুষের শত্রু। রাগের মাথায় আরও কি কি বলেছি মনে নেই।
নিজের চেয়ারে বসতে বসতে, ভদ্রলোকেরা আমাকে বাহবা দিচ্ছিল, ম্যাডাম এক্কেরে ধুইয়া দিছেন। আমি আবার বলছি, ক্যান ভাই খালি ধোয়ামোছাই কি আমাগো কাম?
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
তোমাদের মনে আছে কিনা, বছরখানেক আগে এক সচল আপা ফেসবুকে নিজের স্ট্যাটাসে লিখলেন 'কংফ্রাচুলেশন্স টু মি' বা এমন কিছু, সেখানে মেলা পরিচিত সচল ভাইরাই ধরলাম ঠাট্টা হিসেবেই লিখলেন, কবে সেকেন্ড গুড নিউজ আসছে। আমি কমেন্টগুলা পড়ে হাসলাম যে আমাদের জোকগুলাও কত ক্লিশে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
সচলের মন্তব্য লাফাং সমস্যা এতদিনেও দূর হয় নাই?!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আমার এক আম্রিকান বন্ধু এই প্রশ্নের ভালো উত্তর দিয়েছিল। একজন অতি কৌতূহলী এর 'When are you going to have kids' প্রশ্নের উত্তরে 'Wherever you are going to have some brains' টাইপের একটা কিছু বলেছিল। তারপরে আর তাকে জীবনে ঘাটায়নি
আত্মীয়স্বজনকে এই উত্তর সব সময় দেওয়া যায় না, এমনিতেই বেয়াদব বলে আমার নাম রটে আছে।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
Love the writing! Extremely true. Sadly most of thw time these 'women' disguise their comments, complaints & advice under the guise of "what will people think?" Like they are doing you the favor. Pisses me off every time but far too often even I have had to take it quietly.
সেজ খালার দুই মেয়ে, ছোট খালারও। ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে খালারা একসময় ভাবি-চাচি ব্রিগ্রেডকে ধাতানি দেয়া শুরু করলেন এভাবে : আলহামদুলিল্লাহ, আমার দুটোই মেয়ে। সবসময় শোকর করি সেটা নিয়ে।
এক সহকর্মী ছিলেন, বিরাট প্রতিভা। মন্চনাট্যকর্মী ইত্যাদি ইত্যাদি। পারিবারিকভাবেও পরিচিত। বিয়ে করবেন, অনুরোধ করলেন মেয়ে দেখে দিতে। চাহিদার বাহার শুনে হেসে ফেলেছিলাম।
আরেক বিরাট পড়ুয়া, লেখকও। বোলগার আর কী। শুধিয়েছিলেন-- অ্যা, বাইরে একা একা আসছো এ বয়সে! পরিবারকে মানালে কী ভাবে?
মহিলা কলেজ থেকে বিএ পাশ করা বান্ধবীটিও একই প্রশ্ন রেখেছিলো। সাহিত্য চর্চা কিলানোর ধরনে বড় একটা বদল আনে নি দেখেও হেসে ফেলেছিলাম।
মেয়েমানুষ হয়ে দুনিয়াতে এলেই পবলেম রে ভাই, সম বা বিপরীতলিংগের ঐ কিল তোমাকে খেতেই হবে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
চাহিদা সামান্য,
মেয়ে বাঘা সুন্দরী তবে অসূর্যস্পর্শা হতে হবে
অপূর্ব সুন্দর চোখ থাকবে কিন্তু সেই চোখ তুলে কারো দিকে তাকাবে না
কণ্ঠস্বর ঝর্ণার মতো সুমিষ্ট হবে কিন্তু কথাবার্তা তেমন বলবে না
হরিণের মতো চঞ্চল পা হবে কিন্তু চলাফেরায় কচ্ছপের মতো ধিরস্থির হবে
মেয়েকে গান জানতে হবে কিন্তু গান গাইতে পারবে না
নাচ জানতে হবে কিন্তু নাচতে পারবে না
বুদ্ধিমতী হতে হবে তবে বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহার করা যাবে না
পরী হবে কিন্তু উড়তে পারবে না ...
এই সামান্য আরকি
৫ তারা !
টারজান ছিল মানুষের বাচ্চা। বড়ো হচ্ছিল বনমানুষের মাঝে। এখন বনমানুষের সমাজে টিকে থাকার জন্য কি একটু সুবিধা পাবার জন্য তাকে নেংটু হয়ে চার হাত পায়ে হাটা লাগে, মাঝে মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে বুকে দমাদ্দম কিল দিতে হয় আরও ইত্যাদি ইত্যাদি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একটু খাতির আল্লাদ পাইতে হইলে যেমনে চললে একটু আদর মিলবে, মানুষ এই ক্ষেত্রে নারীরা সেদিকেই চলবে বেশিরভাগ। সবার পায়ের তলে পিষে মারা না যাওয়ার উপায় যদি হয় অন্য কাউকে পিষে উপরে থাকা তবে তাই সই। এইখানে নারী/ পুরুষ বলে আলাদা করে লাভ নাই। এইটা সারভাইভ্যাল ইনস্টিংক্ট। মেয়েদের সম্মান দেয়া, সমান সুযোগ দেয়া এইগুলি ইউটোপিয়ান চিন্তাভাবনা, খুব অল্প মানুষ সেইরকম উচ্চমার্গীয় জীবন ধারণের চেষ্টা করে। পশু লেভেলে নারী পুরুষ সব মানুষ নামক প্রানীর চেষ্টা বংশ পরম্পরা রক্ষা করে যাওয়া, নানান নিয়ম কানুন, ধর্ম, সংস্কৃতি হেন তেন দিয়ে বিষয়টা হুদাই তালগোল পাকানো হইছে।
যারা বংশ রক্ষায় মন দিতেছে তারাই শেষ মেশ টিকে থাকবে, বাকিরা জ্ঞাণগর্ভ পক পক করতে করতে ইন্নালিল্লাহ করে নাই হয়ে যাবে। সুতরাং লাইনে আসুন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
কথা সত্য, ১০০%
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আমেরিকা ফেরত চাচির সাথে পনের মিনিটের সৌজন্য সাক্ষাতে জানতে পারলাম-
১। দীপার এখনো বিয়া হয় নাই, পি এইচ ডি কইরা ঢ্যাং ঢ্যাং কইরা ঘুইরা বেড়াইতেছে, মনে অয় বয়ফ্রেন্ড আছে টাছে।
২। অন্যন্যার আট বৎসর হইল বিয়ার, বাচ্চা অয় নাই এখনও। এই মুটা হইছে।
৩। সুমনের তো ডিভোর্স হইয়া গেছে, অখন আরেকটা বিয়া করছে।
দীপা, অন্যন্যা বা সুমন কারো সাথেই আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নাই, হবার সম্ভবনাও খুব কম।
ব্যাপারগুলি আমার কাছে মানসিক ব্যধির মত মনে হয়। এরা সিম্প্যাথি বিলি করে বেড়ায় কিন্তু এম্প্যাথি শব্দটার সাথে এদের সম্পর্ক খুব কম।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
জোস!
ডিসক্লেইমার: ডিসক্লেইমারটা দরকার ছিলো।
গত কিছুদিন যাবত একটার পর একটা দারুণ দারুণ লেখা পড়ে যাচ্ছি। নিজের শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিন্তাগুলিকে গুছিয়ে লেখা হচ্ছে না। আপনার লেখার কথাগুলি সবই শতভাগ সত্যি এবং আপনার মতামত বুঝতে আমার অন্তত কোন কষ্ট হয়নি। কিন্তু ওই যে অনির্বাণ সরকার বলে দিয়েছেন এই লেখার সমস্যা হল এটার উদাহরণ দিয়ে কিছু মানুষের জন্য ত্যানা প্যাঁচাতে সুবিধা হবে। তাই মনে হল অন্তত মন্তব্যের ঘরে কিছু আলোচনা করা দরকার।
প্রথমত পুরুষ-তন্ত্র একটা প্রক্রিয়ার নাম। এটা কোন একক পুরুষের সৃষ্টি না আবার এককভাবে এটার ধারক বাহক শুধু পুরুষ এই ধারনা আমার কাছে কখনই সঠিক মনে হয় নি। এই প্রক্রিয়ার সাথে পুরুষ নারী দুজনেই সংযুক্ত এবং হাজার বছর ধরে উভয়েই এই প্রক্রিয়াটাকে সচল রেখে আসছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এটাও বিশ্বাস করি না যে পুরুষ-তন্ত্রে শুধু নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হ্যাঁ, অবশ্যই নারীরা বেশি ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে কিন্তু পুরুষদেরও কম ভুগতে হয় কি? পুরুষ-তন্ত্রই পুরুষকে মানুষ হতে দেয় না, মাংস-লোভী পুরুষ বানিয়ে রাখে। পুরুষ-তন্ত্রই পুরুষকে বলে তোমাকে আঘাত পেলে চিৎকার করতে হবে, কাঁদতে তোমার মানা। পুরুষ-তন্ত্রের কারণেই সম্ভবত পৃথিবীটা অত্যাচারী ছেলেদের দখলে। চারপাশ দেখে আমার মনে হয়েছে যেই ছেলেটা দুর্বল, অসফল, ভালো মানুষ তার জন্যও পৃথিবীটা ঠিক ততখানি শক্ত যতখানি একটা মেয়ের জন্য। এই কথাগুলো বলার কারণ পুরুষ-তন্ত্র বললেই আমরা প্রথমেই নারী পুরুষ আলাদা করে ফেলি এটা তো আসলে ঠিক না। এই তন্ত্রের দ্বারা উভয়েই যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আবার এটার সাথে উভয়েই তেমন যুক্ত। তাই একটা নারী পুরুষ-তন্ত্রের ধারক বাহক হিসেবে অন্য নারীকে অত্যাচার করতেই পারে। সমস্যাটা কোন একক নারীর না সমস্যাটা আমাদের সমাজের মূলে। পুরুষ-তন্ত্রের বিষবৃক্ষ ধরে নাড়া না দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে বলে মনে হয় না।
