আদিতে নারী-পুরুষ ছিলনা, ছিল মানুষ। পরবর্তীতে সেই অখণ্ড মানবসত্তা নারী-পুরুষে বিভাজিত হয়।
আমাদের বাংলা ভাষাব্যাকরণে স্ত্রীলিঙ্গের মানুষ প্রজাতিকে,
নারী: নৃজাতির বা নরজাতির স্ত্রী, নরের ধর্ম্ম্যা, সীমন্তিনী- কামিনী,
স্ত্রী: যাহাতে গর্ভ সংহত বা কঠিন হয়, সীমন্তিনী, নারী - যোষিৎ, মাদী ,
ললনা" সুকুমারাঙ্গী, বিলাসকারিনী,
রমণী: রময়িতা, রতিকারি)
অঙ্গনা" যাহার কল্যাণসূচক প্রশস্ত অঙ্গ আছে- সৌষ্ঠবশালিনী নারী,
কামিনী: কামাতিশয়যু্তা, কামবেগযুক্তা নারী- রমণী,
মহিলা: স্ত্রীমাত্র, - ভদ্র নারী, মহলবাসিনী,
বনিতা: দয়িতা, প্রিয়া, অনুরক্তা স্ত্রী - প্রিয়া,
বামা: অধম, অধীন- নারী,
সুন্দরী: কান্তা, মনোরমা,সুশ্রী প্রভৃতি শব্দে বিশিষ্ট করা হয়েছে। তাদেরকে আবার 'মেয়েছেলে'ও বলা হয়েছে। এর কোনটিই কিন্তু পুরুষের" (মানব, মানুষ, কার্য্যকারক, বংশের সন্তানপরম্পরা - মরদ) সমগোত্রীয় সম্মানসূচক নয়।
বিভিন্ন উপকথা বা পুরাণকথায় আছে:
প্রাচীণ গ্রীক সভ্যতায় মদনদেব বা কামদেব ছিলেন, 'ডায়ানিশাস' আর সৌন্দর্যের দেবী ছিলেন, 'আফ্রোদিতি'। গ্রীকদের আরেক প্রজনন দেবী ছিলেন ডিমিটার। তিনি ছিলেন জগত্মাতা, ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, সনাতন ধর্মীয় দেবী মা কালীর মতো।
প্রাচীণ মিশরীয় সভ্যতায় প্রেম ও প্রজননের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হচ্ছেন 'আইসিস'। তিনি উর্বতারও প্রতিক। আর 'নীলনদ'কে দেবতা জ্ঞান করা হতো। রোমক সভ্যতায় ডায়ানিশাসের স্থলে 'ব্যাক্কাস', আর আফ্রোদিতির জায়গায় সৌন্দর্যের দেবী হিসাবে 'ভেনাস'। গ্রীস, মিশর, রোমের এই সব দেব-দেবীদের উপাসনাস্থল ছিল মদিরাপিচ্ছিল মদনমন্দিরের অভ্যন্তরে। প্রাপ্তযৌবন নর-নারীর বাধাবন্ধনহীন যৌনক্রিয়াই ছিল এর পূজার উপাচার। আমাদের এই ভারতবর্ষীয় সংস্কৃতিতেও দেখি স্বতস্ফূর্তভাবেই জন্মলাভ করেছিলো, মদনপূজা বা লিঙ্গপূজা।
সনাতনধর্মীয় শাস্ত্রকথার কোন কোন উপাখ্যানানুযায়ী, ব্রহ্মার অন্তরে সৃষ্টির ইচ্ছা জাগ্রত হলে তার চেতনায় (চিন্তায়) কামদেবের উদ্ভব হয়। সনাতন ধর্মশাস্ত্রানুযায়ী কামদেবের সঙ্গীনী (consort) রতি (আকাঙ্খার দেবী)।
প্রতিটি আদিম সমাজই শিশ্নের মহিমায় বিশ্বাস করে।তাদের ধারনামতে শিশ্ন হচ্ছে লাঙ্গল যা কর্ষণ করে আর নারীর যোনী হচ্ছে জমিতে কর্ষণজণিত লাঙ্গলের দাগ। সংস্কৃতে লাঙ্গল (অর্থ বলা হয়েছে ভূমিগামী, হল, সীর) আর লিঙ্গ (বিশেষ চিহ্ন, লক্ষণ) একই ধাতু থেকে উৎপন্ন শব্দ।
'সীতা' ও 'রাম' শব্দ দুটির বিশ্লষণ দেখুন। 'সীতা' (লাঙ্গলরেখা, কৃষ্টভূমি, চষা জমি, সীরখাতা) শব্দটি দ্বারা বুঝানো হচ্ছে 'হলরেখা' বা লাঙ্গলের ফলা দ্বারা কর্যণের দাগ যা কিনা যোনির সমার্থক আর 'রাম' শব্দটি এসেছে 'রম্' ধাতু থেকে। যার এক অর্থ, চাষ করা বা কর্যণ করা অপর অর্থটি হলো, 'রমণ'।
বৈদিক যুগের বিবাহ সম্পর্কে বেদের বিশ্লেষকগণের মত, বিবাহ কোন বিশেষ ব্যক্তির সাথে হতোনা, বরং সেই ব্যক্তির সকল ভ্রাতাগণের সাথে হতো। আপস্তম্ভ (আপস্তম্ভ ছিলেন একজন বৈদিক মুনি) ধর্মসূত্রের যুগ পর্যন্ত এই রীতি প্রচলিত ছিল। আপস্তম্ভ ধর্মসূত্রে বলা হয়েছে, কন্যাদান করা হয় কোন এক বিশেষ ভ্রাতাকে নয়, বংশের সমস্ত ভ্রাতাকে। যদিও বধূকে জ্যেষ্ঠভ্রাতাই বিবাহ করতো কিন্তু কনিষ্ঠ সহোদরগণেরও তার উপর যৌনমিলন ও রমণের অধিকার থাকতো। পরবর্তীকালে মনু বিধান দিয়েছেন, কলিযুগে কন্যার বিবাহ যেন সমগ্র পরিবারের সাথে যৌথভাবে না দেওয়া হয়।
প্রাচীণকালে বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যেও এই প্রথা প্রচলিত ছিল। হয়তো কোন কোন আদিবাসী গোষ্ঠীতে এ প্রথা এখনও বর্তমান।
বিভিন্ন ধর্মে নারীর স্থান বা মর্যাদা:
সনাতনধর্মীয় মনুসংহিতায় বলা হয়েছে:
"পিতা রক্ষতি কৌমারে, ভর্তা রক্ষতি যৌবনে। রক্ষন্তি স্থবিরে পুত্রা ন স্ত্রী স্বাতন্ত্রমর্হতি।।" অর্থাৎ, কুমারীকালে স্ত্রীলোককে পিতা, যৌবনে ভর্তা ও বৃদ্ধাবস্থায় পুত্রেরা রক্ষা করিবে , কোন অবস্থায় স্ত্রীলোক স্বাধীন থাকিবেনা। (মনুসংহিতা: ৯ম অধ্যায়, শ্লোক - ৩)
"সূক্ষোভ্যোহপি প্রসঙ্গেভ্যঃ স্ত্রিয়ো রক্ষা বিশেষতঃ। দ্বায়োর্হি কুলয়োঃ শোকমাবহেয়ুররক্ষিতাঃ।।" অর্থাৎ পুরুষ, অতি সুক্ষ্ম দুঃসঙ্গ হইতে বিশেষ যত্নে, স্ত্রীলোককে রক্ষা করিবে, যেহেতু রক্ষণে উপেক্ষা করিলে দুঃশীলতায় পিতৃভর্ত্তৃকুলের সন্তাপ জন্মিয়া দেয়। (মনুসংহিতা: ৯ম অধ্যায়, শ্লোক - ৫)
"শয্যাসনমলঙ্কারং কামং ক্রোধমনার্জ্জবম্। দ্রোহভাবং কুচর্য্যাঞ্চ স্ত্রাভ্যো মনুরকল্পয়ৎ।।" অর্থাৎ শয়ন, উপবেশন, ভূষণ, কাম, ক্রোধ, কৌটিল্য, পরহিংসা, ঘৃণিত ব্যবহার, এই সকল স্ত্রীলোকের স্বভাবগত, ইহা সৃষ্টিসময়ে মনু স্বয়ং কল্পিত করিয়াছেন। (মনুসংহিতা: ৯ম অধ্যায়, শ্লোক - ১৭)
"নাস্তি স্ত্রীণাং ক্রিয়া মন্ত্রৈরিতি ধর্ম্মো ব্যবস্থিতঃ। নিরিন্দ্রিয়া হ্যমন্ত্রাশ্চ স্ত্রিয়োহনৃতমিতি স্থিতিঃ।।" অর্থাৎ যেহেতু স্ত্রীলোকদিগের মন্ত্র দ্বারা জাতকর্ম্মাদি সংস্কার হয়না, এজন্য উহাদিগের নির্ম্মল অন্তঃকরণ হয়না এবং বেদস্মৃতিতে অধিকার নাই, এজন্য উহারা ধর্ম্মজ্ঞ হইতে পারেনা এবং উহাদিগের কোন মন্ত্রে অধিকার নাই, এজন্য পাপ হইলে মন্ত্র দ্বারা তাহা ক্ষালণ করিতে পারেনা; অতএব উহারা কেবল মিথ্যা পদার্থ। (মনুসংহিতা: ৯ম অধ্যায়, শ্লোক - ১৮)
কন্যার গুণ বিচারে মনু বলেছেন, 'যার অঙ্গ বিকল নয়, শ্রুতিমধুর নাম, হংস বা গজের ন্যায় গমণ, রোম, কেশ, দন্ত সুন্দর, কোমলাঙ্গী - এমন কন্যা বিবাহ করিবে।।' (মনুসংহিতা: ৩য় অধ্যায়, শ্লোক -১০)
বৌদ্ধধর্মে নারী:
