তা সে প্রায় সাড়ে তিন যুগ আগের কথা। সালটা সম্ভবত ১৯৬৮ ইং। তখন আমরা বরিশালে থাকি। তখনকার বরিশাল শহর, ঢিমে তালের জীবনযাত্রার একটি মফস্বল শহরের সমস্ত পরিচিত গুণাগুণ নিয়েই বিদ্যমান। কবি 'জীবনানন্দ দাশ' এর একটি বাড়িও ছিল এই বরিশাল শহরে। শুনেছি এখন না কী ঐ বাড়িটির মালিকানা বদল হয়ে গেছে। জানিনা, বরিশালের কোন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী অথবা সরকারী উদ্যোগে ঐ বাড়িটি সংরক্ষিত রাখা উচিত ছিল কিনা?
তা সে প্রায় সাড়ে তিন যুগ আগের কথা। সালটা সম্ভবত ১৯৬৮ ইং। তখন আমরা বরিশালে থাকি। তখনকার বরিশাল শহর, ঢিমে তালের জীবনযাত্রার একটি মফস্বল শহরের সমস্ত পরিচিত গুণাগুণ নিয়েই বিদ্যমান। কবি 'জীবনানন্দ দাশ' এর একটি বাড়িও ছিল এই বরিশাল শহরে। শুনেছি এখন না কী ঐ বাড়িটির মালিকানা বদল হয়ে গেছে। জানিনা, বরিশালের কোন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী অথবা সরকারী উদ্যোগে ঐ বাড়িটি সংরক্ষিত রাখা উচিত ছিল কিনা?
থাক ওসব কথা। ও নিয়ে না হয় বিজ্ঞজনেরাই ভাববেন। আমার মত সাধারনের ও নিয়ে মাথা না ঘামানোই হয়তো ভাল।
ভনিতা ছেড়ে কথায় আসি। বরিশাল শহরে আমাদের বাসা ছিল, কীর্তনখোলা নদীর কাছেই। আমরা যে এলাকায় থাকতাম, সেটার নাম ছিল, 'বেলস পার্ক'। হয়তো কোন ইংরেজ 'বেল' সাহেবের নামেই নামকরন হয়ে থাকবে। সেটা অবশ্য আমার কখনোই জানা হয়ে ওঠেনি।
আব্বা, প্রতিদিন ভোরে নদীর ধারে হাটতে বেরোতেন। আর প্রায়শই ফিরতেন এক টুকরো দড়িতে বাঁধা মাঝারি মাপের চারটে ইলিশ মাছ হাতে করে। কখনোও সখনোও আম্মার কথায় বিব্রত হলে বলতেন, "কি করবো ওরা যে ধরিয়ে দিল। আমাকে দিয়ে বউনি করলে ওদের দিনটা না কী ভাল যায়।"
আমাদের বাসার কাছেই কীর্তনখোলা নদীতে খুব ভোরে জেলেরা ইলিশ মাছ ধরতো। আব্বা হাটতে গিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের মাছ ধরা দেখতেন। আব্বাকে দেখতে পেলে জেলেদের কেউ একজন পাড়ে নৌকা ভিড়িয়ে আব্বার হাতে মাছগুলো গছিয়ে দিতেন। আব্বাকে তারা ঠকাতেন, এ কথা বলবোনা। তখনকারদিনে ঐ চারটে ইলিশ মাছের দাম ছিল মাত্র ১ টাকা।
আমাদের বাসায় তখন ইলিশ মাছের নানা পদের রান্না হতো। সর্ষে ইলিশ, ইলিশ মাছ ভাজি, ইলিশ পোলাও, কাঁচাকলা দিয়ে ইলিশ মাছের তরকারি। আব্বার অফিসের এক আর্দালি ছিলেন, তিনি ভাল রান্নাও জানতেন। তিনি কি কৌশলে জানি মাছটাকে আস্ত রেখেই সব কাঁটা বের করে ফেলতেন। আদাবাটা, পিয়াজবাটা, রসুনবাটা, আরও অন্যান্য কি সব মসলা মিশিয়ে ভাপে বসিয়ে তিনি সেই মাছটিকে রান্না করতেন। খুব স্বাদ হতো।
