১ মার্চ, ভারতীয় পণ্য বর্জন - সাধারণের ভাবনা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন প্রৌঢ় ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০১/০২/২০১২ - ৭:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১ মার্চ, ভারত বনধ বা ভারতীয় পণ্য বর্জনের আলোচনায় জেনেছি, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভাবনা।

১ মার্চ, ভারত বনধ বা ভারতীয় পণ্য বর্জনের আলোচনায় জেনেছি, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভাবনা।

এক অবসরপ্রাপ্ত আমলার সাথে আলোচনায় জানলাম, তিনি ফেসবুক থেকে বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছেন এবং এ বিষয়ে তাঁর মনোভাবটি অত্যন্ত ইতিবাচক। নব প্রজন্মের এ উদ্যোগে তিনি অত্যন্ত আশাবাদী। তিনি তাঁর পরিচিত মহলে বিষয়টির যৌক্তিকতা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, এবং তিনি এটাও মনে করেন যে, এই উদ্যোগের সফলতা, দেশের অন্যান্য সমস্যা নিয়েও ভাববার বিষয়ে এ প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে। অতএব সকল সচেতন ব্যক্তিরই উচিৎ এই উদ্যোগে সমর্থন যুগিয়ে যাওয়া।

এক বাম রাজনীতিকের সাথে আলোচনায় তিনি জানালেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। শ্লোগানটি (শব্দটির প্রয়োগ সঠিক হল কী?) শুনে তিনি বললেন, শুধুমাত্র ভারতীয় পণ্য বর্জন কেন ? আমেরিকা, ইউরোপ তথা সমস্ত বিদেশী পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্যের ব্যাবহার বাড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে হবে। দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। বুঝলাম, তিনি তাঁর রাজনৈতির দর্শনের কথাই বলতে চাইছেন। আমি তাঁকে বললাম, এটি বাংলাদেশে প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার বিরোধিতা নয়, সীমান্তে বি,এস,এফ, এর নৃশংসতার প্রতিবাদে একটি প্রতিকি কর্মসূচী এবং এটা যে কোন গোষ্ঠীর রাজনৈতিক কর্মকান্ড নয় সেটাও তাঁর কাছে খোলাসা করলাম। এটা নিতান্তই বর্তমান প্রজন্মের (১৪ - ৪০ বৎসর) আগ্রহে ও উদ্যোগে পরিচালিত একটি প্রচেষ্টা যার মূল কথাটি হচ্ছে, ভারতীয় সরকার ও জনগণের কাছে, সীমান্তে বি, এস, এফ, এর নৃশংসতার চিত্রটি তুলে ধরা। তাঁদের কাছে এই বার্তাটি পৌঁছে দেওয়া যে, আমরা এ কারনে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও অপমানিত। তিনি বিষয়টিতে সহমত পোষণ করায় আমি তাঁকে এ বিষয়টি তাঁর অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ জানালাম।

আর সমাজের নিম্নবিত্তের মানুষ তথা রিক্সাওয়ালা, নির্মানশ্রমিক, গার্মেন্টসকর্মী, গৃহকর্মী যাঁদের সাথে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছে , তাদের মধ্যে দু-একজন রিক্সাওয়ালা ছাড়া কেউই এ বিষয়টি সম্পর্কে জানেনা।

সহজ কথায় বুঝিয়ে বলার পরে তাঁদের অধিকাংশেরই কথা, কোনটা দেশী পণ্য কোনটা ভারতীয় বা বিদেশী পণ্য সে সম্পর্কে তাঁদের খুব একটা ধারনা নেই। তাছাড়া খাদ্য সামগ্রী ছাড়া বিশেষ ধরনের পণ্য কেবলমাত্র উৎসবের সময়ই তাঁরা ক্রয় করে থাকে।

বিশেষভাবে ছাত্র ও যুবকদের মধ্যে এ বিষয়টির আবেদন অত্যন্ত ইতিবাচক। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই এ বিষয়টির প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু ব্যতিক্রম যে নেই , তা বলবনা। তারপরও তাঁরাই এই উদ্যোগের প্রাণ।

মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি। অনেকের কথা, এ ধরনের আপাত নিরীহ কর্মসূচীতে কোন সরকারই কর্ণপাত করবেনা। উচ্চবিত্তের মাঝে একাংশের কথা, তাঁরা ভারতীয় পণ্য বিশেষ একটা ব্যবহার করেনা , শুধুমাত্র টিভি চ্যানেল গুলোই নিয়মিত দেখা হয়।

আর মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্তের অনেকের অভিমত বিশেষ করে মহিলাদের (যাঁদের সাথে আমার কথা হয়েছে), "ভারতীয় পণ্য ছাড়া আমাদের একটা দিনও চলবেনা। আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ ধীরে ধীরে এতে পুরোপুরিই অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি । গৃহস্থালির কাজে, সাজ-পোশাকে সর্বত্রই ভারতীয় পণ্যের একচ্ছত্র ব্যবহার। তারপরও অতিরিক্ত পিড়াপিড়িতে হয়ত এসবের ব্যবহার থেকে একটা দিন বিরত থাকা যেতে পারে।"

সব চেয়ে স্পর্সকাতর বিষয়টি হচ্ছে ভারতীয় টিভি চ্যানেল। এটা বর্জন সবার জন্য সম্ভবত সম্ভব নয়। এ হচ্ছে আদম-হাওয়ার 'গন্ধম' ভক্ষণের মত।

ভারতীয় টিভি চ্যানেল গুলোর মধ্যে জি-বাংলা, ইটিভি-বাংলা, ষ্টার-জলসা, সনি-টিভি এগুলো এখন অধিকাংশ শহুরে বাঙ্গালীর বিনোদনের বিশেষ মাধ্যম। প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।

সময় এসেছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার।

অনেক কথার মাঝে যে কথাটি উঠে আসলো তা হলো, (সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়) ভারতীয় পণ্য না হয় তাঁরা একদিনের জন্য বর্জন করবে , কিন্তু ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর ব্যাপারে তাদের মনোভাব , সেই স্বদেশী আন্দোলনের কিছু নেতাদের মত। গান্ধীজী যখন সবকিছু স্বদেশী করে দিলেন অর্থাৎ সব ধরনের বৃটিশ পণ্য বর্জনের ডাক দিলেন তখন কোন কোন নেতা আড়ালে আবডালে ইতস্তত করে বলেছিলেন, এই এটা মানে এটা আরকি , স্বদেশী না করলে হয়না ? দিশি মাল (মদ) ট্রাই করে দেখলাম। এটাতো আসলেই চলবেনা। এই বিষয়টিতে একটু ছাড় দেওয়া যায়না ? দীর্ঘদিনের অভ্যাস, হঠাৎ করেই... । ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর ব্যাপারেও এক শ্রেণীর মনোভাব অনেকটা ঐ রকমই। তারপরও আশা করছি অন্তত একটা দিন...।

১ মার্চ, ভারত বনধ তথা ভারতীয় পণ্য বর্জন কর্মসূচীর সর্বাত্বক সফলতা কামনা করছি।


মন্তব্য

তাপস শর্মা এর ছবি
প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ।

তারেক অণু এর ছবি

আপনার গবেষণা লব্ধ লেখার জন্য ধন্যবাদ।
ভেবে অবাক হয়ে যাচ্ছি, মানুষের কাছে টিভি চ্যানেল এতটাই গুরুত্বপূর্ণ! তাও স্রেফ একঘেয়ে নাটক, ভাঁড়ামোর অনুষ্ঠান দেখার জন্য!
এটা তো ১ দিনের জন্য নয় কেবল, এটা বুঝতে হবে!

আশফাক আহমেদ এর ছবি

অণুদা, আমার স্টুডেন্ট যে মীরাক্কেলের জন্য কী পরিমাণ পাগল, আপনাকে কীভাবে বোঝাবো?
এইসব নাদানদের বোঝাবে কে? আমি হাল ছেড়ে দিয়েছি

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

চরম উদাস এর ছবি

আমার স্বপ্ন ছিল স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হবো, হয়ে গেলাম মিস্তিরি মন খারাপ । নাইলে ঠিকই মিরাক্কেল এর মতো একটা অনুষ্ঠান বানানোর চেষ্টা করতাম। তবে আমাদের মিডিয়ার কমেডির হাল দেখে মনে হয় সবার হাস্যরসের দিকে আরও মন দেয়া উচিৎ। প্রেমরস তো অনেক হলো। আমার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে হাসির নাটক আর এমন স্ট্যান্ড আপ কমেডি শো নিয়ে কাজ করার।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

"গান্ধীজী যখন সবকিছু স্বদেশী করে দিলেন অর্থাৎ সব ধরনের বৃটিশ পণ্য বর্জনের ডাক দিলেন তখন কোন কোন নেতা আড়ালে আবডালে ইতস্তত করে বলেছিলেন, এই এটা মানে এটা আরকি , স্বদেশী না করলে হয়না! দিশি মাল (মদ) ট্রাই করে দেখলাম। এটাতো আসলেই চলবেনা। এই বিষয়টিতে একটু ছাড় দেওয়া যায়না! দীর্ঘদিনের অভ্যাস, হঠাৎ করেই... । "

হো হো হো

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

হিমু এর ছবি

আমি জানতাম বৃটিশ পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন অরবিন্দ ষোষ, লালা লাজপত রায়, এঁরা। গান্ধীজি স্বদেশীর ডাক দিয়েছিলেন নাকি?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বয়সের কারনে স্মৃতি বিভ্রম ঘটতে পারে। এই মুহূর্তে আমি নিশ্চিত নই। কারও জানা থাকলে অনুগ্রহ করে জানাবেন।

পৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার জানাটি সঠিক। শুরুতে অরবিন্দ ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বীর সাভারকর, বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা রাজপত রাই এঁরাই স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মহাত্মা গান্ধীও এটিকে গ্রহন করেন (উইকিপিডিয়া)।

অরফিয়াস এর ছবি

কর্মসূচির সাথে সম্পূর্ণভাবে একমত...কিন্তু একটা প্রশ্ন-

ভারতীয় টিভি চ্যানেল গুলোর মধ্যে জি-বাংলা, ইটিভি-বাংলা, ইষ্টার্ণ-জলসা, সনি-টিভি এগুলো এখন অধিকাংশ শহুরে বাঙ্গালীর বিনোদনের বিশেষ মাধ্যম। প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।

