কদিন ধরে মনটা বড়ই বিক্ষিপ্ত। তা মনের আর কি দোষ। বয়স হয়েছে, শারীরিক সামর্থ্যও কমে এসেছে। নানা রকম ব্যাধি, শরীর-মন দুটোকেই কাবু করে ফেলতে চাইছে।
স্বাস্থ্যগত কারণে কদিন তো বাড়ি থেকেই বের হওয়া হয়নি। কি আর করা, সারা দিনমান শুধু টিভি রিমোট টিপে টিপে এ চ্যানেল ও চ্যানেল করছি। তা সব খানেই একই কথা। সড়ক দূর্ঘটনায় অত জনের মৃত্যু, এতজন আহত। ঈদের আগে ট্রেন, বাসের অগ্রীম টিকিট দেওয়া শুরু হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, শুরুর দিন থেকেই টিকিট পাওয়া যাচ্ছেনা। আর বাঁকা পথে পাওয়া গেলেও তা চড়া দাম। আর আছে পদ্মা সেতু সক্রান্ত আলোচনা। এই হচ্ছে হবে, সরকারপক্ষ এমনটাই বলছেন। বিরোধীরা বলছেন, সরকারী দল পদ্মা সেতু খেয়ে ফেলেছেন। বিশেষজ্ঞরা একেকজন একেক রকম হিসাব দেখাচ্ছেন, সত্যমিথ্যা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। আর আমাদের সেই কালোবিড়াল খ্যাত দফতর বিহীন মন্ত্রীর বোধগম্য হচ্ছেনা, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান মন্ত্রীর দেওয়া সুন্দর প্রস্তাবটি কেন যে বিরোধীদল আমলে নিচ্ছেন না।
না, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লিখতে বসিনি। প্রাসঙ্গিক ভাবে এসে পড়লো তাই একটু আরকি।
বলছিলাম, মনটা বলছে, চলো কোথাও বেরিয়ে পড়ি। কোথায় ? কোন ভুবনে ? যেখানেই হোক কোনখানে অথবা নিরুদ্দেশে।
কোথায় জানি পড়েছিলাম, আমাদের বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাকি ঝোলা কাধে বেরিয়ে পড়ার বাতিক ছিলো। সে কথাই না হয় বলি।
বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লেন ঝোলা ঘাড়ে। তাতে আছে বড় জোর এক প্রস্থ কাপড়। উঠে পড়লেন ট্রেনে অথবা মটর বাসে। তারপর যেখানে মন চাইলো, নেমে পড়লেন। খুঁজে পেতে কোন গ্রাম্য বাজার এলাকায় গিয়ে মুদি দোকানদারের সাথে আলাপ জমিয়ে নিলেন। নতুন কিছু জানার চেষ্টা করলেন গ্রামের মানুষগুলোর জীবন সম্পর্কে। হয়তো পেয়েও গেলেন লেখার কোন বিষয়।
দোকান থেকে গুড়-মুড়ি কিনে অথবা ময়রার দোকান থেকে মন্ডা মিঠাই খেয়ে সে বেলার মতো পেট পুজো করলেন। ধীরে সুস্থে লেগে পড়লেন মূল আহারের ব্যবস্থায়। তিনি আবার কোন গৃহস্ত বাড়িতে পাত পাততেন না। দোকান থেকে মাটির হাড়ি, মালসা, চাল-ডাল, তেল-নুন-মসলা কিনে ঝোলায় পুরে চললেন গ্রামের বাইরে নিরিবিলি কোন জায়গায়। কোন পুকুর অথবা টিউবকলের ধারে গাছতলায় ঝোলা নামিয়ে শুকনো পাতা, ডালপালা যোগাড় করলেন। আর মাটির ঢ্যালা দিয়ে উনুন বানিয়ে নিলেন। পুকুর অথবা টিউবকল থেকে