[img]DSCN1542 by Kabir Ahmed 26, on Flickr[/img]
শুরুতেই চরম এক ধাক্কার কথা! সেদিন টেলিভিসনের বাজারদর অনুষ্ঠানে দেখলাম, এক মাছবিক্রেতা ১ হালি ইলিশ মাছের দাম হেঁকেছে ৪৬ হাজার টাকা! জাটকা নিধন বন্ধ আইনে এই মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। তা, একে পেটের দায় তায় আবার ব্যবসার এক চরম সুযোগ, কে মানে ঐ সব আইন/ফাইন! সত্যি বলতে আমরা এই উঁচুতলার ভদ্দরনোকেরাও কি ছাই আইন মানি!
এরই মাঝে খবরে জানলাম, দু-একজন জেলাপ্রশাসক জাটকা নিধন ঠেকাতে ১ বৈশাখের খাদ্যতালিকায় পান্তা-ইলিশের বিকল্প হিসেবে পান্তা-রুই খাবার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
তা, ধরুনগে সে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা! তখন জাটকা নিধন আইনও ছিলোনা আর মাছের এত আকালও ছিলোনা। আমাদের বাসার খুব কাছেই কীর্তনখোলা নদীতে খুব ভোরে জেলেরা ইলিশ মাছ ধরতো। আব্বা ভোরবেলা হাঁটতে গিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের মাছ ধরা দেখতেন। আব্বাকে দেখতে পেলে জেলেদের কেউ একজন পাড়ে নৌকা ভিড়িয়ে আব্বার হাতে মাছগুলো গছিয়ে দিতো। চারটে ইলিশ মাছের দাম ছিল মাত্র ১ টাকা। ১ টাকায় চারটে ইলিশ, তাও আবার মাঝারি মাপের! বিশ্বাস হচ্ছেনা বুঝি? মাইরি বলছি, একটুও বাড়িয়ে বলিনি!
হ্যাঁ, বলছিলাম নববর্ষের কথা।
বলছিলুম, ১ বৈশাখের কথা। তখনকারদিনে, আর তখনকারদিনেই বা কেন, এই কিছুকাল আগেওতো ১ বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার কথা শুনিনিকো বাপু!
দু-একজন বন্ধুর কাছে জানতে চাইলাম, ১ বৈশাখে ইলিশ মাছ কি আবশ্যিক? উত্তরে বললেন, ইলিশ ছাড়া পান্তা! ১ বৈশাখে! না, না, ইলিশ থাকতেই হবে। বুঝুন, মধ্যবিত্তের ভাবপ্রবনতা! মুক্তবাজার অর্থনীতি ১০০% সফল।
সেই ১৯৬৭ সালে ঢাকা শহরে শুরু হয়, বাংলা নতুন বছরের প্রথম ভোরে রমনার বটমূলে 'বর্ষবরণ' অনুষ্ঠান। স্বাধীনতা পরবর্তী কালে এর সাথে যোগ হল, নানা অনুষঙ্গ। বাড়লো এর জনপ্রিয়তা। বাড়লো সাধারণজনের অংশগ্রহণ। কিছু মানুষের ব্যবসায়ীক বুদ্ধিতে চালু হলো, মাটির সানকিতে দুশো বা তিনশো টাকায় পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম। (পরবর্তীতে অবশ্য এই ব্যবসায়ীক উদ্যোগটিকে বর্জন করা হয়েছে)। ইদানিং বিভিন্ন প্রকার মুখোশ পরে, বিভিন্ন সাজে অনেক মানুষের অংশগ্রহনে বছরের প্রথম দিনটিতে আনন্দ মিছিলেরও আয়োজন শুরু হয়েছে। এরপর বহু মানুষের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনে বিশাল রঙিন মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই 'বর্ষবরণ' অনুষ্ঠানমালা বাঙালি সংস্কৃতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী নির্বিশেষে আপামর বাঙালির প্রাণের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এই 'বর্ষবরণ' উৎসব। এটিই সম্ভবত বাংলাদেশে একমাত্র সার্বজনীন সেক্যুলার উৎসব।
এই সময়ে আমরা, এই বুড়ো-বুড়িরা বাড়িতে বসে সকলে পান্তা-ইলিশের টেবিলে স্মৃতি রোমন্থন করি। মনে পড়ে, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম! এখনকার প্রজন্মও নিশ্চয় আরও সুন্দর দিন কাটায়!
তখনকারদিনে এত্ত সাঁজগোঁজের বাহার ছিলোনাগো! আহা, দেখতে কী ভালইনা লাগে! লালপেড়ে সাদা শাড়িতে লাল-সাদা পাঞ্জাবীতে ছেয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল, রমনার বটমূল। সববয়সী নারীদের খোঁপায় বেলীফুলের গোড়। ছোট ছোট বাচ্চাদেরও যেন আনন্দ আর ধরেনা!
টেলিভিসনের লাইভ ব্রডকাস্টে দেখি, রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের বৈচিত্রময় উপস্থাপন। আর উপস্থিত আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার উচ্ছাস। নিজেকেও ওদের মাঝেই খুঁজে পাই।
এ এক বহতা জীবনের রিহার্সাল। শিশু থেকে প্রৌঢ়/প্রৌঢ়া সব ধরণের মানুষের উপস্থিতি। তাকিয়ে দেখুন, শিশুর শৈশব, তরুণ/তরুণীর তারুণ্য, যুবক/যুবতীর অদম্য উচ্ছাস, প্রৌঢ়ত্বের সৌন্দর্য, ধীর-স্থিরতা! আর ঐ, ঐযে আমি!
আমার অশীতিপর বৃদ্ধা মাকে বললাম, 'মা, তোমার কি চাই বলো!' আমার বৃদ্ধা মা অস্পষ্ট উচ্চারণে জবাব দিলেন, 'তোমরা সবাই ভালো থাক!'
হ্যাঁ, পৃথিবীর সব মায়েরাই বধহয় এমনটিই চায়!
[img]DSCN2059 by Kabir Ahmed 26, on Flickr[/img]
এ বছরের বড় প্রাপ্তি এই যে, সুস্থ থেকে আপনাদের সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে পারছি!
সবার জীবন সার্থক, সুন্দর, আনন্দময় হোক।
মন্তব্য
শুভ নববর্ষ ভাইয়া
দিলেন তো মোয়া মুড়কির ফটুক দিয়ে লোভ লাগিয়ে
ঢাকায় আসলে খাওয়াবোনে!
খাওয়ানোর লিষ্টে আমার নামটাও রাইখেন, আর তারিখ আর স্থানের নাম উল্লেখ করে আওয়াজ দিলেই হাজির হয়ে যাবো। দেইখেন ম্যাড়াম গোলাপির মতো “ আমরাও রাজাকারের বিচার করবো এমন ওয়াদা যেন না হয়
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
আচ্ছা, লিস্টি একখান করি। সময়মতো জানাবোনে।
শুভ নববর্ষ
দেবদ্যুতি
শুভ হোক আগামী
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
শুভ নববর্ষ।
সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।
স্বয়ম
নববর্ষের প্রোগ্রাম থেকে ইলিশ ব্যান করা উচিত।
তাতে যদি মাছটা কিছু বাঁচে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
এ বিষয়েই কিছু লিখুন না!
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
রাত বিরাতে মিষ্টান্ন আর মোয়া মুড়কির ছবি দেওয়া মানববিধকার লঙ্গন (জাতিসংঘ/নিশা দিশাই-রা বিবৃতি দিতে পারে )
নববর্ষের শুভেচ্ছা থাকলো , সুস্থ থাকুন চিরটাকাল।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
চিরটাকালতো আর সুস্থ থা যাবেনা। যতটাকাল থাক যায়!
"এ এক বহতা জীবনের রিহার্সাল। শিশু থেকে প্রৌঢ়/প্রৌঢ়া সব ধরণের মানুসের উপস্থিতি। তাকিয়ে দেখুন, শিশুর শৈশব, তরুণ/তরুণীর তারুণ্য, যুবক/যুবতীর অদম্য উচ্ছাস, প্রৌঢ়ত্বের সৌন্দর্য, ধীর-স্থিরতা! আর ঐ, ঐযে আমি!"
নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা, ভাবনা-দা! পহেলা দিনটির মত সারা বচ্ছরটা জুড়ে ভালো থাকুন এই আকঙ্খা জানাই।
"আমার অশীতিপর বৃদ্ধা মাকে বললাম, 'মা, তোমার কি চাই বলো!' আমার বৃদ্ধা মা অস্পষ্ট উচ্চারণে জবাব দিলেন, 'তোমরা সবাই ভালো থাক!'
হ্যাঁ, পৃথিবীর সব মায়েরাই বোধ হয় এমনটিই চায়!" - ঠিক তাই। আমার মায়েরও এক-ই কথা, দূরভাষে, কথা ঐ একটাই।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আমার মা’ও একই কথা বলে! মায়েরা সব একই নাকি? আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করে-আমরা কী কী খাচ্ছি, ভালোমন্দ খাচ্ছি কিনা। একই প্রশ্ন আমি করলে বলে-‘আমরা বুড়া-বুড়ি মানুষ। আমাদের আর খাওয়া। তোরা দু’টো ভালো খা, ভালো থাক।’
দেবদ্যুতি
ধন্যবাদ, এক লহমা, বিশদে জানাবার জন্য।
প্রণমিয়া পাটনী কহিল জোর হাতে
আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে
............যেন থাকে দুধেভাতে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নববর্ষের শুভেচ্ছা ভাবনাদা। তবে খাইদাই এর ছবি দেখে মন কেমন করে।
হে হে হে।
নববর্ষের শুভেচ্ছা! সকাল থেকে আপিসে বসে কেবল মিষ্টি খাচ্ছি! বাপরে বাপ! আজকেই দশ কেজি ওজন বেড়ে যাবে মনে হয়!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
শুভ নববর্ষ।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
ভাল থাকুন। জীবন আনন্দময় হোক।
বয়সের কারণে খাবারের বিষয়ে আমার কিছু বিধি-নিষেধ আছে। লোকে বলে একদিন খেলে কিছু হবেনা। তা, এই একদিনটা যে সপ্তাহে ২/৩ দিন হয়ে যায়! তোমাকেও বলি হে 'দুষ্ট বালিকা', একদিন খেলে কিছু হবেনা।
নতুন মন্তব্য করুন