মাতৃভাষা – স্বকীয়তা যেখানে সর্বজনীন

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি
লিখেছেন রিয়াজ উদ্দীন (তারিখ: সোম, ০১/০৩/২০১০ - ৭:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:



উচ্চশিক্ষার জন্য অনেককেই জীবনের বড় একটা সময় বিদেশের হাওয়া-মাটিতে কাটাতে হয়। এভাবে বেঁচে থাকাটাযে কতটা অপূর্ণ আর প্রাণহীন সেটা প্রবাসী কারুর কাছে আলাদা করে ব্যখ্যা করার কিছু নেই। যারা দেশের মাটিতে দাড়িয়ে দেশের বাতাসে বুকভরে নিঃশ্বাস নেন তাদেরকে কেবল বলতে পারি, বিদেশের বাতাসে বুক কানায় কানায় ভরে না। এখানকার 'সবুজ' বাংলাদেশের চোখ জুড়ানো সবুজের মত নয়। এরকম মাছ হয়ে ডাঙায় চরে বেড়নোর অনুভূতিটা প্রাবাসী সবারই হয়ত কোননা কোন ভাবে হয়। তাই ঢেকি স্বর্গে গিয়ে ধান ভানার মত বাঙালীরাও বিদেশের মাটিতে বসে সুযোগ পেলেই টুকরো টুকরো ভাবে হলেও নিজদের সত্ত্বাকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। নিজেদের মধ্যে সংহতির বুনিয়াদ খুঁজে ফেরেন নানা অজুহাতে, যেটা ‘একান্তই নিজের’ সেটাকে সবার সামনে মেলে ধরার চেষ্টা করেন। আর স্বকিয়তাটাই রূপ নেয় সার্বজনীনতার। সেখানেই অন্যদের স্বকিয়তাকে সম্মান জানানোর চেতনাটাও জোরাল হয়। এরকমই সার্বজনীন প্রেরণার উপাদান পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে। আমাদের চির পরিচিত ভাষা/শহীদ দিবসকে
আন্তর্জাতিক ভাবে সম্মানিত করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ইউনেস্কোর ঘোষনার মাধ্যমে। ধন্যবাদ ইউনেস্কোকে যথাযথ এই স্বিকৃতির জন্য। পাশে যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন সেটা এই বছরে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসে ইউনেস্কোর পোস্টার। পোস্টার ব্যবহারের অনুমতি গ্রহনের জন্য সারোয়ারকে ধন্যবাদ।


ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় আর্বানা-শ্যাম্পেইনে ক্যাম্পাসের আশপাশে বসবাসরত বাংলাদেশি তরুন-তরুনীদের প্রানঢালা প্রচেষ্টায় আর বাংলাদেশি কমিউনিটির সম্মিলিত উদ্দীপনায় উদযাপিত হয়েছে অন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১০। একটা সত্যিকারের আন্তর্জাতিক পরিবেশে আন্তর্জাতিক আমেজে উদযাপিত অনুষ্ঠানটি ভরে ছিল নাচ, গান, কবিতা ছাড়াও অনুভুতি প্রাকাশের নানা ভঙ্গিমায়। ছিল মেহেদি লাগান, খোমা চিত্রন, বাংলাদেশী খাবার পরিবেশনা ইত্যাদি। পাশে দেয়া নিমন্ত্রন পত্র দ্রষ্টব্য (ডিজাইনঃ শাকিল, হাসিব)। তবে এই উদযাপন ঠিক ঘন্টাকতকের আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ ছিলনা। বেশ কয়েক সপ্তাহের শলা-পরামর্শ, আবেগ-অনুযোগ-অভিমান, অনুরোধ-উপরোধ, আর মহড়ার মধ্যদিয়ে প্রস্তুতি চলেছে এই অনুষ্ঠানের। ছোটখাট ভুল-ভালও হয়ত ছিল। সেই অভিজ্ঞতাকে ভবিষ্যতে ভুল এড়ানোর পাথেয় হিসাবে সঞ্চয়ে রাখতেও ভুলে যাইনি আমরা। প্রথমে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে সংগঠিত হয়েছে বাংলাদেশি ছাত্রসংস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে। তারপর মাতৃভাষা দিবসকে সফল করার কার্যক্রম নির্ধারন করা হয়েছে। সবাই দলে দলে ভাগ হয়ে কে কি করবে তার সমন্বয় করেছে। নিমন্ত্রন পত্রের ডিজাইন এবং বন্টন, গান নির্বাচন, ডকুমেন্টারি তৈরি, প্রচার কৌশল, মঞ্চসজ্জা, খাবার দাবার, মিলনায়তনের ব্যবস্থাপনা এরকম নানা কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়া হয়েছিল। যেহেতু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবারের বাংলাদেশ ফেস্টিভালের মূল প্রতিপাদ্য ছিল কাজেই ভাষা সম্পর্কে একটু আলোচনা করেই অনুষ্ঠানের নানা উপাদানের দিকে যাব।


পৃথিবীতে এত ভাষা এলো কোথা থেকে? স্বাভাবিক ভাবেই বুদ্ধিমান মানুষ বুদ্ধিমত্তার জোরে ভাব বিনিময়ের জন্য নিজেদের গোষ্ঠির মধ্যে ভাব প্রকাশের সাধারন মধ্যম তৈরি করে নিয়েছে। তাই একই ভাষার মানুষেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভৌগলিক ভাবে কাছাকাছি স্থানে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে ধর্মগ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত ব্যখ্যা আবার অন্যরকম। বিশেষ করে আব্রাহামিক ধর্মগুলোতে বিশ্বাস করা হয় যে বিশ্বের ভাষা বৈচিত্র আসলে স্রষ্টার প্রতি মানুষের ঔধ্যমূলক আচরনের শাস্তি। বাইবেলের বর্ণনামতে নুহের মহাপ্লাবনের পর বিশ্বাসীদের মধ্যে যারা বেঁচে ছিল তারা সব একই ভাষায় কথা বলতো। একপর্যায়ে তারা ঠিক করল এত বড় একটি মিনার বানাবে যাতে তার ছাঁদ বেহেস্তে গিয়ে ঠেকে। এই মিনারটি ব্যাবেলের মিনার বলে পরিচিত। কিন্তু এই ঔদ্ধত্যমূলক প্রকল্পকে ঈশ্বর বাস্তবায়িত হতে দেবেন কেন? কাজেই তাদের ভাষাকে পরস্পর থেকে আলাদা করে দেয়া হল যাতে নিজদের মধ্যে যোগাযোগের আর কোন উপায় না থাকে। এভাবে মানুষকে ভাষাগত ভাবে ছত্রভঙ্গ করে ছড়িয়ে দেয়া হল পৃথিবীর নানা স্থানে। আর এই ভাবে ভাষা বৈচিত্রের সৃষ্টি। আব্রাহামিক ধর্মগুলোর বিশ্বাস কমবেশি এরকমই [১]।


বলাবাহুল্য আজকের বিজ্ঞান মনস্ক বিশ্বে ভাষার বৈচিত্রকে অভিশাপ নয় বরং আশির্বাদ হিসাবেই দেখা হয়। কারন ভাষাবিজ্ঞানী এবং নৃতাত্ত্বিকেরা মনে করেন ভাষার বাঁকে বাঁকে মানুষের বুদ্ধিমত্তা, সংস্কৃতি আর চিন্তার ঐশ্বর্য লুকিয়ে থাকে [২]। জ্ঞান আদান-প্রদানের আনুষ্ঠানিক কলেবর অর্থাৎ স্কুল কলেজের বাইরেও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের চিন্তাশীল মানুষের চিন্তার উপাদান এবং ফলাফল বিশ্লেষন করলে অনেক কিছু শেখা আর জানা যাবে বলে বিশ্বাস করেন তাঁরা। তাই ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়াকে অনাকাংখিত ভাবা হয়। যেসব কারনে বিশ্বের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে থাকা ভাষাগুলো বিপন্ন হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিশ্বায়ন। সবার মধ্যে যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার দরুন এমনটা হচ্ছে। আর কলনিয়াল চিন্তার প্রভাব বা অনুকরনপ্রিয়তাও এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এরকম প্রক্রিয়ায় আজকে বাংলাদেশের অঞ্চল কেন্দ্রিক ভাষাগুলোকেও প্রমিত সংস্করনের তুলনায় খাটো জ্ঞান করা হয়। কিন্তু এর মধ্যেও ব্যতিক্রম রয়েছে। সম্প্রতি আহমেদ ছফার 'যদ্যপি আমার গুরু'তে দেখেছি গুরু শিষ্যের মধ্যে ভাবের বিনিময়ে বাংলা ভাষার প্রমিত রূপের হেজিমনি পাত্তা পায়নি। তারপরও প্রমিত রূপের দরকার অদরকারের বিষয়টি অন্যত্র আলোচনা করা যাবে/হয়েছে। শ্যাম্পেইন শহরে বসবাসকারি তরুন-তরুনীদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ক্ষেত্রে ভাষা আর সংস্কৃতির স্বকিয়তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নতুন মাত্রা পেয়েছে এমনটা বললে বাড়াবাড়ি হবে না। নিচে এই উদযাপনের সুচি থেকে নির্বাচিত কিছু উপাদান সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখব।



মাতৃভাষা দিবসের আয়োজনের মধ্যে প্রথম থেকেই ওয়াল অব ইমোশনস বা অনুভুতির দেয়াল নামে একটা প্রচেষ্টা হাতে নেয়া হয়। এসম্পর্কে মুনাওয়ার হাফিজ (অনু) ভাইয়ের পাঠানো বর্ণনা থেকে ওয়াল অব ইমোশন্স বা অনুভুতির দেয়ালের ধারনাটিকে ব্যখ্যা করার চেষ্টা করছি। বোঝা যাচ্ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূলসুর বিশ্ববাসির কাছে পৌছে দিতে হলে এমন কিছু করা দরকার যাতে অন্য ভাষাভাষীরাও এই দিবস থেকে অনুপ্রেরণা পায়। এরকম ভাবনা থেকেই ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালী তরুন-তরুনীদেরদের অভিনব আয়োজন 'ওয়াল অব ইমোশনস' বা অনুভূতির দেয়াল [২ক]। ১৪ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দেয়াল থেকে দেয়ালে ভ্রমন করেছে এই পোস্টারগুলো। এইসব পোস্টারে সবাইকে নিজ নিজ ভাষার অক্ষর ব্যবহার করে তাদের অনুভুতি তুলে ধরে কিছু লেখার জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। বিভিন্ন ভাষা আর সংস্কৃতির লোকেদের সম্মিলনের ক্ষেত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এই ওয়াল অব ইমোশনসের আয়োজনে ব্যপক সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। গত পরশু (ফেব্রুয়ারি ২৬) তারিখে যখন এর পাতাগুলো মিলনায়তনের বাইরে টানিয়ে দেয়া হল তখন ভাষা বৈচিত্র আর ভাষা নিয়ে মানুষের স্বতস্ফুর্ত আবেগের একটা সুন্দর চিত্র ফুটে উঠেছিল যেন। এই ওয়াল অব ইমোশনসের ধারনাটি এখানেই শেষ হয়ে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই। ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলা হয়েছে যেখানে অনেকেই যোগ দিয়েছেন। আপনিও এর অংশ হতে পারেন এবং এটাকে ছড়িয়ে দিতে পারেন পৃথিবীর নানা স্থানে (লিঙ্ক)। এই বিষয়ে নানাদেশের মানুষদের অংশগ্রহনের একটি আলোকচিত্র প্রকাশিত হয় প্রথম আলোতে। নিচে ওয়াল অব ইমোশনসের জন্য ডিজাইন
কৃত (ক্রেডিটঃ শাকিল) ব্যনার।


ওয়াল অব ইমোশন্স ছাড়াও আরো যে কটি উপাদানের মধ্যে ভাষা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন ভাষাভাষিদের নিজেদের ভাষায় তাদের ভাষাকে ভালবাসার স্বিকারোক্তি জানানো ভিডিও চিত্র [৩]। নিচে এমবেড করার চেষ্টা করছি। আশা করছি ভাল লাগবে আপনাদের। প্রায় ২০টি ভাষার লোকেরা এই ভিডিওচিত্রটিত নিজেদের ভাষার প্রতি তাদের ভালবাসার কথা বলেছেন নিজেদের মত করে, নিজেদের মাতৃভাষায়। ভাষার এই স্বকীয় দ্যোতনা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য কোন সাবটাইটেলও যোগ করা হয়নি। চলুন কান পেতে শুনি।



অনুষ্ঠানের প্রথম অংশ উপস্থাপনা করেন
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক তাহের সাইফ। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আর তার পরবর্তি ঘটনা প্রবাহের একটা সংক্ষিপ্ত আলোচনার উপস্থাপনা করেন স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মীর আলি। এরপর বাংলাদেশি নাগরিকদের ভাষা আর সংস্কৃতি নিয়ে গৌরবোজ্বল ইতিহাস সত্ত্বেও বাংলাদেশের নাগরিক বহর্বিশ্ব সম্পর্কে কতটা সংবেদনশিল সেটা ব্যখ্যা করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রশিদ। এরপর আসেন ভাষাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপিকা মারিনা টার্কুরাফি। তিনি বিশেষজ্ঞ হিসাবে কিছু বক্তব্য রাখেন। মারিনা তার বক্তব্যে একটা বেশ কৌতুহল জাগান প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেন। নিচে তার বক্তব্যের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। বিশেষজ্ঞ ছাড়াও একজন অবাঙালী হিসাবেও তাঁর বক্তব্য ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

মাতৃভাষা বিষয়ে অধ্যাপক মারিনার বক্তব্যের অনুদিত সার-সংক্ষেপ

শুভ সন্ধ্যা। এই অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রন জানানর জন্য আয়োজকদের অশেষ ধন্যবাদ। আমি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পেছনের ইতিহাস সম্পর্কে জানতাম; জানতাম কিভাবে ভাষার প্রতি ভালবাসার প্রকাশ দেখাতে ছাত্ররা অন্দোলনে ফেটে পড়ে, আর সেই আন্দোলনের দেখান পথ ধরেই স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। কিন্তু একটা প্রশ্ন ঘুরে ফিরে এসেছিল আমার মনে, মাতৃভাষা কে কেন 'মাতৃভাষা' বলা হয়, পিতৃভাষা কেন নয়? তাই ভাবলাম ব্যপারটা একটু খতিয়ে দেখা যাক।'ফাদার টাং' দিয়ে সার্চ দিলে অন্তর্জালে পাওয়া যায় ২৬,৫০০ টি ভুক্তি। কিন্তু 'মাদার টাং' দিলে পাওয়া যার প্রায় তার ২৫০ গুন (৬,৪৫০,০০০) ভুক্তি। আরবান ডিকশনারি বলছে "পিতৃভাষা মাতৃভাষার মতই একই ভাবে পরিবার, সম্প্রদায় বা জাতিগত পর্যায়ে ব্যবহার করা হয়"-তবে যখন পরিবারে মা আর বাবার ভাষা আলাদা হয় তখনই 'পিতৃভাষা' ব্যবহার হয়। কাজেই পিতৃভাষা আসলে মাতৃভাষার সাপেক্ষেই ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ 'মাতৃভাষা' শব্দটিই মৌলিক আর অকৃত্রিম। 'পিতৃভাষা'র আরেকটি ব্যবহার হচ্ছে পরুষালি শব্দ (power words) বোঝাতে; যেখানে শক্তি বা রাজনৈতিক বিতর্ক বা আলোচনার ক্ষেত্র থাকে সে ধরনের ভাষাপ্রয়োগকেও পিতৃভাষা বলা হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে । পরের অর্থে 'পিতৃভাষা'র ব্যবহার হয়েছে মূলত নারীবাদি আলোচনার ক্ষেত্রে। এই দুই অর্থের কোনটিই দৈনন্দিন আটপৌরে ভাষা অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। কাজেই সবারই মাতৃভাষা আছে যদিও পিতৃভাষা সবার নাও থাকতে পারে।

এটাযে কেবল ইংরেজির বেলায় ঘটে তা নয়। অন্যভাষার ক্ষেত্রেও এটা অনেকটা সার্বজনীন একটা ব্যপার। আমি আমার সহকর্মীদের সাথে কথা বলেও এব্যপারে অনেক কিছু জানতে পারি। যেসব ভাষায় ঠিক 'মাতৃভাষা' ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়না সেখানেও 'পিতৃভাষা' বিকল্প হয়ে দাড়ায়নি। যেমন পোলিশ, রাশিয়ান, ইউক্রেনিয় বা কিলিংগন ভাষাতে 'মাতৃভাষা' বোঝানর জন্য পূর্বপুরুষের ভাষা, জন্মভাষা এধরনের শব্দচয়ন ব্যবহার করা হয়, পিতৃভাষা ব্যবহার করা হয়না। আবার দ্বিভাষিক পরিবারের ক্ষেত্রে সন্তানের পিতার ভাষাকে বুঝানর জন্যেও অনেক ক্ষেত্রে দাপ্তরিক ক্ষেত্রে 'মাতৃভাষা' ব্যবহার করা হয়। যেমন সিঙ্গাপুরে পিতার ভাষাকে সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহনের ভাষা হিসাবে বিবেচনা করা হলেও সেটাকে বলা হয় 'মাতৃভাষা'। আবার অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের মা সেই ভাষাতে কথা বলতে না পারলেও তাকে মাতৃভাষা বলা হয়। যেমন কোন কোন ভারতীয় সংস্কৃতকে নিজেদের মাতৃভাষা হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন।

কাজেই প্রশ্ন আসে এমনটা কেন? এইযে একই উৎস্য থেকে উৎপন্ন গ্রীক বা বাংলা ভাষায় (দু'টিরই উৎস্যই ইন্দো-ইউরোপীয়) অথবা সম্পূর্ন পরস্পর সংযোগবিহীন ভাষা যেমন আরবী বা চৈনিক ভাষার ক্ষেত্রে 'মাতৃভাষা'র ভেতরে দীর্ঘ কাল পরিক্রমায় ভাষাকে বিশেষায়িত করার একই রকম ধারা সঞ্চালিত হয়েছে এর অর্থ কি? এর ভাষাতাত্ত্বিক ব্যখ্যাটি এখন আলোচনা করব। নীতি নির্ধারকদের পছন্দ না হলেও ভাষাতত্ত্বের অসংখ্য গবেষনা থেকে পাওয়া যায়ঃ প্রজন্মান্তরে ভাষা শিক্ষা আর সঞ্চালনের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে মৌখিক সঞ্চালন (oral transmission)। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, বই পড়ে ভাষা শিক্ষা এর কোনটিই ভাষার পারস্পরিক যোগাযোগ বা ক্রিয়াকলাপের ক্ষেত্রে বা নিজের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র এবং স্বকীয় চিন্তাপ্রকাশে ভাষার সক্রিয় ব্যবহারের উপযুক্ত বিকল্প নয়। নিজের সম্প্রদায়ের একজন হয়ে উঠতে ব্যক্তির এই প্রচেষ্টাই মাতৃভাষার সাথে ব্যক্তির সংযোগের চাবিকাঠি হয়ে ওঠে আর তার আত্মপরিচয়ের (Identity) নিয়ামক হয়। এই চেষ্টা জীবনের একেবারে শিশু অবস্থা থেকে শুরু হয় আর মৌখিক সঞ্চালন এবং ব্যবহারের মাধ্যমে তা পূর্ণতা পায়। সংখ্যালঘু ভাষার একটিভিস্ট বা ব্যবহারকারিরা এই বিষয়টিকে অনক ক্ষেত্রেই আগ্রহ্য করেন। ফলে ভাষাগুলোকে প্রমিত (standardized) রূপ দেবার চেষ্টা করতে গিয়ে এমন কিছু একটা বানিয়ে বসেন যার কোন অস্তিত্বই ছিলনা। এভাবে ভাষাকে টিকিয়ে রাখার অনেক মহৎ প্রচেষ্টা আখেরে ভাষার অনেক উপাদানকে চিরতরে নির্মূল করে দিয়েছে। তবে এই পর্যবেক্ষন থেকে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হবার আগে একটু সাবধান হবার দরাকার আছে। দেখা গেছে যারা দুই বা ততোধিক ভাষায় পারঙ্গম তারা বুদ্ধিমত্তার দিক দিয়েও মাত্র এক ভাষায় দক্ষ ব্যক্তিদের চেয়ে এগিয়ে। একাধিক ভাষার ক্ষেত্রে কোন-কোন ভাষায় বহুভাষীরা দক্ষ হচ্ছেন তা বুদ্ধিমত্তার পার্থক্যের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে না।