"ইত্থি'পি হি একচ্চিযা সেয়্যা পোসা জনাধীপা, মেধাবিনী সীলাবাতী সস্সুদেবা পতিব্বতা।
তস্সা যো জাযতি পোসো সূরো হোতি দিসম্পতি , এবং সুভগিযা পুত্তো রজ্জং'পি অনুসাসতি।" (সংযুক্ত নিকায়: ১/৮৬)
অর্থাৎ,
"জনাধিপতি! একজন মেয়ে অনেক ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারে। তিনি মেধাবিনী, শীলাবতী, শাশুড়-শাশুড়ী সেবী, পতিব্রতা হয়ে নিজেকে গড়ে তুলে। সুন্দরভাবে নিজের সন্তানকেও গড়ে তুলে এবং এরকম ভাগ্যবতীর পুত্র সুন্দরভাবে রাজ্য অনুশাসন করে।"
"সুসংবিহিতকম্মন্তা সংঘহিতপরিজ্জনা, ভত্তু মনাপং চরতি সম্ভতংনুরক্খতি।
সদ্ধাসীলেন সম্পন্না বদঞু বিতমচ্ছরা, নিচ্চং মগ্গং বিসোধেতি সোতানং সম্পরাযিকং।
ইচ্চতে অট্ঠধম্মা চ যস্সা বিজ্জতি নারিযা, তং পি সীলবতং আহু ধম্মট্ঠং সচ্চবাদিনিং।
সোলসাকারাসম্পন্না অট্ঠংগসুসমাগতা, তাদিসী সীলবতী উপাসিকা উপপজ্জাতি দেবলোকং মানাপং।" (অঙ্গুত্তর নিকায়: ৪/২৭১)
অর্থাৎ,
১।পরিবারের কাজকর্ম সুসংহতভাবে সম্পাদন করে, ২। কর্মচারীদের সাথে সুন্দরভাবে ব্যবহার করে, ৩। স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, ৪। স্বামীর অর্জিত সম্পত্তি যথাযথভাবে রক্ষা করে, ৫। ধর্মের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করে, ৬। শীলসম্পন্ন হয়ে, ৭। দয়ালু এবং ৮। প্রঙ্গাবান হয়ে।
কোরআনে আছে:
"পুরুষরা হচ্ছে নারীদের কাজকর্মের উপর প্রহরী, কারণ আল্লাহতায়ালা এদের একজনকে আরেকজনের উপর কিছু বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছেন, পুরুষের এই মর্যাদার একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে, প্রধানত তারাই দাম্পত্য জীবনের জন্য নিজেদের অর্থসম্পদ ব্যয় করে; অতএব সতী-সাধ্বী নারী হবে একান্ত অনুগত, পুরুষদের অনুপস্থিতিতে তারা স্বয়ং আল্লাহর তত্বাবধানে থেকে নিজেদের ইযযত-আবরু ও অন্যান্য সব অদেখা কিছুর রক্ষণাবেক্ষণ করবে; আর যখন কোন নারীর অবাধ্যতার ব্যাপারে তোমরা আশঙ্কা করো, তখন তোমরা তাদের উপদেশ দাও, তা কার্যকর না হলে তাদের সাথে একই বিছানায় থাকা ছেড়ে দাও,তাতেও যদি তারা সংশোধিত না হয় তাহলে চুড়ান্ত ব্যবস্থা হিসেবে তাদের মৃদু প্রহার করো, তবে যদি তারা এমনিই অনুগত হয়ে যায় তাহলে তাদের উপর অজুহাত খুঁজে বেড়িয়োনা; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবার চাইতে মহান।" (সুরা: আন নেসা, আয়াত: ৩৪)।
"তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্যে সন্তান উৎপাদনের ফসলক্ষেত্র, তোমরা তোমাদের এই ফসলক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই গমণ করো...।" (সুরা: আল বাকারা, আয়াত: ২২৩)
খ্রীস্টধর্মে আছে:
"সেইরূপে বিবাহিত নারীরা, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশবর্ত্তী হও।" (১ পিতর: ৩; ১)
"যেমন সারা অব্রাহামের বাধ্য হইলেন, তাহাকে প্রভু বলিয়া সম্বোধন করিতন; তোমরা যদি সৎকর্ম কর ও কোন প্রকার ভয়েই ভীত না হও, তবে তোমরা তাঁহার সন্তান হইয়া উঠিয়াছ।" (১ পিতর: ৩; ৬)
"বিবাহিত নারীরা, তোমরা যেমন প্রভুর বশবর্ত্তী, তেমনই আপন আপন স্বামীর বশবর্ত্তী হও; কারণ স্বামী তাহার স্ত্রীর মস্তক স্বরূপ, যেমন খ্রীস্টও মণ্ডলীর মস্তকস্বরূপ, আর তিনি সেই দেহের ত্রাণকর্তা; কিন্তু মণ্ডলী যেমন খ্রীস্টের বশবর্ত্তী, তেমনই স্ত্রী সর্ব্ববিষয়ে আপন স্বামীর বশবর্ত্তী হউক।" (ইফিষীয়: ৫; ২২-২৪)
জুডাধর্মে নারী:
"প্রভু পরমেশ্বর কহিলেন, 'মানুষের পক্ষে একা থাকা উত্তম নহে; তাহার জন্য আমি তাহার মত একজন সহায়ক নির্মাণ করিব।"
(আদিপুস্তক: ২; ১৮)
"নারীকে তিনি কহিলেন, 'আমি তোমার প্রসবযন্ত্রণা তীব্র করিয়া দিব এবং যন্ত্রণার মধ্যেই তুমি সন্তান প্রসব করিবে; তোমার আকাঙ্ক্ষা জন্মিবে তোমার স্বামীর প্রতি, আর সে তোমার উপর কর্তৃত্ব করিবে।" (আদিপুস্তক: ৩; ১৬)
এলেন সিজো পুরুষ-নারীর দ্বিমুখি বৈপরিত্যের একটি তালিকা করেছেন। সেটি নিম্নরূপ:
পুরুষ: ১) সক্রিয় ২) সুর্য ৩) সংস্কৃতি ৪) দিন ৫) পিতা ৬) বুদ্ধি ৭) বোধগম্য ৮) বুদ্ধি নিয়ন্ত্রক।
নারী: ১) অক্রিয় ২) চন্দ্র ৩) প্রকৃতি ৪) রাত্রি ৫) মাতা ৬) আবেগ ৭) স্পর্শকাতর ৮) করুণ।
আরও দেখুন, সিগমন্ড ফ্রয়েড বলেছেন, 'নারী হচ্ছেন এমন মানুষ যার কোন একটি প্রত্যঙ্গ হারিয়ে গেছে। একে তিনি বলেছেন,'খোজাগূঢ়ৈষা'। কোন প্রত্যঙ্গটি? হ্যাঁ, সেটা 'শিশ্ন'। ফ্রয়েড আরো বলেছেন, 'নারী যেহেতু হারিয়ে ফেলেছে, ঐ দণ্ডটি তাই নারীস্বভাবের প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে, 'শিশ্নাসূয়া'; অর্থাৎ নারীর জীবন কাটে নিরন্তর পুরুষাঙ্গটিকে ঈর্সা করে।' ফ্রয়েডের মতে, অ্যানাটমি ইজ হার ডেসটিনি - শরীরই তার নিয়তি।'
সারা এলিস লিখেছেন, 'নারীরা তাদের গঠনে ও পৃথিবীতে তাদের অবস্থান অনুসারে আপেক্ষিক প্রাণী।' (বাস্ক, ১৯৭৪, ৫)
বিলেতের রাজকবি টেনিসন লিখেছেন, 'পুরুষ শিকারী, নারী শিকার।' (দি প্রিন্সেস, ১৮৪৭)।
প্লেটো দুটো কারণে তাঁর দেবতাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, প্রথমত তাঁকে ক্রিতদাস না করে স্বাধীন মানুষ করার জন্য। আর দ্বিতীয়ত তাঁকে পুরুষ বানিয়েছেন, নারী বানাননি।
সিমোন দ্য বেভোয়ার তাঁর 'দ্য লাজিয়েম সেক্স' (দ্বিতীয় লিঙ্গ > হুমায়ুন আজাদ) বইতে বলেছেন,
"আমরা মানুষ। কেননা আমরা পেরিয়ে যাই প্রকৃতিকে। মানুষ হওয়ার অর্থ ক্রমশ বিকশিত হওয়া, আবিষ্কার করা, সৃষ্টি করা, জীবনের মূল্য শুধু বেঁচে থাকায় নয় বরং জীবনকে নিরন্তর বিকশিত করার মধ্যে। মানবমণ্ডলিতে আছে দুটি লিঙ্গ, পুরুষ ও নারী। প্রজননের মাধ্যমে কেউ মানুষ হয়ে উঠতে পারেনা, হয়ে উঠতে হয় সৃষ্টি ও নির্মানের মধ্য দিয়ে।"
তিনি তাঁর বইতে ব্যাখ্যা দিয়েছেন পুরুষের পক্ষপাতিত্বের, তিনি বুঝিয়েছেন, কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয়না, বরং হয়ে ওঠে, অর্থাৎ পুরুষতন্ত্র ছাঁচে ঢালাই করে উৎপন্ন করে একটি উপভোগ্য বস্তু: নারী।
জন্মের সময় কোন শিশুই মেয়েলি বা পুরুষালি গুণ নিয়ে জন্মায় না। জন্মের পরে সমাজসংস্কৃতির চাপে তারা অর্জন করে মনোলৈঙ্গিক ব্যক্তিত্ব। জন্মের পরে মানুষকে আবার জন্ম দেওয়া হয়, মানুষমাত্রই দ্বিজ। জন্মের পর থেকে শুরু হয়পুত্রকে পুরুষ আর কন্যাকে নারীরূপে দ্বিতীয় জন্ম দেয়া; এবং নারী ও পুরুষ হয়ে ওঠে দুই সংস্কৃতির অধিবাসী। তাদের জীবন, জগৎ, অভিজ্ঞতা, স্বপ্ন সবই হয় ভিন্ন। পরিবার, সমাজই তাদেরকে তেমনটি হয়ে উঠতে শেখায়, প্রভাবিত করে।
'আধুনিক নারী: বিলুপ্ত লিঙ্গ' নামে একটি বই সম্পর্কে ডরোথি পার্কার বলেছেন, 'যে সব বই নারীকে নারী হিসাবে বিচার করে, সেগুলোর প্রতি আমি ন্যায়ানুগ হতে পারিনা... আমার ধারনামতে আমাদের সবাইকে, পুরুষ ও নারীদের গণ্য করতে হবে মানুষ হিসাবে।''
আমাদের এই অঞ্চলের এক নারীবাদী বেগম রোকেয়া বলেছিলেন,
"এখন প্রশ্ন হইতে পারে, কি করিলে লুপ্ত রত্ন উদ্ধার হইবে? কি করিলে আমরা উপযুক্ত কন্যা হইব? প্রথমতঃ সাংসারিক জীবনের পথে পুরুষের পাশাপাশি চলিবার ইচ্ছা অথবা দৃঢ় সংকল্প আবশ্যক। আমরা গোলামজাত নই, এই কথায় বিশ্বাস স্থাপন করিতে হইবে।"
(মতিচূর, মিসেস, আর এস হোসেন)
"ভগিনীগণ! চক্ষু রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন- অগ্রসর হউন। বুক ঠুকিয়া বল মা, আমরা পশু নই। বল ভগিনী, আমরা আসবাব নই; বল কন্যে, আমরা জড়োয়া অলঙ্কার রূপে লোহার সিন্দুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই। সকলে সমস্বরে বল, আমরা মানুষ।" (মতিচূর, মিসেস, আর এস হোসেন)
১৭৯২ এ মেরি ওলস্টোনক্র্যাফটের 'দি ভিন্ডিকেশন অব দ্য রাইটস অব ওম্যান' এর প্রকাশের পর থেকে কিছু চিন্তাশীল ব্যক্তি নারীমুক্তির জন্য গড়ে তোলেন একটি মৌলিক চিন্তাধারা যা আজ নারীবাদ নামে পরিচিত। এই পথপরিক্রমায় রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বেগম রোকেয়া, লুসি স্টোন, কেডি স্ট্যান্টন, সুজান অ্যান্থনি, স্টুয়ার্ট মিল, হেনরিক ইবসেন, ভার্জিনিয়া উলফ আরো অনেকে মিলে গড়ে তোলেন নারীমুক্তির আন্দোলন।
আমাদের দেশে নারী জাগরণ ও মুক্তি আন্দোলন:
স্বাধীনতা উত্তরকালে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে নারী জাগরণ ও মুক্তি আন্দোলন অগ্রণী ভুমিকায় ছিলেন, সুফিয়া কামাল, শামসুন্নাহার মাহমুদ, নূরজাহান বেগম, সারা তৈফুর, মাহমুদা খাতুন প্রমুখ। সে সময় সরকারী মহিলা সংগঠন, আপওয়া ছাড়াও বেসরকারী বেশ কয়েকটি মহিলা সংগঠন যেমন, মহিলা সংসদ, গেণ্ডারিয়া মহিলা সমিতি, ওয়ারী মহিলা সমিতি, নারিন্দা মহিলা সমিতি, জোন্টা ক্লাব ইত্যাদি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালে 'পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদ' এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। সাধীনতা পরবর্তী কালে 'বাংলাদেশ মহিলা সমিতি' নারী জাগরণ ও মুক্তি আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যায়। মালেকা বেগম, ফওজিয়া মোসলেম, আয়সা খানম, হাসনা বেগম, মখদুমা নার্গিস প্রমুখেরা নারী অধিকার রক্ষার আন্দোলনে অবদান রেখেছেন।
অধমের উপলব্ধি:
মনুষ্য প্রজাতির স্ত্রীজাতি যাকে আমরা নারী বা স্ত্রী বলি, তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম বা লড়াইয়ের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পাবো, কি ভীষণ প্রাকৃতিক বা জন্মগত প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তাকে পথ চলতে হয়। মাসিক ঋতুচক্র, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ন্যাস্ত দ্বায়িত্ব, মাতৃত্ববিষয়ক দায়িত্ব যেমন, গর্ভধারণ, প্রসব, পোষণ, প্রতিপালন ইত্যাদি। এত সব প্রতিবন্ধকতা ছাড়িয়ে-মাড়িয়ে পুরুষের সাথে প্রতিদ্বন্দিতায় এগিয়ে তবেই তার স্থান নির্ধারণ হয়। সেক্ষেত্রে পুরুষ তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থান থেকেই তার কর্ম পরিচালনা করে। অর্থাৎ নারীর জন্য কখনই সমানুপাতিক মসৃন প্রান্তর নির্দিষ্ট করা হয়নি। মানব সভ্যতা ও উন্নতির জন্য পুরুষের উচিত তার মনোজগতে বিপ্লবাত্বক পরিবর্তন ঘটিয়ে নারীর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে তাদের সমপর্যায়ে উন্নীত হবার সুযোগ করে দেওয়া। এবং তাহলেই শুধু জগতে সুখ ও সম্বৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
অসম্পূর্ণ।
অনুপ্রেরণা: আয়নামতি।
সহায়তা:
১) দ্বিতীয় লিঙ্গ: হুমায়ুন আজাদ
২) নারী: হুমায়ুন আজাদ
৩) মতিচূর: মিসেস আর, এস, হোসেন
৪) চলন্তিকা: রাজশেখর বসু
৫) বঙ্গীয় শব্দকোষ: হরিচরণ বন্ধ্যোপাধ্যায়
৬) ভারতের বিবাহের ইতিহাস: অতুল সুর
৭) বাংলায় অনুদিত মনুসংহিতা, বেদ, কোরআন, নতুন নিয়ম, পুরাতন নিয়ম।
৮) নারী জাগরণ ও মুক্তি: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
মন্তব্য
ভালো লাগলো। তবে উপলব্ধির জায়গাটা আরো খানিক ডিটেলস চাচ্ছিল মনে হয়
অজ্ঞাতবাস
হ্যাঁ, মানছি। আর তাইতেইতো লেখার শেষে 'অসম্পূর্ণ' কথাটা জুড়ে দিয়েছি।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।
দুঃশীলতায় পিতৃভর্ত্তৃকুলের সন্তাপ জন্মানো মানে কী?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হে হে হ... কঠিন প্রশ্ন! সম্ভবত, দুষ্টকর্মের দ্বারা শ্বশুরকুলে দুঃখ দেওয়া!
