ধর্মপ্রচার নয়, বিভিন্ন ধর্মমত সম্পর্কে যৎসামান্য জানার প্রচেষ্টা মাত্র।
আব্রাহামিক ধর্মীয় হিব্রু বাইবেল অনুসারে, সৃষ্টির শুরু থেকে 'নোয়া'র সময়ের মহাপ্রলয়ে 'নোয়া'র আর্ক (বৃহদাকার জাহাজ) ব্যতিত সমস্ত প্রাণীকুল বিনাশ প্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত সময়কে এন্টিডিলিউভিয়ান পিরিয়ড হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
হিব্রু বাইবেলে সৃষ্টিকর্তাকে 'এলহ্ ম' নামে অভিহিত করা হয়েছে।পরে 'ইয়াওয়ে' এবং পরবর্তীতে ইংরেজী উচ্চারনে 'জেহোভা' নামকরণ হয়েছে। আমি এই লেখায় 'ঈশ্বর' শব্দটি ব্যবহার করবো।
সৃষ্টি সম্বন্ধে হিব্রু বাইবেলের তোরাহ্ খন্ডের জেনেসিস (আদিপুস্তক) পর্বে উল্লেখিত আছে,
(জেনেসিসের সকল উদ্ধৃতি সাধু ভাষায় অনুবাদের চেষ্টা করেছি। দুর্বল অনুবাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থী)।
০ ঈশ্বর সর্ব প্রথম স্বর্গ ও মর্ত্য সৃষ্টি করেন (জেনেসিস ১:১)।
০ আদিতে (সেখানে) কুয়াসাচ্ছন্ন ধূম্রকুঞ্জ এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন এক বিশাল শুন্যতা বিরাজিত ছিল (জেনেসিস ১:২)।
০ ঈশ্বর কহিলেন, ''আলো হউক'' এবং আলো উৎপন্ন হইল। ঈশ্বর আলো পছন্দ করিলেন এবং আলোকে, অন্ধকার হইতে পৃথক করিলেন। তিনি আলোকে দিন এবং অন্ধকারকে রাত্রি হিসাবে চিহ্নিত করিলেন এবং সকাল ও সন্ধ্যার কথাও উল্লেখ করিলেন। এভাবেই সৃষ্টির প্রথম দিনের সূত্রপাত (জেনেসিস ১ : ৩-৫)।
৹ এবং ঈশ্বর কহিলেন, "ঘন কুয়াসার মধ্যভাগে একটি বিস্তৃত অঞ্চল সৃষ্টি হউক এবং কুয়াসা হইতে পানি পৃথক হউক।" ঈশ্বর একটি বিস্তৃত অঞ্চল সৃষ্টি করিলেন এবং এই অঞ্চলের উপরিভাগের পানি হইতে নিম্নভাগের পানিকে পৃথক করিলেন। তিনি এই বিস্তৃত অঞ্চলকে মহাকাশ নামে অভিহিত করিলেন। ইহাই ছিল সৃষ্টির দ্বিতীয় দিন (জেনেসিস ১ : ৬-৮)।
০ এবং ঈশ্বর কহিলেন, "মহাকাশের নিম্নভাগের পানি একাংশে একত্রিত হউক" এবং তেমনই হইল। ঈশ্বর, শুষ্ক পানিহীন অঞ্চলকে ভূমি এবং জলপূর্ণ অংশকে সমুদ্র হিসাবে উল্লেখ করিলেন। এবং ইহা তাঁহার মনপুত হইল। এবং ঈশ্বর কহিলেন, "ভূমিতে ঘাস, লতাগুল্ম, ফলবন্ত গাছ, ফসলাদি ইত্যাদি উৎপন্ন হউক" এবং তেমনই হইল। তিনি দেখিলেন, উহা বড়ই উত্তম। ইহাই ছিল সৃষ্টির তৃতীয় দিন (জেনেসিস ১: ৯-১৩)।
০এবং ঈশ্বর কহিলেন, "মহাকাশের বিস্তৃত অঞ্চলে, রাত্রি হইতে দিনকে পৃথক করিবার জন্য আলো উৎপন্ন হউক এবং ইহার দ্বারা দিন, বৎসর এবং ঋতু চিহ্নিত হউক।" এবং ঈশ্বর দুইটি প্রধান উজ্জ্বল আলোকপিন্ড সৃষ্টি করিলেন। উজ্জ্বতর আলোকপিন্ডটি দিনকে এবং মৃদু আলোদানকারী পিন্ডটি রাত্রিকে এবং তারকারাজিকে প্রভাবিত করিল।এবং ঈশ্বর আলোকপিন্ড দুইটিকে মহাকাশের বিস্তৃত অঞ্চলে এমন ভাবে স্থাপন করিলেন যাহাতে তাহারা মর্ত্যভূমিকে আলোকিত করিতে পারে। এবং তেমনটিই হইল। সকাল-সন্ধ্যা মিলিয়া এইটিই সৃষ্টির চতুর্থ দিন (জেনেসিস ১ :১৪-১৯)।
৹ এবং ঈশ্বর কহিলেন, "সৃজিত জীবজগতে পানি সঞ্চালিত হউক এবং স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যখানে বিরাজিত বিস্তৃত অঞ্চলে পাখিসমূহ উড়িয়া বেড়াক।" এবং ঈশ্বর বৃহদাকার জলদানব ও সরিসৃপ সৃষ্টি করিলেন এবং তাহাদের প্রতিও পানি প্রবাহিত করিলেন। ঈশ্বর লক্ষ্য করিলেন, ইহা অতি উত্তম। এবং ঈশ্বর আশির্বাদ করিলেন, তাহারা ফলবন্ত হউক ও বংশবৃদ্ধি করিতে থাকুক। সমূদ্র সমূহ পানি দ্বারা পরিপূর্ণ থাকুক, পাখি সমূহ বংশবৃদ্ধি করুক। সকাল সন্ধ্যা মিলিয়া ইহাই ছিল সৃষ্টির পঞ্চম দিন (জেনেসিস ১ :২০-২৩)।
৹ এবং ঈশ্বর কহিলেন, "ভূমি হইতে তদনুযায়ী জীবজগত সৃষ্টি হউক, গবাদিপশু, সরিসৃপ এবং জীব জন্তু সমূহ সৃষ্টি হউক।" এবং তেমনই হইল। এবং ঈশ্বর কহিলেন (স্বর্গদূতদের প্রতি), "এইবার আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্মান করি এবং মৎস সমূহ, উদ্ভিদ, পশু-পাখি, জীবজন্তু সমূহ সহ পৃথিবীতে সৃষ্ট সমস্ত কিছুর উপর তাহাদের প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা অর্পণ করি।" এবং ঈশ্বর তাঁহার প্রতিমূর্তিতে মনুষ্য নির্মান করিলেন এবং তাহাদিগকে পুরুষ এবং নারীহিসাবে সৃজন করিলেন। ঈশ্বর তাহাদেরকে বংশবিস্তারের আশির্বাদ করিলেন এবং মৎস সমূহ, উদ্ভিদ, পাখি সমূহ এবং পূথিবীতে সৃষ্ট সকল কিছুর উপর তাহাদের প্রাধান্য অর্পন করিলেন। এবং ঈশ্বর কহিলেন, ভূমি হইতে উদ্ভুত সব ধরনের লতাগুল্ম, শাকশব্জি, ফলমূল ইত্যাদি সমূহকে তোমাদের খাদ্য হিসাবে প্রদান করা হইল। এবং ঈশ্বর দেখিলেন যাহা কিছু সৃষ্টি করা হইয়াছে সবই অতি উত্তম। এবং সকাল সন্ধ্যা মিলিয়া এইটি ছিল ষষ্ট দিন (জেনেসিস ১ :২৪-৩১)।
৹ এবং স্বর্গ মর্ত্য মধ্যে সমস্ত সৃষ্টি সম্পন্ন করিয়া সপ্তম দিনে ঈশ্বর বিশ্রাম গ্রহন করিলেন। এই দিনে ঈশ্বর সমস্ত কর্ম হইতে বিরত থাকেন এবং সপ্তম দিনটিকে তিনি বিশ্রাম দিন হিসাবে মহিমান্বিত করেন (জেনেসিস ২ : ১-৩)।
৹ এবং তখন পর্যন্ত ভূমিতে লতাগুল্ম, উদ্ভিদ ইত্যাদি উৎপন্ন হয় নাই, কারন ঈশ্বর তখনও ভূমিতে বৃষ্টির পানি বর্ষণ করেন নাই। এবং পৃথিবীতে মানুষেরও আবির্ভাব হয় নাই (জেনেসিস ২ : ৫)।
৹ এবং ঈশ্বর মর্ত্যের ধূলিকণা হইতে মনুষ্য নির্মান করিলেন এবং তাঁহার নাসারন্ধ্রে ফুৎকারের মাধ্যমে আত্মা প্রবিষ্ট করাইয়া জীবন সঞ্চার করিলেন (জেনেসিস ২ : ৭)।
৹ এবং মহাপ্রভু ঈশ্বর ইডেনের পূর্বদিকে একটি উদ্যান সৃজন করিলেন এবং সেখানে তিনি মনুষ্যটিকে অবস্থিত করিলেন যাঁহাকে তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন (জেনেসিস ২:৮)।
৹ এবং ঐ উদ্যানটিতে তিনি নানাবিধ দৃষ্টিনন্দন সুস্বাদু ফলবন্ত বৃক্ষ সৃজন করিলেন। এবং উদ্যানের মধ্যখানে 'জীবনবৃক্ষ' এবং 'জ্ঞান বৃক্ষ' সৃজন করিলেন (জেনেসিস ২ : ৯)।
৹ এবং ইডেন হইতে একটি নদী ঐ উদ্যানে জলসিঞ্চনের জন্য প্রবাহিত হইল। সেখান হইতে নদীটি চারটি ধারায় বিভক্ত হইয়া প্রথম ধারাটি 'পিসন' নাম ধারণ করিয়া, উত্তম স্বর্ণ, ডিলিয়াম ও অনিক্স পাথর সম্বৃদ্ধ সমগ্র 'হাবিলাহ' অঞ্চলকে বিধৌত করে। দ্বিতীয় ধারাটি 'গিহন' নাম ধারণ করিয়া একই রকম ভাবে সমগ্র কুশ (ইথিওপিয়া) এলাকা কে জল দান করে। তৃতীয় ধারাটি টাইগ্রিস নামে পূর্ব আসিরিয়ার দিকে প্রবাহিত হয় এবং চতুর্থ ধারাটি হইল ইউফ্রেটিস (জেনেসিস ২: ১০-১৪)।"
৹ ঈশ্বর, সৃষ্ট মনুষ্যটিকে ইডেন উদ্যানের পরিচর্যার দ্বায়িত্বে নিযুক্ত করিলেন। এবং তাঁহাকে সকল বৃক্ষের ফল ভক্ষণের অনুমতি প্রদান করিলেন, তবে শুধুমাত্র জ্ঞান বৃক্ষের ফল ভক্ষণে কঠোর নিষেধাজ্ঞা অর্পণ করিলেন এবং তাঁহাকে এই মর্মে হুসিয়ার করিলেন যে, ঐ বৃক্ষের ফল ভক্ষণে নিশ্চয় তাঁহার মৃত্যু হইবে (জেনেসিস ২ : ১৫-১৭)।
৹ এবং ঈশ্বর কহিলেন, "মনুষ্যটির এই একাকিত্ব সঠিক নহে।" তিনি তাঁহার জন্য একজন সহচরী নির্মানের ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন (জেনেসিস ২ : ১৮)।
৹ এবং ঈশ্বর সৃষ্ট সমস্ত পশুপক্ষী, জীবজন্তু সমূদয় সৃষ্ট জীবের সহিত অ্যাডামের পরিচয় ঘটানো হইল এবং সমস্ত সৃষ্টির নামকরন করা হইল। এতদসত্বেও অ্যাডাম তাঁহার সহচরীর দেখা পাইলনা (জেনেসিস ২ : ১৯-২০)।