কাজেই আসুন আমরা আমাদের মাতৃভাষার ব্যপারে গর্বিত হই তা সে প্রমিত হোক বা না হোক, বিশাল গোষ্ঠী ভাষা হোক বা সংখ্যালঘুর। আসুন আমরা আমাদের মাতৃভাষার কবিতা, গল্প, উপকথা, ঘুম পাড়ানি গান মনে রাখি যা মাতৃভাষা ছাড়া অন্যভাষায় একই আবেদন রাখতে পারেনা। আসুন বাচ্চাদের সাথে নিজদের মাতৃভাষায় কথা বলি আর ভাষাকে বিবর্তিত হবার সুযোগ দেই। দুর্বোধ্যতার প্রাচীর তোলা মাতৃভাষা দিবসে লক্ষ্য নয়। বরং ভাষাকে ব্যকরনের কঠোর গন্ডীতে বাঁধার চেষ্টা এবং সমৃদ্ধির ভিত্তিকে ভাষাকে ছোট-বড় হিসাবে দেখার মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসা আর পৃথিবীর নানা ভাষার বিচিত্র চিত্রকল্পে আমাদের সবারই যে কিছু দেবার আছে সেটা উপলব্ধি করাই হোক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপজীব্য।

মারিনার বক্তব্য শেষ হলে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভাষার বোধগম্যতার বাঁধা সত্ত্বেও বাংলা ভাষার সহজাত সৌন্দর্য্য, উপস্থাপনা আর গান-কবিতা ইত্যাদি নির্বাচনে মুন্সিয়ানার দরুন অবাঙালী অতিথীদের জন্যেও অনুষ্ঠানটি বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। অবাঙালিদের জন্য ভাষার প্রাচীর টপকানোর সুবিধা দিতে গান কবিতার ইংরেজি অনুবাদ প্রজেক্ট করে দেখান হয়েছে। অনুবাদ কেমন হয়েছে সেটা নিয়ে হয়ত কিছুটা ভাবনা ছিল অনুবাদকদের। কিন্তু অর্থনীতি বিভাগের ভারতীয় বাঙালি অধ্যাপক অনীল বেরা যখন ডেকে বললেন "অনুবাদগুলো কে করেছে? খুব ভাল হয়েছে" তখন আর দ্বন্দ্ব থাকেনা। বিশেষ করে আমার জানামতে তিনি একজন রবীন্দ্র গবেষক আর বাংলা ভাষার ব্যপারে অধ্যাপক বেরার রয়েছে অসাধারন অনুরাগ এবং ভালবাসা। অনুষ্ঠানের মুহূর্তে আবেগে আতিশয্যে অনেককে দেখা গেছে অবাঙালিদের সাথেও বাংলায় ব্যর্থ বাতচিত করতে। যদিও শ্রোতাদের চেহারায় প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখে শুধরে নিয়েছেন শেষমেষ। ছাড়া নামমাত্র মূল্যে বাংলাদেশি খাবার বিক্রি, মেহেদি দেয়া, শাড়ি পড়ান ইত্যাদি আইটেমগুলোতেও অতিথীদের ব্যাপক আগ্রহ ছিল। স্থানীয় সংবাদপত্র ডেইলি ইলাইনিতেও এই অনুষ্ঠানের খবর ছাপা হয়েছে। অভুতপূর্ব এই আয়োজনকে সফল করার জন্য ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন (বিএসএ) [৪] এবং বিশেষ করে এর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদেরকে সাধুবাদ এবং অভিনন্দন। এই প্রাণময় প্রচেষ্টার কথা আপনাদের জানানোর সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি [৫]। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সুর ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে, ভাষা আর সংস্কৃতির উপর আগ্রাসন বন্ধ হোক, সংস্কৃতি নিয়ে হীনমন্যতাবোধ আর মিমিক্রি নিরুৎসাহিত হোক।