হাড়ি-মালসা, চাল-ডাল ধুয়ে নিয়ে উনুন জ্বালিয়ে মালসায় তেলের ছিটা দিয়ে লঙ্কা ভেজে নিলেন। হাড়িতে চাল-ডাল আর পরিমান মতো পানি দিয়ে তাতে তেল-নুন-ঝাল-মসলা দিয়ে চড়িয়ে দিলেন উনুনে। গাছের একটা ছোট্ট ডাল ভেঙ্গে নিয়ে তা দিয়ে মাঝে মধ্যে হাড়ির মধ্যে নেড়ে চেড়ে দিলেন। উনুনের আঁচও একটু নাড়িয়ে উসকে দিলেন। তারপর যখন দেখতে পেলেন, ঠিক মতো ফুট খেয়েছে, তখন তাতে লঙ্কা ভাজা দিয়ে একটু নেড়ে চেড়ে নামিয়ে নিলেন।।
তখনকার দিনে গ্রামদেশে কলাগাছের অভাব ছিলোনা। দুটো কলাপাতা ছিঁড়ে এনে একটু জল ছিটিয়ে ধুয়ে নিয়ে তার উপর হাড়ি উপুড় করে সবটা ঢেলে দিলেন। এবার ডান হাত দিয়ে একটু একটু নাড়াচাড়া আর বাঁ হাত দিয়ে হাওয়া করা খিচুড়ি ঠান্ডা হবার জন্যে। তাকিয়ে দেখেন, আশপাশে দু-চারটে কাক, শালিকতো বটেই সাথে গাঁয়ের কয়েকটা অনাহারী নেড়ী কুত্তাও জড় হয়ে গেছে। মনে মনে বলেন, হবে হবে সবারই হবে, একটু রস। এবার ধীরে সুস্থে আরাম করে খেয়ে নিলেন। খাওয়া শেষে যে টুকু অবশিষ্ট তা আশপাশের কাক-শালিক আর কুকুরগুলোকে দিয়ে দিতেন। দিনান্তে ঐ একবারই খেতেন। খাওয়া শেষে ওখানেই ঘাসের উপর একটু জিরিয়ে নিতেন।
আর চলে আসবার সময় ঢ্যালা মেরে হাড়ি-পাতিল গুলো ভেঙ্গে ফেলতেন, ওহে মন চলো আবার নতুন কোনো ঠায়। আর সে সময়ই হয়তো বা অনুভব করতেন, "জীবন এত ছোট্ট ক্যানে।"
তিনি বলতেন,'চড়ুইভাতি কি শুধু দঙ্গলে হয় ? জঙ্গলে একলা হয়না ? হয়তো। আর তাতে নিজেকে অনেকখানি যেন চিনে নেওয়া যায়।
বড় শখ ছিলো, কোনদিন আমিও এমন করে বেরিয়ে পড়বো, নিরুদ্দেশের পথে। কোন নির্জনে একা একাই চড়ুইভাতি করবো। তাঁর মতো করে রান্না করে খাবো। হা, কপাল, এ যুগে আমি যে সাহেব, বুঝে গেছি আমায় দিয়ে তা হবার নয়। তাইতো মনে মনে মনকলা খাই।
মন্তব্য
কাউকে নেওয়ার দরকার নেই। ঘরের একান্ত কাছের মানুষগুলো নিয়েও ছুটির একটা দিনে অচেনা কোথাও কোন নদীর পাড়ে সারাদিন কাটিয়ে দিয়ে আসতে পারেন। প্রয়োজনে বাসা থেকেই খাবার রান্না করে নিয়ে গেলেন। ঘুরে আসুন। ভাল লাগবে।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।
একদিন সাহস করে বেরিয়ে পড়েন। ১৫-২০ কিলোমিটার দূরের কোনো লোকালয়ে চলে যান, সন্ধ্যের আগেই ফিরে আসুন। ভালো লাগবে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
বলছেন ?
তারাশঙ্করের বাতিকটা ভীষণ মজার ছিল তো!
আহা! যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের! মানুষ কি আর ছুঁতে পায় তা?
ঘর থেকে একটু বাইরে গেলেও দেখবেন বহুদূর চলে যাওয়া যায় মাঝেমাঝে...