এই কথাটা অনেকদিন ধরে শুনে যাচ্ছি, কিন্তু টিভিতে চ্যানেল তো অনেক আছে, সেখানে বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন বয়সের উপযোগী অনুষ্ঠানও ২৪ ঘন্টা হচ্ছে, কিন্তু কিছু বিশেষ ভারতীয় চ্যানেল এর প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণের কি কারণ হতে পারে?? কারণ সাধারণ মানুষের ভালো লাগাকে তো অগ্রাহ্য করা যাচ্ছেনা এখানে, তাহলে এমন নয়কি যে, সাধারণ মানুষ যে বিনোদন আশা করে সেটা ওই অনুষ্ঠানগুলোতে প্রদর্শিত হচ্ছে, সেটা যতই নিম্নমানের অথবা প্যানপ্যানানী ধরনের হোকনা কেনো, তাহলে সাধারণ জনগনকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা তাদের আছে, একই সাথে এভাবেও বলা যায়না কি যে, আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলো বাইরের দেশকে নকল করতে করতে নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেছে কিংবা প্রতিযোগীতার এই যুগে টিকে থাকার লড়াইয়ে তারা পিছিয়ে পড়েছে?? তাহলে দোষটা কাদের??? যারা প্রতিযোগীতায় টিকতে পারছেনা এবং মানসম্মত অনুষ্ঠান প্রদর্শন করতে পারছেনা নাকি তাদের যারা অন্য জায়গায় ভালো লাগার অনুষ্ঠান পেয়ে দেশী চ্যানেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে??

আমি নিজে অন্তত দেশী নাটকের চিবিয়ে চিবিয়ে বলা নতুন ধরনের বাংলা শুনতে যাবোনা, একই সাথে আমি মনে করিনা যে, ভারতীয় চ্যানেল বর্জন করলেই সব কাজ হয়ে গেলো, বরং আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলোকে নিজেদের মান উন্নত করতে হবে, দর্শক আগ্রহী হয় এরকম অনুষ্ঠান তৈরী করতে হবে, আমার কাছে এখনো বিটিভি তে প্রচারিত "ইত্যাদি" অসাধারণ লাগে, তাই এটাও বলবো না যে এরকম ভালো অনুষ্ঠান তৈরী করার মেধা আমাদের নেই| তাই আমার মনে হয়, ঢালাও ভাবে ভারতীয় মিডিয়াকে বর্জন না করে তাদের প্রতিযোগীতায় হারিয়ে দেওয়াটাই উত্তম পথ|

কারণ সাধারণ মানুষ যখন টিভির সামনে বসে তখন তারা যুক্তি বোঝেনা, বিনোদন বোঝে| এই সত্যিটা আমাদের উপলব্ধি করা উচিত

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, সুচিন্তিত মতামতের জন্য।

আজহার এর ছবি

সহমত, খাটিকথা...এইডা নিয়া ভাবতে হইবো।

মন মাঝি এর ছবি

কারণ সাধারণ মানুষের ভালো লাগাকে তো অগ্রাহ্য করা যাচ্ছেনা এখানে... সেটা যতই নিম্নমানের [হোকনা]... তাহলে দোষটা কাদের???.... [তাই] ঢালাও ভাবে ভারতীয় মিডিয়াকে বর্জন না করে তাদের প্রতিযোগীতায় হারিয়ে দেওয়াটাই উত্তম পথ...

বিরোধিতা নয়, আমার যা মনে হয় বলিঃ

১। এটা সাংস্কৃতিক (এবং তার হাত ধরে বানিজ্যিক, মনোজাগতিক,ইত্যাদি) সাম্রাজ্যবাদী/আধিপত্যবাদী/মনোপলিবাদীদের সবচেয়ে প্রিয় যুক্তি। মার্কিনীরা এই যুক্তিটা মনে হয় প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলত। কারনটা খুব সোজা - অসমান খেলার মাঠে কোন সুস্থ বা বাস্তবসম্মত 'প্রতিযোগিতা' হয় না। অল্প-স্বল্প পার্থক্য থাকলে তাও হয়তো থিওরিটিকালি সম্ভব, কিন্তু ব্যবধানটা যদি বিশাল হয় তাহলে এহেন 'প্রতিযোগিতা'য় ঐ সাম্রাজ্যবাদী/আধিপত্যবাদীদের জয় অবধারিত। কাছা খুলে লড়তে গেলে এই ক্ষেত্রে অর্থ যাদের হাতে অনেক বেশি তারা জিতবেই। শুধু মেধা দিয়ে কুলাবে না।
তাছাড়া সুস্থ, সুন্দর বা মেধাবী স্বসংস্কৃতির ধারা সস্তা ও নিম্নমানের (এমনকি ডাউনরাইট ক্ষতিকর) কিন্তু 'গ্ল্যামারাস' ধারার কাছে চিরকালই মার খায়। বেশির ভাগ মানুষের আকর্ষন ঐদিকেই। এটাই চিরন্তন বাস্তব মানব চরিত্র। অনেকটা (আসলে একদমই) মাদকের মত। ভাল কিছুর বদলে এই শেষের ধারা মানুষের নেতিবাচক বা মেধাহীণ রিপুগুলিকে এক্সপ্লয়েট/ম্যনিপুলেট করে। আর এই এক্সপ্লয়েটেশনের পেছনে অর্থ ও অন্যান্য প্রতিপত্তি বেশি থাকলে এই রিপু-এক্সপ্লয়েটেশনের প্রতিযোগিতায় শুধু মেধা আর সদিচ্ছা দিয়ে পাল্লা দেয়া সম্ভব নয়।
(আর খারাপের/মাদকের প্রতিযোগিতা যদি করতেই হয়, তাহলে বিদেশিদের সাথে করবো কেন? বিদেশিদের সাথে 'বিষে বিষক্ষয়' বা 'মাদকে মাদকক্ষয়' জাতীয় প্রতিযোগিতায় আমাদের কোন লাভ নেই। হারি বা জিতি - এক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত সব লাভই তাদের আর সব ক্ষতিই আমাদের।)

তো মন-মাদকের এই শেষের ব্যবসাটাও টাকা দিয়ে সবচেয়ে ভাল হয়। এসব কথা মার্কিনিরা খুব ভাল জানত বলেই পুরো কোল্ড-ওয়ার যুগ জুড়ে তারা সবরকম সাংস্কৃতিক প্রোটেকশনিজমের চরম বিরোধিতা করে গেছে। জানত, তারা একবার কোথাও ঢুকতে পারলে তাদের আর কেউ বের করতে পারবে না। বরং তারাই নেটিভ সংস্কৃতি ও তার বাজার খেয়ে ফেলবে। ঐ মাদকের ক্ষুধা তারা ঐ খানে পার্মানেন্টলি জাগিয়ে দিবে - যে ক্ষুধা বা নেশা আর কোন সুষম খাদ্য, ওষুধ বা ভিটামিনেই সারবে না। সারাতে হলে স্বাস্থ্য/পুষ্টি/পথ্য নয়, বরং আরো শক্তিশালী মাদক সাপ্লাই দিতে হবে স্থানীয় তথাকথিত প্রতিযোগী পোলাপাইনদের। কিন্তু 'কঞ্জিউমারিজমের' মাদক-ব্যবসার 'প্রতিযোগিতা"য় মার্কিনিদের সাথে কে পারবে বলেন? সুতরাং নিজেরা বহু ক্ষেত্রে প্রোটেকশনিজমের বাপ হয়েও সবাইকে কাছা খুলে ফেলার পরামর্শ দিত। ভারতও ঠিক একই কাজ করছে। তথাকথিত 'প্রতিযোগিতা' দিয়ে তাদের এই মুহুর্তে হারানো যাবে না। এবং এই "দোষটা" (দোষই যদি বলেন!) পুরোপুরি মোটেই দেশীয় চ্যানেলগুলোর নয়। সুতরাং এই ক্ষেত্রে দুর্বলতর পক্ষের 'প্রতিযোগিতা' নয়, "প্রোটাকশন"ই লাগবে। অর্থাৎ ইন্ডিয়ান চ্যানেল বর্জন, এবং আমার ব্যক্তিগত অভিমত - ঢালাও ব্যান । তারপর অন্যকিছু।

আরেকটা ব্যাপার, উম্মুক্ত প্রতিযোগিতা বিদেশিদের সাথে করার কি ঠ্যাকা পড়ছে আমাদের? এটা কি খেলা? সাস ভি বহু থা বা ঢিরাক্কেল কি চাল-ডাল-ঔষধ বা এজাতীয় কোন ভাইটাল পন্য যে ঘাটতি পড়লে বা না খেলে দেশের মানুষ মারা পড়বে, বা গুরুতর কোন ক্ষতি হবে? আমি তো বরং দেখি এগুলি বর্জনেই আমাদের সর্বপ্রকার জাতীয় স্বার্থ নিহিত এবং প্রভূত সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বানিজ্যিক ও রাজনৈতিক উপকার।

এ প্রসঙ্গে শেষ যে প্রশ্ন - বাধ্য না হলে ভারত নিজে কি নিজের উন্নতির আশায় নিজদেশে এধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় যেখানে তাদের কোন পন্য বা সেবা বিদেশিদের চেয়ে ব্যপক ভাবে দুর্বল? তারা কি আমাদের নানারকম পন্যের উপর অশুল্ক বাধা আরোপ করে ঠেকিয়ে রাখে না ? আমাদের চ্যানেলগুলির প্রচারে পঃবঃ-এ কখনো কোনই বাধা সৃশটি করা হয়নি? ওদের কেবল অপারেটরদের এসোসিয়েশনের মাধ্যমে এক্ষেত্রে প্রচুর বাধাদান হয়নি? তাহলে আমরা কেন পারব বা করব না একই জিনিষ?

২।

কারণ সাধারণ মানুষের ভালো লাগাকে তো অগ্রাহ্য করা যাচ্ছেনা এখানে... সেটা যতই নিম্নমানের...

