আমার কাজলাদিদিরা - ১ ( সুমি আপু )

উলুম্বুশ এর ছবি
লিখেছেন উলুম্বুশ [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ০১/০৮/২০০৮ - ৫:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেকদিন এখানে কিছু লেখা হয়না। প্রতিদিন এসে এসে পড়ে যাই। পরীক্ষাও ছিল। পরীক্ষা যদিও শেষ হয়নি তাও কিছু একটা লেখার ইচ্ছা করছে। আমার ব্লগিং এর শুরুই হচ্ছে নিজের জীবনের ছোটখাট কাহিনী লেখা। আমিতো এমন কেউ না যে সবাই আমার আত্মকাহিনী পড়বে। তবুও কাহিনীগুলো লেখতে গিয়ে মজাই লাগে ছোটবেলায় ফিরে যাওয়া যায়।
ঠিক কবে মনে নেই কিন্তু খুব ছোটবেলা থেকেই কেন যেন আমার একটা বড় বোনের শখ হয়ে গেল ( আজো গেল না )।
" মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই?"
এই প্রশ্নটা আজীবন খুঁজে ফিরছি। একটু একটু যখন বড় হলাম গল্পের বই পড়া শুরু করলাম তখন এই ইচ্ছাটা দিনকে দিন বাড়তে লাগল। শরৎচন্দ্রের বড়দিদি, মেঝদি, পড়তে পড়তে ছোট্ট আমার কত দীর্ঘশ্বাস বের হল তার খবর কেউ রাখেনি। কেন যে আমার এত বোনের শখ আমি নিজেও জানিনা। আসলেই কি বোনরা অনেক বেশি আদর করে? আমার যেহেতু বোন নেই তাই আমার এই বিষয়ে অনেক কল্পনা অনেক রকমের চিন্তাভাবনা। যদি শুধু চিন্তার উপর পিএইচডি থাকত তাহলে আমি পেয়ে যেতাম। কত রকম চিন্তা যে করি আমার একটা বোন থাকলে এই করত ওই করত। পরবর্তীতে এক ভাইয়ার কাছে শুনেছিলাম উনার বড় আপু নাকি হোষ্টেলে থাকত উনি বাসায় এসেই প্রথমে নাকি আম্মুর সাথে একটা ঝগড়া করত কারন হচ্ছে তার আগেই নাকি উনি বোনের কাছে বিচার দিয়ে দিতেন অমুক দিন তমুক দিন মা ওনাকে মেরেছেন। আর আমি মনে মনে ভাবি ইশশ , আমি তো এইরকম একটা বড় বোন চেয়েছিলাম।
এই জন্যই মনে হয় ছোটবেলা থেকেই আমি আমার আশে পাশে সবসময় বড়বোন খুঁজেছিলাম। সেই খোঁজার ফলে আমার জীবনে অনেক গুলা আপুই এসেছে। কেউ কেউ আমাকে আসলেই ছোটভাইর মত আদর করেছে কাউকে কাউকে আমি নিজেই মনে মনে আপুর আসন দিয়েছি উনি হয়ত জানেই না।
সবার সাথে যে আজ যোগাযোগ আছে তাও না। কিন্তু মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে কারো কথা মনে পড়ে। সেই আপুদের গল্প আমার এই কাজলাদিদিরা।