কোথায় যেন পড়েছিলাম, 'উঠোন সমূদ্র পেরুলেই ভ্রমণের অর্ধেক সম্পন্ন হয়ে যায়'।
গৃহিণীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, সকালে কিছু খাবার নিয়ে আশেপাশের কোন গ্রামে গিয়ে কোন এক গাছের নীচে পিকনিক করে গ্রামের দোকানে চা খেয়ে আসুন, দেখবেন মন কেমন ভাল হয়ে গেছে।
হ্যাঁ, চা এর সাথে যদি 'লিলি' বিস্কুট পাওয়া যায়, তাহলে কি মজাই না হবে! মনে আছে, 'লিলি' বিস্কুটের কথা?
কত কত তুচ্ছ চাওয়াও অনেক সময় পূরণ হয়না নানা কারণে,তারপর ও বলি পারলে আশপাশের কোথা থেকে না হয় ঘুরে আসুন ।
ভাল থাকবেন ।
অনেক তুচ্ছ বিষয়ও কিন্তু কখনও কখনও জীবনে মহা আনন্দদায়ক।
শরীর ঠিক থাকলে কোনরকম চিন্তা ভাবনা ছাড়াই বেড়িয়ে পড়ুন। তার আগে ঠিক করে নিন কত দিনের জন্য বেড়ুবেন। কোথায় যাবেন তা ঠিক করবেন ঘর থেকে বেড়ুনোর পর, আগে থেকে নয়। এভাবেই ঘোরার আনন্দটুকু পাবেন।
...........................
Every Picture Tells a Story
কোন কোন দিন অধিক রাতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। মনে হয় ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যাই, বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর যে কে সেই। আবার ফিরে আসি। তবে এবার যাব। ব্যাগটা খুঁজে বার করছি। মন্তব্যের জন্য।
ঘুরতে গেলেই আমার মন ভালো হয়ে যায়, ঘরে থাকতে থাকতে মনে কেমন যেন মরচে ধরে যায় তখন এম্নিতেই কিছু ভাল লাগেনা। ঘুরে আসুন শরীর ভালো থাকলে। আর ভালো না থাকলে কোন রিসোর্টে গিয়ে মটাকা মেরে পড়ে থাকেন, আজকাল দেশের রিসোর্টগুলা অনেক সুন্দর করে বানায়,অনেক সবুজ লাগে চারিদিক।
হ্যাঁ, এবার যাবই যাব।
আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি ঠিক করেছি জনগণর সাথেই থাকবো তাই আপনাদের মতামতকে 'লক'(কৌন বনেগা ক্রোড়পতি) করে দিলাম।
একদিন বেরিয়ে পড়ুন। দেখবেন মন-শরীর বেশ ফুরফুরে হয়ে গেছে।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
জী, তা হয়তো করবো। কিন্তু আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন? আপনাকে দু-দুলো ই-মেইল পাঠিয়েছি, তারপরও কোন খবর নেই। বড়ই চিন্তায় ছিলাম।
মানুষের সাথে সম্পর্কের বিষয় বড় অদ্ভুত। আপনাকে চিনিনা, কখনও দেখিনি, অবশ্য জানিনা বলবোনা তারপরও......।
ভাল থাকবেন।
অফিস আর পরীক্ষা নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের পাস মার্কস সর্বোচ্চ নম্বর থেকে হিসাব করা হয়, তাই, পাস করা খানিকটা কঠিনই বটে। তাই, তল্পিতপ্পা নিয়ে বইয়ের মাঝে ডুবে ছিলাম।
তারপর, আপনি ভালো আছেন তো?
শুভ কামনা রইল।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আমিও আপনার মত শহুরে মন নিয়ে মনকলা খাই,তা সে জঙ্গলের একলা চড়ুইভাতিই হোক,কিংবা দঙ্গলের হুল্লোড়ই হোক।।লেখা পড়ে মন এক ছুট্টে জঙ্গলে পাড়ি দিল!
সুবর্ণনন্দিনী
হ্যাঁ, ঈদের পরপরই নিরুদ্দেশ যাত্রা করবো।
আশ্চর্য ব্যাপার। আমারও কারখানা শহর ঢাকা থেকে কয়দিনের ছুটি নিতে ইচ্ছে করছে। স্বাস্থ্যগত কারনে আমিও বিব্রত কিছুদিন ধরে, সবকিছু কেমন যেন বিস্বাদ লাগছে - জ্বরের পরে অনেকটা যেমন হয়।
আমি অবশ্য খানিকটা প্ল্যান করেই বেরোই সাধারনত। ঠিক কোথায় যাব, কোথায় থাকব, বা কি খাব এসব নিটি-গ্রিটি ততটা নয়, তবে কেমন পরিবেশে যেতে চাই বা এই 'যাওয়াটা' থেকে কি পেতে চাই - সেইটা আমার চিন্তাভাবনায় থাকে। যেমন ধরুন, প্রথমতঃ আমার শহর-বন্দর-জনারণ্য পছন্দ নয় ভ্যাকেশনে বা বেড়ানোর সময়। আমার পছন্দ - পাহাড়/টিলা, নদী/হাওর, সাগর, দ্বীপ, বা জঙ্গল। তবে সর্বোপরি, যথাসম্ভব নির্জনতা বা জনবিরলতা। বাংলাদেশে অবশ্য এই শেষের জিনিষটা পাওয়া বেশ কঠিন।
সিলেটের হাওর তীরবর্তী গ্রামাঞ্চলে চাবাগান-রাবারবাগান-ঝোপঝাড়-গাছপালা ঘেরা বাংলোওলা টিলার উপর নির্জন প্রকৃতিঘেরা পরিবেশে কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসা আমার অন্যতম প্রিয় হবি। তাছাড়া গ্রামের ভিতর চিপায়চুপায় অনেক গাছপালা ঘেরা ছোটখাট নির্জন দরগা-মাজার বা টিলাফিলা থাকে যেখানে দিব্যি একান্তে চড়ুইভাতি করা যেতে পারে হয়তো। বৃষ্টির সিজনে হাওর ভরভরন্ত থাকা অবস্থায় গেলে সেখানেও নৌকা নিয়ে ঘোরা যেতে পারে তখন। শীতের সময় অন্যরকম মজা। হাকালুকি পারে এভাবে প্রায়ই যাই। এরপরে টাঙুয়া যাওয়ার ইচ্ছা আছে, যাইনি কখনো। তবে এখানে যেতে হলে মনে হয় গ্রুপ করা লাগবে।
দ্বীপ বলতে সেন্ট মার্টিন গেছি। ভাল লেগেছে। তবে দ্বীপের দক্ষিণপ্রান্তে বা তার কাছাকাছি কোথাও থাকার জায়গা না পেলে নির্জনতা পাওয়া মুশকিল। তবে শুনেছি দক্ষিণপ্রান্তে হোটেল ব্লুমেরিনের নাকি একটা ৫ সিটের কটেজ আছে। পুরোটাই একসাথে বুক করতে হয়। এটা হলে চমৎকার হয়। পশ্চিম দিগন্তে সূর্যাস্তের হোলিখেলা দেখতে দেখতে একান্তে সময় পার করাটাও দারুন লাগে আমার। আর তার পরের আঁধারটাও। আমি অবশ্য কটেজে থাকিনি, বীচ ধরে হেঁটে হেঁটে ছোট্ট দ্বীপটা পুরো চক্কর দিয়ে বীচেরই দক্ষিণপ্রান্তের পশ্চিম-মূখী নির্জন একটা অংশে গিয়ে পাথরের বোল্ডারের উপর বসে ছিলাম। আশেপাশে মাইলের পর মাইল কেউ ছিলনা বলেই মনে হচ্ছিল তখন, ডিব্বা উপুড় করা রঙের সাগর আর নির্জনতা আর আমি নিজে ছাড়া। ঢাকা শহরে সূর্যই দেখতে পাইনা, আর সূর্যাস্ত! আর এখানে রঙের সাগরে অবগাহন করতে করতে মনে হয় বাংলাদেশ ছাড়িয়ে অন্য কোন জগতে চলে গিয়েছিলাম।