৹ এবং এক্ষণে ঈশ্বর মনুষ্যটিকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করিলেন এবং ঈশ্বর তাহার দেহ হইতে পাঁজর সদৃশ একটি অংশ লইয়া তাহা দ্বারা অ্যাডামের একজন সহচরী নির্মান করিলেন। এবং মনুষ্যটি তাহাকে স্ত্রীলোক হিসাবে চিহ্নিত করিল, সে কহিল, সে আমারই অংশ কেননা সে আমা হইতেই উদ্ভূত। এবং মনুষ্যটি এবং স্ত্রীলোকটি উভয়ই উলঙ্গ অবস্থায় রহিল কারন তাহাদের মধ্যে তখনও লজ্জাবোধ জন্মেনি (জেনেসিস ২ : ২১-২৫)।
হিব্রু বাইবেল অনুসারে এর পরবর্তী ঘটনা সমূহ এইরূপ, সর্প রূপী শয়তান বা দুরাত্মার প্ররোচনায় স্ত্রীলোকটি জ্ঞানবৃক্ষের ফল ভক্ষণ করে এবং আদমকেও ঐ ফল ভক্ষণে প্ররোচিত করে। এই ফল ভক্ষণের ফলে তাঁদের মধ্যে লজ্জাবোধ জন্মে। তাঁরা ডুমুর পাতা দ্বারা তাঁদের লজ্জাস্থান আবৃত করার চেষ্টা করে।
একদা ঈশ্বর উদ্যান মধ্যে এসে তাদেরকে না দেখতে পেয়ে তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চেয়ে হাঁকডাক শুরু করেন। মানুষটি তখন উত্তরে বলেন যে, যেহেতু সে উলঙ্গ সেহেতু সে ঈশ্বরের সামনে যেতে লজ্জা বোধ করছে। ঈশ্বর জানতে চাইলেন, "তুমি যে উলঙ্গ এই বিষয়টি তুমি জানলে কিভাবে? তুমি কি জ্ঞান বৃক্ষের ফল খেয়েছ?" তখন পুষুষটি স্বীকার করলো যে, মহিলাটি তাকে জ্ঞান বৃক্ষের ফল খেতে প্ররোচিত করেছে। মহিলাটি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলে সে উত্তরে বললো যে, শয়তান বা দুরাত্মাটি তাকে এই ফল খাওয়ায় প্ররোচিত করেছে। এই কথা শোনার পরে ঈশ্বর তাদেরকে শাপশাপান্ত করলেন এবং ঈশ্বর স্ত্রীলোকটিকে এই শাপ দিলেন যে, সন্তানের জন্মদানকালে তার প্রসব যন্ত্রণা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এবং ঈশ্বর তাদেরকে সেখানে ফেরত পাঠাতে মনস্থ করলেন যেখানকার মাটি দিয়ে তাকে নির্মান করেছেন। এবং তাদেরকে ভূমিজাত সবজি, ফলমূল ইত্যাদি খেয়েই জীবন ধারনের বিধান দিলেন।এবং পুরুষটি স্ত্রীটিকে ইভ ( হিব্রু > হাওয়া) নামকরণ করলেন যেহেতু সেই সমস্ত জীব জগতের মাতা।
এবং ঈশ্বর কহিলেন, "যেহেতু মনুষ্যটি জ্ঞানবৃক্ষের ফল ভক্ষণ করিয়া ভালমন্দের জ্ঞান আহরন করিয়া প্রায় আমাদের সমকক্ষ হইয়াছে,এক্ষণে যদি কোন ক্রমে জীবনবৃক্ষের ফল ভক্ষণ করিতে পার তাহা হইলে সে অমর হইয়া যাইবে (জেনেসিস ২ : ২২)।"
এবং ঈশ্বর পুরুষটিকে ইডেন উদ্যান থেকে বহিষ্কার করলেন ।
খ্রিষ্টধর্মে সৃষ্টি :
খ্রিষ্ট ধর্মে, হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বকেই মেনে নেওয়া হয়েছে। কেননা হিব্রু বাইবেল হচ্ছে খ্রিষ্টধর্মগ্রন্থের পূর্বাংশ বা ওল্ড টেস্টামেন্ট।
তবে সৃষ্টি বিষয়ে তারা ত্রিত্বের (Trinity) ধারণাটিকে প্রাধান্য দিয়েছে। {ত্রিত্ব (Trinity) - পিতা (Father),পুত্র (Son) ও পবিত্র আত্মা (Holy spirit)}। কারন, হিব্রু বাইবেলের জেনেসিস পর্বে বলা হয়েছে, " এবং ঈশ্বর কহিলেন, এইবার আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে আমাদের সাদৃশ্যে
মনুষ্য নির্মান করি এবং মৎস সমূহ, উদ্ভিদ, পশু-পাখি, জীবজন্তু সমূহ সহ পৃথিবীতে সৃষ্ট সমস্ত কিছুর উপর তাহাদের প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা অর্পণ করি।" এখানে ঈশ্বরের জবানিতে 'আমরা'(বহুবচন) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, এবং এই শ্লোকে খ্রিষ্টধর্মীরা 'ত্রিত্ব' ধারণাটির সমর্থন পায়।
এন্টিডিলিউভিয়ান পিরিয়ডে মানুষের জীবনকাল অনেক লম্বা ছিল। জেনেসিস থেকে বিভিন্নজনের জীবনকালের বিষয় জানা যায়। তখনকার মানুষেরা প্রায় ৭০০ - ৯৫০ বৎসর পর্যন্ত বাঁচতেন। তাদের শারীরিক গঠনও ছিল বৃহদাকার। তখন নানা ধরনের বৃহদাকার জীবজন্তু ছিল, ছিল বৃহদাকার জলদানব। বিভিন্ন মিথে এদেরকে ড্রাগন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আগামী পর্বে : ইসলামের দৃষ্টিতে সৃষ্টি।
চলবে।
ধর্মসার- (১) লাও-ৎসু ও 'তাও'
ধর্মসার- (১) লাও-ৎসু ও 'তাও' এর বাকি অংশ
ধর্মসার- (২) কনফুসিয়াস ও তাঁর ধর্ম
ধর্মসার- (৩) বর্ধমান মহাবীর ও জৈনধর্ম
ধর্মসার- (৪) জরথুসত্র ও পারসীক ধর্ম
ধর্মসার- (৫) গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্ম
ধর্মসার- (৬) গুরু নানক ও শিখধর্ম
"ঝাঁপি খুলে বহু পুরাতন একটি নোটবই পেলুম। তখনকারদিনে আমাদের দেশে ইন্টারনেটের সুবিধা ছিলনা। বই-পুস্তক ঘেঁটেই যা কিছু পাওয়া। কখন, কোথায়, কিভাবে এসব পেয়েছিলাম তা আর এখন মনে করতে পারিনা তাই সূত্র জানাতে পারবোনা। ক্ষমা করবেন।"
মন্তব্য
আপনার ধর্মের আলোচনাটা ইন্টারেস্টিং। তবে একটা বিষয়ে কোন ধর্মে কি বলা হয়েছে সেটার পাশাপাশি একটা তুলনামূলক আলোচনা করলে আগ্রহভরে পড়তাম।
হুমম, হিব্রু রূপকথা। তবে কল্পকাহিনী হিসাবেও ভারি অযৌক্তিক।
দারুণ গল্প! খুব জনপ্রিয়!
facebook
অনেকদিন পরে লিখলেন এই সিরিজ। সব ধর্মের মিথ টিথ মিলিয়ে একটা জগাধর্ম খোলা যায় কিনা ভাবছি
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
জগাধর্মের অনুসারীদের জান্নাতবাসী হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
সৌরভ কবীর
তৃতীয় দিনে ঘাস লতাপাতা ফলবন্ত বৃক্ষ হইলো আর তার পরেরদিন আসলো সূর্য. আজকালকার ঘাস লতাপাতারা তো সূর্য ছাড়া দাঁড়াতেই পারেনা. আহা কি সব দিন ছিল (দীর্ঘশ্বাস)!
ইসলাম ধর্মের তত্ত্ব পড়ার জন্য পপ্পন নিয়ে বসলাম. যতদুর মনে পড়ে কাছাকাছি থিওরি. উপরের তত্ত্বের সাথে মিল অমিল গুলা নিয়ে একটু লিখিয়েন দাদা.
..................................................................
#Banshibir.
সেটা পৃথক একটি লেখায় লিখবো, আশা করছি। সেখানে থাকবে আব্রাহামিক ধর্মমতগুলোর মিল-অমিল, কিছু বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন, সাকার-নিরাকারের প্রসঙ্গ ইত্যাদি।
ধন্যবাদ, পড়বার জন্য।
আপনার এই আলোচনাটা ভাল লাগে পড়তে। তবে মুর্শেদ ভাই যা বলেছেন সেটাও ভেবে দেখতে পারেন। অবশ্য ব্যাপারটা সময় সাপেক্ষ। আপনার এই সিরিজটার সে দিকটা ভাল লাগছে সেটা হল আপনি আমাদের পরিচিত ধর্মগুলোর চৌহদ্দির বাইরে থাকা অনেকগুলো ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা করছেন। সেদিন একজনের সাথে মোটামুটি একটা তর্ক করতে হল এই বিষয়টার উপরে যে পৃথিবীতে শত-শত কিংবা আরও বাড়িয়ে বললে হয়ত হাজারো ধর্ম বহাল তবিয়তেই বিদ্যমান। সংখ্যা দিয়ে সব কিছু বিচার করি বলি আমরা খালি ইসলাম, খ্রীস্ট, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ এই ধর্মগুলোর মধ্যেই মানুষের বিশ্বাস আটকে আছে বলে ভাবি। খোদ ভারতবর্ষে, মধ্য এশিয়ায়, আফ্রিকায়, পলিনেশিয়ায়, মেলানেশিয়ায় বা বা সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থাকা অর্থনৈতিকভাবে এবং প্রযুক্তিগতভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীগুলোর মানুষেরও যে নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস আছে এটা অনেকেই জানিনা বা স্বীকার করতে চাইনা। আশা করছি আপনি ব্যাপারগুলো নিয়ে লিখবেন।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
জেনেসিস এর বাংলা "আদিপুস্তক"। ওল্ড টেস্টামেন্ট এর বাংলা পুরাতন নিয়ম, আর নিউ টেস্টামেন্ট এর বাংলা নূতন নিয়ম।
প্রথম কয়েকটা পুস্তক এভাবে বাংলা করা হয় - আদিপুস্তক, যাত্রাপুস্তক, লেবীয়, গণনাপুস্তক, দ্বিতীয় বিবরন (ব্লা ব্লা)
"তবে সৃষ্টি বিষয়ে তারা ত্রিত্বের (Trinity) ধারণাটিকে প্রাধান্য দিয়েছে।"
এইখানে আমার একটা কথা আছে। সৃষ্টির বিষয়ে ত্রিত্ব প্রাধাণ্য পায় না, বরং ত্রিত্বের ঘটনা আসে "এক ঈশ্বর তিন ব্যক্তি" এই জটিল ধোঁয়াশাপূর্ণ বিষয়কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে। আদিপুস্তকের পাশাপাশি যোহন লিখিত সুসমাচারের (নতুন নিয়ম) প্রথম অধ্যায়টিও খুব জরুরী হয়ে পড়ে এই ব্যাখ্যায়। - (কপি পেস্ট করছি, বাংলায় টাইপ করার সময় নেই, দু:খিত)
John 1
King James Version (KJV)
1 In the beginning was the Word, and the Word was with God, and the Word was God.
2 The same was in the beginning with God.
3 All things were made by him; and without him was not any thing made that was made.
4 In him was life; and the life was the light of men.
5 And the light shineth in darkness; and the darkness comprehended it not.
6 There was a man sent from God, whose name was John.
7 The same came for a witness, to bear witness of the Light, that all men through him might believe.
8 He was not that Light, but was sent to bear witness of that Light.
9 That was the true Light, which lighteth every man that cometh into the world.
10 He was in the world, and the world was made by him, and the world knew him not.
11 He came unto his own, and his own received him not.
12 But as many as received him, to them gave he power to become the sons of God, even to them that believe on his name:
13 Which were born, not of blood, nor of the will of the flesh, nor of the will of man, but of God.
14 And the Word was made flesh, and dwelt among us, (and we beheld his glory, the glory as of the only begotten of the Father,) full of grace and truth.
এই যে আদিতে "বাক্য" ছিলেন যে অংশটুকু, তিনিই মানুষরূপী ঈশ্বরপুত্র - যীশুখ্রীষ্ট। ত্রিত্বের "পুত্র" ভাগ। "পবিত্র আত্মা"র ব্যাপারটা আসে মূলত: নূতন নিয়মের কিছু ঘটনা থেকে।
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
১) আদিতে বাক্য ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বরের সহিত ছিলেন,
২) এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন। তিনি আদিতে ঈশ্বরের সহিত
৩) ছিলেন। সকলই তাঁহার দ্বারা সৃষ্ট হইয়াছিল এবং কোন
৪) কিছুই তাঁহা ছাড়া সৃষ্ট হয় নাই। যাহা সৃষ্ট হইয়াছিল তাহা
তাহার জীবনে জীবন্ত হইয়াছিল ( তাহার কিছুই তাঁহা ছাড়া সৃষ্ট হয় নাই) এবং সেই জীবন ছিল
৫) মনুষ্যদের জ্যোতি। জ্যোতি অন্ধকারের মধ্যে দীপ্তি দিতেছে,
আর অন্ধকার তাহা গ্রহণ (দমন) করে নাই।
১৪)বাক্য মাংসে মূর্ত্তিমান হইলেন (মানবদেহ গ্রহণ করিলেন) এবং আমাদের মধ্যে বাস করিলেন.................।
(যোহনলিখিত সুসমাচার, ১ :১-৫, ১৪)
"তথাপি আমাদের একমাত্র ঈশ্বর আছেন, তিনি পিতা, তাহা হইতে সকলই হইয়াছে ও আমরা তাঁহারই জন্য; এবং একমাত্র প্রভু আছেন, তিনি যীশু খ্রীষ্ট, তাঁহার দ্বারা সকলই হইয়াছিল ও আমাদের স্থিতি তাঁহারই দ্বারা হইয়াছে।" (করিন্থিয়দের প্রতি প্রেরিত পৌলের প্রথম পত্র, ৮ : ৬)
১) অবশেষে পঞ্চাশত্তমী পর্ব্বের দিন আসিলে, সকলে
২) একস্থানে সমবেত হইলেন। এমন সময় অকস্মাৎ আকাশ হইতে
প্রবল বায়ু-প্রবাহের শব্দের ন্যায় এক শব্দ আসিয়া যে গৃহে
৩) তাঁহারা বসিয়াছিলেন সমগ্র গৃহটি পূর্ণ করিল। সেই সঙ্গে
সঙ্গে অগ্নি-জিহ্বার ন্যায় কি যেন তাঁহাদের দৃষ্টিগোচর হইল;
এই সমস্ত পৃথক পৃথক হইয়া তাঁহাদের এক একজনের উপরে
৪) অবস্থান করিল। তাহাতে তাঁহারা সকলে পবিত্র আত্মায় পূর্ণ
হইলেন এবং আত্মা তাঁহাদের যেমন বাকশক্তি দান করিলেন,
সেই অনুসারে তাঁহারা বিভিন্ন ভাষায় কথা বলিতে লাগিলেন। (প্ররিতদের কার্য্য-বিবরণ, ২ : ১-৪)
"এইবার আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্মান করি .......।
আমি যেটা বলতে চেয়েছি, এইযে বহুবচনে 'আমরা' 'আমাদের' শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে সে কারণে ঈশ্বরের একত্বের ধারনাটি বাধাগ্রস্থ হয়েছে, সেকারণেই আমি ত্রিত্বের (trinity) কথা বলেছি।
যাহোক আপনার সংযোজন ও মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
বাইবেলের বঙ্কানুবাদ অংশটি, পাকিস্তান বাইবেল সোসাইটি, ঢাকা কতৃক ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত 'ত্রাণকর্ত্তা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নূতন নিয়ম' পুস্তক থেকে উদ্ধৃত।
বাইবেলীয় ধর্মগুলোর সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে আগে ভাসাভাসা জানা ছিল, এই লেখাটি পড়ে বেশ ভাল একটা ধারণা পেলাম! বিশেষ করে, নিষিদ্ধ জ্ঞাণবৃক্ষের ফল ভক্ষণ করেই যে মানুষের প্রথম লজ্জা-জ্ঞান হল, তা আগে জানতাম না!
তারমানে, জীবণবৃক্ষের ফল আগে খাওয়া হয়নি, অথচ অন্যত্র বলা হয়েছে, জ্ঞান-বৃক্ষের ফল ছাড়া সব খাওয়া যাবে। আর ঈশ্বর কি মানুষের অমরত্ব ঠেকাতেই তাকে ইডেন থেকে বের করে দিলেন?
আর তাছাড়া, ঈশ্বর চাননি মানুষ জ্ঞান হোক? আর এজন্যই জ্ঞান-বৃক্ষের ফল খাওয়ায় আদমের উপর তার এত রাগ? আর হাওয়াকে দিলেন যুগ-যুগান্তের প্রসব যন্ত্রণা? কিন্তু একটা প্রশ্ন উঠে আসে এখানে, তা হল, প্রাণীকুলের আর কেউ তো হাওয়ার মত অপরাধ করেনি, তাহলে সব প্রানীমাতাকেই হাওয়ার মত একইভাবে প্রসব-যন্ত্রণা বরণ করতে হয় কেন? তাদের অপরাধ কি? ঈশ্বরের ন্যয়পরায়নতার সাথে বিষয়টি কিভাবে সম্পর্কযুক্ত?
আর ফল ভক্ষণের সাথে প্রসবযন্ত্রণা বৃদ্ধির অভিশাপ কেন? অন্য কোন লেখায় এটা নিয়ে লিখবো ভাবছি।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।
যাছারিয়া সিচিন এর লেখার উপর বাংলায় কোন পোস্ট আছে কি? যদিও সুড আরকিওলজি হিশেবে গণ্য করা হয়, কিন্তু আইডিয়া অসাধারণ। মহা প্রলয় পূর্ব এবং পরের অনেক কিছুই তার লেখায় ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। দয়া করে জানাবেন।
নতুন মন্তব্য করুন