আমার নিজের পরিচিত বেশ কিছু পুরুষ আছেন যাঁদের মতে-চাকুরিজীবী নারীদের মতন এমন দায় আর জগতে নেই! এদের না যায় ফেলা, না যায় সাথে নিয়ে চলা! এ কথাও পদে পদে শুনতে হয়, তোমার তো তবু একটা গতি আছে, চাকুরি না করলে বরের কামাইয়ে জীবনভর চলতে পারবে, আমাদের কথাটা একটু ভাবো! আমি অবাক মানি তাঁদের কথায়-আমাদের বোনদের কখনও ভাইয়ের চেয়ে কম দেখা হয় না বাড়িতে। অথচ মানুষের গবেষণার শেষ নেই! এই পর্যায়ে এসেও মানুষের চিন্তার কতটুকুই বা বদলেছে? নিজের বন্ধু-পরিচিতদের দেখি আর হতাশ হই। জানি যে জগতে কোনোকিছুরই সাধারণীকরণ হয় না, সবকিছুর একটা আপেক্ষিক দিক থাকে তবু একটা উত্তর জানতে ইচ্ছে করে-এখনও কি বেশিরভাগ ছেলেই (সবাই নয়) যোগ্যতর মেয়েদের পাশে নিজেদের নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে? আর ভোগে বলেই কি একটার পর একটা অভিযোগ-অনুযোগের তীর শানাতে থাকে আর সুযোগ বুঝে ছুঁড়ে দেয়?
দেবদ্যুতি
এটি গবেষণার বিষয় বটে!
"এখনও কি বেশিরভাগ ছেলেই (সবাই নয়) যোগ্যতর মেয়েদের পাশে নিজেদের নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে? আর ভোগে বলেই কি একটার পর একটা অভিযোগ-অনুযোগের তীর শানাতে থাকে আর সুযোগ বুঝে ছুঁড়ে দেয়?" - আমার নিজের ত তাই মনে হয়।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
সময় এতটা পাল্টেছে, আমরা কতটা পাল্টালাম, লহমা’দা?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
একটা জায়গায় খানিকটা অন্যায় হয়েছে বলে মনে হল, "মাসিক ঋতুচক্র, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ন্যাস্ত দ্বায়িত্ব, মাতৃত্ববিষয়ক দায়িত্ব যেমন, গর্ভধারণ, প্রসব, পোষণ, প্রতিপালন ইত্যাদি" কেন প্রতিবন্ধকতা? পারিবারিক সামাজিক দ্বায়িত্বের যে অংশগুলো অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেয়া সেই অংশটা মানছি, কিন্তু বাকি বিষয়গুলো নারীর (জন্মগত/প্রাকৃতিক) প্রতিবন্ধকতা কেন হবে?
লেখাটি বিন্দুতে সিন্ধু ধরার মতো। একবারে না লিখে ছোট ছোট করে লেখকের আরো খানিকটা বিশ্লেষণ সহ কয়েক পর্বে আসতে পারত হয়ত।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হ্যাঁ, মানছি। জন্মগত/প্রাকৃতিক বলেই সেটাই স্বাভাবিক। আমি পুরুষের সাথে তুলনামূলক অবস্থানটা চিত্রিত করবার প্রয়াসেই অমনটি বলেছিলাম। বয়স হয়েছে। শরীর ও মন সবসময় এক কেন্দ্রে থাকেনা। শেষদিকে বেশ তাড়াহুড়ো করেছিলাম।
বিন্দুতে সিন্ধুধারন! বেড়ে বলেছেন! আসল কথা বলি, সচলে 'আয়নামতি'র ইণ্ডিয়া'স ডটার' - এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা' লেখাটার মন্তব্য করতে গিয়ে সেটার কলেবর বৃদ্ধি পেতে পেতে শেষে একটা লেখাই নামিয়ে ফেললুম। তাও লেখাটা সম্পূর্ণ হলোনা। দেখি আরও কিু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা!
একটা উদাহরণ দেই প্রতিবন্ধকতার। একটা মেয়ে মাসিকের সময়ে শারিরীক অস্বস্তি, পেটে ব্যাথা (নট লিমিটেড টু) নিয়ে কাজ করতে যায় তার পুরুষ কলিগদের সাথে। শারিরীক এই অবস্থা তাদের কাজে প্রভাব ফেলতে পারে। এই জিনিসটা কনপেনসেটেড না কর্মক্ষেত্রে। আমরা যদি এই অসুবিধাগুলোর স্বীকৃতি না দেই তাহলে এই কমপেনসেশনের রাস্তা তৈরি হবে না। কমপেনসেশন না দিতে পারলে মেয়েরা ক্যারিয়ারে ছেলেদের থেকে পিছিয়ে থাকবে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
দেশে মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে কম পানি ঘোলা করা হয়নি।
অনেক সেক্টরে নাকি মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়া বাঘের দুধের মত দুর্লভ তাও বেতনসহ!
এক্ষেত্রে সবচে' বেশি ভুগতে হয় মনে হয় পোশাক শিল্পে জড়িত মা-বোনদের।
বিজিএমইএ'র তথাকথিত শিক্ষিত মানুষগুলো মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়ার জন্য মহিলাকর্মীদের
গর্ভধারণে উৎসাহিত হবার এবং এতে করে জন্মহার বৃদ্ধির পাওয়ার মত মানসিকতা ধারণ করেন।
এমন উদ্ভট বিবেচনাবোধ সম্পন্ন পরিবেশে নারীর জন্য প্রতিমাসের অস্বস্তিকর দিনগুলোর বিষয়ে সামান্য সহমর্মিতার আশা করা মামার বাড়ির আব্দারের মত। কাজের গুণগত মান যে কেবল মেশিন কিংবা কর্মীর দক্ষতার উপরে না তার শারীরিক মানুষিক অবস্হার উপর নির্ভরশীল, এটা ভাবতে পারার মত পরিবেশ তৈরি হতে ঢের দেরি আছে আসলে।
যা জন্মগত/প্রাকৃতিক সেগুলো প্রতিবন্ধক হতে পারে অবশ্যই। হাসিব উদাহরণ দিয়েছেন। নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আরো অনেক উদাহরণ-এর ভুক্তভোগী আছি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অভিজ্ঞতার বয়ান কি করা যায়না? তাহলে হয়তো আমার বলা কথাটার একটা ন্যায্যতা পাওয়া যেত!
কিছু জায়গায় কী কী যেন বলতে চাইলাম। মন্তব্য করতে এসেই ভুলে গেছি। সমাজতাত্ত্বিক বিচারে একটা সময় পর্যন্ত মানুষের আচারের ক্ষেত্রে পরিবেশকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হলেও এখন কিন্তু বিজ্ঞানীরা জিনের বিষয়ে বেশি মনোযোগী। তবুও পরিপার্শ্ব
একটা ফ্যাক্টর। মূল যে বিষয়টা, তা হলো ধর্মীয় বানী বা সামাজিক অনুশাসন দুটোই পুরুষ নির্মিত। এমনকি যদি জিনে সঞ্চিত তথ্যের কথাও যদি বলা হয়, তাহলেও তা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের তথ্যই, যা অবচেতনেও নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। আমি এক্ষেত্রে পুরুষতন্ত্রের বদলে পিতৃতন্ত্র কথাটা বেশি ব্যবহার করি। তাহলে অর্থ কাঠামোটা সামনে আসে। যা হোক অগোছালো কথা বলে লাভ নেই। যা চিন্তায় ছিল, তা মাথায় নেই আপাতত। মনে এলে পরে এসে বলে যাব।
তার আগ পর্যন্ত দাবি করে গেলাম ‘লেখাটা সম্পূর্ণ হোক’।
স্বয়ম
স্বয়ম
বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞান একেবারেই কম, তাই ও বিষয়ে কিছু বলতে পারবোনা। অন্যান্য দিক নিয়ে আরো কিছু লেখা যায় বটে।
অনার্য,
"মাসিক ঋতুচক্র, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ন্যাস্ত দ্বায়িত্ব, মাতৃত্ববিষয়ক দায়িত্ব যেমন, গর্ভধারণ, প্রসব, পোষণ, প্রতিপালন ইত্যাদি" কেন প্রতিবন্ধকতা।
এখানে প্রাকৃতিক বিষয়গুলো আসলে প্রতিবন্ধকতাই। খুব সাধারণ উদাহরণ দিলে প্রতিমাসে ব্যাথাময় কিছু দিন কাটানো মানে বছরে বেশ কতগুলো দিন স্রেফ নষ্ট হয়ে যাওয়া। বাকিগুলোও সেরকম কিছু না কিছু প্রভাব রাখে।
অসম্পূর্ন বলে ধারনা করছি লেখা আরো গোছানো উদ্দেশ্যমূলক হবে। সব তথ্যের পাশাপাশি আপনার নিজস্ব চিন্তা ও ব্যাখা জানতে চাই
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ধন্যবাদ, কিছুটা সহমত পোষণ করায়।
আরও কিছু লিখবো বটে, তবে বয়সের কারণে সব কেমন যেন গুলিয়ে ফেলি, গুছিয়ে লেখাটা আর হয়ে ওঠেনা।
****************************************
খুব চমৎকার লেখা। তবে অধুনা নারীবাদী দের মত পক্ষপাত দুষ্ট। নারীরা নিজেদের পরগাছা ধরনের ভাবনা থেকে সরে না আসা পর্যন্ত পুরুষ এর সমান হতে পারবে না। অনেক নারীবাদী নারী কে দেখেছি, নিজেরা উপার্জন করলেও মনে করেন তাকে ভরণ পোষণের দায়িত্ব পুরুষের। দেশে কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেও আজও বিয়ে করতে হলে পুরুষ কে "দেন মোহর" এর টাকা দিতে হয়। লেখাতে কোরান এর উক্তি দেওয়া হয়েছে কি প্রেক্ষিতে দেন মোহর দেওয়ার বিধান হয়েছিল। মজার ব্যপার হচ্ছে নারীরা সম অধিকার চেঁচালেও দেনমোহর, ভরণ পোষণ এসব এর বিরুদ্ধাচরণ করেন না।
নারীদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য করা আইন এর অপব্যবহার করে স্বামী এর উপর নির্যাতন করে যে সব নারী, তাদের বিরুদ্ধে একটি নারীবাদীকে টু শব্দটুকু করতে দেখি না। হ্যাপি যেমন পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ক কে তাঁর নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে "ধর্ষণ" বলে অবহিত করলে ভেটেরান নারীবাদী তসলিমা নাস্রিন তাকে সাধুবাদ জানান। কখনও আইনের দুর্বলতা তুলে ধরেন না, যে কোন সভ্য দেশে বিয়ের "প্রলোভন" বা "প্রতিশ্রুতিতে" consentual sex কে ধর্ষণ বলে না। যৌতুক আইন এর যথেচ্ছ অপব্যবহার আজ যত্রতত্র। স্বামী এর পরিবারের থেকে চাঁদা বাজি করা এই আইনের প্রধান application হয়ে গেছে। মহিলা কোটা তে সংসদে আসন পেতেও নারীদের আত্মসম্মানে বাধে না।
এসবের আলোকে so called নারীবাদীদের ত্রাহিচিৎকার শুনলে একদলা থুথু ছাড়া মুখে কিছু আসে না।
আপনার সমিস্যা ভিন্ন জায়গাতে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আরে বাব্বা! কি বলে এসব? এসবের উত্তর দিলে আলাদা পোস্ট লিখতে হইবো। ভাই পরিচয়টা দিনতো একবার, পায়ের ধুলো নেই! হাসিব ভাই বলেছেন,
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আশা করি একটি ভালো পোস্ট পাবো এসবের জবাবে। তবে আমার মতামত, যদি নারী পুরুষ সমঅধিকার পেতেই হয়, তাহলে নারী কে সমকর্তব্য ঘাড়ে নিয়েই এগিয়ে আসতে হবে। সংসারের খরচের দায়িত্ব, রেস্টুরেন্ট এর খাবার বিল এর খরচ ইত্যাদি। বৈষম্য মূলক যে প্রথা নারীর বিরুদ্ধে সেটা যেমন পরিহার করতে হবে, এক ই ভাবে বৈষম্যমূলক যেসকল আইন নারীর পক্ষপাত দুষ্ট, সেগুলিও বর্জন করা প্রয়োজন।
আমার নাম দিয়ে কমেন্ট করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু capta এর সমিস্যা হয়।
এর চেয়ে ভাল পোস্ট দেবার যোগ্যতা বা সামর্থ হয়তো আমার নেই। বরং আপনার বক্তব্যটা খোলাসা করে একটা লেখা দিন না!
পড়বার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকে আপনার লেখার জন্য ধন্যবাদ দেওয়া হয় নি। অসংখ্য ধন্যবাদ একটি গোছানো লেখা লিখবার জন্য।
মন্তব্যটি করার সময় একটু emotional ছিলাম। আসলে এখন চিন্তা করছি যে, আপনার লেখার সাথে আমার প্রথম মন্তব্যটি যায় না। আমার বক্তব্য ঠিক আছে। শুধু আমার মন্তব্যটির বদলে আলাদা একটা লেখা দেওয়া উচিৎ ছিল।
চেষ্টা করবো গুছিয়ে একটা লেখা দিতে।
আর flaming করার জন্য দুঃখিত।
-নীল কাকাতুয়া
ধন্যবাদ। হ্যাঁ, আপনার কথায়ও যৌক্তকতা থাকতে পারে বৈকি! তাছাড়া সবারই নিজস্ব মতামত দেবার অধিকার আছে। ঐ যে, ভলতেয়ার বলেছেন, "তুমি যা বলবে তাতে হয়তো আমার অসমর্থন থাকতে পারে, কিন্তু তোমার বলার অধিকারকে আমি জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবো।"
একটু যদি কয়া দিতেন, বৈষম্যমূলক কোন সকল আইন নারীর প্রতি পক্ষপাত দুষ্ট।
মন্তব্যের শ্যাসে নামটা খালি লিখা দিবেন মন্তব্যের মত, ক্যাপচা লাগবু না।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আপনি troll করলেন নাকি বুঝলাম না।
১। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, সংশোধিত ২০০৩। পুরো আস্ত একটা আইন।
http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_pdf_part.php?id=835
আইনের ৯(১) যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১[ ষোল বত্সরের] অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া,যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন৷
প্রতারণা পূর্বক সম্মতি কথাটি অত্যন্ত vauge. এবং নারীর প্রতি অসম্মানকর। নারী নিজে একটি স্বাবলম্বী ব্যক্তি। তাকে লজেন্স এর প্রলোভন দেখিয়ে যেমন কাজ করানো যায় না, তেমনি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে বিছানায় নেওয়াটা ধর্ষণ হয় না। কিন্তু "বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ" দিয়ে গুগলএ সার্চ মারেন একটা। অন্নেক কেস পাবেন। রুবেল হ্যাপি এর কেস ছাড়াও।
অর্থাৎ, বিয়ের কথা হোল। নারী ও পুরুষ বিছানায় গেল। বিয়ের কথা ভেঙ্গে গেল। ব্যাস সম্মতিপুরবক সঙ্গম ধর্ষণ হয়ে গেল?
২। যৌতুক দমন আইন - এটি সৌভাগ্যপূর্বক ভাবে লিঙ্গ বৈষম্য পূর্বক না, কিন্তু সকল মামলা করা হয় কনের পক্ষ থেকে। কারণ "কাবিন" বা "দেন মোহর" এর টাকা বৈধ যৌতুক (যৌতুক এর ডেফিনিশন হোল কোন সম্পদ যা বিয়ের শর্ত স্বরূপ দেওয়া হয়। কিন্তু মোহরানা এর টাকা যৌতুক এর আওতায় নাই বলে স্পষ্ট বলা হয়েছে। ) মজার ব্যাপার, যৌতুক দমন আইন এর মাধ্যমে ৯০% কেস করা হয় যদি স্বামী তাঁর স্ত্রী কে তালাক দেন। আমাদের আইন ভারতের আইনের থেকে কিছুটা ভালো। অপরাধ জামিনযোগ্য।
উভয় আইনে অভিযোগ করা মাত্র গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কন্যার মেজাজ খারাপ হলে ইচ্ছামত বরের মা, বাপ, ভাই, বোন গুষ্ঠি সুদ্ধ জেলের ভাত খাওয়াতে পারে। এবং খাওয়ায়।
- নীল কাকাতুয়া
কৃতজ্ঞতা। আমি ট্রোল করিনি। যখন ঢালাওভাবে বলবেন তখন আলোচনা করে আরাম হয় না, সুনির্দিষ্ট করে বললে সুবিধা হয়। আপনার
এই বক্তব্য দুটিতে আপত্তি ছিল যা মূল পোস্ট থেকে দূরে সরে যাওয়াও ছিল। আপনার এই মন্তব্যটি পড়েই বোঝা যাচ্ছে, আইনের সমস্যা নয় এর ব্যবহার বা প্রয়োগগত সমস্যা।
বাস্তবে, লজেন্সের প্রলোভন দেখিয়ে অনেক নাবালিকাই ধর্ষিতা হচ্ছে, উপবৃত্তির টাকা নিতে যেয়েও হচ্ছে। প্রতারণা শব্দটি আমি নারীর প্রতি অসম্মানজনক মনে করি না, বরং এটি নারী বা যেকোনো মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায় এমন একটি অস্ত্র।
আর যৌতুক নিরোধ আইনটি ভাল করে পড়ে দেখুন, আইনটি জামিনযোগ্য না। আর বাকি যতটুকু বলেছেন সেটা এই আইনের সমস্যা না, ব্যবহারগত সমস্যা। মজার ব্যাপার আরও আছে, ভাত রাধতে দেরি হলেও তালাক দিয়ে দেয় পুরুষ। কন্যার মেজাজ মেজাজ খারাপ হলেই ইচ্ছেমত গুষ্টিশুদ্ধ জেলের ভাত খাওয়াতে পারলে আইনটি জামিনযোগ্য কিভাবে হল?
আমি জানি একটি সামাজিক সমস্যা উদ্ভব হলে চেইন আকারে কয়েকটি মামলা হয়, পারিবারিক আদালতে খোরপোষ দেনমোহরের মামলা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা, যৌতুক নিরোধ আইনের মামলা ইত্যাদি। এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আপনার পোস্টটি পাবার পরেই না হয় করা যাবে। আমরা মূল পোস্ট থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছি। আপনার পরিচয় ও মনোভাব খোলাসা করার জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
প্রতারণা করে (বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে) সঙ্গম অপ্রাপ্ত বয়স্ক কারো জন্য ধর্ষণ হতে পারে। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক একজন নারী এর ক্ষেত্রে সেটা "ধর্ষণ" হয় না। প্রতারণা হতে পারে। সেটার জন্য civil আইন থাকতে পারে। শুধু এই আইনের অংশটি অপব্যবহার হয় প্রচুর পরিমাণে। উলটো ভাবে চিন্তা করুন। একজন নারী তাঁর প্রেমিকের সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে তারপর অন্য কোন পুরুষ কে বিয়ে করলেন। আইনের চোখে অপরাধ নয়। একজন পুরুষ তাঁর প্রেমিকার সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে অন্য নারী কে বিয়ে করলেন। আইনের চোখে সেটা ধর্ষণ। আপনার প্রশ্ন ছিল আইন পক্ষপাত দুষ্ট কোথায়। এই আইনটি নারীর প্রতি পক্ষপাত দুষ্ট। এটুকুতে মনে হয় আমি আর আপনি একমত হতে পারি।
এইটাই আমাদের আইন করার সময় চিন্তা করা হয়। "মেয়েরা অবলা। তাঁরা কিছু বুঝে না। শিশুর মত। প্রলোভনে প্রতারিত হয় এবং পুরুষের থেকে নির্বোধ।" আশা করি আপনি সেটায় এক মত হবেন না। বাস্তবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি জোর জবরদস্তি ছাড়া প্রেমিকের সাথে সঙ্গমে সম্মতি দ্যায়, তাঁর সব কিছু চিন্তা করেই সম্মতি দেওয়ার কথা। যে কারণে উপমহাদেশ ছাড়া English Law তে Rape এর সংজ্ঞাই হচ্ছে "Forcible Penetration / penetration without consent."
I stand corrected. কয়েকজন বন্ধু এই আইনে জামিন পেয়েছিলেন দেখে ভুল জানতাম। যদি জামিন অযোগ্য হয়, তাহলে তো আরও ভালো। এটা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে বাঁধা নাই। উলটে স্বামী ভাত রান্দতে অস্বীকার করলেই মামলার ভয় দেখাতে পারবে স্ত্রী, তাই না?
আপনি স্পেসিফিকালি একটা উদাহরণ দিলে ভালো হয়, ভাত রাঁধতে দেরই হওয়ায় কে কোথায় তালাক দিয়েছে। এবং তালাক নোটিশএর কপিটিও দয়া করে দিবেন।
তালাক এর কারণ একটা action আপাত দৃষ্টিতে মনে হলেও এটার পেছনে অনেক অশান্তি থাকতে পারে। এর থেকেও wierd কারণে পশ্চিমা বিশ্বে তালাক হয় মানুষের। সন্তান পঙ্গু হয়েছে দেখে, নাক ডাকার শব্দ বেশি দেখে, ইত্যাদি। তালাক দিলে সেটার জন্য শাস্তি দিতে হবে সেটা মানতে পারছি না।
- নীল কাকাতুয়া
উনার মন্তব্য পড়ে বুঝলাম নারীবাদিরাই সকল সমিস্যার মূলে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হ। উনার বড় বেতা নেগেচে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
যতক্ষণ পর্যন্ত নারী দ্বারা পুরুষ নির্যাতন পুরুষ দ্বারা নারী নির্যাতনের সমপর্যায়ে আসবে, ততদিন নারীবাদীদের ত্রাহিচিত্কার সহ্য করতেই হবে। একটু কষ্ট করেন।
আপনি যদি ব্যক্তিগত ভাবে কোনো নারীর দ্বারা নির্যাতিত হয়ে থাকেন, তাহলে নারীবাদীদের ওপর ঝাল না ঝেড়ে কোর্টে গিয়ে একটা মামলা ঠুকে দেন না। লোকে হাসবে না কাঁদবে সে নিয়ে চিন্তাটা না হয় পরে করবেন। আর আপনি খাটের নিচে লুকায় থাকলে তার দায় নারীবাদীদের নিতে হবে কেন? পুরুষবাদী একটা সংগঠন খুললেই পারেন, তাইলে দলা দলা থুথু গিলতে হবে না।
- সো
সঠিক বলেছেন জনাব। নির্যাতনটা মিথ্যা মামলা দিয়ে করলে সেটাতে আইনি আশ্রয় পাওয়া মুশকিল। এবং অনেক আইনে মিথ্যা মামলা করার কোন শাস্তির বিধান ও নাই।
দেশে "পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ" এর কোন আইন নাই এই মুহূর্তে। তাই মামলা যদি করতেও হয়, কেউ করতে পারবে না ইচ্ছা করলেই।
আমি সাম্যবাদী। উগ্র "পুরুষ"বাদী ও "নারীবাদী" উভয়কেই ঘৃণা করি।
ধন্যবাদ, পড়ার ও মন্তব্য করার জ্ন্য।
একজন তসলিমা নাসরিন তার মতামত জানাতেই পারেন পক্ষে/বিপক্ষে, তাতে সব নারীদের মনের কথা কওয়া হয়ে গেলু এ ভাবনাটা অতি সরলীকরণ হয়ে যায় ক্যাপচার যন্ত্রণায় ত্যাক্ত নামহীন ভাইয়া(কানে কানে বলি, জানা মতে সচলে মহিলা মডু নেই পুরুষমনা ক্যাপচা কর্তৃক পুরুষের উপর এই অত্যাচারের প্রতিবাদ জানাই )। আইন বিষয়ে বিজ্ঞ অনেকে আছেন সচলে। নীচে আইনজীবি সাদিয়াপু কিন্তু বলেছেন পক্ষপাতদুষ্ট আইনগুলো কি কি বলতে। আপনি সেগুলো বলুন দয়া করে। আলোচনা হোক। আলোচনায় ওঠে আসুক আইনের দুর্বলতাগুলো। পারস্পারিক মত বিনিময়ে সমস্যার সমাধান সহজ সুন্দর হয়। নাকি বলেন? যেভাবে নারী নির্যাতন চলে সমপর্যায়ে কতটুকু চলে পুরুষ নির্যাতন? তবে কথা দিচ্ছি সেরকম হলে আপনার পাশে দাঁড়াতে দ্বিধা করবো না। তাই কেন মাইয়ারা রেস্টুরেন্টের বিল দেয় না, কেন দেনমোহরে ছাড় দেয় না(এ নেয়াটা আমার নিজেরও কেমন জানি ফকির ফকির মনে হয়।) ইত্যাদি বিষয়ে রাগাম্বিত না হয়ে বিষয়টা নিয়ে নামসহ লেখুন বরং। থুথু ছুঁড়ে খামোখাই নিজেকে নোংরা করা বুদ্ধিমানের কাজ না। তবে আপনি নিজের ভাবনা নিয়ে ভণ্ডামীটুকু না করে সরাসরি বলেছেন সেজন্য একটা ধন্যবাদ আপনাকে না দিলেই নয়।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। অন্তত খুঁচাখুঁচি করেন নাই দেখে কৃতজ্ঞ।
সাদিয়াপু এর কমেন্ট এর জবাব দিলাম। উনি আইনজীবী হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই মজা করার জন্য করেছেন কমেন্টটা, যাহক (এই আইন এ কাকে কিভাবে বাঁশ মারতে হয় আইনজীবী দের সবচেয়ে ভালো জানবার কথা। )
Quantity অনুসারে নিশ্চয়ই নারী নির্যাতনের পরিমাণ পুরুষ নির্যাতনের থেকে বেশি হয়। তাই বলে পুরুষ নির্যাতনকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করার কোন কারণ নাই। কোন অপরাধ কম হলে কি সেটা প্রতিরোধে আইন করা যাবে না? এসিড এ পরিসংখ্যান হিসেবে জনসংখ্যার স্বল্প সংখ্যক ভিক্তিম হয়েছে, কিন্তু সরকার দ্রুত আইন করে সেটা প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা করেছে।
এবং এক্ষেত্রে সামাজিক ভাবে কিছু সমস্যা আছে। Inherently আমাদের পৌরুষতান্ত্রিক সমাজ ছেলে দের macho বা tough হতে encourage করে।
তাই একটা মেয়ে গিয়ে যদি পুলিশে বলে যে আমাকে আমার স্বামী থাপ্পড় মেরেছে, স্বামী সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার হবেন। কিন্তু একজন স্বামী যদি নিগৃহীত হন তাঁর পরেও তাঁর পক্ষে কোন আইন নেই। স্ত্রী তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে যে পুলিশের কাছে মিথ্যা FIR করবে। মিথ্যা যৌতুক মামলার ভয়ে, কাবিন টাকার ঋণের ভারে তাকে অসুখী বিয়েতে আটকে থাকতে হতে পারে দিনের পর দিন।
(আর দেন মোহর নিয়ে যতই ফকির ফকির লাগুক, এটার বিরুদ্ধে আমি কোন নারীকে কথা বলতে দেখি নাই। বরং তালাক এর কেস হলে মামলা মোকদ্দমা করে সুদে আসলে ঐ টাকা আদায় করিয়ে থাকে সকল নারী)
আমার প্রথম কমেন্টটি করার সময় একটু emotional ছিলাম। কিন্তু পয়েন্ট ঠিক ই আছে। নারী পুরুষ সমঅধিকার এর পাশাপাশি সমকর্তব্যও চাই।
- নীল কাকাতুয়া
আমার পেশা নিয়ে আবার টানাটানি কেনরে বাবা!
আমি এই বিষয়টা বুঝি না। কেন অনেক পুরুষ এটা নিয়ে কষ্ট পান। দেশের সব আইনই সকলের জন্য। নারী, শিশু, বিশেষভাবে সক্ষম ইত্যাদি অংশের জন্য কয়েকটি বিশেষ আইন আছে, সেটা নিয়েই যত বিপত্তি! সেসব আইন তৈরি করবার কথা আমাদের মাদার ল তেই তো আছে। আর কেন আছে সেটা নিয়ে বললে তো বিশাল লম্বা মন্তব্য হবে। কেন? কোনো পুরুষকে মহিলা বা স্ত্রী চড় মারলে থানা মামলা নিবে না? আইন তো নিষেধ করেনি। দি পেনাল কোডে সকল ধরনের অপরাধের শাস্তির বিবরণ আছে। যৌতুক নিরোধ আইনে পুরুষও মামলা করবে, মহিলা যদি বাড়ি বা জায়গা লিখে চায় বা যৌতুক দাবি করে। তবে?
কেন বিশেষ আইন করার প্রয়োজন হয় সমাজে? এই প্রশ্নের উত্তর সচলের পাঠককে আলাদা করে দেবার প্রয়োজন নেই, আমি জানি।
পারিবারিক আদালতে নারীরা দেনমোহর খোরপোষের মামলা করে,
সত্যিই বলেছেন, তবে সকল শব্দটায় আপত্তি আর আমি বা আয়নামতি করবো না দেখে অন্যদের আইন আধিকার দিলে তারা তা নিবে না কেন সেটাই আমার প্রশ্ন। গৃহিনী প্রতিবন্ধী বাচ্চা প্রসব করায় বা মেয়ে বাচ্চা জন্ম দেয়ায় বা মন চাইল মন পছন্দ দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ বিয়ে করে তালাক দিয়ে দেওয়ায় তিন চারটা বাচ্চাসহ সেই নারীটির ঘাড়ে বোঝা ফেলে যাওয়ায় তিনি কোথায় যাবেন? আর পুত্র সন্তান সাবালক হলে নিয়ে গেলাম আর মেয়ে সন্তান ফেলে গেলাম, দুর হুদাই এইসব আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।
আমিতেই শেষ না সমাজ। সমাজে গ্রামীণ, বস্তিবাসী, অশিক্ষিত, মূর্খ, অচল, চিররোগী, বিয়ের পর চির গাইনিরোগী, সারাদিন চোখের জল মোছা অসংখ্য নারী আছে। পৃথিবী মানে আমিতেই শেষ না, আইন মানে নারীতেই শেষ না। নারীর জন্য গুটিকয়েক আইন তখনই আর থাকবে না যখন আমরা আমাদের চোখের জল আর সেইসব নারীদের চোখের জলের রঙ এক দেখতে পাবো।
ভাল থাকুন ভালোচনা ভালো লাগলো।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
কিন্তু কিছু কিছু আইন কারো কারো জন্য একটু বেশি আর কি। আপনি পরের কথাটি দিয়ে সেটা প্রমাণ করলেন। বিশেষ আইন গুলি অপব্যবহার করা যায়, এটাই সমস্যা। আইনের চোখে সবাই সমান। কিন্তু সামাজিক ভাবে গ্রাম বাংলার একটা মেয়ে আর শহরে বড় হওয়া আধুনিক শিক্ষা সম্পন্ন একজন মেয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। আইনে নারীকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেটা অপব্যবহার করা শুরু করলেই সমস্যা। এবং সেটা শুরু করলে আইন নিজেই "ঢাল"এর বদলে "তলোয়ার"এ রূপ নেয়। ফ্ল্যাট দাবি না করে নারী ইচ্ছা করলেই আইন ব্যবহার করে blackmail করতে পারে তাঁর স্বামীকে। যে ফ্ল্যাট না দিলে বা তাঁর কথা মতন না চল্লে মিথ্যা মামলা ঠুকে দিবে। এর পর হয় "জামিন অযোগ্য" অপরাধে বছরের পর বছর আইনী লড়াই চালানো, অথবা দাবি মেটানো। ভারতে তাদের যৌতুক আইন IPA 498A মারাত্মক ভাবে অপব্যবহার হচ্ছে। গড়ে প্রতি ৯ মিনিটে ১জন বিবাহিত পুরুষ আত্মহত্যা করে মিথ্যা মামলার থেকে মুক্তি পেতে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারী তালাক পাওয়ার পর ধন সম্পদ আত্মসাৎ করতেই মামলা করে থাকে। ভারতে সুপ্রিম কোর্ট যৌতুক মামলায় পুলিশকে তদন্ত ছাড়া গ্রেফতার করতে বারণ করেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই রক্ষাকবচ আইনের অপব্যবহারে স্বামীর মা, বোন সহ অনেক নারীই গ্রেফতারের হয়রানিতে নির্যাতিত হন।
আপনার বক্তব্যের সাথে ১০০% ভাগ এক মত। কিন্তু সেই সমাজটিই অসুস্থ। তাকে শোধরাতে হবে সামাজিক আন্দোলন করে। মিথ্যা মামলাকে encourage করে না। আপনি যে উদাহরণ দিলেন, যে নারী সন্তান হলে তাকে নিচু চোখে দেখে - সেটার জন্য দায়ী perception. মিথ্যা মামলার জোরে নারী যতই empowered হবে, নারীবিদ্বেষ সমাজে আরও বাড়বে। এর থেকে কালো আইনের বদলে perception বদল করাটি প্রয়োজন।
যথার্থ বলেছেন। আর আমার কথার যুক্তি দেখতে পাবেন যখন আপনার কোন ভাই, বা পুত্রসন্তান বা কোন আপন জন অপরাধ না করেও ধর্ষণের অভিযোগে জেলে যাবেন, কোন মেয়ের গায়ে টোকা না দিয়েও নারী নির্যাতনের অভিযোগে বছরের পর বছর আদালতে লড়াই করবেন এবং সে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে চাইলে আপনাকে সহ জেলের ভাত খাওয়ানোর প্রচেষ্টা করবে কোন নারী।
ভালো থাকবেন।
ভাগ্যিস একখান Y-ক্রোমোজোম লইয়া জন্মাইছিলাম
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হ, একটু আগে হইলেই হইছিলো আরকি!
এ বিষয়টাতে আগ্রহ আছে দারুণ। পরে বিস্তারিত বলার ইচ্ছা রাখছি। লেখাটা এট্টু এলোমেলো লাগলো ভাইয়া।
একটা মজার ব্যাপার দেখেন, কোরান বলেন, পুরাণ বলেন, অভিধান, মিথ কিংবা কবির কবিতা;
সবখানেই নারী 'অর্ধেক মানবী তুমি, অর্ধেক কল্পনা।' কোথাও তাকে একজন সম্পূর্ণ 'মানুষ' হিসেবে দেখা হচ্ছে না।
অভিধানে 'নর' 'পুরুষ' এসব শব্দে মানুষ আছে কিন্তু 'নারী'র বেলায় কচু পোড়া! কর্মী কে? না পুরুষ। নারীর জন্য বরাদ্দ আছে বেশ কিছু একপেষে শব্দ (যেমন: অগম্যা, অগ্নিপরিক্ষা,অনাঘ্রাতা ব্লা ব্লা... পুরুষের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য না!) এসবের হোতা কে? এ লাভের গুড় কোন পিঁপড়ের ভোগে যায়??? উত্তরটা তো জানাই। কৌতুক করে বলা হলেও নারীবাদ আসলেই সেই মতবাদ যাহাতে নারীকে 'বাদ' রাখা হয়। আপাতত এটুকুই
হ্যাঁগো দিদি, লেখাটা এলোমেলোই হয়েছে বটে! ঐযে অনার্য সঙ্গীত বলেছেন, একবারে না লিখে বিষয়ভিত্তিক সিরিজ হিসেবে লিখলেই ভাল হতো। তা না আমি 'বিন্দুতে সিন্ধুধারণ' করতে গিয়েই এমনটা হয়েছে। লিখতে গিয়ে এত্ত এত্তসব বিষয় একটার পর একটা মাথায় মধ্যে ঘুরঘুর করা শুরু হলো যে লেখাটা আর গুছিয়ে লিখতে পারলাম না। আবার শেষও করতে পারলাম না। বয়সের কারণে অধীকক্ষণ কোন বিষয়ে মনস্থির করে লেখাও আর বোধহয় সম্ভব হচ্ছেনা। তাড়াহুড়ো করে শেষে সব গুলিয়ে ফেলি। একটু ক্ষমাঘেন্না করে নিও!
এ বিষয়টা নিয়ে একটা কিছুমিছু লিখবার ইচ্ছা ছিল। সেভাবে খেজুরের রসটা গুড়ে ঘন হতে না পারায় আর লেখা হয়ে ওঠেনি। কাজেই বিষয়টা নিয়ে লিখবার জন্য অবশ্যই পাওনা। পরের পর্বতে আপনার নিজস্ব মতামতটা থাকবে আশা করছি।
ক্ষমাঘেন্নার প্রশ্ন আসছে কেন রে ভাইয়া! ভালো থাকুন, শুভকামনা।
ধন্যবাদ পৌঢ় ভাবনা দাদাকে ( ) চমৎকার পোস্টের জন্য। মূল পোস্টে সাধুবাদ না জানিয়ে বার বার উড়ে উড়ে এসেছি। আহা একেই না বলে লেখা! যা আলোচনার দ্বার খুলে দেয়।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
যাক বাবা, বাঁচা গেল! (এখানেও 'বাবা' শব্দের ব্যবহারটি দেখুন, সেই পুরুষতান্ত্রিক) আমিতো ভাবছিলাম, না জানি আইনের কোন গ্যাঁড়াকলে ফেঁসে গেলাম! হা হা হা।
ধন্যবাদ,উৎসাহ জাগানিয়া মন্তব্যের জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন