অর্থনৈতিক উন্নয়নে ‘ক্ষুদে শহর’ প্রস্তাবনা ।।সারসংক্ষেপ।।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি
লিখেছেন রিয়াজ উদ্দীন (তারিখ: বুধ, ২৯/০৭/২০০৯ - ৩:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম রশীদ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ক্ষুদে শহর নির্মান করার গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং একটি নীতি প্রস্তাব রাখেন। এটা নিয়ে বিভিন্ন সেমিনারে অনেক বছর নানারকম তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। আমার জানামতে নীতি নির্ধারনেও কিছুটা প্রতিফলিত হয়েছে এই ধারনা। এই ধারনাটি মূলধারার নীতি আলোচনায় আরো বেশি গুরুত্বের দাবি রাখে বলে মনে করি। সেই উপলব্ধি থেকে আমি অধ্যাপক সেলিম রশিদের (স্যার) অনুমতি নিয়ে এর ইংরেজি সার-সংক্ষেপ অনুবাদ করি। সাচলায়তনের পাঠকদের কাছে এই অনুদিত সারসংক্ষেপ পেশ করছি। আমি আমার মত করে মন্তব্য এবং উত্তর দেবার চেষ্টা করব অবশ্যই। তবে পোস্টটি প্রকাশিত হলে লিঙ্ক পাঠিয়ে মূল প্রস্তাবক সেলিম রশীদ স্যারকে এই ধারনার খুটিনাটি নিয়ে পাঠকদের মন্তব্যের উত্তর দেবার অনুরোধ জানাব। আশা রাখছি ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সচলায়তনের পাঠকদের মন্তব্য এবং প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।]

মূল প্রস্তাবনা
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে গ্রামগুলোতে ক্ষুদে শহর (Compact Township/CT) নির্মান করা।

কিন্তু ‘কেন’?

  • পনের কোটি লোকের বসবাস এই দেশে; দেখতে দেখতে তা ২৫ কোটি হয়ে যাবে। এই বাড়তি জনসংখ্যার থাকার ব্যবস্থা কোথায় হবে?
  • ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যার বসতির যোগান দিতে গিয়ে বছরে শতকরা ১-২ ভাগ হারে ফুরিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি। এভাবে চলতে থাকলে বাড়তি লোকের খ্যাদের যোগান হবে কি করে?
  • ধরা যাক আগামি পচিশ বছরে এদেশের শহরগুলো আকারে বেড়ে দ্বিগুন হবে। তারপরও ২০৩৫ সাল নাগাদ প্রায় ১০ কোটি লোক গ্রামে বসবাস করবে। কিনতু এরমধ্যে ৪ কোটি নারী-পুরুষের থাকার কোন যায়গা থাকবেনা।
  • অবকাঠামোগত উন্নয়ন নগরায়নকে বেগবান করবে হয়ত, কিন্তু এতে করে ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের হার বেড়ে যাবে। একসময় শহুরে জনসংখ্যা বর্ধিত অবকাঠামোর ধারনক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাবে; বস্তিতে মানবেতর পরিবেশে বসবাস করতে হবে এদের একটা বড় অংশকে। দিনে দিনে শহর বাসযোগ্যতা হারাবে, জীবন হয়ে উঠবে দুর্বিসহ। তারচেয়ে সময় থাকতে নাগরিক সুবিধা গ্রামের আবহে নিয়ে যাওয়াই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়?
  • আরেকটি বড় বিবেচনার বিষয় হচ্ছে কর্মসংস্থান। ধরা যাক ২০৩০ সাল নাগাদ জনসংখ্যা বাড়বে সারে চার কোটি; আর কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীতে যুক্ত হবে আরো প্রায় পাঁচ কোটি নতুন মুখ। অন্যভাবে বলা যায় আগামী বিশ বছরে যে পরিমান কর্মসংস্থান করতে হবে তা স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের সমান। আর আগামী চল্লিশ বছর কর্মসংস্থানের দরকার হবে আরো আট কোটি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর যা বর্তমান বাংলাদেশের সমান।
  • ক্ষুদে শহরের ধারনাটি নতুন নয়। তবে এখানে প্রস্তাবনায় এর অপরিহার্যতা, ব্যপক উপযোগীতা এবং সমন্বয়ের প্রয়োজনের উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

ক্ষুদে শহর কি?

  • গ্রামীন বসতিকে উঁচু জমিতে গুচ্ছ আকারে (in agglomeration) গড়ে তোলা হবে।
  • নতুন জমি গ্রাস করে প্রচলিত ধারার বসতি গড়ে তোলার বিপরিতে এই পদ্ধতিতে বসতি গড়ে উঠবে উপরের দিকে বহুতল নির্মানের মাধ্যমে। বসতি, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আর সুযোগ সুবিধা গুচ্ছ আকারে নির্মানের যে অর্থনৈতিক সাশ্রয় হবে একে আমরা গুচ্ছিকরন সাশ্রয় (Economies of Agglomeration) বলতে পারি যা পরিসরগত সাশ্রয়-(Economies of Scale)এর একটা বিশেষ ধরন।
  • সংজ্ঞার আকারে বলতে গেলে - ক্ষুদে শহর (Compact Township) হচ্ছে উচু জমিতে নির্মিত বহুতল বসতি, হাসপাতাল, স্কুল, বাজার, গ্রামীন শিল্প কারখানা, স্থানীয় সরকারের দপ্তরের একটি গুচ্ছ এলাকা যেখানে ২০ হাজার লোকের বাসযোগ্য অবকাঠামো দেয়া হবে। এর সরকার ব্যবস্থা আর অর্থায়ন হবে প্রধানত স্থানীয় পর্যায়ে। এর ক্ষুদ্র পরিসরে কেবল মোটরবিহীন যান চলাচল করবে; এভাবে ক্ষুদে শহরের আভ্যন্তরীন পরিবহন ব্যবস্থা দক্ষ হলেও তা হবে পরিবেশ বান্ধব।

এ ব্যপারে গ্রামবাসিদের অভিমত কি?

  • গ্রামবাসিদের কাছে ব্যপারটি ব্যাখ্যা করা হলে তারা কি এসব ক্ষুদের শহরে বসবাস করতে রাজি হবে? বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ছাত্রদের পরিচালিত জরীপে দেখা যায় কমপক্ষে শতকরা ৭০ ভাগ গ্রামবাসী এসব ক্ষুদে শহরে স্থানান্তরে রাজি। আদতে শতকরা ৪০ জনও যদি এসব শহরে থাকতে রাজি হয় তাতেই এইসব শহর অর্থনৈতিক ভাবে বাস্তবসম্মত হবে।
  • গ্রামবাসিরা এসব শহরে এসে বসবাস করবে ধরে নিলেও এখানে এর অর্থায়ন একটা ভাববার বিষয়। তারা দীর্ঘমেয়াদি কিস্তির ব্যপারে সম্মত হলেও এর অর্থ এদের কাছে স্পষ্ট ছিল কিনা তা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়ে গেছে।
  • বিশেষ করে একটি গ্রামে ক্ষুদে শহরে স্থানান্তরে শতভাগ আগ্রহ দেখা যায়। তাদের শর্ত হচ্ছে তারা সবাই যেন একসাথে স্থানান্তরের সুযোগ পায়। তবে বলে রাখা ভাল এটা ছিল একটি সংখ্যালঘুদের গ্রাম। সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় ক্ষুদে শহরগুলো উপযোগি হতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা নিজেরাই ঠিক করুক কিভাবে এই স্থানান্তর সম্ভব।

কতটা বাস্তবসম্মত এই ভাবনা?

  • বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যঙ্ক আবাসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋনের কথা ভাবছে। সেক্ষেত্রে এই প্রস্তাবনা তাদের স্কিমের সাথে পুরোপুরি খাপ খাবার কথা।
  • গ্রামীন পরিবেশে ক্ষুদে শহর তৈরি করে একাধারে বন্যা, মৎস্য চাষ, আবাসন এই সকল সমস্যার সমাধান যেমন করা সম্ভব তেমনি এর ফলে শিক্ষা, সাস্থ্য, বিদ্যুত এসব অবকাঠামো যোগান দেয়ার ক্ষেত্রেও বেশ বড়মাপের সাশ্রয় হবে। ফলে ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে।
  • আগামি পঞ্চাশ বছরে বন্যা নিরাপদ, পরিবেশ বান্ধব ক্ষুদে শহর নির্মান আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত দরকারি। প্রতিটি ক্ষুদে শহরে ২০ হাজার লোক বসবাস করবে ধরে নিলে আমাদের প্রায় সারে চার হাজার এরকম শহর নির্মান করতে হবে।

ক্ষুদে শহরের উপযোগিতার কিছু দিক

  • মানুষ যখন উচু জমিতে নির্মিত এসব শহরে বসবাস করতে থাকবে তখন বাঁধ নির্মানের প্রয়োজনও কমে আসবে। এতে করে বাধের পেছনে ব্যয়িত সম্পদের সাশ্রয় যেমন হবে তেমনি এই বদ্বীপ অঞ্চলের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাতেও তা সহায়ক হবে।
  • ক্ষুদে শহর প্রকল্পগুলো কতটা বিশাল হবে ভাবতে বসলে হয়ত অবাক হবেন। পেশাদার ইমারত নির্মাতাদের সাথে কথা বলে জানা গেল প্রাথমিকভাবে দেশে বছরে ৫-১০টির বেশি এরকম শহর নির্মান করা সম্ভব হবে না কেবল দক্ষ শ্রমিকের অভাবে।
  • উপরে সমস্যার যে স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে সেটাতে যদি ভুল না থাকে তাহলে দেখা দরকার এরচেয়ে ভাল কোন সমাধান কি আমাদের হাতে রয়েছে?
  • এখন গুচ্ছ আকারে বসবাসের সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা যাক। শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিয়ে একত্রে বসবাসের পূর্বশর্ত হচ্ছে সবার জন্য উপযোগী কালাকানুনের ব্যপারে ঐক্যমত্য। সমন্বয়ের জন্য পারস্পরিক সহযোগীতার প্রয়োজন; স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বয়ের সুযোগ তৈরি করাও এরজন্য দরকারি । আবার উপরে বর্ণিত ধারনা বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় পর্যায়ে সহযোগীতার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
  • স্থানীয় শাষনের ব্যপারটি কিছুটা ব্যখ্যার দাবি রাখে। তবে এগুলোর অনেক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। আমাদের স্থানীয় পর্যায়ের সংগঠন যেমন কমিউনিটি বেসড অর্গানাইজেশনের (সিবিও) এর ওপর জোর দেয়া দরকার। যারা সামাজিক বনায়ন সম্পর্কে অবগত তাদের পক্ষে এর গুরুত্ব বুঝতে অসুবিধা হবে না। ক্ষুদে শহরগুলো এসব সিবিও গড়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে আরো সহজ এবং ফলপ্রসু করে তুলবে বলে আশা করা যায়।
  • গ্রামের যেসব পরিবার তাদের পূর্বপুরুষদের ভিটায় থাকতে পছন্দ করবে তারা ভালবোধ করলে তাই করবেন। সেক্ষেত্রে উন্নত অবকাঠামোগত সুবিধা পেতে অসুবিধা হতে পারে এটা বিবেচনায় রাখা দরকার।
  • হাওড় এলাকার ভুপ্রকৃতির দরুন সেখানে ক্ষুদে শহরের উপযোগীতা বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। এছাড়া আর্সেনিক দুষন মোকাবেলার সবচেয়ে স্বল্পমূল্যের সমাধান হচ্ছে জলাধারে সঞ্চয় করে পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা। আর এজন্য ক্ষুদে শহরে গুচ্ছ আকারে অনেক মানুষ একত্রে বসবাস সাশ্রয়ী সমাধান হতে পারে।
  • এছারা চর এবং উপকূলীয় এলাকাতেও ক্ষুদে শহর কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে এসব এলাকার ক্রমপরিবর্তনশিল ভুমি মালিকানা, পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুকি আর জলবায়ু পরিবর্তনের নিরিখে সবচেয়ে ঝুকির ব্যপারগুলো বিশেষ ভাবে লক্ষ্যনীয়।
  • ভাল ভাল কিছু সম্ভাবনার কথা বলা হল। এসব বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থানগুলো দিয়ে শুরু করলেও বলা বাহুল্য ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ সামাল দিতে বাংলাদেশের পরিকল্পনাকে সাধারনভাবে এই ক্ষুদে শহরমুখি করা চাই।
  • ঘুর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকাগুলোতে পূনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমরা ক্ষুদের শহরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারি।
  • জেলেদের গ্রামের কথাই ধরা যাক। এরা যদি শহরের সুবিধায় বসবাস করে সেখানে ভৌগলিক প্রযুক্তি (যেমন জিপিএস) ব্যবহার করে এরা সহজেই সাগরের অবস্থা পর্যবেক্ষন এবং সাগরে থেকেও প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে। আর রপ্তানিযোগ্য মাছ ধরে নিজেরাই শহরের ভেতরে হিমায়নের ব্যবস্থা করতে পারবে। এতে করে মধ্যসত্ত্বভোগিদের শোসনের শিকার হতে হবে না তাদের।
  • প্রায় ২ হাজার ঘুর্নিঝড় পূনর্বাসন কেন্দ্রের কথা বলা হয়েছে। কিছুটা সমন্বয়ের মাধ্যমে এগুলোকে ক্ষুদে শহর হিসাবে গড়ে তুলতে পারলে তা সার্বক্ষনিক ভাবে কাজে লাগত।
আর্থিক বিবেচনার কিছু দিক
  • সতর্কতার সাথে ডিজাইন করা সম্ভব হলে ক্ষুদে শহরকে ইকোসিটি (eco-city)বা পরিবেশবান্ধব শহর হিসাবে তৈরি করা সম্ভব। শহরপ্রতি ৫৫০ কোটি টাকা এবং ৯৫ একর জমির দরকার হবে। যদি এর ৫ এর ৪ ভাগ খরচ বসবাসকারিদের কাছ থেকে দীর্ঘ মেয়াদি ঋনের ভিত্তিতে উঠে আসে তাতে ৪৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে পরিবারগুলোকে। বলাবাহুল্য আর কম খরচেও এগুলো নির্মান করা সম্ভব।
  • তুলনার সুবিধার জন্য চারটি উপজেলা নিয়ে ১৯৯১ সালে জাইকার আদর্শ গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্পের কথাই ধরা যাক। আবাসন খরচ বাদ দিয়েই এতে ১১ শ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল (মূল্যস্ফিতির সহ)।
  • যদি সুদবিহিন কিস্তিতে এসব বাড়ি বিক্রি করা যায় তাতে পরিবারপ্রতি ২০০ বর্গফুটের ঘরের খরচ হবে মাসে ২ হাজার টাকা। টাকার পরিমান সামান্য নয়। কিন্তু একে ঢাকায় ১০০ বর্গফুটের কোয়ার্টারের সাথে তুলনা করা যাক। ঢাকায় এরকম একটি ইউনিটের ভাড়া প্রতি মাসে ১৪০০ টাকা যেখানে রান্নাঘর এবং টয়লেট অনেকগুলো পরিবার একসাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয়। কাজেই প্রতি বর্গফুটে ঢাকায় যেখানে ১৪ টাকা ভাড়া হিসাবে দিতে হচ্ছে এইসব ক্ষুদে শহরে প্রতি বর্গফুটে মাসিক ক্রয়মূল্য দাড়াচ্ছে ১০ টাকা। অবশ্য আগেই বলা হয়েছে যে আরও কম খরচেও এগুলো নির্মান করা সম্ভব।

[সেলিম রশীদ সম্পর্কেঃ
সেলিম রশীদ ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক। তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে বিএসসি এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর গবেষনার বিষয়ের মধ্যে উন্নয়ন অর্থনীতি, অর্থনৈতিক তত্ত্ব, ধর্ম ও অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য। বহু নিবন্ধের পাশাপাশি তিনি পাঁচটি বই লিখেছেন আর চারটি ভলিউম সম্পাদনা করেছেন। গত ত্রিশ বছর যাবত তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্বব্যংক এবং এশিয় উন্নয়ন ব্যংকে তিনি কন্সালটেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন । এছারাও অধ্যাপক রশীদ জার্নাল অব এশিয়া পেসিফিক ইকনমির সহ-সম্পাদক এবং এসোসিএশন অব ইকনমিক এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ অন বাংলাদেশ- এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ]


মন্তব্য

ইফতেখার এর ছবি

একেবারে আমার মনের একান্ত চাওয়াগুলো এর মধ্যে আছে। তবে কথা হলো আমাদের কি এত টাকা আছে? দীর্ঘমেয়াদী কিস্তির টাকা কই শেষ পর্যন্ত অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান পাবে? নাকি আবার এখানেও সেই খেলাপি সংস্কৃতি গড়ে উঠবে...

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। নিচের কিছু মন্তব্যে অর্থায়নের প্রসংগ নিয়ে আলোকপাত করেছি। তবে আপনার প্রশ্নের আরো স্পেসিফিক উত্তর দেবার চেষ্টা করব। প্রথম জন্য মন্তব্যের ধন্যবাদ।

নজমুল আলবাব এর ছবি

এই লেখাটা নিয়া একটা জমজমাট আলোচনা দেখার আশায় রইলাম।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পোস্টটি সময় নিয়ে পড়তে হবে। তাই এখন এই পোস্টের ব্যাপারে মন্তব্য করছিনা। তবে অন্য বিষয়ে একটা কথা বলছি।

আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে,

প্রস্তাবনা = Preface
প্রস্তাব = Proposal



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

জলদি পড়ুন পান্ডবদা। আপনার কমেন্ট জানতে চাই।

অনুবাদের ব্যপারে ভয় হচ্ছিল। কারন কোন দক্ষ হাতের সম্পাদনার ছোঁয়া এতে পড়েনি। যা হোক proposition এর বাংলা কি?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

কিছুটা বুঝতে চেষ্টা করছি।
আমরা একটা ক্ষুদে শহর তৈরী করলাম, এবং সেখানে আমাদের গ্রামের সব লোকজনকে স্থানান্তর করলাম।
কিন্তু, আমরা জানছি যে ,

যদি সুদবিহিন কিস্তিতে এসব বাড়ি বিক্রি করা যায় তাতে পরিবারপ্রতি ২০০ বর্গফুটের ঘরের খরচ হবে মাসে ২ হাজার টাকা। টাকার পরিমান সামান্য নয়।

এখন আমার গ্রামের ৯৩% লোকের মাসিক রোজগার ২ হাজার টাকার নিচে। এদেরকে তাহলে আগে বড় ইনকামগ্রুপে নিতে হবে। টাউনশিপের মাধ্যমে সেটা কিভাবে সম্ভব হবে বুঝতে পারছি না।
কারন আমার গ্রামের লোকের অর্থনীতি তার পুকুর , তার জলাশয় , তার জংলা মাঠ এসবের সাথে সম্পর্কিত।
তাকে যখন টাউনশিপে নিয়ে আসব , তখন তাকে বিকল্প কর্মসংস্থান করে দিতে হবে। সেই কর্মসংস্থানটা কিভাবে হবে ?

এসব শহরে হয়তো কিছু লোক দোকানদার হতে পারবে , বাকীদের জন্য কী ব্যবস্থা ?

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

আরিফ ভাই
প্রথমেই দুঃখিত এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে দেরি হবার জন্য। ভেবেছিলাম এরকম আরো প্রশ্ন আসবে তখন একসাথে উত্তর দেবার চেষ্টা করব।

ক্ষুদে শহরের ক্ষেত্রে অর্থায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার। আমরা যদি অন্যসব ব্যপারে এর গুরুত্বের ব্যাপারে মোটামুটি একমত হতে পারি সেক্ষেত্রে অর্থায়নের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বসতে হবে বৈকি। কথা হচ্ছে এই অর্থায়নের জন্য কতদূর পর্যন্ত যেতে চাই আমরা। সেটা নির্ভর করবে এই পদ্ধতিকে আমরা কতটা কার্যকর ভাবছি তার ওপর। অর্থায়নের উৎস্য এবং আরো কিছু বিষয় নিয়ে নিচে আলোচনার চেষ্টা করেছি।

  • ক্ষুদে শহর প্রকল্পগুলো হয়ত স্থানভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। অর্থাৎ কোথাও হয়ত বিদ্যমান অবকাঠামোকে কাজে লাগিয়েই এই সব বাড়ী তৈরি করা হতে পারে যাতে সামগ্রিক প্যাটার্নে ক্ষুদে শহরের মত একটা কিছু দাঁড়াবে যেখানে economies of agglomeration সুবিধা পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে খরচ অনেক কমে আসার কথা।
  • কোন কোন ক্ষেত্রে একটি উপজেলার কথা বিবেচনা করে একটি শহরের প্রকল্প হাতে নেয়া হতে পারে। সেখানে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে পারলে অনেক সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারি যারা এসব এলাকায় কাজ করেন তারা এখানে আসবেন। যারা বানিজ্য এবং সেবা খাতে জড়িত এবং অবস্থাসম্পন্ন তারাও উচ্চতর সুযোগ সবিধার টানে এখানে আসতে থাকবে।
  • শতকরা হার হিসাবে সরাসরি কৃষিকাজে জড়িত জনসংখ্যা এখন ক্রমেই কমে আসছে। তারা যদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করতে থাকে তাহলে তাদের দোরগোরায় সুযোগ সুবিধা পৌছে দেয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হতে থাকবে। যেমন নিচে বলেছি এলজিইডির রাস্তাগুলোর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব কেউ নিতে চাচ্ছে না। কারন অর্থনৈতিক ভাবে এগুলোর রক্ষনাবেক্ষন ফিজিবল নয়। আরেকটু সহজভাবে বললে এভাবে বলি। শহরে একটি রাস্তা তৈরি করুন অনেক লোক প্রতিদিন সেটা ব্যবহার করছে। ফলে সমাজের অনেক লোক এতে করে লাভবান হচ্ছে একই সময়। এখন যদি আমি আমার আমার প্রতিবেশি আপনি আরিফ ভাই গ্রামের এককোনায় নিসর্গের কাছাকাছি থাকার বাসনা নিয়ে একটি ঘর তুলি সেক্ষেত্রে তার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো দেবার নৈতিক দায়িত্ব সরকারের উপর পরে বটে। কিন্তু সরকার যদি তাতে অপারগ হয় তাকে কি দোষ দেয়া যায় এতে করে? আমরা দু'জনে যা কর দেব সেটা দিয়ে আমাদের জন্য অবকাঠামো দেয়া কিন্তু সরকারের জন্য কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে অন্য যারা সরকারকে কর দিচ্ছেন এবং শহরে ঘন বসতিতে বসবাস করছেন এরা কিন্তু উচ্চ অবকাঠামোর সুবিধার দাবি রাখেন।
  • একটা ছোট উদাহরন দেই। আমার বাসা মীরপুরে। এলাকায় হঠাৎ চোরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার আমাদের রাস্তায় যেকটা বাড়ি আছে সবাইকে নিয়ে বসে মাসিক চাদা ঠিক করে আমরা একজন লোককে নৈশ প্রহরি হিসাবে নিয়োগ দেই। একটা রাস্তার ছোট একটা অংশে হেটে দুই মিনিটেই সে এলাকাটি প্রদক্ষিন করে ফেলতে পারতো সে। পরে আরো কয়েকটি বাড়িকে একত্র করে আমরা দুজন প্রহরীকে নিয়োগ দিয়েছিলাম। এতে তারা আরো সমন্বিত ভাবে প্রহরার কাজ করতে পারত। এটা ইকনমিস অব স্কেলের একটা উদাহরন। এই ধারনা বেশির ভাগ অবকাঠামোর জন্যই সত্য।
  • সল্প মেয়াদের বিবেচনায় শহর মুখি উচ্চ আয়ের একটা অংশ যদি এখানে থাকতে পারে তবে তাদের চাহিদা পুরনের জন্য স্থানীয় কর্মসংস্থান বাড়বে কিছুটা। এরকম আরো কিছুগ্রুপকে পাওয়া যাবে যারা এই চাহিদাটাকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। যেটা মূলত দেখার বিষয় তা হল দীর্ঘমেয়াদে কি হবে? ধরুন এসব ক্ষুদে শহরে নাগরিক সুবিধা সরবরাহ করবে কারা। এখানে নতুন একটা চাহিদার প্যাটার্ন তৈরি হবে। যেমন পেইন্টার, বিদ্যুতের মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি ইত্যাদি পেশাগত শ্রেনী তৈরি হবে ইত্যাদি। স্বল্প মেয়াদে এরা হয়ত অন্য যায়গা থেকে এখানে এসে ভীর করবে। কিন্তু আস্তে আস্তে এসব চাহিদা বৃদ্ধি পেলে অনেকে কৃষি কাজ ছেড়ে এসব পেশায় আসবে। ক্ষুদে শহর নির্মানের সময় থেকেই এরকম একটি ধারা তৈরি হবে।

    কারন আমার গ্রামের লোকের অর্থনীতি তার পুকুর , তার জলাশয় , তার জংলা মাঠ এসবের সাথে সম্পর্কিত

  • চমৎকার পর্যবেক্ষন! আপনি যদি খাত হিসাবে দেখেন তবে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম আয়ের খাত হচ্ছে কৃষি। এখন চাইলেই ত আমরা কৃষির বিকল্প পেশা তৈরি করতে পারিনা। এজন্য মানুষের ভোক্তা আচরন একটা গুরুত্ব পূর্ন ব্যপার। ধরুন লালমনির হাটে কোন এক বছর প্রচুর মূলার উৎপাদন হল। একজন উদ্যোগি কৃষক একটি ট্রাক ভাড়া করে মূলা নিয়ে ঢাকার বাজারে আসলেন। পাইকারি বাজারে তখন মূলার দাম এত কম যে মূলা বেঁচে সে ট্রাকের ভারা পরিশোধ করতে পারবেনা। তখন সে মূলা সহ ট্রাক ফেলে পালিয়ে যায়। এটা সত্যি ঘটনা। এরকম কিন্তু অহরহ ঘটছে। এই সমস্যার অন্যতম প্রধান কারন স্থানীয় পর্যায়ে পন্যের ভোক্তা কৃষকেরা পায়না। এই অবস্থায় জংলা মাঠ থেকে কলমি শাক তুলে কয়দিন বেঁচে থাকবে আমাদের কৃষক সম্প্রদায়?
  • এখানে অর্থনীতির একটা ছোট নীতির কথা বলি। একে বলে এনগেলস ল। আমাদের যখন আয় বাড়ে তখন আমাদের ব্যায়ও সাথে সাথে বাড়ে।কিন্তু ব্যায়ের অংশ হিসাবে খাদ্যের অংশ কমে যায়। যেমন একজন কৃষকের আয়ের দুই তৃতীয়াংশ হয়ত সে খাবারের পেছনে খরচ করে। কিন্তু কোন কারনে তার যদি আয় দ্বিগুন হয় তাহলে তার খরচে খাদ্যের ভাগ দ্বিগুন হবে না। হয়ত সামান্য বাড়বে। সে ভাল কাপড় পরবে। ভাল বাড়িতে থাকতে চাইবে। এতে করে যে বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে তাতে অন্য বেশ কিছু পেশায় আরো কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এটা চক্রাকারে চলতে থাকবে। এটাকে অর্থনীতিতে মাল্টিপ্লায়ার এফেক্ট বলে।
  • বাচ্চার লেখা পড়া, উন্নত চিকিৎসা এসব সেবা যদি উচ্চমানের এবং স্বল্পমূল্যের হয় তাহলে জীবন মানের ওপর তার প্রভাব লক্ষ্য করুন। এতে করে আত্ম উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এবং ভবিষ্যতে উৎপাদনের সম্ভাবনা অনেক বাড়বে। অন্যভাবে বলা যায় ভবিষ্যতে productive capacity বেড়ে যাবে। হয়ত অনেক অপ্রাসঙ্গিক পয়েন্ট বলে ফেলেছি।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ক্ষুদে শহর কয়তলা পর্যন্ত করা হবে এই বিষয়ে কোন গবেষনা করা হয়েছে কি ? আমাদের দেশের ভূমি স্বাভাবিক নিয়মে কতোতলা পর্যন্ত তৈরী করা যাবে এই বিষয়ে একটা ফোকাস থাকলে ভালো হতো।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ক্ষুদে শহরের ক্ষেত্রে চারতলা পর্যন্ত হলেই যথেষ্ট আপাতত। সম্ভবত প্রস্তাবকের ধারনা সেরকম বলেই জানি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশিরভাগ যায়গাতেই এর উপযোগী জমি পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। হয়ত বহুতল শব্দটি ব্যবহারের দরুন কিছুটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়ে থাকতে পারে। আপনার আগের প্রশ্নটি আরো কিছু মন্তব্য আসলে একবারে গুছিয়ে দেবার চেষ্টা করব।

হাসিব এর ছবি

হাসতেই আছি ।

× এই মন্তব্যটা এভাবে না করার চেষ্টা করেও নিজেরে ঠেকায়া রাখতে পারলাম না মন খারাপ । ভাই কিছু মনে নিয়েন না ।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

হাসতেই আছি ।

× এই মন্তব্যটা এভাবে না করার চেষ্টা করেও নিজেরে ঠেকায়া রাখতে পারলাম না মন খারাপ । ভাই কিছু মনে নিয়েন না ।

আপনি একাই হাসবেন? পাঠক মডারেটর সবাইকে হাসার সুযোগ দিন। আমিই বা বাদ যাচ্ছি কেন? আপনার সুবাদের যদি একটু হাসতে পারতাম তাহলে মন্দ হত না। যদি আরেকটু সদয় হতে পারেন হাসির কারনটাও না হয় ব্যখ্যা করুন।

আমার যতদূর মনে পড়ে আপনার সাথে আমার এযাবত কালের দ্বিমত গুলো নিয়ে কোন উড়ন্ত মন্তন্য না করে আমি যথাসম্ভব ব্যখ্যা দেবার চেষ্টা করেছি। এমনকি একটা আস্ত পোস্টও দিয়েছি । অথচ কখনো জানতেও পারিনি আপনি পোস্টটা পড়েছেন কিনা। তারপরও ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আমি যতদূর জানি নাজিদের পরে এই X সিম্বলটির ব্যবহার জনসম্মখে কমই করা হয়। অন্তত সচলায়তনে এটা আশা করা কঠিন। আশা করি অর্থটি বুঝতে আমার কোথাও ভুল হচ্ছে। কেউ বোঝার ব্যপারে সাহায্য করলে ভাল হত। সত্যি অবাক হয়েছি এই মন্তব্যে!

হাসিব এর ছবি

অফিসে আছি আপাতত । বাসায় গিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করার ইচ্ছে ।

"নাজিদের পরে X সিম্বল" মানে কি ?

ওটা একটা এ্যাসটেরিক্স । নোট শব্দটার সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে । পরে কথা হবে ।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ হাসিব ভাই। এই অংশটা নিয়ে বিশেষ চিন্তায় ছিলাম। দেখে ভাল লাগল আমার বোঝার ভুল ছিল। বাকি ব্যখ্যা পরে পড়ে দেখতে চাই।

স্বাধীন এর ছবি

হাসতেই আছি ।

হাসি পাবার কারণটুকু জানতে পারলে আমাদেরও ভাল লাগতো।

তানভীর এর ছবি

আমার মনে হয় বাংলাদেশে ক্ষুদে শহরের চাইতে যেটা বেশি প্রয়োজন তা হল ঢাকা-চট্টগ্রামমুখী চাপটা অন্য বড় শহরগুলোতে স্থানান্তর করা, সেগুলোকে অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা। গ্রামভিত্তিক উন্নয়নও তখন একে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। গ্রামগুলোকে তখন কেন্দ্রগুলোর যোগানদার হিসেবেও গড়ে তোলা যায়। আগেই গ্রামগুলোতে ক্ষুদে শহর নির্মাণ আমার কাছে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেবার মতো। পরে দেখা যাবে সেখানে শুধু বহুতল ভবনের কংকাল পড়ে আছে, বিসিক শিল্পনগরীগুলোর মত হাসি

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ তানভীর ভাই। আসলেই ঢাকা-চট্টগ্রামের উপর থেকে চাপ কমে আসা উচিত। এক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো যোগ করিঃ

  • গ্রামে সুযোগ-সুবিধার অভাবের দরুন অনেকে একটু অবস্থা সম্পন্ন হলেই শহরে চলে আসে। অবস্থা সম্পন্ন থেকে দরিদ্র সকলেই এই প্রক্রিয়ার অংশিদার। কিন্তু জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা গ্রামের ডিস্পার্সড প্যাটার্নে সরবরাহ করা একে অনেক ব্যায়সাপেক্ষ। ধরুন আমি গ্রামের একপ্রান্তে একটি বাড়ি তৈরি করলাম। সেখানে কেবল আমার জন্য রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুত, পানি, গ্যাস ইত্যাদি সুবিধা নিয়ে যাবার প্রয়োজন যদি দেখা দেয় সেটা অর্থনৈতিক ভাবে বাস্তবসম্মত হবে না। সেই জন্য লক্ষ্য করলে দেখা যাবে পরিবহন খাতে প্রকল্প মূল্যায়নে ইকনমিক রিটার্নের পরিবর্তে নানারকম অন্যরকমের ক্রাইটেরিয়া নির্বাচন করতে হয় গ্রামের রাস্তা ঘাটের ক্ষেত্রে। দেখা যায় সেসব রাস্তা যদিও তৈরি করা হয় কেউ আবার তার দায়িত্ব নিতে চায়না। যার জন্য সাধারনভাবে গ্রামের রাস্তার রক্ষনাবেক্ষনের হাল অত্যন্ত খারাপ হয়ে থাকে।
  • আপনি হয়ত জিফ'স ল সম্পর্কে পড়ে থাকবেন। দেখা গেছে শহরের আকারের প্রবেবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন মোটামূটি প্যারেটো ডিস্ট্রিবিউশন [কারো মতে লগনর্মাল] হয়। পরিসংখ্যানের দিক ছাড়াও নগর ব্যবস্থা একটা হায়ারার্কির মধ্যে নগর ব্যবস্থার লেনদেন হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন এবং বাজার ব্যবস্থা শক্তিশালি না হলে উপরের দিকে নেতি বাচক প্রভাব পড়বে। সেজন্যই আমাদের দেশে মাঝারি এবং ছোট শহরগুলো তলনামুলক ভাবে অনুন্নত। ফলে সামগ্রিক নগর ব্যবস্থার যে চিত্র দাড়াচ্ছে সেটা অত্যন্ত ভয়াবহ। কাজেই বড় শহরমুখি উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি গ্রামীন বা স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেয়া না হলে সমস্যার গোড়ায় হাত পড়বেনা বলে আমার মত।
  • আর বছরে দুই ভাগ হারে জমি হ্রাস পাওয়ার ফলে উৎপাদনশিল কাজে ব্যবহারের জমিওত দিনে দিনে কমে আসছে।
  • আমার ব্যক্তিগত ধারনা হচ্ছে আমাদের সামগ্রিক নগর ব্যবস্থায় ক্ষুদে শহরের ভুমিকা কিহবে তা কিছু শহর পরীক্ষামূলক ভাবে তৈরি না করে বোঝা কঠিন।
  • নির্মান খরচের ব্যপারে যদি প্রশ্ন আসে তাহলে দেখার বিষয় গ্রামীন অবকাঠামোর জন্য কি পরিমান খরচ হয় প্রতি বছর। যদি নীতিগত ভাবে এই ক্ষুদে শহরকে মেনে নেয়া হয় তাহলে সেখান থেকে কিছু অংশ এদিকে সরিয়ে আনলেই অনেকটা খরচের সংস্থান হবার কথা।
  • আপনি যখন বিসিকের উদাহরন টানলেন সেখানে আমি যোগ করতে চাই যে যদি আর্থিক, অর্থনৈতিক এবং লোকেশনের ব্যপারগুলোর পাশাপাশি প্রকৌশলগত দিক গুলো বিবেচনায় না আনা হয় তবে সেই ঝূকি থেকে যাবে অবশ্যই।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমার ইউনিয়নে ২৬ হাজার ভোটার। ( স্যরি, ভোটার দিয়ে হিসেব করতে হচ্ছে , কারন আমার কাছে আমার এলাকার সবগুলো ডাটাই ভোট সংক্রান্ত )
২৬ হাজার ভোটার মানে ১৩ হাজার পরিবার ধরলাম। তার মানে আপনার ৪০ হাজারের টাউনশিপে এই লোকদের সবার জায়গা হয়ে যাবে। তাহলে আমার ইউনিয়নে একটা টাউন করে আপনি সবাইকে এক ছাদের নিচে নিয়ে এলেন।
গুড।

কিন্তু সেই টাউনশিপ যদি ইউপি সদরে হয় সেখান থেকে আমার গ্রামের দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। এখন আমার গ্রামের জমিতে কৃষিকাজ করতে হলে এই ৪ কিমি পথ কৃষককে যেতে হবে প্রতিদিন।
আপনি গ্রামীন অবকাঠামো যদি ঠিক না করেন , অর্থাৎ জমিতে বিদ্যুত না দেন , কৃষিপন্য আসার জন্য রাস্তা তৈরী করে না দেন , তাহলে কৃষক কিভাবে সেই ফসল সংগ্রহ করবে ?

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

খুবই প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন আরিফ ভাই। তবে এর উত্তর যতটুকু বুঝি এই স্বল্প পরিসরে দেয়া কঠিন। একটা কথা বলে রাখি যেহেতু আমি এই ধারনার প্রস্তাবক নই, আমার মতামত আমার নিজের। সেলিম রশিদ স্যারের মতামত ভিন্ন হতে পারে অনেক ক্ষেত্রেই।

  • ক্ষুদে শহরের আকার বেশি বড় করাটা যুক্তিযুক্ত নয়। এখানে ২০ হাজারের কথা বলা আছে। স্থান ভেদে তা আরো ছোট হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার ১৩ হাজার পরিবারের অনেকে এখানে আসতে পারেন। বলে রাখা ভাল এই আসাটা হবে স্বেছার। কেউ জোর করবে না। যদি সুযোগ সুবিধা মানুষকে টানতে পারে তবে অনেকেই আসবেন। তবে যারা কৃষিকাজ করেন তারা আসবেন কিনা সেটা তাদেরই ভেবে দেখতে হবে।
  • এসব শহরে আসা না আসার ব্যপারে কিছু বিপরীতমুখি টান কাজ করবে। যেমন জমিতে চাষের জন্য যাওয়া ছাড়াও একজন কৃষকের দৈনিক ট্রাভেল প্যাটার্নে রয়েছে আরো অনেক গন্তব্য। যেমন বাজার, মসজিদ, আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করা, নানা রকম সামাজিক এবং অর্থিনৈতিক কাজে তাকে বিভিন্ন দিকে যেতে হয়। তারপর আছে বাচ্চার স্কুল (কয়েক মাইল দূরে হতে পারে এই স্কুল), অসুস্থতার ক্ষেত্রে হাসপাতাল। এসব সুবিধাই প্রচলিত পদ্ধতিতে অনেক দূরে দূরে থাকে বেশির ভাগ গ্রাম বাসিদের জন্য।
  • কৃষকেরা পেশাগত ভাবে জমির সাথে সরাসরি যুক্ত। কিন্তু অন্যপেশার ক্ষেত্রে এই সংযুক্তি কম। তারা হয়ত এসব টাউনশিপে আসতে পারবে সহজেই। আর কৃষিকাজে জড়িত অনেকেই এই বিষয়টির লাভালাভ বিবেচনা করে দেখবে। আর ধরে নেয়া যায় সবাই ক্ষুদে শহর থেকে চার মাইল দূরত্বে থাকবে না।
  • গ্রামে একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় যারা কৃষিজমির মালিক তাদের একটা বড় অংশ নিজেরা তার চাষবাস করেনা। সেক্ষেত্রে কাগজে কলমে কৃষক হলেও অনেকে আসলে সেই অর্থে জমির সাথে সংযুক্ত নয়। আরো অনেক বিষয় বলার আছে। দেখি একটু সময় হলে লিখব।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

শহরের আকারের বিন্যাসটা কি আমাদের দেশের জন্যও প্রযোজ্য হবে? জিফ'স ল 'র একটা লিংক দিবেন? কিংবা ইংরেজী শব্দটা? ধন্যবাদ।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

zipf's law একটা সাধারন [জেনারেল অর্থে] ইম্পিরিকাল রেগুলারিটির ব্যপার। অনেক প্রাকৃতিক আচরনের ক্ষেত্রেই এই ল মেনে চলার প্রবনতা দেখা যায়। নগর ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এর বিশেষায়িত স্টেটমেন্টটি হচ্ছে rank size rule. অন্তর্জালে এবিষয়ক অনেক রিসোর্স পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের বেলাতেও এই নিয়ম প্রযোজ্য। তবে বলে রাখা ভাল- এটা কেবল পরিসংখান গত কারনে নয়। এর পেছনে সুস্পষ্ট Micro-behavioral foundation থাকা দরকার। ছোট ছোট শহর গুলো না থাকায় যেটা হচ্ছে - একটা পর্যায়ের পর ডিস্টিবিঊশনে আর কিছু থাকছে না, বা ডিস্ট্রিবিউশন্টি ট্রাঙ্কেটেট হয়ে যাচ্ছে। দেখা যায় নগরায়নের সাথে উন্নয়ন সরাসরি কোরিলেটেড। কিন্তু বড় শহরে জনসংখ্যা ছোট শহরগুলোর তুলনায় বেশি হলে সেটাকে প্রাইমেসি বলা হয়। আর বড় শহরগুলোকে বলে প্রাইমেট সিটি। এখন পর্যন্ত দেখা যায় এই প্রাইমেসি ব্যপারটি মূলত অনুন্নত দেশগুলোতেই বেশি দেখা যায়। এর অন্যতম কারন হতে পারে স্থানীয় পর্যায়ে বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতা।

যতদূর জানি রাশিয়া চিনের ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্রিয় যুগে এর ব্যতিক্রম দেখা গিয়েছিল। যার প্রধান কারন আমার বোঝার মতে এই যে সেখানে অর্থনৈতিক বন্টন ব্যবস্থার কৃত্রিমতা। বিষয়টি নিয়ে একটি পেপার শুরু করেছিলাম শেষ করা হয়নি।

মামুন হক এর ছবি

ক্ষুদে শহরের ধারণাটা মোটেও হাস্যকর কিছু নয়। বাংলাদেশের পর তাইওয়ান পৃথিবীর দ্বিতীয় ঘনবসতি পূর্ণ দেশ। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামলাতে তারা দেশব্যাপী অজস্র টাউনশীপ তৈরী করেছে। তবে তার আগে সরকারী উদ্যোগে ল্যান্ড রিফর্ম করা হয়।
অনেক রাত এখন এখানে, নয়তো আরও বিস্তারিত বলতাম।
রিয়াজ ভাইকে ধন্যবাদ।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ মামুন ভাই। তাইওয়ানের ব্যপারটা জানা ছিল না। এই বিষয়ে একটু ঘেটে দেখব। সময় পেলে তাইওয়ানের ব্যপারটি একটু বিস্তারিত বলবেন এবং কিছু তথ্যসূত্র দিয়েন যদি রেডি থাকে। বাংলাদেশ জনসংখ্যার চাপ, বন্যার ঝূকি, আবাদি জমির ক্রমহ্রাসমান ধারা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এই সমস্যাগুলো নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার সময় কিন্তু দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। এর মধ্যেই বড় বড় শহর গুলোর নাজেহাল অবস্থা। গ্রামগুলো থেকে মূলত লোকজন পালিয়ে আসছে শহরে, থাকছে উচ্চমূল্যের বস্তিতে। বৃষ্টিতে কি হাল হল ঢাকার! এখনকার নতুন ঢাকা কয়েকদিন পরে দ্বিতীয় পুরান ঢাকায় পরিনত হবে, গাড়ি চলবে না, পানি নামবেনা, মশার জ্বালায় জীবন শেষ হবে, অবকাঠামো ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। এত মানুষ শহরে আসছে - তারপরও আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। আমাদের খাবারের যোগান হবে কি করে?
ঢাকায় কেবল মানুষের মাথা ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। মানুষ যেন কিট পতঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। গাদাগাদি, চাপাচাপি আর ঠেলাঠেলির মধ্যে মানুষ কি মানুষ থাকে? যতই মানবতার কথা বলি গুলিস্তানে, বা ফার্মগেটে হাটার সময় মানবতার অবস্থা যেটা দেখা যায় তাতে আমাদের আত্মপ্রসাদের যায়গা কোথায়? যদি আমাদের সেটেলমেন্ট প্যাটার্ন কিছুটা পালটে এই সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা করা যায় তবে চেষ্টা করতে দোষ কোথায়? আশু সমাধান না করা গেলে ভয়াবহ বিপর্যয় আসন্ন ভাবাই তো স্বাভাবিক। অবশ্যই কেবল আবেগ দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। চাই সুচিন্তিত পরিকল্পনা।
আবারো ধন্যবাদ মামুন ভাই। ভাল থাকুন।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ডঃ সেলিম রশীদের একটি সেমিনার শুনেছিলাম গত বছর। আমি অর্থনীতির লোক নই, তাই তাঁর সব কথা ভালো মতো বুঝিনি সেদিন। তবে আমার কাছে কেন যেন মনে হয়েছিল, উনি যে চিত্রটি আঁকছেন সেটি এতো সহজসাধ্য নয়, বা শুধু গ্রামের লোকগুলোকে একজায়গায় এনে বসিয়ে দিলেই বিরাট সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। আমার অবস্থা ছিল অনেকটা "গুণতে পারিনা, কিন্তু ভাগে কম পড়লে বুঝি" এর মতো অবস্থা, তাই কিছু শুধোতে সাহস পাইনি সেদিন।
মজার ব্যাপার ছিল যে উনার কথা শেষ হলে কে একজন তাঁকে প্রশ্ন করেছিল যে তিনি তার আইডিয়াটি হোঃ মোঃ এরশাদের "গুচ্ছগ্রাম পরিকল্পনা" থেকে পেয়েছেন কিনা। কিছুটা বোধহয় তর্ক-বিতর্কও হয়েছিল এ নিয়ে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

"গুণতে পারিনা, কিন্তু ভাগে কম পড়লে বুঝি"

খাসা বলেছেন। তবে এই বোঝার ব্যপারটি ব্যখ্যা করার জন্যেই তো চিন্তা ভাবনা, আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক এসবের প্রশ্ন আসে। আর এতে করে আমরা অনেক ভুলের হাত থেকে বেঁচে থাকতে পারি।

তবে আমার কাছে কেন যেন মনে হয়েছিল, উনি যে চিত্রটি আঁকছেন সেটি এতো সহজসাধ্য নয়

বাঁধাগুলো কোথায় সেটা বোঝার চেষ্টাতেই তো এই পোস্ট।

কে একজন তাঁকে প্রশ্ন করেছিল যে তিনি তার আইডিয়াটি হোঃ মোঃ এরশাদের "গুচ্ছগ্রাম পরিকল্পনা" থেকে পেয়েছেন কিনা

উপরের সারসংক্ষেপে কোথাও বলা হয়নি এই ধারনাটি তার নিজের। তিনি কেবল বলছেন এটা দরকারি এবং এটার পেছনে অর্থনৈতিক যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেছেন। আমার জানামতে প্রফেসর রশীদের আগেও অনেকে এই ধারনার কথা বলেছেন। এরশাদের ধারনার সাথে কিছু মিল থাকাটা কি কোন বড় সামস্যা? কাজেই এখানে বৃদ্ধ এরশাদ সাহেবকে কষ্ট দিয়ে টেনে আনার কারন টা বুঝলামনা। হাসি

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ডেইলি স্টার- পত্রিকায় ডঃ রশিদের একটি সাক্ষাতকার ছাপা হয়। বিস্তারিতের জন্য অনুবাদের সমস্যায় অস্পষ্ট কিছু থাকলে সেটা এই সাক্ষাতকার থেকে স্পষ্ট হতে পারে।

দিগন্ত এর ছবি

আপনার প্রস্তাবের সমালোচনা করি। শুরু করি বিনিয়োগের ধরণ থেকে। আপনার প্রস্তাব যদি উপকারী হয় তাহলে বিনিয়োগকারীরা (ধরে নিলাম প্রাইভেট ডেভেলপার) তাদের লাভের পরিমাণ সর্বাধিক করার জন্য চাহিদার থেকে কম বাড়ি-যুক্ত ক্ষুদ্র শহর বানিয়ে একরকম কৃত্রিমভাবে বাড়ির দাম বাড়িয়ে দেবেন। এতে অর্ধেক লোকের উৎসাহ চলে যাবে।

যদি সরকারী উদ্যোগে হয়, তাহলে এই প্রকল্পে দুর্নীতির সুযোগ অপরিসীম। যেহেতু এ ধরণের উদ্যোগ বিশ্বে খুবই কম, তাই বাড়ির দাম, গুণমান ও ভাগ-বাটোয়ারা কিভাবে হবে তা নিয়ে স্বচ্ছতা থাকবে না। সাধারণ লোকে সব বুঝবে না। নিট ফল - ঘুষ, চুরি ও স্বজনপোষণ।

আরো বড় সমস্যা হল পুনর্বাসন। ধরে নেওয়া গেল কোনো এক গ্রামকে মাইক্রোসিটিতে পরিবর্তিত করার সুযোগ দেওয়া হল। গ্রামের প্রত্যেকে চাইবেন যে তারা যেহেতু জমি দিচ্ছেন তাই তারা যেন সর্বোচ্চ সুবিধা পান। সর্বোচ্চ ব্যাপারটা আপেক্ষিক - কিছু মানুষ এমন দর (টাকায় না হলেও মাইক্রোসিটির কটা ফ্ল্যাট তাকে দেওয়া হবে তা নিয়ে) চাইবেন যা প্রজেক্টের ফিসেবিলিটি শেষ করে দেবে। আবার জোর করে সেই ক'জনকে তুলেও দেওয়া যাবে না - কারণ তা হিউম্যান রাইটস-বিরোধী হবে - বা যা নিয়ে রাজনীতি হবে। এবার বাকি পড়ে থাকে তাদেরকে বাদ দিয়ে মাইক্রোসিটি বানানো। তাতে কিছু পকেট তৈরী হবে - যে পকেট অঞ্চলে জমির দাম হুহু করে বাড়বে। মোটকথা, যারা জমি দেবে না - তারা জমিদাতাদের তুলনায় অনেক লাভবান হবে। নিট ফল - কেউই জমি দিতে চাইবে না। (এটা ভারতে শিল্প-স্থাপনের জন্য জমি দিতে চাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বললাম। অনেক সমীক্ষায় দেখা গেছে অঞ্চলের সবাই শিল্প চায় - কিন্তু এও চায় যে তার নিজের জমিটা শিল্পের জন্য বরাদ্দ জমির বাইরে থাকুক হাসি ।)

সবশেষে আসি রাজনীতির কথায়। এটা একটা "বিগ পুশ" উন্নয়নের প্রচেষ্টা। এখন ধরা যাক ক দল ক্ষমতায় থাকাকালে তারা এই পরিকল্পনা করল। বিরোধী দল খ দল। এখন যদি ক দল এই পরিকল্পনা সফলভাবে কার্যকর করে তাহলে তারা ইতিহাসের পাতায় চলে যাবে - সুতরাং খ দল নিজের অস্ত্বিত্ব রক্ষার্থেই এর বিরোধিতা করবে। কিরকম? প্রথমত তারা প্রত্যেককে বোঝাবে যে সে এই প্রকল্প থেকে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে। যে জমি অধিগ্রহণ হবে সেই জমির মালিকদের বলবে তাদের টাকা কম দেওয়া হচ্ছে, যে গ্রামগুলোকে প্রকল্পের আওতার বাইরে রাখা হবে তাদের বঞ্চনার অভিযোগও থাকবে। দুয়ে মিলে ভোটের বড় ইস্যু। পাঁচ বছর পরে পরিকল্পনা পরিবর্তন - অন্য কয়েকটি গ্রাম (পড়ুন যারা খ দলকে ভোট দিয়েছেন) - তাদের নিয়ে নতুন পরিকল্পনা। নিট ফল - প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য।

এরকম আরো অসংখ্য ইস্যু (সংখ্যালঘু/আদিবাসী, রাস্তার অবস্থান ও অন্যান্য পরিকাঠামো) নিয়ে আমি লিখতে পারি। সংক্ষেপে বললে আমার মনে হয় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেভাবে উন্নয়ন চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নাগরিকের ওপর - গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সেটা সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে উন্নয়ন আসে নাগরিকের উন্নততর চিন্তার হাত ধরে - যার প্রতিফলন পাওয়া যায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে কর্মমুখীতা পর্যন্ত (এই একই কারণে ধনী-গরিব বিভেদ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশী)। এই উন্নতি ঘটে ধীরে ধীরে - বিগ পুশ দিয়ে নয়। আলাদা আলাদা ক্ষেত্রে উন্নতিগুলো একে অপরের হাত ধরাধরি করে হয়। বাংলাদেশে এখন এই পরিকল্পনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম কারণ জনমানসিকতার অনেক উন্নয়ন দরকার এখনও - তাইওয়ানের সাথে এটাই পার্থক্য। ধীরে ধীরে সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির পরিবর্তন হলে এধরণের পরিকল্পনা রূপায়নে পরিকল্পনা হবে। আপনি অনেকটা Ahead of time ভাবছেন।

পুনশ্চ - আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য আপনার পরিকল্পনাকে খাটো করা নয় - বরং পরিকল্পনার কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। আপনি এগুলো নিয়ে ভাবলে পরিকল্পনার ডাইমেনশন আরো বাড়বে বলে আশা রাখি, পয়েন্টগুলো বোকাবোকা মনে হলে নাও ভাবতে পারেন।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

দিগন্ত
বিস্তারিত উত্তর দেবার আগে বলে রাখি এরকম দিকনির্দেশনা মূলক [মোটেও বোকা বোকা নয়] সমালোচনার জন্যই এখানে পোস্টটি দেয়া হয়েছে। বলে রাখি এটা আমার নিজের প্রস্তাব নয়। তবে আমি প্রস্তাবটির বেশিরবাগ ধারনার সাথেই একমত।

নিচে একে একে আপনার উদ্বেগের বিষয়্গুলোতে আমার ধারনা নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করছি।

  • বিনিয়োগের প্রশ্ন প্রথমে বিনিয়োগের খাত গুলো ভাগ করে আলোচনা করা যায় বোধহয়। যেমন বিনিয়োগের দুইটি প্রধান ভাগ হচ্ছে অবকাঠামো আর কাঠামো। অবকাঠামো ব্যায়ের ‌‍জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনাই হয়্ত উপযুক্ত। এর মধ্যে রাস্তা ঘাট , বিদ্যুত, পানি সরবরাহ এসব থাকবে। তারপর দালান কোঠা নির্মানের ব্যপারটা হয়্ত রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের হাতে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ন হবে এই ধাপে প্রতিযোগীতার সুযোগ খোলা রাখা। তখন হয়্ত কেউ চাইলে সেখানে নিজে জমি কিনে বাড়ী তৈ্রী করে নিজে থাকতে পারে, ভাড়া দিতে পারে অথবা বিক্রিও করতে পারে। সে অবস্থায় মনপলির সম্ভাবনা থাকবে না। ডেভেলপাররাও প্রতিযোগীতামূলক বাজারমূল্যে ফিরে আসতে বাধ্য হবে।
  • মোদ্দাকথা হচ্ছে বাজার ব্যবস্থা নিজে থেকেই অনেক সমস্যা লাঘব করবে যদি বিষয়্গুলোকে বিবেচনায় রেখে স্কিম গুলো ডিজাইন করা যায়। কিন্তু এখানে বলে রাখা ভাল যেই প্রশ্নটি আপনি তুললেন প্রকল্প পরিকল্পনার সময় সেটা আমলে না নিলে তা ব্যর্থ হবার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যাবে।
  • এবারে আসি জমির প্রশ্নে। যদিও স্থান ভেদে কাঠামোতে ভিন্নতা থাকতে পারে সাধারনত সরকারি অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহন করে নেয়া হয়। দেখতে হবে সবাই ন্যয্য মূল্্য পাচ্ছে কিনা। এভাবে দেখলে আপনার বলা সমস্যাগুলো হয়্ত তৈরি হবে না। তবে স্থানভেদে স্থানীয় পর্যায়ে সাধরনের অংশগ্রহনে পরিকপ্লনা নেয়া যেতে পারে যাতে প্রকল্পে অনাকানংখিত জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়।
  • আপনি যেটা বললেন সেটা আমাদের মত দুর্বল গনতন্ত্রের দেশে হামেশা দেখা যায়। তবে এর একটা দিক হয়্ত ভালই। যেমন যেমন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গ্রুপ মসনদে থাকলে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ সুবিধা পায় এতে করে সুবিধা সমাজের বিভিন্ন গ্রুপে বন্টন হয়। ক্ষুদে শহরের বেলাতেও তার কিছু ফলাফল থাকতে পারে কিন্তু এই মুহূর্তে তার কতটা পূর্বাভাষ দেয়া সম্ভব সেটা বলা কঠিন। আর এটা নিয়ে যদি কাড়াকাড়ি বা প্রতিযোগীতা হয় সেটা কেবল তখনি হবে যখন এটা গ্রহনযোগ্য মনে হয়। আর যেসব রাজনীতির কথা বলছেন তা অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিরল নয়। তারপরও রাস্তঘাট এবং নানারকম অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে । এটাকে আশার কারন মনে করা যায় বোধ করি।
  • গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিস্থিতির কথা বলে যখন বলছেন মতামত চাপিয়ে দেয়া সম্ভব নয় সেটার সাথে দ্বিমত পোষনের কারন নেই কোণো। কিন্তু এখানে কিছুই চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না। বরং ব্যক্তির চাওয়ার সাথে সংগতিপূর্ণ পরিকল্পণার প্রস্তাব ভাবা হচ্ছে যাতে এটা কাজ করে। আগেই বলা হয়েছে এখানে মানুষ নিজের আগ্রহে আসবে। কোন জবরদস্তির কথা সুযোগ্ নেই। আর বিগ পুশ নিয়ে যে সংশয়ের কথা বললেন সেটার সাথেও কিন্তু প্রস্তাবের কোথাও বিরোধ নেই। কথা হচ্ছে ভবিষ্যত উন্নয়নের ডিরেকশন কোন দিকে হবে সেটা নিয়ে। বলা হয়েছে -প্রাথমিকভাবে "দেশে বছরে ৫-১০টির বেশি এরকম শহর নির্মান করা সম্ভব হবে না "। আর পরিকল্পনার ধরনই এমন Ahead of time তাই নয় কি? যেটা দরকার তা হচ্ছে দরকারটা সবাই উপলব্ধি করছে কিনা।

  • "পুনশ্চ - আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য আপনার পরিকল্পনাকে খাটো করা নয়" আপনার অবস্থান পরিষ্কার দিগন্ত।
আপনার সুচিন্তিত মতের জন্য আবারো ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

দিগন্ত এর ছবি

আপনি এখানে অনেক কিছু অনুমান করেছেন। সেগুলো নিয়ে আবার বলি।
১) ধরে নিয়েছেন ফ্রি-মার্কেট কাজ করছে। এটা বাংলাদেশে খুবই শক্ত এই অবস্থায়, কারণ অশিক্ষা, দুর্নীতি ও রাজনীতি।
২) জমির "ন্যায্য মূল্য" ব্যাপারটা একটা পারশেপশন মাত্র - এটাই আমি আপনাকে বোঝাতে পারলাম না। আপনি বলুন তো - ঢাকার ২০০ কিমি দূরে কোনো জায়গায় সরকার কিছু জমি নিয়ে একটা টাউনশিপ গড়তে গেলে তার য়াশেপাশের জায়গার দাম হঠাৎ করে বাড়বে কি না?
৩) এখানে আপনি একটা সমস্যা দূর করার জন্য পূর্বপরিকল্পনার কথা বললেন। অর্থাৎ সমস্যার সমাধান time-bound। - অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করলে তবে বেশী লাভ। রাজনৈতিক সমস্যার জন্য প্রকল্প দেরী হয়ে জনসংখ্যা ২৫ কোটিতে পৌঁছলে জমি-অধিগ্রহণ কতটা সমস্যার হবে সেটা ভাবছেন?
৪) যদি স্টেপ-বাই-স্টেপ একটা নির্দিষ্ট দিকে এগোয় তাহলে সমস্যা কম। একমত। কিন্তু সেক্ষেত্রেও দেরী হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

আমার মত আপনার থেকে ভিন্ন এখানেই যে আমি এখন যা পরিকল্পনা ও এফর্ট সবটাই শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইত্যাদি মূল ক্ষেত্রে দিতে বলছি - নগর-পরিকল্পনা একরকম টার্শিয়ারি সেক্টর। সেটা অনেক পরে বিবেচনায় আসার কথা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

১) ফ্রি মার্কেট কোথাও শতভাগ কাজ করেনা। মার্কেট ফেইলিওর কমবেশি সবক্ষেত্রেই থাকে। আর ফ্রি মার্কেটে শক্তিশালি হয় তখনই যখন উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা যায় এবং মানুষের আচরনগত ব্যপারগুলোকে আমলে নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে মার্কেটের সিগনালগুলোকে আমলে নেবার দরকার আছে। এখানে মার্কেটের কি কি সিগনাল আমলে নেয়া হল?

  • শহরমুখি মানুষের ঢল; এটা উন্নত সুযোগের চাহিদার ইন্ডিকেশন
  • হাইওয়ের ধার ধরে কিছুদূর পর পর গুচ্ছে গুচ্ছে বাজার ঘাটের বিস্তার (ঢাকা-চট্টগ্রামের হাইওয়ে একটা উদাহরন) আমি নিজেই এটা নিয়ে একটা ইনফরমাল সার্ভে করেছি। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবার পথে প্রায় ২৫-৩০ টা বাজার হাইওয়ের উপর উঠে এসেছে। এর অনেক বাজারে প্রচুর অবৈধ স্থাপনা। এই লোকেশন গুলোর অনেক সম্ভাবনা আছে কিন্তু সেখানে স্থানীয় পর্যায়ে কাঠামো উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো নেই। ইত্যাদি
মার্কেটের রুল কাজ না করলে কিসের মাধ্যমে বাংলাদেশে বাজারে পন্যসামগ্রীর মূল্য-চাহিদা-যোগান এসব ঠিক হচ্ছে বলে মনে করেন? সরকার যখনই দব্যমূল্যের দাম কমানোর জন্য কৃত্রিম নিয়ন্ত্রন দেবার চেষ্টা করেন তখনই তার দাম বেড়ে যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসেই প্রথমে একটা চেষ্টা নিয়েছিল। এই চেষ্টা দেখে ঘাবড়ে গিয়ে দেখলাম যা হবার তাই হল। দাম বাড়তে থাকল। এ ওকে সে তাকে দোষারোপ করতে থাকল। স্বাভাবিক নিয়মে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসলে দ্রব্যমূল্যের দাম কমে আসল। কারো কিছুই করতে হলনা। মাঝখান দিয়ে চুপচাপ বসে থেকে শেখ হাসিনা প্রশংসা কড়ালেন। তিনি কিছু যে করেন নি এটাই ঠিক ছিল। আমার মতে বাজার ব্যবস্থা কাজ করছে। তবে দুর্নীতি এবং রাজনীতির মধ্যে যা গন্ডগোল সেটা এই বাজারের শক্তিকে বেশি করে আমলে নেয়া হলেই সমাধান হতে পারে বলে মনে করি। বাজারের শক্তি কিন্তু অন্যভাবে বললে গনতন্ত্রেরই বহিপ্রকাশ।

আমি আমার মন্তব্য বাজার ব্যবস্থার কথা বলে কিন্তু উপযোগী স্কিমের কথাও বলেছি। এই যদি অংশটার দিকে তাকালে বুঝবেন আমি বলছি যে বাজার ব্যবস্থাকে বেগবান করতে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানিক কাঠামোর দরকার। এছাড়া প্রফেসর রশিদ বলছেন enabling law এর কথা। নিচে তাঁর কমেন্ট পড়ে দেখুন।

ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই মার্কেটের কথাই আসছে।

২) ধরে নিলাম ন্যয্যমূল্য পারসেপশন। সেক্ষেত্রে জমির কেনাকাটার যে বাজার মূল্য সেটাই ধরতে হবে ন্যয্যমূল্য হিসাবে। "ঢাকার ২০০ কিমি দূরে কোনো জায়গায় সরকার কিছু জমি নিয়ে একটা টাউনশিপ গড়তে গেলে তার য়াশেপাশের জায়গার দাম হঠাৎ করে বাড়বে কি না?" বাড়বে কিন্তু সেটা পুরোপুরি বায়বীয় পারসেপশন নয়। এখানে জমির ব্যবহার গত মূল্যের (use value) ক্ষেত্রে locational advantage বাড়ার দরুন expected return বাড়বে বলেই সেটা হবে। এটা কিন্তু আপনার প্রথম প্রশ্নেরও উত্তর। এখানে জমির দাম যে বেশি হবে সেটা বোঝার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কাউকে কিন্তু শিক্ষিত হবার প্রয়োজন পড়বে না। বাজারের হালচাল থেকেই বুঝে নেয়া যায় কি হতে যাচ্ছে। যদি বলেন এই প্রক্রিয়ায় জমির দাম অনেক বেড়ে যাবে সেক্ষেত্রে নানা ধরনের procurement strategy নিয়ে ভাবা যেতে পারে। কিন্তু এতসব করার দরকার হবে তখনই যখন মনে হবে এই সব ক্ষুদে শহর আমাদের দরকার। রাস্তা ঘাট আমাদের দরকার আছে বলেই জমি অধিগ্রহন সঙ্ক্রান্ত জটিলতার মধ্যেও রাস্তাঘাট তৈরি হয়। হাজার হাজার মাইলে তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে আমি এটা মানতে রাজি নই যে এই কারনে একটা দরকারি পরিকল্পনাকে বাদ দিতে হবে। কারন এটার সমাধান যে জানা আছে সেটা প্রমানিত।

৩) তার মানে আমাদেরকে দ্রুত শুরু করতে হবে! ঠিক বলছি কি?
৪) তার মানে কি এখনি তরি ঘড়ি করে লক্ষ্য পৌছানোর চেষ্টায় নামতে হবে?
[/]
১ এবং ২ কিছুটা পরস্পর বিরোধী। কারন মার্কেট বিষয়ে এখানে আপনি পরস্পরবিরোধী মতামত দিলেন।

৩ এবং ৪ এ আপনি বোঝাচ্ছেন লেট করলে দেরি হয়ে যাবে চোখ টিপি

আমার মত আপনার থেকে ভিন্ন এখানেই যে আমি এখন যা পরিকল্পনা ও এফর্ট সবটাই শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইত্যাদি মূল ক্ষেত্রে দিতে বলছি - নগর-পরিকল্পনা একরকম টার্শিয়ারি সেক্টর। সেটা অনেক পরে বিবেচনায় আসার কথা।

এব্যপারে আমার মতটা লেখার ভেতরে কিভাবে আপনি পড়েছেন আমার কাছে পরিষ্কার নয়।

আমি বলছি শিক্ষা স্বাস্থ্য এসবের জন্য অবকাঠামো দরকার। আমি জানিনা এবিষয়ে দ্বিমতের কি থাকতে পারে। আমরা গল্প শুনি ২ মাইল দূরে স্কুল - ৫ মাইল দূরে হাসপাতাল। এখন যদি ধরে নেই এভাবে শিক্ষা স্বাস্থের উন্নতি হবে তারপর আমাদের উন্নতি হবে সেটা বোধহয় ভেবে দেখার দরকার আছে। এভাবে শিক্ষা স্বাস্থের উন্নয়ন ঘটা সম্ভব নয়।

আমার কাছে মনে হচ্ছে শিক্ষা আর ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো দরকার। সেই অবকাঠামো দেবার সহজ উপায় হয়ে উঠতে পারে ক্ষুদে শহর। সে অর্থে আপনি যে বলছেন "পরিকল্পনা ও এফর্ট সবটাই শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইত্যাদি মূল ক্ষেত্রে দিতে বলছি" সেটাই করা হচ্ছে আসলে।

আরো কোন বিষয়ে দ্বিমত থাকলে জানান।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ইন্টারেস্টিং ইস্যু। আরেকবার পড়ে বিস্তারিত বলবো।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

আপনার বিস্তারিত মতের অপেক্ষায় থাকলাম।

শামীম এর ছবি

একটানে পড়ে প্রথমেই এরশাদের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কথা মনে পড়েছিল। পরবর্তীতে একজনের মন্তব্যেও দেখলাম সেটার উল্লেখ আছে।

এই প্রস্তাবের সাথে সহমত পোষণ করা যাবে কি না তা এখনও বুঝতে পারছি না। তবে, গবেষণার জন্য গ্রামাঞ্চলে কাজ করতে গিয়ে যা বুঝতে পেরেছিলাম সেটার অভিজ্ঞতা এটাকে সমর্থনই দেবে।

চাকুরী করতে গিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরেছিলাম কিছুদিন। আমাদের দেশেও ঘনবসতিওয়ালা গায়ে গায়ে বাড়ি ... এমন গ্রাম আছে। মুন্সীগঞ্জ এলাকায় নীচু জমিগুলো ৬মাস পানিতে তলিয়ে থাকে। তাই উঁচু জায়গায় একত্রে অনেক লোক বসবাস করে। তবে বাড়িগুলো সেখানে সবই একতলা, উঠানওয়ালা বাসা। বহুতল বিশিষ্ট নয়।

নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য অনেকগুলো জায়গায় পাইপলাইন প্রকল্পের জন্য আমাকে প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজ করতে হয়েছিলো। যেই গ্রাম বা আগ্রহী লোকালয়গুলো বাদ গিয়েছিলো সেখানের মূল সমস্যা ছিল পাইপলাইটের অতিরিক্ত দৈর্ঘ্যের কারণে অত্যাধিক খরচ, যেটা ছড়ানো ছিটানো বাড়িঘরের কারণে হয়েছিলো।

আমি নিশ্চিত যে, একই কারণে অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপারগুলোও গ্রামে বেশি ব্যয়বহুল মনে হয়।

আবার গবেষণার কাজে (জাপানি প্রফেসরের পয়সায়) ভারত এবং নেপাল ভ্রমণের সময়ে বেশ কিছু জায়গায় পরিকল্পিত গ্রাম দেখেছি। যেখানে বসতিগুলো সুন্দরভাবে রাস্তার পাশের প্লটে সারিবদ্ধ ভাবে গুছিয়ে বানানো। তাঁদের ক্ষেত-খামারগুলো গ্রামের পাশেই, অনধিক ১ কি.মি-এর মধ্যে অবস্থিত। গ্রামগুলো অবশ্য খুব বড় ছিল না .... হাজারখানেক লোক বসবাস করতো। (হিন্দি শোলে বা [url=http://en.wikipedia.org/wiki/China_Gate_(1998_film)]চায়নাগেট[/url] সিনেমাতে অমন গ্রাম দেখা যায়)

এর ফলে রাস্তার পাশ দিয়ে চমৎকার পানি নিষ্কাশনের ড্রেন ছিল যেটা আমাদের দেশের গ্রামে চিন্তাই করা যায় না। এছাড়া ওখানে নিরাপদ (আর্সেনিকমুক্ত) পানি সরবরাহের জন্য স্থাপিত গভীর নলকূপটা অনেক লোক ব্যবহার করতে পারতো। আর এরকম ঘন স্থাপনার কারণে পুরা গ্রামের মূল রাস্তাগুলো মেরামত খরচও কম পড়ে, বিদ্যূত সরবরাহের জন্য কম তার লাগে ... পাইপের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে হলেও সেটার স্থাপনা খরচ কম লাগবে।

কোনো ঠিকানা খুঁজে বের করাও এরকম ক্ষেত্রে বেশ সহজ হয়।

এছাড়া একটা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে পুরা গ্রামের মানুষকে সেবা দেয়া সম্ভব। আমরা আর্সেনিকোসিস রোগীর খোঁজে এক কোনায় একটা তাবু খাটিয়ে ক্যাম্প বসিয়েছিলাম, যেখানে বাংলাদেশের প্রফেসর আখতারুজ্জামান স্যার, আর জাপানি দুজন ডাক্তার ৩ দিনে ৭০০ লোককে পরীক্ষা করেছিলেন। বাংলাদেশের কোনো গ্রামে হলে বাসা/বাড়ি থেকে দূরত্বের কারণে এটা বেশ অসুবিধাজনক হত।

কাছে কাছে /গায়ে গায়ে বাড়ি হলে আমাদের দলের নমুনা সংগ্রহ করতে খুব সুবিধা হত। একদিনেই দেখা যেত ৪০ টা নমুনা সংগ্রহ করেছি। দেশে দিনে ১৭টার বেশি নমুনা কখনো নিতে পারি নাই।

এই প্রস্তাবটি অনেকটা সেরকমই কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে, তবে সেটা সরকারী খরচে একাধিত তল বিশিষ্ট ভবন তৈরীর ব্যাপারে।

এই ধরণের গ্রামে আমাদের দেশের ছড়ানো ছিটানো বাড়িঘর বিশিষ্ট গ্রামের তুলনায় যেই অসুবিধাগুলো চোখে পড়েছে তা হল:
প্রাইভেসী - গায়ে গায়ে বাড়ি হওয়াতে এর হাঁড়ির খবর ও সবসময়ই জানতে পারে।
ছোঁয়াচে অসুখ বিসুখ দ্রুত ছড়াবে। অবশ্য চিকিৎসা সুবিধা বেশি পাওয়া যাবে।

আর নগরায়ণ ঘটিয়ে মানুষকে স্থানান্তর করতে হলে যেই সমস্যাগুলো হয় তা-ও মাথায় রাখতে হবে। একজন মাতব্বর স্থানান্তরিত হয়ে ওখানে আগের মত মাতব্বরী করতে পারবে না ... কারণ সবাই একই রকম বাসায় থাকবে, ইত্যাদি।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

শামীম ভাই
সরাসরি অভিজ্ঞতা থাকায় আপনি খুব সহজেই গুরুত্ব পূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরেছেন। তবে একত্রে কাছাকাছি বসবাসের সুবিধা ছাড়াও এক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে আবাদি জমি কমে যাবার ব্যপারটিতে মনযোগ আকর্ষন করতে চাই। এ বিষয়টি বাদ দিলে সব বিষয়ই মোটামুটি বলে দিয়েছেন আপনি।
কাছাকাছি ঘরবাড়ি বানানর ব্যপারটিকেই Economies of Agglomeration এর উৎস হয়ে ওঠে। বলা হয় নগরায়নের দরুন অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ধারা দেখা যায় তার একটা নেসেসারি কন্ডিসন হচ্ছে Agglomeration. আপনি বিষয়টি সরাসরি মাঠ পর্যায়ে দেখেছেন। কাজেই আপনার কাছে বিশদ ব্যখ্যার প্রয়োজন নেই।
ধন্যবাদ আপনার বিস্তারিত সুচিন্তিত মতামতের জন্য।

স্নিগ্ধা এর ছবি

থিওরেটিকালি আইডিয়াটা ভালো, কিন্তু কয়জনের সাধ্য আছে মাসিক কিস্তি দেয়ার সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান! দিগন্ত এবং শামীমের মন্তব্যে উঠে আসা পয়েন্টগুলো নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত লিখলে ভালো হয়।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। নিচে স্যারের কাছ থেকে মন্তব্যের একটা একত্রিত উত্তর পাওয়া গেছে। পোস্ট করব। উপরে দিগন্তের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। এটা অনেক বছর আগের টপিক। এটাকে সামনে এগিয়ে নেয়া দরকার বলে মনে হয়েছিল তাই পোস্ট করলাম। সচলায়তনে লেখা শুরুর দিকে আপনি আমাকে অনুপ্ররনা দিয়েছিলেন সেজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখানে লিখে ভাল লাগছে। ছোট খাট কিছু বিষয় বাদ দিয়ে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

আপনি নিজেই তো আরবান প্ল্যানিং এর - আপনার কী মনে হয় এ ধরনের প্রকল্প/প্রস্তাবনা নিয়ে? মানে এটা যদি কয়েক বছর আগের টপিক হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে এখন কী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

আমি নিজের স্বার্থেই যারা ভালো লেখেন তাদের অনুপ্রেরণা দেই, সচলায়তন যত ইন্টারেস্টিং হবে পাঠক হিসেবে ততই আমার লাভ হাসি

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

এই প্রস্তাব প্রথম যখন জানতে পারি তখন বূয়েটের দ্বতীয় বর্ষের ছাত্র। সেলিম রশিদ স্যার তখন সেবাটিকালে বাংলাদেশে ছিলেন এবং আমাদের কে রিজিওনাল প্ল্যনিং এর সেশনাল কোর্সে বুয়েটের আরেকজন অধ্যাপকের সাথে আমাদের ইন্সট্রাক্ট করেন। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের সংস্কৃতি জানতে পারি স্যারের পড়ান থেকে। পুরো ক্লাস ধরে প্রথমে নির্বিচারে সমালোচনা করতে থাকি আমরা। অধ্যাপককে সামনে নিয়ে তার ধারনার এমন মন্ খোলা সমালোচনার সুযোগ আর পাইনি। একপর্যায়ে জানতে পারি Asian Affairs নামের বাংলাদেশি একটি জার্নালে এই ধারনার উপর আলোচনায় একটা বিশেষ সংখ্যা বের হবে। স্যার আমাদেরকে লিখতে বললেন। কয়েক বন্ধু মিলে লিখ্লাম। প্রথম নিজের লেখা কোন জার্নালে দেখা গেল। পরিকল্পনার ছাত্র হিসাবে বিষয়্ টিকে মাথা থেকে তাড়াতে পারছিলামনা। পরে এই ধারনার ব্যপারে আমি স্যারের কাছে নিয়মিত খোঁ্জ রাখতাম। একসময় বুঝলাম এটা একদিন না একদিন আমরা সবাই বুঝব কিন্তু যত তাড়তাড়ি বুঝি ততই মংগল। যত দিন যাচ্ছে সুযোগ হারাচ্ছি। তবে মূল প্রস্তাবটি অনেকটাই সরলিকৃ্ত। বাস্তবায়্ন করতে গেলে আরো অনেক দিক উঠে আসবে। আমার মতে ইচ্ছা থাকলে অর্থায়ন বড় সমস্যা হবে না। আমরা যদি ভাবি এক বছরে সারা দেশ ক্ষুদে শহরে ভরে যাবে তাহলেই সমস্যা।

একবার রেহমান সোবহান স্যারের সাথে (সিপিডির চেয়ারমেন) সেলিম রশিদ স্যারের লেখা নিয়ে কথা বলছিলাম। তিনি বললেন সেলিম রশীদের লেখা অনেকটা নর্মেটিভ। যেটা হওয়া দরকার সেটা হচ্ছে না কেন তাও আমাদের দেখা দরকার।

রেহমান সোবহান স্যারের এই প্রশ্নটা যদি ক্ষুদে শহরের ওপর প্রয়োগ করি তবে প্রশ্নটা দাড়ায় "ক্ষুদে শহর যদি সবার জন্য ভালই হবে তবে কেন নিজে থেকে এমন্ টা হচ্ছেনা । এটা নিয়ে একটা পিএইচডি থিসিস হতে পারে। এই ব্যপারে আমার মত লিখে জানাতে গেলেও অনেক পৃ্ষ্ঠা হবে। খুব সংক্ষেপে বলা যায়্ঃ

  • আমাদের স্থানীয় সরকার দু্র্বল। সথানীয় ভাবে আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সনং্গঠিত হবার উপযোগী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আমাদের নেই। এই প্রতিষ্ঠানিক পরিবর্তন রাজনৈ্তিক কারনে যতদিন পারবে ঠেকিয়ে রাখবে। নিচ থেকে প্রবল চাপে সরকারের গদি নাড়িয়ে না দিলে সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু যতদিন স্থানীয় পর্যায়ে অর্থায়্ন বা নর্ম্ সেটিং ইত্যাদির সুযোগ না হয় এটা কঠিন।

  • একটা উদাহরন দেই। একবার কুমিল্লার একটি গ্রামে গিয়েছিলাম রাস্তাঘাট নির্মানে গাম বাসিদের মতামত জানতে। সরকার তখন রোড ফান্ড নিয়ে কাজ করছে। তারই একটা গবেষনার অংশ হিসাবে। আমি অবাক হলাম গ্রামবাসিদের সচেতনতা দেখে। যেটা মনে হল সুযোগ থাকলে তারা নিজেরা এক হয়ে নিজেদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করত। কিন্তু রাজনিতি আর প্রশাসনিক পাওয়ার প্লের কারনে এদের এসব চেষ্টা কাজে লাগন কঠিন। যেমন এক স্কুল ছাএ বলেছিল যারা রাস্তা ব্যবহার করে তাদের কাছ থেকে রাস্তায় বাশ দিয়ে গেট দিয়ে টাক তুলে তারা রাস্তা মেরামত করবে। কিন্তূ যারা বয়সে বড় তার হতাশ। 'কিছু হবে না'। আমাদের করের টাকা কোথায় যায় আমরা তো জানিনা। দরকার হলে আমরা আরো বেশি টাকা কর দিতাম। কিন্তু এটাকা যে আমাদের জন্য খরচ হবে সেটা না জেনে দিতে চাইনা। তারা যদি এই অর্থায়নের দিকগুলো স্পষ্ট দেখতে পেত হয়্ত নিজেরাই agglomeration এর ব্যপারে উদ্যোগী হত।
  • এছাড়া land use regulation দিয়েও হয়্ত কিছুটা আরোপিত কায়্দায় agglomeration নিশ্চিত করা যায়। যেটা অনেক দেশে করা হয়। যেমন আমেরিকার অনেক স্থানেই কেবল জমি আছে বলেই বাড় তৈ্রি করা যাবে এমন সম্ভব নয়। এটা অনেক দেশেই আছে। আমাদের বড় শহর গুলোতে কিছুটা land use regulation খাকলেও দেশের বাকি যায়্গায় এটা নেই। এটা ভেবে দেখার মত একটা বিষয়।