বঙ্গোপ্সাগরে বাংলাদেশের আরও কিছু দ্বীপ আছে। সেসবেও যাওয়ার ইচ্ছে আছে। নিঝুম দ্বীপ, মনপুরা, এবং আরও কি সব যেন।
পাহাড় বলতে দেশে বান্দরবান অন্যতম প্রিয় জায়গা। তবে বারবার যাওয়ার ইচ্ছা নেই। তবে বান্দরবানের নীলগিরিতে আর্মির আউটপোস্টের লোকেশনটা আমার দুর্দান্ত লেগেছে। এখানে দু-তিনটা কেবিন আছে যা ভাড়া দেয়া হয়। উম্মুক্ত, প্রিস্টিন প্রকৃতির মায়াবী আলিঙ্গনে নির্জনতা উদ্যাপনের জন্য একটা অপূর্ব জায়গা বলে মনে হয়েছে আমার। আমি গেছিলাম শীতের সময়। বন্ধুরা বলে বর্ষার সময় ওখানে মেঘের সাথে সহবাস করাটা নাকি আরও অনেক মজার।
উত্তরবঙ্গে আর সুন্দরবনে যাইনি। এবারে ঈদের পরে ইচ্ছে আছে, অন্য কোথাও না হলে দিনাজপুরে যাওয়ার। সম্ভব হলে পঞ্চগড়/তেতুলিয়া পর্যন্ত। এদিকে যাওয়ার ইচ্ছার পিছনে আরেকটা কারনও আছে। ভ্রমণে আমার কাছে বাহনটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমার সড়কপথে ভ্রমণ খুব একটা প্রিয় নয়। বরং ট্রেন খুব ভালু পাই! বিশেষত কেবিনে। এমনকি বান্দরবান/টেকনাফ/মার্টিন্স যেতে হলেও অন্তত চিটাগাং পর্যন্ত ট্রেনে যাই। গাড়ি বা ডাইরেক্ট বাস কদাপি নয়। দিনাজপুরেও তাই, এখানে নাকি ডাইরেক্ট ট্রেনে যাওয়া যায় - প্রায় ১০-১২ ঘন্টার মামলা (কিম্বা আরও বেশি? কেউকি জানাবেন?)। সিলেট বা চিটাগাং-এর মত ৫-৬ ঘন্টার কুইকি না। ভাবতেই রোমাঞ্চিত বোধ করছি
দরকার হলে একটা পুরো কেবিন বুক করে নেব এবারে নিজের জন্য। আপ-ডাউন দুদিকেই। এমনকি শুধু এইটুকুতেই আমার একটা মিনি-ভ্রমণ কমপ্লিট হতে পারে। গন্তব্যে না ঘুরেই। পঞ্চগড়/তেতুলিয়ার কোথায় যেন টিলার ওপর একটা বাংলো/রেস্ট-হাউজ আছে যেখান থেকে নাকি পরিষ্কার দিনে হিমালয় দেখা যায়। কেউকি জানেন এটা সম্পর্কে?
এখন ভাবছি, ঈদের পর এবার কি করব! আউটবাউন্ড ট্রেনের টিকিট পাব তো তখন?!