দ্বিতীয়ত নারী হলেই নারীর জন্য সহানুভূতিশীল হবে এই ধারনাটাতেও গণ্ডগোল আছে। যে সহানুভূতিশীল সে যে কারও প্রতিই হবে আর যে না সে হবে না। অভিজ্ঞতাও এখানে একটা ফ্যাক্টর। যে যেই ঝামেলা ভোগ করেনি সে সেটা বুঝে না। এ কারণে আমার সহকর্মী মেয়েটা আমাকে যত ভালো বুঝে আমার পাশের বাসার ভাবী বা অনেক প্রিয় বোনও অনেক সময় বুঝে না কারণ তার কাছে সম্ভবত সমস্যাগুলো অচেনা। অনেকে আবার একই ধরনের অবস্থার ভিতর থেকেও বুঝে না কারণ তার কাছে মনে হয় এটাই স্বাভাবিক। সমাজের রীতিনীতিগুলোকে আমরা এমনভাবে আমাদের মনে গেঁথে নেই বা গেঁথে দেয়া হয় যে এর অন্যথা কিছু ঘটলে সেটাকেই ভুল ভাবি, নিজেদের রীতিনীতিগুলিকে প্রশ্ন করতে পারার ক্ষমতাকে খুব সুকৌশলে খুব ছোটবেলাতেই নষ্ট করে দেয়া হয়। এবং সেটা নারী পুরুষ উভয়েরই। তাই আমরা বেশিরভাগ মানুষই অনেক বড় বড় পাশ দিয়ে অনেক বিদ্বান হয়েও চিন্তা করার ক্ষমতাকে নিজেদের আয়ত্তের ভিতর আনতে পারি না।
আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য বই পড়া বদগুণ, চিন্তা করা বেয়াদবি, কথা বললেই মুখরা প্রতিবাদ তো দুরের কথা, ঘর থেকে বের হলে চরিত্রহীন, আত্মবিশ্বাসী হলে সে নষ্টা মেয়ে। এরকম ট্যাবুর ভিতর বড় হয়ে মেয়েরা আরেকজনের মতের, আদর্শের, জীবনের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হবে, অন্যের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিতে শিখবে এটাই তো আমার অস্বাভাবিক লাগে মাঝে মধ্যে।
বিয়ে, বাচ্চা, স্বামীর প্রতি কর্তব্য এই ব্যাপারগুলিতে সবসময় নারীকে বেশি সক্রিয় থাকতে দেখা যায়, এবং এটাও পুরুষ-তন্ত্রের সৃষ্টি । কিভাবে? খেয়াল করলে দেখা যায় সমাজে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই সমাজ টিকিয়ে রাখার ( স্টেরিও-টাইপ গুলিকে আবহমান রাখা) ক্ষেত্রে টাস্ক ভাগ করে দেয়া আছে। এই কারণেই পাড়ার মুদি দোকানে বসে পাড়ার আঙ্কলরা যেমন হিসেব করে কোন ছেলে ভালো বেতন পায়, কোন মেয়ে শরীরের কতখানি বের করে কাপড় পরে ঠিক একই কারণে পাড়ার অ্যান্টিরা হিসেব কষে কার কবে বিয়ে হবে, বাচ্চা হবে, কেন হবে না। এরা এটা করে কারণ এরা এটাকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করে। এদের সাথে কথা বললেই বুঝবেন এরা ভাবে এরা সমাজটাকে উচ্ছন্নে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখে কোন মহৎ কর্ম সম্পন্ন করছে। এক্ষেত্রে নারী পুরুষ কোন ব্যাপার না। অল্প কিছু মানুষ ছাড়া সবাই মোটামুটি সমাজের তৈরি এই ভয়াবহ দুঃসহনীয় এই প্রক্রিয়াটার সাথে যুক্ত।
শাসকরা তাদের হাতিয়ার হিসেবে সবসময় শোষিতদেরই ব্যবহার করে আসছে। যে কারণে ইংরেজদের পেয়াদা, লাঠিয়াল হিসেবে দেশি লোকেরাই কৃষকদের অত্যাচার করত সেই একই কারণে নারীরাই নারীদের শত্রু হয়ে ঘরে বাইরে অত্যাচারে সাহায্য করে, ইন্ধন যোগায়। মজার ব্যাপারটা হল পুরুষ-তন্ত্র নারীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আবার তারপর নিজেরাই বলে দেখ তোমরা মেয়েরাই কিন্তু মেয়েদের শত্রু। এটাকেও আমার পুরুষ-তন্ত্র টিকিয়ে রাখার আর একটা দারুণ কৌশল মনে হয়।
এত কিছু বলার পরও আমি বিশ্বাস করি এই সমস্যার সমাধান মেয়েদেরই করতে হবে ছেলেদের সাহায্য নিয়ে। অল্প কিছু আলোকিত মানুষ যারা আছে তাদেরই মুখ খুলতে হবে সবার আগে যেমন সচলায়তনে সবাই খুলছে।
কি চমৎকার একটা মন্তব্য। আপনি ভেবে দেখেন এই মন্তব্যকে আরেকটু বাড়িয়ে পুরুষ-তন্ত্র নিয়ে একটা পুরো লেখা ব্লগ হিসেবে দিয়ে দিতে পারেন কিনা। পুরুষ এবং পুরুষ-তন্ত্র এক না, ঠিক যেমন ধর্ম আর ধর্মান্ধতা এক না।
আমি আমার এই লেখাটা পোস্টের পর কিছু ফিডব্যাক পেয়েছি যেটা আপনার মন্তব্যের প্রথম প্যারার মতই। সুবিধাবাদী কিছু মানুষ এই লেখাকে ব্যাবহার করে উদাহরণ টানতে পারে, দেখছ আগেই তো বলছিলাম মেয়েরাই মেয়েদেরকে ডুবায়, মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু। আমি এজন্য লেখার শেষে ডিস্ক্লেইমার জুড়ে দিয়েছি তড়িঘড়ি। যারা বোঝার তারা বুঝবে আমি নারী নির্যাতনের একটা ছোট্ট কিন্তু বাস্তব একটা অংশ এখানে হাইলাইট করেছি মাত্র। যারা বুঝবে না তাদেরকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিচ্ছি, এই লেখাকে নারী নির্যাতনের সম্পূর্ণ অভিধান ভাবলে সেটা ভয়ঙ্কর ভুল হবে।
মজা করে এক কথায় বলতে পারি, এই লেখায় নারী নির্যাতন এর কমপ্লিট পিকচার পেতে গেলে সেটা মেহেরজানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস খোঁজার মতো ব্যাপার হয়ে যাবে
আলরেডি ইনবক্সে, ফেসবুকের মন্তব্যে নানা মুশকো জোয়ান লোকের প্রশংসা পাওয়া শুরু করেছি - ভাই, যা লিখলেন। একদম ঠিক বলছেন।নারীরা নারীর শত্রু, মেয়েদেরকে মেয়েরাই ডোবায়। হুদাই ছেলেদের দোষ দেয়।
তাই বুঝতে পারছি চান্স পেলেই এই লেখা নিয়ে ধান্দাবাজ লোকে লাইন থেকে বের হয়ে নানাদিকে দৌড় দিবে। সেই দৌড় যেন না দিতে পারে এজন্য এখানে কমেন্ট আলোচনার পুরো সুযোগ আমরা নিতে পারি।
আবারও অনেক ধন্যবাদ আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
কঠিন!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
ভাইয়া আপনি এত ভাল ক্যান? প্রত্যেকটা কথা সত্যি! কিভাবে এত সুন্দর ভাবে লেখেন, সত্য কথাগুলো।
পাপী মন জানতে চায় আপনার এত মেয়ে বান্ধবী কেনু?
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
তারকাণু দুনিয়াতে আসার আগে আরও অনেক ছিল যে!
প্রিয় চরম উদাস, আপনার এই লেখাটা ভাল লাগেনি। একপেশে মনে হয়েছে। মনে হবার কারণ এই না যে আপনি নারীকে তাদের কাজের দোষ দিয়েছেন, মনে হবার কারণ হলো তাদের এধরনের আচরনের কী ব্যাখ্যা থাকতে পারে সেটা বলেননি।
ধুসর জলছবি চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেছেন, এরপর বেশি কিছু বলার নেই আসলে। উনার কথার সাথে একটু যোগ করে দেই।
পুরুষতন্ত্র একটা তত্ত্ব যার প্রধান চালক পুরুষ। তো এ জগতে যা কিছু মহান সৃষ্টির মতো এর সৃষ্টিতে না হোক প্রতিপালনে নারীর কিছু ভূমিকা আছে। সেই ভূমিকা অন্যায়ে অংশগ্রহন ও সহায়তায়, নারী হিসেবে নয় একজন মানুষ হিসেবে।
আমাদের সমাজ একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। এখানে শুধু পুরুষতন্ত্র নেই, আছে মেইল ডোমিনেটেড সোসাইটি। এই সমাজে সিদ্ধান্ত নেন পুরুষ, বাস্তবায়ন করেন নারী।
একটা মেয়ের জন্ম থেকে দেখুন। সে জন্ম নেয়ার সাথে সাথে জানতে পারে সে পরের ঘরে চলে যাবে। তার ভাই খেলে গাড়ি আর বল নিয়ে, তার জন্য থাকে পুতুল। সেই পুতুলের চুল থাকে গোছানো, চোখটা টানা টানা, নিটোল নাক মুখ। তার মাথায় ঢুকে যায় এটাই তার চেহারা হওয়া উচিত। একটু বড় হবার পর তার বয়সী ছেলেরা যখন বাইরে খেলতে যাচ্ছে, সে তখন ঘরের ভেতরে। মা তাকে একটু একটু করে ঘরের কাজ শেখাতে শুরু করেন। এই পুরো জিনিসটা ঘটে তার ধরুন দশ বছর বয়সের মধ্যে।
বাবাকে এর থেকে দূরে রাখলাম। মা কেন করেন? কারণ মায়ের সাথেও তাই হয়েছে। মাকে বিয়ে করে আসতে হয়েছে অন্যের ঘরে, তার বরকে যেতে হয়নি। মা পুতুল খেলেছেন, পুতুলের মতো সুন্দর হবার চেষ্টা করেছেন। তাকে ঘরের কাজ করতে হয়েছে, বর রেঁধে দেয়নি, কোন সাহায্যও করেনি। ছোটবেলা থেকে তার যাবার জায়গা সীমিত কারণ বাইরে যাওয়া তার জন্য নয়। সমাজ বাজে বলবে, নিরাপত্তা দেবেনা। সমাজের মূল চালক কিন্তু পুরুষই নারী নয়।