আমার মনে হয় ক্ষুদে শহরে যদি স্থানীয় শাসনের সুযোগ পায় বেশ কার্যকর একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দাড়বে। গনতন্ত্র এভাবেই সফল হবার সুযোগ পাবে বলে মনে করি। অনেক ifs and buts আছে কিন্তূ হাটা শুরুর আগে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বর পর ডিটেইল আগে থেকে বলা কঠিন। সেদিক থেকে বলব আগে আমাদের কিছু টাউন্ শিপ বানিয়ে এর সম্পর্কে ধাপে ধাপে জানতে হবে। তারপর এর কার্যকারিতা আরো ভাল ভাবে জানা সম্ভব। আমার মতে প্রথম টাঊন শিপটি বানানর মত উপযুক্ত কারন আমাদের হাতে আছে। এই মুহুর্তে এটাই যথেষ্ঠ হয়্ত।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

স্যারের কাছ থেকে কিছুক্ষন আগে মন্তব্যগুলোর উত্তর পেয়েছি। বাংলা করে দিতে পারলে আমার ভাল লাগত। কিন্তু এর ফাকে আরো দেরি হোক এটা চাচ্ছিনা। আশা করি পাঠকরা আমার আলস্য্ও ক্ষমা করবেন।

তিনি তার নোটে নিচের বিষয়্গূলোকে সনাক্ত করে উত্তর লিখেছেন্ঃ

  • পান্ডবদার মন্তব্যর আলোকে এটা proposal.
  • অর্থায়ন এসেছে কয়েকবার
  • আরিফঃ এখন ৯৩% ভাগের আয় ২০০০ এর কম। এখন লোকে মাঠ পুকুর এসব কাজে লাগায়।
  • একজনের মতে এটা হাস্যকর
  • তানভীরঃ আগে শহরগুলোকে বাড়তে দিতে হবে। আরিফ্ঃ রাস্তা বিদ্যুত এসব ছাড়া কৃ্ষির উন্নয়ন কি করে হবে?
  • মামুনঃ তাইওয়ানে হয়েছে; গুচ্ছগ্রামের মতন; ব্যপারটা সহজ নয়।
  • কারা আসবে শহরে? বরাদ্দ কি করে হবে? দলী্য় রাজনীতি ক-খ দল। শামীম - অভিজ্ঞ এবং ইতিবাচক মন্তব্য।

নিচে স্যারের উত্তরঃ
To discuss the question of Compact Townships [or CT’s] as a practical measure requires us to ask ”Where should BD be 30 years from now---and how do we get there?”
No policymaker in BD worries beyond the next 2 years in practical terms and the next 5 for political dialogue
If one can judge by the actual words and actions of families---especially of those in power---the current faith lies in “Escape by green card”
If such a road were open to enough people, who could argue against it?
The CT has gone into two budgets[and the PRSP]---but no money has been allocated for them.
In other words, a sufficient number of high level people are convinced that this is a viable solution---they just cannot see how to implement it
One way of meeting this constraint is to see if we can build up widespread public support by the simplest democratic method---open discussion of the problem and by asking the people for solutions. Good ideas will find roots. If there is a groundswell of support, this alone will force politicians and bureaucrats.
When the waters rose in Dhaka city, everyone saw the problem. But were there not many who predicted that, if we leave things along their current course, the waters must rise?
So let us try to solve the conceptual issues: do we agree that there is such a problem? If so, it is our problem---everyone who sees the problem acquires a responsibility to help solve it.
Will the CT’s, if adopted, solve the problem. If not, let us forget about the CT’s.
Are there better ways than a CT to solve the problem? If so, let us adopt those methods asap.
Since this is an immense practical issue, who said what first is uninteresting [in the first Asian Affairs article, I tried to list all the predecessors I could find. Mr Muhith is very much in this group ]
But just for the sake of clarification, I think calling a CT the ‘marriage’ of a gucchho gram with an EPZ gives an appropriate initial image
The gucchho gram is based upon housing, the EPZ upon production. Obviously, neither alone can be adequate.
The CT is based upon two thoughts that are so simple that it is almost embarrassing to even call them ideas.
Since we cannot move horizontally for lack of space, we must move vertically
Since we cannot produce well without infrastructure and since infrastructure requires concentration, we must agglomerate.
A CT is a generic thought. For practical application, over the last year that I spent in BD, I came up with five specific suggestions
1 RMG moved out of Dhaka city and spaced along the Dhaka Chittagong highway so that they have access to transport and infrastructure. A large RMG hires over 5000 workers. Once we add the families and needed education and health and service personnel, we get enough to form a Township
2 Agro based economy with eco tourism as the long run prospect in Shoron Khola. I spent time in Shoron Khola as it was hard hit by Sidr and I was amazed by its potential. Tour operators agree with me in the potential for eco-tourism
3 Preserving Kaliakor as a rest and recreation area with the pristine scenery of rural BD. Kaliakor is barely an hour from Dhaka and the rich of Dhaka ‘need’ places to go to. With the Turag as ‘two’ boundaries, the Ashulia watershed as a third and the forest area as the north, it will provide a profitable water preserve for Dhaka. There is a ruin of the Pal dynasty in the middle of Kaliakor [ Dhol Samudra] which will be an added attraction
4 Use dairy-fish combinations in the 4-cow model to give livelihood to poor women and let them package and sell dairy and fish products---possible locations are Muktagacha and Munshiganj
5 Satura sharif, near Brahman baria, has 4000 people---of whom some 800 work in Italy. Why not use the ‘Italian connection’ to build a joint venture factory township which will cater to Italian investors in Leather and Textiles; BD has high quality raw materials and Italy has the markets.
The Government need not take charge of the entire process; in fact it will be a very good thing if it does not. But the GoB needs to provide the enabling laws and perhaps build one or two examples.

ফরিদ এর ছবি

আমি এই আর্টিকেলে ঘুরে গেছি প্রায় সপ্তাহখানেক আগে কিন্তু চিন্তাটা মাথা থেকে বেরচ্ছিলই না। তাই আবার ফেরত এসে ফিরতি মন্তব্য।আগের লেখাগুলোতে আর না পড়েই যা মাথায় ছিল তার ওপরেই লিখছি।

বাংলাদেশের অবস্থা এবং আশু ও সুদূর ভবিষ্যত হিসেব করলে এরকম অনেক মিনি স্যাটেলাইট টাউন তৈরি করা মনে হয় বেশ চমৎকার আইডিয়া। কিন্তুক এর মাঝেও কিছু কিন্তু আছে যেগুলোকে এড্রেস করা বেশ জরুরী।

সরাসরি গ্রাম বা ইউনিয়নের পপুলেশনকে নিজের ভিটিবাড়ি থেকে ডিসপ্লেস করা মনে হয় ঝামেলাপূর্ণ ও একরকম অসম্ভব। তার চেয়ে উপজেলা বা জেলা শহরের সীমানার কাছাকাছি মিনি টাউনশিপ করে সেটি সহজ কিস্তিতে বিক্রয় ও ভাড়ার সুবিধা দিলে মনে হয় আরো বাস্তবসম্মত হবে। ঢাকার মোহাম্মাদপুরের শেখেরটেকের কাছে ‘জাপান গার্ডেন সিটি’ নামের বহুতল বস্তিটি কেউ দেখেছেন? প্রথম দেখার পরে আমার কাছে বিভৎস রকমের জঘন্য আইডিয়া মনে হলেও ভবিষ্যতের বাংলাদেশের মনে হয় এর চেয়ে ভাল আবাসনের ব্যাবস্থা করা সম্ভব না।

এই আইডিয়ার আরেকটি দিক আমার কাছে ঠিক গোছানো মনে হচ্ছেনা, তা হল, কারো গ্রামের বাড়ি/ভিটিবাড়ি তার চিরদিনের পরিচয় আর ঠিকানা। আর এক ভিটিবাড়িতে মানুষ প্রয়োজনে আরটি ঘর তোলে, আবার একই স্থাপনাকে কখনো বৈঠকখানা, কখনো থাকার ঘর, কখনো ধানের ঘর বানায়। ফিক্সড এক রুমের (১০০-১৫০ স্কয়ারফুটের) মিনি ইউনিটে নিজের মত ভাঙ্গাগড়ার সুযোগ নেই। আমার হিসেবে ছতলার ফাউন্ডেশন দিয়ে ২-৩ তলার কন্সট্রাকশন করে ক্রেতাদের কাছে হস্তান্তর করে দেয়া ভাল। যদি সামর্থ হয় বা প্রয়োজন পড়ে প্রত্যেকে নিজের হিস্যা অনুসারে ওপরে বাড়িয়ে নিতে পারবে।

জনসমষ্টিকে ডিসপ্লেস করার জন্য একটি পাইলট প্রজেক্ট নিয়ে এমন করে দেখা যায়, যে নির্দিষ্ট একটি উপজেলায় মডেল টাউন করে সেই এলাকায় ৫-১০ বছরের জন্য আইন করা হল, যে নতুন কোন বসতবাড়ি করা যাবেনা, প্রয়োজনে এক্সিসটিং বাড়িতে নতুন ঘর করা যাবে বা সীমানায় ভেতরে নতুন ঘর তোলা অথবা টাউনশিপে এসে ওঠা।

আরো দুটো পয়েন্ট, প্রথমত প্রতিটি বাড়িরই নির্দিষ্ট বয়সসীমা আছে। তারপরে এর আবাসীদের কি হবে তা আগে থেকেই প্ল্যান করা (সেরকম ঠিকঠাক প্ল্যান নাই বলে ঢাকার ৫০-৬০এর দশকের করা কলোনীগুলোর ভাঙ্গোভাঙ্গো অবস্থা কিন্তু কোন সুরাহা নেই)। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের যে অঞ্চলগুলোতে প্রবাসীর সংখ্যা বেশী সেখানে সুযোগ নিয়ে দেখা যেতে পারে।

আরো কিছু পয়েন্ট ছিল হিজিবিজিতে এখন আর মনে আসছে না।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। কয়েক ঘন্টা পরই মন্তব্যের উত্তর দিচ্ছি।
----------
ফিরে আসতে দেরি হল সেজন্য দুঃখিত।

  • আপনি যে অর্থে ডিস্পলেস বলছেন ব্যপারটি কিন্তু সেরকম নয়। এখানে ক্ষুদে শহরে আসার ব্যপারটি স্বেচ্ছায় হবে, অর্থাৎ এখানে কোন রকম জোর খাটান হবে না।
  • আর বাসা বাড়ির পরিবর্তনশীলতার কথা বললেন - সেটা নিজেরা সঙ্গতি অনুসারে ব্যবস্থা করবে যেমনটা শহরের জীবনে হয়ে থাকে। যেমন ভাই-বোনেরা মিলে অনেক সময় একই বাড়ির বিভিন্ন ফ্লোরে থাকে হয়ত। যার যেমন সঙ্গতি সেভাবে নিজেদের পছন্দমত ব্যবস্থা করবে সবাই। যারা গ্রাম ছেড়ে শহরে যাচ্ছে তার অনেক ক্ষেত্রে এগুলো মেনে নিচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে অন্য ভাবে এডজাশট করে নিচ্ছে।
  • তাছাড়া ইউনিটগুলো সব একই আকারের হবে না নানা আকারের হবে সেটা আসলে এই আলোচনার মুখ্য বিষয় নয়। যেহেতু ব্যক্তিভেদে পছন্দ, সঙ্গতি, প্রয়োজনে পার্থক্য থাকবে সেগুলো নির্মানের সময় ব্যবসায়িক কারনেই বিবেচনা করা হতে পারে।
  • আইনের ব্যপারে পরামর্শটি ভাল। তবে এখন সবচেয়ে দরকার হচ্ছে এই ব্যপারে একটা ব্যপক জনসমর্থন এবং সরকারের বা স্থানীয় পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি।
  • বাড়ির বয়সসীমার বিষয়টিও প্রাসঙ্গিক। নির্মান এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সেটাকে বিবেচনার‌্য রাখা হলে ভালই হবে।
মন্তব্য এবং পরামর্শের জন্য আবারো ধন্যবাদ।
আরো মন্তব্য থাকলে জানাবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।