আগেই যেমন বলেছি, মাদকের বেলাতেও হুবহু একই কথা প্রযোজ্য। নেশারুদের এমনই হয়। দিয়ে কিন্তু নেশা জিইয়ে রাখার পক্ষে সেটা কোন যুক্তি হতে পারে না। এই 'নেশা'র সাময়িক অন্ধ সুখকে অগ্রাহ্য করতেই হয় - নিজেরই জন্য এবং সেইসাথে বৃহত্তর কল্যাণেও। আর মাদকাসক্তি ছোটানোর চিকিৎসা আমার জানামতে কোনদিনও আরো আরো মাদকাসক্তি নয়। মাদকসেবন বন্ধ করে দেয়াটাই এখানে একমাত্র পথ এবং লক্ষ্য। প্রথম-প্রথম কিছু উইথড্রয়াল সিম্পটম দেখা দেবেই। কিন্তু সেটা মেনে নিতে হয় নিজের ও বৃহত্তর কল্যাণে। ভারতীয় চ্যানেলের মন-মাদকের মাদকাসক্তি সারানোর রাস্তাও এইটাই। আর আমাদের পক্ষে সেটা মোটেই অসম্ভব না - ভাল চাপ বা ঐক্যমত্য সৃষ্টি করতে পারলে। আশা করি ১লা মার্চের বর্জনটা প্রথম ধাপ হিসেবে সফল হবে।

****************************************

দিগন্ত এর ছবি

খুব ভাল কমেন্ট লিখেছেন। কিন্তু মাদক থেকে মুক্তি শুধু সরকারী ব্যান দিয়ে হবে? আমি দুরকম উদাহরণ দিচ্ছি যাতে সহজেই সরকারী ব্যানকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখানো যায় -
১) ইন্টারনেট স্ট্রিমিং - এটা এখনও বাংলাদেশে হয়ত ততটা জনপ্রিয় নয়, তবে ভবিষ্যতে হবে। এই পথে সরকারের হাত অনেক কম লম্বা।
২) ভারতীয় চ্যানেল যদি আমিরাত বা কাতার থেকে আসে? এই দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অন্যরকম। পুঁজি এখন এক দেশের নয়, বহুজাতিক।

মাদক-সেবন বন্ধে আমার মতে বটম-আপ দাওয়াই চলতে পারে, টপ-ডাউন চলবে না। যারা দেখে তাদেরই বুঝতে হবে এতে তাদের ক্ষতি ছাড়া লাভ ণেই।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মন মাঝি এর ছবি

মাদকের চিকিৎসায় টপ-ডাউন এবং বটম-আপ দুই এপ্রোচই লাগে। একটা আরেকটাকে শক্তি ও পুষ্টি যুগিয়ে দ্রুত ও নিশ্চয়তার সাথে কার্যকরী হতে সাহায্য করে। যদ্দুর জানি, আক্ষরিক সিরিকাস মাদক নিরাময়ে রোগির নিজের ইচ্ছাশক্তি ও মোটিভেশনের মত বটম-আপ এপ্রোচের পাশাপাশি ঔষধ, রিস্ট্রেইনিং, কাউন্সেলিং, রিহ্যাব জাতীয় টপ-ডাউন এপ্রোচও লাগে। একটা পদ্ধতি আরেকটাকে স্ট্রেন্দেন, এনহান্স ও ফোর্টিফাই করে মূল লক্ষ্য অর্জনে। এই কম্বিনেশন থেরাপি ছাড়া অনেক সময়ই কাজ হয় না।

আপনি যদি নৈতিকতা বা গণতান্ত্রিকতা বা ঐ জাতীয় কিছু নিয়ে চিন্তিত হয়ে থাকেন, তাহলে আমার মতামত বলি--

এখানে আসল কথা হল দ্রুত ও কার্যকরী ফললাভ নিয়ে - আলোচ্য ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রেক্ষিতে নীতিশাস্ত্র, ফেয়ার-প্লে, সংস্কৃতির অবাধ আদান-প্রদান বা ঐ জাতীয় কোন মহৎ বিষয় নিয়ে কোন কন্সার্নের প্রাসঙ্গিকতা, জায়গা, প্রয়োজন বা বাস্তবতা আছে বলে আমি মনে করি না (দেশের ভিতরে দুই পক্ষের মধ্যে হলে হয়তো কিছুটা হলেও অন্য কথা হতে পারত, কিন্তু এটা তাও নয়!)। এটা বিশুদ্ধ বিদেশি মাদক-বেওসার মনোপলি প্রয়াস, তবে এর বাহ্যিক মিষ্টি মন-ভোলানো চাকচিক্যময় মুখোশের নীচেই লুকানো আছে কঠিন, নির্মম, কুৎসিত, স্বার্থান্ধ বেওসাদারী, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক/মনোজাগতিক সাম্রাজ্যবাদ। বর্ডারের ওপারের বাংলাদেশ-টার্গেটেড ফেন্সিডিল কারখানাগুলি থেকে এপারে ফেন্সির চোরাচালান যেমন বন্ধ করা উচিৎ, এটাও তেমনি নিষিদ্ধ করা উচিৎ। আবার নতুন কি রুট খুঁজে বের করবে তারা সেই চিন্তা করে বসে থাকার উপায় নেই।

মোদ্দা কথা হল সব রকম চেষ্টাই জারি রাখতে হবে - কোনটা কাজে লাগে আর কোনটা লাগে না সেটা পরে দেখা যাবে। এই বিশেষ ক্ষেত্রে কোন একটা পরে কাজে না লাগলেও তো কোন অসুবিধা নাই।

****************************************

দিগন্ত এর ছবি

নৈতিকতা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। কিন্তু টপ-ডাউন এপ্রোচের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান। কাজে লাগলে ভাল। ওপরের দুটো ক্ষেত্রে কি ভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে হয়?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অরফিয়াস এর ছবি

কিছুটা জবাব "দিগন্ত" দিয়ে দিয়েছে, আশা করি এই বর্জনের ফাঁকফোকর ভালই বুঝতে পারবেন, এছাড়া, যদি সাধারণ নাগরিক ভারতীয় চ্যানেল দেখতে চায় এবং সরকার সেটা ব্যান করে তাহলে কি সাধারণ জনগনের পছন্দের উপরে সরকারী আগ্রাসন হয়ে গেলনা?? তাহলে মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে এটা কিরকম হবে? আর ভারতে বাংলাদেশের চ্যানেল চলেনা এটা ফালতু কথা, আমি নিজে ভারতের অনেক রাজ্য ঘুরেছি এবং বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামে বাংলাদেশের এটিএন বাংলা, বৈশাখী ইত্যাদি চ্যানেল দেখেছি| তাহলে প্রতিযোগীতায় সমস্যা কোথায়? আপনি অর্থের কথা বললেন, কিন্তু এটা একটু হাস্যকর লাগে, বাংলাদেশ কোটি কোটি ডলার খরচ করে বাইরের স্টার এনে নাচ-গান করাতে পারবে, বিদেশী খেলোয়াড় নিজের দেশে এনে খেলাতে পারবে আর সাধারণ জনগনের বিনোদনের মাধ্যম টিভি এর জন্য একটু খরচ করতে পারবেনা মানসম্মত অনুষ্ঠান প্রদর্শনের জন্য? এধরনের যুক্তি কি টেকে?? আর গ্ল্যামার এর কথাই যখন বললেন, ভাই আমাদের দেশে কি এর অভাব আছে?? নাকি অভাব আছে মেধার?? "গেরিলা" যখন মুক্তি পেলো মানুষ কি যায় নাই টিকিট কিনে দেখতে?? একবার না অনেকে ৫/৬ বার গেছে পুরো পরিবার নিয়ে, ছবি বানাতে কতো টাকা লেগেছে তার হিসাবে না যাই, বরং গ্ল্যামার তো কিছু ছিলোনা, তারপরও শুধু ইতিহাস আর মেধার জন্য মানুষ গেছে| এটা কখনই মানতে পারলামনা যে মেধার মূল্য নাই, আসলে আমাদের দেশে মেধার মূল্য নাই, মামা-চাচা না হলে মিডিয়াতে আসা যায়না, তাহলে ভালো কাজ হবে কিভাবে?? আর হলেও হাতে গোনা কয়েকটা| এভাবে তো আর প্রতিযোগিতা চলেনা, আগে দেশের মিডিয়া রাজনীতি মুক্ত হোক, প্রভাবশালী মুক্ত হোক, তারপর দেখুন এই মেধাই আগে যাবে ...

আর ১ লা মার্চের বর্জনে আমি তো সহমত, আমি তো মনে করি স্বদেশী করলেই ক্ষতি কি?? দেশের অর্থনীতি দাড়াবে, কিন্তু ভাই কয়জন এটা মানবে? আর যদি মানেও কতদিন?? উইথড্রয়াল তো করলাম কিন্তু যেখানে গোড়ায় গলদ সেখানে কি খুব বেশি দিন কাজে দিবে?? বলিউড ছেড়ে হলিউড ধরতে কি আমাদের পরিবারের সদস্যদের খুব বেশি দিন লাগবে?? নাকি হিন্দি গান ছেড়ে ইংরেজি ধরতে?? লাগবেনা, কিন্তু যদি প্রতিযোগিতায় টিকে যায় তাহলে দেখবেন ঠিকই এই মানুষগুলোই মানসম্মত অনুষ্ঠান দেখতে দেশীয় চ্যানেল খুলে বসে আছে...

প্রতিযোগিতাটা সুদুরপ্রসারী পদক্ষেপ, বর্জনটা নয়...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

হিমু এর ছবি

আমি একটু কুতর্ক করি।

পর্নোগ্রাফিও অনেকে পছন্দ করে। কিন্তু সরকার পর্নোগ্রাফি বন্ধে আইন করেছে। এটা কি সাধারণ জনগণের পছন্দের ওপর সরকারের আগ্রাসন নয়? আমরা যদি একটু ভাবি, তাহলে দেখবো যে পর্নোগ্রাফির বিনোদনমূল্য এর অপপ্রয়োগের কাছে মলিন হয়ে যায়।

আমরা বিনোদিত হবো অবশ্যই, কিন্তু সেটা কীসের বিনিময়ে, সেটাও চিন্তা করতে হবে। ভারত নিজে টেলিভিশন উৎপাদন শুরু করার আগে কিন্তু টেলিভিশনই চালু করেনি (পাকিস্তানের দশ বছর পর, ১৯৭৪ এ শুরু হয়েছে দূরদর্শন)।

আমরা বিনোদনের জন্য একটু খরচ করছি না। বছরে দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করছি। আর কোটি কোটি টাকা খলচ করে বাইরে থেকে স্টার এনে নাচাচ্ছি কিন্তু এরই ধারাবাহিকতায়। আমরা দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখছি আর সেই পণ্য কেনার জন্য আরো কয় হাজার কোটি টাকা খরচ করছি তা কে জানে?