তখন আমাদের বাসায় ফ্রিজ ছিলনা। বড় বোনেরা দু-একটি মাছ রেখে দিয়ে আধপঁচা কয়ে পরের দিন ইলিশ মাছের ঝুরি রাঁধতেন। ওহ্ সেটা খুব মজা হতো। এই কিছুকাল আগেও, তা প্রায় বছর দশেক তো হবেই, রাতের বেলা বাজার থেকে অবিক্রিত আধপঁচা ইলিশ মাছ কিনে আনতাম ঝুরি রাঁধবার জন্য। এখন, ফরমালিনের ব্যবহার শুরু হওয়ার কারনে আধপঁচা ইলিশ আর পাওয়া যায়না। ইলিশ মাছের ঝুরিও আর খাওয়া হয়না।
হ্যাঁ, বরিশালের কথা বলছিলাম। আমাদের বাসায় তখন ইলিশের এমনই বাড়াবাড়ি, সেটা বোঝাতে না হয় ছোট্ট একটা উপমা দেই।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার অল্প কিছুদিন পর রিলিফ হিসাবে প্রচুর কম্বল এসেছিলো। লোকে বলে সংখ্যাটি ছিল প্রায় সাড়ে সাত কোটি। অর্থাৎ বাংলাদেশের তখনকার জনসংখ্যার সমপরিমান। এ বিষয়টি সম্ভবত আপনাদের অনেকেরই জানা। সে সময় কম্বল কেলেঙ্কারী নিয়ে নানা ধরনের কথাও প্রচলিত ছিল। বঙ্গবন্ধুও প্রশ্ন তুলেছিলেন, 'আমার ভাগের কম্বলডা কই'।
তো, সেই কম্বল কারও কারও বাড়িতে এত অধিক পরিমানে জমা হয়েছিল যে, বলা হতো, কেউ কেউ নাকি কম্বল দিয়ে মশারীও বানিয়েছিলেন।
ইলিশ মাছের বাড়াবাড়িতে আমাদের বাসায়ও প্রায় সেই অবস্থা। পারলে ইলিশ মাছের রুটিও বানানো হতো আরকি।
১ টাকায় চারটে ইলিশ, তাও আবার মাঝারি মাপের! বিশ্বাস হচ্ছেনা বুঝি? মাইরি বলছি, একটুও বাড়িয়ে বলিনি।
মন্তব্য
সবই তো বুঝলাম, বিশ্বাসও করলাম ।
কিন্তু এখন আমি ইলিশ মাছ ভাজা কোথায় পাই কন তো ?
খুব ভাল থাকবেন ।
শুভেচ্ছা ।
পাইলে জায়গায় দাড়ায়ে আওয়াজ দিয়েন
দ্রিমু দ্রিমু ।
মাছ পাঠিয়েছি। ভাগ করে নিন।
ইলিশ পাঠালাম। নিজ প্রচেষ্টায় ভাজি করে নিন।
নেন, ভাজি করছি ।
কিন্তু আমি একা খামু না ।
চলেন সবাই মিলা খাই ।
----------------------------------------------------
ছবিটি এখান থেকে নেওয়া ।
আহারে ইলিশ মাছ
লন। দেইখা খায়েশ মিটান।
[img][/img]
চরম হুতাশ
পাঠাইছিতো!:
[img][/img]
ইলিশ মাছের রুটি খেতে মন চায়!
আমারওতো।
ধন্যবাদ।
বরিশাল । কীর্তনখোলা
এত্ত কম লিখলে ক্যামনে কী? এটা অনুরোধ, বরিশালের গল্প চাই, কথা চাই, বিস্তারিত।
ডাকঘর | ছবিঘর
ব রি শা ল ।
ভাইয়া, 'রি' এর পরিবর্তে 'রী' লাগালে আরও দীর্ঘ হত; আরও বিস্তারিত !
ওহু। ফাঁকি দিলে অইত না মশাই। কথা শুনতে চাই।
ডাকঘর | ছবিঘর
ইলিশের নাম শুনে পানি চলে এলো
...........................
Every Picture Tells a Story
দেশে থাকলে বলতাম, পানিটা বালতিতে ধরে রাখেন। একটু পরেই পানি চলে যাবে।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।
পুরাই শায়েস্তা খাঁর আমল মনে হচ্ছে !
facebook
আমারো তাই মনে হচ্ছিলো।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
সময়টা খেয়াল করেন। ৪৪ বছর আগে। দেশে তখন মাছের এত আকাল ছিলনা। বিদেশে ইলিশ রপ্তানিও হতোনা। আর জনসংখ্যা, সেটাও বিবেচ্য।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।
নোনা ইলিশ করা হতো না ? মাটির পাত্রে লবণ দিয়ে রাখা হতো ইলিশ। আমি শায়েস্তা খাঁর আমলটা পাইনি, কিন্তু যেটা পেয়েছি সেটাই এখন রূপকথা মনে হয়
নোনা ইলিশ, আমাদের বাসায় করা হতোনা বটে, তবে প্রতি বছর বড় একটা মাটির পাত্র ভর্তি নোনা ইলিশ বাড়িতে আসতো।
বিষয়টা আমার আব্বার সাথে মিলে যাচ্ছে; প্রায়ই অনেক বেশী মাছ নিয়ে ঘরে ঢুকেন আব্বা, এখনো। আর আম্মা প্রশ্ন করলেই উত্তর রেডি, কি করব ওরা ধরিয়ে দিল। কিন্তু আজকাল মাছ বিক্রেতারা শুধু ধরিয়ে দেয় না, অনেক বড় বড় নোট রেখেও দেয়।
বঙ্গবন্ধুর এই উক্তিটির কথা ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি; তবে এ কথার অর্থ বিকৃত করা হয়; আসলে বঙ্গবন্ধু রিলিফের মাল নিয়ে ব্যাপক দূর্নীতিতে ক্ষুদ্ধ হয়ে, এ কথা বলেছিলেন; অনেকটা আয়রনিকাল অর্থে।
মাছের রুটি খায়নি এখন অব্দি; খাইতে মঞ্চায়!!! আহা কি দিন ছিল তখন! আর এখন সবকিছুর সাথে ইলিশেরও আকাল!
এবং আপনার আব্বার, অনেক বড় বড় নোট দেবার সক্ষমতাও আছে বৈকি।
তখন বাংলাদেশ রেডক্রসের চেয়ারম্যান ছিলেন, গাজী গোলাম মোস্তফা। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক স্বজনপ্রিয়তার প্রশ্নও তখন উঠেছিল।
ধন্যবাদ। ভাল থাকুন। লিখতে থাকুন।
জিভে জল এসে যাচ্ছে। বরিশালের ইলিশ খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে, ইলিশের আকার একটু ছোট মনে হয়েছিল।
না, আবারো জিভে জল এসে গেল।
সোনার আংটি আবার বাঁকা! ইলিশ মাছের আবার ছোটবড় কি ?
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।
ইলিশের প্রাচুর্য্য নিয়ে বলা আপ্নার রসাল কাহিনী পড়তেই আমাদের সশার বাম্পার ফলনের কাহিনী মনে পড়ে গেল। আমি তখন সপ্তম শ্রেণীতে। আম্মুর মাচা মুচা, বাড়ির দেয়াল, চিপা চুপা সব সশা দিয়ে সয়লাব হয়ে গেল সেবার। নিজেরা খেয়ে, প্রতিবেশীদের দিয়েও ফুরায় না। সালাদ, তরকারীসহ আরও যত উপায়ে সম্ভব, আমরা সশা গিলতে লাগ্লাম দিন রাত। একদিন সকালে দেখি ছোট বোনটা চায়ে ভিজিয়ে সশা খাচ্ছে
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
যাহ্! সাতমাথার গুল!
আদেখলা না। 'শসা' বানানটা ঠিক করে নিন।
এখন তো বানান আর ঠিক করা যাচ্ছেনা
আপ্নি কেম্নে বুঝলেন আমি গুল মারছি? আপ্নি কি গুল-বিশেষজ্ঞ নাকি?
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
১ টাকায় চারটে ইলিশ হয়তো খাইনি; কিন্তু এই আমি নিজেই ২৫০ / ৩০০ টাকা জোড়া ইলিশ কিনেছি কতো। সেগুলোর সাইজও ছিল তেমন। আর এখন কতদিন যে ইলিশ কিনিনা। যখন মনে হয় যে এই পিচ্চি ইলিশটা, যেটা বড়জোর ৬/৭ টুকরো করা যাবে সেটা ৭০০ টাকা দিয়ে কেনা মানে একেক টুকরো ১০০ অথবা আরো বেশি; তখন আর কেনা হয়না।
গুণীজনের কথা, 'খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন, ভাতের বদলে আলু খান'। ইলিশের বদলে সিলভার কার্প খান।
বাংলাদেশের এক শ্রেণীর কাছে সম্পদ এতই কুক্ষিগত হয়েছে যে, তাঁরা বাজারে গেলে কোন কিছুর দাম জিজ্ঞাসা করেন না। শুধু বলেন, গাড়িতে পৌঁছায়ে দে। অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
ধন্যবাদ, শেয়ার করবার জন্য।
আহা! ইলিশ মাছ!
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আহা! ইলিশ মাছ! আপনার দেওয়া ইমো দিয়েই মন ভরাই।
ধন্যবাদ।
১৯৬৮ সালের কথা লিখলেন, এতদিন আগের কথা মনে রাখলেন কিভাবে?
১ টাকায় চারটে ইলিশ????
বিশ্বাস হতে চায় না তো, এইতো সেদিন অষ্টব্যান্জন এ ইলিশ খেলাম, এক টুকরা ইলিশের দাম নিল ২০০ টাকা!!!!!!
আহারে, কি দিন ছিল সেইসব, আর যদি ২০ টা বছর আগে জন্ম নিতাম।
বয়স হোক, দেখবেন তখন আর নিকট অতীতের কথা খুব একটা মনে পড়বেনা। সেই কৈশোর অথবা উঠতি যৌবনের বিভিন্ন স্মৃতিই ঘুরেফিরে মনের মধ্যে উঁকি দিবে। আহা, একটা টাইম মেশিন যদি যোগাড় করতে পারতাম!
আহা, কৈশোর! কোন দায়িত্ব থাকেনা। আসলে দায়িত্ববোধই জন্মেনা।
তখনতো আর 'অষ্টব্যাঞ্জন' ছিলনা আর লোকের পকেটে এত টাকাও ছিলনা।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।
আহারে ইলিশ!
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
প্রিয় সবুজ পাহাড়ের রাজা, আপনি স্বাক্ষরের জায়গায় সচলায়তন ডট টিকে নামে একটি সাইটের লিঙ্ক দিয়েছেন। সচলায়তনের নাম ব্যবহার করে আরেকটি সাইট খুলে প্রথমত আপনি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছেন, দ্বিতীয়ত এর বিজ্ঞাপনও সচলায়তনে করে যাচ্ছেন। অনতিবিলম্বে এই সাইটটির বিজ্ঞাপন আপনার স্বাক্ষর থেকে সরানোর অনুরোধ জানানো হচ্ছে। অন্যথায় আপনার মন্তব্য অপ্রকাশিত থেকে যাবে। ধন্যবাদ।
মডু ভাই, আমি তো স্বাক্ষরের জায়গায় আমার চারপাশ ডট কম দেখছি।
হ আমিও তাই
নতুন মন্তব্য করুন