****************************************
খুব সাধারণ মানুষ হিসাবে ট্রেনের থার্ডক্লাশের যাত্রীর মতো। ছোটখাটো কোন গঞ্জে ছোট খাট কোন হোটেলে রাত্রি যাপন ইত্যাদি আর কি।
খুব বেশি দিন আগে নয়, দুই বন্ধু মিলে টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়েই "খুব সাধারণ মানুষ হিসাবে ট্রেনের থার্ডক্লাশের যাত্রীর মতো" থার্ডক্লাশেই সিলেট গিয়েছিলাম রাতের ট্রেনে। সাথে ১৮-২০ বস্তা শীতবস্ত্র গরিব মানুষের জন্য। হঠাৎ করেই মহৎ সাজার শখ হয়েছিল বোধহয়। তো থার্ডক্লাশের (এখন আর 'থার্ড ক্লাস' বলে না বোধহয়, যদ্দুর মনে পড়ে 'সুলভ শ্রেণী') উপচে পড়া ভিড়ে কম্পার্টমেন্টের দরজার কাছেই সিট। সেখানে অর্ধেক সিট আর অর্ধেক বস্তার উপর ত্রিভঙ্গমুরারি হয়ে বসে সারারাত কয়েক হাত দুরেই বাথরুমের ভাঙা দরজার ধড়াম-ধড়াম লাগাতার বাড়ি খাওয়ার আওয়াজ, ঘাম-ময়লা, আর সর্বোপরি অতি সন্নিকটস্থ টয়লেট উপচে বেরিয়ে আসা নাসারন্ধ্র দিয়ে ঢুকে মগজ ছ্যারাব্যারা করে ব্রম্মতালু ভেদ করে আকাশপানে বেরিয়ে যাওয়ার মত ভয়ঙ্করতম উৎকট ও বিকট অজস্র 'সাধারণ মানুষের' ততোধিক 'সাধারণ মলমুত্রের' (মলও ছিল মনে হয়) বেহেশ্তি সুঘ্রাণের সুচিক্কন হল্কা দমকে দমকে প্রাণভরে গলধকরণ বা নাসিকাগ্রহণ করতে করতে ভোরে সিলেটে যখন পৌঁছেছি, ততক্ষণে আমি প্রায় অসুস্থ। শীতবস্ত্রের বিলিব্যবস্থা বন্ধুর ঘাড়ে চাপিয়ে স্নান সেরে সোজা শয্যগ্রহণ তখনকার মত। ফিরতি পথে এই অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে নিলাম ফাস্টো-ক্লাশ চেয়ারকার। এটাও রাতের ট্রেন এবং ক্লান্ত বিধায় সাথে সাথে ঘুম। রাতের কোন এক সময় ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বাথ্রুমে যাওয়ার জন্য সিট ছেড়ে উঠতে গিয়ে দেখি হাত দুটো চেয়ারের হাতলের সাথে প্রায় আটকে গেছে আঠার মত। কি ব্যাপার? না, ঐ ফাশক্লাশ হাতলে বহুদিন ধরে পরতে পরতে এতই অসম্ভব ময়লা জমেছে প্রায় ইঞ্চি-অধিক পুরু হয়ে, যে এখন তা আমার হাফহাতা শার্ট পরার ফলে খোলা হাতের কনুই থেকে কবজি পর্যন্ত চামড়া আঠার মত পরম ভালবাসায় আশ্লেষে আঁকড়ে ধরেছে। বলছে যেতে নাহি দিব... আর আমার হাতও বলছে - যেতে নাহি চাই। শেষে ওদের লাইলি-মজনু প্রেমে রসভঙ্গ ঘটিয়ে জোর করে হাতদুটির বিচ্ছেদ ঘটালাম সিটের হাতল থেকে। চট্চট্ করে প্রতিবাদ জানাতে জানাতে হাতের চামড়া শেষ পর্যন্ত উঠে আসতে বাধ্য হল আমার নিষ্ঠুরতায়। বাড়ি ফিরে এগ্জিমা নামক বিরহরোগের ভয়ে সাথে সাথে স্যাভলন ও লাইফবয় সহকারে গোসল।
এরপর থেকে আমি বাংলা বায়স্কোপে গরিব ছেলের প্রেমে পড়া ধনীর দুলালীর নিষ্ঠুর অমানুষ বড়লোক বাপের মতই দেহের ত্বক বা নাসারন্ধ্রের সাথে সাত জন্মের ময়লার পুরু স্তর বা উপচানো মলমুত্রের সুতীব্র সুগন্ধের অবৈধ প্রেমের মধ্যে কোনই রোমান্টিকতা খুঁজে পাই না।
আপনি যদি পান, আপনাকে শতকোটি সালাম !
-----------------------------------
ও হ্যাঁ, সেন্ট মার্টিন্সের ছোটখাটো কোন গঞ্জে ছোট খাট কোন হোটেলে রাত্রি যাপন করতে গিয়ে বাইরের জঙ্গল থেকে ঢুকে পড়া একেকটি নেকড়ে বাঘ সাইজের বিশাল ইঁদুর বাহিনির সাথে সারা রাত জেগে বিছানার উপর লাফাতে লাফাতে যে বিশ্ব-রোমান্স কনফারেন্স করেছিলাম, সে গল্পটা তো বাদই পড়ে গেল। যাজ্ঞে, আপনি জানতে চাইলে আরেক দিন হবে না হয়।
-----------------------------------
ডিসক্লেইমারঃ আপনার এক্সপেন্সে একটু মজা নিলাম, প্লিজ মাইন্ড খেয়েন না !! আর হ্যাঁ, নিজের কল্পনার বাস্তবায়নে কোন দ্বিধা না। তবে, উপ্রে আমার ঘটনাগুলি কিন্তু সত্য, বানানো না!
****************************************
আরে নাহ, মাইন্ড খাই নাই। এক সময় আমাদের রেলপথ বেশ উন্নত ছিলো। তখন অধিকাংশের চলাচলের বাহণই ছিলো রেলগাড়ী। আমরা তখন উদ্দেশ্যবিহীন ভাবেই রেলে উঠে বসতাম। গন্তব্য জানা নেই। পকেটে টিকিটও নেই। স্টেশনে ট্রেন থামলেই আমরাও নামছি। আবার ট্রেনের ভোঁ শোনার সাথে সাথে ট্রেনে উঠে পড়ছি। কারও আত্মীয়স্বজনের বাড়ির এলাকায় নেমে পড়ে সেই বাড়ি খুঁজে তাদের অতিথি বনে যেতাম। তখনকারদিনে কিন্তু অতিথিরা অনাহূত বা অনাদৃত ছিলোনা বরং বেশ উষ্ণ অভ্যর্থনাই পাওয়া যেত। সেই সব দিনের কথা মনে করেই আরকি......।
ভাল থাকুন। আপনার আগামী ভ্রমণ সুখকর হোক।
শ্য়ালোতে করে সদরঘাট থেকে টংগি গেছেন কখনো?
বা ডেমরা ব্রিজের তলা থেকে ঘোরাশাল?
একবার চেষ্টা করে দেখেন।
ঢাকা শহরটা বেশ সুন্দর।
ধন্যবাদ, ভাবছি এবার একটা কিছু করবই। আর 'নন্দলাল' থাকতে চাইনা।
অনেক ভাল একটা জিনিস বিশেষ করে এই সময়ে...
দারুণ ব্যাপার। আমি কার্গো করে একবার বিশাল একটা ঘুরান্তিস দিয়েছিলাম বহু আগে।
সুন্দর লেখা, কটা দিন সবুর করে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারিতে পিলান করেন, আসিতেছি।
facebook
ধন্যবাদ। আরে আসেন, আসেন সে সময়তো শুধু আপনার সাথেই ঘুরবো।
"ঘরে বসে থেকে লাভ কী বল..."- আমাকেও বলছি কথাগুলো...
শুভ ভ্রমণ...
পরিবারের সবার শুধু ভয়, টিভি খুললেই যে সড়ক দূর্ঘটনা। যদি.....।
লন্ডনে সন্ধ্যা নামে নটার দিকে, তাই পাঁচটা-ছটায় কলেজের কাজ শেষে বেরিয়ে পড়ি রাস্তাঘাটে হাঁটতে হাঁটতে। তা একবার...
হুম, শুধু নতুন জায়গা ই দেখা হলো? নতুন কোন অভিজ্ঞতা?
আঁটঘাট বেঁধে বেড়াতে যাবার এক মজা আর হুড়মুড়িয়ে 'যেদিকে দু'চোখ যায়, সেদিকে যাব' টাইপের ঘুরাঘুরিতে আরেক মজা।
টেক্সাস আসলে আপনাকে নিয়ে, 'গিন্নী' আন্টিকে নিয়ে পাহাড়ে/জঙ্গলে ক্যাম্পিং-এ যাওয়া যাবে
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার এ নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলুম। এ জনমে যদি কখনও সুযোগ হয় নিশ্চয় যাব আপনাদের টেক্সাসে।
এক সময় আমার অভ্যাস ছিলো, ঐ হুটহাট বেরিয়ে পড়া। তখনকার সময়ে রেলপথ অনেক উন্নত ছিলো। অধিকাংশ মানুষই তখন রেলপথেই চলাচল করতো। আমিও হঠাৎ ই কোনদিন রেলে চড়ে বসতাম। গন্তব্য জানা নেই। পকেটে টিকিটও নেই। তারপর কোন এক জায়গায় নেমে পড়া। খুঁজেপেতে কোন পরিচিতজন বা আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া। তখন কিন্তু অতিথিকে অনাহূত মনে করা হতোনা, বরং বেশ খায়-খাতিরই পাওয়া যেত।
যাক সেকথা, ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
দাওয়াত দিলাম আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসার। বেশি দূর নয় , খুলনায়। কতক্ষন ই বা লাগবে , বড়জোর ৭/৮ ঘণ্টা ।রিকশায় করে শহর ঘুরবেন দুপুরে ভেটকি মাছ আর ঘি কাঞ্ছন শাক দিয়ে ভাত খাবেন। সন্ধ্যায় হাটবেন রূপসার পাড় ধরে। রাতে ছাদে উঠে শুনবেন বাতাসের গর্জন । পছন্দ হয়? সিরিয়াসলি বলছি কিন্তু।
(শুধু ডিসেম্বার পর্যন্ত একটু ওয়েট করেন, বাড়ি ফিরে নেই)
দাওয়াত কবুল করলেন কিনা জানাবেন কিন্তু।
মুহাম্মাদ_আসাদুজ্জামান
খুলনা! আমার স্কুল জীবনের অনেকটাই কেটেছে খুলনায়। তা সে ৫০-৪৫ বছর আগে। তারপর দু-একবার খুলনা গিয়েছি তাও সে প্রায় বিশ বছর আগে। যাব, যাব নিশ্চয় যাব। ডিসেম্বরই তো বাংলাদেশে বেড়ানোর জন্যে ভাল সময়।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকুন।
একা যেতে চাইলে আমার কাছে পাহাড়টাই বেশ লাগে। একটা সময়ে যে বান্দরবনের কত পাহাড়ে শুধুমাত্র একটা স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে রাত কাটাইছি, পুরা একা। আমার আরেকটা একাকী পূর্ণিমা রাত কেটেছিলো সীতাকুন্ডু পাহাড়ের উপরের মন্দিরে। সে কী এক অপার্থিব জগত। জানি সম্ভব না তারপরেও খালি মনে হচ্ছিল মন্দিরের মূর্তি বোধহয় এখনি কথা বলে উঠবে। একটু ভয় ভয় করলেও হতাশই বেশি হয়েছি কথা না বলাতে। রাতের যে কত শব্দ আর কত ধরন তা বোঝা যায় না প্রকৃতির কাছে একাকী না গেলে। সেন্ট মারটিনে রাতের বীচে আরেক পূর্ণিমায় যখন একা হয়েছিলাম তখন সমূদ্রের যে ডাক শুনেছি তা আর কখনই শুনতে পাইনি। একই সাথে শ্রদ্ধা এবং ভয় জাগানো সেই রূপ।
কাজেই বেরিয়ে পড়ুন। নিশ্চিন্তে। বের হওয়ার পর যদি কখনও মনেহয় যে তল্পিবাহক দরকার একজন তো ডাক দিয়েন। বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকুন। হাজির হয়ে যাব।
ধন্যবাদ, সঙ্গ দেবার অঙ্গিকারে জন্য।
এবার শুধু নিজের জন্যে বাঁচুন, তাই করুন যা আপনার মন করতে চেয়েছে এতদিন, মনের উপরে কোন কথা নাই! মানুষ ততদিন বাঁচে যতদিন তার মনটা বাঁচে, বয়সের বেড়াজালে মনটাকে ঠেকানো কেনো! বেড়িয়ে পরুন নিজের মত, এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি!
ধন্যবাদ, সমর্থন যোগাবার জন্য। আর যে কটা দিন বাঁচি নিজের মতো করেই বাঁচতে চাই। এখন খেকে মনটা যা চাইবে তাই করবো।
নতুন মন্তব্য করুন