তারপর সেই মেয়েটার বড় হওয়া শুরু হয় অন্যের আয়নায় নিজেকে দেখে। রাস্তায় বের হলে তার থেকে দশ বছরের ছোট ছেলেরাও অবলীলায় তাকে টিজ করতে পারে। প্রতিবাদ করবেন? সেই ছেলের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে দশটা লোক। পড়াশোনা শেষ করে কাজে ঢুকবে, অফিস যাচাই করবে মেয়ে তার পরিবারের সব দায়িত্ব পালন করে অফিসে সময় দিতে পারবে কিনা। এভাবে পুরো জীবনকাহিনী লিখতে গেলে দুই তিনটা লেখায়ও কুলাবে না।
শুধু বলি, এই পুরো প্রসেসটা হলো একটা চক্রের মতো। চক্রে ঘুরতে ঘুরতে মেয়েটা আর লক্ষণরেখার বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারেনা, সবাইকে নিরাপদ রাখতেও চায় এই লক্ষ্ণরেখার মধ্যে।
এখন এই যে এতগুলো লোকের কথা বললাম যারা পদে পদে বাঁধা দেয় তাদের মধ্যে কিন্তু নারীরাও আছেন। এই নারীরা কেউ এই প্রসেসের ভিক্টিম, কেউ পারপ্রিটেটর।
পার্থক্য হচ্ছে সবভাবেই সুবিধা পেয়ে যায় পুরুষেরাই। নারীদের প্রাপ্তি হয় পুরুষের কাছে/মেইল ডোমিনেটেড সোসাইটির কাছে স্বীকৃতি, ভালো মেয়ের স্বীকৃতি।
ধর্মের কথাই ভাবুন না। পর্দা করা জিনিসটা এসেছে কোথথেকে? আপনার লেখায় যিনি বলছেন পর্দা করলে এরকম হতোনা, তিনি কিন্তু পর্দা করছেন কারণ ধর্মে বলেছে পুরুষ তোমার দিকে তাকালে সেই দোষ তোমার। ধার্মিক নারী এই কথা মেনে নিচ্ছেন, এই উপদেশ দিচ্ছেন অন্যদের। বিয়ে কর বিয়ে কর বলে মাথা খারাপ করে দিচ্ছেন কারণ তিনি দেখেছেন পুরুষেরা বিয়ের জন্য কমবয়স্ক মেয়ে পছন্দ করে। যদি মেয়েটা বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেই, তিনি দেখেছেন কিছু পুরুষ অন্যায় সুযোগ নিতে চাইবে।
ওপরে যা বললাম সব মোটা দাগে বলা। এর বাইরেও আরো অনেক চিত্র আছে, আমি আপনি সবাই জানি।
আর নারী বলেই নারীকে বোঝার ইনডেমনিটি কেউ পেয়ে যান না। পুরুষমাত্রই যেমন অত্যাচারী নয়, নারী বলেই তাদের কাছে এত আশা করার যুক্তি নেই,নারীও অত্যাচারি হতে পারে।
১৯৭১ এ যখন পাকিস্তানীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আমাদের ওপরে তখন বাঙালি বলেই সবাই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায়নি, রাজাকারও হয়েছিল। ছাগু-বলদ-অত্যাচারীকে লিঙ্গ দিয়ে যাচাই করলে ভিক্টিমের যন্ত্রনাই বাড়ে, লাভ হয় কমই।
তারপরো যদি নারীর কাছে সর্বোচ্চ প্রত্যাশা করতে হয়ই তাদের জন্য সামাজিক রাষ্ট্রিয় সব সুবিধা নিশ্চিত করে তবেই করা উচিত।
তাকে একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বড় করে ১০০ ভাগ নারীতান্ত্রিক আচরন প্রত্যাশা করলে সেটা কাজের কোন কথা নয়।
যাই হোক। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এই লেখার অনেক ভুল ব্যাখ্যা এরই মধ্যে বেরিয়ে গেছে। মেয়েরাই মেয়েদের শ্ত্রু ভেবে আত্মতৃপ্তি পাওয়া লোকের সংখ্যা কম নয়, এই সংখ্যাটা আর বেশি না বাড়ুক।
শুভ নারী সপ্তাহ।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
রানা মেহের দিদি, আপনার ভালো না লাগা ও আপত্তির অংশটুকু মাথা পেতে নিলাম। আপনার কথাগুলো অনেকটা ধূসর জলছবির কথার মতোই। আমারও তাই খুব বেশী নতুন ব্যাখ্যা দেয়ার নেই।
এই লেখাটি যুক্তিতর্ক এবং ব্যাখ্যা দিয়ে লেখা না বরং চারপাশের কিছু বাস্তব ঘটনা তুলে দেয়া। ঘটনাগুলো যে বাস্তব এবং বহু মেয়ের জীবনে ঘটেছে এবং ঘটছে তা সবার প্রতিক্রিয়া থেকেই বুঝতে পেরেছি। আমার লেখা শেষ করেছি এই বলে, "পুরুষের কিল কি যথেষ্ট নয় যে আবার তার উপর বোনাস হিসেবে একে অপরকে কিলাতে হবে?"। তাই পুরো লেখাটিই আসলে কি ধরণের কিল হজম করতে হচ্ছে তার কিছু খণ্ডচিত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। সেই কিলগুলো কেন তৈরি হচ্ছে, সে নিয়ে না হয় আরেকটা লেখা লিখুক কেউ। মন্তব্যে কারণগুলো উঠে এসেছে, আরও আসুক। আপনার সাথেই আলোচনা করে লেখার শেষে এজন্য ডিস্ক্লেইমার জুড়ে দিয়েছি, যেন 'নারীর সব সমস্যার মূলে নারী' এরকম কোন জেনারেলাইজেশন কেউ না করে। তারপরেও সুযোগ নিবে অনেকে। মন্তব্যে আলোচনা হচ্ছে, আরও হোক। লেখা পুরো না পড়েই কেউ যদি ভুল ব্যাখ্যা করে, বলছিলাম না মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু বলে বগল বাজায় সেটা তার চিন্তা ও মানসিকতার সমস্যা। লেখক হিসবে যা যা ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব সেগুলো আমি কয়েকবার দিয়েছি, দরকার হলে আরও দেব।
লেখায় যা আছে সেগুলোতে যদি কিছু ভুল থাকে ধরিয়ে দিন, একমত হলে সংশোধন করে দিবো। আর যা যা নেই তা তা জুড়ে দেয়ার জন্য মন্তব্য আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সমস্যাগুলো তুলে ধরা এবং কিছু বাস্তব উদাহরণ দেয়াকে যথেষ্ট মনে করেছি লেখাকে সম্পূর্ণ করার জন্য। মেয়েদের এই আচরণের কারণ কি সেগুলো নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে আরও কেউ লিখুক। আরও আলোচনা চলুক।
সবশেষে অনেক ধন্যবাদ আপনার বিস্তারিত এবং কিঞ্চিৎ কঠোর () মন্তব্যের জন্য। মারাত্মক লিখছেন ভাই, ফাডায়লাইছেন ভাই এর গৎবাঁধা পীঠ চাপড়ানো বাদ দিয়ে এরকম আলোচনার মাধ্যমেই বরং লেখা আরও শুদ্ধ হয়, সত্য উঠে আসে। (পাম দিলাম আরকি যেন আর বকাবকি না করেন )
প্রাসঙ্গিক জ্ঞানে আমার একটি লেখার অংশবিশেষ,
ভাল লেগেছে উদাস ভাই।কারো কারো কাছে কেন একপেশে মনে হল জানিনা।নারীরা যে নারীদের কিলায় সেটা তো সত্যি, তার মানে এই না যে পুরুষরা নারীদের কিলায়না।সেটা নিয়ে আপনার অন্য লেখা আছে। এই লেখাটা নারীদের নারী কিলানো নিয়ে, সেখানে ব্যালেন্স করার জন্য পুরুষদের নারী কিলানোর কথাও বলতে হবে,সেটা জরুরী মনে করিনা।অমুকে খারাপ কিন্তু তমুকে আরো খারাপ -এমন শোনায়।
প্রগ্রেসিভ মাইন্ডের ছেলে-মেয়েরাও এখন পরস্পরকে বিয়ের জন্য গুঁতায়। অবশ্য তাদের উদ্দেশ্য আর কিছু না, শুধু একটা বিয়ে খাওয়া এক বান্ধবী আমা্দেরকে বলসিল, বিয়েতে আর কিই বা খাবি, বিরিয়ানিই তো, চল তোদেরকে খাওয়াই, তাও আর জ্বালাস না।
প্রিয় চরম, আমি ধূসর জলছবি আর রাণা মেহের-এর সাথে সহমত। দেখো, প্রথম পয়েন্ট - "বউ কি সেবা যত্ন করে?"-এর শেষ লাইন-এর আগে পর্যন্ত আমার এ লেখার সাথে কোন বিরোধ লাগে নি। কিন্তু, যেই তুমি এই শেষ লাইনাটা বসালে "কেন যেন বউ এর কথায় ... ... উত্তেজক কথাগুলোর বেশীরভাগ নারী মহল থেকেই ছড়ানো হয়, বিয়ের পরপরেই।" তুমি কি চমৎকার ভাবেই না, পুরুষতন্ত্রের ভয়ংকর ষড়যন্ত্রটার সঙ্গ দিয়ে ফেললে। "কেন যেন"-র মত লুকানো ছুরি বের হয়ে এল - হায় ব্রূটাস, তুমিও! তুমি ত জানো, এই "কেনো"-টার উত্তর। সেই উত্তরটার সঠিক উপস্থাপন না থাকায় (যেটা দুই দিদি করেছে - স্যালুট তাদের) এ লেখা নারীর আরও কিল খাওয়ার-ই আয়োজন হয়ে বসল।
ঐ লাইন-টাই লেখাটার দিকনির্দেশী লাইন। তাই লেখার শেষও হয় এই বলে - "পুরুষের কিল কি যথেষ্ট নয় যে আবার তার উপর বোনাস হিসেবে একে অপরকে কিলাতে হবে?" পুরুষের কিল এট্টুস কম হলে নারীরা একে অপররে কিলালে চলত, এই আর কি! কেন আঘাত সেটা হিসেবে না এনে আঘাত নিয়ে স্যাটায়ার আহতের বেদনা বাড়িয়েই দেয়, তাই না?
"লেখাটার বিপদ" ডিস্ক্লেইমার জুড়ে দিয়ে কেটেছে বলে আমার মনে হয়নি, শিরোণাম বদলে দিয়েও কেটেছে বলে মনে হয় নি। আর, এ লেখায় বিপদ কার বেশী হল - লেখার না নারীর?
