খুবই বিষন্ন মন নিয়ে লেখাটা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আবেগ-প্রসূত লেখাটির ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।
খুবই বিষন্ন মন নিয়ে লেখাটা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আবেগ-প্রসূত লেখাটির ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।
আমার এক বন্ধু বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেন, একটি মফস্বল শহরের অখ্যাত একটি ক্লিনিকে গত চারদিন যাবত সজ্ঞাহীন অবস্থায় প্রায় বিনা চিকিৎসায় অতিবাহিত করছেন। বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারনে পূর্বে আরও দুবার তিনি স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন। এটা তৃতীয় বারের মতো, ডাক্তারের মতে এটা গুরুতর স্ট্রোক। মফস্বল শহরে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রাপ্যতার কারনে ইতিমধ্যেই ডাক্তারেরা জবাব দিয়ে দিয়েছেন। ঢাকায় এনে ব্যয়বহুল চিকিৎসার সামর্থও পরিবারটির নেই।
১৯৭১ এর মার্চের মাঝামাঝি সময়ে এই মোজাম্মেল হোসেন, যশোর জেলার বেনাপোল স্থল বন্দরের তদানিন্তন ইপিআর চেকপোস্টের পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছিলেন এবং সেখানে বাংলাদেশী পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেও তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। একজন সৎ, নীতিবান, আপোষহীন সংগ্রামী মানুষ হিসাবে সাধারন মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন।
কর্মজীবনেও তিনি সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে প্রচুর সুনাম অর্জন করেছেন। পিটিআই ট্রেনিং এ তিনি তাঁর ব্যাচে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।
একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অসৎ রাজনীতিবিদদের বিবিধ অনিয়মের সমালোচনা করতেন। সে কারনে বিভিন্ন সময়ে অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার আক্রোশের শিকার হয়েছেন। কর্মজীবনে তাঁকে অনেক হ্যাপা পোহাতে হয়েছে। সামাজীক ভাবেও তাঁকে অপমান করার চেষ্টা করা হয়েছে। তথাপিও তিনি কখনই আপোষ করেননি। মাথা নত করেননি। তিনি বলতেন, 'এটাতো রিলিফের মাথা, ৭১ সালেইতো এটা যেতে পারতো।'
এ কয়দিনে তাঁকে দেখবার জন্য তাঁর পরিবারের লোকজন ব্যতিত আর কেউ আসেননি। সংবাদ পাওয়া স্বত্বেও ছোট-বড়-মাঝারী, কোন রাজনৈতিক নেতা তাঁকে দেখতে আসেননি। অথচ ভোটের সময় অনেক রাজনৈতিক নেতাকেই দেখেছি, তাঁর শরণাপন্ন হতে। এই লোকটি সমাজ-সংসারে এখন বড়ই অপ্রোজনীয় হয়ে পড়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোন নেতাও এখন পর্যন্ত আসেননি। না এসেছেন, প্রশাসনের কোন লোক।
মৃত্যুর পর এই লোকটির মৃত্যুসংবাদটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে প্রশাসনকে জানানো হবে। প্রশাসনের লোকজনের সহায়তায় তাঁর মৃতদেহটি জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হবে এবং শেষ যাত্রায় তাঁকে 'গার্ড অফ অনার' দেওয়া হবে।
মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অনেক গান, কবিতা, গল্প লেখা হয়েছে। অনেকগুলো হিট সিনেমাও হয়েছে। গান হিট হয়েছে তো গায়ক, গীতিকারের নাম হয়েছে। কবিতা, গল্প হিট হয়েছে তো লেখকের নাম হয়েছে। সিনেমা হিট হয়েছে তো প্রজোযক, পরিচালক লাভবান হয়েছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার কি লাভ হয়েছে ? এখানে মুক্তিযোদ্ধা একটা সাবজেক্ট মাত্র। না, এগুলোকে আমি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছিনা। অবশ্যই সমাজে এগুলোরও ইমপ্যাক্ট আছে।
মৃত ব্যক্তিটির এই 'গার্ড অফ অনার' এ কি প্রয়োজন ? জীবদ্দশায়ই যখন তাঁকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া গেলনা।
"খ্যাতিই বল, কীর্তি বল, মৃত্যু-পরে কিছু নেই,
যদিই আমি না থাকিতো, 'মাজার' তোলার অর্থ কি ?
আলোর দেখা ততক্ষণই, লন্ঠনে তেল যতক্ষণ,
নিভবে বাতি, রইবে আলো - এই প্রলাপের অর্থ কি ?"