আর এই মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি জিনিসটা আসলে কীরকম? আপনি ভারতীয় সম্প্রচার আইন পড়ে দেখেন, ওখানে মুক্ত আকাশ সংস্কৃতিকে কী টাইট দেয়া আছে।

আমাদের দেশীয় টিভি বিনোদনকে যে আরো বিকশিত করতে হবে, তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু লুঙ্গি তুলে পেছন উদাম করে সেটা করা যাবে না।

দিগন্ত এর ছবি

যারা ভারতীয় সম্প্রচার আইন পড়েননি তাদের জন্য সংক্ষিপ্ত একটা আর্টকেলের লিঙ্ক দিচ্ছি। মূল আইনটা অনেকটা বড় বলে ওটা দিলাম না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

পর্নোগ্রাফি বন্ধের আইনটা ঢালাও হয়ে গেছে। এর সাথে জড়িত কেউ মনে হয় বাদ নাই। সবাই দোষী। জামাতি ছাগুরা এখন নসিহত করছে পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটগুলোকে মধ্যপ্রাচ্য চায়নার মতো ফিল্টার না করার অভিযোগে বিটিআরসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। রিট আবেদনও নাগরিক হিসেবে দাখিল টাখিল করে বসতে পারে।

কলেজে শিবির হবুশিবিরগুলো হবুহিজবুততাহরীরগুলো পর্নোগ্রাফি দেখা ছাত্রদেরকে বকরা হিসেবে পেয়ে বসে। ধর্মীয় নসিহত দেয়। কলেজ পড়ুয়ারা দ্বিধায় পড়ে। কেউ কেউ আল্লাখোদার ভয়ে 'ফিরে' আসে। তখন তাদের 'উদ্ধারকর্তাদের' প্রতি চিরকৃতজ্ঞ ও সহানুভূতিশীল হয়ে থাকে।

অনেককে জানি গাঁজা, পর্নোগ্রাফি, হস্তমৈথুনের মতো বিষয় নিয়ে আত্মদহনে ভুগতে ভুগতে হবুশিবির হয়ে গেছে। বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে বটমআপ অ্যাপ্রোচের হলো এই হাল! পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে ধর্মীয় ছাড়া অন্য কোনো শক্তি মোটিভেশান হিসেবে জারি নেই। তাবলিগারদের এইসব নিয়ে অর্থাৎ ধর্মীয় ঋণাত্মক বিষয় নিয়ে কোনো কারণে নসিহত করতে তেমন দেখি নি। হয়তো তেমন করেও না।

কলেজে থাকতে আমি সহপাঠীদেরকে ধর্মের বাইরে এসে মুক্তস্বাধীনভাবে চিন্তা করার প্রচারণা যখন চালাতাম, তখন এমন অনেক পর্নোগ্রাফি-দেখতে-দেখতে-আত্মদহনে-ভুগে-ভুগে-দ্বিধাগ্রস্ত-হওয়া সহপাঠীকে হবুশিবিরদের থেকে রক্ষা করেছি। বলেছি ধর্ম ও নৈতিকতা ব্যক্তিগত ব্যাপার। যতক্ষণ অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ হচ্ছে না, ততক্ষণ নিজের অভিরুচি নিজেই গঠন করবে। অন্যের তাতে নসিহত করার সুযোগ নেই। অনেকেই কথা শুনেছে। দুয়েকজন পর্নোগ্রাফি দেখাকে বাই ইটসেল্ফ নাপাক ভেবে হবুশিবিরদের নসিহত করাকে বৈধ মনে করেছে। আইনে হরেদরে সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করায় এখন ওইসব নসিহতকারীদের পোয়াবারো।

ধর্মের বাইরে পর্নোগ্রাফি নিয়ে কথা বলার, অবস্থান নেওয়ার অন্য কোনো শক্তি না থাকায় আইনের ডরভয় এখন ওইসব হবুশিবিরদের বেশ কাজে লাগবে দেখতে পাচ্ছি। নয়াদিগন্ত তো ভরে উঠছে এই আইনের প্রশংসায়। কলেজ বয়েসে পর্নোগ্রাফি নেড়ে চেড়ে নিরাব্বইভাগ ছেলে দেখবে। কলেজ বয়সে পর্নোগ্রাফি দেখা একটা ছেলেও এখন আর মেরুদণ্ড সোজা করে চলতে পারবে না দেখতে পাচ্ছি। সেটা করতে হলে ধর্মের সাথে সাথে ব্যক্তিগত অভিরুচি গঠনের অধিকারকে এখন আইনের সাথেও লড়তে হবে। বেশ!

অরফিয়াস এর ছবি

@হিমু, পর্নোগ্রাফি বন্ধের আইনের সাথে এর কি তুলনা হলো???

আমাদের দেশীয় টিভি বিনোদনকে যে আরো বিকশিত করতে হবে, তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু লুঙ্গি তুলে পেছন উদাম করে সেটা করা যাবে না।

আমি কি একবারও বলেছি?? নাকি প্রতিযোগীতার মানে পেছন উদাম করা বোঝায়?? আর দেখুন আমি টিভি দেখিনা বললেই চলে, ভারতীয় চ্যানেল তো নয়ই, কিন্তু যখন দেখি তখন হিস্ট্রি, জিওগ্রাফি, ডিসকভারী, কার্টুন এগুলো প্রিয় চ্যানেল, এদের কোনটাতেই কিন্তু ঢালাও ভাবে কোনো নির্দিষ্ট দেশের অনুষ্ঠানমালা প্রদর্শন করছেনা, সেখানে অনেক অনুষ্ঠানই সম্প্রচার হচ্ছে, এদের জনপ্রিয়তাও আছে| যদি আমার বাসার টিভিতে ১০০ চ্যানেল দেখায় আর ১০ দেশের ১০টা করে চ্যানেল থাকে তাহলে ভারতের ১০টা চ্যানেল আমি বন্ধ করে দিলাম, কিন্তু তারপরও থাকবে বাকি ৯টা দেশের চ্যানেল যা কিনা আমাদের অনুষ্ঠানগুলোর সাথে পাল্লা দিবে, এখন যদি এদের কোনোটার মান আমাদেরগুলো থেকে ভালো হয় জনগণ সেটা দেখতে পছন্দ করবে, তাহলে তখন যদি আস্তে আস্তে সেরকম আরো কিছু অনুষ্ঠান মিলিয়ে আবারও দেশীয় অনুষ্ঠানের শক্ত প্রতিপক্ষ গ্রুপ তৈরী হয় তাহলে কি আমরা সেগুলোও বন্ধ করবো?? বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু আমার প্রিয় হিস্ট্রি, জিওগ্রাফি, ডিসকভারী, কার্টুন এই কটা চ্যানেল এর সাথে পাল্লা দাওয়ার জন্য আমাদের দেশে কয়টা চ্যানেল আছে?? আমাদের দেশে প্রাকৃতিক এতো সম্পদ ও জায়গা থাকার পরেও শুধুমাত্র অনুসন্ধানমূলক কটা ভালো অনুষ্ঠান আছে যা কিনা অন্য কোনো অনুষ্ঠানের নকল না??

টিভিতে সৌদি আরব, পাকিস্তান, কোরিয়া এরকম অনেক দেশের কিছু অহেতুক চ্যানেলও সম্প্রচার করতে দেখি, কিন্তু এগুলো বন্ধ করে কোনো কাজের চ্যানেল তো দিতে দেখিনা, জাকির নায়েক এর পীস টিভি এখন তো বাংলায় শোনা যায়, কই সেটা তো বন্ধ করার কিছু দেখিনা, এগুলো সবগুলোই কি একটি বিশেষ শ্রেনীর স্বার্থ সংরক্ষণ এর জন্য না?? ভারতীয় চ্যানেল এর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন অনেক গভীরে চলে গেছে, একই ভাবে কি পাশ্চাত্য আগ্রাসন হয়নি?? যদি তাই হয়, তাহলে দেশীয় সংস্কৃতিকে কি এদের সাথেও প্রতিযোগিতা করতে হবেনা?? যদি হয় তাহলে কি মান উন্নত করতে প্রতিযোগিতা করতে হবেনা নাকি সেখানেও বর্জনই পথ?? মিশ্র সংস্কৃতির যুগে তাই বর্জন কি সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ হতে পারে? প্রতিবাদ প্রকাশের একটা পন্থা অবশ্যই হতে পারে, কিন্তু সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নিশ্চয়ই নয়| আমি প্রতিবাদ প্রকাশের সাথে সম্পূর্ণ একমত, কিন্তু একদিনের জাতীয়তাবোধের এই প্রক্রিয়ার সাথে একমত হতে পারছিনা| যদি বর্জন করতেই হয় তাহলে দেশীয় সব জিনিসকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য হোক আমি অন্তত দেশের জিনিস কিনতে বা দেখতে পিছু হটবোনা, কিন্তু সস্তা জাতীয়তাবোধের জন্য আমি প্রস্তুত নই|

আমার ব্যাক্তিগত একটা অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা বলি, ভারত সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা যথেষ্ট খারাপ, বিশেষ করে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনের সাথে আমার থেকে খারাপ অভিজ্ঞতা কারো আছে কিনা জানিনা, শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ নিয়ে কটূক্তি করার কারণে ভারতে একজনকে পেটাতে গিয়েছিলাম সবার সামনেই, তাই আমাকে যদি কেউ বলে প্রতিযোগিতা না করে বর্জনকে পথ হিসেবে বেছে নিতে হবে আমি অন্তত মানতে পারছিনা| এরপর যার যার ব্যাক্তিগত মতামত|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

হিমু এর ছবি

আগে এটা দেখুন।

হ্যাঁ, আমি পর্নোগ্রাফির সাথেই তুলনা দিতে চাই। মানুষ কী দেখবে আর কী দেখবে না, সেটার ওপর সরকারী নিয়ন্ত্রণের আর কোনো উদাহরণ তো পাচ্ছি না। আপনার কাছে আছে?

প্রতিযোগিতা হয় সমানে সমানে। রহমতগঞ্জের সাথে বার্সেলোনার প্রতিযোগিতা হয় না, তাই না? আপনি মুক্তি আকাশের নামে নাচতে নাচতে নিজের দেশের আকাশ উন্মুক্ত করে দিতে এতো উদগ্রীব কেন? আমাদের কি ঠ্যাকা পড়েছে ভারতের বালছাল সিরিয়ালওয়ালা চ্যানেলের সাথে প্রতিযোগিতা করার? বিটিভি তো বিনা প্রতিযোগিতায় কাজ করতো, বিনোদনের অভাব ছিলো নাকি তখন?

আপনি টিভি দ্যাখেন না, আমিও দেখি না, কিন্তু প্রচুর লোকে দ্যাখে। টিভির বিনোদন হচ্ছে বিজ্ঞাপনের সাইড ডিশ মাত্র। সমস্যাটা ঐ বিজ্ঞাপনে। এখন বিজ্ঞাপন হয় সব এমবেডেডে, সিরিয়ালেই পণ্যের বিজ্ঞাপন আভাসিত থাকে। আপনি ডিসকভারি আর জিওগ্রাফি চ্যানেলে কয়টা বিজ্ঞাপন দ্যাখেন? ভারতীয় বালছাল চ্যানেলের সাথে ওগুলোর তুলনা হয়?

ভারতে বিদেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে ভাসানো কী কী বিদেশী চ্যানেল দেখেন, পাঁচটার নাম বলেন তো দেখি, মুক্ত আকাশ আর প্রতিযোগিতার অবস্থা ঐদিকে কীরকম।

অরফিয়াস এর ছবি

ভারতের নিজস্ব পণ্য বলতে যেই বিজ্ঞাপনগুলোর কথা বলছেন সেগুলোর অধিকাংশই কিন্তু ভারতের নিজস্ব নয়, বেশিরভাগেরই প্রধান উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইউরোপ কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্টের, ভারতে রয়েছে তাদের শাখা প্রতিষ্ঠানগুলো, এছাড়াও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের ডিস্ট্রিবিউটার সত্ব ভারতের আছে কিন্তু সেক্ষেত্রেও কিন্তু জিনিসগুলো ভারতের নয়, যেমন ক্ষুদ্রশিল্পে এবং ম্যানুফেকচারিং এর পুরোটা বাজার এখন প্রায় চায়নার দখলে, ঠিক তেমনি দক্ষিন এশিয়াতে ভারতের বানিজ্যিক আধিপত্য, কিন্তু তাও চায়নার তুলনায় কম| যেই চ্যানেল নিয়ে এত তর্ক হচ্ছে তার সম্পর্কে কিন্তু বললাম, সেই একই ভাবে অনেকগুলো ভালো চ্যানেল এর ডিস্ট্রিবিউশন কিন্তু ভারতেরই হাতে, যদি ভারতীয় চ্যানেল বর্জন করা হয় তাতে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু সাথে সাথে যদি সেই চ্যানেলগুলোও বর্জন করতে হয় সমস্যাটা সেখানে|

হ্যাঁ, আমি পর্নোগ্রাফির সাথেই তুলনা দিতে চাই। মানুষ কী দেখবে আর কী দেখবে না, সেটার ওপর সরকারী নিয়ন্ত্রণের আর কোনো উদাহরণ তো পাচ্ছি না। আপনার কাছে আছে?

মিডিয়ার উপর যেকোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞাও ঐ একই কাতারে পড়ে, মানুষ যা দেখতে চায় তা আইন করে বন্ধ করা যায় কিন্তু সেটা কাগজে কলমেই থাকবে, যেমন পর্নোগ্রাফি আইনের ক্ষেত্রে হয়েছে|

প্রতিযোগিতা হয় সমানে সমানে। রহমতগঞ্জের সাথে বার্সেলোনার প্রতিযোগিতা হয় না, তাই না?আপনি মুক্তি আকাশের নামে নাচতে নাচতে নিজের দেশের আকাশ উন্মুক্ত করে দিতে এতো উদগ্রীব কেন? আমাদের কি ঠ্যাকা পড়েছে ভারতের বালছাল সিরিয়ালওয়ালা চ্যানেলের সাথে প্রতিযোগিতা করার? বিটিভি তো বিনা প্রতিযোগিতায় কাজ করতো, বিনোদনের অভাব ছিলো নাকি তখন?

প্রতিযোগিতা সমানে সমানে হলেও যখন মেধা ও সুযোগের অভাব কোনদিকেই নেই তখন প্রতিযোগিতায় উন্নতি করা বা টিকতে না পারাটা কার দোষ??

রহমতগঞ্জের সাথে বার্সেলোনার প্রতিযোগিতা হয় না, তাই না?

না হয়না, কিন্তু ভারতীয় মিডিয়ার যে চ্যানেলগুলোর কথা হচ্ছে তারাও বার্সেলোনা নয় একই ভাবে আমাদের দেশের মিডিয়াও রহমতগঞ্জ নয়, যদিও রহমতগঞ্জের খেলোয়াড়দের প্রতি আমার কোনো বিদ্বেষ নেই|

আপনি মুক্তি আকাশের নামে নাচতে নাচতে নিজের দেশের আকাশ উন্মুক্ত করে দিতে এতো উদগ্রীব কেন? আমাদের কি ঠ্যাকা পড়েছে ভারতের বালছাল সিরিয়ালওয়ালা চ্যানেলের সাথে প্রতিযোগিতা করার?

তর্ক সংযত ভাষায় করলে তর্কের প্রভাব বাড়ে, কিন্তু অহেতুক আক্রমনাত্মক ভাষার প্রয়োগ তর্কের গুরুত্ব কমিয়ে দেয় বলে মনে করি| আর মুক্ত আকাশের নামে আমি না নাচলেও, পৃথিবীর আর কোন কোন দেশে আমাদের বাংলাদেশের কোন কোন চ্যানেল প্রদর্শিত হয় তা জানালে খুশি হবো, আর জার্মানিতে বাংলাদেশের কোন কোন চ্যানেল সম্প্রচারিত হয় তা জানলে ভালো লাগতো|
নাহ আমাদের কোনো ঠেকা পড়ে নাই ভারতের "বালছাল" চ্যানেলের সাথে প্রতিযোগিতা করার, কিন্তু আমাদের এতটাও উন্নতি হয়নি আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্টের বা ইউরোপের চ্যানেলগুলোর সাথে কাছা বেঁধে লড়তে নামবো| আর তাই যদি অন্তত দক্ষিন এশিয়াতে প্রতিযোগিতায় আমাদের দেশের কোনো উন্নতি হয় তাহলে তাতে ভালো বই ক্ষতি নেই|

ভারতে বিদেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে ভাসানো কী কী বিদেশী চ্যানেল দেখেন, পাঁচটার নাম বলেন তো দেখি, মুক্ত আকাশ আর প্রতিযোগিতার অবস্থা ঐদিকে কীরকম।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভারত নিজেই এই সমস্যায় জর্জরিত, তাদের দেশের সামগ্রীর নামে যেসব জিনিসের বিজ্ঞাপন আসে তার অধিকাংশই দেশের নয়, আর যেগুলো দেশের সেগুলোর নামও অনেক মানুষ জানেনা| তাই একভাবে বলতে গেলে সবগুলো চ্যানেলই বাইরের জিনিসের রকমারি বিজ্ঞাপনে ভাসানো|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

হিমু এর ছবি

ধরলাম, মেধা আর সুযোগ নিয়েও পিছিয়ে পড়াটা আমাদেরই দোষ। তো? সেজন্য আমাদের সবকিছু বাইরের কাছে উদাম করে দিতে হবে?

ভারতের যে চ্যানেলগুলোর কথা হচ্ছে, তারা বিশাল পুঁজি নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিপরীতে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোর পুঁজি অনেক কম। এই কথা আপনি না বুঝলে কার সাধ্য আপনাকে বোঝায়?

পৃথিবীর অন্য দেশে বাংলাদেশের চ্যানেল সম্প্রচারিত না হলে কি জাত যাবে নাকি?

একবার বলেন প্রতিযোগিতার কথা, আবার বলেন আমরা প্রতিযোগিতা করার মতো উন্নতও হই নাই। প্রতিযোগিতার ব্যাপারটা পুঁজির ওপর নির্ভরশীল, ভারতীয় চ্যানেলগুলোর পুঁজি ইয়োরোপ বা উত্তর আমেরিকার অনেক চ্যানেলের পুঁজির সমতুল্যই মনে করি। আর তাদের বাজার ইয়োরোপের কিছু কিছু চ্যানেলের বাজারের চেয়ে বহুগুণ বড়।

ঐ বাইরের রকমারি জিনিসগুলোর চাহিদা আর সরবরাহ ভারতে কেমন?

অরফিয়াস এর ছবি

@ হিমু , আমি সবই বুঝছি, আপনি কি বলতে চাচ্ছেন সেটাও বুঝছি, কিন্তু যেটা বাস্তবে পরিণত হবেনা সেটা নিয়ে যদি তর্ক না করে যেটা বাস্তব করা সম্ভব সেটা নিয়ে লড়লে মনে হয় ভালো হয়, তাই বলেছি প্রতিযোগিতার কথা আর কিছুনা| ভারত কেন দেশে যদি টিভিও বন্ধ হয়ে যায় আমার কোনো ফারাক পরেনা কারণ আমি নিয়মিত দর্শকই নই, কিন্তু যাদের ফারাক পরবে তারা মানবে না|

আর আমি বলেছি পাশ্চাত্যের দেশগুলোর তুলনায় উন্নতির কথা, ভারতের সাথে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে বলেই মনে করি| শুধু মনে করিনা, বিশ্বাস করি|

পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে আমাদের চ্যানেল সম্প্রচার না হলে জাতে ওঠা ঠিকই যাবে কিন্তু তাতে যাবেনা উন্নতিই করা|

আর বাইরের জিনিস দিয়েই ভারত চলে, ভারতের বাইরে চকমকে ভেতর ফাঁকা| আমি ৫ বছর ধরে আছি, ঘুরেছি বহু জায়গায়, দেখিছি মানুষ, ভারত আমাদের মতই শুধুমাত্র আয়তনে বড়|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

হিমু এর ছবি

এইটা তো বিস্কুট দৌড় প্রতিযোগিতা না। এই প্রতিযোগিতা পুঁজিতে। আমাদের চ্যানেলগুলোতে বড় পুঁজি খাটে না। আপনি স্পিডবোটের সাথে কলাগাছ নিয়ে প্রতিযোগিতা করে যাওয়ার জন্য বলে যাচ্ছেন।

লড়াই করার কথা বলছেন, খুব ভালো। তো লড়াইয়ের ময়দান দুই পক্ষের জন্যে কি একরকম? ভারতীয় চ্যানেলের বাজার = ভারতের বাজার + মধ্যপ্রাচ্যের বাজার + দক্ষিণ এশিয়ার বাজার + দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বাজার। বাংলাদেশের চ্যানেল তো বাংলাদেশের বাজারই নিতে পারছে না ভারতীয় চ্যানেলের সাথে। চ্যানেলগুলোর আয় তো আসে বিজ্ঞাপন থেকে। বিশাল বাজারের কারণে ভারতীয় চ্যানেল একটা বিজ্ঞাপন দেখিয়ে যে আয় করতে পারবে, বাংলাদেশের চ্যানেলকে সে আয় করতে গেলে সারাদিন বিজ্ঞাপনই দেখাতে হবে। বিজ্ঞাপনের দর বাড়লে বিজ্ঞাপন কমিয়ে ভালো অনুষ্ঠান নির্মাণে কিছু টাকা খরচ করতে পারতো তারা। কিন্তু সেটা বাড়ার সুযোগও আপনি দিতে রাজি না, কারণ আপনি প্রতিযোগিতার খাতিরে বাংলাদেশে ভারতকে বাংলাদেশের সমান সুযোগ দিতে বেয়াকুল। লড়াই করতে শুধু বারুদ বন্দুকই লাগে না, চিড়া গুড়ও লাগে।

নিজের দেশের চ্যানেলের জন্যে বাজার সংরক্ষণের নীতিতে কাপুরুষতার কিছু নাই। আপনি আমি বড় হয়েছি বহু কিসিমের সংরক্ষণের সুবিধা পেয়েই, কিন্তু তাল পাইনি। এখন নিজের তাঁবুতে উট ঢুকিয়ে বলছি, তাঁবুতে থাকতে গেলে প্রতিযোগিতায় টিকতে হবে। হাস্যকর না?

ভারত বাইরের জিনিস দিয়ে চলে, আর নিজেদের জিনিস আমাদের ঘাড়ে চাপায়। ভারত শুধু আয়তনেই বড় না, বুদ্ধিতেও বড়।

উপরে একটা ছবি দিয়েছি, ঐটা আবার দেইখেন। ভারত তার পণ্যের ভাষা আমাদের শেখায় বালছাল বিনোদন দেখিয়ে। এখন সেই বিনোদনের মাপে নিজেদের জুতা তৈরি করা শুরু করে দিয়েছি আমরা। একেই বলে নিঃস্বার্থ ব্লোজব।

অরফিয়াস এর ছবি

একেই বলে নিঃস্বার্থ ব্লোজব।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সহমত, যাই হোক মতামতের অমিল থাকতেই পারে, তবে মূল লক্ষ্য যদি দেশের উন্নতি হয় তাহলে যেকোনো পন্থা নিতে সমস্যা নেই|

ছবি দেখেছি, মানুষের মতো দেখতে হলেই তো আর মানুষ হয়না, কিছু গরু-ছাগলও থাকে, আর হিন্দি বলাটা আর চিবিয়ে বাংলা বলাটা যদি স্মার্টনেস হয় তাহলে কিছু বলার রইলো না|

হমম, দেখা যাক, আপাতত একটা প্রতিবাদের ঢেউ উঠছে, কিন্তু সেটার রেশ শুধু ঐ বর্জন দিয়ে থেমে গেলেই চলবেনা, আশা করি সেটাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে|

ভালো থাকুন|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আরেকটা হিন্দি শিক্ষা বিজ্ঞাপন দেখেনঃ

ঢাবিতে বিশ্ব হিন্দি দিবস উদযাপন (২০১১)

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, "বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। একাত্তরে দুইদেশের সৈন্যদের রক্ত একই সঙ্গে প্রবাহিত হয়েছিল।"

বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে উল্লেখ করে বিশেষ অতিথি ভারতীয় হাইকমিশনার রাজীত মিত্র বলেন, "দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ যোগাযোগ আরো বাড়ছে। হিন্দি ভাষার প্রসারে দু'দেশের মানুষে-মানুষে যোগাযোগ আরো বাড়বে। হিন্দি চলচ্চিত্র ও গানের কল্যাণে বাংলাদেশে হিন্দি ভাষা অনেক জনপ্রিয়।"

হিন্দির সঙ্গে বাংলা ভাষার অনেক মিল রয়েছে: ঢাবি ভিসি (২০১২)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক, মায়ের কাছ থেকেই আমাদের ভাষা শিক্ষা শুরু হয়। হিন্দির সঙ্গে বাংলা ভাষার অনেক মিল রয়েছে। হিন্দি ভাষা বাংলা ভাষার মতো বলে হিন্দি বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না।

ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে উপাচার্য বলেন, আন্তর্জাতিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি জানার জন্য আমাদেরকে একাধিক ভাষায় পারদর্শী হতে হবে। আজকের এই দিনে যে লোক বেশি ভাষা জানে, সে তত বেশি এগিয়ে যায়। হিন্দি ভাষা শেখার মাধ্যমে দুই দেশের সর্ম্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের হিন্দি শর্ট কোর্সের ৬ষ্ঠ ব্যাচের সার্টিফিকেট বিতরণ এবং বিশ্ব হিন্দি দিবস-২০১২ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বিশ্ব হিন্দি দিবস - জীবনে শুনছেন?

অরফিয়াস এর ছবি

ইহা কি দেখালেইন??? !!!! ধুর, সব গেছে, এখন দেখতেছি বর্জনই একমাত্র পন্থা...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক
চ্যানেলের নাম ইস্টার্ণ জলসা নয়, স্টার জলসা যার জন্য আমার মা শাশুড়ি সবাই পাগল। বউ অবশ্য বাংলা দেখেনা, সে দেখে হিন্দি।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ। একটি বিভ্রাট ঘটেছে বটে।

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

মিডিয়ার উন্নতি ঘটানোর জন্য আমার মনে হয় সবার আগে আমাদের নাটকের দিকে মন দেয়া উচিৎ। সচলে কিন্তু আমরা অন্যান্য সাহিত্যের পাশে পাশে মাঝে মাঝে নাটক অথবা নাটকের উপযোগী গল্প লেখার চেষ্টা করতে পারি। মৌলিক স্ক্রিপ্ট এর খুবই আকাল এখন আমাদের মিডিয়াতে।

হিমু এর ছবি

আপনি মৌলিক স্ক্রিপ্ট দিয়ে ভাসায় ফেললেও লাভ নাই। হাগামুতার চাহিদা তৈরি হয়ে গেলে হাগামুতাই চালাতে হয়। নির্মাতাদের দোষ দিয়েও লাভ নাই, চ্যানেলগুলিই স্থির করে কী জিনিস চলবে আর কী চলবে না। তারা যদি হাগামুতা চালাতে বেয়াকুল থাকে, তাহলে ঐভাবেই চলবে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ভাল স্ক্রিপ্টের আকালতো বটেই। তবে আমি যেটা বলতে চাই, ভারতীয় চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান কী খুবই মান সম্পন্ন! আসলে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপন প্রচারের আধিক্যই দর্শকদের বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। দর্শকেরা বিকল্প খুঁজতে গিয়ে ভারতীয় সিরিয়ালের চক্রে আটকে পড়ে।

সপ্নবিভা এর ছবি

@প্রৌঢ় ভাবনা
বিজ্ঞাপন প্রচার এর ক্ষেত্রে কিন্তু ভারতীয় চ্যানেল গুলো কিন্তু আমাদের চ্যানেল গুলোর থেকে কোনদিক থেকে কম যায় না। আমাদের দেশের টিভি চ্যানেল গুলোর বিজ্ঞাপন এর মাঝে মাঝে অনুষ্ঠান বিরতির ধারনাটা কিন্তু ওদের থেকেই পাওয়া। সিরিয়াল এর চক্রে আটকে পড়ার জন্য বিজ্ঞাপন এর ভুমিকা কিছুটা থাকলেও ব্যাপারটা মুখ্য কোন ভুমিকা রাখে না। ভারতীয় সিরিয়াল বন্ধ করে দিন, দেখবেন এরা বাংলাদেশি সিরিয়াল এ আটকে গেছে। সমস্যাটা শুধু বাংলাদেশ এ নয়। উন্নত দেশ গুলোতেও বাড়িতে বসে থাকা মহিলাদের মধ্যে সিরিয়াল দেখার প্রবনতাটা বেশি।

প্রতিযোগিতায় নামার মত প্রস্তুতি না থাকলে, শুধু শুধু প্রতিযোগিতায় নামার কোন অর্থ থাকে না। অন্তত যেখানে জাতীয় সার্থ জড়িত। ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ করে আমরা অন্তত নিজেদের চ্যানেলগুলোকে বিশ্বের বাজারে ( নিদেনপক্ষে জাতীয় বাজারে ) ব্যবসা করার মত প্রস্তুত হয়ে ওঠার সময় দিতে পারি।

দুর্দান্ত এর ছবি

একটা বিষয় পরিস্কার করা দরকার।

১ মারচ ভারতীয় সামগ্রী বরজন কি একদিনের প্রতিবাদ নাকি একটি লম্বাদোঊড়এর আন্দোলন?

একদিনের প্রতিবাদ সজহতর।

লম্বা দোঊড়এ ভারত বররজনের আগে কিছু সামাজিক কাঠামোগত পরিবররতন দরকার হতে। রমজান ও কোরবানিতে ভারতীয় চিনি-ছোলা-পিঁয়াজ-গরুর কথাই ধরলাম। বলিউড-সিরিয়াল-মিরাক্কেলের কথা এসেছে। বুঝাই যাচ্ছে পাবলিক দেশী বেগুনীর রমজান, মুরগির মানংসের কোরবানি আর ফারুকী-মিলার মধ্য়ে ইন্ডিয়ান ঝাঁঝ পাচ্ছে না, পেলে তো তারা সেটা নিতো।

মনিপুরের পাবলিক বলিউড বরজন করেছিল। বলিউডের ফাঁক দখল করে নিয়েছে কোরিয়ান ফিল্ম। কোরিয়ার বাইরে আমেরিকার পরে এখন কোরিয়ান ফিল্মের একটা বড় বাজার মনিপুর।

লম্বা দোঊড়এ কোরিয়ান-বলিউডের মধ্য়ে কোনটা মনিপুরীদের জন্য় বেশী খারাপ, সেটা আমার জানা নেই। তবে এখানে আমাদের শিক্ষনীয় হল দেশের পাবলিক একটা 'ঝাঁঝ' এ অভ্য়্স্ত হয়েছে। তার কাছ থেকে ভারতীয় ঝাঁঝ সরিয়ে নিলে যে ফাঁকটা তইরী হবে, সেটা সে অন্য়কিছু দিয়ে পুশিয়ে নেবে। সেই অন্য়কিছু যদি দেশের ভতরে না থাকে, তাহলে সেটা বিদেশ থেকেই আসবে। আমাদের দেশে চীনা সামগ্রীর প্রচলন থাকলেও, চীনা সনংস্ক্রিতির বিস্তারের সম্ভাবনা আমার কাছে সীমিত মনে হয়।

এইসব জায়গায় দ্ররিক-দেশাল ধরনের (এগুলো আমার পছন্দ, বিমত স্বআগতম)নতুনপ্রজন্মের কাছে গ্রহনযোগ্য় বানংলাদেশী ভাবমূররতির প্রচার সনগঠনের সন্খ্য়া ও ব্য়াপ্তি অতি দ্রুত বাড়আনো দরকার। ভারতের ভেতরেই করনাটক ও তামিলনাডুতে বলিউড/হিন্দী প্রতিহত করার নজির আছে। তারা কাঁটা দিয়ে কাটা তুলেছে, আমাদের পথ ভিন্ন হতে বাধা নেই।

নিজস্ব ভিত পাকাপোক্ত না করতে পারলে কিন্ত মা-খালাদের দুপুর কাটানোর জন্য় অবশিষ্ট থাকে হিজাব ও তজবী। খিয়াল কইরা।

হিমু এর ছবি

হিজাব-তজবী আর বলিউড-স্টারজলসা মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ না কিন্তু। ধর্ম-জিরাফ দুই নাওয়ে পাড়া দেয়া ভাবী-খালাম্মাদের সংখ্যা নেহায়েত কম না।

দুর্দান্ত এর ছবি

সেটাই তো বলছিলাম। 'ভারত বরজন' এর ফলাফল হিসাবে এই ওভারল্য়াপের ভেতরের বাঘিনীদের কাছে শুধু হিজাবের পড়এ রইবে। মালয়শিয়ার কিছু রাষ্ট্রে যেমন ঘটেছে।

হিমু এর ছবি

এভাবে চিন্তা করে দেখি। ধরলাম ঘর থেকে বের হয় না এমন লোকের বিনোদন যোগাতে হবে আমাদের। লোকে দিনে ঘুমায় আট ঘন্টা। খায় হাগে গোসল করে তিন ঘন্টা। সামাজিক যোগাযোগ দুই ঘন্টা। লোডশেডিং থাকে দুই ঘন্টা। বাকি থাকে নয় ঘন্টা। এই নয় ঘন্টাই যদি সে টিভি দেখে বরবাদ করে, তাহলে দিনে চারটা সিরিয়াল আর এটাসেটা দেখাতে হবে। মানে সপ্তাহে আটাশটা সিরিয়াল। মঙ্গলবারের মাল বুধবারে আবার দেখানো হলে ২৫% আউটেজ ধরে একুশটা দিয়ে কাভার করা যাবে। মিনিমাম একুশজন নির্মাতা যদি চ্যানেলগুলোকে সিন্ডিকেশনে রাজি করাতে পারে, তাহলে তারা সারাবছর ধরে তাদের প্রোগ্রাম সব চ্যানেলে রোটেট করে দেখাতে পারবে। এখন একুশজন এরকম নির্মাতা দেশে আছে কি না, আর তারা সিন্ডিকেশনের জন্য চ্যানেলগুলোকে রাজি করাতে পারবে কি না, সেটাই কথা। খবরের কাগজ যদি ভারতীয় প্রোগ্রামগুলোকে প্রোমোট করা বাদ দিয়ে এদেরকে পুরো ফোকাসটা দেয়, তাহলেও এরা জোর পাবে।

অফটপিক: আপনার কীবোর্ডে কী হইছে?

দুর্দান্ত এর ছবি

অফিসের ল্যাপটপ থেইকা টাইপ করতে গেলেই এইসব তেলেসমাতি হয়।
এই দেখ, বাসার ল্যাপটপ থেইকা সব ফকফকা!

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

এই বনধ বা বর্জনের উদ্দেশ্য কিন্তু ভারতীয় টিভি চ্যানেল বা ভারতীয় পণ্য পাকাপোক্ত ভাবে বর্জন নয়। বাস্তবতার নিরিখে সেটা বোধহয় সম্ভবও নয়। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রতীকী কর্মসূচীর মাধ্যমে ভারতীয় সরকার ও জনগণের কাছে সীমান্তে বি, এস, এফ, এর নৃশংসতার চিত্রটি তুলে ধরা। আমাদের পক্ষ থেকে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া। সেক্ষেত্রে একদিনের বর্জনে কাজ হবে বলে মনে হয়না। তবে শুরুটা করা অবশ্যই প্রয়োজন। প্রয়োজনে আবারও একদিন অথবা তিনদিনের বর্জনের ডাক দিতে হবে।
যাহোক, আমাদের আলোচনাটি সম্ভবত এক কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। মূল বিষয়টি উহ্য থেকে যাচ্ছে।

নিটোল এর ছবি

আমার আবিস্কার করেছি আমার আশেপাশের অনেক তরুণ এই আন্দোলনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞ । তারা অবশ্য উঠতে বসতে শালার ইন্ডিয়া বলে গালি হয়ত দেয়, কিন্তু হেডফোনে তখন চলে হিন্দী গান। ক্যামে কী? চিন্তিত

_________________
[খোমাখাতা]

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যটি সম্পর্কে তাদেরকে বিশদে বুঝিয়ে বলুন। তাতেই অনেক কাজ হবে আশা করছি।

উচ্ছলা এর ছবি

নষ্টের গোড়া হল মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তগুলো...এরা এদের বিবেক ইন্ডিয়ান চ্যানেলের কাছে বিক্রী করে দিয়েছে। ইন্ডিয়ান কুৎসিত শাড়ী-গয়নাকে ইন্ডিয়ানরা নয়, এই বাঙ্গালীগুলোই নির্লজ্জভাবে এনডোর্স করে।

আপনার পর্যবেক্ষন শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, মতামতত জানাবার জন্য্য।

অরুন্ধতী ঝিলি এর ছবি

মামাতো ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান, মধ্য থেকে ভোররাত গান চলবে । শুরুটা হল সেই কমন আর উপযোগী গানটা দিয়ে। কুমার বিশ্বজিতের "তোরে পুতুলের মত করে সাজিয়ে... মনটা ভরে উঠলো। ভাবলাম বিরক্তি বিপর্যয় থেকে বুঝি বাচাঁ গেল। তাও অতি আশঙ্খায় একটা অনুরোধ চিরকুট পাঠালাম গায়ককে, শুরুটা ভাল করেছেন দয়া করে হিন্দি গান করবেননা মানুষ এমনিতেই থাকবে.....
ইচ্ছা করেই কিনা কে জানে তার দ্বিতীয় গানটাই ছিল হিন্দি ! নিজের গালে একটা অদৃশ্য চড়ের অনুভুতি নিয়ে ক্লাব ত্যাগ করলাম হাসি
পূজা বিয়ে ঈদ বা অন্যান্য পারিবারিক সামাজিক অনুষ্ঠানে রাতভর আসর মানেই হিন্দিগান । এর পরিত্রান কেমনে সম্ভব কে জানে ?
বিএসএফ এর কর্মকান্ডের প্রতিবাদ অর্থে একদিনের বর্জন ঠিক আছে, এই সুত্রে হিন্দি বা ভারত সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলোও যদি আলোচনায় যুক্ত হয়, কিছুটা হলেও চেতনা বাড়ে সেটায় আশার কথা ।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, শেয়ার করার জন্য।
আমার লেখার একাংশে আমি বিশেষ ভাবে এই উদ্যোগটাকে সফল করার উপর জোর দিয়েছি। এই সফলতা আমাদের আগ্রহ বাড়াতে সহায়ক হবে। একদিনের এই প্রতিকি কর্মসূচীতে তেমন কিছুই অর্জিত হবেনা। শুরু করাটা প্রয়োজন ছিল। আপাতত সেটাই করা যাক। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এভাবেই ধীরে ধীরে জনমত সংগঠিত হবে। তারপর কোন একদিন...।
তাই হতাশ না হয়ে কিভাবে ১ মার্চের কর্মসূচী সফল করা যায় সেটাই ভাবতে হবে।

খালিদ এর ছবি

ভারতীয় পণ্যের চেয়ে টিভি চ্যানেল বর্জন করা কঠিন, এ ব্যাপারে আমি আপনার সাথে একমত। কাজেই এখানে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। সরকারের উচিত ভারতীয় চ্যানেলের অনুপ্রবেশের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা। একটা ব্যাপার আমরা কেন ভুলে যাই যে, আমাদের যেমন ভারতীয় পণ্য/চ্যানেল ছাড়া চলতে সমস্যা হবে, তাদেরও সমস্যা হবে যদি তারা বাংলাদেশের বিশাল মার্কেট হারায়, কিংবা যদি তাদের কাছ থেকে ন্যায্য (বা বেশি) ফি আদায় করা হয়। তাদের পুঁজি পণ্য, চ্যানেল, আর আমাদের পুঁজি বিপুল পরিমাণ ভোক্তা। সরকার যদি কঠোর কিংবা অ্যাট লিস্ট মেরুদণ্ডওয়ালা হয়, তাহলে এ ব্যাপারে অনেক কিছুই করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

আরেকটা ব্যাপার হলো এয়ারটেল। অনেকেই দেখি ফেইসবুক, ব্লগ বিভিন্ন জায়গায় বলছেন, এয়ারটেল সিম ব্যাবহার করা বাদ দিতে (আমি নিজে ব্যাবহার করি না)। কিন্তু আমি এ ব্যাপারে একমত না। ফেইসবুকে এক ফ্রেন্ডের সাথে এ নিয়ে বিতর্কও করেছি। আপনার সামনে যদি কয়েকটা অপশন থাকে, আপনি তো আপনার জন্য সুইটেবল অপশনটাই বেছে নেবেন, তাই না? কাজেই, আপনি যদি মনে করেন এয়ারটেল বাকিগুলোর চেয়ে বেটার, তাহলে কেন সেটা ব্যাবহার করবেন না? কথা হচ্ছে, যদি এই ক্ষেত্রে ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ বা অ্যাট লিস্ট স্লো করতে চান, তাহলে সরকারীভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। এয়ারটেল নামমাত্র মূল্যে ওয়ারিদ কিনে নিয়েছে (ফলে দেশ হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স পায় নাই), নামমাত্র মূল্যে টুজি লাইসেন্স রিনিউ করিয়েছে, নামমাত্র মূল্যে থ্রিজি লাইসেন্স পাবে, আর এসব কিছুই করতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছে আমার আপনার সরকার। এটাকে আমি আমাদের সরকারের ব্যর্থতা আর ভারতীয় ব্যাবসায়ীদের সাফল্য হিসাবেই দেখবো। যাই হোক, এতো কিছুর পরে একজন সাধারণ মানুষকে কোনটা ব্যাবহার করা যাবে বা যাবে না, সেটা বলার অধিকার কারো আছে? আমার তো মনে হয় না।

একই কথা ভারতীয় টিভি চ্যানেলের জন্যও প্রযোজ্য। ভেবে দেখেন, আজ যদি দেশের সব মানুষ ভারতীয় চ্যানেল দেখা বন্ধ করে দেয়, কার লাভ হবে বা কার ক্ষতি হবে? ওরা তো আমাদের দেশে ঢুকেই গিয়েছে। এবার আমরা দেখলেই কী? না দেখলেই কী? যে আয় করার, তা তারা অলরেডি করে ফেলেছে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে। কাজেই, শুধু আমাদের চ্যানেলের মান ভালো করলেই কাজ শেষ না। আমাদের নিজেদের ভালো অনুষ্ঠান বানানোর পাশাপাশি সরকারকে আরো দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

আর হ্যাঁ, ভারতীয় চ্যানেল দেখা যদি বন্ধ করতেই চান, তাহলে কিন্তু এইচবিও, ফক্স মুভি, ইএস্পিএন, টেন স্পোর্টস ইত্যাদি চ্যানেলগুলোও বাদ দেয়া উচিত, কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় এগুলোর ডিলার কিন্তু ভারতের বিভিন্ন কোম্পানিই।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার সাথে সহমত পোষণ করেই বলতে চাই সরকরেরতো অনেক কিছুই করার ছিল। সেগুলো হয়নি বিধায়ইতো এই প্রতীকী কর্মসূচী। ।এই একটা দিনের কর্মসূচীতে আহামরি কছু অর্জন হবে সেটাও কিন্তু নয়। আর দীর্ঘমেয়াদে ভারতীয় পণ্য বর্জন বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে সম্ভব নয়। আমাদের মূল উদ্দেশ্যটা কী ! যেহেতু সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারছিনা তাই জনগণের মধ্যে একটা সচেতনতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা, সেটা কিন্তু স্থায়ী ভাবে ভারতীয় পণ্য বা টিভি চ্যানেল বর্জন নয়। মূল উদ্দেশ্য হল, সীমান্তে বি, এস, এফ, এর নৃশংসতার চিত্রটি উভয় দেশের সরকার এবং ভারতীয় জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং এই বার্তাটি তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যে, এ বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও অপমানিত।
কিন্তু কেন জানি আলোচনাটা মূল বিষয়টিকে ছাপিয়ে ভারতীয় চ্যানেলভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে! এতে কিন্তু মূল বিষয়টি তার গুরুত্ব হারাচ্ছে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
আমি যে কথাটি বলতে চাইছি, অধিকাংশ আলোচনাই ভারতীয় চ্যানেলভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। আমাদের

মূল কথাটি হচ্ছে, ভারতীয় সরকার ও জনগণের কাছে, সীমান্তে বি, এস, এফ, এর নৃশংসতার চিত্রটি তুলে ধরা। তাঁদের কাছে এই বার্তাটি পৌঁছে দেওয়া যে, আমরা এ কারনে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও অপমানিত।

স্থায়ীভাবে ভারতীর পণ্য বর্জন নয়। বর্তমান বস্তবতায় সম্ভবত এটা সম্ভবও নয়। এটা একটা প্রতীকী কর্মসূচী। প্রয়োজনে আবারও এ ধরনের কর্মসূচীর মাধ্যমে ধীরে ধীরে সবাইকে সচেতন করে তোলার প্রচেষ্টা। চ্যানেলভিত্তিক আলোচনার আধিক্যের কারনে মূল বিষয়টি তার গুরুত্ব হারাচ্ছে। সকলকে বিষয়টি ভেবে দেখবার অনুরোধ জানাচ্ছি।

আমার নাম আমি এর ছবি

স্থায়ীভাবে ভারতীর পণ্য বর্জন নয়। বর্তমান বস্তবতায় সম্ভবত এটা সম্ভবও নয়। এটা একটা প্রতীকী কর্মসূচী।

একমত না আমি। এই কর্মসূচী আমার জন্য আর আমার পুরো পরিবারে অন্তত স্থায়ী রূপ পাইছে। আমার নিজের কথা বললে, গত ১০ বছর ধরে ভারতীয় মিডিয়া ই আমার ধ্যানজ্ঞান। বলিউডই ছবি মুক্তির দিনেই না দেখতে পারলে রাতের ঘুম হারাম, হিন্দি ট্যালেন্ট হান্টের আর মিরাক্কেলের আমার থেকে বড় খরিদ্দার ছিল কিনা জানি না!!! বাংলার সাথে হিন্দিটা ও চোস্ত বলতে পারি এসবের কল্যাণে!! অনলাইন পত্রিকাতে বসে সারাদিন বলিউডই বিনোদন খবর আমার থেকে বেশি আর কেউ দেখত কিনা জানি না, আর ইউটিউবে বসে খালি গসিপ আর হিন্দি ক্যাচাল ই আমার ২৪ ঘণ্টার বিনোদন। সেই আমি সব কিছু থেকে দূরে আছি, তাজ্জব বাপার!!! দেশপ্রেম তো মজার জিনিসরে ভাই। কোথায় ১লা মার্চ, আমার দিন গণনা আরো আগেই শুরু হইছে। বলতে পারেন চোখ খুলে গেছে এখন, চিন্তা করেই কূল পাইনা কিসের মধ্যে ডুইবা গেছিলাম!!!
ঘরে বসে থাকা মা বোনদের আর কি কমু!! আমি হইলাম তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত পুরুষ মানুষ, তারই এই দশা!!! যাই হোক, আমি যদি ১০০ হাত দূরে থাকতে পারি, তাইলে সবাই পারবে বলে মনে হই, খালি চোখটা বন্ধ কইরা একটু চিন্তা করলেই হবে।
সবাইরে স্থায়ী আন্দোলনে যোগ দেয়ার নিমন্ত্রণ, দেঁতো হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

@আমি, শুধু ভারতীয় টিভি চ্যানেল বর্জন নয়। নিত্য যেসব ভারতীয় পন্য ব্যবহার করেন তার খবর রাখেন কি? সাজ-পোশাক, খাদ্য সামগ্রী , প্রসাধনী , মনোহারী দ্রব্যাদি , আরও কত কী! স্ত্রী-মা-খালাকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, ভারতীয় পণ্য ছাড়া তাঁদের চলবে কী! যেহেতু আমরা সয়ং সম্পূর্ণ নই তাই বিদেশী পণ্য আমাদের ব্যবহার করতেই হবে। আমদানিকারকগণ এসব ভারত থেকে আমদানিতেই আগ্রহী কারন পরিবহন খরচ ও সময় কম লাগে, সে ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য তুলনামূলক কম হয়।

আমার নাম আমি এর ছবি

মনে করেন যে আগে অতসত না ভাবলেও, ব্লগের নির্মোহ লেখাগুলোর কল্যাণে এখন ভাবতেছি। তবে আমার একান্ত ব্যাক্তিগত মত হইল যে, ভারত একটা বাড়ন্ত অর্থনীতি,
তারা চাইবে বড় বাজার বেড়ে আর বড় হোক, সারাদুনিয়া তাদের সব মাল পকেট ভরে কিনুক। বিশেষ করে যারা সংস্কৃতি-ভাষাতে আত্মীয় পর্যায়ের তারা তো মাথা ভরে কিনুক।
যেমন আমরা সব কিনছি, কি খাদ্য আর কি বাদ্য!!

তবে এটা অন্তত নিশ্চিত যে আজ থেকে ৫ বছর আগেও যে দেশী পণ্যগুলো টিকে ছিল তা আজ আর নাই,
১০ বছর আগে তো আরও অনেক দেশী পণ্য ছিল [রেফারেন্স নাই অভিজ্ঞতা]। মনে পড়ে কারা যেন লিখত যে ভারত কম দামে অনেক কিছু ডাম্প করতেছে, লেখালেখি
চিল্লা-পাল্লা করত, কানে দিই নাই, তবে এখন তারা নিশ্চয়ই আর ডাম্প করতাছে না, কড়াই গণ্ডাই উসুল করতাছে।

আমি মনে করি ভোগের প্রয়োজন মানুষের কখনও কমবে না, আমরা যদি আমাগো জিনিস ই কিনতে চাই তাহলে আমাদের ব্যাবসা ও বাড়বে। ভোগের শূন্য যাইগা কখনও
ফাঁকা থাকেনা, যেমন গত কিছু দিনে প্রচুর বাংলা নাটক দেখে ফেলেছি। খালি একটু পাকা নিয়ত করতি হবে কয়দিন, তাইলে ফাঁকা যাইগা নেওয়ার ব্যাবসায়ীও এসে যাবে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার ভাবনার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে বলতে চাই আপনার কাছের লোকদেরও বিষয়টি বোঝাবার চেষ্টা করেন। একদিন হয়ত আমরাও....।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।