ধুস! আমার এত প্রিয় লেখকের লেখায় এইসব লিখতে হল, ভাল্লাগে না!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
কেন যেন উত্তেজক কথাগুলোর বেশীরভাগ নারী মহল থেকেই ছড়ানো হয়, বিয়ের পরপরেই -> কথাটা পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে আবারও বলছি। আপনি অবশ্যই চাইলে দ্বিমত করতে পারেন। সেই অধিকার অবশ্যই আপনার আছে। কিন্তু আমি আবারও সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে এই কথাটা রিপিট করছি। সেই সাথে এও বলছি আমার কোনভাবেই মনে হয়না এ কথার মাধ্যমে আমি পুরুষতান্ত্রিকতার সঙ্গ দিচ্ছি।
পুরুষের কিল কি যথেষ্ট নয় যে আবার তার উপর বোনাস হিসেবে একে অপরকে কিলাতে হবে -> এই কথাটাও সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে বলছি। হ্যাঁ, পুরুষের কিল যদি কম হতো তাহলে নারীরা না হয় একে অপরকে হালকা কিলালে সমস্যা ছিলোনা। কিন্তু পুরুষ শাসিত সমাজে থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের নির্যাতন এর সঙ্গী হবার মানে নেই। ঘুরেফিরে সেই নারীও তখন পুরুষতান্ত্রিকই হয়ে যায়।
আপনার নিজের যা চিন্তাভাবনা সেটা নির্দ্বিধায় খুলে বলবেন। প্রিয় লেখক বলে ছাড় দেবার মানে নেই। ছাড় দিতে থাকলে লাই পেতে পেতে সেই প্রিয় লেখকই তখন যাচ্ছেতাই লিখে পাবলিককে গেলানোর চেষ্টা করবে।
আমি লেখাটা আবারও কয়েকবার পড়লাম। আমার কাছে মনে হয় আমি যেই ডিসক্লেইমার দিয়েছি সেটা যথেষ্ট যে কোন রকমের ভুল বুঝাবুঝি এড়ানোর জন্য। আপনার কাছে যথেষ্ট মনে হয়নি, আপনি প্রতিবাদ করেছেন। আপনি যেমন আমার লেখার সাথে একমত নন, আমিও আপনার মন্তব্যের সাথে একমত নই।
আমি যেরকম আপনার ও আরও কয়েকজনের কাছ থেকে লেখাটির বিষয়ে তীব্র আপত্তি পেয়েছি, তেমনি অনেকে লেখার সাথে লাইন বাই লাইন একমত বলেও মতামত জানিয়েছেন। নিজের জীবনের সাথে কোরিলেট করে অনেক ঘটনার কথা জানিয়েছেন। আসাধারন আবেগপূর্ণ অনেক ফিডব্যাক পেয়েছি, পুরুষ নয় ভুক্তভুগি অনেক নারীর কাছ থেকেই। আমাকে লেখাটি আবার নতুন করে লেখার সুযোগ দিলে আমি সম্ভবত যা লিখেছি সেটার তেমন কোন পরিবর্তন করবোনা। শুধুমাত্র জেনারেলাইজেশন যেন কেউ না করে সেই বিষয়ে সতর্ক করা ছাড়া (যেটা লেখা শেষে ডিস্ক্লেইমার হিসেবে জুড়েছি)। তাই সবশেষে 'আমি আসলে এইটা বলে ওইটা বুঝিয়েছি, এর মানে আসলে সেই' জাতীয় কথা না বলে যা বলেছি আবারও সেটার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছি।
আমার মনে হয়, উনি বুঝিয়েছেন, "কেন যেন এই ধরনের উত্তেজক কথাগুলোর বেশীরভাগ নারী মহল থেকেই ছড়ানো হয়"- বাক্যে "কেন যেন" কথাটি একরকম অবজ্ঞা আর অভিযোগের মিশেল শোনায়। তাছাড়া এই কেন-র উত্তর যেহেতু আপনি জানেনই, তাই যখন "কেন যেন নারীরাই ছড়ায়" বললেন, তখন আরও অনেকেই বলার সুযোগ পেয়ে গেল, "আসলেই তো, ক্যান ছড়ায়! সব ওদের দোষ"। তাই বোধহয় উনি বলেছেন, "এই লাইন-টাই লেখাটার দিকনির্দেশী লাইন"। আপনি আপনার অভিজ্ঞতা থেকে অবশ্যই দেখেছেন, প্রায় সব মানুষকেই তার নীচু দিকটা সরাসরি দেখিয়ে দিলে তার ডিফেন্স মেকানিজম তাকে আরও খেপিয়ে তোলে। তার পরেই আসে denial, সবশেষে কিছু অযথা বিপরীত যুক্তি। আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় সেই নীচু মনের মানুষদের মাথায় কিছুটা ঘিলুর সঞ্চার করা, তবে এ ধরনের শব্দচয়ন আসলে গুরুত্বপূর্ণ। না হলে ওই মানুষগুলি আপনার লেখাগুলো পড়ে এমনই করবে, নতুন যুক্তি দিবে, মেয়েদের দোষ, ছেলেদের দোষ হাবিজাবি কথায় মেতে উঠবে। আর আপনার লেখাটা হয়ে উঠবে কিছু সমমনা মানুষের একমত হওয়ার জায়গা। (এমনিতে আমি আপনার লেখার বেশ ভক্ত, আর আপনি যদি চেতে গিয়ে বলেন, আমার লেখার উদ্দেশ্য জ্ঞান বিতরণ না, তাহলে আগেই ক্ষমা চাই)
বুঝতে পেরেছি কি বলতে চাচ্ছেন। "কেন যেন" কথাটা আসলে পুরোপুরি অবজ্ঞা নিয়ে না বরং বিরক্তি নিয়ে বলা। আমার কাছে মনে হয়েছে এই কেন যেনর উত্তরটা যেমন আমি জানি, বাকি সবার কাছেও সেটা পরিষ্কার। আর যাদের কাছে এখনও পরিষ্কার না, তাদের জন্য এই আলোচনা, এত এত মন্তব্য তো রয়েই গেল।
আমার প্রবল দ্বিমত শুধু এটাকে লেখার দিক নির্দেশনী লাইন বলাকে।লেখাটা মূলত বাস্তব অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে। এর জন্য দায়ী কে, কেন এমন ক্যান হয়, কি তার সাইকোলজিক্যাল কারণ এই লেখাতেই অনেক দারুণ আলোচনা হয়েছে। এগুলো নিয়ে আলাদা লেখায়ও আলোচনাও চলতে পারে। ধূসর জলছবি তার কথাগুলো গুছিয়ে ইতোমধ্যে একটা লেখা দিয়েছে। এর জন্য দোষী আসলে কে সেটা ফোকাস না করে আমি লেখায় মূলত সমস্যাটাকেই ফোকাস করতে চেয়েছি। এবং এই সমস্যা যে একদম ঘরে ঘরে সেটা লোকজনের অভাবনীয় রেসপন্স দেখেই বুঝেছি।
চরম উদাস, দুঃখ নিয়ে বলতে হচ্ছে একটা গঠনমূলক সমালোচনাযুক্ত মন্তব্যে আপনার এহেন পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবে দুষ্ট উত্তরটা ভাল লাগল না। আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অসাধারণ। আপনার উল্লেখিত ঘটনাগুলো বেশিরভাগ মেয়েকেই জীবনে শুনতে হয়। কিন্তু, ঘটনাগুলো বলার সাথে সাথে আপনি নিজের কিছু মতামত যখন জুড়ে দিচ্ছেন, সেগুলোতে সতর্ক থাকা খুবই জরুরি বলে মনে করি। কারণ সচলায়তনে নারী সপ্তাহের মূল উদ্দেশ্য সমাজে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথটাকে মসৃণ করা, বন্ধুর না।
“কেন যেন উত্তেজক কথাগুলোর বেশীরভাগ নারী মহল থেকেই ছড়ানো হয়, বিয়ের পরপরেই” আপনার এই কথাটা ভীষণভাবে আপত্তিকর। আপনি এখানে বলতে পারতেন, আপনার পরিচিত গন্ডির মধ্যে নারীরাই প্রধান ভূমিকায় ছিল। অন্য অনেকের ক্ষেত্রে সেটা নাও হতে পারে। কিন্তু এই কথাটা বলে আপনি নিজের অজান্তেই পুরুষতন্ত্রের অন্যতম অস্ত্রঃ “নারীরাই নারীদের প্রধান শত্রু” এতে অংশগ্রহণ করে ফেললেন। কিছুক্ষণ আগে সচলায়তনে “সমতা,ন্যায্যতা এবং নারীবাদ” বলে একটি লেখায় ইকুয়ালিটি (সমতা) আর ইকুইটি (ন্যায্যতা) নিয়ে কথা এসেছে। আপনার কথাটা খাটতো যদি আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের সমতা থাকত। অর্থাৎ, পুরুষ-নারী সমানভাবে সব কাজ করছে। এর একটা উদাহরণ হতে পারে, সমাজের অর্ধেক পুরুষ যদি বাইরে কাজ করত, আর অর্ধেক যদি ঘরে বসে সন্তান পালনে মনোযোগী হত, যেটা নারীদের ক্ষেত্রে খাটে। যেহেতু তা নেই, আমাদের ন্যায্যতার পথে হাঁটতে হবে। আমাদের আগের প্রজন্মের মা-খালা-চাচীদের বেশিরভাগের কাছেই বাচ্চা না নেয়া বা চাকরি করা কোনো চয়েস বা পছন্দের ব্যাপার ছিল না। তারা এটাকেই নিয়তি বলে জানতো। তাদের জগতটা তাই তৈ্রিই হয়েছে অন্দরমহলের কথাবার্তা দিয়ে, যেখানে সন্তান, বিয়ে এগুলোই প্রধান ইস্যু। এখনকার নারী প্রজন্ম একটা মধ্যবর্তী প্রজন্ম, যারা বাড়িতে দেখেছে মায়েদের সন্তান পালনকারীর ভূমিকায়, কিন্তু স্কুলে, সিনেমায়, বইয়ে পড়েছে নারীদের ক্ষমতায়নের কথা। তার ফলশ্রুতিতে এখনকার নারীদের কিছু হচ্ছে একইসাথে কর্মজীবী এবং সন্তান পালনকারী, কিছু হচ্ছে শুধু সন্তান পালনকারী যারা স্বপ্ন দেখছে তাদের মেয়ে সন্তানরা বড় হয়ে স্বাবলম্বী হবে, আর হাতে গোনা গুটি কয়েকজন আছে যারা সন্তান পালনকে নিজেদের কাজ হিসেবে বিবেচনাই করছে না, তারা অসম্ভব সাহসী হয়ে পুরুষ-নারী সবার কটাক্ষকে পাশ কাটিয়ে বিশ্ব জয় করার স্বপ্ন দেখছে। যখন এই শিক্ষিত মায়েদের পুরুষ-নারীসন্তানরা বড় হবে, আরো কয়েক প্রজন্ম পরে, তখন আমাদের মধ্যে একটা সমতা আসবে। সে সমতা না আসা পর্যন্ত আপনার বলা এই কথাটা সেইসব নারীদের সংগ্রামকে একটু হলেও ছোট করে। এবং তাদেরকে অনুৎসাহিত করে নিজেদের সংগ্রামের গল্প বলতে। যেমন আপনার লেখার শিরোণামটাই যথেষ্ট আমাকে এই আলোচনায় অংশগ্রহণে অনুৎসাহিত করার জন্য। ফলে, আমরা আবার সেই ঘর-সংসার নিয়ে আলোচনাকারীদের গল্পগুলোই বারবার শুনি। কারণ তারা সংখ্যায় এখনও বেশি।
আপনি সমতায়(ইকুয়ালিটি) বিশ্বাসী হয়ে থাকলে আপনার কথাটা বলা ঠিক আছে। কিন্তু আমি ন্যায্যতায় (ইকুইটি) বিশ্বাসী। তাই, আমার কাছে আপনার কথাটা ঠিক লাগেনি।
একই ভাবে ঠিক লাগেনি আপনার মায়ের বাচ্চা সংক্রান্ত প্রশ্নে আপনার উত্তর। আমাদের বেশিরভাগের মাকেই যদি ইলেক্ট্রিসিটি বিল বা বাড়ি ভাড়া দিতে বলি সেটা তারা বুঝতে সক্ষম হবে না। কারণ তাদের বেশিরভাগকেই এই কাজটা করতে হয়নি। যেটুকু টাকা স্বামী হাতে দিত, তাই দিয়ে ঘর চালানোটাই তাদের মূল সংগ্রাম ছিল। সন্তানের পাশাপাশি সেই টাকা দিয়ে তাদের গ্রাম থেকে আসা আত্মীয়-স্বজনের খাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হত। কখনো নিজের শাড়ীটা, শখের জিনিসটা অথবা একবেলা খাওয়াটা বিসর্জন দিয়ে। তারা কিন্তু বোকা ছিলেন না। তারা অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাদটাই কখনো পাননি। তাই বুঝতেও পারেননি অর্থ উপার্জনের কষ্টটা। তাই তাদের সাথে এমন ভাষায় কথা বলা উচিত যেটা তারা বুঝবেন। যেমন, তাদের বউমা সারাদিন কতটা কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে এসে ঘরের কাজগুলোও করে যেন দুজনে মিলে সুন্দর জীবন যাপন করা যায়, বেড়ানো যায়, রেস্টুরেন্টে খাওয়া যায়, সন্তান ছাড়াও কত সুখী থাকা যায়। যেগুলো তারা কখনো করেন নি হয়তো। এর পরেও তারা হয়তো বুঝবেন না। তখন আমাদেরকে তাদের বাস্তবতাটা বুঝতে হবে। বুঝতে হবে তাদের কাছ থেকে সমতা আসা করে লাভ নেই, কারন তারা সমতা / ন্যায্যতা কোনোটাই পাননি। তাই তাদের প্রতি ন্যায্য আচরণ করতে হবে।
এত কিছু লেখার কারণ আপনার লেখাটা আপনার লেখার গুণে এবং জনপ্রিয়তার কারণে অনেক বেশি শেয়ার হচ্ছে। তাই আপনার দায়িত্বটাও হয়তো বেশি। আর ওই যে, লেখাটার কিছু কিছু কথা সেই নারীদেরকেই বিপদে ফেলছে। তা নিশ্চয় আপনার উদ্দেশ্য ছিল না।
জলপদ্ম
ধন্যবাদ জলপদ্ম আপনার মন্তব্যের জন্য।
-> ভাল লাগা না লাগা আপনার অধিকার। তবে আমাকেও দুঃখ নিয়েই বলতে হচ্ছে আপনার এ কথাটা আমার কাছে স্টেরিওটাইপিং এবং সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় মনে হল। "পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবে দুষ্ট উত্তর" ঠিক কোথায় খুঁজে পেলেন তার নির্দেশনা না দিয়ে নিজেই বিচারক হয়ে আমার মনোভাব বুঝে ফেললেন। রানা মেহের দিদি বা এক লহমা দিদি একদিন দুদিন ধরে আমার লেখার পাঠক নন, আমিও একদিন দুদিন ধরে উনাদের পাঠক না। ব্যক্তিগত পরিচয় না থাকলেও ব্লগ সূত্রে দুজনই আমার পরম শ্রদ্ধার পাত্র। তাদের কারো কমেন্টের উত্তর আমি হেলাফেলা করে দিব বা "পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবে দুষ্ট উত্তর" দিব, সজ্ঞানে এরকম আশা করি না। যে যে জায়গাতে তাদের সাথে একমত হয়েছি সেটা বলেছি। যা নিয়ে পুরোপুরি একমত হইনি সেটাও তাদের মতের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই জানিয়ে দিয়েছি। আশা করি তারা এসে আমাকে নিশ্চয়ই জানিয়ে যাবেন আমার দ্বিমত প্রকাশের ভাষাটা তাদের কাছে আপত্তিকর বা দুষ্টু পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব মনে হয়েছে কিনা।
আপনার দ্বিতীয় প্যারার সাথে আমি প্রায় একমত। 'কেন যেন' শব্দটার আপনার কাছে বা এক লহমা দিদির কাছে চরম আপত্তিকর মনে হয়েছে, আমার কাছে লেখার মূল বিষয়বস্তুর তুলনায় সেটাকে খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ বা ওই লাইনের মাধ্যমে 'নারীকে সবসময় নারীই ডুবায়' বলে প্রকাশ করেছি বলে মনে হয়নি। এ নিয়ে উপরেও ব্যাখ্যা দিয়েছি। তারপরেও বারবার ভেবে এবং কয়েকজনের আপত্তি শুনে মনে হচ্ছে 'কেন যেন' কথাটা পাল্টে হয়তো আরেকটু সুন্দর করে লেখা যেত লাইনটা।
-> হয় আপনি এই অংশটি ঠিকমতো পড়েননি, অথবা আমি ঠিকভাবে লিখতে পারিনি। নাহলে আমি আমার লেখায় মাকে ইলেক্ট্রিসিটি বিল দিতে বলেছি বলে মনে হবে কেন?
"so you have an opinion about my life which one of my bills will you be paying this month?" এই ফেমাস কোট দিয়ে পাড়ার লোকে যে অযথা ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলায়, সেটার কথাই বুঝিয়েছি। আর আপনি চলে গেলেন মাকে স্বামী টাকা হাতে দেয় না, মাকে সংসার চালানোর সংগ্রাম করতে হয় ... কিসের মধ্যে কি?
লেখাটাকে কেউ যেন জেনারেলাইজেশন না করে ফেলে সে ব্যাপারে শুরু থেকেই অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছি। বারবার সেটা উল্লেখ করছি। প্রতিটা মন্তব্যে অংশ নেয়ার চেষ্টা করছি। আমার লেখা তো আর ঐশী বাণী না যে লেখা পড়ে লোকজনে লাইন বাই লাইন অক্ষরে অক্ষরে সেটা মানবে, নারীকে বিপদে ফেলার অস্ত্র পেয়ে যাবে। আমি তো বরং অন্যভাবে দেখছি ব্যাপারটা। এ নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে বলেই তো কনফিউশন আর জেনারেলাইজেশন দূর করার সুযোগ পাচ্ছি আমরা। লেখাটা অনেক শেয়ার হচ্ছে বলেই না এটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আপত্তির অংশগুলো আরও উঠে আসছে। আসুক না। মতামত চলুক।
আমার অপ্রয়োজনীয় বাক্যটার মতই অপ্রয়োজনীয় আমার জন্য জানা যে কে আপনার কত দিনের পাঠক। আপনার একটা মন্তব্যের প্রতিউত্তরের জন্য হয়তো আমার আপনার সব ব্লগে উনাদের করা মন্তব্যগুলো ঘুরে আসা উচিত ছিল। আমি আপনার ব্লগের গুণমুগ্ধ নিয়মিত পাঠক। কখনো মন্তব্য লিখে সেটা জানানোর প্রয়োজন বোধ করিনি। আজকে প্রিয় লেখকের লেখায় একটা ভুল দেখে মনে হল সেটা ধরিয়ে দেই। শ্রদ্ধার জায়গা তৈরির সম্ভাবনা হারালাম মনে হচ্ছে।
এই অংশটা পড়ে মনে হল চাঁদা তুলে ইলেক্ট্রিসিটি বিল দেবার কথা বলেছেন। আমার বোঝার ভুল হতে পারে।
আপনার লেখাটা পড়ে যা মনে হয়েছে তা সংক্ষেপে বলে বিদায় নিচ্ছি ঃ আপনার লেখায় সমতা আছে, ন্যায্যতা নেই। যতদিন সমাজে নারীর ক্ষমতায়নে পূর্ণ সমতা না আসছে ততদিন নারীকে কিলানোর জন্য শুধু নারীকে আলাদা করে দেখাটা সমস্যাজনক। পূর্ণ সমতা = নারী পুরুষ একে অপরকে সমান কিলায়/কিলায় না। তখন আমরা পুরুষের পুরুষকে কিলানো নিয়ে কথা বলব, নারীর নারীকে কিলানো নিয়েও বলব। আপনি যেহেতু বিষয় নির্বাচনেই একটা গন্ডগোল করে ফেলেছেন, তাই নানান রকম ডিস্ক্লেইমার দিয়ে সেটাকে সমাধানের পথ খুঁজছেন। জেনারালাইজেশন থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছেন। লেখার সময় সচেতন হয়ে এই বাক্যগুলো পরিহার করলে এবং বিষয় নির্বাচনে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কিলানোটাও উঠে আসলে এই অতিরিক্ত কষ্টটা আপনাকে করতে হত না। ধন্যবাদ।
ঘুরেফিরে সেই ঝোপেঝাড়ে কুপিয়ে গেলেন। তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা প্রকাশটাকে কি কুৎসিতভাবে হেলাফেলা করে সেটার মানে বানিয়ে দিলেন, আমি আমার অন্য ব্লগে করা উনাদের মন্তব্য আপনাকে ঘুরে আসতে বলছি। একে অপরের লেখালেখি এবং মানসিকতা সম্পর্কে ধারণা রাখি বলে তাদের সাথে আমার ভুলবুঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই এবং তাদের সাথে কোন বিষয়ে একমত না হলেও কোনভাবেই তাদেরকে "পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবে দুষ্ট উত্তর" দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি দেখতে চাচ্ছিলাম তাদেরকে দেয়া ঠিক কোন উত্তরটিকে আপনার কাছে সেরকম মনে হয়েছে। আর তার উত্তর কিনা এই!