যেহেতু লেখাটি বড্ড আবেগপ্রবন হয়ে লিখেছি, তাই আবারও বলছি, ভুলত্রুটিগুলো মার্জনা করবেন।
মন্তব্য
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ধন্যবাদ।
দু:খজনক। কর্তৃপক্ষের নজরে পড়বে আশা করি।
ধন্যবাদ, দুঃখ প্রকাশের জন্য। কতৃপক্ষ বুড়ো হয়ে গেছে, নজর দুর্বল।
লাভের ঝোল তো ষোলআনাই নিচ্ছে। দেদারছে ব্যবসাও করছে। বুড়ো হয় কী করে তাহলে?
মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা, আলোচনার সাবজেক্ট ছিল, আছে, থাকবে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে না কখনোই। প্রশাসন শুধু দলীয় স্বার্থ দেখে, এরও পরিবর্তন হবার সম্ভাবনা শূন্যপ্রায়।
ব্যক্তিপর্যায়ে কিছু করার সুযোগ রয়েছে কি?
ধন্যবাদ, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য।।
তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন এই কামনা করি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ, একটু সহানুভূতি আশা করতেই পারে।
বাস্তবতা এই। আমাদের অনেক সেরা সন্তান এভাবেই অবহেলা আর অবজ্ঞা নিয়ে বেঁচে থাকেন এবং হারিয়ে যান। মৃত্যুর পরে দশটা মিনিটের কদর, তারপর আবার বিস্মৃত। কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আমাদের নিজেদেরই এগিয়ে আসতে হবে; আর এগিয়ে আসেন এমন মানুষ আছেন বলেই দেশ নিয়ে আশা ছাড়তে পারি না। মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেনের জন্য শুভকামনা থাকলো। কিছু করার সুযোগ থাকলে জানাবেন।
ধন্যবাদ, এইযে ভরসা দিলেন, এটাই অনেক বড় পাওয়া।
উনার আরোগ্যলাভ কামনা করছি।
ধন্যবাদ, সাথে থাকার জন্য।
মন্তব্য করব না, শব্দগুলো অবরোধ করে আছে। উনি সুস্থ্য হয়ে উঠুন, এই কামনা করছি।
ধন্যবাদ, সাথে আছেন, এটাও অনেক বড় পাওয়া।
এসব খবর পড়ার পরে নিজেকে খুব অসহায়, অক্ষম মনে হয় ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
সহানুভূতি জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
হুমমম। একজন সু-কর্মময় আলোকিত জীবনের অধিকারি মানুষ তার পাশে তার সহকর্মীরাও নেই যেনে খারাপ লাগা অনেক বেড়ে গেলো। মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছেন তারা কোন প্রতিদানের আশায় করেননি। কিছু পাশে থাকা এমন ভাবেই থাকতে হয় যা মানবিক দায়িত্ব আর তা না পেয়ে মুখে চাইতে যাওয়া বিড়ম্বনার সামিল।
আরোগ্য কামনা করছি। আমাদের দুর্ভাগ্য এই কামনাটুকুই যেন আমাদের কাজ আর কিছুই করার নেই, এ জাতির জন্য লজ্জার সামিল।
ধন্যবাদ, পাশে থাকাটাই বা কম কি।
লেখাটা পড়ে মন খারাপ হল খুব। এ ধরনের ঘটনাগুলো শুনলে আমার কেন জানি খুব অসহায় লাগে। তার সুস্থতা কামনা করছি। সাথে এদেশের মানুষেরও মানসিক সুস্থতা কামনা করছি, যাতে আমদের বীরদের অন্ততপক্ষে সম্মান দেয়ার ( শুধু মারা গেলেই না , জীবিত অবস্থাতেও )এবং তাদের জন্য কিছু করার মন তৈরি হয় সবার।
ধন্যবাদ, আপনারা যে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয় ভাবেন, এটাও অনেক বড় পাওয়া।
মন্তব্য করেই-বা লাভ হবে কিসে !
নাই-বা যদি কিছু দিতে পারি তার তরে?
সরকারের সময় নেই, তারা বিরোধীদলের ধাক্কা সামলানোতে ব্যস্ত।
তাদের দরকার তাদের দীক্ষায় দীক্ষিত সবল সৈনিক।
হাসপাতালের বেডে অচেতন পড়ে থাকা একজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের কিছু দিতে পারবে না। সেটা হোক এ-দল কিংবা ব-দল, উভদলই সেটা জানে ও মানে। আগেও দেখেছি, এখনও দেখছি, ভবিষ্যতেও দেখব না এই নিশ্চয়তা বুকে হাত রেখে কেউ দিতে পারে না।
উনার জন্য প্রার্থনা করা ছাড়া কি-ই-বা করতে পারি।
উনি সুস্থ হয়ে উঠুক, এই কামনা করছি।
যে গল্পের শেষ নেই এ অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের কিছুটা তুলে ধরেছিলাম। লজ্জাটা তাই বেড়ে গেল বহুগুণ।
ধন্যবাদ। লেখাটা অবশ্যই পড়বো।
আপনারা যাঁরা মন্তব্য করেছেন তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আর আপনাদের জন্য একটি শুভ সংবাদ: অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে পিজি হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে একটি সিট যোগাড় করতে পেরেছি। আশা করছি, মোজাম্মেল হোসেন আগামীকাল দুপুর ১২টা নাগাদ ওখানে পৌঁছাবেন।
উনি সুস্থ হয়ে উঠুক এই কামনা করি। এইসব অহহায়তা দেখলে এখন লজ্জা লাগে।
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ, অনুভূতি প্রকাশের জন্য।
একমত। বাংলাদেশের নির্মম বাস্তবতা! মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃখ দুর্দশা নিয়ে সরকারী দল-বিরোধী দল গলা ফাটাবে, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় করবে, গান-কবিতার ঝড় বয়ে যাবে, তারপরও ধুঁকে ধুঁকে চোখের সামনেই মারা যাবে তারা! শুধু মুক্তিযোদ্ধারা কেন, সব জায়গাতেই কাহিনী এক। গতকাল মে দিবসেও শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সে কি দরদ উথলানো গনগনে ভাষণ! কিন্তু তারপরও তো এটাই সত্য, শ্রমিকরা মানবেতর জীবনের ঘানি টেনেই যাবে, লাশ হবে মালিকের লেলিয়ে দেয়া সরকারি বাহিনীর গুলিতে, অথবা রাজনৈতিক দলের সরকার পতন আন্দোলনকে বেগবান করার দায়িত্ব নিয়ে দাঁড়াবে বলির কাষ্ঠে!
মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেনকে আমার
ধন্যবাদ কাজি সাহেব, আপনাদের মতো কিছু মানুষের শ্রদ্ধা, ভালবাসা পাওয়াটাই এখন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পরম পাওয়া।
উনার আরোগ্যলাভ কামনা করছি , সেই সাথে আশা করছি উনি সুস্থ হয়ে উঠার পড়ে তার সেই উম্মাতাল অভিযানগুলোর কাহিনী আপনার লেখনীর মাধ্যমে জানতে পারব।
facebook
ধন্যবাদ, সাথে থাকার জন্য।
মুক্তিযোদ্ধা এ যে এস এম খালেদের জন্য কিছুই করতে পারিনি আমরা।
সহানুভুতি জানাই।
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ, সহানুভূতি প্রকাশেরর জন্য।
মন খারাপ কইরেন না। সাহস দেন, এই বয়সে আবার যুদ্ধ করবো, সমস্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে।
যে দেশে জীবিতাবস্থায় বিশিষ্ট মানুষদের মূল্যায়ন না করে মরনোত্তর পদক দেয়ার প্রবণতা আছে, সে দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান বই পত্রিকা কিংবা লেখার খাতায় সীমাবদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে এরকম ঘটনা খুব একটা ফোকাসে আসে না। মুক্তিযোদ্ধারা এখন আর খবর বাণিজ্যের হট কেক নয়।
মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেনের জন্য শুভ কামনা। ভাগ্য আপনার সহায় হোক। সুস্থ হয়ে উঠুন আবার। এছাড়া আর কীই বলতে পারি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ, শুভ কামনা জানাবার জন্য।
মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু লেখার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকেও, সাথে থাকার জন্য।
আমি উনার জন্য কিছু করতে চাই। আমার email address
কিভাবে করবো জানাবেন ,দেশে আমার আত্মীয় আপনার কাছে বা হাসপাতালে দিয়ে আসবে।
ধন্যবাদ।
অসংখ্য ধন্যবাদ। এই যে আপনি সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা স্বরূপ, এটাই তাঁর জন্য পরম পাওয়া। আপাতত আপনাদের 'শুভকামনা'ই প্রার্থনা করি।
কিছুই বলার নাই। আপনার সাথে কথা হলে আপনি অন্তত এই পোস্টে যে মন্তব্যগুলো করা হয়েছে সে খবরটা তাকে জানিয়ে দেবেন কষ্ট করে, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম এখনও জাগ্রত, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পুরাদস্তুর ব্যবসায়ী হয়ে যায়নি।
বাংলাদেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা।
ধন্যবাদ তানিম, ওঁকে আজই পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এখনও সজ্ঞাহীন। তবে প্রথম সুযোগেই তাঁকে মন্তব্যসহ পুরো পোস্টটিই পড়াবো।
মন খারাপ করা লেখা। এই অসাধারন মানুষটার জন্য শুভকামনা থাকল।
ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইল
ধন্যবাদ, শুভকামনা জানাবার জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন