সম্পাদনা : আজ ২০১৩ ইং সালের ৭ মার্চ। আমার এই লেখাটি ১৯৭১ ইং সালের ৭ মার্চ উপলক্ষে। তাই শিরোনামে 'একাত্তরের' শব্দটি জুড়ে দিলাম।
১৯৭১ সালের এই সময়টাতে আমরা যারা তখন যুবক-যুবতী, তাদের অধিকাংশেরই তখন একমাত্র ভাবনা, কিভাবে পাঞ্জাবীদের কবল থেকে আমরা মুক্ত হবো ?
তখন আমরা খেলাধুলার কথা ভুলে গিয়েছি, গান শোনা, সিনেমা দেখা তাও। মায় প্রেমিক-প্রেমিকারা প্রেম করাও ভুলে গিয়েছিলো। সবার মাঝে একটাই মাত্র চিন্তা, মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ।
৭১ সালের ৭ই মার্চ আমি ঢাকাতেই ছিলাম। ঐ দিন রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেবার কথা। সকাল থেকেই দলে দলে মানুষ চলেছে রমনা রেসকোর্সের দিকে। ঢাকার বাইরে থেকেও বাসে-ট্রাকে করে প্রচুর লোক আসছে। সবার গন্তব্য, রমনা রেসকোর্সের ময়দান।
আমিও সকাল সকাল রমনা রেসকোর্সের পথ ধরলাম। নানা ধরনের শ্লোগান দিতে দিতে মানুষ সভাস্থলের দিকে যাচ্ছে।
সভাস্থলে পৌঁছে, বিশাল জনসমাবেশ দেখে মনের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো যা আজ আর ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা।
কখনো পারিওনি।
বাংলার মানুষ সবাই তখন এই দিনটিরই অপেক্ষাতে ছিল। বঙ্গবন্ধু ৩রা মার্চ পন্টনের সমাবেশে বলেছিলেন, ৬ই মার্চের মধ্যে যদি সরকার তার অবস্থান পরিবর্তন না করে তাহলে ৭ই মার্চ, রমনা রেসকোর্স ময়দানে তিনি কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
যত সময় যেতে থাকলো, ময়দানে মানুষের উপস্থিতিও বাড়তে থাকলো। এক পর্যায়ে মঞ্চে, তখনকার চার খলিফা, নূরে আলম সিদ্দিকী, সাজাহান সিরাজ, আ,স,ম, আব্দুর রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখনকে দেখা গেল। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিয়ে সভাস্থল সরগরম রাখছিলেন।
বঙ্গবন্ধু একটু দেরিতেই বেলা প্রায় সোয়া তিনটার দিকে মঞ্চে আবির্ভূত হলেন। তাঁর সঙ্গে মহীউদ্দিন, বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক দেহরক্ষী।
বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে সমস্ত রেসকোর্স ময়দানে যেন প্রচন্ড এক জোয়ার বয়ে গেল।
শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ, ''ভায়েরা আমার, আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি___।'' আমি একমনে ভাষণ শুনছি আর অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি সেই কাঙ্খিত বাক্যটি শোনার জন্য। তারপর এক সময়ে বঙ্গবন্ধু বললেন " রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।" তারপর তিনি অল্পক্ষণ অপেক্ষা করলেন। তারপর সেই মাহেন্দ্রক্ষণে আসলো সেই ঘোষণা, " এ বারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।" মুহুর্মুহু জয়বাংলা শ্লোগানে রেসকোর্স ময়দান তখন প্রকম্পিত।
আমি অভিভুত। তখনকার সেই অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই। জানিনা কারও জানা আছে কিনা।
বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের সেই ভাষণ, সমগ্র জাতিকে প্রচন্ড ভাবে উজ্জীবিত করেছিলো।
এক ধরনের উদ্দীপনা নিয়ে আমিও ধীরে ধীরে বাড়ির পথ ধরলাম।
মন্তব্য
চমৎকার। আপনাকে আমাদের মধ্যে পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি।
..................................................................
#Banshibir.
ধন্যবাদ। আমি যে বিব্রতবোধ করছি ! এটা আমাদের প্রজন্মের সৌভাগ্য বলতে পারেন।
জয় বাংলা
তখনকার সময়ে 'জয় বাংলা' শ্লোগানটি দল, মত, শ্রেণী, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ সব কিছুর ঊর্দ্ধে সকলের প্রিয় একটি শ্লোগান হিসাবেই পরিগণিত ছিল।
শুনে ভালো লাগলো যে আপনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে আনার একটা লেখা আছে এখানে http://www.sachalayatan.com/mustafiz/29364
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনার লেখাটি পড়ে স্মৃতিমেদুরতায় আক্রান্ত হলাম।
ভাষণটির বিষয়ে যে কথাটা উঠেছে, আমার স্মৃতি থেকে বলবো, ভাষণ চলা কালে কেউ কেউ তাঁর হাতে চিরকুট ধরিয়ে দিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই তাঁকে প্রয়োজনীয় কোন বিষয় অবহিত করবার জন্যই। আর মাথার উপর দিয়ে প্রায় সর্বক্ষণই হেলিকপ্টার উড়ে বেড়াচ্ছিল।
যাইহোক, ভাষণটার কোন অংশ লিখিত হলেও হতে পারে তবে পুরোটা নয়, অনুমান করতে পারি।
অসাধারণ!
সেই সময় নিয়ে আরো অনেক বিস্তারিত লেখা চাই আপনার কাছ থেকে।
ধন্যবাদ, পড়বার জন্য, মন্তব্যের জন্যও।
সে সময়কার অনেক কিছুই ভুলে যেতে চাই।
এই একই কথা আমার এক মন্তব্যের জবাবেও বলেছেন আপনি। হয়ত আপনার অনেক অভিমান রয়েছে! কিন্তু নতুন প্রজন্মকে সে সময়কার কথা ভুলিয়ে দেয়ার কি আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়েছে গত চল্লিশ বছর ধরে! আমরা আমাদের শৈশব-কৈশোর অতিক্রম করেছি বাঙালির এই মুক্তির সনদের কোন প্রকার মিডিয়া উপস্থিতি ছাড়াই। তাই প্রৌঢ়দা, আপনাকে অনুরোধ করছি, অভিমান ভুলুন; আপনার ভুলে গেলে যে একাত্তরের পরাজিত শক্তি তাদের 'স্বাধীনতার ইতিহাস ভোলানোর কাজ' খুব নির্বিঘ্নে করে যেতে থাকবে!
এই যে শেয়ার করলুম, আজকের লেখাটি।
যেগুলো কষ্টের সেগুলো ভুলে থাকতে চাই।
ভাল লাগল ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ধন্যবাদ।
আপনি সৌভাগ্যবান!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ।
সে এক সময় ছিল বটে। প্রতিটা দিন চরম উত্তেজনায় ঠাসা।
ধন্যবাদ।
কিছুই বলার মতো নেই।
জয় বাঙলা।
ডাকঘর | ছবিঘর
'জয় বাংলা'।
শ্রদ্ধা জানাই,
ধন্যবাদ।
আপনি সৌভাগ্যবান।
সেই সময়ের গল্পগুলো আরও বিস্তারিত বলুন পরবর্তী প্রজন্মকে। স্বাধীনতার পরের সময় নিয়েও লিখুন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ। সৌভাগ্যবানতো বটেই।
আপনার মতো গুছিয়ে লিখতে পারলে অবশ্যই লিখতুম। তারপরও চেষ্টা থাকবে।
ধন্যবাদ সিনিয়র। আপনার কাছে থেকে এরকম আরও চোখে দেখা ইতিহাস জানতে চাই। মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন একজন যুবকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাগুলো জানতে চাই।
আপনি কি মহীউদ্দিন মানে পরবর্তীতে বাকশাল সভাপতি মহীউদ্দিন আহমদের, আমাদের শ্রদ্ধেয় পান্না চাচার কথা বলছেন?
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ। সেই সব দিনের আবেগ-উত্তেজনা ফুটিয়ে তুলবার মতো কলমের জোরতো আমার নেই।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের ভিডিওতে দেখবেন, বঙ্গবন্ধুর পিছনে দাড়িয়ে আছেন।
অসাধারণ!
আপনি অনেক সৌভাগ্যবান।
সালাম অগ্রজ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ধন্যবাদ।
অসাধারন।
আপনি ভাগ্যবান। আরও লিখুন না সেই সময়ের গল্প। সেই সময়ের গল্পগুলো বারবার শুনতে মন চায়।
স্বাধীনতার ঠিক পরের সময়গুলো ও লিখায় নিয়ে আসুন প্লিজ।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ধন্যবাদ, প্রেরণা জাগানিয়া মন্তব্যের জন্য।
সম্পাদনা : আজ ২০১৩ ইং সালের ৭ মার্চ। আমার এই লেখাটি ১৯৭১ ইং সালের ৭ মার্চ উপলক্ষে। তাই শিরোনামে 'একাত্তরের' শব্দটি জুড়ে দিলাম।
নতুন মন্তব্য করুন