আমার লেখায় সমতা, ন্যায্যতা কোনটি নেই। বারবার বলছি, আবারও বলছি আমি শুধু কিছু সমস্যার দিকে আঙ্গুল তুলেছি মাত্র। এর জন্য দায়ী কে, কি ধরণের সাইকলজি তা নিয়ে অনেক মন্তব্য হচ্ছে। আরও লেখাও এসেছে। আমার কাছেও মনে হয়েছে আপনার মন্তব্যে আদেশ আছে, উপদেশ আছে কিন্তু কোন আলোচনার মনোভাব বা যুক্তি নেই। বিষয় নির্বাচন ভুল, পাশাপাশি পুরুষদের কিলানো উঠে আসতে হবে, এভাবে এভাবে লিখতে হবে সবই আপনার মত। কথাগুলো মতের মতো করে বললে ভাল হয়, আলোচনার সুবিধা হয়। আদেশ, নির্দেশ এর ভঙ্গিতে এই করতে হবে, আপনি এই ভুল করেছেন, এইখানে সচেতন হতে হবে বললে আলোচনার রাস্তা থেমে যায়। মত প্রকাশের অধিকার আপনার আছে। একইভাবে সেটাকে অযৌক্তিক মনে হওয়াতে সেটা গ্রহন না করার অধিকার লেখকের আছে। ঠিক যেমন যখন আওয়ামীলীগের কোন কাণ্ডের সমালোচনা করতে গিয়ে, আমি যে আসলে জামাত না প্রমাণ করার জন্য জামাতকেও সেই লেখায় সমপরিমাণে গাল দিয়ে পাল্লা ব্যালেন্স করার কখনো চেষ্টা করিনি। ঠিক তেমনি এই লেখায় এই স্পেসিফিক সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমি যে আসলে নারীবাদী সেটা প্রমাণ করার জন্য নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কিলানোর কথা বলিনি। প্রয়োজনীয় মনে হয়নি।
আপনার কাছে ডিস্ক্লেইমার দেয়া বা এত এত আলোচনা করা অতিরিক্ত কষ্ট মনে হচ্ছে। আমার কাছে সেটাকেই ব্লগের সৌন্দর্য মনে হচ্ছে। যদি আলোচনা সমালচনাকে ভয় পেতাম তবে ব্লগ লেখা ছেড়ে পত্রিকার পাতাতেই মনের খুশীতে যা ইচ্ছা লিখে যেতাম। এত এত কথা হচ্ছে এই বিষয়গুলো নিয়ে, আমি লেখায় যা যা মিস করেছি সেগুলো নিয়ে আরও লেখা আসছে, সবাই সচেতন হচ্ছে এটাই ব্লগের সার্থকতা।
প্রজাতি হিসেবে একলিঙ্গে বিবর্তনের আগ পর্যন্ত নারীপুরুষ বিরোধ থাকবেই।
আপনার লেখাটির সাথে সহমত।
কিন্তু আরেকটা দিক না বলে পারছি না। সামাজিকভাবে আমরা পরিবর্তনকে বা "বাক্সের বাইরে" বের হওয়াকে অসম্ভব ভয় পাই। মেয়েদের যেমন বাক্স আকারে বলেছেন বিয়ে কর, বাচ্চা পয়দা কর... ইত্যাদি, একই ছক পুরুষের ক্ষেত্রেও খাটানো হয়। স্কুল পাশ করে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ো, চাকুরী কর / বিদেশ যাও, বিয়ে কর, স্ত্রীর সাথে সংসার কর ইত্যাদি। এই ছকের বিন্দুমাত্র এদিক ওদিক হলে (তা যে কারণেই হোক) মানুষ সহজে ক্ষমা করতে পারে না।
পারসোনাল চয়েস বা ব্যক্তি স্বাধীনতার খুব একটা মূল্য আমাদের সমাজে দেওয়া হয় না, আর প্রবাসী সমাজে তো আরও না। কান কথা লাগানোর যে অভ্যাসের কথা বলেছেন, সেটার সাথেও হাড়ে হাড়ে পরিচিতি ঘটেছে অধমের। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হোল, মানুষ পুরো সত্য না জেনেই ইচ্ছেমত গুজব ছড়াতে থাকে। (আপনার miscarriage এর কাহিনীটা রিলেট করতে পারি) বিদেশে আসলে মনে হয় পরচর্চা এবং পরনিন্দায় আরও বেশি মানুষ মনোনিবেশ করতে পারে।
সাজিদ চৌধুরী
বাচ্চা কবে নিবা?আজব কেউ কি বুঝে না,এটা পারসোনাল একটা ব্যাপার।আর আমাদের মেয়েদের উচিত এই ধারনা থেকে বেড় হয়ে আসা।লেখাটা খুব ভালো লাগলো।
অনেকদিন পর সচলে ব্লগ পড়ছি। আলোচনাগুলো পালাগান পর্যায়ের মনে হচ্ছে। পালাগানে নারী না পুরুষ কে বড় এ নিয়ে রাতভর গান-বাজনা চলে। কিছু প্রশ্ন থাকে। প্রশ্নের উত্তরগুলোও পালাগানের শ্রোতার লেভেল বুঝে।
সচলায়তনে বিষয় বিশেষজ্ঞ অনেক আছেন। তারা এক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানের ছুরি-কাঁচি ব্যবহার করে যদি আলো ফেলেন ভালো হয়। সাধারণ জ্ঞানে অনেককিছুই ধরা পড়ে না।
নারী-পুরুষ এই লিঙ্গগত পার্থক্যটাই কি বড় অপরাধী?
স্ত্রী যদি পিএইচডি করা ভার্সিটির অধ্যাপক হোন আর স্বামী হন ইন্টারমিডিয়েট পাস ঠিকাদার। তাহলে কি সমীকরণ ভিন্ন হয়? কিংবা স্ত্রী যদি মাসে ৫ লাখ বেতনের চাকরি করেন আর স্বামী আয় করে ৫০ হাজার। তবে কি পরিস্থিতি পাল্টে যায়?
শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মোবাইল ফোন কোম্পানি বা এনজিও-তে চাকরি করা দম্পতি, আর রওশন-এরশাদ-বিদিশা দম্পতির সমীকরণ কি একরকম? শহরের গার্মেন্টসকর্মী - রিক্সাআলা দম্পতি কিংবা গ্রামের ছুটা ঝি আর মৌসুমী চৌকিদার দম্পতির সমীকরণ কি এক?
নাকি আমরা শুধু আমাদের নিয়েই কথা বলি। তত্ত্ব বানাই। হতেই পারে। তবে তাকে একটা ব্র্যাকেট দিতে হবে। আমরা কারা?
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
শোহেইল ভাই, আপনার এরকম কথা আপত্তিকর ও অসম্মানজনক।
আর যারা কথা বলেছেন তাদের এরকম কথা বলার যোগ্যতা আছে কি নেই এই সিদ্ধান্তে আপনি কীকরে উপনীত হলেন?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
রানামেহের বিষয় বিশেষজ্ঞ বলে আমি কি সচল হিসেবে আপনাকে অসম্মান করেছি মনে করছেন?
আমারতো মনে হচ্ছে, আপনি আপনার এই মন্তব্য দিয়া যারা পালাগান করে তাদের অসম্মান করলেন। কারণ পালাগানের সাথে তুলনায় আপনি আপত্তি ও অসম্মান দেখছেন। পালাগান যারা করে তারা কি অযোগ্য আপনার চোখে?
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
হাহাহা। একটু উল্টো হয়ে গেলনা ভাইয়া?
আপনার কথা একটু আবার পড়ে দেখুন। আপনি নিজেই পালাগানের শ্রোতা যারা পুরুষ বড় না নারী বড় তা নিয়ে আলোচনা করে (যেটা এখানে লেখার পক্ষে-বিপক্ষে যারা কথা বলছে কেউ করছেন না) বলে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ যারা আছে তাদের কথা বলতে বলছেন।
এখন আমি ত্যানা প্যাচাতে পারি, যারা সাধারণ জ্ঞানে কথা বলেন, তাদের সবসময় কথা বলার দরকার নেই তাহলে?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ভাইরে করুণ পরিণতি আর কারে বলবো, এখন লেখাটা পড়ে পড়ে শোনাতে হলো। তিনি আরামসে বসে বসে শুনলেন।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
সময় হইছে বিয়ে কর [দাওয়াত পাওয়ার জন্য। বিয়ে করার খরচও কেউ দিবে না। সংসারের দায়িত্বও কেউ নিবে না ]
সময় হইছে বাচ্চা নে [আবারও একী দাওয়াত খাওয়ার চিন্তা (আকীকা, মুখে-ভাত,জন্মদিন )। খাবার, ডাক্তার, হসপিটাল,যাবতীয় দায়িত্ব -- কেউ নিবে না]
সময় হইছে বাচ্চা মানুষ কর [এক ঘন্টার জন্যও কেউ বেবী-সিটিং করবে না। তবে বাচ্চা কত দুষ্ট আর পাজি সেটা দিকে দিকে বলার জন্য দৈনিক গড়ে ৪-৫ ঘন্টা ব্যয় করবে। আসল কাহিনী - বাচ্চার বিভিন্ন পরীক্ষাতে পাসের মিষ্টি, পার্টি, দাওয়াত, চাকরি পাওয়ার মিষ্টি, ব্যবসা শুরু করার খাবার। চারদিকে দাওয়াত]
সময় হইছে বাচ্চার বিয়ে দে [দাওয়াত, কাচ্চি, বোরহানি, ঝিলিক-মিলিক ছবি]
সময় হইছে বাচ্চাকে বাচ্চা বানাতে বল [দাওয়াত,দাওয়াত,দাওয়াত]
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
কথা সত্য। বাঙ্গালিকে খাওয়ায় দিলে কথা শোনানো বন্ধ থাকে। মুখ কোনভাবে ব্যস্ত রাখতে হয়, চর্ব চোষ্য খেতে না পেলে আপনার মাথা খাবে কথা দিয়ে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
জীবনে এই টপিক নিয়ে কম প্যানপ্যান করি নাই। কিন্তু, খুব কম মানুষের কানেই যথার্থভাবে কথাটা ঢোকাতে পেরেছি। নারীবিদ্বেষী ট্যাগও খেতে হয়েছে। এদ্দিন মনে করতাম, আমার বোঝানোর ব্যার্থতা। এখানকার মন্তব্যগুলো পড়ে এখন মনে হচ্ছে, আর সবার মগজের ব্যার্থতাটাই বড়।
নারীদের পেছনে পড়ে থাকার (নারীরা পেছনে পড়ে আছে কি'না এটা গ্যাজানোর টপিক হতে পারে। তবে এটাই সত্যি) মূল কারণ দিনশেষে প্রধানত (একমাত্র নয়) নারীরাই। আরও নির্দিষ্ট করে বললে নারীর চিন্তার সীমাবদ্ধতা। নারী আর পুরুষ যে নিজস্ব ক্ষেত্রের দক্ষতার বিচারে সমান এটিই অনেক কিংবা অধিকাংশ নারীই মানতে চায় না। পেছনে পড়ে থাকাটা ওখান থেকেই শুরু হয়। আর গাছের শাখা-প্রশাখাগুলো যখন আকাশের দিকে না বেড়ে মাটির দিকে বাড়তে থাকে, তখন আলোকে দেখার আশা নিতান্তই বাতুলতা।
এই লেখা নিয়ে কিছু আপত্তি এসেছে এর পেছনে আপনার মতোরাই দায়ি। যারা চান্স বের করার তালে থাকে সবকিছুতে নারীর দোষ কেমন করে বের করা যায়।
গল্প শোনেন, চোর চুরি করে ফজরের আগে আগে মসজিদের পুকুরে গিয়ে ওজুর ভান ধরছে। মুসল্লিদের সাথে মিশে যাবার ধান্দা। একই সময় নিয়মিত এক মুসল্লি আসছে। এখন মুসল্লি ভাবতেছে, মাশাল্লা কি পরহেজগার মানুষ, আমার আগে চলে আসছে। আর চোর ভাবতেছে, হালায় কত দান মারছে কে জানে...
যে যার মতো বুঝে নেয়। এইটাই ঘটনা।
আরেকটা কথা, আপনে আসলেই নারীবিদ্বেষী।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আপনার মন্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত।
-> নাহ, কোনভাবেই না। নারীদের পেছনে পড়ে থাকার মূল কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। ধর্ম থেকে শুরু করে সমাজের নানা আইন কানুন কালচার যেভাবে তৈরি হয়েছে তার প্রতি পদে পদে সব জায়গায় মূলত পুরুষের সুবিধার কথা চিন্তা করেই সবকিছু হয়েছে।
-> এক দিকে প্রতি পদে এসে গাছের ডাল পালা কেটে দিয়ে যাবেন। গাছ মাড়িয়ে যাবেন। তারপরে এসে বলবেন গাছ বাড়ে না ক্যান, আকাশের দিকে তাকায় না বলেই গাছটা বাড়ে না, হালার গাছেই সমস্যা ... এইডা কেমন বিচার?
-> ইয়ে মানে, আপনাকে যারা নারীবিদ্বেষী ট্যাগ দিয়েছে তারা খুব একটা ভুল ট্যাগ দেয় নাই। ঠাণ্ডা মাথায় একটু ভেবে দেইখেন, যেটা আপনার অন্যকে বোঝানোর ব্যর্থতা মনে হচ্ছে সেটা হয়তো আসলে আপনার নিজের বোঝার ব্যর্থতা।
কথাটা সত্য অনেক ক্ষেত্রে, তবে কেন অনেক নারী এমন, তা চিন্তা করে দেখেছেন কখনো? যুগ যুগ ধরে পারিবারিক/সামাজিক শিক্ষন অনেক নারীর এমন অচৈতন্যের জন্য দায়ী! আর বলুন দেখি, এই পারিবারিক/সামাজিক শিক্ষাবহি কাহাদের পবিত্র হস্তে রচিত হইয়াছে? রচয়িতাগণ পুরুষা, নাকি নারী? যদি কোন নারী রচয়িতার নাম বলতে পারেন, তাহলে আগাম অভিনন্দন!
।।।।।
অন্ধকূপ
নারীর প্রতি বৈষম্যের পেছনে নারীরাও দায়ী নয়, পুরুষরাও দায়ী নয়, দায়ী পুরুষতান্ত্রিকতার। আর এই পুরুষতান্ত্রিকতার আবিষ্কারক, প্রচারক, রক্ষক এবং প্রজন্মান্তরে পরিবাহকদের মধ্যে রয়েছে নারী-পুরুষ-হিজরা, বৃদ্ধ থেকে শিশু, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ডাক্তার-ইন্জিনিয়ার-বিজ্ঞানী-উকিল-ধর্মগুরু ইত্যাদি সব শ্রেণীর জনগোষ্ঠী। সর্বব্যাপী জনপ্রিয়তা রয়েছে বলেই যুগ যুগ ধরে পুরুষতান্ত্রিকতা টিকে আছে। তাই "নারীরাই নারীদের শত্রু" এই বাণীটিও আসলে নারীর প্রচ্ছন্ন বিদ্বেষেরই প্রকাশ।
আসলে জীব মাত্রই বংশবৃদ্ধি করতে চায়। আসলে প্রকৃতির আসল ক্রিড়ানক আমাদের ক্রোমোসোমের মধ্যে থাকা জিনগুলো, যারা অমরত্ব চায় বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে। নারীরা প্রাকৃতিকভাবেই নিজের মাতৃত্ব নিজে নিশ্চিত থাকলেও পুরুষদের মধ্যে থাকে একধরণের অনিশ্চয়তা। সে এই দন্দ্ব নিবারণ করে তার প্রতি একান্ত অনুগত নারীর প্রতি তার সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করে। আর এজন্যই তার কাছে সমাজের সব রীতিনীতি মেনে চলা নারীই কাঙ্খিত, যে তাকে যথেষ্ট পরিমানে বাচ্চাকাচ্চা পয়দা করে দিবে। রক্ত সম্পর্কের লোকেরাও চায় ছেলেটির বউ একান্ত বাধ্য এবং অনুগত হোক এবং তার মাধ্যমে নিজের শরীরে বয়ে চলা জিনের সাথে সম্পর্কযুক্ত জিনের কিছু কপি তৈরি হোক। আর বাচ্চাকাচ্চা নেয়ার ব্যাপারে, তাদের মানুষ করার ব্যাপারে, সেই বাচ্চাকাচ্চাকে দিয়ে আরো বাচ্চকাচ্চা তৈরী করার ব্যাপারে মানুষের অনেক আগ্রহ আর সামাজিক চাপ আসলে প্রকৃতিরই এক ধরণের ট্রিক্স। এগুলা দিয়েই আমাদের শরীরে থাকা বদ জিনগুলো নিজেদের অমরত্ব চালিয়ে যেতে চায়।
"যারা বংশ রক্ষায় মন দিতেছে তারাই শেষ মেশ টিকে থাকবে, বাকিরা জ্ঞাণগর্ভ পক পক করতে করতে ইন্নালিল্লাহ করে নাই হয়ে যাবে। সুতরাং লাইনে আসুন।"
মন্তব্যের শেষাবধি না পড়েই দিতে যাচ্ছিলাম, যে আপ্নি আমার কথাটাই গুছিয়ে লিখেছেন। পরে দেখি কোট করে দিয়েছেন। তবে আপনার বক্তব্য অনেক সুন্দর গোছানো হয়েছে। এবং এটা আসলে উত্তর দিচ্ছে সেই প্রশ্নের, যে নারীরাও কেন পুরুষতন্ত্রের প্রয়োগকর্তা হচ্ছে, যেখানে নারীদের নারীর পাশে দাঁড়ানো স্বাভাবিক হওয়া উচিত। আই কাউন্টার ইন্টুইটিভ আচরণের উত্তর আছে আপনার মন্তব্যটাতে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আসল কথাটা এখানেই, ঠিক এই কারণেই যখন নারী প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেত্রী, সংসদ উপনেতা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে বলা হয়, দেশে নারী ক্ষমতায়নের স্বর্নযুগ চলছে, তখন তা খেলো মনে হয়; গুরুত্বপূর্ণে সরকারী পোস্টে নারী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও পুরুষতন্ত্রের বেড়াজাল থেকে মেলেনি মুক্তি! আমার দেখা অনেক নারী ক্ষমতায়ন চায় না, তারা বরং 'পুরুষের কাজ' পুরুষকেই করতে দিতে আগ্রহী, নারী হয়ে 'পুরুষের কাজ' (মানে, সংসারের অর্থনৈতিক হিসাব-নিকেশ ইত্যাদি) করাকে 'ছিনালিপনা' মনে করেন! তো যতদিন আমাদের বেশীরভাগ নারী এমন 'নারী'র গন্ডি থেকে বেরুতে না পারবেন, তদ্দিন নারী ক্ষমতায়ন কি করে হবে?
বরাবরের মতই চিন্তা জাগানিয়া, চরম উদাস ভাই!
।।।।।।
অন্ধকূপ
অনেকদিন পরে লগইন করলাম। লেখা পড়ে মন্তব্য করছি, মন্তব্য সব পড়া হয়নি।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, মানুষ (নারী বা পুরুষ না) নিজে যে বাক্স ভেঙে বেরুতে পারেনি, সেই বাক্সের বাইরে কাওকে দেখলে হিংসা করে, আমরা পরিবর্তন মেনেনিতে সহ্য করা adaptable জীব নই। যে নারী প্রথার বাক্স ভেঙে বেরুতে দেখতে পান নাই তার মা-কে, তার শ্বাশুড়িকে, বোনকে, নিজেও উড়তে পারেননি স্বাধীনভাবে ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক, তার জন্যে ডানা ওয়ালা স্বাধীনচেতা নারীকে নিজের মতো বাক্সে বন্দী করে রাখতে চাওয়াটাই 'স্বাভাবিক'।
মানুষ হিসেবে পরিবর্তন, ভিন্ন কিছু, নতুন কিছু মেনে নেয়া আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ।
লেখা ভালো লেগেছে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আপনাকে এতদিন পর দেখে ভূত ভূত বলে চিল্লানো শুরু করতে যাচ্ছিলাম আরেকটু হলে । লগইন যখন কষ্ট করে করেই ফেলছেন এইবার আরেকটু কষ্ট করে নারী সপ্তাহের একটা লেখা লিখে ফেলুন চটপট। সেই যে দিন রাত খেটে খুটে "ডরাইলেই ডর" বই বের করেছিলেন মনে আছে? আবারে না হয় একটু খেটে একটা কিছু লেখা দিন নিজের অভিজ্ঞতা, মতামত জানিয়ে।
লেজ কাটা জিনিস আমরা মেনে নিবো না
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
'চিন্তা কইরো না, হয়ে যাবে' সংলাপটা যেন এক 'মহামারী'!