[১] উইকি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে এই অংশটি। মূল সুত্রের সাথে কোন অমিল থাকলে সেটা অনিচ্ছাকৃত। চিত্রকর্মটিও উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া।
[২] এই বিষয়ের সাথে কিছুটা প্রাসঙ্গিক আরেকটি পোস্ট "তোমার ভাষা বোঝার আশা"। আহলাদে আটখানা হয়ে লেখা এই পোস্টটাতে কিছুটা গর্বের ছটা আছে কিন্তু এইটুকু গর্ববোধ হয়ত ক্ষমার অযোগ্য হবে না।
[২ক] অনুভুতির দেয়াল ধারনার উৎস্য - মুনাওয়ার হাফিজ, ফারহানা আশরাফ, আবদুল্লাহ আল নাইম এবং ইউসুফ সারোয়ার
[৩] এই ভিডিওচিত্রটি সম্পাদনা করেছেন কল্লোল দাস, ধারনা এবং চিত্রগ্রহনঃ ইমরানুল হক, কৃতজ্ঞতাঃ ফারিবা খান, সোনিয়া জাহিদ, আহসান আরেফিন এবং অতনু খান, অংশগ্রহনকারিরাও কৃতজ্ঞতার দাবিদার। তাদের সবার নাম দেখতে ভিডিওটির ইউটিউব পেজে গেলে পাবেন।
[৪] বর্তমানে ৩৫ জন স্নাতকোত্তর ও ১৫ জন স্নাতক
ছাত্র-ছাত্রী এবং একজন পোস্ট ডক্টরেট গবেষক এই এসোসিএশনের সদস্য। তাছারা এই সংগঠনে ২৫ জন এলামনাই সদস্যও রয়েছেন যারা নানাভাবে অনুপ্রেরনা এবং পরামর্শ দিয়ে পাশে থেকেছেন আমাদের। তাছাড়া এখানকার বাঙালি পরিবারগুলোও ছাত্র-ছাত্রিদের প্রতি বিশেষ সহানুভুতিশীল। ছাত্র সংগঠনের যেকোন উদ্যোগে সবসময় পাশে পাওয়া যায় এই কমিউনিটির সদস্যদের। ব্যক্তিগতভাবে এই সংহতি বোধ থেকে আমি শিখেছি অনেক কিছু। গর্ববোধ করেছি এবং সবসময় কামনা করেছি সব যায়গায় সব কমিউনিটিতে এরকম পারস্পরিক সহযোগীতা আর গম্যতার পরিবেশ থাকুক।
[৫] এই পোস্টটি তৈরি করতে তথ্য এবং পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন মূনাওয়ার হাফিজ (অনু ভাই), ইউসুফ সরোয়ার এবং হুসাইন আজম। মারিনাকে ধন্যবাদ তার ভাষনের লিখিত অনুলিপির জন্য। ভুল ত্রুটির দায় ব্যক্তিগত ভাবে আমার।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব সুন্দর লাগল ব্যাপারটা। আপনাদের প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই।

কৌস্তুভ

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

বিএসএর পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

গৌতম এর ছবি

আপনার লেখাটার ওপর একঝলক চোখ বুলিয়ে প্রিন্ট করে নিলাম। অবসর সময়ে পড়ব। আপাতত শুধু এটুকু বলি- এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রচুর আলোচনা হওয়া দরকার।

অফটপিক: শিরোনামের বানানটা কি ঠিক করে দিতে পারেন? শব্দটা হবে 'সর্বজনীন'।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ গৌতমদা আপনার মন্তব্যের জন্য।
বানান ভুলের কথা জেনে যখন নিজের হাত কামড়ানর ব্যপারে মনস্থির করে ফেলেছিলাম ভাবলাম একটু গুগল করে দেখি ব্যপারটা কি? এই ভুলটা আমিই কেন করলাম? মজার ব্যাপার হল 'সার্বজনীন' শব্দটা অন্তর্জালে পাওয়া গেছে ৩৩ হাজার বার আর সঠিক বানানে পাওয়া গেল ২৭ হাজার বার। তারপর আর হাত কামড়ালাম না আজকের মত।
মডারেটরদেরকে অনুরোধ করছি শিরোনামের বানানটি ঠিক করে 'সর্বজনীন' করে দেবার জন্য। শিরোনামে ভুল বানানের জন্য দুঃখিত।

বোহেমিয়ান এর ছবি

ফেইসবুকে লিঙ্ক দেখেছিলাম । শিরোনাম ভাল লাগছে ।
সর্বজনীন আর সার্বজনীন এর মধ্যে কনফিউশন এখনো গেল না!
কোনটা সঠিক ?
অধ্যাপক মারিনার বক্তব্য ভাল লেগেছে ।
__________________________
হৃদয় আমার সুকান্তময়
আচরণে নাজরুলিক !
নাম বলি বোহেমিয়ান
অদ্ভুতুড়ে ভাবগতিক !

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ বোহেমিয়ান। সর্বজনীন বানানটাই ঠিক মনে হল। মারিনার কাছে এই পোস্টের লিঙ্ক আছে তবে তিনি যেহেতু বাংলা পড়তে পারেননা তাকে ইমেইল করে আপনার ভাল লাগাটা জানিয়ে দেব। তার বক্তব্য শুনে মনে হয়েছিল এতে এমন কিছু আলোচনা আছে যা আরো অনেকের জানা উচিত। তাই অনুমতি নিয়ে তাঁর বক্তব্যকে অনুবাদ করলাম। এখানেও একটা ভুল দেখতে পাচ্ছি ওরাল ট্রান্সমিশন --> সঞ্চালন লিখেছি মনে হচ্ছে সঞ্চারন হবে। নাহ ভুল আর ভুল!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বিশ্বজুড়ে ছড়াক বাংলাভাষা।
আপনাদের উদ্যোগ ভালো লাগলো, সেই সাথে পোষ্টও।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ হাসান ভাই।

দুর্দান্ত এর ছবি

আপনার উদ্যোগের প্রশংসা করি।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

আমার উদ্যোগ বলতে কেবল এই পোস্ট। মূল আয়োজনের জন্য প্রশংসা পাওনা হচ্ছে এই শহরে বসবাসরত বাংলাদেশি তরুন-তরুনিদের। যেহেতু এই পোস্টটি তারাও ফলো করছে, রিড়াইরেক্টেড প্রশংসা তাদের কাছে পৌছে যাচ্ছে বলে অনুমান করছি। ধন্যবাদ দুর্দান্ত ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ভালু উদ্যোগ। আর ভিডিও ব্যাপক ভালু পাইলাম। যেখানে যারে পান বাংলাভাষা শেখান। আমি আমার আম্রিকান রুমমেটরে রেগুলার বাংলা শিখাচ্ছি। হাসি

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ শুভাশীষ। অনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলা শেখানর ব্যপারেও একটা পরামর্শ এসেছে। দেখা যাক কি দাঁড়ায়।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

দারুণ উদ্যোগ !! স্যালুট আয়োজকদের !!

-------------------------------------------------------------------
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

আয়োজকদের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ আনন্দী। স্যালুট পৌছে যাবে।

s-s এর ছবি

উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার। ভিডিওটি খুব ভালো লাগলো, আর সর্বজনীন ঠিক আছে। উদ্যোক্তারা কি সবাই ছাত্র?

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ এখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে। অফিসিয়ালি বলতে গেলে এর প্রধান আয়োজক ছাত্রছাত্রীরাই। তবে কার্যত এটা ঠিক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তাদের পরিবারে সদস্যরাও এই প্রচেষ্টার সাথে একই ভাবে একাত্ম ছিল। আর যেমন বলেছি বৃহত্তর অর্থে এখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটিও সবসময় ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে থেকেছে। এছাড়া এই শহরের বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছে। ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ।

রণদীপম বসু এর ছবি

রিয়াজ ভাই, বহুকাল পর মনে হয় এরকম একটা পোস্ট দিলেন। অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আপনার সিগনেচারের এই কথাটা মনে করে নিজের লেখালেখির আলসেমিকে মাঝে মাঝে চোখ রাঙাই। তবে অনেক সময় চিন্তাকে গুছিয়ে উঠতে না পারার দরুন লেখা হয়ে ওঠে না। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

রণদীপম বসু এর ছবি

রিয়াজ ভাই, লেখককে মেসেজ দেয়ার কোন অপশন আপনার ক্ষেত্রে দেখছি না বলে নিচের মন্তব্যটুকু করলাম। আমার নিজের ক্ষেত্রেও এরকম ভুল প্রচুর হয়। বই বের করতে গিয়ে আমার বানান ভুলের পাহাড় দেখে আমি নিজেই বারবার হতবাক হয়েছি। তবু এভাবে মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে নিচ্ছি।

যেহেতু এটা ভাষা নিয়ে পোস্ট, তাই আপনার হাত কামড়ানোর কিছু তরিকা দেখাতেই হলো। যদিও এটা আমার কাজ নয়, পাঠুদার, কিন্তু তিনি যে এ মুহূর্তে অনুপস্থিত !

ক্রিয়ামূল শব্দ যেমন করেন, পারেন, মারেন এগুলো বাদে বাকি সব ধরনের শব্দের শেষে 'র' থাকলে 'ণ' ব্যবহার করতে হবে। শিফট বাটনটাতে চাপ কম পড়েছে বোঝা যাচ্ছে।
একইভাবে 'ক্ষ' ও 'ষ' এর পরও 'ণ' ব্যবহার হবে। এছাড়া কিছু শুদ্ধ বানান 'গ্রহণ', 'তরুণ', 'আমন্ত্রণ', 'আকাঙ্ক্ষা', 'কাঙ্ক্ষিত', 'হীনম্মন্যতা', 'ভ্রমণ', 'সহযোগী', 'সহযোগিতা', 'সহানুভূতি', 'স্বতঃস্ফূর্ত' ইত্যাদি। এ মুহূর্তে পোস্টে এই বানানগুলোর কথা খেয়াল আছে।
কিন্তু আপনার মনে হয় কিছুই করার নেই এখন মডারেটরদের অনুরোধ করা ছাড়া। আশা করি কিছু মনে করবেন না।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

মাথা বাঁচাতে মাথায় পরে হেলমেট। কিন্তু এবারে কামড়ানোর ক্ষয়ক্ষতির থেকে হাতকে বাঁচাতে গ্লাভসে কাজ হবে না মনে হচ্ছে, হেলমেট পড়াতে হবে।

আশা করি কিছু মনে করবেন না

মনে করব না মানে অবশ্যই মনে করব। যতবার এভাবে আমার ভুল শুধরে দেবেন কেউ, নিজেকে ভাগ্যমান মনে করব। অনেক দিক থেকেই আপনাকে অগ্রজ/গুরু জ্ঞান করি। আর তার মধ্যে একটি অবশ্যই লেখালেখি। তাই বানানের ভুল গুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আস্তে আস্তে কমাতে পারব আশা রাখি। মডারেটরদের কাছে অনুরোধের ক্ষেত্রে আপনার মন্তব্যটি রেফারেন্স হয়ে থাকল।

এই প্রসঙ্গে আমাদের এখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটির কথা বলতে হচ্ছে। এখান আগ্রজ-অনুজদের আর সমবয়সিদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা সহযোগীতা আর সংহতিবোধের দরুন অনন্যসাধারন সম্প্রীতির একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেকে বলেন বাঙালীরা যেখানেই যায় সেখানেই দলাদলি আর রেষারেষি চলে। কিন্তু এই শহরে তিনবছরের বেশি সময় ধরে যা দেখেছি এরপর এই সরলিকরনের সাথে কখনো একমত হতে পারবনা।

আরেকটা খবর আপনাকে জানাতেই হয়। গতকাল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রনে মোহাম্মদ ইউনুস এসেছিলেন এই শহরে (জিভে কামড় দিচ্ছি ক্ষুদ্রঋন বিষয়ে প্রতিশ্রুত লেখাটি দেই দেই করেও এখনও দেয়া হয়ে ওঠেনি বলে)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আর বাংলাদেশি কমিউনিটি তাকে বিশাল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে স্বাগত জানিয়েছেন। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মোহম্মদ ইউনুসকে দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা 'প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল'। আর আরেকটা খবর হচ্ছে গ্রামীন ব্যঙ্কের আদলে আমেরিকাতে যে গ্রামীন আমেরিকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার একটা স্থানীয় শাখা খোলা হচ্ছে এই শহরে। বলতে বাঁধা নেই মোহাম্মদ ইউনুসকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে যখন করতালির মাধ্যমে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান হয়েছিল অন্য বাংলাদেশিদের মধ্যে আমিও গর্ব বোধ করেছি। তার চমৎকার করে গুছিয়ে বলা কথার মাঝখানেও শ্রোতাদের কাছ থেকে আসছিল মুহুর্মুহু করতালি।

আরেকটা আনন্দের খবর হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি মোহাম্মহ ইউনুসের সোসাল বিসনেস ধারনাটিতে আস্থা জানিয়ে প্রথম প্রতিষ্ঠা করছে ইন্সটিটিউট অব সোশাল বিজনেস। এই ধারনার মূল মন্ত্রটি সবার কাছে ব্যখ্যা করছিলেন মোহাম্মন ইউনুস অনেকটা এভাবেঃ

প্রচলিত অর্থনীতি বিশ্বাস করে মানুষ স্বার্থপর আর মানুষ সব কাজ স্বার্থতাড়িত হয়েই করে। সেজন্য প্রচলিত সব বিজনেস মডেল এই স্বার্থতাড়নার ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে। কিন্তু এই ধারনাতে মানুষের বৈশিষ্ট্যকে একমাত্রিক হিসাবে দেখা হয়। কিন্তু মানুষ স্বার্থ ত্যাগ করেও অনেক কিছুই করে। অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানর জন্য কিছু করারও ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করা সম্ভব এবং করা উচিত। সেখানে সর্বোচ্চ মুনাফার চেয়ে সামাজিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অর্জনকেই সাফল্যের মাপকাঠি হিসাবে ধরা হবে। সামাজিক ব্যবসার মডেল নিয়ে অনেক বড়বড় পুঁজি পতিদের সাথেই কথা বলেছেন তিনি এবং দেখা গেছে তাদের অনেকেই মুনাফা সর্বোচ্চ করার মডেল থেকে বেরিয়ে এসে তার আহবানে সাড়া দিচ্ছেন।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ডেইলি স্টারে মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের খবর ছাপান হয়েছে। লিঙ্ক শেয়ার করার জন্য ইমরানকে ধন্যবাদ।

শিরোনামে সর্বজনীন বানান ঠিক করে দেবার জন্য মডারেটরদের ধন্যবাদ।

তানভীর এর ছবি

মারিনার কথাগুলো ভাল্লাগলো। ভিডু দেখার সময় পাই নি এখনো, তবে দেখে ফেলবো। উদ্যোগের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ তানভীর ভাই। এখানকার ভাষাতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে মাতৃভাষা দিবসকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। পরের বার তাদেরকে আরো আগে ভাগে জানাতে অনুরোধ করেছে তারা। ভিডিওটা ৩ মিনিটের কাজেই দেখে ফেলেন সময় পেলে। ধন্যবাদ পৌছে যাবে যথাস্থানে।
--------------
একটি প্রাসঙ্গিক নিবন্ধ, ফরহাদ মজহারের লেখা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।