আমি তখন ক্লাস ৩ তে পড়ি। সবেই আমরা সিলেট থেকে ঢাকাতে এসেছি। থাকি পোস্তাগোলার দিকে জায়গার নাম জুরাইন। সেখানে আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকি তার পাশের বাসাতেই একটা আপু ছিলেন। আমার ৩-৪ বছরের বড় হবেন। উনি মনে হয় তখন ৭ এ পড়েন। আমাদের তখন একটা বিশাল পিচ্চি কাচ্চার দল । প্রায় ১০-১২ জন আমরা সেখানে। সবাই মিলে এটা ওটা খেলি। ছোটবেলায় আমি বউচি থেকে শুরু করে হেন খেলা নাই যা খেলিনাই। কুতকুত ও খেলেছি এবং ভাল বউ ছিলাম (বউচি খেলার ) । সেই প্রথম মনে হয় আমার আপু বানানো শুরু। যদিও ঐ আপু আমার থেকে আমার ছোটভাইকেই বেশি আদর করেন। কেন যেন সবসময় এইটাই হয়েছে। আমার ফ্যামিলির মধ্যেও যত খালাত ভাই বোন আছে সবাই দেখি হয় আমার বড় ভাই নয় আমার ছোট ভাইকেই বেশি আদর করে। সেই জন্য ছোটবেলায় আমি অনেক কম আদর পেতাম।
যাইহোক সেই আপুকে আমি তখন থেকেই মনে মনে আপু হিসেবে ভাবতাম। কেমন যেন মনে হত ইশশ এই আপুটা যদি কনক( আমার ছোট ভাই ) থেকে আমাকে বেশি আদর করত। কখনো বলা হয়নি তাকে। একদিন হঠাৎ শুনলাম ওই আপুরা আমেরিকা চলে যাবে। আমি তখন ক্লাস ৪ পাশ করে ৫ এ উঠব। ওনারা সপরিবারে আমেরিকা চলে গেলেন। আমার আর কোন দিন তাকে বলা হল না তুমি আমার আপু হবে?
এরপর থেকে আমি অনেকদিন ভাবতাম আমি কোন একদিন আমেরিকা যাব , সুমি আপুর সাথে আমার দেখা হবে। তখন তাকে আমি বলব আপু সেইসময় আমার খুব মনে হত আপনি যদি আমাকে কনকের থেকে বেশি আদর করতেন। সবচেয়ে অবাক হয়ে গেলাম প্রায় ১২ বছর পরে যখন আমি জাপানে থাকি হঠাৎ করে আম্মু বলল সুমির ফোন নম্বর আছে। সাথে সাথেই আমি ফোন নাম্বার নিয়ে ডায়াল করলাম আমেরিকায়। খুব এক্সাইটিং লাগছিল। এত বছর পরে আপু কি আমাকে চিনতে পারবে? এখনো আগের মত আছে কিনা?
প্রথমদিন ফোনে পেলাম না কিন্তু ওনার গলা শুনা গেল। মেসেজিং এ দেখি বেশ দুঃখ প্রকাশ করল ফোন ধরতে না পারার জন্য। দেখলাম নাহ সুমি আপুর গলা চেঞ্জ হয়নি। আবার একদিন ফোন করলাম এরপর পেলাম সুমি আপুকে। দীর্ঘ ১২ বছর পর আবার ওনার সাথে আমার কথা হল। প্রথম অনেকক্ষণ আমরা পুরান আলাপ করলাম। ছোটবেলার সেইসব স্মৃতি আরো কত কি। এরপর মাঝে মাঝেই ফোন করা হত। তখন বলতাম আপু ছোটবেলায় আমি এইরকম ভাবতাম। উনি বলল কে বলল আমি তোমাকে কম আদর করতাম। তোমাকেও আদর করতাম তো কিন্তু কনক বেশি ছোট ছিল তো সেই জন্য। আমি বলি ওইটাই তো আসল সমস্যা ও ছোট বলে আমার আদর অনেক জায়গাতেই কমে যেত। পৃথিবীতে আসলেই কত কি যে ঘটে নইলে সুমি আপুর সাথে যে আমার আবার কখনো যোগাযোগ হবে কখনো চিন্তাই করিনি। হয়তবা এইবার দেশে গেলে ওনার সাথে আমার দেখাও হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘ ১৪ বছর পর উনি নাকি বাংলাদেশে যাবেন। বেশ আশা নিয়ে বসে আছি আপু সেই আগের মতই আছে কিনা।
(-চলবে)


মন্তব্য

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হাসি ভাল লাগল
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

রাফি এর ছবি

এই লাইনগুলি আমি কখনো ভুলব না...

“ভূঁই-চাঁপাতে ভরে গেছে শিউলী গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল |
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে
বুলবুলিটা লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা ছিঁড়তে গিয়ে ফল,
দিদি যখন শুনবে এসে বলবি কি মা বল্ |”

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

উলুম্বুশ এর ছবি

@মুমু ও রাফি
ধন্যবাদ। কবিতাটা আমার পুরাটা মনে নাই কিন্তু মাঝে মাঝের লাইনগুলা প্রায়ই মাথায় ঘুরে।
********************************************************
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাঁক জ্যোৎস্নায় দিও সামান্য ঠাঁই

---------------------------------------------------------
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক, জ্যোৎস্নায় দিও সামান্য ঠাঁই

সৌরভ এর ছবি

ভাবলাম, পোলাটা বড় হইসে।
এতোদিনে নিজে কিছু কৈরা খাইতে পারবে।

তাও নাহ। আপুর জন্যে কান্নাকাটি করতেসে।
হাসি


আহ ঈশ্বর, আমাদের ক্ষোভ কি তোমাকে স্পর্শ করে?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

রাফি(লগামু না) এর ছবি

বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক্-বলা কাজ্লা দিদি কই?
পুকির ধারে লেবুর তলে,
থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই,
মাগো আমার কোলের কাছে কাজ্লা দিদি কই?

সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আমি যখন
দিদি বলে ডাকি তখন,
ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি, তুমি কেন চুপটি করে থাকো?

বল্ মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে
আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন ক'রে রবে?
আমিও নাই---দিদিও নাই---কেমন মজা হবে!

ভূঁই-চাঁপাতে ভরে গেছে শিউলী গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল |
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে
বুলবুলিটা লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা ছিঁড়তে গিয়ে ফল,
দিদি যখন শুনবে এসে বলবি কি মা বল্ |

বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
এমন সময় মাগো আমার কাজ্লা দিদি কই?
লেবুর তলে পুকুর পাড়ে
ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতো জেগে রই,---
রাত্রি হোল মাগো, আমার কাজ্লা দিদি কই?

পুরো কবিতাটা দিয়ে দিলাম; কপি মারছি তো বানান ভুল থাকতে পারে; কিছু মনে কইরেন না।

উলুম্বুশ এর ছবি

ভাইয়া বড় হয়েছি তো । এই জন্যই তো এখন স্মৃতিচারণ করছি।
***********************************
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাঁক জ্যোৎস্নায় দিও সামান্য ঠাঁই

---------------------------------------------------------
অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক, জ্যোৎস্নায় দিও সামান্য ঠাঁই

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আমার আবার একটা বড় ভাইয়ের খুউব শখ ছিল সেই ছোটবেলা থেকেই, এখনো আছে! আপনার লেখাটা তাই একদম হৃদয় থেকে অনুভব করতে পারলাম। আপনি ভাগ্যবান, এতদিন পরেও ওই আপুর সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছেন এবং দেখা হয়ে যাবারও ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। দেখা হোক, পুরোন দিনগুলোতে আবারও ফিরে যান আপনারা, সেই কামনা করি।

রায়হান এর ছবি

আমার মনে হয় কাজলা দিদি আসলে সুমি আপুর মতন ডিবি পেয়ে আমেরিকা চলে গেছে অথবা বিয়ে করে স্বামীর বাড়ি চলে গেছে। কবিতার ওই পিচ্চিটা কদিন পরে ইন্টারনেট ইউজ করা শিখে ফেসবুকে সার্চ দিলে কাজলা দিদিকে পেয়ে যাবে দেঁতো হাসি

রায়হান এর ছবি

তপু
Amar pichi bhaia, kisu kotha nah bolleo buja jai. Ami tomake amar choto bhai hobe kinah jigasha korar opekha kori ni.tumi amar Toippa chile ar shobshomoy thakbe.Ekhtu o change hou nai tumi, shudhu lombbah chara, same dekhthe same daath, same chook same bhabe raag kora.soo cute hahaha. Kajla didi amaro onekh posonder ekhta kobitha, and tar reason gulo tomrai, tumi ar Kanak. Kinthu ekhta shothhiki jano? Ami asholei lucky, karon amar jonno keo nah keo apu bhebe kobitha likhe, ami bhabtam ami e hoitho shobaike mone rekhechi, kithu ami wrong chilam. Deep down inside me, I knew my Kanka and Toippa can’t ever forget me………..সুমি

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

অসম্ভব ভালো হয়েছে ।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

বিপ্লব রহমান এর ছবি

ছুটতে ছুটতে খোকা বড় হয়ে যায়।...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আমাদের সময়ে কাজলা দিদিরা ছিলেন এক রকম। আর এখনকার কাজলা দিদিরা হয়েছেন আরেক রকম। তাদের অতটা সময় নেই পিচ্চি ভাইগুলোর প্রতি স্নেহ-মমতা প্রদর্শনের। যে কারণে এখন যে পিচ্চিগুলো বড় হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগ অংশ কখনোই হয়তো কাজলা দিদির জন্য আক্ষেপ করবে না।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

নিরিবিলি এর ছবি

:)ভাল লাগল। আমারও একটা বড় ভাইয়ের সখ ছিল একসময়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।