আমার কাছে সবসময়ই মনে হয়েছে মানুষ নারী স্বাধীনতা কথাটার অর্থ ভুল করে। কিভাবে কিভাবে যেন, শব্দটার অর্থ বদলে পুরুষরা যা যা করে নারীদের তা করতে পারাই হচ্ছে নারী স্বাধীনতা। হতে পারে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে হাজার বছরের বন্দীত্ব আর দাসত্বের বেড়াজালে আটকে থাকার পর হয়তো স্বাধীনতার স্বরূপ বোঝা কঠিন। হয়তো স্বাধীনতা তখন অনুকরণ করে বেড়ে ওঠে, স্বকীয় হতে পারে না। কিন্তু যথেষ্ট সময় পার হলে সেটা বদলানো কি উচিত না? আমাদের সমাজে মেয়েদের প্রতি মেয়েদের আচরণ আসে নানী থেকে মা’তে, মা থেকে মেয়ে তে। আর সেসব প্রথা প্রচলনের শুরু হয় পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষদের আরাম আয়েস ও সুবিধার জন্য। আমরা বদলাচ্ছি, খুব অল্প অল্প করে আমাদের নারী পুরুষরাও বদলাচ্ছে কিন্তু আফসোস, আমাদের প্রথা-প্রচলন গুলো বদলাচ্ছে না। নিশাচর জীব।
লেখা পড়ে অনেক ভাল লাগল। আপনি অনেক সুন্দর করে আমার মনের কথা গুলো লিখে ফেলছেন। কিন্তু কমেন্ট এ দেখলাম অনেকেই লেখার সাথে একমত না। কিছু এলোমেলো চিন্তা নিচে তুলে ধরতে চাই।
আপনার লেখার মূল শিক্ষণীয় হল অন্নের private space সম্মান করা। এটা শুধু নারীরা করে এটা ঠিক না। অনেক বেকুব মানুষ দেখবেন চাকুরী করছেন শুনলেই আপনার বেতন জিজ্ঞেস করবে, (আপনি রাগ এ কির-মির করতে করতে উত্তর দেয়া মাত্র পাল্টা মন্তব্য করবে – ও আল্লাহ তুমি ত দেখি আমার দুবাই থাকা কর্মচারী বন্ধুর থেকে অনেক কম বেতন পাও, এত পড়ে কি লাভ হইল), বিদেশ থেকে ফেরত গেলে দেখবেন কাগজ হইসে কিনা এই প্রশ্ন দিন এ অন্তত তিন-চার বার করবে। আপনার যদি divorce হয়ে থাকে তাহলে ত কথাই নাই, কেন হল? জামাই কি আরেকটা বিয়ে করসে? পরকীয়া করত? এসব প্রশ্ন করে জীবন ঝালাপালা করে দিবে। এখানে প্রথম দুইটা প্রশ্ন বিরক্তিকর হলেও সহ্য করা যায়ে কিন্তু বাচ্চা হয় না কেন, divorce কিভাবে হইল, miscarriage কিভাবে হইল, ডাক্তার দেখাইস টাইপ private প্রশ্ন গুলা নির্দ্বিধায়ে করে ফেলাটাকে আমি পুরুশ্তন্ত্রএর অংশ হিশাবে মনে করি না। বেকুবতার অংশ মনে করি। দিন যাচ্ছে আর মানুষ আর বেকুব হচ্ছে। নিজের বিরক্তি প্রকাশ করার পরেও যখন সেটা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বার বার একি কথা জিগ্যেস করে যায়ে কেউ তখন সেটা abuse এর পর্যায়ে চলে যায়ে। এটা করার প্রধান কারণ আমার কাছে মনে হয় অতৃপ্তি – অন্ন কেউ আপনার থেকে সুখে আছে সেই কারণ এ আপনার বিকৃত মনের অতৃপ্তি। আপনি এই লেখাতে সেই abuse এর ব্যাপারটা তুলে ধরেছেন। অনেকে হয়ত না বুঝেই কাজগুলো করে যাচ্ছে। ফেসবুক আপে নীলা নামের মেয়েটির কমেন্ট পড়লে বোঝা যায়ে এই মানসিক নিপীড়ন কোন পর্যায়ে এখন। আশা করি পরিবার থেকে public আর private matters এর যে শিক্ষা পাওয়া উচিৎ ছিল সেটা এই লেখা থেকে পাবে।
অনেকে মন্তব্য করছে দেখলাম যে নারীরা এগুল করে কারণ তারা পুরুষতান্ত্রিক চক্রের মধ্যে পরে যায়ে। আমি নিজে অনেকবার এরকম প্রশ্নের মুখে পরেছি, প্রত্যেকবার প্রশ্নকর্তা একজন বিদেশে থাকা উচ্চশিক্ষিত মহিলার কাছে থেকে। তাদের জামাই বা পরিবার থেকে আমি কোন পুরুষতান্ত্রিক চাপ দেখি নাই। বরং দেখেছি জামাই রা তাদের বউ চাকরি করে শারি গয়নার গল্প থেকে বের হয়ে আসুক এটা চায়ে। খালি পুরুশ্তান্ত্রিকতার দোষ দিয়ে গেলেই হবে না। আমাদের নারী দের নিজেদের সচেতনতা থাকতে হবে, নিজেদের আলাদা মানুষ হিসাবে বুঝতে হবে, খালি সমাজ ব্যবস্থার দোষ দিলেই চলবে না।
আপনার লেখাতে মেয়েদেরকে stereotype করা হয়েছে হয়ত। যদি হয়ে থাকে তাহলে আমার প্রশ্ন হল stereotype যাতে না করা হয় তার জন্যে করনিও কি? Search দিয়ে লেখা থেকে প্রত্যেকটা নারী ওয়ার্ড খুঁজে সেটাকে ‘মানুষ’ দিয়ে replace করা? চিন্তা করুন ত politically correct হয়ে আজকে যদি সবাই লিখত তাহলে আজকে নিউজ গুলা কেমন হতো? উদাহরণ - একজন মানুষ আজকে আরেকজন মানুষকে ধর্ষণ করেছে। আসল খবর – পঞ্চান্ন বছর এর এক বুড়া তিন বছর এর এক শিশুকে ধর্ষণ করেছে।
যাই হউক অনেক কিছু লিখে ফেললাম আবোল-তবল, (জীবনে প্রথম অভ্র দিয়ে বাংলা লিখলাম)। সচলায়তন নারী সপ্তাহ উদযাপন করছে নারী নির্যাতন, awareness এবং open conversation শুরু করার জননে। আপনি সেখানে নারী নির্যাতন এর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা তুলে ধরেছেন এজন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
মন্তব্যটা ভালো লাগলো। তার চেয়েও বেশী ভালো লাগলো আপনি এই লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য জীবনে প্রথমবারের মতো বাংলা হরফে লেখা শুরু করেছেন দেখে। যুক্তাক্ষর ভেঙ্গে যাওয়া, টুকটাক বানান সমস্যা এগুলো নিয়ে ভয় পাবেন না। লিখতে লিখতে কয়দিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমার লেখাটা দোষত্রুটি মুক্ত না। লেখার এই দুর্বলতাগুলো আলোচনায় উঠে এসে লেখাকে দারুণ সমৃদ্ধ করেছে এটাই সবচেয়ে বড় পাওনা। লেখাটা যদি কখনো পাবলিশ করি কোথাও তবে এই এত সকল মন্তব্য থেকে যেই মূল কথাগুলো উঠে এসেছে সেগুলো একটা প্যারা হিবে যোগ করে দিব। তাতে আশা করি লেখার মাঝে 'নারীদের শত্রু নারী' টাইপের যে টোনটা আছে বলে মনে হয়েছে কারো কারো কাছে সেটা আরও খানিক দূর হয়ে যাবে। সেইসাথে আপনার কথাটাও ভালো লাগলো। stereotype করা হয়েছে কিনা বা politically correct হয়েছে কিনা লেখার সময় সেটা খুব বেশী মাথায় আসেনি। বরং এই ভয়ঙ্কর মানসিক নির্যাতনের যেই অভিজ্ঞতা সেটার কথাই উঠে এসেছে। যেই মেয়েরা এই যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাদের কাছে গিয়ে নানা যুক্তি আর সমাজবিজ্ঞানের পসরা সাজিয়ে এই অন্যায়ের জন্য মূলত দায়ী কে সেটা বলা জরুরী। আমার কাছে তার চেয়েও বেশী জরুরী মনে হয়েছে এই অভিজ্ঞতাগুলোকে তুলে আনা এবং যারা ভিক্টিম তাদের জানানো - you are not alone and you are not the only one ।
এ লেখাটা যে পরিমাণে শেয়ার হয়েছে আর যে পরিমাণে লোকে পড়েছে তা দেখে আমি বিস্মিত। আমি এমন কোন ভাষা শৈলী ব্যাবহার করে এমন মহান কিছু লিখিনি। একেবারে সহজ সরল ভাষায় চোখের সামনে ঘটা কিছু ঘটনার কথা লিখেছি। যে ঘটনাগুলো আমার কাছে মনে হয়েছিল আরও কারও কারও জীবনে ঘটছে। কিন্তু সেটা যে এত বেশী মানুষের জীবনে ঘটছে, এত বেশী মানুষ এই অভিজ্ঞতার সাথে নিজেকে কোরিলেট করতে পারবে সেটা আমি নিজেও ধারণা করতে পারিনি। উঠে আসুক আরও সবার অভিজ্ঞতা, কথা হোক এই নিয়ে, আলোচনার মাধ্যমে মানুষজন সচেতন হোক এটাই চাওয়া।
কঠিন অবস্হা দেখি!
মন্তব্য এবং লেখা, সবকিছু মিলেই অনেক কিছুকেই নতুন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ করে দিল। চমৎকার। সবচে ভাল লেগেছে নজমুল ভাই এর সরাসরি বলার ধরন। ইস্! আমিও যদি পারতাম ওইভাবে বলতে।
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
নতুন মন্তব্য করুন